অর্ধের অর্ধাঙ্গিনী পার্টঃ৭

0
534

#গল্পঃঅর্ধের_অর্ধাঙ্গিনী
#লেখনিতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু
#পার্টঃ৭
#স্পেশাল_পর্ব
#দেশের_প্রতি_ভালোবাসা

সুতপার হাত থেকে কফি মগ পড়ে আবার শব্দ শুনতে পেয়ে সকলেই দৌড়ে এলো। টিভিতে এই নিউজ দেখে মামনি অসুস্থ হয়ে যায়। পুনম কোনোরকমে ওর মাকে সামলে হেড অফিসে ফোন করলো।

পুনমঃ হ্যালো আমি অর্ধেন্দুর বাড়ি থেকে বলছি অর্ধেন্দূ কেমন আছে?

অফিসারঃ সরি ম্যাম আমরা এখন কিছুই বলতে পারছি না অর্ধেন্দু কেমন আছে, কারন আমরা এখনো সবাইকে শনাক্ত করতে পারছি না, গুলি করা হয়েছে অনেকেই নিহত হয়েছে আর কারা কারা হয়েছে। সেট এখন কিছুই বলা যাচ্ছে না। আমি অর্ধেন্দুর খবর পেলে আপনাকে অবশ্যই জানাবো।

সবটা শুনে পুনম দু পা পিছিয়ে গেলো। আদরের ভাইটা আজকে বেঁচে আছে কিনা সেটাও জানে না। কিভাবে কি হবে কিভাবে সবাইকে সামলাবে ওহ।

মামনিঃ কিরে কি বললো।কেমন আছে অর্ধ

পুনমঃ মা ওরা বললো অর্ধ ঠিকাছে তুমি চিন্তা করো না।

মামনিঃ সত্যি তো

পুনমঃ হুম সত্যি।

সুতপা সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পুনমের দিকে। ওর কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না পুনমের কথা।

সুতপাঃ পুনম দি তোমার সাথে আমার কথা আছে আমার সাথে তুমি আসো একবার।

সুতপা পুনমকে নিয়ে বাইরে আসলো।

পুনমঃ কিভাবে এভাবে আনলি কেন?

সুতপাঃ সত্যি করে বলো উনি কেমন আছেন?

পুনম সুতপার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললঃ আমার ভাই যদি মরেও যায় তাতে তোর কি?

সুতপাঃ দি

পুনমঃ হ্যা আমার ভাইকে তো তুই সহ্য করতে পারিস না। তাহলে কেন আজকে ওর খোঁজ নেবার জন্য উতলা হয়ে পড়েছিস বল।

সুতপাঃ এসব বাদ দাও না।প্লিজ বলো না উনি কেমন আছেন?

পুনমঃ জানি না। এখনো পর্যন্ত কেউ ঠিক করে বলতে পারছে না।

সুতপা অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে আছে পুনমের দিকে পুনমের চোখেও পানি।

সুতপাঃ আমাকে হেডের নম্বরটা দাও তো।

পুনমঃ কেন?

সুতপাঃ দাও দরকার আছে।

পুনমের কাছ থেকে সুতপা নম্বরটা নিয়ে ফোন করলোঃ হ্যালো

অফিসারঃ আপনাকে আমরা কিছু জানতে পারলে জানাবো।

সুতপাঃ আপনারা এখনি আমাকে বলূন আমার হাসবেন্ড কোথায় আছে।কি অবস্থায় আছে।

অফিসারঃ দেখুন ম্যাম এখানে আরো অনেক আর্মি ছিলো সকলের পরিবার চিন্তিত আমার চেস্টা করছি সবটাই আপনারা একটু ধৈর্য ধরে থাকুন প্লিজ।

২৪ ঘন্টা কেটে যায় কিন্তু তখনো অর্ধের কোনো খোঁজখবর পাওয়া যায় না। সুতপা কান্নাকাটি করছে পুনম কোন দিকে যাবে কিছুই বুঝতে পারছে না। অর্ধের বাবা ওই হাসপাতালে গেছে অর্ধের খোঁজে।অর্ধের মাকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।

পুনমঃ হ্যালো বাবা বলো ভাইয়ের কোনো খোঁজ পেলে।

বাবাঃ হ্যা পেয়েছি।

পুনমঃ ওহ কোথায় কেমন আছে?

