অব্যক্ত_প্রিয়তমা ১৪।

0
420

#অব্যক্ত_প্রিয়তমা
#ফাতেমা_তুজ
#part_14

সেকেন্ড সেমিস্টারের পরীক্ষা চলছে। প্রচন্ড মনোযোগী হয়েছে অনিন্দিতা। আসিমের সাথে বন্ধুত্ব আরো গাঢ় হয়েছে। নির্ভীকের রহস্য উন্মোচনে ব্যর্থ সে। তবু ও নানা ভাবে অনিন্দিতা কে অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছে আসিম। নির্ভীক মাহতাব , সে তো নিজের নামের মতোই দূর্লভ। অনিন্দিতার মন আজকাল কোনো কিছু তেই টানে না। নির্ভীকের প্রতি ভালোবাসা টা যেন তাঁকে একটু একটু করে শেষ করছে। এই এতো গুলো মাসে স্বল্প পরিমানে কথা হয়েছে। কখনো বা মিনিট দুয়েক কখনো বা কয়েক সেকেন্ড। অনিন্দিতা অভ্যস্ত হয়ে গেছে। মানুষ অভ্যাসের দাস কথা টা চিরন্তন সত্য। চলছে এভাবেই দিন। ভারসিটি তে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে মেয়েটা। তখনি খবর আসে হীর অন্তঃসত্ত্ব। কথা টা শুনেই এক চিলতে হাসি ফুটে অনিন্দিতার। দেড় বছর আগে হীরের সাথে পৃথিবীর বিয়ে টা হয়ে যায়। অবশ্য অনিন্দিতার জোড়াজোড়ির কারনেই সব সম্ভব হয়েছে। আরশাদের দিকে দৃষ্টি পাত করতেই মুখ কালো করে নেয় মেয়েটা। শক্ত হয়ে বলে
_ আমি যাবো না আব্বু। তোমরা যাও , আমার পরীক্ষা রয়েছে।

_ তাঁতে কি হয়েছে অনি। আজ কেই তো তোমার শেষ এক্সাম। হীর অন্তঃসত্ত্বা শুনে ও তুমি যাবে না, কথাটা শুনলে মেয়েটা কতো টা কষ্ট পাবে ভেবেছো ?

_ আমার যেতে ইচ্ছে করছে না আব্বু।

_ একটা কথা বলবে আমায় তুমি কেন এতো পরিবর্তন হয়ে গেলে । হাসি খুশি মুখে সব সময় বিষন্নতা কেন ?

মাথা নিচু করে অনিন্দিতা । উত্তর দেওয়ার মতো ভাষা খুঁজে পায় না। চোখ দিয়ে অশ্রু নেমে যায়। কতোটা পরিবর্তন হয়েছে সে ? মেয়ের উত্তর না পেয়ে চলে যায় আরশাদ। আরশির সামনে দাড়িয়ে নিজেকে পরখ করে অনিন্দিতা। চেহারায় মলিনতা এসেছে। রঙ টা ও কিছু টা উজ্জ্বল হয়েছে শুধু চঞ্চলতা থমকে গেছে। একটা মানুষের জন্য আর কতো দগ্ধ হবে জানা নেই। ঘড়ির কাঁটা ঢং ঢং শব্দ তুলে। কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে আসে অনিন্দিতা। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় পিছু ডাকে নির্ভীক। অবাক হয়ে যায় অনিন্দিতা। নির্ভীকের মুখে মৃদু হাসি, অনিন্দিতা বলে
_ কিছু বলবেন ?

_ পরীক্ষা কেমন হয়েছে ?

_ ভালো।

_ আচ্ছা যান।

অনিন্দিতা পথ বাড়ায়। নির্ভীকের চাহনি মৃত। নিলিপ্ত দৃষ্টি তে তাকিয়ে থাকে মেয়েটার যাওয়ার পানে। প্রতি টা কদম যেন চূর্নবিচূর্ন করে দিচ্ছে। ভারসিটি তে যায় না সে। চলে আসে গ্রাম অঞ্চলের দিকে। নদীর ধারে বসে থাকে বেশ অনেকক্ষণ। পকেট থেকে একটা রেকর্ডার বের করে সে। সুইচ অন করতেই মিষ্টি এক বাচ্চা মেয়ের কন্ঠ ভেসে আসে। গড় গড় করে ইংরেজি তে সংলাপ বলছে। প্রতি টা কথা অতি মনোযোগ দিয়ে শুনে নির্ভীক। চোখ দুটো ছলছল রেখে বলে
” অব্যক্ত প্রিয়তমা।”

.

