অবশেষে তোমাকে পাওয়া ১৩ +১৪

0
512

#অবশেষে_তোমাকে_পাওয়া
#পর্ব_তেরো
#তারা ইসলাম
———————————————————————
দেখো ভালো হবে যদি তুমি রুদ্রর জীবন থেকে চলে যাও।আমি রুদ্রকে ভালোবাসি আর রুদ্রও আমাকে ভালোবাসে!

“সামনে বসা অতী-সুন্দরী রমণীটার কথা শুনে মৃদু হেসে বললাম- দুঃখিত আপু!আমি না রুদ্রর জীবন থেকে যাচ্ছি”না উনি আমাকে যেতে দিবেন।তাই আমাকে অহেতুক কথা বলে কোনো লাফ আপনার হবে না।

“মেয়েটা আমার কথা শুনে রেগে বললেন- রুদ্র শুধু আমাকেই ভালোবাসে।ওতো ভালো মনের মানুষ তাই তোমাকে ডি*ভো’র্স দিয়ে তোমার জীবনটা ন*ষ্ট করতে চাচ্ছে না।কিন্তু প্লিজ তুমি ওর জীবন থেকে সরে যাও!আর আমাদের দুইজনকে মুক্তি দাও।

“উনার কথায় এবার রাগে সারা-শরীর আমার রি-রি করতে লাগলো তাই এক-প্রকার রেগেই বললাম- আপু আপনার মাথা ঠিক আছে?আপনি আমার হাসবেন্ডের নামে যা-তা বলবেন আর আমি বিশ্বাস করে নিবো?স্যরি আপু ওতটুক বোকা আমি নয়।আর শুনেন আমরা একে-ওপরকে প্রচণ্ড ভালোবাসি তাই আপনি আমাদের মাঝে না আসলে ভালো হবে।বলেই আমি ভার্সিটি থেকে বের হয়ে আসলাম।মারিয়া অসুস্থ তাই সে আসতে পারে’নি আমি একাই এসেছি।

“নূর চলে যেতেই ফারিয়া সে দিকে রা*গি চোখে তাকালো আর মনে মনে বললো- অনেক বড় ভুল করেছো মেয়ে!আমি তোমাকে শান্ত ভাবে বুঝাতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনলে।
—————————–
কি সমস্যা কথা বলছো না কেন?আর এভাবে কান্না করার মানে কি বলবে?

“রুদ্রর কথা শুনে উনার দিকে ছলছল চোখে তাকালাম আর মুখ কালো করে বললাম- আপনার পিছনে যে এত আশিকা আছে আমার জানা ছিলো না।

“উনি ভ্রু কুঁচকে বললেন- আশিকা মানে?

“আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম- ছেলে মানে আশিক,আর মেয়ে মানে আশিকা।

“আমার কথা শুনে উনি কয়েক-সেকেন্ড আমার দিকে তাকালেন তারপর হু-হা করে হেসে উঠলেন আর বললেন- এসব অদ্ভুত কথা শুধু তুমিই বলতে পারো।বলেই হাসতে লাগলেন।

“উনার হাসি দেখে বিরক্ত লাগলো আমি ম’রি আমার জ্বালায়!আর উনি আছেন হাসির তালে তাই এক-প্রকার রেগেই বললাম- একদম হাসবেন না।আমার মুটেও ভালো লাগছে না আপনার হাসি।

“উনি আমার গাল টেনে দিয়ে বললেন- ভী’তুরানীর আজকে আবার কি হলো?

“আমি নাক ফুলিয়ে সকালের সব ঘটনা উনাকে খুলে বললাম।

“আমার কথা শুনে উনার চো’য়াল শ*ক্ত হয়ে এলো তারপর রাগ নিয়ে বললো- মেয়েটার কথা আবার বিশ্বাস করে নিয়েছো নাকি?

“আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম- দূর বিশ্বাস করতে যাবো কেন?কিন্তু মেয়েটা আপনাকে মনে হয় আসলেই ভালোবাসে,তাই আমার খারাপ লাগছে ইচ্ছা হচ্ছে মেয়েটার মাথা ফাটিয়ে দিতে আর কাউকে পাই’নি একজন বিয়াইত্তা ব্যাটাকেই পেলো”বলেই মন খারাপ করলাম!