বাবাঃ প্রচুর পরিমাণে চোট লেগেছে, অসুস্থ হয়ে আছে আমি আজকেই ওকে আমাদের ওখানে হসপিটালে ট্রান্সফার করবো।

পুনমঃ আচ্ছা।

অর্ধ‌ বেঁচে আছে শুনে সকলের প্রান ফিরে আসলো।‌সুতপা তো কেঁদেই দিয়েছে।

পরেরদিন….

অর্ধকে হসপিটালে ভর্তি করানো হয়েছে ওর ট্রিটমেন্ট চলছে এখন অনেকটাই সুস্থ,গুরুত্বর আঘাত লাগেনি ওর। সবাই আজকে দেখতে এসেছে অর্ধকে।

অর্ধের মা কান্নাকাটি করছে,অর্ধ‌ ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললোঃ মা তোমার ছেলে একজন আর্মি।‌আর আর্মিদের পরিবারকে সবসময় শক্ত থাকতে হয় তূমি বলতে না।‌তাহলে আজকে কেন এতটা দূর্বল‌ হয়ে পড়ছো। আমি যদি আজকে মারা যেতাম তাহলে আমি গর্বিত হতাম আমি দেশের জন্য প্রান দিয়েছি। আজকে আমাদের কত বন্ধু প্রান হারিয়েছে জানো। কত বাবা মা তার সন্তানকে হারিয়েছে,কত স্ত্রী তার স্বামীকে হারিয়েছে,কত বোন-ভাই তার দাদা-ভাইকে হারিয়েছে। আর কত সন্তান পিতৃহারা হয়েছে। তাদের কতটা কস্ট হচ্ছে বলো তো আমার নিজেকে দোষী মনে হচ্ছে কেন আমিও ওদের সাথে শহিদ হয়ে গেলাম না। কেন একা স্বার্থপরের মতো বেঁচে গেলাম।

অর্ধের চোখে অশ্রু,ব্যর্থতার অশ্রু। পুনম,ওর মা দুজনেই কাঁদছে। সুতপা কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে যাবার সাহস পাচ্ছে না।অর্ধের চোখ সুতপাকে ই খুঁজছে ,পুনম সেটা বুঝতে পেরে ওর মাকে বললোঃ মা চলো।

ওর মাকে নিয়ে বের হবার সময় পূনম সুতপাকে ভেতরে যেতে বললো,সুতপা ধীর পায়ে ভেতরে প্রবেশ করলো।‌সুতপাকে দেখে অর্ধের নিজের অজান্তেই মুখে হাসি ফুটে উঠল।

সুতপাঃ কেমন আছেন?

অর্ধঃ বেঁচে আছি,মরে গেলে খুশি হতে তাইনা।

সুতপা অশ্রুসিক্ত নয়নে অর্ধের দিকে তাকালো। অর্ধ সুতপার চোখে নিজেকে হারানোর স্পস্ট ভয় দেখতে পাচ্ছে।

অর্ধঃ‌ আমি মরলে ভালো হতো বলো আপদ বিদায় হতো।

সুতপাঃ‌চুপ একদম চুপ আর একটাও উল্টোপাল্টা কথা বলবেন না।সুতপা কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে দিলো। অর্ধ সুতপার চোখের জলটা নিজের হাত দিয়ে মুছে সুতপার দুই গালে হাত রেখে বললোঃ তুমি না আর্মি অফিসার অর্ধেন্দুর ওয়াইফ।‌ আর একজন আর্মির ওয়াইফ হয়ে এতটা ছিচকাদুনে হওয়া উচিত না।

