#অবশেষে _তোমাকে_পাওয়া
#পর্ব_দুই+তিন
#তারা ইসলাম
——————————————————————–
রাত তখন কতটা গভীর হয়েছে জানা নেই।আমি চোখ খুলতেই মাথা ব্যথা করে উঠলো।মনে পরলো কিছুক্ষণ আগের ঘটনা।উনি আমার মাথায় পি*স্ত*ল রাখতেই আমি জ্ঞান হারিয়েছিলাম।তারপর থেকে আর কিছু মনে নেই।আমি ভালোভাবে আশে-পাশে তাকিয়ে দেখলাম উনি আমার পাশে বিছানায় বসে আছেন।আর পি*স্ত*ল নিজের কপালে ঠে*কা*নো তবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
“আমি ভয়ে ভয়ে বললাম- দয়া করে আমাকে অকালে কবরে পাঠাবেন না মির্জা সাহেব(উনাকে আমি মির্জা সাহেব বলেই সম্মোধন করি)
“উনি আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললেন- তোমার মতো একটা আধ-পা*গ*ল পা*ব*না থেকে আসা রো*গীকে যে আল্লাহ আমার কপালে রাখবেন সেটা আমি জীবনেও ভাবি’নি।তুমি যদি আজ জ্ঞান না হারাতে তাহলে এতসব ড্রামা হতো না।
“উনার কথা শুনেই মুখ চেপে ধরে কেঁদে উঠলাম।
“উনি বিরক্তি নিয়ে বললেন- এই পা*গ*ল তোমার চোখের সাথে কি সমুদ্রের কন্ট্রাক্ট আছে।এত কেমনে কাঁদতে পারো?কান্না বন্ধ করো।আরেকবার যদি আমার সামনে জ্ঞান হারাও তখন একদম পি*স্ত*ল দিয়ে ঠু*কে দিব।বলে রাখলাম!
“উনার কথা শুনে ভয়ে আমি দ্রুত শ্বাস নিতে লাগলাম মনে হলো এখনই আমি মা’রা যাবো।আমার এইরকম অবস্থা দেখে উনি রেগে আমার দিকে তাকালেন তারপর একটা গ্লাসে পানি ঢেলে গ্লাসটা আমার দিকে এগিয়ে দিলেন।উনার থেকে গ্লাসটা নিয়ে আমি পুরো গ্লাসের পানি খেয়েনিলাম।তারপর একটু শান্ত হলাম।
“আমি শান্ত হতেই উনি বললেন- বিয়েটা যখন হয়েছে তখন আমাদের একসাথে মানিয়ে নিতে হবে।আমি ডিভোর্স দিয়ে তোমার জীবন নষ্ট করতে চাইনা!
আমারও বোন আছে।আর দ্বিতীয় তো আমার জীবনে থাকতে হলে কিছু রুলস মেনে চলতে হবে।মন দিয়ে শুনো তুমি এখন মির্জা পরিবারের বউ।আর তুমি নিশ্চয় জানো এই মির্জা বংশের বউ গুলা কেমন।একদম লাফালাফি”দুষ্টুমি,বাচ্চামো আমি সহ্য করবো না।আর সবচাইতে বড় কথা কোনো ছেলে ফ্রেন্ড রাখা যাবে না।এমনকি কোনো ছেলে কাজিনের সাথেও কথা বলতে পারবা না।বোরকা ছাড়া বাসা থেকে বের হতে পারবে না।আর পড়ালেখা করবে ঠিক আছে কিন্তু সংসার ও সামলাতে হবে।যেভাবে আম্মু আর ভাবিরা সামলায়।বুঝেছো?
“উনার কথা শুনে হা হয়ে গেলাম মনে মনে ভাবলাম এর চাইতে তো জেলখানা ভালো ছিলো।আমি জীবনে ও ভাবি’নি এই সংসার টংসারের কথা।আম্মু আমাকে পছন্দ না করলেও কোনোদিন দাসীর মতো রাখেন’নি সংসারের তো অনেক কাজ আল্লাহ আমি তো কাজ-টাজ কিছু জানিনা বললেও চলে।আর উনি কি বললেন লাফালাফি না করার জন্য এইগুলা তো আমার র*ক্তে মিশে আছে এইগুলা কিভাবে বদলাবো।এসব ভেবেই আবার কেঁদে উঠলাম।
“উনি আমার কান্না দেখে বিরক্তি নিয়ে বললেন- এখন কান্না করছো কেন?
