অবশেষে বৃষ্টি পর্ব ৩ +৪

0
648

#অবশেষে_বৃষ্টি
পর্ব ৩
#নীলাভ্র_নেহাল

সায়ান মাঝেমাঝে ইচ্ছে করেই বাইকে ব্রেক কষে যার ফলে পৃথার শরীর সামনে এগিয়ে এসে ধাক্কা খায় সায়ানের শরীরের সাথে।

পৃথা ইতস্তত বোধ করছে। নিজেকে সংযত করে ও দূরে সরে বসে কিন্তু দূরে বসে টিকে থাকতে পারে না। সায়ান আবারও ইচ্ছেকৃত ভাবে ব্রেক কষে। পৃথার খারাপ লাগছে এবার। থাকতে না পেরে বলল, গাড়ি থামান আমি নামবো।
– কেন?
– নামবো আমি। আমার ভালো লাগছে না।
– সমস্যাটা কোথায়?
– আপনি থামাবেন কি না?
– আমার তো ভালোই লাগছে।
– আমার লাগছে না মিস্টার সায়ান। বাইক থামান প্লিজ।
সায়ান হেসে উঠলো। পৃথা আচমকা দিলো বাইক থেকে একটা লাফ। পাকা রাস্তায় উপুড় হয়ে পরে ব্যথায় চিৎকার দিয়ে উঠলো। হঠাৎ এমন একটা পরিস্থিতি ঘটিয়ে ফেলবে এটা কল্পনাই করতে পারে নি সায়ান। দ্রুত বাইক থামিয়ে ছুটে এসে পৃথাকে ধরলো ও। হাত ধরে পৃথাকে টেনে তোলার সময় পৃথা বলল, ছাড়ুন হাত ছাড়ুন। আমাকে স্পর্শ করবেন না।

সায়ান তবুও হাত ধরে তোলার চেষ্টা করলে পৃথা জোরপূর্বক সায়ানের হাত সরিয়ে দিলো। সায়ান পৃথার পায়ে হাত রেখে বলল, দেখি কোথায় ব্যথা পেয়েছো? কোথায় লেগেছে?
– আপনার জানতে হবে না। আপনি চলে যান।
– কেন?
– বাসায় গিয়ে সারারাত এটাই ভাববেন যে আমি কেন আপনাকে বাইক থামাতে বলেছিলাম আর থামান নি বলে কেনই বা লাফ দিতে বাধ্য হয়েছিলাম?
সায়ান মাথা নিচু করে ভাবতে লাগল। কিছু বলতে যাবে এমন সময় পৃথা একটা রিকসা ডেকে কষ্ট করে উঠে পরল রিকসায়। সায়ান কিছুই বলার সুযোগ পেলো না। পৃথা ভীষণ ব্যথা পেয়েছে বোঝাই যাচ্ছে। দাঁতে দাঁত চেপে ব্যথা সহ্য করছে মেয়েটা। সায়ানের খারাপ লাগছে খুব। পৃথার চোখ মুখে একটা বেদনা ভেসে উঠেছে। খুব কষ্ট পাচ্ছে বোধহয়। সায়ান এগিয়ে আসতে চাইলে পৃথা থামিয়ে দিয়ে বলল, আসবেন না। আপনি যেরকম মেয়েদের সাথে মেলামেশা করেন আমি সেরকম নই। সবাইকে সস্তা ভাববেন না। মামা আপনি যান।

রিকশা চলতে আরম্ভ করল। স্থির হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল সায়ান। কি করবে বা কি বলবে কিচ্ছু বুঝতে পারলো না। আজকের এই ঘটনাটা ওর জীবনের একটা বড় শিক্ষা হয়ে থাকবে। একটা সাধাসিধা মেয়ে হঠাৎ করেই কেমন তেজী হয়ে উঠলো! ভাবাই যায় না ব্যাপারটা।

