#অবশেষে_তোমাকে_পাওয়া
#পর্ব_ছয়+সাত
#তারা ইসলাম
———————————————————————
সকাল সকাল ডাইনিং রুমে ব্রেকফাস্ট করতে বসেছে রেয়ান চৌধুরি আর ফারিয়া চৌধুরি।তারা চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছিলো তখন রেয়ান বললো- বোন আমার এখনো মন খারাপ?
“ফারিয়া ভাইয়ার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো তবে কিছু বললো না।
“রেয়ান বললো- আমি কথা বলেছিলাম রুদ্রর সাথে।সে বলেছে তার বর্তমান ওয়াইফকে ডিভোর্স দিবে না।
“কথাটা শুনে ফারিয়ার চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেলো তারপর রেগে বললো- ভাইয়া আমি কিছু শুনতে চাইনা।আমার রুদ্রকে চাই মানে চাই ব্যস।
“রেয়ান শান্ত দৃষ্টিতে বোনের দিকে তাকিয়ে বললো- আর আমার নূরময়ীকে।
“রেয়ানের কথা ভ্রু কুঁচকে এলো ফারিয়ার তাই বললো- মানে?
“রেয়ান নিজেকে সামলে নিয়ে বললো- ও কিছু না তোর রুদ্রকে চাই তো?ঠিক আছে তাই হবে।
“ফারিয়া কিছু না না বলে খেতে লাগলো তার কিছু ভালো লাগছে।তিনটা বছর ধরে সে রুদ্রকে ভালোবেসে আসছে।এত সহজে কি তাকে ভুলে যাওয়া যায়।সে বিয়ে করেছে যেভাবে হোক করেছে তো।কিন্তু সে রুদ্রকে ভুলে যেতে পারছে না।তাই যে কোনো ভাবেই থাকে চাই চাই।
“রেয়ানের চোখে বার বার নূরের চেহেরা ভাসছে।সে আর নিতে পারছে না এমন দুরুত্ব।তার যে নূরময়ীকে চাই।সে এই বিষয়ে সরাসরি নূরের সাথে কথা বলবেই বলবে।তাদের বিয়েটা যখন একটা ভুল বুঝা-বুঝির কারণে হয়েছে নিশ্চয় সে বিয়েটা থেকে বের হয়ে আসতে চাই।এসব ভেবেই রেয়ান মনে মনে হাসলো।
—————————————-
নূরের মা তুমি কি আর খুঁজ-খবর নিবে না মেয়েটার।আর কতদিন এভাবে চলতে থাকবে।ছোট থেকে তো লালন-পালন করেছো।মেয়েটা কয়বার কল দিয়েছে তোমাকে আর আমাকে।কল ও রিসিভ করো’নি।তুমি এত নিষ্টুর কেন হয়ে যাচ্ছো?মেয়েটার জন্য যে তুমি আড়ালে কান্না করো তা কি আমি জানি না ভেবেছো?
“রেহেলা খান খাবার পরিবেশন করছিলেন।স্বামীর কথা শুনে চমকে গেলেন।তারপর দ্রুত নিজেকে সামলিয়ে বললেন- আগেও বলেছি এখনও বলছি ওই মেয়ের মা না আমি।আমি শুধুমাত্র লিয়নের মা।আর আমি শুধু দায়িত্ব পালন করেছি কাউকে কথা দিয়েছিলাম তাই ভালোবাসে লালন-পালন করি’নি।ওর জন্য আমি কেন কাঁদতে যাবো।
“লেয়ান জামান বললেন- তুমি কি আমাকে শিখাতে চাচ্ছো?মেয়েটাকে কি তুমি ভালোবাসো না?