” যদি জীবন থমকে দাঁড়ায় তাহলে ঘুরে দাঁড়াও। যদি পেছন থেকে আঘাত পাও তবে সামনে তাকাও। কেউ পা টেনে রাখলে হাত দিয়ে আগাও। শুধু থমকে থেকো না। অনুভব করো নিজেকে, অনুভবেই যে শক্তি। সব সময় মনে রাখবে পিছনে ফিরে তাকানো টা বোকামি নয়। বরং বেঁচে থাকার এক একটা চেষ্টা। শুধু থমকে থেকো না। ”

” যদি পথ হারিয়ে ফেলি তাহলে কি করবো স্যার ? ”

” পথ খুঁজবে , দাঁত কামড়ে পিছু লেগে থাকবে। তবু ও থমকে থাকবে না। এই যে তোমাকে দিয়ে আমরা আশা রেখেছি রিতি মতো দাঁত কামড়ে পরে আছি। ঠিক তেমনি তোমাকে ও দাঁত কামড়ে পরে থাকতে হবে। ”

অনিন্দিতা মাথা ঝাঁকায়। পরীক্ষা শেষে একজন প্রফেসর তাকে নানান প্রশ্ন করছিলেন। কথার প্রসঙ্গে কথা গুলো বলে সে। অনিন্দিতার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
_ এগিয়ে যাও।

প্রফেসর চলে যান। অনিন্দিতা ক্লান্তি হটিয়ে হাঁটা লাগায়। পথে দেখা হয় আসিমের সাথে। বিচলিত সে , আসিম বলে
_ নির্ভীক স্যারের সাথে যে মেয়েটা কে দেখেছিলে না ঐ যে রোজ ওনি তোমার সাথে দেখা করতে এসেছে।

_ আমার সাথে কেন দেখা করতে এসেছে ?

_ আমি ঠিক জানি না অনি। তুমি ক্যাম্পাসের দিকে যাও।

_ আচ্ছা।

আসিমের আচারন টা কেমন লাগছে। এদিকে রোজ দেখা করতে এসেছে। সব কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। ক্যাম্পাসে পৌছাতেই চোখে পরে রোজ কে। অনিন্দিতা এগিয়ে যায়। রোজের মুখে হাসি খুশির ছাঁপ। রোজ বলে
_ কেমন আছো অনিন্দিতা?

_ জি ভালো। আমার সাথে দেখা করতে এসেছেন ?

_ হ্যাঁ। একটা কথা জানাতে এসেছিলাম। তাঁর আগে একটা কথা বলো তো নির্ভীককে ভালোবাসো তুমি ?

_ সমস্ত টা জেনেই তো এসেছেন।

_ বাহ ইনটেলিজেন্ট মেয়ে। নির্ভীক তোমাকে ভালোবাসে না সেটা জানো তো ?

_ জি।

_ তাহলে কেন পরে আছো। এভাবে ওর জীবন টা নষ্ট কেন করছো ? একটু শান্তি তে বাঁচতে দাও ওকে।

_ নির্ভীক ভাইয়া আপনাকে পাঠিয়েছে ?

_ না আমি ই এসেছি। সত্যি টা জানাতে এসেছি।

_ কোন সত্যি জানাতে এসেছেন আপনি?

ব্যাগ থেকে ফাইল বের করে রোজ। ফাইল টা অনিন্দিতার হাতে দিয়ে বলে
_ তুমি সহজে বিশ্বাস করবে না তাই পেপার নিয়ে এসেছি। আমি আর নির্ভীক অফিসিয়ালি হাসবেন্ড ওয়াইফ গত ছয় বছর ধরে।

ভ্রু কুঁচকে নেয় অনিন্দিতা। কথা টা যেন তাঁর মাথার উপর দিয়ে গেল। ফাইল টা খুলে দেখে সে। কোনো অনুভূতি নেই তাঁর মাঝে। রোজ কে এক পলক দেখে বলে
_ অভিনয় টা ঠিক ঠাক হলো না। আরেকটু ভালো করে চেষ্টা করবেন। আপনার মতো বিদেশে পড়াশোনা না করলে ও আমি পড়াশোনা করেছি। নকল আর আসল এর পার্থক্য বুঝি। আর যে সাইন টা সেটা ও নির্ভীক স্যারের না।

