#অবশেষে_তোমায়_হলো_পাওয়া
#পর্ব ৪
#তামান্না_ইসলাম_কথা
“এই মিষ্টির মোয়া এখনো আসছে না কেন? আমার এখনও কত কাজ বাকি।”
প্রায় আধঘন্টা ধরে লাইব্রেরী রুমে বসে আছে কথা। কিন্তু মোয়াজের কোনো দেখা নেয়। বসে থেকে বিরক্ত হয়ে উপরোক্ত কথা গুলো বললো কথা।
” ভবিষ্যত এডভোকেট মিস কথা আমার বাড়িতে?”
মোয়াজের আসতে দেরি হচ্ছিল বিধায় কথা শেলফে থাকা বই গুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছিলো। কিন্তু হঠাৎ করে কানের কাছে কারো পুরুষালী কন্ঠে কেঁপে উঠে।
” একি আপনি এতো কাছে কেন?”
নিজের থেকে মাত্র কয়েক ইঞ্চি পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা মোয়াজকে দেখে দুকদম পিছিয়ে যায় কথা।
” এর থেকেও বেশি কাছে থাকবো একদিন।”
কথার দিকে একটু আগিয়ে এসে কথাটা বললো মোয়াজ।
” আমার আপনার সাথে কিছু কথা আছে।”
কথাটা বলেই মোয়াজের সামনে থেকে সরে এসে মোয়াজের পিছনে দাঁড়িয়ে যায়।
” ঠিক আছে আপনি বসুন। বসে কথা বলি?”
কথাটা বলে মোয়াজ রুমে থাকা চেয়ার-টেবিলের দিকে ইশারা করে।
” মিস্টার মোয়াজ আপনার প্রোপজালে আমি রাজি।”
” আমি ঠিক বুঝতে পারিনি। আপনি কিসের কথা বলছেন।”
মোয়াজের এমন গা ছাড়া কথা শুনে বিরক্তিতে মুখ বাকায় কথা।
” আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি আছি। কিন্তু আমার কিছু শর্ত শর্ত আছে। যদি রাজি থাকেন তাহলে আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি।”
কথার শর্তের কথা শুনে হালকা গাল চুলকে হাসলো।
” শর্ত দিয়ে বিয়ে করতে বলছেন? তাও আবার সাদ ইবনে মোয়াজকে?”
কথাটা বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো মোয়াজ। মোয়াজকে এমন করে হাসতে দেখে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রইলো কথা।
“আপনি এমন করে হাসছেন কেন?”
কপালে ভাঁজ করে মোয়াজকে।
” তো হাসবো না কি করবো বলেন? আপনি জানেন এই মোয়াজ চাইলে মেয়ের লাইন লেগে যাবে। আর আপনি আসছেন শর্ত দিয়ে বিয়ে করতে?”
হাসতে হাসতে কথাকে উদ্দেশ্য করে কথা গুলো বললো মোয়াজ।
” সবাই আপনার পিছনে লাইন দিলেও আপনি কিন্তু আমার পিছনে পরে আছেন। আর আমি আপনাকে বিয়ের প্রোপজাল আগে দেয়নি বরং আপনি আগে দিয়েছেন মিস্টার মোয়াজ।”
বেশ ভাবের সাথে মোয়াজকে কথা গুলো বললো কথা। এতে যেনো মোয়াজের কিছু যায় আসেনা।
” যাকে ভালোবাসি তাকে পেতে হলে যদি পিছনে পড়ে থাকতে হয় তাহলে আমি তাই করবো। তা আপনার কি শর্ত শুনি?”
মোয়জের কথা গুলো শেষ হতেই কথা সাইড ব্যাগ থেকে একটা কাগজ বের করে মোয়াজের সামনে ধরে।
” বাহ্! লিখে নিয়ে এসেছেন দেখছি। ভেরি গুড কথা।”
ব্যাজ্ঞ করে কথাকে কথা গুলো বললো মোয়াজ। এদিকে মোয়াজের এমন কাঁটার মতো একেকটা কথা শরীরে বিঁধছে কথার।
” এখানে থাকা শর্তে রাজি থাকলে সাইন করে দিবেন। আর সিদ্ধান্ত যেনো আমার ফেবারে আসে।”
কথাটা বলে আর এক মুহূর্ত দেরি না করে লাইব্রেরি থেকে বের হয়ে আসে কথা।
——
আজ দুইদিন ধরে আইসিইউতে রাখা হয়েছে রফিক সাহেবকে। হসপিটালে নিয়ে আসার পর জানা যায় যে, রফিক সাহেবের শরীরে এক ধরনের বিষ প্রয়োগ করা হয়। যেটা ধারা উনি মারা না গেলেও অর্ধমৃত মানে ৯০% চান্স কোমায় চলে যাওয়ার। এই দুইদিন কথা আর বাকি টিম সবাই মিলে এভিডেন্স খুঁজে চলছিল। আর সেই দুই পেইনড্রাইভ থেকে খুন করার দৃশ্য দেখা গেলেও রাতের অন্ধকারে তাদের মুখ দেখা যায়নি।
” আংকেল আসবো?”
নিজ কেবিনে বসে বসে রিপোর্ট দেখছিলেন মিস্টার নিশাদ। এমন সময় কেবিনের দরজার কাছে এসে উক্ত কথা গুলো বলতেই সেদিকে তাকিয়ে অমায়িক হাসলেন তিনি।
” আরে তোমরা! এসো, এসো। আমি তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।”
মিস্টার নিশাদ ভিতরে প্রবেশ করতে বলতেই কথা আর রিয়াদ ভিতরে প্রবেশ করে।
” আংকেল পেশেন্টের কি খবর?”
