#অবশেষে_তোমায়_হলো_পাওয়া
#পর্ব:৮
#তামান্না_ইসলাম_কথা
নতুন দিনের এক নতুন সকাল। নতুন করে সব শুরু করার একটা সময়। শালিক পাখির ডাক এবং সকালের মিষ্টি রোদ আর গরম ধোঁয়া ওঠা এক কাপ চা দিয়ে সকালের শুভ আরম্ভ সবাই পছন্দ করে। বিয়ের পর আজকে প্রথম দিন এই বাড়িতে কথার। ফজরের সালাত আদায় করে, না ঘুমিয়ে সবার জন্য নাশতা তৈরি করতে নিচে চলে যায়। এতো সকালে কেউ ঘুম থেকে উঠেনি এখনো। নিজ মতো করে সবার জন্য রান্না করে কথা।
” একি আপামনি আপনি রান্না ঘরে? আপনি এদিকে আসুন আমি রান্না করে দিচ্ছি।”
চুলায় মাংস করছিল কথা। এমন সময় কেউ এসে কথা গুলো বলতেই পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে চুমকি দাঁড়িয়ে আছে।
” তোমাকে কিছু করতে হবে না চুমকি। আমার রান্না প্রায় শেষ দিকে। শুধু মাংসটা বাকি আছে। তুমি শুধু আমাকে একটু বলে দাও কার চায়ে কতটুকু পরিমাপে চিনি দিতে হবে?”
চুমকিকে কথা গুলো বলে আবারও রান্নার দিকে মনোনিবেশ করে। চুমকি একবার সম্পূর্ণ খাবারের দিকে তাকিয়ে মুখ হা করে তাকিয়ে থাকে।
” আপামনি এতো খাবার? এতো খাবার তো কেউ খাই না এই বাড়িতে। আর ছোট ভাইজান তো খাবার অপচয় পছন্দ করে না।”
” এখান থেকে কোনো খাবার অপচয় হবে না চুমকি। তুমি একটু ড্রাইভার চাচাকে ডেকে দিবে কষ্ট করে? আর বাড়ির সবাই তো উঠে যাবে। তুমি একটু তাড়াতাড়ি করো প্লিজ।”
চুমকির সাথে কথা বলতে বলতে বাকি রান্নাও শেষ করে ফেলে। চায়ের জন্য পানি বসিয়ে কিচেন কেবিনেট থেকে টিফিন বক্স নামিয়ে কিছু খাবার টিফিন ক্যারিয়ার আলাদা করে প্যাক করতে থাকে।
” নতুন ম্যাডাম!”
” এই খাবার গুলো এই ঠিকানায় দিয়ে দিবেন চাচা। আর হ্যাঁ আপনি আগে নাশতা করে তারপর বের হবেন।”
টিফিন ক্যারিয়ার ড্রাইভারকে দিয়ে দেয়। ড্রাইভার চলে যেতেই কথা আর চুমকি মিলে ডাইনিং টেবিলে খাবার গুলো রেখে আসে।
” চুমকি তুমি বাকি খাবার গুলো রেখে দিও। সবাই চলে আসবে কিছুক্ষণ পর। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
চুমকিকে কথা গুলো বলে উপরে চলে যায় কথা।
——
” কখন উঠেছেন? আর উঠে এভাবে বসে আছেন কেন? ফ্রেশ হয়ে আসুন। সবাই নিচে অপেক্ষা করছে।”
কানের দুল পড়তে পড়তে আয়নায় তাকিয়ে বিছানায় অর্ধশুয়ে থাকা মোয়াজকে বললো। কিন্তু মোয়াজের কথার বলা উক্তির দিকে খেয়াল নেই। সে তো নিজের সামনে শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক রমনীর দিকে। যার শ্যাম গড়নে একটা কলাপাতা রঙের শাড়ি। দুই হাতে চুড়ি, কানে ঝুমকা। কলাপাতা রঙের শাড়িতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে কথাকে। নিজের শখের নারীকে অপরূপ রূপে সশরীরে নিজের চোখে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কয়েকটা হার্ট বিট মিস হয়ে গেলো। চোখের পলক ফেলতে ভুলে গেছে। প্রতিটা মেয়েকেই এতো সুন্দর লাগে? কই সেতো আরো মেয়ে দেখেছে তাহলে কেন ভালো লাগেনি? না-কি নিজের ব্যক্তিগত মানুষকেই নিজের কাছে সুন্দর লাগে?যে যেমনি হোক না কেন দেখতে নিজের প্রিয় মানুষের চোখে সে তেমন ভাবেই অপরূপা।
” এভাবে তাকিয়ে না থেকে খেতে চ,,,”
মোয়াজকে একই ভাবে বসে থাকতে দেখে মোয়াজের পাশে এসে কোমড়ে হাত দিয়ে কথা গুলো বলছিলো। কিন্তু সেই কথা সম্পূর্ণ করার আগেই পাতলা ঠোঁটের মাঝে ঠোঁট একে দিলো। গাঢ় চুম্বনের পর ঠোঁটে ছোট করে কামড় দিয়ে এক দেরি না করে ওয়াশরুমে চলে যায়।
” মিষ্টির মোয়া অস*ভ্য লোক।”
মোয়াজ ওয়াশরুমে চলে যেতেই আলমারি থেকে মোয়াজের জন্য ড্রেস বের করে বিছানার উপর রেখে বসে রইল আসার জন্য।
—–
” মিস্টার মোয়াজ চৌধুরী।”
পরিবারের সবাই মিলে আনন্দ করে সকালের নাস্তা করছিল। কিন্তু হঠাৎ করে কেউ মোয়াজের নাম ধরে ডেকে উঠতেই হাসিঠাট্টা বন্ধ করে দিয়ে, কোথা থেকে গলার স্বর ভেসে এসেছে সেই দিকে তাকায়।
” পুলিশ!”