“আমি কেঁদে কেঁদে বললাম- আমি তো কাজ-টাজ কিছুই জানি না ভালোভাবে নিজের কাপড় গুলাও ধুতে জানি না।
“উনি এবার রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন- জানো না যখন শিখে নিবে।
“আমি কিছু না বলে কাঁদতে লাগলাম।
“আমার কান্না থামছে না দেখে উনি বড় একটা ধমক দিয়ে বললেন- কান্না থামাও আর ফ্রেশ হয়ে এসো।এমন ময়লা জামা কাপড়ে তোমাকে আমি আমার বিছানায় জায়গা দিবো না।কি হলো?যাও।
“উনার ধমকের সাথেই সাথেই আমি তাড়াহুড়া করে উঠে দাঁড়ালাম।মনে হচ্ছিলো জ্ঞান হারাবো কিন্তু উনার ভয়ে তাও করতে পারছিলাম না।
“আম্মু বাসায় গিয়েই আমার জামা-কাপড় বই-খাতা যাবতীয় সব জিনিস পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।আমি আমার ব্যাগ থেকে একটা ঘুমানোর জন্য জামা নিয়েই ওয়াশরুমের দিকে গেলাম।
“কয়েক-মিনিট পর আমি ফ্রেশ হয়ে বের হলাম।প্লাজু পেন্ট,আর একটা লম্বা ঢিলে-ঢালা শি-র্শাট আর উড়না।
“আমি বের হতে দেখলাম উনি অন্য-পাশ ফিরে শুয়ে আছেন।আমি কোথায় ঘুমাবো সেটাই ভাবছিলাম।যদি উনার পাশে শুয়ে পড়ি তাহলে নির্ঘাত জ্ঞান হারাবো হয়তো।এসবই ভাবছিলাম তখন উনি হুট করে আমার দিকে তাকালেন।উনার তাকানো দেখেই আমি কেঁপে উঠলাম।
“উনি আমাকে পুরোপুরি ভাবে স্কেন করে বললেন- এসব জামা আবার বাহিরে পরতে যেও না।আগে পরতে তখন অন্য কথা এখন তুমি বিবাহিত আর রুদ্র মির্জার ওয়াইফ সেটা মনে রাখবে।আর আমার পাশে শুয়ে পড়।
“আমি উনাকে মুখে কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে আচ্ছা বুঝালাম।তারপর উনি আবার অন্য-পাশ ফিরে ঘুমানোর চেষ্টা করলেন।
“আমি আস্তে আস্তে বিছানার দিকে এগিয়ে গেলাম অনেক চিন্তা ভাবনা করে অবশেষে শুয়ে পড়লাম।আমাদের মাঝে বেশ দুরুত্ব।আমি শুধু আল্লাহ আল্লাহ করছি আমার ঘুমের মধ্যে উল্টাপাল্টা করার অভ্যাস আছে।প্রায় আমি এপাশ-ওপাশ করতে করতে বিছানা থেকে পড়ে যায়।ক্লান্ত এসে ভর করলো শরীরে।আর ঘুম হানা দিলো চোখে।
—————————————–
সকাল সকাল কারো ধা*ক্কা*নোতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো রুদ্রর।কিন্তু যখন চোখ খুলে ভালোভাবে দেখলো যে তাকে কেউ ধা*ক্কা দে’নি বরং নূরের দুইপা তার ওপর দেওয়া আর তার মাথা বিছানার শেষের দিকে আরেকটু হলেই পরে যাবে।রুদ্র বিরক্তি নিয়ে নূরকে ঠিক করতে যাবে তখন তার চোখ যায় এলোমেলো নূরের দিকে।নূর ধবধবে ফর্সা না হলেও ফর্সা বলা চলে।মোটামুটি ফিট আছে না মোটা না শুকনা।তার জামা কাপড় একদম এলোমেলো।পেন্ট হাটু পর্যন্ত উঠে গেছে জামা উপরে উঠে অনেকটাই পেট বের হয়ে আছে।রুদ্র চোখ সরিয়ে নিলো!নূর বেশ আবেদনময়ী তাই সে দ্রুত নিজেকে সামলিয়ে উঠে ওয়াশরুমের চলে গেলো।নূরকে আর ডাকলো না।
~~
“বিছানা থেকে পরে যেতেই নূরের ঘুম ভেঙ্গে গেলো।এটা নতুন না তাও সে কোমড় ধরে আশে-পাশে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো মনে মনে ভাবলো সে হয়তো স্বপ্ন দেখছে।কিন্তু ওয়াশরুম থেকে রুদ্রকে বের হতে দেখে তার গতকালকের সব ঘটনা মনে পরলো।
“নূরকে নিচে বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে রুদ্র বললো- এই রো*গী এভাবে নিচে বসে আছো কেন?
