অবশেষে বৃষ্টি পর্ব ৫+৬

0
534

#অবশেষে_বৃষ্টি
পর্ব ৫
#নীলাভ্র_নেহাল
.
পৃথা সায়ানকে ফেসবুকে একটা টেক্সট পাঠিয়ে বসে অপেক্ষা করতে লাগল।

সায়ান ফ্রেশ হয়ে নাস্তা দিতে বললো মাকে। নাস্তা খাওয়ার পর অর্পা চলে গেলো। এখনো বাইরে টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছে। কিন্তু না যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। সায়ান অর্পাকে বাসায় থেকে যেতে বলবে না এটা ও জানে। নিজে থেকে আজকে না যেতে চাওয়াটা বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে। সায়ান তখন নিতে পারবে না ব্যাপারটা। অর্পা চলে গেলে ফেসবুকে ঢুকলো সায়ান। ঢোকার সাথে সাথেই মেসেঞ্জারে মেসেজ রিকুয়েষ্ট দেখে আর থাকতে পারলো না। আনন্দে লাফিয়ে উঠলো। পৃথা মেসেজ পাঠিয়েছে! ও দ্রুত রিপ্লাই দিলো মেসেজের।

পৃথা বলল, কি করছিলেন?
– একটা ফ্রেন্ড এসেছিল, ও চলে গেলো মাত্র।
– মেয়ে ফ্রেন্ড নিশ্চয়ই?

সায়ান কি উত্তর দেবে বুঝতে পারলো না। পৃথাকে মিথ্যে বলত্র ইচ্ছে করছিল না। কিন্তু এই মুহুর্তে ওয়েদারের যা অবস্থা। বৃষ্টির সন্ধ্যা, তার উপর রোমান্টিক পরিবেশ। এমন আবহাওয়ার দিনে একটা মেয়ে ফ্রেন্ড এসেছে শুনলে ও নিশ্চয়ই অন্য কিছু ভাব্বে। অর্পা ঘনিষ্ঠ হতে চেয়েছিল এটাও ওকে বলা যাবে না। অর্পার সম্মান নষ্ট করার অধিকার ও সায়ানের নেই। সায়ান বাধ্য হয়েই মিথ্যে বলল, ছেলে ফ্রেন্ড।
– ওহ। চা খেয়েছেন?
– না।
– কেন? বিকেলে চা খান না?
– আজ খাই নি।
– আমি মাত্র চা নিয়ে বসলাম। ধোয়া উঠছে চায়ের কাপে।
– ছবি দেখি?

পৃথা একটা ছবি তুলে পাঠালো সায়ানকে। সায়ান চায়ের ছবি দেখেই মুগ্ধ হয়ে বলল, তোমার চায়ের রং দেখেই মনে হচ্ছে খেতে দারুণ লাগবে। ইচ্ছে করছে খেতে।
– কখনো বাসায় আসলে বানিয়ে খাওয়াবো।
– কখনো বাসায় আসলে মানে? অবশ্যই তোমার বাসায় যাবো, নিয়ে যেতে চাও না?
– এই বাসায় তো আনার সুযোগ নেই। থাকি খালার বাসায়। খালা যদি বুঝতে পারে আমার ছেলে বন্ধু আছে তাহলে বাবাকে বলে দেবে।
– ওহ হো। তাহলে আমাদের বাসায় এসে বানিয়ে খাওয়াবে।
– সে দেখা যাক।

পৃথা আরেকটা ছবি পাঠিয়ে দিলো। সায়ান ছবি দেখেই বলল, ওয়াও! ভুনা খিচুড়ি?
– হুম। ভার্সিটি থেকে ফিরে রান্না করেছি।
– তোমার এত প্রতিভা জানতাম না তো।
– এটা আবার প্রতিভা হলো নাকি? মেয়েদেরকে রান্না জানতে হয়।
– তাই নাকি? কই আমার ফ্রেন্ড রা তো কেউই রান্না জানে না।
– আপনার অনেক মেয়ে ফ্রেন্ড তাই না?
– না মানে কয়েকজন ফ্রেন্ড আছে। তবে গত এক সপ্তাহ কারো সাথেই আমার যোগাযোগ হয়নি।
– কেন হয়নি?
– যোগাযোগ করিনি।
– কেন?
– তোমাকে হন্য হয়ে খুঁজছিলাম। পাচ্ছিলাম না কোথাও। এতটাই ডিপ্রেসড আর টেন্স ছিলাম যে কারো সাথে কথা বলার ইচ্ছে করেনি।