“রেহেলা খান ছলছল চোখে স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন- ভালোবেসে কি হবে সে তো আর আমার পেটের সন্তান না।সে যার সন্তান তারই সন্তান।আমার তো আর না বলেই নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন।
“লেয়ান জামানের চোখে পানি চলে আসলো সে জানে রেহেলা খান নিজেকে যত কঠোর,নিষ্টুর দেখায় না কেন সে নূরকে প্রচণ্ড ভালোবাসে।তবে সেটা প্রকাশ করে না।হয়তো তার অতীতের কথা গুলা বার বার মনে পরে যায়।
——————————————-
রুদ্র রাগি চোখে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে।আর নূর ভয়ে কাঁপছে।নূর গোসল করতে গিয়েছিলো মাত্র শাড়ি খুলে একপাশে রেখে ব্লাউজ খুলার আগেই ওয়াশরুমের দরজা ঠাস করে খুলে গেলো আর দেখতে পেলো রুদ্র জামা-কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে আসছে।রুদ্র নূরের এইরকম অবস্থায় দেখে চমকে তাড়াহুড়ো করে চোখ সরিয়ে নিলো।আর এইদিকে নূর লজ্জায় ভয়ে তাড়াতাড়ি গায়ে শাড়ি জড়িয়ে নিলো।
“নূরের অবস্থা ঠিক আছে বুঝতে পেরে রুদ্র তার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বললো- তোমার কি কোনোদিন বুদ্ধিশুদ্ধি হবে না।ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ না করে গোসল করতে চলে এলে?তুমি আসলেই একটা হা*দা।
“নূর ভয়ে ভয়ে বললো- বিশ্বাস করুন আমি জানতাম না আপনি এই সময়ে আসবেন।আপনি তো এই সময়ে বাসায় আসেন না।আর আমি ভুলে গিয়েছিলাম দরজা বন্ধ করতে বলেই কেঁদে দিলো।
“রুদ্র রেগে বললো- আল্লাহ!তুমি এত কথায় কথায় কেঁদে দাও কেন?ভুলে গেছো মানে?মাথায় ছিট আছে?আর যদি এমন হয় দেখবে একদম ঠু*কে দিবো।
“নূর মুখে হাত চেপে কান্না করতে করতে বললো- আর জীবনেও হবে না।
“রুদ্র এবার শান্ত হলো।তারপর কি মনে করে যেনো নূরকে স্কেন করে থমকে গেলো।এক্কিবারে এলোমেলো মেয়েটা এর কখন বুদ্ধিশুদ্ধি হয় সেটা আল্লাহ ভালো জানেন।
“নূর এবার কান্না বন্ধ করে হেচকি তুলতে লাগলো।রুদ্র ওকে এখনো দেখে যাচ্ছে কান্না করার ফলে নাক,চোখ,গাল লাল হয়ে গেছে।তার হটাৎ নূরের এই কান্নাময় মুখশ্রী দেখতে বেশ ভালো লাগলো।সে হুট করে নূরের দিকে এগিয়ে গেলো।নূর নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলো বলে খেয়াল করে’নি!কিন্তু যখন বুঝতে পারলো উনার আর তার দুরুত্ব কমে গেছে।তখন সে উপরে তাকাতেই যেনো থমকে গেলো।দুটো ঘোর লাগা দৃষ্টি তার মধ্যে আবদ্ধ।তার হটাৎ অস্বস্তি লাগলো তাই রুদ্রকে পাশ-কাটিয়ে চলে যেতে নিলে রুদ্র তাকে হাত ধরে আটকায়।এতেই যেনো সে শকড তারপর কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে অনেকটা সাহস নিয়ে বললো- ছা…ড়ু…ন।
“রুদ্র ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে শক্ত করে কোমড় জড়িয়ে ধরে বললো- বলেছিলাম না এইরকম অবস্থায় আমার সামনে না আসতে?
“নূর এবার কাঁপা কাঁপা চোখে রুদের দিকে তাকালো তবে কিছু বললো না।
“রুদ্র তাকে আরেকটু জড়িয়ে নিয়ে ঝর্ণা ছেড়ে দিলো।এতে দুইজনেই ভিজে একাকার।
“নূর কাঁপা কাঁপা হাত দুটো রুদ্রের বুকে রাখলো।ভয়ে সে বরফের নায় জমে গেলো।কি হচ্ছে কেন হচ্ছে?সব তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।রুদ্রর এমন বিহেভ সে মেনে নিতে পারছে না।সে তো সব সময় রুদ্রকে রাগি মুডি গম্ভীর অহংকারী ভেবেছিলো।
“রুদ্র এখনো ঘোরের মাঝেই আছে সে এক মনে তাকিয়ে আছে নূরের ভীতু মুখশ্রীর দিকে।শাড়ি ভিজে গায়ে লেপ্টে আছে।রুদ্র নিজেকে অনেক সামলাতে চেয়ে ও না পেরে নূরের কাঁপা ঠোঁট নিজের ঠোঁটের মধ্যে আবদ্ধ করে ফেললো।
