অপ্সরী ৭.

0
522

#অপ্সরী
৭.

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মাঝারী আকারের হলরুমটাতে মানুষের আনাগোনা। কথার শব্দে গমগম করছে গোটা হলরুম। দু’পক্ষের কাছের আত্মীয়-স্বজন আর বন্ধু-বান্ধবদের হাসিব-মাইশার ছোট্ট এই বিয়ের আয়োজনে শামিল করা হয়েছে। কেউ খাচ্ছে, কেউ ছবি তুলছে আর কেউবা গল্প করছে। পাশাপাশি চুপচাপ বসে আছে মাইশা আর হাসিব। কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছে না, কথা বলছে না। স্টেজে কিছুক্ষন পরপর আত্নীয় স্বজন আসছে, তাদের সঙ্গে ছবি তুলছে, এই কথা সেই কথা জিজ্ঞেস করছে। গত চারদিনে একবারও হাসিব তাকে ফোন করেনি। আকদের কেনাকাটায় শাশুড়ী তাকে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলো, সেখানেও হাসিব কোনো কথা বলেনি৷ এই নিয়ে বেশ অবাক মাইশা। মানুষটা যে ধাতের তার তো এই চারদিনে কয়েকবার করে ফোন করার কথা ছিলো। সেদিন মার্কেটে এতটা সময় একসঙ্গে ছিলো, কত কথাই তো বলার ছিলো। কই বললো না তো! আংটি পরিয়ে গেলো যেদিন, সেদিন রাতের পর থেকে লোকটা আর কোনো কথাই বলেনি। ঐ প্রশ্নটার উত্তর না দিয়েই তো কলটা কেটে দিলো৷ রেগে গিয়েছে বোধ হয়? কেন রেগে গেলো? নিজের দোষ শুনতে পছন্দ করে না তাই? আড়চোখে একবার হাসিবের দিকে তাকালো মাইশা। চেহারা দেখে মনে হচ্ছে না রেগে আছে। কি হাসিখুশি ভাব পুরো চেহারা জুড়ে! বিয়ে করতে পেরে লোকটা বেজায় খুশি তা যে কেউ দেখলেই বুঝে ফেলবে। হঠাৎ মানুষটা কথা বলে উঠলো। বললো,

– আড়চোখে কি দেখো হুম? তোমার বিয়ে করা বর আমি। অধিকার আছে আমাকে মুখোমুখি বসিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা তাকিয়ে থাকার। কেউ কিচ্ছু বলবে না।

লজ্জা পেয়ে গেলো মাইশা। দ্রুত চোখ সরিয়ে ফেললো অন্যদিকে। ইতস্তত ভঙ্গিতে বললো,

– কাকে বলছেন? আমাকে?
– ইশ! কাকে বলছেন! দেখো দেখি, মেয়েটা না জানার ভান ধরে!
– আমি ভান ধরতে জানি না৷
– আসলেই জানো না৷ ধরা পড়ে যাও। চেহারা দেখেই তোমাকে ধরে ফেলা যায়।
– কে বলেছে আড়চোখে আপনাকে দেখছি?
– ওপাশের আয়না বলেছে।

স্টেজের কোনাকোনি সাজিয়ে রাখা বড় কাঠের ফ্রেমবন্দী আয়নাটার দিকে তাকালো মাইশা। মাথা নিচু করে জিভ কাটলো সে। ইশ! কি ভুলটাই না হলো। আয়নায় তো এপাশের সবকিছু স্পষ্ট দেখা যায়৷ ওখানেই লোকটা তাকে দেখে ফেলেছে৷ মনে মনে চিৎকার করে হাসিবকে বললো,

– এতকিছু দেখতে হবে কেন আপনার? কেন? কেন? কেন?