“আমি উনার কথা শুনে ভয়ে ভয়ে আর মুখ কালো করে বললাম- আসলে আমি বিছানা থেকে পরে গেছি।
“আমার কথা শুনে উনি আমার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ তাকলেন তারপর হালকা হেসে ঠোঁট কামড়ে বললেন-এমন পা*গ*ল যে আমার কপালে ছিলো তা আমার জানা ছিলো না বলেই রুম ত্যাগ করলেন।
“উনার কথা শুনে মন খারাপ করে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।
~~~~~~~ ফ্রেশ হয়ে এসে আমি একটা সেলোয়ার-কামিজ পড়ে নিলাম।কিন্তু কিছুক্ষণ পর আন্টি মানে যে এখন আমার শাশুড়ি উনি আর ভাবি আসলেন মানে মারিয়ার বড় ভাবি।
“উনাদের হাতে কিছু শাড়ি আর গহনা।প্রায় ছয়-সাতটা শাড়ি হবে।
“শাশুড়ি মা বললেন- কেমন আছো নূরমনি(উনি আমাকে এভাবেই সম্মোধন করেন)
“আমি বললাম- আমি ভালো আছি আন্টি আপনি ভালো আছেন।আসলে আন্টি স্যরি আমি জানতাম না এতসব ঘটনা ঘটে যাবে- মনে খারাপ করে বললাম।
“শাশুড়ি মা মুচকি হেসে বললেন- তোমাকে ছেলের বউ হিসেবে পেয়ে আমি ভীষণ আনন্দিত।আমি মনে মনে এটাই চেয়েছিলাম।তবে রুদ্রের ভয়ে কিছু বলিনি।আর আমাকে আন্টি নয় আম্মু কিংবা মা বলেই ডাকবে।
“আমি মাথা নাড়িয়ে আচ্ছা বুঝলাম।
“তখন ভাবি বললেন- তোমাকে আমি ছোট বলেই ডাকবো কেমন।
“আমি হেসে বললাম- ঠিক আছে ভাবি।
~~ তারপর শাশুড়ি মা বললেন- এ বাড়ির সব বউদের শাড়ি পড়তে হয়।আজ থেকে তুমিও পড়বে।আর এই নাও এখানে অনেক গহনা আছে এসব আমি অনেক আগেই বানিয়ে রেখেছিলাম মেজো ছেলের বউএর জন্য।এখন যখন তুমিই তার বউ তখন এসব তোমার।
“আমি উনাদের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে বললাম- আমি তো শাড়ি পড়তে জানি না।না গহনা পড়তে পছন্দ করি।
“ভাবি হেসে বললেন- সে আমিও ছিলাম তোমার মতো।কিন্তু এখন দেখো এইগুলা না পড়লে ভালোও লাগে না।তারপর শাশুড়ি মায়ের দিকে তাকিয়ে বললেন- আপনি যান মা আমি ওকে রেডি করিয়ে আনছি।তারপর শাশুড়ি মা চলে গেলেন।
~~~ তারপর ভাবি আমাকে লাল একটা শাড়ি পড়িয়ে দিলেন।ঠিকভাবে পিনও করে দিলেন যাতে শাড়ি খুলে না যায়+পড়ে যেন না যায়।তারপর হাতে মোটা বালা,সুন্দর করে হিজাব করা তার উপর টিকলি দেওয়া। আর শেষে নাকফুল ব্যস রেডি।ভাবি আমার শাড়ি আরও ঠিক করে দিতে দিতে বললেন- জানো কপাল খারাপ তোমার আর আমার।নাহলে কি এই দুই-ভাইয়ের বউ হয়ে আসতাম এই ঘরে।ইচ্ছামতো শ্বাস নেওয়ার ও স্বাধীনতা নেই তোমার ভাইয়া যে কি পরিমাণ পজেসিব আমাকে নিয়ে।আর ছোট ভাইও কম না সবে-মাত্র বিয়ে হয়েছে আস্তে আস্তে বুঝবা কত-ধানে কত-চাল।
“ভাবির কথার মানে আমি বেশ বুঝেছি।আমার জীবন যে জেলখানায় পরিণত হবে তা এক্কিবারে সিউর।উনার জন্য ঠিক ভাবে শ্বাসটাও নিতে পারবো না।না হারাতে পারবো ইচ্ছেমত জ্ঞান।আমার জ্ঞান হারানোও আমাকে মিস করবে।এসব ভেবেই কাঁদো কাঁদো চেহেরা করলাম।
“ভাবি আমাকে বললেন- মারিয়ার বিয়ে হয়েছে তাই এতিমখানার বাচ্চাদের খাওয়াবেন শশুড়-বাবা।তার আয়োজন বাড়ির বাগানেই হবে অনেক মানুষজন আসবে তুমি আমার সাথেই থেকো না হলে আম্মুর সাথে থাকিও তাও আগের মতো তিড়িংবিড়িং করিও না।এসব একদম পছন্দ না ছোট ভাইয়ের(রুদ্র মির্জার)