“আমার কথা শুনে উনি উচ্চস্বরে হেসে উঠলেন আর বললেন- অহহহ আচ্ছা মিসেসের তাহলে এই জন্যই রাগ হয়েছে।আরে বাবা কাউকে ভালোবাসা তো পাপ না সে ভালোবাসতেই পারে তাতে সমস্যা কি আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।

“উনার কথা শুনেও আমি মুখ কালো করে বললাম- দাদি ঠিকি বলেছেন সুন্দর জামাই পে’লে কপাল ঝাল’পালা হয়।তাই তাড়াতাড়ি বা*চ্চা নিয়ে পেলাই উত্তম।

“উনি আমার কথা শুনে আমার পাশে বসে,আমার একহাত উনার হাতের মাঝে নিয়ে বললেন- আরে বোকা মেয়ে দাদি তো এমনে মজা করেই বলেছে কথা গুলা।আর শুনো বা*চ্ছা আল্লাহ যখন দেন আমার তাতে কোনো সমস্যা নেই।তারপর আমার হাত উনার বুকে রেখে বললেন- এই হৃদয়ে শুধু তোমার বসবাস নূর।

“আমি কিছু না বলে উনাকে শ*ক্ত করে জড়িয়ে ধরে বসে রইলাম।আচ্ছা এত ভালোবাসা,এত সুখ,আমার কপালে সই’বে তো।
~~~~~~~~~~~~~~~~~
রেয়ান চৌধুরি বসে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে।কিন্তু তার মন শুধু নূরময়ীর মধ্যে।আর তার চোখের সামনে ভেসে উঠছে নূর আর রুদ্রর জড়িয়ে ধরে থাকার দৃর্শ্যটি।সেদিন সে কোনো কাজের জন্য গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিলো কিন্তু মাঝ-রাস্তায় রুদ্র আর নূরকে জড়িয়ে ধরে আনন্দ করতে দেখে তার মন একদম বি*ষে গিয়েছিলো।মনে মনে সে রুদ্র হিং’সা করতে লেগেছিলো
কিন্তু পরে নিজেকে সামলে নিলো।তারা হাসবেন্ড,ওয়াইফ পবিএ বন্ধনে আবদ্ধ আছে তাই হয়তো একে-অপরকে ভালোবেসে ফেলেছে।এসব স্বাভাবিক”কিন্তু তাও রেয়ানের মন মানছে না বার বার নূরময়ীকে নিজের করে রাখতে ইচ্ছে হচ্ছে।কিন্তু সেটা তার চরিএ এর সাথে যাবে না।এসব ভাবতেই রেয়ানের ফোন বেজে উঠলো।রেয়ান তাকিয়ে দেখলো তার বাবার সে প্রিয় পুরণো বন্ধু।আহান চৌধুরি”উনিই সে যে তাদের অসহায় অবস্থায় সাহায্য করেছিলেন।তাই’তো এত গুলা বছর চলে যাওয়ার পরও রেয়ান উনার খুঁজ-খবর নেন।

“রেয়ান ফোন রিসিভ করে সালাম দিলো তারপর খুঁজ কবর নিতে লাগলো।

“ফোনের ওপাশে থাকা আহান চৌধুরি সালামের জবাব দিয়ে কিছুক্ষণ নরমাল কথা বলে বললেন- মাই বা*চ্ছা আমি দেশে ফিরছি কাল!তো আমাকে নিতে আসবে না।

“রেয়ান হেসে বললো- বাবাই(ছোট বেলা থেকেই রেয়ান উনাকে বাবাই বলে সম্মোধন করে) তুমি আসবে আর আমি নিতে যাবো না তা’কি করে হয়।

“আহান চৌধুরি বললেন- আমি দশ’টার মধ্যে পোঁছে যাবো।

“রেয়ান বললো- ঠিক আছে বাবাই।

“তারপর তারা কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিলো।রেয়ান আজকে ভীষণ খুশি তার বাবাই ফিরছে ফারিয়া শুনলে একদম খুশিতে লাফালাফি শুরু করে দিবে।ভেবেই মুচকি হাসলো
~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আপনাকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে যে আমি নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে যাবো তা কখনো আমি ভাবি’নি রুদ্র!কাঁপতে কাঁপতে কথা গুলা বললাম উনাকে।

“উনি সোফায় বসে আমার দিকে এক মনে তাকিয়ে আছেন।

“আমি ভাঙ্গা গলায় বললাম- আপনি এত গুলা’দিন পরিবারের সবাইকে ঠকিয়েছেন,সাথে আমাকেও,আপনি কেন এমন করলেন বলতে পারেন?

“উনি এবার রেগে বসা থেকে উঠে আমার সামনা-সামনি এসে বললেন- মুখ সামলে কথা বলো নূর।না বুঝে না জেনে আজে-বাজে বকবে না।আমার প্রফেশন টা আমার ইচ্ছা হলে সবাই কে বলবো!ইচ্ছা না হলে বলবো না সেটা একান্ত আমার ব্যাপার।

~কিছুক্ষন আগে~