সায়ান ভার্সিটিতে যেতে পারলো না। বাসায় ফিরে জামাকাপড় ছেড়ে বিছানায় শুয়ে রইলো। মন বিষন্ন হয়ে আছে। পৃথাকে বারবার মনে পড়ছে ওর। মেয়েটা বাসায় পৌঁছতে পারলো কি না, পায়ে কতটুকু ব্যথা পেয়েছে সবকিছু ভাবাতে লাগল ভীষণ ভাবে। এক মুহূর্তও শান্ত হয়ে থাকতে পারলো না সায়ান। বিশেষ করে শেষ মুহুর্তে পৃথার বলে যাওয়া কথাগুলো বারবার কানে বেজে উঠছে আর যন্ত্রণা দিচ্ছে।

রাত্রিবেলা ব্যথা ভীষণ বেড়ে গেলো পৃথার। বিছানায় শুয়ে থাকতে পারছিল না। যে দিকেই কাৎ হয়ে শুচ্ছিল সেদিকেই ব্যথা পাচ্ছিল। পায়ে চামড়া উঠে গেছে, সাদা মাংস বেড়িয়েছে। ওষুধ লাগিয়েও ব্যথা সাড়েনি। রাতে আঘাত প্রাপ্ত জায়গায় টনটন করছিল। চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছিল পৃথার।


পরবর্তী সাত/ আটদিন আর ভার্সিটিতে আসা হল না পৃথার। পা সারতে সময় লাগল। তাছাড়া মানসিক ভাবেও ভার্সিটিতে যাওয়ার ইচ্ছে হচ্ছিল না ওর। এদিকে সায়ান প্রতিদিনই পৃথার ক্লাসে এসে ওর খোঁজ করতে লাগল। প্রত্যেকটা ক্লাসে, বারবার খুঁজতে লাগল পৃথাকে। ও আসেনি। বিষয়টা কষ্ট দিতে লাগল। যদি আর না আসে, সেই ভয়টাও জাগছিল মনে। তবুও প্রতিদিন মনে আশা নিয়ে ভার্সিটিতে আসত সায়ান। কিন্তু পৃথার দেখা মিলল না।
রাতগুলোতে ঘুমাতে পারল না সায়ান। দুচোখ বন্ধ করলেই পৃথার মুখ ভেসে উঠতো। সেদিন বারবার বাইক ব্রেক করা মোটেই উচিত হয় নি। নিজেকে ভীষণ অপরাধী মনে হতে লাগল ওর। কিভাবে পৃথার সামনে যাবে, কিভাবে ওকে মুখ দেখাবে ভাবতেই পারছিল না।
কয়েকদিন পর যেদিন পৃথা ভার্সিটিতে এলো সেদিন কোথ থেকে যেন ছুটে এসে পৃথার সামনে হাঁটুগেরে বসল সায়ান। সিনিয়ররা সবাই অবাক হয়ে দেখছিল ওর কান্ড। হাত জোর করে পৃথাকে বলল, আই এম সরি পৃথা। তোমার সাথে যে বেয়াদবি করেছি তা মোটেই উচিত হয় নি। প্লিজ ফরগিভ মি, প্লিজ।

জনসমুক্ষে সায়ানকে এভাবে ক্ষমা চাইতে দেখে সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছে সায়ানের বন্ধুরা। ওরা এগিয়ে আসার সাহস করল না। পৃথা সায়ানকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। সায়ান মাথা নিচু করে বলল, আর কক্ষনো এই কাজ আমি করবো না। আমি লজ্জিত।

সায়ানকে দেখে সত্যিই অনুতপ্ত মনে হচ্ছে। পৃথা কিছুক্ষণ নিরব হয়ে রইল।

সায়ান বলল, বিলিভ মি। গত কয়েকটা দিন প্রত্যেকটা ক্লাসে আমি তোমাকে খুঁজেছি। প্রতি ঘন্টায় খুঁজেছি। তুমি আসো নি। আমি সারা রাত ঘুমাতে পারি নি রে মেয়ে। এ কেমন আগুনে পোড়াচ্ছো আমাকে? প্লিজ মাফ করো।