“আমি কিছু না বলে ভাবির পিছন পিছন হেটে ডাইনিং রুমে গেলাম।যেতেই দেখলাম মারিয়ার দাদিকে।আমাকে দেখেই বললেন- এই যে জ্ঞান হারানো মাইয়া বউ হইয়া গেছো মির্জা পরিবারের।এখানে একদম দৌড়াদৌড়ি চলবে না।
“আমি কিছু না বলে মাথা নাড়ালাম।
“এখানে কোনো বাড়ির পুরুষকে দেখলাম না হয়তো সবাই নিচে এতিমখানার বাচ্চাদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করছেন।
“সকালের নাস্তা করতে করতে শুনলাম দাদি শাশুড়ি বলছেন- রুদ্র মির্জা নাকি আমার আর উনার বিয়েটা বড় করে আর করতে চান’না।যেভাবে আছেন সেভাবেই থাকতে চান।আর কোনো ধরনের অনুষ্টান ও করতে চান’না।এটা নাকি উনার অপছন্দ।বাড়ির বউকে হাজারো পুরুষ দেখবে সেটা উনি মেনে নিবেন না।
“উনার কথা গুলা শুনে আমি অবাক হলাম।এইরকম করে কতজনও বা ভাবে।মনে মনে খুশি হলাম উনার পরিবারটা আসলেই অন্যরকম।কিন্তু ভয় হয় সব সামলাতে পারবো তো?
————————————–
সকাল থেকেই মির্জা সাহেব কে দেখলান না।এতে অবশ্য আমার ভালোই লেগেছিলো উনাকে দেখলেই কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে যায়।দুপুরে খেয়ে রুমে চলে আসলাম তবে রুমের দরজা বন্ধ করতে ভুলে গেলাম।আর ভাবছি শাশুড়ি মার কথা গুলা উনি বলেছেন সাপ্তাহ খানেক পর যেনো ভার্সিটি যাওয়া শুরু করি মারিয়ার সাথে।এর আগে যেন ভালোভাবে সংসার সামলানোটা শিখতে পারি। তাই উনি আমাকে সব কাজ শিখিয়ে দিবেন বলেছেন।
“সেসব ভেবেই ব্যাগ থেকে সব কাপড় বের করে উনার আলমারির একপাশে সব গুছিয়ে রাখলাম।উনি আমার জন্য জায়গা করে দিয়েছেন।আমি এক-পাশে শাড়ি আরেক-পাশে আমার সেলোয়া-কামিজ গুলা রাখলাম।
“ভাবলাম এখন তো আর রুম থেকে বের হতে হবে!না রুমে কেউ আসবে।আর আসলেও দরজা বন্ধ সেটা ভেবেই আমি বুক থেকে আচঁলটা সরিয়ে শুয়ে পড়লাম।ঘুম চোখে নামবে নামবে ভাব এই সময় কেউ কঠাক করে দরজা খুলে ভেতরে আসলো।কে আসলো দেখতেই আমি চমকে গেলাম রুদ্র মির্জা।উনি আমার দিকে তাকিয়ে চোখ বড় বড় করে ফেললেন।তারপর রাগি চোখে তাকাতেই~আমি নিজের দিকে তাকালাম তাকাকেই আমি ভয়ে কেঁপে উঠলাম।আর কেঁপে কেঁপে শাড়ি ঠিক করে নিলাম।উনি যে এখন রুমে আসবেন আমি ভাবতেও পারি’নি আর আমি ডাফর যে ঠিক ভাবে দরজাটা বন্ধ করি’নি তাও মনে নেই।এখন নিশ্চয় উনি আমাকে উনার সে বিখ্যাত পি*স্ত*ল দিয়ে ঠু*কে দিবেন……
————————————————–
(চলবে)
#অবশেষে_তোমাকে_পাওয়া
#পর্ব_তিন
#তারা ইসলাম
——————————————————————–
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হবে হবে ভাব।তবে এখনো পুরোপুরি ভাবে সূর্যের তেজ কমে’নি।আমি এখনো রুদ্র মির্জার রুমে বসে আছি।আমাকে তখন অগোছালো অবস্থায় দেখে উনি রাগি চোখে তাকালেও কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে গিয়েছিলেন।আর আমিও জ্ঞান হারাতে হারাতে বেঁচে গিয়েছিলাম।
“নিজেকে এখন গুছিয়ে নিয়ে বিছানাতে বসে আছি।কিছুক্ষণ পর উনি বের হলেন তারপর আলমারি থেকে কাপড় নিতে গিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রেগে বললেন- আলমারির এই অবস্থা কেন?এখানে কি গ*রু-ছা*গ*ল থাকে?