~ উনার সাথে আমার দুইদিন ধরে দেখা না হওয়ায় উনাকে প্রচুর মিস করছিলাম।উনি কাজের জন্য নাকি উনার বাবার বাড়িতে যেতে পারেন’নি।তাই আমি ভাবলাম উনাকে সারপ্রাইজ দিলে কেমন হয়।তাই উনাদের গাড়ি নিয়েই সকাল সকাল আমি বেড়িয়ে পরলাম উনার সে ফ্ল্যাটের দিকে।ওই ফ্ল্যাটের একটা চাবি আমার কাছে উনি রেখেছেন,যাতে উনি না থাকায় আমার সে ফ্ল্যাটে আসা যাওয়ায় সমস্যা যেন না হয় তাই।কিন্তু আমি খুশি মনে ফ্ল্যাটে ডুকতেই থমকে গেলাম।উনি পুলিশের পোশাক পরা,আর উনার সাথে আরও চার-পাঁচ জন পুলিশের পোশাক পরে সোফায় বসে উনার সাথে কি যেন কেসের কথা বলছেন।আর সব চাই’তে বড় কথা সেখানে থাকা একটা ছেলে উনাকে সম্মোধন করে বললেন- রুদ্র স্যার এই রাসেলের কেসটা আপনি সমাধান করার চেষ্টা করেন দেখবেন ইনশা-আল্লাহ সমাধান পেয়ে যাবেন।আর ব্যাটাকে ধরতেও পারবেন।

“উনি ওই ছেলেটাকে কিছু বলতে যাবেন তার আগেই হুট করে উনার দৃষ্টি আমার দিকে পরলো।আর সাথে সাথেই উনি চমকে উঠলেন।আর উনার চমকানো দেখে সবাই আমার দিকে তাকালো।আর তাকাতেই ভ্রু কুঁচকে ফেললেন।

“রুদ্র বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন- তোমাদের সাথে থানায় গিয়ে এই নিয়ে আলোচনা হবে,এখন আসতে পারো।উনার কথায় সবাই বের হয়ে গেলেন।

~ বর্তমান ~

“আমি সোফায় বসে বসে কান্না করছি আর সব হিসাব মিলানোর চেষ্টা করছি।উনি পুলিশ হিসেবেই হয়তো উনার কাছে পি*স্ত*ল টা ছিলো।

“উনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন!আর রাগি চোখে তাকিয়ে বললেন- নূর কান্না বন্ধ করো!বিশ্বাস করো আমার এসব একদম ভালো লাগছে না”তোমাকে এখানে কে আসতে বলেছে?আর এসেছো আমাকে বলে আসবা না?

“আমি কিছু না বলে নিজের ভয় কাটানোর চেষ্টা করলাম।মনে মনে নিজেকে শাসিয়ে বললাম- নূর তুই কি ন্যাকামো শুরু করেছিস।বা*চ্চা তুই এত কেন ভয় পাস!সে পুলিশ হলেও তোর হাসবেন্ড!নিজেকে নিজে আরও কিছুক্ষণ বকে শান্ত হলাম।তারপর উনার দিকে তাকিয়ে বললাম- আপনি বললেন না কেন আপনি পুলিশ?

“উনি রেগে বললেন- নূর সেটা বলতেও আমি ইচ্ছুক নই!শুধু এতটুকু যেনে রাখো আমি চাই’না আমার কারণে পরিবারের কেউ সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাক।

“আমি কিছু না বলে উঠে দাঁড়ালাম এক-প্রকার অভিমান নিয়ে বললাম- আমি ওই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি আপনি এখানেই থাকবেন!খবরদার আমার শশুড় বাবার বাড়িতে একদম যাবেন না।আপনি মিথ্যা বলে এসেছেন এতদিন ধরে সেখানে যাওয়ার আপনার কোনো অধিকার নেই।আমি বাড়িতে গিয়ে সবাইকে আপনার সত্যটা বলে দিবো।

“আমার কথায় উনি মৃদু হাসলেন তারপর বললেন- ঠিক আছে যাও সমস্যা নেই।যদি আমি ওই বাসায় এক্কিবারের জন্য না ফি’রি তখন আবার কেঁদে কেটে জ্ঞান হারিও না।আরে যাও যাও বলে দিও সবাইকে আমার জন্য আরও ভালো হবে!যে কথাটা আমি বলতে চেয়েও পারি’নি সেটা তুমি বলে দিয়ে আমার উপকার করে দাও।

“উনার কথা শুনে রেগে আমি আবার সোফায় বসে পরলাম।উনি হেসে আমার পাশে বসে আমার কাধে মাথা এলিয়ে দিয়ে বললেন- নূর কিছু কিছু কথা আমি একান্ত রাখতে পছন্দ করি!আশা করি এতে তোমার কোনো সমস্যা হবে না?

“আমি কিছু না বলে চুপ-চাপ বসে রইলাম।

“উনি দুষ্টুমি হেসে বললেন- বসে আছো কেন?তুমি না চলে যাবে বলেছিলে?

“আমি রেগে বললাম- যাবো না আমি।

“উনি এবার হেসে বললেন- তাহলে থাকো সমস্যা কি?আমার এখন উঠতে হবে থানায় যেতে হবে।তুমি রাতের ডিনার রেডি করে রাখিও যদি না পারো খাবার অর্ডার করে নিবো সমস্যা নেই।

“আমি বললাম- খাবার অর্ডার করতে হবে না আমি রান্না করতে পারবো।আর কখন ফিরবেন?

“উনি উঠে দাঁড়িয়ে আমার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বললেন- রাত হবে একটু তবে আমি তাড়াতাড়ি ফেরার চেষ্টা করবো।