“নূরের সাথে আচমকা এমন হওয়াতে সে পাথরের নায় দাঁড়িয়ে রইলো।
“রুদ্রের যখন হুশ আসলো তখন সে ছিটকে দূরে সরে এলো নূরের থেকে।
“নূর লজ্জায় আর রুদ্রের দিকে তাকালো না।নূর এখন ভয়ে দেয়ালের সাথে লেপ্টে আছে।
“রুদ্র নিজেকে শান্ত করে নূরের দিকে তাকিয়ে বললো- আমরা হাসবেন্ড ওয়াইফ!আমাদের মাঝে এসব হওয়া স্বাভাবিক।তাই এটাকে স্বাভাবিক ভাবেই নিবে।আমি কোনো মহাপুরুষ না যে নিজের বউকে এই অবস্থায় দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো।আর হ্যা নেক্সট টাইম থেকে যদি আর এই এলোমেলো অবস্থায় দেখি তাহলে আজকের থেকে ভয়ংকর কিছু করবো বলে উনি চলে গেলেন।
“উনি যেতেই আমি তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে নিচে বসে পরলাম।আমার সাথে কি হয়ে গেলো তা বুঝতে পারলাম না।নিজের ঠোঁটে হাত দিতেই চমকে গেলাম মনে মনে ভাবলাম আমি জ্ঞান হারায়নি কেন উনাকে দেখলে যেখানে আমি জ্ঞান হারাতাম।সেখানে এত কিছু হয়ে গেলো আমি জ্ঞান হারালাম না।আমি কি উনার প্রতি দূর্বল হয়ে পরছি।দাদির কথা মতো ভালোবেসে ফেলছি।ভাবতেই বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলাম।তারপর এক-প্রকার লজ্জা নিয়েই গোসল শেষ করলাম।
————————————
রেয়ান এক মনে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে সে কিছুক্ষণ আগেই নূরের ভার্সিটির সামনে এসেছিলো।এক নজর তার নূরময়ীকে দেখার জন্য।আর দেখা পেয়েও গেলো।সে হাসতে হাসতে ঝালমুড়ি খাচ্ছে।সে গাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে নূরকে দেখতে লাগলো।তার কিছুক্ষণ পর সে হেটে নূরদের কাছে গেলো তবে কিছুটা দুরুত্ব রেখে দাঁড়ালো।আর ঝালমুড়ি ওয়ালাকে বললো ঝালমুড়ি দিতে।সে জীবনেও এভাবে ঝালমুড়ি খাইনি।সে ঝাল খেতেই পারে না।তারপর ঝালমুড়ি তার হাতে আসায়।সে নূরের দিকে তাকিয়ে খেতে লাগলো।তবে মেয়েটার সেদিকে কোনো খেয়াল নেই সে আছে তার মতো আড্ডা দিতে।
“এক সময় রেয়ানের ঝাল লেগে উঠলো।তার কাশি শুরু হয়ে গেলো ভুল করে সে কাঁচা মরিচ খেয়ে ফেলেছে।
“তার কাশি দেখে নূর আর মারিয়া তার দিকে ফিরে তাকালো।নূর অবাক হলো কারণ সে আজাইরা ছেলেটা।কিন্তু তার এমন কাশি দেখে সে দ্রুত তার কাছে থাকা পানির বোতল টা রেয়ানের দিকে এগিয়ে দিলো।রেয়ানের কাশতে কাশতে অবস্থা খারাপ।সে তাড়াহুড়ো করে নূর থেকে বোতল টা নিয়ে ঢকঢক করে সব পানি খেয়ে ফে’ল’লো।
“তারপর সে স্বাভাবিক হতেই নূর জিজ্ঞাস করলো- ভাইয়া আপনি ঠিক আছে?
“রেয়ান নূরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো- আমি ঠিক আছি নূরময়ী।
“নূর কিছুটা অবাক হয়ে বললো- নূরময়ী মানে?
“রেয়ান বললো- তোমার নাম নূর।তাই তোমাকে নূরময়ী বলে সম্মোধন করছি।
“নূর ভ্রু কুচকে বললো- আপনি আমার নাম জানেন কিভাবে?আর দয়া করে এই নামে আমাকে সম্মোধন করবেন না।
“রেয়ান হালকা হেসে বললো- কিছু কিছু কথা না জানায় ভালো নূরময়ী।তারপর সে একমুহুর্ত না দাঁড়িয়ে গাড়ির কাছে চলে আসলো।তার নূরের প্রতি অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করছে।সেখানে থাকলে সে সেটা সামলাতে পারবে না তাই দ্রুত চলে আসলো।
“নূর আর মারিয়া একে-অপরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে খিলখিল করে হেসে উটলো।
“মারিয়া বললো- ব্যাটা নিশ্চয় তোর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে?