পৃথা কিছুটা অবাক হয়ে বলল, উঠুন। আমাকে কেন খুঁজেছেন?
– সরি বলার জন্য।
– সরি বললেই কি আপনি ভালো হয়ে যাবেন?
– আমি খারাপ নই পৃথা।
– সেদিন অমন নোংরামি কেন করেছিলেন?
– আমি তো বললাম সেটার জন্য আমি অনুতপ্ত। ভেরি মাচ এশামড।
– ওকে। আমি কিছু মনে রাখবো না। কিন্তু আপনিও যেন ভুল করেও আর আমার সামনে এ ধরণের কিছু করবেন না। আর করলেও তাতে আমার কিছু যায় আসে না।
– যাক বাবা, ক্ষমা তো অন্তত করেছো। আমার এতেই হবে। এবার প্লিজ আমাকে একটু সময় দাও। কথা আছে।
– মানে কি? এতক্ষণ আটকে রাখলেন আবার কথা কিসের?
– তোমাকে আমি আমার ফিলিংস টা বোঝাতে পারবো না। তোমার সাথে আমি কথা বলতে চাই, অনেক কথা। তোমার নাম্বারটা আমাকে দাও প্লিজ।

পৃথা শব্দ করে হেসে বলল, আপনি নাকি খারাপ নন? ধরে নিলাম আপনি ভালো। একটা ভালো ছেলে একটা ভালো মেয়ের কাছে এভাবে ফোন নাম্বার চাইতে পারে না।
– তুমি আমার মাকে জিজ্ঞেস করে দেখো । মা জানে আমি কিভাবে কাটিয়েছি এই কয়েকটা দিন।
– মা কেন? মাকেও জানিয়েছেন নিজের লজ্জার কথা?
– না মানে তোমার কথা জানিয়েছি।

পৃথা এবার অবাক না হয়ে পারলো না। হা হয়ে বলল, আমার কথা!
– হ্যাঁ।
– প্রেমে পড়েছেন?

মুখের উপর সত্যি কথাটা শুনে সায়ান ভড়কে গেল। আমতা আমতা করে লজ্জিত মুখে বলল, আমি জানিনা। তবে তোমার সাথে কথা না বলে আমি রাতে ঘুমোতে পারবো না এ সত্য। তুমি আমাকে এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দাও।
– প্রেমে কখন পড়েছেন? প্রথম দিন থেকেই তো লেগে আছেন আমার পিছনে।
– না মানে প্রথম দিনেই হয়তো…

পৃথা হেসে বলল, আমাকে সময় দিন। যেদিন বুঝতে পারবো আপনি মানুষটা খারাপ নন, ভালো। সেদিন ভেবে দেখবো। তার আগে এটা নিয়ে ভাবতেও চাই না।
– কি বলো এসব? এখন আমাকে ভালো ভালো কাজ করতে হবে?
– কিছুই করত হবে না। কারো সাথে মিশলেই বোঝা যায় সে কেমন স্বভাবের মানুষ।

সায়ান এগিয়ে এসে বলল, তারমানে আমার সাথে মিশতে তো রাজি হচ্ছো?
– উম হুমম কিছুটা।

সায়ান একটা লাফ দিয়ে উঠলো। তারপর শান্ত হয়ে বলল, ওকে ক্লাসে যাও। আমি বাইরে অপেক্ষা করবো।


সায়ানের এই কান্ডটার কথা দ্রুত বন্ধু মহলে ভাইরাল হয়ে গেলো। সবাই সায়ানের সাথে হাসাহাসি করছিল। কেউ কেউ তো বলে বসল, চুমুর প্রপোজাল বাস্তবায়ন করার জন্য কি কোমর বেঁধে লেগেছিস নাকি? সায়ান কারো কথাকে পাত্তা দিলো না।

সময় যেন আজ অতিবাহিত হতেই চাইছে না। আকাশে ঘন কালো মেঘ করে এসেছে। মেঘের ঘনঘটা দেখছে সায়ান। এই আবহাওয়ায় একলা দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করে না। পৃথাকে ভীষণ মনে পড়ছে। ক্লাস টা এখনো কেন যে শেষ হচ্ছে না! ভালোই লাগছে না একেবারে। অপেক্ষার অভিজ্ঞতা নেই সায়ানের। আজই প্রথম।

ক্লাস শেষ হতেই পৃথাকে পাকড়াও করলো সায়ান। পৃথা অবাক হয়ে বলল, আপনি! আশ্চর্য তো!
– আমি অপেক্ষা করছিলাম।
– পাগল নাকি? অপেক্ষা করে লাভ নেই। আমি এখনই বের হয়ে যাবো। বৃষ্টি আসার আগেই আমাকে বাসায় যেতে হবে।
– ওকে চলো তোমাকে পৌঁছে দেই।
– না না। আমি উবার নিয়ে চলে যাবো।

