অমানিশা পর্ব ২০

0
347

#অমানিশা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-২০

মাসের মাঝামাঝি সময় তখন। হরিৎ তরুর শীর্ষশাখায় রৌদ্রছায়ার লুকোচুরি চলে অহর্নিশ। ভাদ্রের সান্নিধ্যে সময়- অসময় মাথা পেতে দেয় ক্লান্ত বসুন্ধরা। ভাদ্র তাকে মায়ামোহ করে হয় প্রানউজারী বৃষ্টি ঢালে নতুবা আরো নির্মম হয়ে বিবস্বানের দীপ্তি শ্রীবৃদ্ধি করে।
তেমনই এক নিবৃত্ত অপরাহ্নে বারান্দায় লম্বা মইয়ের ন্যায় টুলের উপর দাড়িয়ে আছে আরশাদ। পরণে সাদা স্যান্ডোগেন্জি। গলার ঘাম বুকে যেয়ে জমছে। বুকের পাতলা কাপড় ভিজে উঠছে দরদর করে। তার ঠি ক নিচ বরাবরই ছোট্ট কপাল কুচকে, দু’হাতে টুলের পায়া শক্ত করে ধরে, ঘাড়ের সাথে কাঁধ লাগিয়ে উপরের দিকে চেয়ে আছে মুনতাহা। সে কি দেখার প্রচেষ্টা! টানটান গলার চামড়া দেখে মনে হচ্ছে মাঝের হাড়টা ভেঙে যাবে এক্ষুনি। আরশাদ একাধারে কতক্ষণ বিকট শব্দ করে দেয়ালে হাতুরি চালানো বন্ধ করে। বাহুতে কপাল মুছে নিয়ে ঠোঁট সরু করে দু’গাল ফুলিয়ে ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে।
দেয়ালের উপর সিলিংয়ে একটু প্রশ্বস্ত জায়গা আছে। চড়ুই পাখিটা এখানে বাসা বেঁধেছে আজ সপ্তাহ-র বেশি। দশ এগারোদিন হবে হয়তো। হিসেব রাখা হয়নি।
আরশাদ দেখেছে অনেক আগেই, কিছু বলেনি। ওইযে চাঁদ!
মুনতাহা রোজ ভোরে ঘুম থেকে উঠেই আগে বারান্দায় আসবে। পায়রাদুটোর খাঁচার দরজা খুলে তাদের মুক্ত আকাশে উড়িয়ে দিয়ে চিবুক উঁচিয়ে চড়ুইয়ের বাসায় চেয়ে থাকবে কতক্ষণ। নিচ থেকে দেখা যায়না ভালোমতো। তবু অভিপ্রায় নরমচোখ দেখেই যাবে।
শেষমেষ চিত্তে জন্ম নেয়া খর্ব অভীপ্সার সঙ্গে না পেরে টেনেহিঁচরে আরশাদকে ঘুম থেকে ডেকে তুলবে। ঘড়িতে তখন সকাল হবে হবে মাত্র। আরশাদ ঢুলুঢুলু পায়ে বারান্দায় আসবে। তাকে কোমড় ধরে উপরে উঠিয়ে ডিমগুলো দেখাবে, তবেই যেয়ে শান্ত হবে নারীময়ী কোমল মন, অধরে ফুটবে নিরুপম হাসি। সেই হাসি দেখে ঘুম কেটে যাবে নিষুপ্তি মোড়ানো পুরুষচোখেরও। প্রেমে সয়লাব হবে ভোরের সমীর।
তিনদিন আগে বৃষ্টি হয়েছিল। ঝুম বৃষ্টি। বাতাসে খড়কুটোর বাসাটা ডিমসহ পড়ে গিয়েছিল। একটা ডিম তো পড়ামাত্র ফেটে চৌচির আর বাকি চারটে কেন যেনো অক্ষত ছিল।
মুনতাহার সে কি মনখারাপ! মেয়েটা পারেনা রাত দিন এক করে কাঁদে। একটা বাচ্চা মারা গেলো? সে কেনো বাতাস শুরু হওয়া মাত্র ঘরে এনে রাখলোনা ডিম গুলো?
আফসোসে কেঁদে মরে অনুশোচনা।
মেয়েটা সবকিছুতে নিজেকে দোষী করে। আরশাদের খুব ভয় হয় মাঝেমধ্য। ভীষণ ভয়।
যেয়ে কাঠের চারকোণ আকৃতির একটা দানির মতোন বানিয়ে এনেছে। সেটা দেয়ালের সাথে পেরেক দিয়ে ঠুকে তাতে খড়কুটোর বাসাটা রেখে দিলে আর শতঝড়েও পড়বে না। এই মেয়ের কান্নাকাটি তার দু’চোখের বিষ। হেমলকের মতো গায়ে রাগ গজায় যেনো!