_ অনিন্দিতা।

_ গলা নামিয়ে কথা বলুন। নির্ভীক ভাইয়ার সাথে আপনার কি সম্পর্ক আমার জানা নেই। তবে যে মিথ্যে অভিনয় করলেন এটা ভালো হয় নি। একদম ই অনুচিত হয়েছে।

_ অনিন্দিতা আমার কথা শোনো।

হাজারো ডাকে ও অনিন্দিতা কথা শুনে না। এক পা দু পা করে এগিয়ে যায়। রোজের চোখ ভিজে যায়। যন্ত্রনা যেন বুকে আগুন হয়ে ঝরছে।

.

বাসায় ফিরে না অনিন্দিতা। কয়েক বার ফোন দিতে গিয়ে ও দেয় না। অশ্রু তে পুরো মুখে আঠালো রূপ ধারন করেছে। সময় তিনটের কাছাকাছি। বা হাতের তর্জনি দিয়ে চোখ মুছে সে। নির্ভীকের নাম্বার ডায়াল করে ফোন লাগায়। আশ্চর্য এক বার রিং হতেই ফোন রিসিভ করে সে। অনিন্দিতা কিছু বলার সুযোগ পায় না। ওপাশ থেকে উদ্বিগ্ন ক্লান্ত কন্ঠে ভেসে আসে
” অনিন্দিতা, ফোন সুইচ অফ কেন ? কোথায় আপনি। বাসায় আসেন নি কেন ?”

” কারন টা কি জানা নেই নির্ভীক মাহতাব ? নাকি সব জেনে বুঝে ও না বোঝার ভান করছেন। ”

” কি সব বলে যাচ্ছেন আপনি। আমার কথা শুনুন বাসায় ফিরে আসুন। ”

” লোকেশন দিয়ে দিচ্ছি চলে আসুন। ”

” অনিন্দিতা, অনিন্দিতা, ”

অনিন্দিতা উত্তর দেয় না। লোকেশন ম্যাসেজ করে দিয়ে আবারো ফোন সুইচ অফ করে দেয়। ব্যাগ থেকে ডায়েরী বের করে লেখালেখি করে। নির্ভীক তাঁকে ভালোবাসে না , গত দেড় বছর নির্ভীককে বিরক্ত ওহ করে নি। তবে কেন করলো এমন ? মেঘের ঘনঘটার মতো রূপ পরিবর্তন হয় অনিন্দিতার । তাচ্ছিল্য ফুঁটিয়ে বলে
” দূর থেকে ভালোবাসা টা ও যদি অন্যায় হয় , তাহলে আমার মৃত্যু যেন হয় ”

মিনিট পনেরো যেতেই নির্ভীক চলে আসে। চোখে মুখে কাঠিন্য ফুঁটিয়ে নেয়। অনিন্দিতার হাসে , খলবিলিয়ে হাসে সে। অবাক হয়ে নির্ভীক বলে
” অনিন্দিতা , এটা কি ধরনের অসভ্যতামু। ”

” কেন নির্ভীক মাহতাব ? কেন ভালো লাগছে না। বিবাহিত হয়ে ও কেন লুকিয়ে রেখেছেন বিয়ের কথা ? ”

” আমার কথা টা শুনুন। ”

” হুসস একদম নয়। আজ আমি বলবো। অনেক তো বলেছেন আপনি। আমাকে কয়েক টা প্রশ্নের উত্তর দিন তো , আমি কি গত দেড় বছরে আপনাকে একবার ও বলেছি ভালোবাসি কিংবা আপনাকে স্পর্শ করেছি ? ”

” প্লিজ অনিন্দিতা আমার কথা টা শুনুন। ”

” উত্তর দিন নির্ভীক মাহতাব। ”

চমকে যায় নির্ভীক। অনিন্দিতার দুই চোখ থেকে যেন আগুন ঝরে। হঠাৎ করেই ঝাঁপিয়ে পরে নির্ভীকের গাঁয়ে। শার্টের কলার চেপে বলে
” কেন এই নাটক ? আমি তো শেষ হয়েই গেছি তাহলে কেন আবার নাটক ? আমি তো আমার ভাগ্য কেই মেনে নিয়েছি। তবে কেন করলেন এমন ? আমি তো মিথ্যে জানতে চাই নি। আমি শুধু আপনাকেই ভালোবাসি , গুটিয়ে নিয়েছি নিজেকে। পাগলামি নেই আমার মাঝে। ”