“আমি তার কথা শুনে বললাম- তাতে আমার কি?আমি তো বিয়াত্তা বলেই আবার খিলখিল করে উঠলাম…..
——————————
(চলবে)
(ভুল ক্রুটি ক্ষমা করবেন।আর ভুল গুলা ধরিয়ে দিবেন)
???
#অবশেষে_তোমাকে_পাওয়া(মিনি স্পেশাল পর্ব)
#পর্ব_সাত
#তারা ইসলাম
———————————————————————–
রুদ্র এখনো আমরা রাসেলের খুঁজ পাইনি।তবে আমরা চেষ্টা করছি।তুই একদম চিন্তা করিস না।যেখান থেকে পারি খুঁজে আমি আনবো শা*লা*কে।শুধু একবার হাতে পাই কু*ত্তা*র বা*চ্চা*কে জাস্ট খু*ন করে ফে’ল’বো।এত গুলা মেয়েকে অন্যদেশে বিক্রি করে সে কোনোদিনও পালাতে পারবে না।
“আমানের কথা গুলা রুদ্র মন দিয়ে শুনে বললো- জাস্ট পাঁচ দিন টাইম আছে।এই পাঁচদিনের মধ্যে তাকে আমার সামনে চাই।যেভাবে পারিস খুঁজে বের কর।না হলে আর কত মেয়ের জীবন ন*ষ্ট হবে জানা নেই।আর সে কার ইশারায় এসব করছে তার খুঁজও আমি চাই।
“আমান বললো- তুই চিন্তা করিস না।আমি আমার বেষ্ট দিয়ে হলেও তাদের খুঁজে বের করবো।আর ব্রো ডালিয়ার কেসটা কতটুক এগিয়েছে?
“রুদ্র বললো- এখনো কোনো তথ্য পাইনি।তবে চেষ্টা চলছে।
“আমান বললো- আমার মনে হয় ডালিয়ার বাবার বাড়ির লোকরা ভালো জানবে কেন সে সু*ইসা*ই*ড করেছে?
“রুদ্র বললো- আমার মনে হয়না সেটা সু*ইসা*ই*ড।বরং ঠান্ডা মাথায় মা*র্ডা*র।কি*লা*র কিন্তু অনেক চালাক।
“আমান বললো- আচ্ছা তুই সামলা কেসটা আমি এদিকটা দেখছি।
~ তারপর তারা আরও কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিলো।
“এ,সি,পি রুদ্র মির্জা।সে যে একজন পুলিশ সেটা আমান মির্জা ছাড়া কেউ জানে না।তারা একসাথে পুলিশে জয়েন্ট হয়েছিলো।তবে আমানেরটা সবাই জানলেও রুদ্ররটা আমান ছাড়া কেউ জানে না।সে আড়ালে থেকে সব কাজ করতে পছন্দ করে।
“কিন্তু বাড়িতে সবাইকে বলেছে তার আলাদা ব্যবসা আছে।আর পরিবারের সবাই থাকে ভীষণ বিশ্বাস করে তাই কেউ কখনো জানতে চাইনি কি ব্যবসা করে।সে আড়ালে কেস সমাধান করে+আমানকে সাহায্য করে।রুদ্র বিচক্ষণ,স্মার্ট,খুব তাড়াতাড়ি কেস সমাধান করে ফেলে।
———————————
শাশুড়ি আম্মুর সাথে সন্ধ্যার পর একটু কাজ করছিলাম।তানিয়া ভাবি আফ্রানকে খাওয়াচ্ছে।আর মারিয়া ফোনে আমান ভাইয়ার সাথে কথা বলছে।আর দাদি টিভি দেখছে।শশুড় বাবারা সবাই বাহিরে।আর আমি শাশুড়ি মা রিনি ভাবি রান্না ঘরে ডিনার রেডি করছি।
“কিছুক্ষন পর কলিংবেল দেওয়ার শব্দ হলে রিনি ভাবি গেলো দরজা খুলতে।
“তারপর উনি আবার রান্নাঘরে এসে বললেন- মেজো ভাই(রুদ্র)এসেছে।উনার কথা শুনে অবাক হলাম।উনি এই সময়?
