অভিমান #পর্বঃ১৬

0
698

#অভিমান
#পর্বঃ১৬
…………..

.
.
নিলয় রুমে এসে কিছুক্ষন অস্তিরভাবে পায়চারি করল,তারপর খাটে বসে দু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে মাথা নিচু করে বসে রইল,চোঁখের সামনে শুধু ভাসছে কাব্যের সুহাকে কোলে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য আর কানে বার বার প্রতিধ্বনী হচ্ছে ওর বলা কথাগুলো,বুকের ভিতর দুমরে মুচরে শেষ হয়ে যাচ্ছে,
সুহার বিয়ে হয়ে গেছে এই সত্যিটা এখনও তার কাছে অবিশ্বাসও লাগছে,নিজের এত দিনের ভালবাসা এখন অন্য একজনের বৌ ,যার জন্য এখানে আসা সেই অন্যের হয়ে গেছে,নিলয় একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে নিজের মনে মনে বলতে লাগল,সুহা সেই কলেজে থাকাকালীন থেকে আমি তোমাকে ভালবাসি ,তুমি তো বলেছিলে প্রেম ভালবাসা করে কখনও বিয়ে করবে না,তার জন্যই তো তোমাকে হারানোর ভয়ে ভালবাসার কথা বলিনি ,সব শুনে যদি তুমি রাগ করও আমার সাথে আর কখনও কথা না বলো ,তোমার কাছাকাছি থাকার জন্য ভালবেসেও শুধুমাএ একজন বন্ধু হয়ে তোমার পাশে থেকেছি,মনের কথা কোনদিন প্রকাশ করিনি ,ভেবেছিলাম লেখা পড়া শেষ করে দেশে এসে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে একে বারে বৌ করে তোমায় নিয়ে যাবো,এই আশাতে এতগুলো বছর আমি কাটিয়েছি,
তুমি তো জানোই না বিদেশে বসেও তোমার প্রতিটা পদক্ষেপের খবর রেখেছি,যাদের দিয়ে আমি তোমার উপর নজর রেখেছিলাম ওরা যখন জানালো দুই দিন ধরে তোমার কোনো খরব পাচ্ছে না এটা শুনে আমার মাথা একদম কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল,তাই তো কোনকিছু না ভেবেই আমি দেশে ফিরে এসেছি শুধু মাএ তোমার জন্য।কিন্তু দেশে এসে এমন কিছু দেখবো সেটা আমি কল্পনাও করি নি,তুমি তো বলেছিলে বিয়ের আগে প্রেম করবে না সেই তুমিই কিনা অন্য কাউকে ভালবেসে পালিয়ে বিয়ে করে ফেললে,আর সেটাও আমার আপন ফুফাতো ভাইকে,তাহলে আমায় কেন বললে তুমি বিয়ের আগে কাউকে ভালবাসবে না,তুমি মিথ্যেবাদী সুহা অনেক বড় মিথ্যেবাদী।
আমি কিছুতেই তোমাকে কাব্য ভাই এর পাশে মেনে নিতে পারছি না,আমার এত বছরের ভালবাসা আমি কি করে ভুলে যাবো,তোমায় আমি খুব ভালবাসি সুহা খুব ভালবাসি।তুমি অন্যকারো স্ত্রী সেটা ভাবতে আমার ভীষন কষ্ট হচ্ছে,আমি কিছুতেই এই সত্যিটা মানতে পারছি না,নিলয় দু হাত মুখ থেকে সরিয়ে নিজের মাথার চুল গুলো পাগলের মতো টানতে লাগল ,চুলগুলো টেনে ধরে বলতে লাগল,
এখন আমি বাঁচব কি নিয়ে ,কি করে আমি তোমাকে ভুলে যাবো কি করে,আমার খুব কষ্ট হচ্ছে সুহা খুব কষ্ট হচ্ছে মনে হচ্ছে নিজেকে শেষ করে ফেলি,কথাগুলো বলেই দাঁড়িয়ে দেয়ালে ঘুষি মারতে
লাগল।
.