মুখটিপে হাসছে হাসিব৷ বললো,

– স্বাভাবিক হও পেঁচামুখী। আজকে তোমার বিয়ে, চারদিক থেকে লোকজন তোমার পেঁচামুখের ছবি তুলে নিয়ে যাচ্ছে৷

দ্রুত চেহারা স্বাভাবিক করে মাথা উঠালো মাইশা৷ আয়নায় তাকিয়ে দুজন দুজনকে দেখছে।

লোকটা মিটমিট করে হাসছে৷ অদ্ভুত সেই হাসি। মায়া নেই একদমই, তবে দুষ্টুমির ছাপ স্পষ্ট। এই মানুষটার রাগ ছাড়া আর কিছুর সঙ্গেই পরিচিত হয়ে উঠা হয়নি৷ সকালে মায়ের কাছে শুনেছিলো এই লোকটা আজ তার বাসায় থাকবে৷ কাল বিকেল নয়তো পরশু চলে যাবে নিজের বাসায়। সম্পূর্ণ অপরিচিত একটা লোকের সঙ্গে কিভাবে একঘরে দরজা আটকে থাকা যায় তা জানা নেই মাইশার। কিংবা এমন জেদী আর একগুঁয়ে লোকের সঙ্গে কিভাবে দাম্পত্য গুছাতে হয় তাও জানা নেই৷ হাতে চারদিন সময় ছিলো তাকে একটু হলেও জানার-বুঝার৷ কিন্তু সেই সুযোগ তো বর নামক এই কঠিন পদার্থ কাজে লাগায়নি৷ হয়তো সে চায়নি এমনটা হোক! এসব ভাবতে ভাবতেই লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো মাইশা৷ মেকি হাসিতে দুশ্চিন্তাগুলো আড়াল করার চেষ্টা করছে সে।

চেহারা পড়ার অবিশ্বাস্য ক্ষমতা আছে হাসিবের। চেহারা দেখেই তোতাপাখির মত ফটফট করে বলে দিতে পারে মনের মধ্যে চলতে থাকা কথাগুলো৷ আয়নায় ভেসে উঠা ঐ প্রিয় মুখটার হাসির আড়ালে কোন দুশ্চিন্তার ঝড় বয়ে যাচ্ছে সে কথা হাসিব স্পষ্ট জানে৷ মনে মনে খুব হাসছে আর আয়নায় ভেসে উঠা প্রিয়তমাকে বলছে,

– তোমাকে খুব আদুরে লাগে জানো? অকারণেই লাগে! তুমি হাসলেও লাগে, ঝগড়া করলেও লাগে আবার কাঁদলেও লাগে৷ এইযে এখন দুশ্চিন্তায় দীর্ঘশ্বাস ফেলছো, খুশি হওয়ার মিথ্যা নাটক করছো এখনও আদুরে লাগছে। ইচ্ছে হয় যখন তখন তোমাকে কাছে বসিয়ে আমার গালে তোমার গাল মিশিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকি। এখনও তাইই ইচ্ছে হচ্ছে। আমার না যখন তখন এই ইচ্ছে জাগে৷ তোমাকে একটুখানি, বেশি না কিন্তু ব্যস একটুখানি ছুঁয়ে দিতে কি ইচ্ছে হয়! আমি পারিনা যখন তখন একটু ছুঁয়ে দেখতে৷ মাথায় হাতুড়িপেটার মত যন্ত্রনা হতে থাকে। অদ্ভুত সব আচরণ করতে থাকি। লোকজন আমাকে আজকাল আধপাগল ডাকে৷ কি জ্বালা হলো বলো তো!

শাড়ীটা বদলে একটা শাওয়ার নিয়ে নাও। ফ্রেশ লাগবে।
– মেকআপ মুছে যাবে না?
– গেলে যাবে। সমস্যা কোথায়?
– সমস্যা নেই?
– না৷ কি সমস্যা হবে?
– কিন্তু আম্মু যে বলে গেলো! ছোট খালাও বলেছে।
– তোমার আম্মু আর খালা কি এই ঘরে বসে আছে? তারা দেখছে তোমাকে?
– না।
– যাও এখন৷ ফ্রেশ হয়ে আসো।

মাথায় আটকানো ওড়নাটা খুলতে গিয়ে থেমে গেলো মাইশা৷ ভীষণ শক্ত করে এঁটে দিয়েছে পার্লারের ঐ মহিলাটা৷ কিভাবে সহজে খোলা যায় সেটাই বারবার আয়নায় তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করছে। বিছানা ছেড়ে উঠে এলো হাসিব৷ এক মুহূর্তেই চুল থেকে ওড়নাটা খুলে মাইশার হাতে দিয়ে বললো,