“এখন উনার সাথে অনেকটা সহজ হয়ে গেছি আমি।আগের মতো ভয় পাইনা তবে অল্প ভয় পাই।উনার প্রতি একটু হলেও আমার সারাজীবন ভয় থাকবেই থাকবে।
“আমি শাশুড়ি মার থেকে পারমিশন নিয়ে উনার রুমের দিকে হাটা দিলাম।
“রুমে ডুকতে দেখলাম উনি ঘেমে একাকার হয়ে আছেন।ফ্রেশ না হয়ে কি যেনো খুঁজছেন।
“উনার কাছে গিয়ে শান্ত গলায় বললাম- কিছু খুঁজছেন আপনি?
“উনি আমার দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বললেন- যাও তো এখান থেকে মাথা খেতে আসবে না।
“উনার কথা শুনে হটাৎ আমি কষ্ট পেলাম।আগে তো কত কথা বলতেন কই কখনো তো কষ্ট লাগে’নি?আজ কেন লাগছে?মনে মনে কান্না পেলো তবে চেহেরায় স্বাভাবিক করে রাখলাম।তাও আবার বেহায়ার মতো জিজ্ঞাস করলাম- বলুন না কি খুঁজছেন?
“উনি এবার রাগি চোখে আমার দিকে তাকালেন তবে নিজেকে শান্ত করে বললেন- আমি আমার লাল ফাইলটা পাচ্ছি না সেটাই খুঁজতেছি।
“উনার কথা শুনে কিছু একটা ভেবে আমি আলমারি খুলে একদম শেষের একটা “তাক”থেকে উনার সে লাল ফাইলটা উনার হাতে দিলাম।আর বললাম- নেন এটা খুঁজছিলেন নিশ্চয়?আমি আলমারিতে রেখেছিলাম।আপনি তো ড্রয়ারের উপরে রেখেছিলেন।তাই আমি যত্ন করে আলমারিতে রেখে দিয়েছিলাম।
“আমার কথা শেষ হতেই উনি ভয়ংকর একটা ধমক দিয়ে উঠলেন।উনার ধমক শুনে চমকে আমি আলমারির সাথে মিশে গেলাম।উনি এবার রেগে চিল্লিয়ে বললেন- তোমার সাহস কিভাবে হলো আমার জিনিসে হাত দেওয়ার?আর তোমাকে আমি বলেছিলাম আমার ফাইল গুছিয়ে রাখার জন্য?বলো বলেছিলাম?তারপর আমার কাছে এসে মুখ চেপে ধরে বললেন- নেক্সট টাইম যদি আমার কোনো ফাইলে হাত দাও সে হাত আমি ভেঙ্গে দিবো!বলেই আমাকে ছেড়ে হনহন করে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।
“উনার কথাগুলা শুনে আমি পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।আমি ইচ্ছা করে উনার জিনিসে হাত দি’নাই।
উনি এলোমেলো পছন্দ করেন’না তাই আমি গুছিয়ে রেখেছিলাম।উনার কথায় অপমানে সারা-শরীর আমার মৃদু কাঁপছে।আমি ভীতু তবে আমার আত্নসম্মান প্রবল।উনার কথা শুনে ভয় নয় বরং রাগ হলো।উনি নিজেই তো আমাকে উনার ওয়াইফ হিসেবে মেনে নিয়েছেন।রাগে দুঃখে সিদ্ধান্ত নিলাম যতক্ষণ না উনি ক্ষমা চাইবেন।ততক্ষণ পযর্ন্ত উনার চেহেরাও দেখবা।বলেই মারিয়ার রুমের দিকে চলে গেলাম।
———————————–
আপনার মাইয়া কিন্তু এহন বড় হইয়া গেছে এক্কিবারে টমেটোর মতো দেখতে।আমার কিন্তু হেব্বি পছন্দ হয়েছে।তাই আপনার মাইয়ারে আমি বিয়া করতে চাই।
“কথাটা বলতেই রাসেলের গা*লে সজোরে একটা চ*ড় পরলো।তারপর সে মহিলাটি বললেন- তোদের মতো কু*কু*রে*র ছা*না*রা যাতে আমার মেয়ের দিকে কু*নজর দিতে না পারে!তার জন্যই আমি তাকে আমার বুক হারা করেছিলাম।আর সে তুই আমার মেয়ের দিকে নজর দিস।আমার সাথে কাজ করিস ঠিক আছে কিন্তু শুন আমার মেয়ের যদি কোনো ক্ষতি করতে চাস তাহলে এমন অবস্থা করবো না বিয়েও করতে পারবি না।