ঠু ক ঠু ক ধ্বনি দেয়ালের ইঁটে ভীষণ শব্দে বাড়ি খায়। মুনতাহার মুখ কুচকে যায় আরো। চিবুক নামিয়ে চোখ খিচে বুজে রাখে সে। আরশাদ পেরেক ঠুকতে ঠুকতেই আড়চোখে একনজর প্রিয়তমার নতজানু মুখশ্রী দেখে নেয়। হাতুরির আওয়াজ কমিয়ে বলে,
—“আমি পড়বোনা মুনতাহা। আপনি ঘরে যান। ফ্যান ছেড়ে বসুন। গরমে লাল হয়ে গেছেন তো।”

মুনতাহা খিঁচা চোখেই তাকায়। পিটপিট করে বলে,”না, পড়ে যাবেন।”

আরশাদ হাসে,

—“আমি বাচ্চা?”

—“তা কখন বললাম?”

—“আপনার প্রশ্ন করার অভ্যাসটা গেলোনা চাঁদ।”

মুনতাহা মাথা নামিয়ে নেয় স্বলজ্জায়। পাল্টা প্রশ্ন শোনা যায়না আর।
স্তব্ধতা উপরে ফেলে আবারো স্বশব্দে হাতুরি চালাতে শুরু করে আরশাদ। সে একটু ‘চাঁদ’ ডাকলেই মেয়েটার লজ্জার অন্ত নেই।
বিছানার উপর নরম ওড়না মুড়িয়ে তার উপর বাসাটা রাখা।
পেরেক ঠোকা শেষ। আরশাদ উপর থেকে হাতুরিটা বাড়িয়ে দিলো। মুনতাহা নিয়ে ফ্লোরে নামিয়ে রাখলো, পাশ থেকে কি একটা বাধার জন্য নিয়ে আসা মোটা দড়িটা আরশাদের বাড়িয়ে রাখা হাতে দিল।
আরশাদ মোটা দড়িটা দু’সেকেন্ড পর্যবেক্ষণ করে ভরাট কন্ঠে সুধালো,
—“ড্রয়ের থেকে কেঁচিটা নিয়ে আসেনতো। এতবড় দেয়া যাবেনা।”

মুনতাহা মাথা নাড়ায়। দ্রুতপায়ে ঘরে যেয়ে মেঝেতে হাঁটু গেড়ে ড্রয়ের খোলে। পাতলা কোমড়ে আচঁল গোজা।
মানুষ মারা যাবার আগে যে কথা বলে যায় আমরা সবসময় তা পালন করার চেষ্টা। একটা অন্যরকম টান থাকে। মনে হয় আমরা সেটা না করলেই বুঝি মানুষটা কষ্ট পাবে। মুনতাহারও তেমনই। মাহতাব সাহেব মারা যাবার কিছুক্ষণ আগেই মেয়েকে বলেছিলেন, তাকে শাড়িতে খুব সুন্দর দেখায়।সবসময় যেনো শাড়ি পরে। সেই থেকে, সেই থেকে মুনতাহা অন্য পোশাকের ধারে কাছেও যায়নি।
আরশাদ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। ভারি গলায় ডাকে,”পাচ্ছেন না?”

মুনতাহা একবার চেয়ে আবার ড্রয়ার হাতরায়। অস্ফুট স্বরে বলে,”এখানেই তো ছিলো…”

—“আচ্ছা পরে খুঁজেন, আপাতত ডাইনিং থেকে ছুরিটা নিয়ে আসেন। ওঠতেই হবে। যান।”

কাজ শেষ হতে ঘন্টা লেগে যায়। ঘড়ির কাঁটা ছয়ের ঘর ছুঁয়েছে ততক্ষণে। সূর্যের রং কমলাটে হয়ে যাচ্ছে অল্পে অল্পে। রাতের আমন্ত্রণে চমৎকার সাজছে প্রকৃতি।
আরশাদ ধীরগতিতে নেমে আসে টুল থেকে। গায়ের গেন্জি ভেজা ত্যানার মতো হয়ে গেছে। ভারি টুল টেনে পাশে চাপিয়ে রাখে। কবুতর দুটো ফিরে এসেছে। রেলিংয়ের উপর বসে আছে পুতুলের মতোন। ভয়ানক পোষা। সারাদিন এখানে ওখানে উড়লেও সন্ধ্যা নামতে না নামতেই ঠি ক খাঁচায় চলে আসবে।