পৃথা অবাক হলো। কারণ সায়ানের কথাটা একটু হলেও বিশ্বাস হয়েছে। একবার মনে হল যে সায়ান মিথ্যেও বলতে পারে। মিথ্যে বলেই বা লাভ কি? নানান এলোমেলো ভাবনা আসতে লাগল পৃথার মনে।

সায়ান বললো, আমি কি তোমাকে ভিডিও কল দিতে পারি?
– না মানে আমি কখনো কারো সাথে ভিডিও কলে কথা বলিনি। আসলে কেউ তো নেই আমার।
– আজকে বলবে। আমি ছাড়া তোমার কেউ থাকবেও না। কল দিই প্লিজ? তোমাকে দেখার সাধ জাগছে খুব।

পৃথা উঠে গিয়ে দ্রুত মুখ ধুয়ে আসলো। দরজা লাগিয়ে দিলো রুমের। মুখে ক্রিম ও পাউডার দিলো, চুলগুলো আঁচড়ালো। তারপর মেসেজ দিলো, হ্যাঁ এখন কল দিন।
সায়ান উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছিল। যদিও এর আগে কখনো কাউকে ভিডিও কল কিংবা কল দেয়ার আগে পারমিশন নেয়নি ও। এবারই প্রথম। আসলে কারো সাথে কথা বলার আগে পারমিশন নেয়ার প্রয়োজনও হয়নি। মেয়েরাই আগে ওকে কল দিতো।

সায়ান ভিডিও কলে পৃথাকে দেখে মুখে হাত দিয়ে চুপ করে রইলো। পৃথা বলল, কি দেখছেন?
– তোমাকে। তোমাকে ভিডিও কলেও সুন্দর লাগে।
– কি যে বলেন না! আপনি আমার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর।
– তাই নাকি? অবশ্য মেয়েরা বলে।
– মেয়েরা? আচ্ছা মেয়েদের সাথে কত ওঠাবসা আপনার শুনি?
– আগে প্রচুর ছিল। এখন কমিয়ে দিয়েছি।
– ঠিক বিশ্বাস হল না।
– বিশ্বাস করো। এই যে তোমাকে ছুঁয়ে বলছি।

সায়ান ফোনের স্ক্রিনের উপর হাত রাখলো। পৃথা হেসে ফেললো ওর কান্ড দেখে। সায়ান অবাক হয়ে ওর হাসি দেখছিল। পৃথা বলল, এখন কি করবেন?
– তোমার সাথে কথা বলবো।
– তারপর কি করবেন?
– তোমার ছবি দেখবো।
– কেন?
– দেখতে ভালো লাগে তাই।
– সত্যি করে বলুন তো আজকে বাসায় যাওয়ার পর থেকে একবারও দেখেছেন?

সায়ান কি বলবে বুঝতে পারলো না। অন্য কোনো মেয়ে হলে নিঃসন্দেহে মিথ্যে কথা বলে দিতো। কিন্তু পৃথাকে মিথ্যে বলতে ইচ্ছে করছে না। ভিডিও কলে লুকিয়ে যাওয়াও যায় না। ও বলল, না দেখার সুযোগ পাইনি। এসেই ঘুমিয়ে পড়েছি। ঘুম থেকে উঠে দেখি বন্ধু এসেছে।
– আচ্ছা। এখন তাহলে রাখি?

সায়ানের ফোন রাখার কোনো ইচ্ছেই ছিল না। পৃথা রেখে দিতে চাইছে বলে বলল, আচ্ছা। রাতে কি আরেকবার কল দিতে পারি?
– সে রাতে দেখা যাবে।

এভাবেই চলতে লাগলো কথোপকথন। কথা বাড়তে লাগল। বিভিন্ন কথা শেয়ার করা শুরু হল দুজনাতে। পৃথা নানান বিষয়ে গল্প করতে পছন্দ করে। রাতে ফোন নাম্বার আদান প্রদান হল, এরপর শুরু হল ফোনে কথা বলা। প্রথমদিনে খুব বেশি কথা হল না। পরেরদিন সকালে টুকটাক কথা হলো। পৃথা ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য বের হয়েছে এমন সময় সায়ান ফোন দিয়ে বলল, যেখানে আছো সেখানেই থাকো। আমি আসছি।

পৃথা বাঁধা দেয়ার সুযোগ পেলো না। সেদিন বাইক থেকে লাফ দেয়ার পর সায়ানের সুবোধ হয়েছে। আজকে সুষ্ঠু সুন্দর ভাবে বাইক রাইড করছে। ধীরেধীরে চালাচ্ছে যাতে কোনো ধাক্কা না লাগে। পৃথা মনেমনে হাসছে। সেইসাথে আজকে আরেকটা ব্যাপার ঘটছে। সেদিন বাইকে উঠে কেমন অচেনা একটা টেনশন কাজ করছিল। কিন্তু আজ কোনো টেনশন হচ্ছে না। বরং মনটা রঙিন হয়ে উঠেছে। যা দেখছে তাই ভালো লাগছে।