“রাসেল ভয় পেলো সে জানে এই মহিলা কত ভয়ংকর।তাই ভয়ে ভয়ে বললো- শায়লা ম্যাডাম আমারে মাফ করবেন।আমি তো আপনার জন্যই গেছিলাম!আপনার মাইয়ারে দেখতে।সে বহুত ভালা আছে হের বিয়া হইয়া গেছে।এক ভালা পোলার লগে।
“শায়লা তাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে বললেন- যা তুই!ওর খবর আমি অনেক আগেই পেয়েছি।আর শুন ওই এ,সি,পি আমান মির্জা কিন্তু তোর পিছনে লাগছে।সাবধানে থাকিস।
“রাসেল মাথা দুলিয়ে চলে গেলো।
“শায়লার চোখ ছলছল করে উঠলো তার জীবন সুন্দর হতে পারতো।তবে একজনের জন্য তার জীবনটা তছনছ হয়ে গেছে।সে মেয়ে হারা হয়েছে!সে আর কিছু ভাবতে পারে না নিজের কাজের জন্য বের হয়ে পরলো।
——————————————
“রাতে বাসায় এসে নিজের রুমে নূরকে দেখতে না পেয়ে কিছুটা অবাক হয় রুদ্র।তবে সন্ধ্যার সব ঘটনা মনে পরতে সে কপালে চা*প*ড় লাগালো।রাসেল আর ডালিয়ার কেসটা নিয়ে সে অনেকটা টেনশনে ছিলো।আর রাসেলকে খুঁজে না পাওয়ায় বেশ রেগে ছিলো।আর সে সব রাগ ঝেড়েছে নূরের ওপর।আর তখন লাল ফাইলটাও পাচ্ছিলো না।যেটাতে ডালিয়ার কেস সম্পর্কে সব তথ্য ছিলো।
“রুদ্র বিরক্তি নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
“ফ্রেশ হয়ে এসে সে মারিয়ার রুমের দিকে হেটে চললো তার একমাত্র মিসেস সেখানে ছাড়া আর কোথাও থাকবে না।সে রাতে বাহিরে থেকে খেয়ে এসেছে।
“মারিয়ার রুমের কাছে গিয়ে দেখলো লাইট জ্বলছে+দরজা খুলা।রুদ্র মনে মনে ভাবলো- মারিয়া হয়তো পড়ছে।কারণ তার রাত জেগে পড়ার অভ্যাস আছে।সে দরজায় নক করে বললো- মারু আসতে পারি?
“মারিয়া পড়ছিলো তার পাশেই নূর মোবাইলে ক্রিম আপার ভিডিও দেখে মন ভালো করছিলো।কিন্তু রুদ্রর আওয়াজ পেয়ে দুইজনই চমকে দরজার দিকে তাকালো।
“মারিয়া বললো- আসো ভাইয়া।
“রুদ্র মারিয়ার রুমে ডুকে দেখলো মারিয়া পড়ছে আর নূর মোবাইল চালাচ্ছে।
“সে মারিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো- মারু ঘুমাস’নি কেন?
“মারিয়া বললো- ঘুম আসছিলো না তাই এমনে বই পড়ছিলাম।
“রুদ্র মারিয়ার দিকে তাকিয়ে শুধু ও বললো।তারপর নূরের দিকে তাকিয়ে বললো- নূর রুমে আসো?
“রুদ্র রুমে আসো বললেও নূরের রাগে সারা-শরীর কাঁপছে সে মুটেও এখন উনার চেহেরা দেখতে চাইনা।না কথা বলতে।তাই কিছু না বলে মোবাইল দেখায় মনোযোগ দিলো।
“নূরের এমন কাজে ভয় পেয়ে গেলো মারিয়া।কারণ সে জানে তার ভাই কেমন।তাই সে নূরের দিকে তাকিয়ে বললো- নূর রুমে যা তুই।
“নূর এবার হালকা রেগে চিল্লিয়ে বললো- আমি এখানেই থাকবো।কারোর সাথে কোথাও যাবো না।
“নূরের কথা শুনে রুদ্র চোখ মুখ শক্ত করে বললো- আমি বেশি কথা বলা একদম পছন্দ করি না।রুমে আসতে বলছি আসো।নাকি এত রাতে ড্রামা করতে চাও?