ঘরে যেয়ে ফ্যান ছাড়ে আরশাদ। ড্রয়ারটা খোলা। তখন কেঁচি খোঁজার জন্য খুলেছিলো মেয়েটা। আটকাতে ভুলে গেছে। আরশাদ কাছে যায়। আটকানোর আগে নজরে আসে এলোমেলো পড়ে থাকা দু’টো ঘুমের ওষুধের পাতা। মুনতাহা ওষুধ খাওয়া ছেড়েছে আজ মাসের বেশি হয়ে গেছে। এখন কি সুন্দর ঘুমোয়। সেই ঘুম দেখে তার রাত্রি কাটে অতন্দ্রিলায়। নির্ঘুম চোখ প্রেম নিয়ে বলে,”মানুষ রাত জেগে জোছনা দেখে আর আমি আমার চাঁদের ঘুম দেখি।”
ড্রয়ার আটকে দেয় আরশাদ। একটানে গেন্জি খুলে বালিশের পাশে ছুঁড়ে মাথার পিছে হাত দিয়ে সটান শুয়ে পড়ে বিছানার মাঝখানে। গোছানো চাদর নিমিষেই কুচকে যায়। মুনতাহা বারান্দার ধুলো ঝাড়ু দিতে দিতেই আড়চোখে তাকায়। একটু আগে ঘরটা গুছিয়ে এসেছে। লোকটা খালি অগোছালো করে। শুবেন, ভালো কথা। একটু রয়েসয়ে শুলেই তো হয়। তিনহাত চাদর উঠিয়ে শোয়ার কোনো মানে হয়?

বারান্দা ঝাড়ু দিয়ে সে যখন ঘরে ঢুকে আরশাদ তখনো সেভাবেই শুয়ে আছে। বিছানা থেকে এক পা বেরিয়ে গেছে। আরেকপা ভাঁজ করে তোলা। মুনতাহা হাঁফ ছাড়ে। বালিশের পাশ থেকে স্যান্ডোগেন্জি নিয়ে সোফায় মেলে দেয়। হাল্কা গলায় বলে,”ভালো করে ঘুমান, কাঁধ ব্যাথা করবে পরে।”
আরশাদ নিভু নিভু তাকায়। ঝাপসা গলায় ডাকে,”চাঁদ এদিক আসেন।”
মুনতাহার কাছে যেতে দেরি হয় অথচ আরশাদের বুকে টানতে দেরি হয়না।
মুনতাহা অপ্রস্তুত হয়। মিনিটের ব্যাবধানে চোখের চাহনী অকৃত্রিম লাজে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠে।
উদরজুড়ে নিলর্জ্জ্ব হাতের গহন বিচরণ চলতে থাকে বিরতিহীন। অতলস্পর্শী ছোঁয়ায় গলদেশ ভেসে যায়। দাগ পড়ে যায় গাঢ় প্রণয়ের।
আরশাদ অধর চেপেই ঝাপসা গলায় ডাকে,”চাঁদ?”
মুনতাহা সাড়া দেয়না। কন্ঠনালিতে হরতাল হচ্ছে। কতশত অনুভূতি যুদ্ধ করছে, বিদ্রোহ করছে।
খানিকবাদে বিছানায় মাথা এলিয়ে দেয় আরশাদ। মাথার নিচের হাতটা তখন চাঁদের চুলের মুঠোয় খামছে ডুবেছে। বুকের পাশ থেকে মুনতাহার চিকন হাতটা তুলে মুঠোয় পুরে বেশ কিছুক্ষণ নির্নিমেষ চেয়ে রয় সে। অত:পর যখন সে দৃষ্টি সরিয়ে মুনতাহার চোখে চাইলো, মুনতাহা হুড়মুড় করে অন্যদিকে তাকাল। এদিকে চাইলেই যেনো সর্বনাশ!
আরশাদ হাত বাড়িয়ে তার হাতখোঁপা খুলে দেয়। কালো কেশে ঢাকা পড়ে যায় প্রণয়ের লালাভ দাগ। বিছানা ছেড়ে উঠতে উঠতে বলে,

—“বাইরে গেলে চুল বেঁধে যেয়েননা আবার।”

—“জানি।”

—“কিছুই জানেননা আপনি।”


সন্ধ্যার দিকে সাবিনা বেগম টি ভির দিকে চেয়ে হাঁসফাঁস করছেন। মুনতাহা হাতে চা বিস্কিট নিয়ে ঢুকলো ঘরে। পাশে রাখার জন্য ঝুকতেই সাবিনা বেগম আস্তে করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। আদুরে গলায় বললেন,”বউ?”
মুনতাহা মিষ্টি করে হাসল। বলল,”জী দাদু।”

—“হাসো বউ, হাসো। তোমারে হাসলে কি যে সুন্দর লাগে! দেহোনা আমার নাতি শুধু চাইয়াই থাকে আর চাইয়াই থাকে। যহনই ওর দিকে চোখ যায় তখনই দেখি তোমার দিকে চাইয়া আছে।”