সায়ান বলল, এখানে উবার এই সময়ে পাবে ও না। আর রিকশায় পৌঁছতে পারবে না। আমি বলছি আমার সাথে চলো।
– না না।
– তাহলে আসো বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখি?
– না। আমাকে বাসায় যেতে হবে।

সায়ান আকাশের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে বলল, তাহলে চলো। এত চিন্তা কিসের? আমি মানুষটা কেমন সেটা জানার জন্য হলেও তো আমার সাথে বেশি বেশি চলাফেরা করতে হবে তাই না?

পৃথা চুপ করে কি যেন ভাবলো। সেদিনের মত কাজটা সায়ান আর করবে না এটা নিশ্চিত। তবে করতেও পারে, ছেলেদের বিশ্বাস নেই। আকাশের অবস্থা ভালো না।

সায়ান বললো, চলো তো তারাতাড়ি তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিই।

পৃথা আর আপত্তি করতে পারলো না। বাইরে এসে সায়ানের বাইকে উঠে পড়লো। সায়ান দ্রুত গতিতে চালাতে লাগলো বাইক। কেউই কোনো কথা বলছে না। শুধু হাই স্পিডে চলছে বাইক। জ্যামে পড়ে সময় চলে গেলো অনেক্ষণ। এমন সময় নামলো ঝুম বৃষ্টি।

আশেপাশে বাইক নিয়ে দাঁড়াবার মত জায়গা নেই। বাধ্য হয়ে ভিজতেই হবে। পৃথারও আজকে খুব ভিজতে ইচ্ছে করছিল। একটা গাছ দেখতে পেয়ে ও বলল, সামনে ওই ফাঁকা জায়গাটায় যান তো। ভিজবো।

সায়ান বাইক নিয়ে গিয়ে গাছের নিচে রাখল। পৃথা বলল, বাইক ভিজে যাবে তো।
– সমস্যা নেই।
– কেন?
উত্তরে সায়ান হাসলো।

বৃষ্টি দেখে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভেজা শুরু করল পৃথা। নেমেছে ঝুম বৃষ্টি। আকাশে মেঘের গুরুম গুরুম আওয়াজ। পৃথার মনে আজ সাতরঙা রংধনুর মত রং উঠেছে যেন। শুধু নেচে নেচে ভিজতে ইচ্ছে করছে ওর।

বৃষ্টির ফোঁটা লেগে আছে পৃথার গালে, মুখে,ঠোঁটে। দেখলেই বুকটা দ্রিম দ্রিম করে উঠছে সায়ানের। একেকটা জলের বিন্দু দেখলেই সায়ানের নিজেরই বৃষ্টি হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।

পৃথা মনের আনন্দে ভিজছে। অনেকদিন এরকম মাতাল করা বৃষ্টি দেখে নি ও। সাথে আছে দমকা হাওয়া। মন পাগল হয়ে যেতে চায়। আজকে এ উদাসী হাওয়ায়!

সায়ান শুধু মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে আর এই সাধাসিধা মেয়েটার বৃষ্টিতে ভেজার দৃশ্য দেখছে। সুখ সুখ অনুভব করতে শুরু করেছে সায়ান। দৃশ্যটা বাঁধিয়ে রাখার মতন।

চলবে…

#অবশেষে_বৃষ্টি
পর্ব ৪
#নীলাভ্র_নেহাল

.
পৃথিবী সবচেয়ে সুন্দর ও মোহময়ী দৃশ্যগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে প্রিয় মানুষের বৃষ্টিতে ভেজার দৃশ্য।
বৃষ্টির ফোঁটা লেগে আছে পৃথার চিবুকে। ভেজা চুলে মন মাতানো সৌন্দর্যের মহিমা খেলা করছে। এত মিষ্টি, এত অপূর্ব লাগছে যে মুহুর্তের জন্যও চোখ ফেরাতে পারছে না সায়ান। নিজেও পৃথার কাছে এসে বৃষ্টিতে ভিজতে লাগল। আজ পৃথিবীতে আনন্দের বন্যা বইছে। সুখের জোয়ারে ভাসছে যেন ভুবন। এত আনন্দ, এত ভালোলাগা কখনো আসেনি সায়ানের জীবনে। অন্যরকম এক ভালোলাগা কাজ করছে আজ।