“উনার রাগের কারণ বুঝতে না পেরে আমি কাঁপা কাঁপা পায়ে বিছানা থেকে নেমে আলমারির একটু কাছে গিয়ে দেখলাম- আমার সব জামা-কাপড় রাখা তবে এলোমেলো ভাবে ভাজ-করা।আমি আবারও ভয় পেলাম।এখন নিশ্চয় উনি আমাকে চ*ড় লাগাবেন।
“আমি ভয়ে ভয়ে মুখে হাত দিয়ে আস্তে করে বললাম- আমি এক্ষুণি গুছিয়ে দিচ্ছি।
“উনি আমার কথা শুনে আরও রেগে গেলেন কঠোর কন্ঠে বললেন- আমার এলোমেলো একদমই পছন্দ না।নিজেকেও গুছিয়ে রাখবে তার সাথে নিজের জিনিস ও! আর হ্যা রুম সব সময় পরিষ্কার রাখবে।চুল এলোমেলো যেন না দেখি।আর আজকে যেভাবে ছিলে সেভাবে থাকার আগে দরজা লক করেছো কি’না ভালোভাবে দেখে নিবে।আর শুনো ওয়াশরুমে আমার কাপড় রাখা আছে সেগুলা ধুয়ে দিবে।বউ থাকতে কাজের লোক কাপড় ধুয়ে দিক সেটা আমি চাইনা।আর মাঝে মাঝে আমি ধুয়ে নিবো।এখন আমার লেট হচ্ছে তাই তুমি ধুয়ে দিবে।
“উনার সব কথা শুনে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম- আমার মতো এলোমেলো, অগোছালো,এই দুনিয়াতে আর আছে কি’না আমার সন্দেহ।কি থেকে কি হয়ে যাচ্ছে আমার জীবনে।এমন জামাই কপালে ছিলো কেন?তারপর কি বললেন উনার কাপড় ধুয়ে দিতে।আমার নিজের কাপড়ও ওয়াশরুমে তিন-চার দিন পরে থাকে আর আমি কি’না উনার কাপড় ধুয়ে দিবো।মনে মনে উনাকে হাজারো বকা দিলেও ভয়ে মুখে টু শব্দ করি’নি।আমার খুব কান্না পাচ্ছে জীবনটা আমার তেজপাতা হয়ে গেলো শুধুমাত্র ওই রানি মির্জা মানে মারিয়ার দাদির জন্য।বুড়িটাকে একটা উচিত শিক্ষা দিতে মন চাচ্ছে।
“উনি আমার এমন চিন্তা-ভাবনার মধ্যে ধমকে উঠে বললেন- এই যে রো*গী কি বলেছি কানে গেছে?
“উনার ধমকে আমি ভয়ে কিছুটা পিছিয়ে গেলাম।তারপর জোরে জোরে মাথা ঝাঁকিয়ে বললাম- হ্যা হ্যা কানে গিয়েছে।আমি এক্ষুণি সব করছি বলতে বলতেই কাজে লেগে পরলাম।উনি আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিজের কাজের জন্য রুম ত্যাগ করলেন।
————————————-
ভাইয়া রুদ্র মির্জা নাকি বিয়ে করে ফেলেছে?