“আচমকা উনার এমন কাজে অবাক হলেও মুচকি হেসে বললাম- আমি অপেক্ষায় থাকবো….
————————————-
(চলবে)

#অবশেষে_তোমাকে_পাওয়া
#পর্ব_চৌদ্দ
#তারা ইসলাম
———————————————————————-
রাত তখন এগারো’টার কাছাকাছি।উনি মাত্রই থানা থেকে ফিরলেন।উনি ফ্রেশ হতে গেলে আমি টেবিলে রাতের খাবার পরিবেশন করতে লাগলাম।কিছুক্ষণের মধ্যেই উনি এসে চেয়ারে বসে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন- একা একা ভয় লাগে’নিতো?

“আমি ঠোঁট ফুলিয়ে বললাম- পুলিশের বউদের ভয় থাকতে নেই।

“আমার কথায় উনি শব্দ করে হেসে উঠলেন আর বললেন- হ্যা তা তুমি ঠিক বলেছো!রুদ্র মির্জার বউ হয়ে ভয় পাবা তা কি করে হয়?

“তারপর উনার প্লেটে খাবার দিতে দিতে বললাম- ফ্রিজে মাছ ছিলো ও গুলা অনেক কষ্টে রান্না করেছি।আর ডিম আর ডাল ব্যস আর কিছু রান্না করতে পারি’নি।খাবার ভালো না হলে কিন্তু একদম বলবেন না।দরকার হলে পানি দিয়ে খাবেন।

“আমার কথায় উনি পানি খেতে খেতে বললেন- শিখে নিতে বলেছিলাম সব”আমার এসব হেলা-পেলা একদম ভালো লাগে না।আর এখন তো ওই বাড়িতে আছো তাই না করলেও চলছে তোমার।কিন্তু তোমার ফাইনাল এক্সাম শেষ হলে এখানেই থাকতে হবে!তাই ভালোভাবে সব শিখে নিবা।

“আমি মুখ কালো করে বললাম- আমার কাজ করতে ভাল্লাগেনা।

“উনি আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে বললেন- খেতে তো নিশ্চয় ভালো লাগে,ঠিক সেভাবেই কাজকেও ভালো লাগাবে।আমি এসব বা*চ্চা*মো কথা একদম পাত্তা দিবো না।সব শিখে নিবে।বলেই খেতে লাগলেন খেতে খেতে বললেন- ততটুক খারাপ হয়’নি ভালোই হয়েছে তুমিও খেয়ে নাও!

~ তারপর আর কোনো কথা না বলে আমরা খাওয়ার পর্ব শেষ করলাম।

“সব গুছিয়ে রুমে আসতে আসতে উনাকে বললাম- আপনার সত্যটা বাসায় বলবেন না?

“উনি বিছানায় শুতে শুতে বললেন- আপাতত বলার মুড নেই।

“আমি বললাম- বলে দিলে কি হয়?উনারা জানলে প্রথমে অভিমান করবেন পরে সবাই কত খুশি হবেন।শশুড় বাবা সব থেকে বেশি খুশি হবেন দেখে নিয়েন।

“উনি আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে থাকিয়ে হালকা চিল্লিয়ে বললেন- এই জন্যই তোমরা মেয়েদের কিছু বলতে নেই!তোমাকে আমি জীবনেও সত্যটা বলতাম না!তুমি কেমন জানা আছে আমার!আর তুমি ভাগ্যক্রমে সত্যটা জেনে ফেলছো যে!না’হলে তোমার মতো ইস্টু’পিটকে আমি জীবনেও বলতাম না।আর হ্যা এখন আবার ন্যাকা-কান্না শুরু করে দিও না বলে রাগ নিয়ে অন্য-পাশে শুয়ে পরলেন।

“উনার কথায় আমি সত্যি সত্যি কষ্ট পেলাম।আর চোখে পানিও চলে আসলো।উনি মাঝে মাঝে এমন ভাবে কথা বলেন যে আমার হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়!আমি নিজেকে শক্ত করে উনার অন্য-পাশ ফিরে শুয়ে পরলাম।আর মনে মনে ঠিক করলাম কালকেই আমি ফিরে যাবো ওই বাসায়।এখানে উনার অপমান জনক কথা শুনার বিন্দু মাত্র ইচ্ছা নেই আমার।

~ সে রাতে আর আমাদের কথা হলো না।সেভাবেই রাতটা পার হয়ে গেলো।আমি অভিমান নিয়ে ঘুমালাম! আর উনি রাগ নিয়ে।
~~~~~~~~~~~~~~~
“সকালে ঘুম থেকে উঠে আর উনার দেখা পেলাম না।বুঝে গেলাম উনি থানায় চলে গেছেন।প্রথমে একটু খারাপ লাগলেও রাতের কথা মনে পরতেই আমি ফ্রেশ হয়ে বোরকা পরে নিলাম।তারপর দরজায় তালা দিয়ে বেড়িয়ে পরলাম বাহিরে।এখন অনেকটা চেনা জায়গাটা।আমার কাছে যথেষ্ট টাকা ছিলো!তাই আমি একটা অটোতে উঠে পরলাম।উদ্দেশ্য আমার নিজের বাড়ি আব্বুর কথা ভীষণ মনে পরছে!মনে মনে ভাবলাম- আচ্ছা আব্বুর কি আমার কথা মনে পরে না।সেদিন তো আমার কোনো দোষ ছিল’না সেটা কি আব্বু বুঝতে পারেন’নি।