বৃষ্টিতে ভেজার পর পৃথার পাতলা জামায় শরীরের কিছু অংশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সায়ানের বারবার তাকাতে ইচ্ছে করছিল এটা সত্যি। তবুও ও পৃথার কাছে এগিয়ে এসে বললো, একটা কথা বলবো কিছু মনে করবে না তো?

পৃথা বলল, জ্বি বলুন।
– ওড়না দিয়ে শরীরটা ঢেকে নাও পৃথা।

পৃথা চমকে উঠে সায়ানের দিকে তাকাল। এই কথা সায়ান বলেছে এটা যেন বিশ্বাসই হতে চাইলো না ওর। চোখাচোখি হতেই সায়ান এমন ভাবে তাকাল যে চোখ আটকে গেল পৃথার। রীতিমতো ধুকধুকানি বেড়ে যাচ্ছিল বুকের। সায়ানের দৃষ্টি মারাত্নক। তীরের মত বুকে এসে বিঁধে।

বৃষ্টির তোড় কিছুটা কমলে সায়ান পৃথাকে বলল, তুমি বরং রিকশা নিয়ে বাসায় চলে যাও। একটা রিকশা ঠিক করে দেই?
– সেটাই ভালো হবে।
রিকশায় ওঠার মুহুর্তে পৃথা সায়ানকে বলল, আজ ভিজতে এত ভালো লেগেছে যা ভাষায় প্রকাশ করার মত শব্দ আমার ডিকশিনারিতে নেই।

সায়ান মুচকি হেসে কৃতজ্ঞতার সহিত বললো, এত সুন্দর সময় উপহার দেয়ার জন্য তোমাকে থ্যাংকস পৃথা।


পুরোটা বিকেল ঝুম বৃষ্টি হয়ে চললো। জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে কেবল বৃষ্টি উপভোগ করছিল পৃথা। বারবার সায়ানের বৃষ্টিস্নাত চেহারা মনে হচ্ছিল আর কেমন কেমন উচাটন লাগছিল। কিছু একটা ফিল করতে শুরু করেছে ও। ফেসবুকে লগ ইন করে সায়ানের আইডিতে ঘুরে এলো আরেকবার। কিন্তু রিকুয়েষ্ট বা মেসেজ কিছুই পাঠালো না।

সায়ান বাসায় এসে একটা ঘুম দিয়েছিল। হঠাৎ কারো হাতের স্পর্শে ঘুম ভেঙে যায় ওর। চোখ মেলে দেখে অর্পা পাশে বসে আছে। অর্পার চুল ভেজা। ভেজা চুল মুখের উপর এসে লেপ্টে রয়েছে। ভীষণ আবেদনময়ী লাগছে অর্পাকে। রুমের জানালায় পর্দা টেনে দেয়া, লাইট নেভানো। তাই আবছা আলো ,আবছা অন্ধকার বিরাজমান। এই অন্ধকারে একে অপরকে এত কাছ থেকে দেখে শরীর শিউরে উঠলো সায়ানের।

বলল, তুই এখানে? এই বৃষ্টির মধ্যে কিভাবে এলি?
– আসবো না তো কি করবো? তোকে কাল থেকে কতগুলো কল দিয়েছি ব্যাক করিস নি। গত কয়েকদিন ধরেই মেসেজের তেমন রিপ্লাই দিচ্ছিস না। আমার কি টেনশন হয় না? আজ ভার্সিটি গেছিস এটাও আমাকে বলিস নাই। তাই সোজা বাসায় চলে এলাম।
– তাই তো দেখতে পাচ্ছি।
– এবার বল তো কি হয়েছে তোর?
সায়ানের বুকের উপর হাত রেখে নিচু হয়ে এলো অর্পা। হার্টবিট বাড়ছে সায়ানের। এমনিতেই বৃষ্টিভেজা দিন। রোমান্টিক ওয়েদার। তার উপর এমন আবেদনময়ী চেহারায় অর্পা। উফফ মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার জোগাড় হচ্ছে।