“রেয়ান চৌধুরি চোখ মুখ শক্ত করে বললেন- হ্যা খবরটা আমিও শুনেছি।
“ফারিয়া চৌধুরি কেঁদে কেঁদে বললো- কিন্তু ভাইয়া তুমি না বলেছিলে ওর বাবার সাথে আমার আর তার বিয়ের কথা বলবে?আমি বলে দিচ্ছি ওর সাথে আমার বিয়ে না হলে আমি সু*ইসা*ইড ক’রবো।
“রেয়ান দ্রুত বোনের কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বললেন- আমি যখন বলেছি বিয়ে তোর সাথেই হবে।আর রুদ্রর বিয়েটা একটা ভুল-বুঝাবুঝির কারণে হয়েছে।আমি যতটুক খবর পেয়েছি মেয়েটাকে রুদ্র ভালোবাসা তো দূর পছন্দও করে না।
“ফারিয়া ফুঁপিয়ে উঠে বললো- সত্যি তো?আমি কিন্তু কখনো তোমার কাছে কিছু চাইনি।শুধুমাত্র রুদ্রকে ছাড়া।আমি ওকে ভালোবাসি ভাইয়া।
“রেয়ান আদুরে হাতে বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন- আমার পুতুল যা চাইবে আমি তাকে তাই দিবো।দরকার পরলে ওই মেয়েটাকে ওর জীবন থেকে সরিয়ে দিবো।তাও তুই কষ্ট পাস’না।
~ রেয়ান চৌধুরি আর ফারিয়া চৌধুরি তারা আপন-ভাই-বোন।ছোট বেলায় তাদের মা-বাবা মা’রা যান কিভাবে মা’রা যান কেউ জানে না।তখন থেকেই রেয়ান ফারিয়াকে আগলে রেখেছেন।নিজে অনেক কষ্ট করে এত কিছু করেছে।তার বোন ছাড়া এই দুনিয়াতে আর কেউ নেই।আর তার চাচা মামারা ছোট বেলায় তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেম।তাই এখন সেও তাদের খুঁজ-খবর রাখে’না।রেয়ান পলিটিক্স করার পাশাপাশি নিজের ব্যবসা সামলায়।রেয়ান অনেক আগেই পড়ালেখা শেষ করেছে।আর ফারিয়া এবার অর্নাস ফাইনাল ইয়ারে।বাসায় একবার রহিম মির্জাকে দাওয়াত করেছিলেন তাও ব্যবসার পার্টনারশিপ করার জন্য।তখন উনার সাথে এসেছিলো রুদ্র মির্জা আর সেদিন তাকে দেখে তার বোনের পছন্দ হয়।সেখান থেকে আস্তে আস্তে ভালোবেসে ফেলে।এখন যেভাবে হুক রুদ্র আর তার বোনের বিয়ে দিবেই দিবে।তার একটা-মাত্র বোন।সে বোনের জন্য সব করতে পারে।
———————————–
তুমি এত নিষ্টুর হবে আমি ভাবি’নি নূরের মা?
“একদম নূরের মা বলে ডাকবে না বলেদিলাম!আমি শুধুমাত্র লিয়নের মা ব্যস।আর কারো মা না।না হতে চাই।নিষ্টুর কেন হবো না নূর কার মতো হয়েছে তুমি বুঝতে পারছো না?
“লেয়ান জামান বললেন- তুমি বড় নিষ্টুর মা!তুমি এমন হবে আমি জীবনেও ভাবি’নি।নূরের না তুমি খবর নিচ্ছো না আমাকে নিতে দিচ্ছো।
“দেখবে এই নূরই একদিন তোমার কাজে আসবে।এইযে ছেলেকে নিয়ে এত অহংকার করছো।সে অহংকার একদিন ভেঙ্গে চু*ড়-মা*র হয়ে যাবে।কথাটা মিলিয়ে নিও।
“রেহেলা খান চিল্লিয়ে উঠে বললেন- খবরদার আমার ছেলেকে নিয়ে বাজে কথা বলবে না!ওই মেয়েটার জন্য।নূরকে আমার জীবনেও লাগবে না বলেই উনি রুমে চলে গেলেন।
“লেয়ান জামান উনার যাওয়ার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।উনার নূরের কথা ভীষণ মনে পড়ছে।মেয়েটা যে সহজ-সরল কেমন আছে সেটা ভাবতেই উনার চোখ ভিজে উঠলো।
—————————————–
আজ বিয়ের পাঁচ দিন হয়ে গেলো।এখন উনার দেখা মেলে শুধু রাতেই।এর আগে কোথায় থাকেন কই যান?আমার জানা নেই।না আমি জানতে চাই।উনার থেকে যে দূরে দূরে আছি সেটাই অনেক।এই কয়েক-দিনে শাড়িটা আমি বেশ ভালোভাবে পড়তে পারি+সামলাতেও পারি।ঘরের কাজ গুলা এখনো ঠিক ভাবে করতে পারিনা তবে চেষ্টা করি।আর এর মধ্যে ভাবি আমি আর মারিয়া প্রচুর আড্ডা দিয়েছি।অবশ্য সেখানেও দাদি শাশুড়ি নাক গলিয়েছিলেন তবে পাত্তা পান’নি।