দুপুর হয়ে গেছে কাব্য সেই যে বেরিয়ে গিয়েছিল এখনও আর রুমে আসে নি,
ওয়াশ রুম থেকে কাব্য বেরিয়ে যাওয়ার পর সুহা অনেকক্ষন সেখানে বসে কান্না করে,তারপর কাপড় চেন্জ করে রুমে এসে বসে রইল,কাব্যের উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে ,ওর এটা ভেবেই কষ্ট হচ্ছে নিলয় ওকে জরিয়ে ধরেছে সেখানে ওর কোনো দোষ ছিল না,হুট করে কেউ এসে জরিয়ে ধরলে তার কি করার আছে,ও তো কাউকে জরিয়ে ধরে নি,ও নিজের মনে মনে বলতে লাগল ,
আমি তো কোনো দোষ করিনি উনি শুধু শুধু আমার উপর রাগ দেখিয়ে আমাকে শাস্তি দিলো ,আমার সাথে এমন বাজে আচরন করলো ,দোষ করল নিলয়ের বাচ্চা আর শাস্তি পেলাম আমি,নিজের ভাই বলে ওকে কিচ্ছু না বলে ক্ষমা করে দিল,স্বার্থপর ছেলে কোথাকার নিজের ভাই জরিয়ে ধরছে ওকে কিছু বলল না আর আমার ফ্রেন্ডরা কিছু করলে ওদের খুন করে ফেলার হুমকি দিচ্ছে,উনি খুব বাজে খুব খারাপ একজন মানুষ,উনার সাথে আমি আর কোনে কথাই বলবো না।
সুহা রুমে বসে রাগে ফোঁস ফোঁস করেছে আর নিজের মনে কথা বলছে,আবার ভীতু চোঁখে বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে যদি কাব্য চলে আসে সেই ভয়ে,
দুপুরের খাবার সময় হয়ে গেছে ও রুম থেকে বের হলো ,সুহা ভেবেছিল কাব্য নিচে আছে কিন্তু নিচে এসেও ওকে পেল না,ভাবল হয়তো নিলয়ের সাথে আছে,এটা ভেবে কাব্যকে মনে মনে একটা ভয়াবহ গালি দিল,যার জন্য রেগে আগুন হয়ে আমার সাথে এমনটা করল,তার সাথে ঠিকি গিয়ে ভাব জমাচ্ছে,আমার সাথে খারাপ আচরন করার বাহানা খুঁজে শুধু ,কাব্যকে গালি দিতে দিতে ডাইনিং টেবিলে গেল,গিয়ে দেখল ওর শাশুড়ী ,বোন সবাই বসে আছে ও দেখে ওর শাশুড়ী বলে উঠলেন,
দাঁড়িয়ে আছো কেন মা বসো ,আমরা তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছি ,
উনার কথায় ও মৃদু হেসে চেয়ারে বসে পরল,কিছুক্ষন পর নিলয় ও চলে আসলো,নিলয় আসার পরও কাব্য আসছে না দেখে সুহার কপাল সামান্য কুচকে গেল,ও ভাবতে লাগল,এই রাক্ষসটার আবার কি হল সবাই খাওয়া শুরু করে ফেলেছে এখন ও আসছে না,আমাকে জ্বালানোর জন্য তো সবার আগে এসে বসে থাকে ,উনি কি বাসায় নেই তখন কি রাগ করে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলেন,কথাগুলো ভেবেই আমি অস্বস্তিতে পরে গেলাম,এখন যদি উনারা কেউ জিজ্ঞেস করেন উনি কোথায় তাহলে আমি কি বলবো,
আমি তো জানি না উনি কোথায়,উনি বাসায় আছেন কি বাইরে আছেন সেটাই তো আমি সঠিক মতো জানি না,এরি মাঝে আপু বলে উঠলেন , সুহা ভাইয়া কোথায় তুই একা খেতে চলি এলি ভাইয়াকে বলে আসিস নি,
আপুর কথায় আমি বিব্রত হয়ে পরলাম ,কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না,
তখনই আন্টি বলে উঠলেন,
কাব্য একটু বাইরে গেছে ,কি যেন একটা দরকারে আমাকে বলে গেছে ওর আসতে লেট হবে,
আন্টির কথায় স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলে খেতে শুরু করলাম,যাক বাঁচা গেল ,আপদটা তাহলে সত্যি বাসায় নেই অনেকক্ষন শান্তি মত থাকতে পারবো,
খেতে খেতে একটা বিষয় খেয়াল করলাম,
নিলয়কে কেমন গম্ভীর লাগছে ,কোনো কথা বলছে না চুপচাপ খাচ্ছে ,দুয়েক বার আড় চোঁখে আমার দিকে তাকিয়েছে কিন্তু আমি তাকালেই চোঁখ সরিয়ে নিচ্ছে,
আসার পর তো কত খুশী ছিল হঠাৎ কি হল,কাব্য শয়তানটা কি একেও কিছু শুনিয়ে দিয়েছে,হতেও পারে না হলে একে এমন বিমর্ষ লাগছে কেন,
কার পাল্লায় যে আমি পরলাম,আমার লাইফটাকে একদম হেল করে দিচ্ছে।কেন যে এর সাথে আমার দেখা হলো আফসোস করতে করতে খাওয়া শেষ করলাম।
.