অর্পা সায়ানের গালে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, তুই জানিস না তোকে এক মুহুর্ত না দেখলে আমি থাকতে পারি না? কথা না হলে আমি পাগল হয়ে যাই। জানিস না তুই?
– কেন এমন হয় তোর?
– এটাও কি বলে দিতে হবে? লাইফে তোর চেয়ে বেশি ইম্পর্ট্যান্স আমি কাউকেই দেই নি।
– তোর শরীর থেকে একটা মিষ্টি স্মেল পাচ্ছি অর্পা। কি পারফিউম মেরেছিস?

অর্পা দুষ্টুমি হাসি দিয়ে বললো, খুব ভালো লাগছে নাকি?
– হুম। মারাত্মক।
– এরকম মারাত্মক একটা পারফিউম দিয়ে তুই যখন আমার কাছে আসিস আমারও এমন লাগে।
– তাই!
– হুম। কেমন যেন ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছি। তোরও কি এমন হচ্ছে?
– হুম। ঘোর ঘোর লাগছে। তুই এই ওয়েদারে কেন এলি বলতো?
– ওয়েদার টাই পাগল করা। তোকেও পাচ্ছিলাম না। তাই চলে এলাম। তুই কেন এ কদিন ঠিকমতো কথা বলিস নাই সেটা বল আমাকে?

সায়ান অর্পার হাত সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে বলল, আমি একটা ব্যাপার নিয়ে খুব টেনশনে ছিলাম। তাই আরকি।
– টেনশন কমেছে?
– হ্যাঁ। একেবারে শেষ।

অর্পা আরো ঝুঁকে এসে সায়ানের মুখের সামনে মুখ নিয়ে এলো। অর্পার গরম নিশ্বাসে শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠছে সায়ানের। ও বলল, কি শুরু করলি তুই?
– তোকে খুব সুন্দর লাগছে সায়ান।
– তোকেও।
– আরেকটু কাছে আসি?
সায়ান নিশ্চুপ হয়ে আছে।
অর্পা বললো, আমার মাঝেমাঝে তোর বুকের ভিতর ঢুকে যেতে ইচ্ছে করে।

সায়ান কিছু বলার আগেই অর্পা সায়ানের চাদরের ভিতরে ঢুকে গেলো। সায়ানের বুকের সাথে নাক ঘষতে লাগল। সায়ানের বুকে ঘন লোম। নাক ঘষতে আরাম লাগছে অর্পার। সুড়সুড়ি লাগছে সায়ানের। ও কেবলই কাঁপছিল। অর্পা বলল, তুই আমার বুকে এভাবে ঢুকে যেতে পারবি?
– না।
– কেন?
– তোর বুকে ঢুকে গেলে বিস্ফোরণ হবে।
– কেন রে? কি আছে এখানে?
অর্পা সায়ানের হাত টেনে নিয়ে নিজের বুকে রাখলো। বিদ্যুৎ খেলা করে গেলো সায়ানের সমস্ত শরীরে। সায়ান কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। এতটাই পাগল পাগল লাগছে ওর। এগোবে নাকি থমকে যাবে তাও বুঝছে না। শরীরটা অর্পাকে চাইছে। কিন্তু মন বলছে এটা ঠিক হবে না। আজ পর্যন্ত কারো সাথে এরকম অভিজ্ঞতা হয় নি সায়ানের। অর্পার সাথে এভাবে আচমকা হয়ে যাক সেটা কিছুতেই হতে দেয়া যায় না।

সায়ান অর্পাকে সরানোর চেষ্টা করে বলল, এটা ঠিক হচ্ছে না অর্পা।
– কেন ঠিক হচ্ছে না? আমরা তো দুজন দুজনকে চাই। চাই না?
– আমি তোকে চাই কিন্তু এভাবে না। তুই আমার ফ্রেন্ড অর্পা।
– আমি তোর জাস্ট ফ্রেন্ড? আর কিচ্ছু না?
– না।
– সায়ান?
– অর্পা, প্লিজ। তুই তো জানিস আমার এসব করার এক্সপেরিয়েন্স নেই। কারো সাথে এখনো পর্যন্ত যাইনি আমি।
– তুই তো ভীতু, কাপুরুষ। আমার মত একটা মেয়েকে ফিরিয়ে দিতে কোনো ছেলেই পারবে না। তুই কাপুরুষ বলেই..
– অর্পা। যাই বল প্লিজ এসব না।

