#অবশেষে_তোমায়_হলো_পাওয়া
#পর্ব ৫
#তামান্না_ইসলাম_কথা
নিজ মায়ের শাড়িটা ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছিলো কথা। জন্মের ছয় মাসের মাথায় বাবাকে হারায় আর দুই বছর বয়সে মা’কে। তারপর থেকে বেড়ে উঠা মামা মামীর কাছে। মানুষ দুটো আমার কথা চিন্তা করে কখনো সন্তান নেইনি। ছোট থেকে তো তাদেরই মা বাবা ভেবে আসতাম। কিন্তু একদিন!
” কি রে কথা এখনো রেডি না হয়ে বসে আছিস? তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে নে মা।”
কথার দেরী হয়ে যাচ্ছে দেখে আবারও মিসেস আমেনা বেগম কথাকে তাড়া দিতে আসে। আর রুমে আসে দেখে কথা শাড়িটা নিয়ে বসে আছে।
” আমাকে পাঁচ মিনিট সময় দাও আমি আসছি।”
আমেনা বেগমকে কথাটা বলেই শাড়ি নিয়ে কথা ওয়াশরুমে চলে গেলো। মিনিট পাঁচেক পর কথা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এসে দেখে আমেনা বেগম রুমের এলোমেলো হয়ে থাকা কাপড় ভাঁজ করে দিচ্ছে।
” তুমি এখানে আছো? ওইদিকে উনাদের সামলাচ্ছে কে? তুমি যাও আমি আসছি।”
কথা গুলো বলে আমেনা বেগমকে নিচে পাঠিয়ে দিলো কথা। আর নিজেও রেডি হয়ে নিতে শুরু করলো।
——
“সাইন করে দে কথা।”
আমেনা বেগম কথার কানের কাছে ফিসফিস করে কথাটা বলতেই কথা একবার আমেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে দেখে নিলো তাকে।
” কি গো মেয়ে ওমন করে তাকিয়ে না থেকে সাইন করে দাও। শুভ কাজে দেরি করতে হয় না! সেটা তুমি জানো না?”
কথার সামনের সোফায় বসে থাকা একজন মহিলা কথাটা বলে উঠলো। কথা একবার তার দিকে তাকিয়ে দেখে নিলো তাকে। মুখ অন্ধকার করে বসে আছে। কথা আরো একবার সবার দিকে তাকিয়ে রেজিঃ পেপারে সাইন করে দিলো।
“এখন আমি যদি শর্ত গুলো না মানি কথা ম্যাডাম? এখন তো লিগাল ভাবে ইউ আর মাই ওয়াইফ। সো আই ক্যান ডু এনিথিং উইথ ইউ।”
কথা সাইন করে দেওয়া মাত্রই মোয়াজ কথাকে ছোট একটা বার্তা পাঠিয়ে দেয়। মোয়াজের মেসেজ দেখে কিছু সময় ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে নিয়ে সব কিছু বুঝার চেষ্টা করলো।
” আলহামদুলিল্লাহ! অবশেষে তাহলে বিয়েটা হয়ে গেলো। দেবরটা যা তাড়া দিচ্ছিল। মনে হয় আজকে বিয়ে না করলে আর করাই হবে না।”
বড়দের সবাই নিয়ে কিছু জরুরি আলোচনা করবে বলে, তারা বিয়ের কাজ সম্পন্ন করতেই আমেনা বেগম তাদের নিয়ে নিজেদের রুমে চলে যায়। আর ড্রয়িংরুমে মোয়াজের ভাই-বোন আর ভাবী বসে বসে কথা বলেছিল। এরই মাঝে মোয়াজের ভাবী নয়নতারা কথাটা বলে উঠে।
” এটাকে বিয়ে বলে? এতো বড় ব্যবসায়ী কি-না এমন চুপিচুপি বিয়ে করে নিলো? আর বিয়ের জন্য এমন হুটুকারি কে করে? আমরা তো মেয়ের সম্পর্কে কিছুই জানিনা ঠিক করে। না জেনে শুনে এমন করে কেউ বিয়ে করে কখনো? আর দেখতো কেমন ছোট ঘরের মেয়েকে বিয়ে করলো। এই মেয়ের কি ভাইয়ার পাশে মানায়? কোথায় সে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আর কোথায় এই মেয়ে।”
এতো সময় ধরে চুপচাপ সবার কথা শুনছিলো কথা। নয়নতারার মজা করে বলা কথার প্রতিউত্তরে যে এমন কিছু কেউ বলতে পারে সেটা কেউ বুঝতে পারেনি।
” এইটা কেমন ধরনের কথা উষা? আর তুমি এভাবে বা কথা বলছো কেন? তুমি ভুলে যেও না কথা মোয়াজের স্ত্রী। আর মোয়াজ যাকে বিয়ে করবে তাকে নিশ্চই সব কিছু জেনে শুনে বিয়ে করবে। আর,,,”
” কি হচ্ছে এখানে? আর কথাকে নিয়েই বা কার এতো সমস্যা হচ্ছে?”