– খুলতে পারছো না আমাকে বললেই তো পারতে৷

চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো মাইশা। হাসিব আবার বললো,

– মাথার উপর এই শক্ত পাহাড় বানাতে কে বলেছে? এই পাহাড় ভাঙতে তো সারারাত কেটে যাবে। আমার পুরো রাতটাই বরবাদ! গয়নাগুলো খুলে নাও। ভেঙে দিচ্ছি তোমার পাহাড়, বসো এখানে।

ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে তেলের বোতল আর চিরুনি হাতে নিয়ে টুলের পাশে দাঁড়িয়ে আছে হাসিব। খুব ধীরে ধীরে গয়নাগুলো খুলছে মাইশা৷ আয়নায় মাইশার চেহারা দেখতে পাচ্ছে সে৷ লজ্জায় জড়োসড়ো হয়ে যাচ্ছে মেয়েটা। হাত পা নাড়াতেও কি ভীষণ জড়তা! আয়নায় তাকিয়ে মুখ বাকিয়ে হাসছে হাসিব। বললো,

– কাঁথা এনে দিব মাইশা?
– কেন? কাঁথা কেন?
– লজ্জায় বেহুঁশ হয়ে যাচ্ছো। মনে মনে লুকানোর জায়গা খুঁজছো। একটা কাঁথা এনে দেই, কাঁথা মুড়ি দিয়ে বিছানায় শুয়ে থাকো।

চেহারা কুঁচকে এলো মাইশার। বললো,

– এতকিছু বুঝেন কেন আপনি?
– বুঝবো না? না বুঝলেও তো গাল ফুলিয়ে অভিযোগ করবে, আমার হাজবেন্ড আমাকে একদম বুঝে না।
– আপনি আমাকে সবসময় লজ্জায় ফেলে দেন। লজ্জা পাচ্ছি বুঝতেই পারছেন, এটা আমাকে বলে আরো লজ্জায় ফেলে দেয়ার কি দরকার? সেদিন সবার সামনে আমাকে কতকিছু শুনিয়ে লজ্জায় ফেলে দিলেন। আজ বিয়ের স্টেজেও ফেলেছেন৷

মাইশার মাথায় তেলের বোতল উপুড় করে এলোপাথাড়ি তেল ঢালছে হাসিব। হেয়ানপিনগুলো খুব সাবধানে খুলে নিতে নিতে বললো,

– হেয়ার স্প্রের বোতল কি পুরোটাই তোমার মাথায় ঢেলে দিয়েছে? কত জট পাকিয়েছে চুলের ভেতর! কতক্ষণে খুলব এই জট?

একটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেললো হাসিব। মাইশা বললো,

– আমার কাজিন আছে পাশের ঘরে৷ ওকে আসতে বলবো? ও হেল্প করতে পারবে।

অট্টহাসি হেসে উঠলো হাসিব। মুখ চেপে সেই হাসির শব্দ আড়াল করলো৷ মাইশার মাথায় ধাক্কা দিয়ে বললো,
– গাধা একটা! বাসর ঘরে কেউ কাজিনকে নিয়ে আসে?
– আমরা তো ভালো কাজ করছি৷ ও আসলে কি সমস্যা?
– সত্যিই! আমরা খুব ভাল কাজ করছি৷ কি নিষ্পাপ আমরা! তোমার আম্মু আর খালাকেও ডেকে আনি? আরো একটু হেল্প হবে।
– না, এত মানুষ লাগবে না৷ দুজন হলেই যথেষ্ট।
– চুপ করো মেয়ে। আমিই সেড়ে নিতে পারবো৷ একটু সময় লাগবে হয়তো।
– আমার চুল কিন্তু লম্বা। আপনার জট ছাড়াতে অনেক সময় লেগে যাবে৷
– জানি আমি তোমার চুল লম্বা৷ বহুদিনের ইচ্ছে ছিলো তোমার চুলগুলো বিছিয়ে সেখানে গাল পেতে শুয়ে থাকবো। ভেবেছিলাম আজ রাতেই ইচ্ছে পূরণ করে নিবো। আর তুমি চুলগুলোর কি বাজে দশা করেছো! কে করতে বলেছে এসব? তুমি হেভি মেকআপে কমফের্টেবল না আমি জানি৷ বেছে বেছে তোমার জন্য হালকা কাজের শাড়ী গয়না কিনলাম। আর তুমি সেগুলোর সঙ্গে আরো কতগুলো ভারী গয়না পড়েছো৷ ভারী গয়না তো আমি তোমাকে কিনে দিতেই পারতাম। দেইনি ইচ্ছে করে। আমি জানি এসব তোমার পছন্দ না৷ কার বুদ্ধিতে এসব করেছো বলো তো?
– ছোট খালার বুদ্ধি৷ গতকাল বাসায় এসে গয়না দেখে বললো খুব বেশি সিম্পল। বিয়েতো ভারী গয়না না পড়লে নাকি বউ বউ লাগে না৷ আম্মু উনার কথা শুনে গতকাল রাতেই খালাকে পাঠিয়ে গয়না কিনে আনিয়েছে। এই ভারী মেকআপ, হেয়ারস্টাইল এগুলোও খালারই ইন্সট্রাকশন৷
– কার্টুন দেখাচ্ছে তোমাকে। মুখ দেখে মনে হচ্ছে প্লাস্টিক পেইন্ট করা হয়েছে। মেজাজটাই খারাপ হয়ে গিয়েছে তোমাকে দেখে৷ তোমাকে বিয়েতে কেমন দেখাবে সেটা কল্পনাও করে রেখেছিলাম৷ কি চমৎকার লাগছিলো সেই কল্পনায়! তোমাকে দেখে চেনার উপায় আছে এটা তুমি? তুমিই বলো? আছে কোনো উপায়?
– আপনি ফটফট করে আমার মনে কথাগুলো বলে দিচ্ছেন৷ মেকআপ শেষে নিজেকে দেখে আমার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হয়েছিলো। মনে হচ্ছিলো যেন দু’গালে কেউ দশ কেজি বস্তা বেঁধে দিয়েছে। আমাকে দেখে মামী আর খালা কি খুশি! ওদের এত প্রশংসার মুখে আমি মুখ ফুটে কিছুই বলতে পারিনি৷
– আহা! কি জুলুমটাই না হলো তোমার সঙ্গে!
– ছোট থেকেই খালা আমার সঙ্গে জুলুম করে আসছে। খালার কথা শুনে আম্মুও জুলুম করে৷ আমাকে জোর করে ভারী মেকআপ করায়। ভারী কাজের জামা পড়ায়।
– পরীদের এত সাজতে হয় নাকি? পরীরা তো এমনিতেই সুন্দর। ওরা ছেঁড়া কাপড় পড়লেও সুন্দর দেখায়। এখন থেকে আর এসব সহ্য করতে হবে না। কেউ ভারী মেকআপ করতে বললে বলে দিও আমার হাজবেন্ড পছন্দ করে না। ব্যস, আর কেউ তোমাকে জোর করবে না।

আহ্লাদে বাকবাকুম করতে থাকলো মাইশা৷ পিছনে দাঁড়ানো এই বদ লোকটাকে হঠাৎ করেই বদ মনে হচ্ছে না৷ কি সুন্দর করে কথা বলে! আবার চুলের জটগুলোও ছাড়িয়ে দিচ্ছে। একদম ব্যাথা হচ্ছে না৷ মানুষটা কি ভালো! মনে মনে মাইশা জিজ্ঞেস করলো,

– এই কয়টাদিন কোথায় ছিলো আপনার এই ভালোমানুষী?

– একটা কথা বলো তো? খুব খারাপ মনে হয় আমাকে?