অর্পা তবুও সায়ানের মুখ চেপে ধরে ওর ঠোঁটে চুমু খেলো। সায়ান বাঁধা দেয়ার সুযোগ পেলো না। অর্পা বেশ বুঝতে পারলো সায়ানকে এভাবে টলানো যাবে না। আগে ওর সাথে ফর্মালি প্রেম শুরু করতে হবে। প্রেম হয়ে গেলে রোমান্টিক কথা চলতে থাকলে নিজে থেকেই রোমান্স করতে চাইবে, আরো হাজারো আবদার করবে। সবকিছুর আগে প্রেম। কিন্তু সায়ান ওকে প্রেমিকা হিসেবে আদৌ চায় কিনা সেটা জানেনা অর্পা। সায়ানের প্রেমিকা হতে চাইলে আগে সায়ানের মনের খবর জানতে হবে। ধীরে ধীরে প্রেমের দিকে আগাতে হবে। এভাবে আর থাকতে পারবে না অর্পা।

সায়ানকে ছেড়ে দিয়ে উঠে বসল ও। মুখ কালো করে বলল, আই এম সরি। স্যরি সায়ান। তোর ইচ্ছের বিরুদ্ধে তোকে কিস করাটা আমার উচিত হয় নি।
সায়ান কি করবে বুঝতে না পেরে স্বান্তনা দিয়ে বলল, আরে ধুর পাগলী। এসবের জন্য মন খারাপ করতে নেই। সামান্য চুমুই তো খেয়েছিস।
– রাগ করিস নি তো?
– না।
থ্যাংক ইউ সায়ান। সায়ানকে জড়িয়ে ধরল অর্পা। সায়ান ইতস্তত বোধ করছে। অর্পা ইমোশনাল হয়ে বললো, তুই তো জানিস তুই আমার কি? তুই আমার পৃথিবী। কেবল তোর জন্য আমি কারো সাথে রিলেশন করিনি।
– জানি। তুইও তো জানিস তুই আমার কি?
– সায়ান, আমার উপর রাগ করিস না। এমন ওয়েদারে নিজেকে সামলাতে পারিনি।
সায়ান ‘ইটস ওকে’ বলল। বেচারা বুঝতেও পারলো না এটা ছিল অর্পার অভিনয়। অর্পার চালাকি।

অর্পা বলল, তুই শুয়ে থাক। আমি বরং চলে যাই।
– যেতে হবে না। থাক গল্প করি।
– ভয় পাবি না তো?
– ধুর পাগলী। ভয় পাবো কেন?
– যাক বাবা বাঁচলাম।
সায়ানের পাশে শুয়ে সায়ানকে জাপটে ধরে রইল অর্পা। ফোন বের করে কৌশলে দুজনের কিছু সেলফি তুলে নিলো। খুব বেশি ঘনিষ্ঠ না হলেও সেলফিতে এটা স্পষ্ট যে দুজনে একইসাথে একই চাদরে খুব কাছাকাছি বিছানায় শুয়ে আছে। অর্পার চোখেমুখে আবেদন স্পষ্ট। সায়ানকেও খুব বিভ্রান্ত দেখাচ্ছে। সায়ানের চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। শার্টও নেই গায়ে। অর্থাৎ সায়ান খালি গায়ে এটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। পরিস্থিতি প্রতিকূলে গেলে এই কয়েকটি সেলফি দিয়েই সায়ানকে হাতে রাখবে অর্পা, মনেমনে এই বুদ্ধি করে ফেললো। যদি সায়ান ভালোভাবে ওর প্রেমে না মজে, কিংবা বিয়ে করতে আপত্তি জানায়, তখন এই অস্ত্র দিয়েই ওকে নিজের করে নিতে পারবে। এই ভেবে ভীষণ শান্তির নিশ্বাস ফেললো অর্পা।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here