কথা চেয়ারে বসেই নিশাদ সাহেবকে প্রশ্ন করলো।
“আমি বসে বসে সেই রিপোর্ট গুলো দেখছিলাম। আর তোমরাও চলে আসছো।”
নিশাদ সাহেবের কথা শুনে কথা তার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
“রফিক সাহেবের শরীরে “টেট্রোডোটক্সিন” নামক একটি মারাত্মক বিষ রয়েছে। এটা মূলত ফুগুর লিভারে রয়েছে টেট্রোডোটক্সিন নামক একটি মারাত্মক বিষ। এই বিষ শরীরের সোডিয়াম পরিমাণ কমিয়ে দেয় ও পেশীগুলিকে অকেজো করে দেয়। এই বিষের জেরে মানুষের প্রথম শ্বাসকষ্ট হতে শুরু করে। তারপরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। উনার সেন্স ফিরে আসলেও উনার বডি অকেজো হয়ে যাবে। আর যদি সেন্স না আসে তাহলে কোমায় চলে যাবে।”
খুব মনোযোগ সহকারে ড. নিশাদের কথা গুলো শুনলো কথা।
” আংকেল আপনি উনার ট্রিটমেন্ট করতে থাকুন আর যে কোনো পরিস্থিতিতে আমাকে ইনফর্ম করবেন। আর আংকেল একটু সাবধানতা অবলম্বন করবেন। আমার যতটুকু ধারণা যে বা যারা খুন করতে চেয়েছিল, তারা এখন জেনে গেছে উনি এখনও বেঁচে আছে। তাই উনাকে খুঁজে বের করে আবারো মেরে ফেলা হবে। আর এবার খুনি কোনো কাঁচা কাজ করবে বলে মনে হয় না। তাই একটু সাবধানতা অবলম্বন করবেন।”
” তুমি চিন্তা করো না কথা। উনার বিষয়ে কেউ কিছু জানে না। আর আমিও সাবধানতার সাথে চলবো। তোমরা নিজেদের দিকে লক্ষ্য রাখো। আর এইদিকটা আমি সামলে নিবো।”
ড.নিশাদের কথা শেষ হতেই কথা আর রিয়াদ কেবিন থেকে বের হয়ে চলে যায়।
—–
হসপিটাল আরও কিছু কাজ করে বাসায় আসতেই বাসার পরিবেশ দেখে রীতিমত আকাশ থেকে পড়লো। ড্রয়িংরুমে জুড়ে মানুষের এতো মানুষ? এদের কাউকে আগে দেখেছে বলেও মনে হচ্ছে না। অপর দিকে আমেনা বেগম ছুটে চলেছে অথিতি সেবা করতে। দরজার সামনে থেকে ভিতরে যেতেই, সেইদিনের মেয়েটিকে দেখে চমকে উঠলো।
” এই মেয়ে তো মিষ্টির মোয়ার বাড়ির সেই মেয়েটি। এই মেয়ে এখানে কি করছে?”
” ওই তো আপামনি চলে আসছে ফুফু ম্যাডাম।”
কথাকে দেখেই কথাটা বললো চুমকি। চুমকির কথা শুনে ড্রয়িংরুমে বসে থাকা সবাই কথার দিকে তাকায়। সবাইকে এক সাথে তাকাতে দেখতেই কথা বোকা বোকা হাসি দিয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে সবাইকে দেখতে লাগলো।
” একি কথা তুই এখনও এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? যা ভিতরে যা।”
কথাকে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কথাকে রুমে পাঠিয়ে দেয় আমেনা বেগম।
” মেয়েটাকে তো চিনলাম কিন্তু বাকি সবাই? এরা কে? এদের তো সেইদিন কাউকে দেখলাম না মোয়াজের বাড়িতে? এরা কি ছিলো না?”
রুমের মধ্যে পায়চারি করতে করতে কথা গুলো বলছিলো কথা। আগের দিনে যখন মোয়াজের বাড়িতে যায় তখন এদের কাউকে দেখতে পাইনি সে। যার জন্য সবাইকে দেখে চিনতে পারছে না।
” একি তুই এখনও এখানে দাঁড়িয়ে আছিস? রেডি হয়ে নে। আমি আলমারি থেকে আপার একটা শাড়ি বের করে রেখেছি। পড়ে রেডি হয়ে নিচে আয়।”
কথাকে রুমের মাঝে পায়চারি করতে দেখে রুমে প্রবেশ করতে করতে কথা গুলো বললেন আমেনা বেগম।
” মামিমা এরা,,,,”
” এরা মোয়াজের ফুপি আর তাদের ছেলে, ছেলের বউ আর মেয়ে। তোর আর মোয়াজের বিয়ের কথা বলতে এসেছে। দেখতে দেখতে তুই কত বড় হয়ে গেলি কথা! তোর সেই দুইবছর বয়স থেকে আমি তোকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছি। আর আজকে তুই এতো বড় হয়ে গেলি যে, অন্যের ঘরের আলো করতে চলে যাবি।”
কথার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কথা গুলো বলছিলো আমেনা বেগম। আমেনা বেগমের কথা শুনে কথার আর কিছু বুঝতে বাকি নেই। কিন্তু মোয়াজ? মোয়াজ কোথায়? সে কি তাহলে সব শর্ত মেনে নিয়েছে?
” তুই রেডি হয় আমি যাচ্ছি।”
কথার ভাবনার মাঝেই কথা গুলো বলে চলে গেলেন আমেনা বেগম। এইদিকে কথার মাথায় চলছে অন্য কিছু।
——
” আমি যদি এখন তোমার সব শর্ত ভুলে যায়?”
#চলবে