নয়নতারার কথার মাঝে কোথা থেকে জানি মোয়াজ চলে আসে। উষার কথা না শুনলেও নয়নতারার কথা সম্পূর্ণ শুনেছে মোয়াজ।
” আমার আপনার সাথে কিছু কথা আছে। আর তুমি! তুমি আমার ছোট হবে, তাই তুমি করে বলছি। আমি তোমার ভাইকে বিয়ে করার জন্য অস্থির হয়ে যায়নি? তোমার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ভাই আমার পিছনে লেগে ছিলো। আর বাকি রইলো আমার পরিবারের কথা? আমার পরিবার আপনার পরিবারের মত বড় না হলেও তাদের মন আপনার মতো ছোট নয়। ছোট হোক বা বড়! সবাইকে সম্মান করতে শিখো। আর ভবিষ্যতে তোমার এই অর্থ, অহংকার চিরদিন নাও থাকতে পারে। আর আমি কেমন মেয়ে সেটা তোমার ভাইকে জিজ্ঞেস করে নিও। আর বিয়ের বিষয়ে কথা না হয় তার সাথে বলে নিও।”
প্রথম কথা মোয়াজের উদ্দেশ্যে বললেও বাকি কথা গুলো উষাকে বলে আর দেরী না করে সেখান থেকে চলে গেলো।
” শেম অন ইউ। তোর জন্য কি অপেক্ষা করছে তোর ধারনা নেই।”
মোয়াজ রাগী চোখে উষাকে কথা গুলো বলে আর দেরী না করে সেখান থেকে কথা যেই দিকে চলে গেছে সেই দিকে চলে যায়।
” তোকে এইসব কথা কে বলতে বলেছিলো? এবার বাড়িতে গিয়ে কি হয় আল্লাহ পাক জানে।”
——-
প্রায় আধঘন্টা ধরে ছাদের এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে কথা আর মোয়াজ। ছাদের এক পাশে বেশ কিছু গাছ আছে। তার অধিকাংশই ফুল গাছ দিয়ে ঘেরা। আর কয়েকটা ফলের চারা আছে। ছাদে রেলিং না থাকলেও ইট সিমেন্ট দিয়ে বসার জন্য জায়গা করে রেখেছে। সকাল থেকে রোদের খুব তেজ থাকলেও এখন সূর্যমামা মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পড়েছে বলে রোদের দেখা নেয়। তবে গরম ভাব এখনো আছে।
” চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য বুঝি এখানে নিয়ে এসেছেন?”
পিনপিন নিরবতার মাঝে কথাকে উদ্দেশ্য করে বলল মোয়াজ।
” পেপারস্!”
” আহ্! আপনার পেপার! ওগুলো আছে আমার কাছে। আপনি কি ভেবেছিলেন আপনার দেওয়া এমন শর্ত দেখে আমি আপনাকে বিয়ে করবো না বা আমার মত পাল্টে যাবে?”
” না। আপনি পেপারস্ গুলো আমাকে দিন।”
মোয়াজকে মুখে কথা গুলো বললেও সত্যি মনে মনে কথা এইটাই চেয়েছিলো। যেনো মোয়াজ বিয়ে করতে না চাই। তাই তো এমন এমন শর্ত দিয়েছিল। কিন্তু মোয়াজ যে সত্যি সব কিছু মেনে নিবে বুঝে উঠতে পারেনি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বিয়েটা হয়ে ঠিক হয়েছে।
” আমরা যাচ্ছি কখন? আর আপনার মা’কে তো দেখলাম না। ছেলের বিয়েতে উনি উপস্থিত নেই। এটা কেমন,,,”
নিজ কথা গুলো সম্পূর্ণ করার আগেই নিজ ঠোঁট জোড়া অন্য কারো আয়ত্তে চলে গেলো। সব কিছু বুঝে উঠার আগেই যেনো কি থেকে কি হয়ে গেলো। মাথার সব নিউরন গুলো কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। শুধু চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। যতক্ষনে সব কিছু বুঝে আসে তখন ধাক্কা দিয়ে মোয়াজকে সরিয়ে দেয়।
” স্যরি ফর দ্যাট! আপনি নিচে আসুন আমাদের বের হতে হবে। আপনাকে নিয়ে কোথাও যাওয়ার আছে।”
কথা গুলো শেষ করেই মোয়াজ ছাদ থেকে নেমে নিচে চলে যায়। আর কথা সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। একটু আগে ঠিক কি হয়েছে সেই সব আবার মনে করার চেষ্টা করছে।
” ছিঃ! এই মিষ্টির মোয়া আমার ভার্জিনিটি দিলো শেষ করে। আপনি শর্তের বাহিরে গিয়েছেন মিষ্টির মোয়া। এর জন্য আপনাকে শাস্তি পেতে হবে। সো বি রেডি।”
হাতের তালু ধারা ঠোঁট মুছতে মুছতে নিচে চলে যায় কথা। আর সাথে মোয়াজকে সাবান ছাড়াই ধুয়ে দিচ্ছে সে।
——
“আমরা এখানে কেন? বাড়িতে যাবো না?”
#চলবে