” পুলিশ কেন?”
দরজার কাছে পুলিশকে দেখে অবাক হয়ে নাজিয়া চৌধুরী কথা গুলো বললো।
” আমি দেখছি। তোমরা খাওয়া কান্টিনিউ করো।”
সবার উদ্দেশ্যে কথা গুলো বলে ডাইনিং টেবিল থেকে উঠে যায় মোয়াজ। মোয়াজের পাশাপাশি কথাও তার সাথে যায়।
” হ্যাঁ অফিসার বলুন। কি সমস্যা।”
” আপনার নামে এরেস্ট ওয়ারেন্ট আছে মিস্টার মোয়াজ। ইউ আর আন্ডার এরেস্ট।”
” হোয়াট?”
পুলিশ অফিসারের কথা শুনে অবিশ্বাস্য ভাবে দাড়িয়ে রইল মোয়াজ। এইদিকে খাবার টেবিলে থেকে সবাই চলে আসে।
” আমি কি জানতে পারি আমার হাসবেন্ডের বিরুদ্ধে কিসের মামলা দায়ের করা হয়েছে? আর কে করেছে?”
শক্ত কন্ঠে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ অফিসারকে প্রশ্ন করলো কথা।
” উনার বিরুদ্ধে মলেস্টেশন এবং চিটিং ফ্রড এর মামলা দায়ের করা হয়েছে। আর মামলা দায়ের করেছে লিজা সিকদার।”
সবাই যতটা না অবাক হয়েছিল এরেস্টের কথা শুনে তার থেকে বেশি অবাক হয়েছে মামলা এবং মামলা দায়েরকারীর নাম শুনে। লিজা এমন মিথ্যা মামলা দায়ের করবে সেটা সবার ভাবনার অতীত ছিল।
” লিজা?”
লিজার নাম শুনে অবাক হয়ে প্রশ্ন করল নয়নতারা।
” হ্যাঁ! লিজা সিকদার। সিকদার কম্পানির ভবিষ্যৎ এমডি।”
” লিজা এমন কেন করবে? লিজা তো আমাদের রিলেটিভ। আর গতকাল ও সে আমাদের সাথে ছিল। এইটা মিথ্যে অভিযোগ অফিসার।”
নাজিয়া চৌধুরী পুলিশের কথার প্রতি উত্তরে কথা গুলো বললো।
” অফিসার আমি কি একবার এরেস্ট ওয়ারেন্ট দেখতে পারি?”
কথা অফিসারকে কথা গুলো বলতেই অফিসার ওয়ারেন্ট কাগজ দেখিয়ে দেয়।
” এইসব মিথ্যে কথা। আমার ছেলের বিরুদ্ধে যেই অভিযোগ করা হয়েছে সব কিছু মিথ্যে। কোথাও যাবে না ও এখান থেকে।”
মোয়াজকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে কথা গুলো বলে নাজিয়া চৌধুরী।”
” ফুপি পুলিশের কাজ পুলিশকে করতে দাও। আর কথা আমার উপর বিশ্বাস রাখো।”
মোয়াজের কথা শেষ হতেই পুলিশ অফিসার মোয়াজকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।
” দেখছো তো এবার এই মেয়েকে? বাড়িতে আসতে না আসতেই ভাইয়াকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেলো। এই মেয়ে এইটা অপয়া। যেখানে যাবে সব কিছু শেষ করে দিবে। নতুন মামি ঠিক বলেছিলো। এই মেয়ে খারাপ। আমাদের শেষ করে দিবে একেবারে।”
কথা গুলো শেষ হতে না হতেই স্বশব্দে উষার গালে থাপ্পড় পড়লো। আর সেই থাপ্পড় দিয়েছে সয়ং নাজিয়া চৌধুরী। এই প্রথম মায়ের হাতে থাপ্পড় খেয়ে মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে উষা। যত যাই করুক মা কখনো গায়ে হাত তুলে শাষণ করেননি। তাই আজকের থাপ্পড় হজম করতে পারছে না সে।
” আমি তোকে এই শিক্ষা দিয়ে বড় করেছি? কি ভাবে কথা বলতে হয় জানো না তুমি? কখন, কোথায় কী বলতে হয় জানো না? আর এইটা লিজা করেছে কথা তো কিছু করেনি। সব কিছু লিজার জন্য হয়েছে। বুঝতে পেরেছ তুমি? যাও এখান থেকে। নিজের রুমে চলে যাও।”
মায়ের হাতের থাপ্পড় আর এতো কথা শুনে কান্না করতে করতে সেখান থেকে চলে যায় উষা।
—–
” বিয়ে?”
#চলবে