রাস্তার পাশে বাইক থামিয়ে সায়ান হাওয়াই মিঠাই কিনে পৃথাকে দিলো। পৃথা দুটো রঙের হাওয়াই মিঠাই নিয়েছে, গোলাপি ও হলুদ। ধানমন্ডি লেকের পাশে বসে পা ঝুলিয়ে হাওয়াই মিঠাই খাচ্ছে দুজনে। কারোরই ক্লাসে যাওয়ার তাড়া নেই। আজকের সকালটা এতটাই সুন্দর যে ক্লাসে যেতে মনও চাইছে না।
রোদ ঝলমলে একটা দিন। সোনালী আলোয় গাছের পাতা চিকচিক করছে। গতকাল বৃষ্টি হওয়াতে গাছগুলো আরও সবুজ হয়ে গেছে। রোদের ঝলকানিতে ভালো লাগছে খুব। তেমন একটা গরম পড়েনি, হালকা ঠান্ডা বাতাস। এই সময়ে লেকের পাড়ে পা ঝুলিয়ে বসে থাকতে কার না ভালো লাগে!

গল্প করতে করতে বেলা বয়ে যেতে লাগলো। চারিদিকে লোকজন বাড়ছে। তবুও আজ ক্লান্তি নামছে না। দুপুর গড়িয়ে এলো একই জায়গায় বসে থেকে। এরপর সায়ান বলল, অনেক্ষণ বসে আছি। চলো না কোনো রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসি।

পৃথা রাজি হলো। চলে এলো রেস্টুরেন্টে। এখানেও আড্ডা চলতে লাগল। গত একদিনের ব্যবধানেই দুজনের মধ্যে এত বেশি কথা হয়েছে যে, দুজনের মাঝে বোঝাপড়া এতই ভালো মনে হচ্ছে, দুজনে একসাথে সারাজীবন চলতে পারবে। পৃথা প্রথমবার কোনো ছেলে বন্ধু পেয়েছে। তাই ওর মধ্যে উত্তেজনাবোধ বেশি। আর সায়ান এর আগে অজস্র মেয়ের সাথে মিশলেও কারো সাথে কথা বলে এতটা আনন্দ পায় নি। কারো সাথে কথা শেয়ার করে এত ভালো লাগে নি ওর। মেয়েটার মাঝে নেগেটিভ ধারণা কম। কোনোকিছু নেগেটিভ মাইন্ডে নেয় না। কথা বলে আরাম পাওয়া যায়। তাই হাজারো কথা ও গল্পে কখন সময় এত পেরিয়ে গেছে কেউ বুঝতেও পারে নি।

দুজনেরই বিরিয়ানি পছন্দ। বিরিয়ানি নিয়েও গল্প চললো। খাওয়াদাওয়া শেষ করে আইসক্রিম আর জুস নিয়ে তর্ক বাঁধল। পৃথা আইসক্রিম খেতে চায়, সায়ান পৃথাকে জুস খেতে বলে। অবশেষে সায়ান বললো আগে জুস খাও তারপর আইসক্রিম।

এই থেকেই বোঝা গেলো সায়ান বউকে খুব আদর স্নেহ করবে। মনেমনে হাসলো পৃথা।

দুপুর পেরিয়ে গেলে পৃথা বাসায় যেতে চাইলো। সায়ান আর আটকালো না। সকাল থেকেই ওর সাথে আছে। আজকের জন্য যথেষ্ট হয়েছে।

বাসার কাছাকাছি পৃথাকে নামিয়ে দিয়ে এলো সায়ান। বলে এলো এখন থেকে প্রতিদিন সায়ানই পৃথাকে বাসায় রেখে আসবে আবার ভার্সিটিতে নিয়ে যাবে। কোনোকিছু প্রয়োজন হলেও পৃথা যেন সায়ানকে বলে। সায়ানের মনোভাব ভালো লাগলো পৃথার।

সায়ানের ফোন সকাল থেকে সাইলেন্ট করে রেখেছিল। এখন ফোন নিয়ে দেখল অনেক গুলো কল এসেছে অর্পার নাম্বার থেকে। আগে প্রতিদিন প্রতিক্ষণ অর্পার সাথে সায়ানের কথা হত। দুজনে অনেক কাছের বন্ধু। পারসোনাল সব কথা শেয়ার হতো, আড্ডা, ঘুরাঘুরি সবই হতো। হঠাৎ করে সায়ানের এমন পরিবর্তন অর্পাকে ভাবাচ্ছে। এরকম করার কারণ কি হতে পারে? সায়ান কি নতুন কাউকে পেয়েছে? চিন্তায় ডুবে গেছে অর্পা।