সারা দিন খুব ভালো কাটলো ,অনেক শান্তি শান্তি কোন ভয় নেই প্যারা নেই একদম নিজের মতো ,আপু সাথে মুভি দেখলাম,আন্টির সাথে গল্প করলাম,
সারা সন্ধ্যা স্নেহাকে নিয়ে কাটালাম,রাত হতেই আবার ভয় হতে লাগল,এখন তো যে কোনো সময় উনি চলে আসবেন,
রাতের খাবার সাজাচ্ছি হঠাৎ মনে হলো পিছনে আমার পিঠে হাত দিয়ে কেউ কিছু বলে উঠল,রাক্ষসটা মনে হয় এসেছে গেছে এসেই শুরু করে দিয়েছে,আমি রাগ নিয়ে পিছনে তাকালাম,তাকিয়ে আমি অবাক পিছনে কেউ নেই,তাহলে কি আমি ভুল শুনলাম,আমার অবচেতন মন উনার কথা ভাবছে বলেই কি এমনটা হলো,
বিষয়টাকে পাত্তা না দিয়ে আমি কাজে মন দিলাম,
.
রাতে খাবার সময় ও উনি এলেন না এবার আমার একটু চিন্তা হলো রাগ করে কি সন্যাসী হয়ে গেলেন মা কি ,বাড়ী ঘর ছেড়ে একদম বাইরে গিয়ে বসে আছেন,
ভালোই হলো আমি বেঁচে গেলাম,উনি সন্যাসী হয়ে গেছেন ভেবে মনে মনে প্রশান্তি অনুভব করলাম,
খাওয়া শেষ করে রুমে যাচ্ছি এমন সময় নিলয় এসে পথ আগলে দাঁড়ালো ,ও সামনে আসতেই আমি ব্রু কুচকে ওর দিকে তাকালাম,
ও গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল,আমাকে কেন মিথ্যে বলেছিলে তুই,তুই তো বলেছিলে প্রেম ভালবাসা করে কখনও বিয়ে করবি না তাহলে এমনটা কেন করলি,
ওর হঠাৎ এমন প্রশ্নে আমি থতমত খেয়ে গেলাম,
কি থেকে কি বলবো আমি তো ওকে সত্যি বলেছিলাম,আমি যে পরিস্তিতির স্বীকার সেটা কি করে বলবো ওকে।আমি ওর প্রশ্নটা এড়িয়ে গিয়ে বলে উঠালাম,
অনেক রাত হয়ে আমার খুব ঘুম পাচ্ছে তোর সাথে পরে কথা বলবো বলেই আমি ওকে পাশ কাটিয়ে চলে এলাম,
.
রুমে ঢুকে আমি অবাক হয়ে গেলাম ,আমি তো লাইট অন করে গিয়ে ছিলাম,তাহলে অফ করল কে রুম এতো অন্ধকার হয়ে আছে কেন??এমনিতেই ভয় পাচ্ছি বিকেলে আপুর সাথে বসে হরর ফিল্ম দেখে,
এখন এই অন্ধকারে আমি একা একা থাকবো কি করে ,রুমে না ঢুকেও তো উপায় নেই ,দোয়া পরতে পরতে ভয়ে ভয়ে রুমে ঢুকলাম,লাইট অন করার জন্য হাতরে হাতরে রুমে হাঁটছি,হঠাৎ কেউ আমাকে পেছন দিক থেকে জরিয়ে ধরলো ,আতংকিত হয়ে আমি ভুত ভুত বলে বিকট এক চিৎকার দিয়ে উঠলাম।
(চলবে)
~হ্যাপি রিডিং?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here