” মিথ্যে বলছেন অনিন্দিতা। ”

” কোনো মিথ্যে নয় সব সত্যি। আমি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি এটাই সত্যি। ”

নির্ভীকের চোখ মৃত দৃষ্টি দিয়ে আছে। অনিন্দিতা একি কথা বলে যাচ্ছে। হঠাৎ করেই অনিন্দিতা কে হেঁচকা টান মারে নির্ভীক। একদম কাছে নিয়ে আসে। এক হাতে চেপে ধরে চোখে চোখ রাখে। বিষয় গুলো এতো টাই দ্রুত ঘটেছে যে থতমত খায় অনিন্দিতা। নির্ভীকের চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে সাথে রয়েছে দৃশ্যমান পানি কনা। হঠাৎ করেই অনিন্দিতা ঘাড়ের জামা টা একটু নিচু করে। চমকে যায় অনিন্দিতা। ছুটোছুটির চেষ্টা করে তবে পারে না। নির্ভীকের ঠান্ডা হাত অনিন্দিতার ঘাড়ে স্পর্শ করে। পরক্ষনেই রক্ত লাল চোখে বলে
” কেন লিখেছেন আমার নাম ? ”

” ভালোবাসি তাই লিখেছি। ”

” কেন নিজেকে আঘাত করেছেন বারংবার?”

” ভালোবাসি তাই আঘাত করেছি। ”

” কেন ভালোবাসেন আমায় ? ”

” জানি না , জানি না আমি। আমাকে এভাবে না মেরে মৃত্যু দিন আমায়। আমি আর পারছি না। ”

অনিন্দিতার হাত ছেড়ে দেয় নির্ভীক। দু হাতে খামচে ধরে নিজের চুল। হুট করেই অনিন্দিতার কাছে চলে আসে। দু হাত এক সঙ্গে চেপে ধরে বলে
” আর একটা আঘাত পরলে খুন করবো আমি। অনেক সহ্য করেছি। রক্তাক্ত হতে ভালো লাগে তাই না ? ”

” হ্যাঁ ভালো লাগে রক্তাক্ত হতে। যত বার আপনি আঘাত পাবেন অনিন্দিতা ততো বার নিজেকে আঘাত করবে। আমার চাঁদ আপনি , আমার একান্ত চাঁদ। ”

আগুনে পানি ঢালার মতো দমে যায় নির্ভীক। কয়েক পা পিছিয়ে যায় সে। অনিন্দিতার চোখে মুখে উৎকন্ঠা ছড়িয়ে আছে। হঠাৎ করেই কেঁদে উঠে মেয়েটা। মাটি তে বসে পরে পা ছড়িয়ে। নির্ভীক কোনো কথাই বলে না। অনিন্দিতার চিৎকার কানে আসতেই থমকে চায়।অনিন্দিতা বলে
” আমাকে ভালোবাসেন না যখন ,তখন মায়া কেন দেখাচ্ছেন ? যান আপনি , চলে যান আমার থেকে, বহু দূরে চলে যান। চাই না আপনাকে, আমি এভাবেই ভালো আছি। মৃত লাশ হয়ে আছি , আমার মৃত্যু হলে ও আপনি আমার কাছে আসবেন না। কখনো আসবেন না, চলে যান। খুব ভালোবাসি আপনাকে ভালোবাসি”

মিনিট দুয়েক পর চোখ খুলে অনিন্দিতা। আশে পাশে কেউ নেই। চলে গেছে নির্ভীক। নিজের গাঁয়ে আঘাত করে অনিন্দিতা। নির্ভীক কে ছাড়া নিশ্বাস ওহ যেন বিষ হয়ে যায়।

** ছোট্ট এই পরীক্ষার্থীর জন্য দোয়া করবেন। 14 তারিখ এ পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষা ।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন । যারা এখনো 13 পার্ট পড়েন নি। পড়ে নিন , লিংক কমেন্টে। 13 নাম্বার পার্ট পড়ার জন্য আপনাকে গ্রুপে জয়েন হতে হবে।

গ্রুপ Fatema’s story discussion

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here