সায়ান কল ব্যাক করলে ওর চিন্তিত গলা শোনা গেল, তুই কোথায়?
– এইতো বাসায় যাচ্ছি।
– কোন জায়গায় আছিস বল? এক্ষুনি তুই আমার সাথে দেখা করবি। বাইক বাসায় রেখে ২৭ নাম্বারে আয়। আমি আসছি।

অর্পা গাড়ি নিয়ে এসেছে। সায়ানের সামনে গাড়ি ব্রেক কষে সায়ানকে গাড়িতে উঠতে বললো। গাড়িতে উঠতেই অর্পা সায়ানকে জাপটে ধরলো। জড়িয়ে ধরে রইলো অনেক্ষণ। তারপর গাড়ি স্টার্ট দিলো।

সায়ান বললো, কোথায় যাচ্ছি?
– যেখানে নিয়ে যাবো। তুই হঠাৎ করে চেঞ্জ হয়ে গেলি কেন বলতো?
– মানে? কি চেঞ্জ হয়েছি?
– তোর সবকিছুই বদলে গেছে।

সায়ান অন্যকিছু বলে বিষয়টাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো। অর্পা দ্রুত গাড়ি চালিয়ে একটা শপিং মলে এলো। নিজে পছন্দ করে শার্ট, পাঞ্জাবি কিনে দিলো সায়ানকে। বললো, এটা তুই নিয়ে যা। যখন পরতে বলব, পরে আমার সামনে আসবি। ওকে?
– ওকে বাবা। আমি তোকে একটা কিছু গিফট করি?
– এটা আবার জিজ্ঞেস করে করতে হবে?
সায়ান একটা সুন্দর জামা গিফট করলো অর্পাকে। অর্পা দোকানে ঘুরেঘুরে অনেকগুলো কেনাকাটা করলো। সায়ান দাম দিতে গেলে বাঁধা দিচ্ছিল অর্পা।

কেনাকাটা শেষ করে রেস্টুরেন্টে এসে খাওয়াদাওয়া করলো। আড্ডা দিলো অনেক্ষণ ধরে। আড্ডার পর যে যার বাসায় চলে গেলো। চলে যাওয়ার সময় বেশ খুশি খুশি দেখাচ্ছিল অর্পাকে।

রাত ঠিক বারোটা পাঁচ মিনিটে অর্পা সায়ানকে কল দিলো। ফোন রিসিভ করতেই সায়ান শুনলো অর্পা কাঁদছে। অবাক হয়ে সায়ান বলল, কি হয়েছে পাগলী? কাঁদছিস কেন?
– তুই আমাকে ফোন করলি না? একটা টেক্সট ও না?
– কেন? দশটার দিকেই তো চ্যাট করলাম।
– সায়ান, এই চ্যাটিংয়ের কথা বলছি না।
– তাহলে?
– আমার বার্থডে সায়ান। আজ আমার বার্থডে।

মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল সায়ান। এতকিছুর ভিড়ে অর্পার জন্মদিনের কথা ভুলে গিয়েছিল ও। বন্ধু বান্ধবীদের সাথে তেমন যোগাযোগ করছে না বলে জানতেও পারে নি। ও দুদিন ধরে পৃথাকে নিয়ে এতটাই ব্যস্ত ছিল যে একবার মনেও পরবনি আজ কত তারিখ! এত বড় ভুল হয়ে গেলো। সায়ান সরি সরি বলে কোনো কূল পেলো না।

অর্পা কল কেটে দিয়ে ফোন বন্ধ করে রাখলো। সায়ান বাধ্য হয়ে এই রাত্রিবেলা একটা গিফট নিয়ে হাজির হল অর্পার বাসার সামনে। অর্পার ফোন বন্ধ। সায়ান অর্পার মাকে কল দিয়ে বলল অর্পাকে দিতে। অর্পা রিসিভ করলে সায়ান বলল, জানালা দিয়ে বাইরে তাকাও।

এত রাতে সায়ান আসবে এটা ভাবতে পারেনি অর্পা। সবসময় ও সিনেমায় দেখেছে এমন হয়। ওর জন্য সায়ান ছুটে আসবে এটা ওর কাছে স্বপ্নের মত লাগছে।

অর্পা নিচে নেমে এলে সায়ান ছুটে গিয়ে অর্পার সামনে দাঁড়িয়ে ওর হাতে একটা ফুলের তোড়া দিলো৷ তারপর দিলো একটা গিফট ও একগাদা বেলুন।

অর্পা সায়ানকে জড়িয়ে ধরে বলল, আমার কলিজা রে। কেন তোর সাথে রাগ করে আমি থাকতে পারি না?
– কারণ তুই যে আমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসিস তাই।
– এটা তো ঠিকই বুঝিস। আমার সাথে ঠিকমতো কথা বলিস না কেন?
– এখন থেকে বলবো। কাল একটা পার্টি দিবো ফ্রেন্ডরা মিলে।
– সত্যি!
– হ্যাঁ।
– সারপ্রাইজ দিলি আমাকে। থ্যাংকস রে। থ্যাংক ইউ সো মাচ।

চলবে..