“ডিনার করেই রুমে আসলাম ঘুমাতে।উনি নাকি বাইরে থেকে খেয়ে আসবেন!তাই কাউকে অপেক্ষা করতে মানা করেছেন।রুমে আসতে আব্বুর কথা খুব ভাবে মনে পরলো।সব-সময় মনে পরে তবে আমি নিজেকে এটা সেটাই ব্যবস্থা রেখেছিলাম।কিন্তু ওই যে দিনশেষে আবার মনে পরে।আচ্ছা উনারা কি আমাকে আর দেখতে আসবেন না।সত্যি কি আম্মু আমার সাথে আর কোনো সম্পর্ক রাখবেন না।এসব ভাবতেই চোখ ছল-ছল করে উঠলো।তাই আমি এতদিন বন্ধ থাকা ফোনটা অন করলাম!তারপর আব্বুকে কল দিলাম।কিন্তু ফোন বন্ধ।আমি অনেক বার ট্রাই করলাম কিন্তু বন্ধ!ভয়ে ভয়ে আর আম্মুর ফোনে কল’দিনি হয়তো উনি রেগে যাবেন।আর আমার মুডটাই নষ্ট হয়ে যাবে।
“তাই আমি দ্রুত শাড়ি বদলিয়ে ঘুমানোর জন্য আরাম দায়ক কাপড় গায়ে জড়িয়ে ফোনে ফেসবুক স্ক্রল করতে লাগলাম।
“পা একটা বিছানায় উঠানো আরেকটা নিচে রেখে দোল দিচ্ছি আর এলোমেলো ভাবে শুয়ে ক্রিম আপার ভিডিও দেখছি।আমি মোবাইলে একবার মন দিলে আশে-পাশে কি হচ্ছে না হচ্ছে বুঝতেই পারি না।আমি পাক্কা মোবাইল প্রেমি।
“ক্রিম আপার উল্টা-পাল্টা ইংরেজী শুনে হাসতে হাসতে আমি সারা-বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছিলাম এক-প্রকার। কিন্তু হুট করে দরজার দিকে চোখ যেতেই আমি থমকে গেলাম।কারণ দরজার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে রুদ্র মির্জা এক মনে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।উনার এমন তাকানো দেখে ভয়ে আমি বসে পড়লাম।হাত-পা অলরেডি কাঁপতে শুরু করে দিয়েছে।মনে মনে ভাবছি উনি কখন এলেন।
“উনি আস্তে আস্তে আমার দিকে হেটে আসলেন তারপর অনেকটা আমার কাছে এসে এক ভ্রু উঁচিয়ে বললেন- তোমার মোবাইল আছে আগে জানতাম নাতো?আর এসব কি ফা*উ*ল ভিডিও দেখছো?এত যখন আজাইরা সময় পেয়েছো তখন পড়তে বসতেমোবাইল দেখার মানে কি?
“ব্যস উনার এই শান্ত গলায় শাসানোটা যথেষ্ট ছিলো আমার সারা-শরীর কাঁপাতে।আমি কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে বললাম- আসলে আমার ঘুম আসছিলো না।আর এখন পড়ার ও ইচ্ছা হচ্ছিলো না।তাই একটু ক্রিম আপার চমলক্ক ওয়ালা ভিডিও দেখছিলাম বলেই তাড়াতাড়ি মুখে হাত দিয়ে ফেললাম।কি বলতে কি বলে ফেললাম।এই জন্যই মারিয়া আমাকে হা*দা উপাধি দিয়েছে।
“আমার কথা শুনে উনার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো তারপর চেহেরা গম্ভীর করে বললেন- তুমি যেমন ফা*উ*ল দেখোও তেমন ফা*উ*ল ভিডিও!বলেই উনি ফ্রেশ হতে চলে গেলেন।আর আমি লম্বা একটা শ্বাস নিলাম।আরেকটু হলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলতাম।মনে মনে ক্রিম-আপাকে কয়েকটা গা*লিও দিলাম।আস্তে আস্তে উনার প্রতি ভয়টা আমার কমে যাচ্ছে হয়তো পবিএ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি তাই।তবে পুরোপুরি ভাবে ভয়টা যায়’নি উনার রাম-ধমককে এখনো আমি ভয় পায়।এসব ভেবেই ফোনটা বন্ধ করে পাশে রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।