“নূর এবার মারিয়ার দিকে তাকালো মারিয়া তাকে ইশারা করে বুঝালো রুদ্রের সাথে যাওয়ার জন্য।না হলে এক্ষুণি কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।নূর জানে রুদ্র কেমন তাই আর বেশি কথা না বাড়িয়ে উঠে ধুপ-ধাপ পা ফেলে রুদ্রর রুমের দিকে হাটা দিলো।রুদ্র তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।তারপর মারিয়ার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে রুমের দিকে পা বাড়ালো।
~~ রুমে আসতেই নূর শাড়ি না পালটিয়ে সে অবস্থায় বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে রাখলো।নূরের আজ অনেক অভিমান হয়েছে।সে কথা বলবে না রুদ্রর সাথে।
“রুদ্র রুমে এসে দরজা বন্ধ করে নূরের দিকে তাকালো সে মনে মনে ভাবলো হয়তো- মেয়েটা অভিমান করেছে।কোথায় যেনো পড়েছিলো ভীতু মেয়েদের অভিমান অনেক প্রবল হয়!সহজে তা ভাঙ্গে না।রুদ্র রুমের লাইট অফ করে দিয়ে নূরের পাশে শুয়ে পড়লো
~~~~~~~~~~~~
“রাত কত হয়েছে জানা নেই।আমি এখনো ঘুমাই’নি তবে কিছুক্ষণ পর উনি আমাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বললেন- রাগ করেছো?
“উনার এমন আদুরে গলায় রাগ করেছো বলতেই আমি ফুঁপিয়ে উঠলাম।
“উনি আমাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললেন- স্যরি মাই মিসেস।আমি তখন অনেক টেনশনে ছিলাম।লাল ফাইলটা না পাওয়ায়!তাই এমন বিহেভ করেছিলাম।
“উনার কথা শুনে ভয়কে জয় করে রাগি গলায় বললাম- একদম জু*তা মে*রে গ*রু ধান করতে আসবেন না।আমাকে অপমান করার আপনি কে?আপনার সাহস কি ভাবে হলো।বলতে বলতে শব্দ কেঁদে উঠলাম।
“উনি আমার কথা শুনে দ্রুত আমাকে উনার দিকে ফিরিয়ে জাপটে ধরলেন।
“উনার হুট করে এমন করায় আমি কান্না বন্ধ করে চমকে গেলাম।
“উনি আমার নাকের সাথে নিজের নাক ঘষে বললেন- স্যরি বললাম তো!হুটহাট জ্ঞান হারানো মেয়েদের অভিমান মানায় না।
“উনার কাজে আমি লজ্জায় উনার থেকে সরে আসতে চাইলে উনি আর শক্ত করে জাপটে ধরলেন।
“তারপর আবার বললেন- অভিমান কমেছে?
“আমার অভিমান কমে’নি তবে কিছু না বলে চুপচাপ উনার সাথে মিশে রইলাম।এখন অনেকটা উনার সাথে সহজ হয়ে গেছি তাই এভাবে থাকলেও ভয় করছে না।আর দাদি বলেছেন- সোয়ামী যা বলে শুনবা।তার আবদার পূরণ করবা।সেদিন দাদির বলা কথা গুলার মানে বুঝতে পেরে আমার লজ্জায় মাঠির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে হয়েছিলো।
“আমার ভাবনার মাঝে উনি হুট করে আমার গলায় নাক ঘষে বললেন- এখনো অভিমান করে আছো?
“উনার কাজে আমি বরফের নায় জমে গেলাম।এখন অভিমান থেকে লজ্জা বেশি লাগছে তাই উনাকে মিনমিন গলায় বললাম- আমার কোনো অভিমান নেই এখন।আপনি আমাকে ছাড়ুন আমার দমবন্ধ হয়ে আসছে।
“আমার কথা শুনে উনি আমাকে ছাড়লেন না বরং আরও গভীরভাবে ছুয়ে দিলেন।উনার এমন কাজে আমি জ্ঞান হারাবার উপক্রম।
“উনি হয়তো আমার অবস্থা বুঝতে পেরেছেন তাই বললেন- প্লিজ জ্ঞান হারাবা না।
“আমি জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে ভয়ে ভয়ে বললাম- আপনি একটু দূরে যান।আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
“উনি আমার কথা শেষ হতে আমার হাত দুটো বিছানার সাথে চেপে ধরে উনার সমস্ত ভর আমার ওপর ছেড়ে দিয়ে বললেন- আমি তো এখনো কিছুই করলাম না!তার আগেই এই অবস্থা তোমার?
“উনার কথা শুনে আমি তাজ্জব বনে গেলাম।আজ উনার মাথা ঠিক আছে তো?এমন অদ্ভত ব্যবহার করছেন কেন?