#অবশেষে_বৃষ্টি
পর্ব ৬
#নীলাভ্র_নেহাল
.
পৃথা অপেক্ষা করছে সায়ানের ফোনের জন্য। কারোর জন্য অপেক্ষাটাও এত মধুর হতে পারে এটা জানা ছিলো না পৃথার। জীবনে প্রথমবারের মত এই অনুভূতি। কারো একটা কলের জন্য এতটা সময় অপেক্ষা করা, কারো একটা টেক্সটের জন্য অপেক্ষা করা। প্রেমের স্পর্শ এমনই এক জিনিস, যা মানুষের মাঝে একবার ঢুকে পড়লে বিরক্তিকর জিনিসগুলোও আনন্দের হতে থাকে।

প্রেমে পড়লে দমকা হাওয়ায় মধুর লাগে, মনেহয় প্রেমের বাতাস। শীতল হাওয়াও মিষ্টি লাগে, যেন রঙিন প্রেমের মাতাল হাওয়া। প্রেম ব্যাপার টাই আশ্চর্যজনক। বসে বসে আনমনে এসব হাবিজাবি ভাবছিল পৃথা। সারে বারোটা বেজে গেলো, এখনো সায়ানের ফোন নেই৷ অথচ সায়ান বলেছিল ঘুমানোর আগে একবার ফোন করবে। হয়তো ভুলে গেছে। নয়তো ঘুমিয়ে গেছে। যে কারণেই হোক, ফোন না দেয়াটা অভিমানের জন্ম দিচ্ছে। মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে পৃথার। কি জানি কেন এমন হয়! আবার একটু একটু টেনশনও হচ্ছে।

নিজে থেকে সায়ানকে কল দিতে যাবে এমন সাহস হচ্ছে না। আবার ভাব বেড়ে যায় যদি ছেলেটার। হাজার হলেও ছেলে মানুষ তো৷ বেশি গুরুত্ব দিলে মাথায় উঠে বসে। আর নামানো যায় না। অবশ্য মেয়েদের ক্ষেত্রেও তাই। পৃথা মনেমনে ভাবছে, আচ্ছা সায়ান আমাকে এত গুরুত্ব দিচ্ছে আমি কি ভাব নিচ্ছি? নাহ, ভাব নিলে তো পুরোটা সকাল ওর সাথে বসে থাকতাম না। আবার এও মনে হচ্ছে যে, এটা হয়তো ভাব নেয়াই হয়ে যাচ্ছে। কারণ ভাব না থাকলে তো নিজে থেকেই কল দিতো সায়ানকে।

শত হাবিজাবি ভাবনার পর অবশেষে সায়ানকে কল দিয়েই ফেললো। রিং হয়ে কেটে গেল, রিসিভ হলো না। পৃথার মনে হল দূর, এটা কোনো কাজ হলো। নিশ্চয় ই ও ব্যাটা ফোন সাইলেন্ট করে ঘুমিয়ে পড়েছে।

মিনিট দশেক পর কল আসতেই লাফিয়ে উঠে তারাতাড়ি ফোন রিসিভ করলো পৃথা। সায়ান বললো, সরি সরি সরি ডিয়ার। কল দিতে লেট হয়ে গেছে। আসলে একটু বিজি ছিলাম তো তাই।
– এত রাতে বিজি?
– বন্ধুদের সাথে ছিলাম।
– ওহ আচ্ছা। আপনারা ছেলেরা কত সৌভাগ্যবান। এত রাতেও বন্ধুদের সাথে বাইরে থাকতে পারেন। অথচ আমরা মেয়েরা পারি না।
– কেন পারবে না? আমার মেয়ে ফ্রেন্ড রা অনেক রাতেও আমাদের সাথে আড্ডা দেয়, বাইরে থাকে। কেউ কেউ তো রাত দুইটা, তিনটা তেও বাসায় যায়।