“কিছুক্ষণ পর উনিও ঘুমাতে আসলেন তবে হাতে অনেক গুলা ফাইল নিয়ে।উনি বিছানায় বসে সেসব নিয়ে কি হিজিবিজি কাজ করছেন।আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
~~~~ রাত একটার দিকে রুদ্র সব কাজ শেষ করে ফাইল গুলা গুছিয়ে রাখতে যাবে তার আগেই চোখ যায় নূরের দিকে।কেমন এলোমেলো ভাবে ঘুমাচ্ছে।মাথাটা বালিশে নেই পা দুটো তার কয়েকটা ফাইলের ওপর।চুল গুলা সব সারা-বিছানায় ছড়ানো।রুদ্র বেশ বিরক্ত হলো তার মতো একজন গুছানো পারফেক্ট,স্ট্রোং পারসোনালিটির,মানুষের এমন একটা আধ-পা*গ*ল রো*গী অগোছালো মেয়ে তার জীবনসঙ্গী হবে সেটা সে জীবনেও ভাবি’নি।সে সব সময় শান্ত,ভদ্র,চুপ-চাপ স্বভাবের মেয়ে চেয়েছিলো নিজের লাইফে।যাকে সে সব বলতে পারবে!যাকে কিছু না বললেও সে বুঝে যাবে।কিন্তু ভাগ্য তা সহায় হলো না।এসব ভেবেই নূরকে ভালোভাবে শুয়ে দিয়ে নিজের সব ফাইল গুছিয়ে রেখে ঘুমাতে চলে আসলো।
———————————–
সকালের দিকে সবাই ব্রেকফাস্ট করতে বসলাম।আজকে শুক্রবার তাই সব বন্ধ বলে সব পুরুষরা ঘরে আছেন।আমি কোনো কাজ ভালোভাবে না পারায় আমাকে- খাবার টেবিলে আনা-নেওয়ার কাজ দেওয়া হয়েছে।এক তো শাড়ি পড়ে আছি আর দ্বিতীয়ত হাতের বালা।বিরক্তিতে সারা-শরীর রি-রি করতে লাগলো।তাও বাধ্য হয়ে পড়তে হচ্ছে।খাবার সব টেবিলে আনার পর এক এক করে সবাই এসে বসে পড়লো।
“শশুড় বাবাকে যতটুক কঠোর ভেবেছিলাম ততটুক উনি নন।উনি অনেক ভালো মনের মানুষ শুধু চেয়ারম্যান হিসেবে একটু রাগি।উনি বসলেন দাদি শাশুড়ির পাশে আর উনার পাশে শাশুড়ি মা।তারপর বড় ভাই মাহিন মির্জা তারপর উনার দুই-বছরের ছেলে আফ্রান মির্জা।তারপর বসলেন তানিয়া ভাবি।আর অন্য-পাশে আমি আর রুদ্র মির্জা।খাবার সব সময় শাশুড়ি মা সবাইকে নিয়ে নিয়ে দেন।এটা উনার একটা ইচ্ছা।
“তারপর শশুড় বাবা আর বড় ভাই রুদ্র মির্জা কথা বলছেন।আমরা মেয়েরা খেয়ে চলছি চুপ-চাপ।
“উনাদের কথার শেষে দাদি হটাৎ আমাকে বলে উঠলেন- এই জ্ঞান হারানো মাইয়া শুনো আমাগো এখানে তাড়াতাড়ি বা*চ্চা লইতে হয় তুমি আবার মর্ডান মাইয়াগো মতন বছর-খানিক পর নিতে যায়ও না।বড় নাতবউ ও পড়ালেহা করছে কিন্তু বা*চ্চাও সামলায়ছে।যতদিন জী*বি*ত আছি ততদিন না*তী*ন ঘরের পু*তি*ন পালতে চাই।
“উনার কথা শুনে রুদ্র বিষ্ময় খেলেন।
“দাদির কথা শুনে রাগ হলো তাই এক-প্রকার মুখ ফসকে বলে ফেললাম- আমি কেন এখন বা*চ্চা পালবো?আমি নিজে এখনো বা*চ্চা।
“আর উনার প্রতি আগেও রাগ ছিলো তাই হালকা রেগে বললাম- আপনার এত বা*চ্চা পালার ইচ্ছা হলে আপনিই বরং বা*চ্চা পয়দা করুন।
“ব্যস কথাটা বলে বুঝতে পারলাম কেলেঙ্কারি আমি করে ফেলেছি।ভয়ে ভয়ে রুদ্রের দিকে তাকালাম উনি আ*গু*ন চোখে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।যার মানে আমার আজ তোমার খবর আছে।
“আমি আরও ভয়ে ভয়ে সবার দিকে তাকালাম শশুড় বাবা থেকে শুরু করে সবাই মিটিমিটি হাসছেন।তবে দাদি আমার দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটলেন।আর এক-প্রকার লজ্জা নিয়ে আমি ব্রেকফাস্ট শেষ করলাম……
————————————————-
(চলবে)