মুনতাহার ফিক করে হেসে ফেলেলো। হাসলেন সাবিনা বেগমও। মুনতাহা যেয়ে পর্দা খুলে দিলো জানালার। বাইরে চোখ বুলিয়ে বলল,”বাইরে সুন্দর বাতাস হচ্ছে দাদু। পর্দা খোলা থাক। ঘর গরম হয়ে আছে।”

—“আইচ্ছা আইচ্ছা। খোলা থাক।” বলে বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়াতে গেলেন সাবিনা বেগম। উদ্দেশ্য ওয়াশরুমে যাওয়া। হাতটা ধোঁয়া দরকার।
মুনতাহা পর্দা পেচিয়ে ক্লিপ লাগাতে লাগাতে পিছে তাকাতেই দেখলো দাদু বিছানা ধরে দাড়িয়ে রয়েছেন। তাড়াতাড়ি এগিয়ে সাবিনা বেগমকে বিছানায় বসাতেই সে মাথা ধরে বলল,”আমার তো কেমন মাথা ঘুরাইতেছে বউ।”

মুনতাহা ভ্রু কুচকায়। টিভি বন্ধ করে দেয়। মগে পানি এনে হাত ধুইয়ে দেয়। পিঠের পিছে বালিশ দিয়ে বলে,”আপনি চা টা খান দাদু, অনেকক্ষণ টিভি দেখেছেনতো সেজন্য বোধহয় মাথা ঘোরাচ্ছে। বিছানা ছেড়ে উঠেননা। উনার চা টা দিয়ে এসে আপনাকে শুইয়ে দিচ্ছি।”

সাবিনা বেগম মাথা নাড়ান। আনতারার ডাক শোনা যাচ্ছে,”মুন? আম্মু ওর চা টা দিয়ে আসোতো।”

আরশাদ ডাইনিংয়ে বসে ফোনে কথা বলছে। হাত নাড়িয়ে, মাথা দুলিয়ে কথা বলার চমৎকার ভঙ্গিমা।
যেনো ফোনের ওপাশের ব্যাক্তিটা সামনেই বসে আছে।
বাসায় তো থাকেইনা সে। সারাদিন অফিস করে রাতে ফিরে। মাঝেমধ্য ছুটি থাকলে তবেই তাকে সন্ধ্যার দিকে বাসায় দেখা যায়, যেমন আজকে।
মুনতাহা চায়ে চিনি দিচ্ছে। আনতারা রান্নাঘরের দরজা দিয়ে ছেলেকে দেখে সপ্রতিভ কন্ঠে বললেন,”শুধু তুমি আছো দেখে, নয়তো এসময়েও এই ছেলে আগে বাইরেই থাকতো। ব্যাংকে ছুটি থাকলেও বাসায় আসতো সেই রাতের বেলাই। বুঝলে?”

মুনতাহা মুচকি হাসে। চা নিয়ে আরশাদের সামনে যেতেই কান থেকে ফোন নামায় সে। মুনতাহা চা রাখতেই খপ ধরে হাতটা ধরে ফেলে। মুনতাহা তাড়াহুড়ো করে ছাড়িয়ে নিতে চায়। আনতারা ওদিকে ঘুরে আছেন বলে রক্ষে। ঘাড়ত্যাড়া আরশাদ আরো শক্ত করে ধরে বলে,
—“মেহেদি হাল্কা হয়েছে কেনো চাঁদ?”

মুনতাহা আমতাআমতা করে। নখের গাঢ় লাল মেহেদি কমলা হয়ে গেছে। মিনমিনে কন্ঠে বলে,

—“অনেকদিন দেইনিতো…”

—“দেননি কেনো? আমি না কতগুলো মেহেদি পাতা এনে দিলাম গত সপ্তাহে?”

—“ওগুলো দাদুর চুলে লাগিয়ে দিয়েছি।”

—“তো আমাকে বললেই তো হতো। আরো এনে দিতাম।”

—“আচ্ছা দিবোনে, ছাড়ুন।”

আরশাদ ছাড়েনা। উল্টো হাতটা ঠোঁটের কাছে নিয়ে চট করে একটা চুমু খায়। মুনতাহা চোখ বড় বড় করে ফেলে। চাপা কন্ঠেই চেঁচিয়ে উঠে,”আল্লাহ! মা রান্নাঘরে। ছাড়ুন।”

নির্লজ্জ্ব আরশাদ কথা শোনে তো না-ই। বরং পরপর আরো কয়েকটা চুমুতে হাত ভরিয়ে দেয়।

~চলবে~

[আজকে একটু কমেন্ট করবেন সবাই? পড়তে ইচ্ছে করছে?]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here