~ অনেকক্ষণ জার্নি করার পর নিজ বাসায় এসে মন আমার একদম ফুরফুরে হয়ে গেলো!আজকে হয়তো আগের মতো আম্মুর হাতে চ*ড় খাবো কেন আসলাম এই বাড়িতে তাই,তবে আমি নিজেকে আগে-ভাগে রেডি করে রাখলাম প্রচুর বকা আর চ*ড় খাওয়ার জন্য।

“কলিংবেল দেওয়ার কিছুক্ষণ পর আমার ছোট ভাই লিয়ন দরজা খুলে দিলো”সে আমাকে দেখে হতবাক”চমকানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

“ওর দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হেসে উঠে বললাম- ভাই আমার।আমি না থাকায় তো বহুত ঘরে রাজত্ব করেছিস।কিন্তু এখন আমি চলে এসেছি!

“লিয়ন আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হেসে বললো- দেখবি আম্মু তোকে ঝা’ড়ু দিয়ে মে’রে বের করে দিবে।

~ আমাদের কথার মাঝে আম্মু আচঁলে হাত মুছতে মুছতে বললেন- লিয়ু বাবা কে এসেছে?বলতে বলতেই দরজার কাছে আমাকে দেখে থমকে গেলেন।

“আম্মুকে দেখে ভয়ে আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম।

“আম্মু হটাৎ গম্ভীর গলায় বললেন- ভেতরে এসো।

“আম্মুর কথা শুনে খুশি হয়ে উনাকে জড়িয়ে ধরলাম! তবে উনি ধরলেন না।

“আম্মু আমাকে ছাড়িয়ে বললেন- হটাৎ এখানে আসা?বের করে দিয়েছে নাকি তারা?