পৃথা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, কপাল লাগে। সবকিছুর জন্যই কপাল লাগে। আমার তো সেই কপাল নেই বুঝলেন।
সায়ান হাসতে হাসতে বললো, আহারে সোনাটা। আফসোস কইরো না, তুমি আমার বউ হলে যখন চাইবে তখনই বাইরে ঘুরতে নিয়ে যাবো।

এরপর দুজনেই অনেক্ষণ নিরব। শান্ত ফোনে শুধু নিশ্বাসের শব্দ শোনা যায়। পৃথা লজ্জা পাচ্ছে। লজ্জার চেয়েও বড় ব্যাপার হচ্ছে ও থমকে গেছে কথাটা শুনে। চুপ করে লাজুক মুখে হাসছে।

সায়ানও ওদিকে মুচকি হাসছে। বলল, কি গো, চুপ করে রইলে যে?
– উহুম, আপনি বড়ই নির্লজ্জ। একটুও লজ্জা নেই।
– এটা বুঝি লজ্জার মত কিছু হলো? এটা তো সিম্পল একটা ব্যাপার।
– যাহ, দুষ্টু।
– তুমি কি আমার ফোনের অপেক্ষায় ছিলে?
– হ্যাঁ, না না থাকবো কেন? আপনার ফোনের অপেক্ষায় থাকবো কেন?
– দেখো, মুখ ফসকে কিন্তু সত্যিটাই বেরিয়ে আসে। বুঝলে?

সায়ান হাসছে। পৃথা লজ্জা পাচ্ছে শুনে। রাত ভর চললো কথা। পৃথা জানে না কিসের টানে এত কথা বলছে ও। শুধু এটুকু বুঝতে পারছে যে ওর আনন্দ হচ্ছে। কথা বলতে ভীষণ সুখ সুখ অনুভব করছে ও।


বাতাসে আজ প্রেমের গন্ধ। দখিনা হাওয়া বইছে। সায়ানের বাইক ছুটে চলেছে শহর পেরিয়ে শহরের বাইরে যেখানে খোলা প্রান্তরে মন মাতাল হয়ে উড়তে চাইবে। শহরে চার দেয়ালের ভিড়ে অনেকদিন খোলা আকাশ দেখা হয় না। পৃথা সায়ানের বাইকের পিছনে। সায়ান অপেক্ষা করছে পৃথা কখন ওকে জাপটে ধরে। কিন্তু পৃথা ধরছে না। পৃথা ধরবেও না, এ নিশ্চিত সায়ান। তবুও পাগল মন অপেক্ষা করে।

কিছুদূর আসার পর রাস্তার পাশে বাইক থামিয়ে টং দোকানে চা খেলো দুজনে। পৃথা চায়ে বিস্কুট ভিজিয়ে খেতে ভালোবাসে। একবার বিস্কুট ভেজাতে গিয়ে পুরোটাই চায়ে পড়ে গেল। হো হো করে হেসে উঠলো সায়ান। সায়ানকে মারতে গিয়ে পড়ে যাওয়ার জোগাড় পৃথা। পৃথাকে ধরে ফেলল সায়ান। এভাবেই চলতে লাগল ওদের খুনসুটি।

সারাদিন ঘুরাঘুরি করে মনের আকাশে রংধনু উঠলো। এভাবে কখনো স্বাধীন পাখির মত উড়তে পারেনি পৃথা। একদিকে ওড়ার আনন্দ, অন্যদিকে মনের মত একজন সঙ্গী। সায়ানকে কেন যেন ভীষণ ভালো লাগছে। বারবার ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে।

দুজনে খোলা আকাশের নিচে বসে আছে। সায়ান উঠে গিয়ে দূর থেকে একটা দূর্বাঘাস ছিড়ে নিয়ে এলো। ঘাস দিয়ে একটা রিং বানিয়ে পৃথার হাতটা ধরল। এই প্রথম পৃথার হাত ধরেছে ও। পৃথা বাঁধা দিতে পারল না। ও দেখতে চায় সায়ান কি করে?

সায়ান পৃথার আঙুলে ঘাসের তৈরি রিং পরিয়ে দিলো। চমকে উঠে অনেক্ষণ হাতের দিকে তাকিয়ে রইল পৃথা।

সায়ান বলল, এ প্রাকৃতিক রিংটাই আমাদের বন্ধনকে অটুট রাখুক। সারাজীবনের মত তোমাকে যেন আমার পাশে পাই।

শিউরে উঠলো পৃথা। সায়ান পৃথার খুব কাছাকাছি এসে চোখের দিকে তাকালো। দখিনা হাওয়ায় চুল উড়তে লাগল পৃথার। ওড়না উড়ছে। পৃথা বুকে চেপে ধরে রেখেছে ওড়না। পৃথার উন্মুক্ত বুকটা দেখার আগ্রহ ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে।