“হাতে ব্যথা পাওয়ার ফলে উনাকে বললাম- হাতে ব্যথা লাগছে আমার ছাড়ুন।
“উনি ছাড়লেন না বরং অদ্ভুত ভাবে ছুঁয়ে দিলেন।এমন ছুঁয়া আমার জন্য নতুন তাই ভয়ে কেঁদে উঠলাম।
“আমার কান্না শুনে উনি বিরক্তি নিয়ে আমার গলা থেকে মুখ তুলে বললেন- কান্না বন্ধ করো নাহলে একদম পি*স্ত*ল দিয়ে ঠু*কে দিবো।
“আমি কান্না অবস্থায় বললাম- দেখুন আমি এখন অভিমান,রাগ,কোনোটাই করে নেই।আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।এবার আমাকে ছাড়ুন।
“লাইট বন্ধ থাকলেও ড্রিম-লাইটের আলোয় উনার গভীর চোখদুটো দেখে আমি থমকে গেলাম।সে চোখ যেনো আমাকে অনেক কথা বলতে চাই।তবে কি বলতে চাই?আমি বুঝতে পারছিনা।উনাকে আর উনার চোখের ভাষা বুঝার ক্ষমতা আমার নেই।
“উনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন- আজ যদি আমি তোমাকে চাই তাহলে কি তুমি ফিরিয়ে দিবে?
“উনার কথা শুনে মৃদু চমকে উঠলাম আমি।এখন উনাকে কি উত্তর দেওয়া দরকার বুঝে উঠতে পারলাম না।উনি আমার হাসবেন্ড উনাকে ফেরানোর সাধ্য আমার নেই।তাই কিছু না বলে চুপ করে থাকলাম।
“উনি আমার দিকে তাকিয়ে আমার কপালে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে বললেন- আমি আমার উত্তর পেয়ে গেছি।বলে উনি আমার ঠোঁটে নিজের ঠোঁটের ছুঁয়া দিলেন।আমার উনাকে জিজ্ঞাস করতে ইচ্ছা হলো- ভালোবাসেন আমায়?তবে করা হলো না।উনাকে আমি ঠিক বুঝতে পারি না।মাঝে মাঝে মনে হয় অনেক ভালোবাসেন।আবার মনে হয় প্রচন্ড অপছন্দ করেন।তবে আসলে আমাকে নিয়ে উনার মনে কি আছে তা জানা নেই আমার।এই অল্প দিনে কি প্রেম ভালোবাসা হয়ে যায়?নাকি এটাই দাদির বলা সে পবিএ বন্ধন।আর আমার মনে উনাকে নিয়ে কি অনুভূতি আছে তাও এখনো জানা নেই আমার?তবে উনার প্রতি আমি প্রচুর টান অনুভব করি।
~~~~~~~~~~~~~
“সকালে আমার ঘুম ভাঙ্গতেই নিজেকে এলোমেলো ভাবে উনার বাহুডোরে আবদ্ধ পেলাম।প্রথমে চমকালেও পরে নিজেকে সামলে নিলাম।কাল রাতের কথা মনে পরতেই লজ্জায় কুঁকড়ে গেলাম।তবে নিজেকে উনার কাজ থেকে ছাড়াতে গিয়ে ব্যর্থ হলাম।আমি নড়াচড়া করতেই উনার ঘুম ভেঙ্গে গেলো উনি ভালোভাবে চোখ পরিষ্কার করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন- কি সমস্যা এমন নড়াচড়া করছো কেন?
“আমি লজ্জায় উনার দিকে না তাকিয়ে বললাম- আমার উঠতে হবে আপনি ছাড়ুন আমায়।
“উনি বিরক্তি নিয়ে বললেন- এখনো এত লজ্জা?ন্যাকা কোথাকার।কয়টা বাজে এত সকাল সকাল উঠে কি করবা ঘুমাও।তোমার ভার্সিটির টাইমে আমি এলাম দিয়ে রেখেছি!আমারও তো বের হতে হবে বলেই আমাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে নিলেন।
“উনার কথা শুনে আরও লজ্জায় কুঁকড়ে গেলাম।দাদি একদিন বলেছিলেন- মাইয়া আর পোলা পবিএ বন্ধনে আবদ্ধ হইলে তাদের মধ্যে মায়া ভালোবাসা আপনা-আপনি চলে আসে।দাদির কথা মনে করে মনে মনে হাসলাম…..
————————————–
(চলবে)
(ভুল ক্রুটি ক্ষমা করবেন।আর ভুল গুলা ধরিয়ে দিবেন)