“আম্মুর কথায় আহত দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম- আম্মু আমার তোমাদের কথা ভীষণ মনে পরছিলো।আজ কোনো ভাবেই নিজের আবেগকে কন্ট্রোল করতে পারি’নি।বের করে দিবে কেন আমি সেখানে অনেক অনেক ভালো আছি আম্মু।উনারা আমাকে ভীষণ ভালোবাসেন।আর আম্মু জানো আমি না সব কাজ মোটামুটি শিখে নিয়েছি বলেই কেঁদে ফেললাম।

“আম্মু কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে বললেন- আজ এসেছো এসেছো আর কখনো আসবে না।ভালো আছো সেটাই অনেক আর সেখানেই থাকবে।আর হ্যা লিয়নের আব্বু আসার পর উনার সাথে দেখা করে চলে যা’বা।

“আমি মুখ কালো করে বললাম- আমি এখানে থাকবো!এটা আমারও ঘর।

“আম্মু রে’গে বললেন- এটা তোমার ঘর না!তোমার স্বামীর ঘর হলো এখন তোমার আসল ঘর। তাই এখানে তাকার কোনো প্রয়োজন নেই তোমার।

“আমি ধরা গলায় বললাম- আজকের রাত’টুকু কি এখানে থাকতে পারি”শুধু আজকের রাত কালকেই আমি ফিরে যাবো।

“আম্মু কিছু একটা ভেবে বললেন- ঠিক আছে তবে সকালে সূর্য্য উঠার সাথেই সাথেই বিদায় হবে।