পৃথা চোখের দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। পৃথা বললো, আমরা শহর থেকে অনেক দূরে চলে এসেছি। এখনই রওনা না দিলে ঠিক সময়মত পৌঁছাতে পারবো না। আমাকে বাসায় যেতে হবে। দেরি হলে খালা বুঝে ফেলবে।
– বাইকে বেশি সময় লাগবে না। তুমি চিন্তা কোরো না।
– তবুও.. প্লিজ চলুন এখন রওনা দিই।
– আরেকটু থাকি?
– আচ্ছা। তবে বেশিক্ষণ নয় কিন্তু।
– পৃথা, তুমি কি আমার কাঁধে একটু মাথা রাখবে?

পৃথা অনেক্ষণ কি যেন ভাবলো। তারপর মাথা রাখলো সায়ানের কাঁধে।

সায়ান বলল, কেমন লাগছে?

পৃথা চোখ বন্ধ করে রেখেছে। অনেক্ষণ পর ও উত্তর দিলো, খুব শান্তি শান্তি লাগছে।
– পৃথা..
– হুম বলুন।
– এই যে তুমি আমার ভরসায় এতদূর এসেছো, আমি সত্যিই অবাক হয়েছি। আমার কনফিডেন্স বেড়েছে। বিশ্বাস করো, তোমার এতটাও বিশ্বাসের যোগ্য হয়ে উঠতে পারবো ভাবিনি।
– বিশ্বাসের মর্যাদা রাখবেন, তাহলেই আমি খুশি।
– আমার উপর ভরসার এই হাতটা সবসময় রেখো।

পৃথা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। দুজনে একসাথে বসে থেকে সূর্যাস্ত দেখলো। তারপর রওনা দিলো বাসার উদ্দেশ্যে।

কিন্তু পথে বাঁধলো বিপত্তি। হাইওয়েতে ভীষণ জ্যাম। জ্যামের কারণে গাড়ি একটুও আগাচ্ছে না। যেটুকু এগোচ্ছে, আবার অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। রাত আট টার মধ্যে বাসায় ফিরলে খালাকে ম্যানেজ করা যাবে। কিন্তু যা জ্যাম, এই সময়ের মধ্যে পৌঁছানো যাবে তো?

সায়ান বলল, জ্যাম ছাড়লে দ্রুত পৌঁছে যাবো। তুমি চিন্তা কোরো না।
কিন্তু ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলো না। জ্যাম ছাড়লো রাত আট টার পরে। সায়ান দ্রুত গাড়ি চালিয়ে নিয়ে আসছিল। হঠাৎ বাইক বন্ধ হয়ে গেলো। বুক শুকিয়ে গেলো পৃথার। আবার কি হলো!

বাইকে সমস্যা হয়েছে। কাছাকাছি গ্যারেজ আছে কিনা কে জানে। মহা বিপদে পড়া গেলো। এবার যে কি হবে!

সায়ান বললো, তুমি টেনশন কোরো না। কোনো সমস্যা হবে না।
– সমস্যা অলরেডি হয়ে গেছে। আমি এখন কি করবো?
– বাইকটা ঠিক না করে তো যেতেও পারবো না।
– তাহলে উপায়? বাসায় কি বলবো আমি?
– পৃথা, তুমি কি বাসে করে চলে যেতে পারবে? আমি তোমাকে বাসে তুলে দেই।
– এই রাত্রিবেলা আমাকে একা বাসে তুলে দেবেন? কখনো একা বাসে উঠিনি আমি।
– তাহলে কি করবো?
– বাইকটাকে এখানে কোনো গ্যারেজে রেখে আমরা দুজনে বাসে করে চলে যাই?
– হুমম, সেটা করা যায়। চলো দেখি কাছাকাছি কোথাও গ্যারেজ আছে কিনা।

দুজনে বাইক ঠেলে নিয়ে হাঁটতে শুরু করলো। পৃথার মুখ চিন্তায় শুকিয়ে গেছে। এমন সময় ফোনটাও বেজে উঠলো। খালা ফোন করেছে। ভয় হচ্ছে পৃথার। এখন কি বলবে খালাকে?

কয়েকবার কল কেটে গেলো। পৃথা রিসিভ করতে পারলো না। ভয়ে বুক দুরুদুরু করে কাঁপছে। না জানি এবার কি হবে!