অর্ধের কথা শুনে সুতপা হেসে ফেললো,সুতপার হাসি মুখটার দিকে তাকিয়ে অর্ধ বললোঃ এভাবেই সবসময় মুখে হাসি ফুটিয়ে রাখবে,আমি থাকি আর না থাকি।

সুতপাঃ এসব কথা বলবেন না একদম তাহলে কিন্তু আমি আর আসবো না।

অর্ধঃ আচ্ছা বলবো না।হ্যাপি।

সুতপাঃ‌ হুম।

সুতপা ভাবতে থাকে আর্মিদের জীবনটা কেমন। তারা আমাদের রক্ষা করার জন্য নিজেদের প্রান পর্যন্ত দিয়ে দিচ্ছে আর আমরা তাদের প্রাপ্য সম্মান টুকুও দিতে পারছি না। একজন আর্মি যখন ওই পদে গ্রহন করে সে এটাই জেনে গ্রহন করে যে তার জীবন বাজি আছে, তার মৃত্যু যখন তখন হতে পারে কিন্তু তাও তিনি ওই পদটাই গ্রহন করেন। কারন তিনি দেশকে ভালোবাসেন,দেশকে রক্ষার কাজে নিজের জীবনটাকে লাগতে চান। আগেও আর্মিদের রক্তের দ্বারা আমরা সুরক্ষিত ছিলাম আর আগামীতেও থাকবো।

অর্ধঃ কি ভাবছো

সুতপাঃ ভাবছি একজন আর্মি জানে সে আর বেশিক্ষণ বাঁচবে না তবুও সবটূকু দিয়ে লড়াই করে যায়।

অর্ধঃ দেশকে রক্ষা করাই আমাদের কর্তব্য। আর আমরা নিজেদের মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সেটা করার চেস্টা করি।

সুতপাঃ এতো কিছু থাকতে আর্মিতে যোগ দিলেন কেন?

অর্ধঃ দেশের জন্য ভালোবাসা।

সুতপাঃ ওহ।

অর্ধঃ‌কিন্তু ম্যাডাম আপনি কাঁদছিলেন কেন?

সুতপাঃ কোথায়

অর্ধঃ কাঁদছিলে না।

সুতপাঃ না তো

অর্ধঃ‌ তাহলে মনে হয় ভুল দেখেছি।

সুতপাঃ হুম।

অন্যদিকে…

-” মিস্টার অর্ধেন্দু তুমি মরে গেলে তো আমার সব প্ল্যান শেষ,তুমি বেঁচে না থাকলে আমি সবকিছু নাজের আয়ত্তে আনবো কিভাবে? এবার আমি আমার লাস্ট চালটা দেবো। তৈরি থেকো নতুন ঝড়ের জন্য,অর্ধ আর সুতপার জীবনটা আমি কিছুতেই সাজাতে দেবো না।”

২দিন পর….

আজকে অর্ধকে হসপিটাল থেকে বাড়ি ফিরে এসেছে। সুতপা অর্ধেন্দুর খেয়াল রেখেছে। অর্ধ আর সুতপা অনেকটাই কাছাকাছি চলে এসেছে। সুতপা অর্ধেন্দুর জন্য খাবার বানাচ্ছে তখনি কলিং বেল বেজে উঠল।

অর্ধের মা দরজা খুলে চমকে উঠলেন….

#চলবে……

** সকল আর্মিদের স্যালুট জানাই। তাদের প্রানের বিনিময়ে আমাদের দেশ,আমাদের দেশের জনগন সুস্থ ওহ নিরাপদ আছি,স্বাভাবিক ভাবে জীবনযাপন করতে পারছি**

বিঃ দ্রঃ-ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।‌সকলেই রেসপন্স করবেন।

Next part
https://www.facebook.com/116906837287073/posts/262779852699770/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here