হাসিবের প্রশ্নের বিপরীতে কি উত্তর দিবে ভেবে পায়না মাইশা। কি করে কারো মুখের উপর তার বদনাম করতে হয় সেটা তার জানা নেই। আমতা আমতা করে বলে,

– না, খারাপ না তো। উমম…. ভালো। আপনি ভালোই।
– মিথ্যুক!
– আপনাকে আমার ভয় লাগে৷
– কেন? কি করেছি আমি?
– কোত্থেকে উড়ে উড়ে আমার সামনে চলে আসেন। এসেই আমার কান মলে দিয়ে যান, খোপার ফুল টেনে ছিঁড়ে ফেলেন, ভয়ংকর সব হুমকি ধমকি দিতে থাকেন। আমি নিরীহ মানুষ। এসব দেখলে ভয় পাবো না বলুন?
– এ্যাহ্! নিরীহ! আমার মতন শক্তপোক্ত মানুষটাকে প্রেমের জলে ডুবিয়ে মেরে ফেললে এরপরও বলছো তুমি নিরীহ!
-………………..
– চুপ করে থাকো কেন বলো তো? নিজ থেকে কিছু তো বলোই না, আমি কথা টেনে আনলেও কখনো কখনো চুপ করে বসে থাকো। আর যেগুলোর উত্তর দাও সেগুলো বোধ হয় নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে দাও। গলা থেকে আওয়াজ বের হতে চায় না। আমার দিকে তাকিয়ে উত্তর দাও না। বেশি কিছু তো চাচ্ছি না মাইশা, তোমার সঙ্গে একটু কথাই তো বলতে চাচ্ছি।
– আপনাকে আমি চিনি না৷ অপরিচিত কেউ হুট করে আমার জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা জায়গা দখল করে নিলো। আবার তার সঙ্গে একই রুমে আমি দরজা আটকে বসে আছি৷ আমার সবকিছু মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে৷ কি কথা বলব আপনার সঙ্গে? আপনার সঙ্গে কি ধরনের কথা বলা উচিত তাও তো আমি জানি না। কখনো তো প্রেমও করিনি। করলে হয়তো জানতাম কিভাবে কথা বলতে হয়!
– লোকজন তো সিনেমা দেখেও কিছু শিখে। এজন্যই তো সেদিন বারণ করলাম থ্রিলার দেখতে। এইসব হাবিজাবি দেখে করলার নিরামিষ হয়ে গিয়েছো।
– সেদিন বললেন আমার মন শক্ত৷ আজ বলছেন আমি করলার নিরামিষ। আপনি তো খুব প্রেম ভালোবাসা বুঝেন, তাহলে এই চারদিন কোথায় ছিলেন আপনি? এই কয়দিনে তো একটু হলেও চেনাজানা হতো!
– ইচ্ছে করেই বলিনি৷ ভেবেছিলাম সব কথা বিয়ের রাতে বলবো। কত কি প্ল্যান করেছিলাম আমি! আজ রাতে তোমাকে নিয়ে আমার বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিলো৷ সারারাত ঘুরতাম দুজন মিলে আর গল্প করতাম৷ সব তো তোমার এই চুলের জটই বরবাদ করে দিলো৷ কে দিবে ফেরত আমার এই আজ রাতের আনন্দটুকু? তোমার ঐ ষড়যন্ত্রকারী খালা?

খুশিতে চোখ চকচক করছে মাইশার। গভীর রাতে ঘুরে বেড়ানোর কি শখ ছিলো! সেই শখ পূরণের সুযোগ কখনো হয়নি৷ বাসায় এই আবদার করার সাহস কখনো হয়নি। যতবারই বাসায় এই আবদার জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ততবারই মায়ের বাসায় পড়া বাটার স্পঞ্জ স্যান্ডেল জোড়া চোখে ভেসে উঠেছে। আজ সেই শখ পূরণ হওয়ার এতবড় সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাবে তা মেনে নেয়া অসম্ভব! বাঁধভাঙা খুশিতে নিজের অজান্তেই হাসিবের হাত চেপে ধরলো মাইশা। বললো,

– আমি যাবো৷ খুলতে হবে না চুলের জট। আমি এই চুল নিয়েই যাবো। মাথা ওড়না দিয়ে ঢেকে নিবো।
– পৃথিবী থেকে এইসব হেয়ারস্টাইল ব্যান করা উচিত। নয়তো আমার মত ছেলেদের বিয়ের রাতের সুখটাই মাটি হয়ে যায় এই জট খুলতে খুলতে। জঘন্য!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here