গ্যারেজে বাইক রেখে দুজনে এসে বাসে উঠলো। কিন্তু আবারও সেই জ্যাম। এই জ্যাম দশটার আগে ছাড়বে বলে মনে হয়না। উত্তেজিত হয়ে উঠছে দুজনে। টেনশন বাড়ছে হু হু করে।

সায়ান বুদ্ধি করে পৃথাকে বলল, আজকের রাতটা যদি বাইরে থেকে যাও তোমার সমস্যা হবে?
– মানে কি? আমাকে বাসায় ঢুকতেই দেবে না আর। খালা আমাকে মেরে ফেলবে।

সায়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, যেহেতু এখান থেকে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। যেতে যেতে অনেক রাত হয়ে যাবে। কাজেই আমরা একটা কাজ করতে পারি। একটা আইডিয়া পেয়েছি। আমি তোমার ফোন রিসিভ করে গুন্ডাদের গলায় খালাকে বলবো আমি তোমাকে কিডন্যাপ করেছি। পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে একটা ঠিকানা দিয়ে বলবো সেখানে চলে আসতে। খালা আসতে পারবে না। তার আগেই কাল সকালে আমরা বাসায় পৌঁছে যাবো।
– খালাকে বলবো কি বাসায় গিয়ে?
– বলবে তোমার বন্ধুরা ফোন করেছিল তাদেরকেও একই কথা বলেছে। তাই বন্ধুরা পুলিশ নিয়ে তোমাকে বাঁচিয়েছে।
– এত বড় মিথ্যা? এটা ঠিক হবে না মোটেও। অনেক বড় অন্যায় হয়ে যাবে।
– প্রেম করলে দু চারটা মিথ্যা বলতেই হয়। তাছাড়া উপায় নেই। এখন বাসায় যেতে রাত একটা বেজে যাবে। কিছু বললেই খালার বকা খাবে। এমনকি আরো বড় সমস্যাও হতে পারে।

পৃথা কি করবে ভেবে পেলো না। জীবনে কখনো মিথ্যে বলার প্রয়োজন হয়নি ওর। আজ একটা কাজে ফেঁসে গেছে। এখন মিথ্যে বলা ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু খালাকে আর বাসার সবাইকে টেনশন দেয়াটা মোটেও উচিত হবে না। বাবা শুনলে তো নির্ঘাত হার্ট এটাক করবে।

সায়ান বললো, তুমি চিন্তা কোরো না। খালাকে এটাও বলতে পারো যে একদল ছেলে তোমাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। তুমি কোনোমতে পালিয়ে সারারাত কোথাও আশ্রয় নিয়ে লুকিয়ে ছিলে। আর ফোনটা আমাকে দিয়ে দাও। বলবে ফোন তারা কেড়ে নিয়েছে। আর দুদিন পর তোমাকে একটা নতুন ফোন কিনে দেবো আমি।
সায়ান জানে তার আইডিয়া গুলো একদম ফালতু ছিলো। বাস্তবে এমন কিছু করলে পরিবারের লোকজন খুবই টেনশন করবে।

পৃথা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। সায়ানের বুদ্ধিগুলো একদিকে খারাপ আবার খারাপ নয়। ও যদি কোনো সুযোগের জন্য এমন করে থাকে। কিন্তু সেটা করার সুযোগ নেই। কারণ জ্যাম তো একটা কোইন্সিডেন্ট। জ্যামের পিছনে সায়ানের হাত নেই, বাইক নষ্ট হওয়ার পিছনেও হাত নেই। সায়ানকে এখন আর খারাপ মনে হয়না। ওকে বিশ্বাস করা যায়। তবে কি ওর বুদ্ধিটাই কাজে লাগাবে পৃথা?

রাত বেড়ে যাচ্ছে। জ্যাম ছাড়ার কোনো নামগন্ধই নেই। শহরের ভিতরে আরো কত জ্যাম আছে কে জানে। না, কিছু একটা করতেই হবে।

পৃথা বলল, সারা রাত কি আমরা রাস্তায় থাকবো?
– না। কাছাকাছি আমার এক বন্ধুর বাসা আছে। সেখানে যাবো। বন্ধুর বাসা আছে বলেই তো তোমাকে বললাম আজকে থেকে গেলে সমস্যা হবে কিনা?

পৃথা অনেক্ষণ চিন্তায় মগ্ন রইলো। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, ঠিক আছে। আজকে আর বাসায় যাবো না। এরপর যা হবার হবে। ফোন বন্ধ করে রাখলাম।

দুজনে সাময়িক আবেগ কিংবা এডভেঞ্চারের বশে বাড়ির লোকদেরকে এত বড় দুশ্চিন্তায় ফেলে দিলো, অথচ তারা বুঝতেও পারলো না জীবনটা শুধুমাত্র এডভেঞ্চার আর পাগলামি নয়। জীবনটা অনেক কঠিন, অনেক ভয়াবহ।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here