“আমি কান্নার মাঝে মুচকি হেসে বললাম- ঠিক আছে।
~~~~~~~~~~~
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়েছে মাত্র!আমি আমার রুমে শুয়ে শুয়ে ফ্যানের দিকে এক মনে তাকিয়ে আছি।আর ভাবছি যা শুনলাম তা’কি সত্য নিজেকে হুট করে মৃ’ত মৃ’ত মনে হচ্ছে।তখনই দরজার বাহিরে আব্বুর গলা শুনতে পেলাম উনি বলছেন- মা আমার এসব কথা ভেবে তুমি কষ্ট পেয়েও না প্লিজ।মাই প্রিন্সেস দরজা খুলো!আমি রোবটের মতো দরজাটা খুলে দিলাম।তখন আব্বু আমার রুমে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন- তুমি আমারই মেয়ে নূর!তোমাকে আমাদের শিক্ষায় বড় করেছি।তুমি তোমার আম্মুর কথায় কষ্ট পেও না উনি এমনি এসব কথা বলেছেন।

“আমি রোবটের মতো দাঁড়িয়ে রইলাম তবে কিছু বললাম না।

~ অতীত ~

“আমি আব্বুর বাসায় আসার কয়েক’ঘন্টা পর আব্বু বাসায় আসলেন।আমরা বাবা-মেয়ে অনেকদিন পর একে-অপরকে দেখায় অনেক ইমোশনাল হয়ে পরেছিলাম।তারপর আমরা অনেকক্ষণ কথা বলার পর! লান্স করে নিলাম সবাই মিলে।

“কিন্তু দুপুরের খেয়ে-দেয়ে ঘুমাতে এসেছিলাম কিন্তু আব্বুকে মারিয়া প্রেগন্যান্ট সেটা বলতে যেতেই দরজার সামনে গিয়ে কিছু কথা শুনে আমি থেমে গেলাম।দরজাটা লাগানো ছিলো তবে লক করা নই তাই সব কথা স্পষ্ট করে শুনা যাচ্ছে।মনে হচ্ছিলো উনারা আমাকে নিয়েই ঝগড়া করছেন তবে আম্মু রেগে আব্বুকে বললেন- পরের মেয়ের জন্য তোমার এত দরদ কই আমার ছেলের জন্য তো এত দরদ নেই।নাকি পুরণো প্রেমিকার মেয়ে বলে এত দরদ।মেয়েটাকে কালকেই বিদেয় করবে না হলে এই ঘর ছেড়ে আমি বের হয়ে যাবো।

“আব্বু বললেন- রেহু এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে শায়লা কখনো আমার প্রেমিকা ছিলো না।সে শুধুমাত্র আমার আপা ছিলো।ভুলে যাবে না আমি তোমাকেই ভালোবাসতাম আর বাসি!তুমি এমন ভান করছো যেনো তুমি নূরকে ভালোবাসো না?

“রেহেনা খান রেগে বললেন- একটা চরিএহীন মা আর বাবার মেয়েকে ভালোবেসে আমি কি করবো?ওই মেয়েকে কালকেই বিদেয় করবে।অনেক তো লালন-পালন করলাম ওই পাপীদের সন্তানকে আর কত আর যে পারি’না।ওকে দেখলেই আমার অতীতের সব কথা মনে পরে যায়।

“লেয়ান জামান রেগে উনার ওয়াইফের গালে চ*ড় লাগালেন আর বললেন- তুমি আর মানুষ নেই রেহেলা খান।ভেবেছিলাম তুমি মেয়েটাকে ভালোবাসো কিন্তু না আমি ভুল ছিলাম।হ্যা সে আমাদের মেয়ে না শায়লা আপা আর আহান চৌধুরের মেয়ে তো তাতে কি?আমরা ওকে বড় করেছি আমাদের শিক্ষায়।তাই ও আমাদেরই মেয়ে।

~ উনাদের সব কথা শুনে আমার দুনিয়া থমকে গেলো আর আমি সেসব কথা নিতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম।

~ যখন আমার জ্ঞান ফিরে তখন আমি আব্বুর রুমে নিজেকে পায়।উনি কান্না করছেন আর আম্মু দরজার কাছে দাঁড়িয়ে কান্না করছেন।আমার তখনের সব কথা মনে পরতেই মন আমার বি’ষে গেলো।কি বলবো?কি করবো বুঝতে পারছিলাম না মানসিক ভাবে এক্কিবারে ভেঙ্গে পরলাম।কান্না করতে ইচ্ছা হলো তবে কাঁদতে পারছিনা।আহা কাঁদতে চাইলে যে কাঁদতে না পারার কষ্টটা আমি সেদিন বুঝেছিলাম।নিজেকে সেদিন আমার পাথর মনে হয়েছিলো।

“আমি আব্বুর দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক গলায় বললাম- আমার আসল বাবা-মা কারা আব্বু?

“আমার কথায় আব্বু শব্দ করে কেঁদে উঠলেন আর বললেন- প্লিজ মাই প্রিন্সেস এসব বিশ্বাস করিও না!তুমি আমাদেরই মেয়ে।

“আমি আবারও স্বাভাবিক গলায় বললাম- আব্বু শাক দিয়ে আর মাছ ডেকে যে লাফ নেই।আমি সব শুনেছি!আর আমি সত্যটা জানতে চাই।

“আমাদের কথার মাঝে আম্মু বলে উঠলেন- তুই একজন মেয়ে ব্যবসা’কারি’নী মা আর আর একজন দু’শ্চরিএ বাবার সন্তা’ন…বলেই উনি আমার সব কালো-অতীত বলতে লাগলেন।

~~~ আমি নিজের কালো-অতীত জেনে বিস্মিত হলাম।ঘৃণায় রাগে দুঃখে আমি কেঁপে কেঁপে উঠছি।মনে হচ্ছে হয়তো এক্ষুণি আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে।এসব মিথ্যা হয়ে যাক সেটাই তখন মনে মনে ভাবছিলাম।আমি আর কথা গুলা শুনতে পারছিলাম না।তাই উনাদের দিকে আর না তাকিয়ে নিজের রুমে চলে আসলাম।এখন আমার কি করা উচিত বুঝতেছিলাম না।কিন্তু ভীষণ ভাবে ইচ্ছা হচ্ছিছিলো ম’রে যেতে।এসব আমি কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম।সে-সব কথা মনে পরতেই আমি মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পরছিলাম বার বার।

~ বর্তমান ~

“আব্বু আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক শান্তনা দিলেন।তবে আমি শুধু বললাম- আমার একটু একা থাকা প্রয়োজন।আব্বু আমার কথা শুনে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রুম ত্যাগ করলেন।আর আমি আবারও বিছানায় লা’শের মতো শুয়ে থাকলাম….
—————————-
(চলবে)

(ভুল ক্রুটি ক্ষমা করবেন।ভুল গুলা ধরিয়ে দিবেন)

~ সারপ্রাইজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here