অন্তর্লীন প্রণয় পর্ব ২

0
751

#অন্তর্লীন_প্রণয়
#সাদিয়া_মেহরুজ_দোলা
|পর্ব-০২|

-‘ উজমা কে আয়ন্তিকা? এসব কি বলছো?’

আয়ন্তিকা অহর্নিশের করা প্রশ্নের উত্তর দেয়না। নির্জীব রূপে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অহর্নিশের হাত এখনো তার উন্মুক্তমান পেটের মাঝে বিদ্যমান।ঠিক এক কারণে আয়ন্তিকা কোনো কথা বলতে পারছে না! পুরুষের স্পর্শ বরাবরই ওর পছন্দ নয়। কিন্তু এখানে তো অহর্নিশ তার স্বামী। তবে আয়ন্তিকা যেখানে বিয়েটাই এখনো হজম করতে পারছে না সেখানে অহর্নিশ কে স্বামী হিসেবে মেনে নেয়াটা খানিকটা কষ্টকর তার কাছে।

অহর্নিশ বড্ড বেশি বিরক্ত হয় এবার। সঙ্গে করে নিজের রাগান্বিত আভাসটাকে ফুটে ওঠে। নিজের বাম হাত যেটা আয়ন্তিকার পেটে অবস্থিত সেই হাতটাকে আরেকটু শক্ত করে তোলে! তার আর আয়ন্তির মাঝে থাকা অবশ্যিষ্ট ফাঁকা জায়গটুকু ভরাট করে তোলে।
অহর্নিশ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

-‘ আমি তোমায় কিছু আস্ক করেছি আয়ন্তিকা! তুমি কি তা শুনতে পাওনি? ‘

আয়ন্তিকা লম্বা দম ফেলে। সে এবার মনে সাহস জুগিয়ে অহর্নিশের হাতে চিমটি দেয় সজোরে। ব্যাথায় চোখমুখ হালকা কুঁচকে নিয়ে ফের স্বাভাবিক হয়ে যায় অহর্নিশ! বাম হাতটা সন্তপর্ণে সরিয়ে নেয় সে আয়ন্তিকার পেট হতে!
সঙ্গে সঙ্গে ছিটকে দূরে সরে যায় আয়ন্তি। আহত দৃষ্টিপাত তার। শাড়ী ঠিক করে নিয়ে পরিপাটি হয়ে দাঁড়ায়।

অহর্নিশ ঝাঁঝালো দৃষ্টিপাত দেয় আয়ন্তিকার দিকে। তা দেখে খানিকটা হৃদগহীন থেকে ভড়কে যায় আয়ন্তি।
অহর্নিশ চিবিয়ে বলল,

-‘ কি প্রবলেম তোমার? হাতে ব্যাথা দিলে কেনো?’

আয়ন্তিকা থুতনি চিবুক স্পর্শ করিয়ে মিনমিন সুরে বলল,

-‘ আপনি আমায় এভাবে স্পর্শ করলেন কেনো হুট করে? মানলাম আপনি আমার স্বামী। কিন্তু বিয়েটা আমি এখনো মানতে পারিনি। ‘

অহর্নিশ ঠোঁট বাকিয়ে একটু খানি সামনে আগায়। ব্যাবধান একটু ঘুচিয়ে নেয় তার আর আয়ন্তিকার মধ্য হতে! প্যান্টের পকেটে দুহাত পুরে নিয়ে সে জোর গলায় বলল,

-‘ বিয়ে মানো আর না মানে আয়ন্তিকা।তুমি কিন্তু আমার থেকে মুক্তি পাচ্ছো না, মাইন্ড ইট! আমার থেকে দূরে সরার কথা মাথায় আনলে আরনাফ এর আসল রূপ দেখবে। আমার আসল রূপটা অতোটা মধুর নয়! ‘

আয়ন্তিকা মাথা উঁচু করে। অহর্নিশের বলা কথা গুলো কখনোই সে বুঝে না। লোকটা বেশ রহস্য নিয়ে রেখেছে নিজ মধ্যিখানে। তার ছোট্ট মাথায় অহর্নিশের বহুরূপী রূপটা ঠিক নিতে পারেনা। ১৫ বছর হলেও সঠিক এবং যথেষ্ট বুদ্ধি তার মাঝে এখনো জন্মগ্রহণ করেনি। ভাবনা কালে অহর্নিশের গম্ভীর কন্ঠস্বর কানে আসে আয়ন্তির। অহর্নিশ বলল,

-‘ আমি কি তোমার অপছন্দের তালিকায় আয়ন্তিকা? ‘

আয়ন্তিকা একবার পূর্ণ দৃষ্টিপাত অহর্নিশের দিকে দেয়। কোনো কিছু না ভেবে সে বলল,

-‘ জি। আপনি আমার অপছন্দের তালিকায় সর্বোর্ধ্বে অবস্থিত। ‘

অহর্নিশ ঠোঁট বাকিয়ে হাসে। শিউরে উঠলো যেন আয়ন্তিকা এই উদ্ভট হাসি দেখে! পায়ের গতিবেগ বাড়িয়ে অহর্নিশ তার সামনে এসে দাঁড়ায়। পকেট হতে দুহাত বের করে আয়ন্তিকার গাল স্পর্শ করলো সে! ঘাড় অনেকটা নিচু করে সন্তপর্ণে অহর্নিশ তার মাথা নিয়ে যায় আয়ন্তিকার অধর যুগলের দিকে।
আয়ন্তিকার হালকা খয়েরী রঙের ঠোঁট জোড়ায় অহর্নিশ তার ঠোঁট ছোয়ায় আলত করে! পরক্ষণে সরে দাঁড়ায়। মুখটাকে বহুরূপী করে তুলে সে বলল,

-‘ ফাইন! আমাকে তোমার পছন্দ নয় ডাজেন্ট ম্যাটার! সঠিক সময়ে সঠিক অনুভূতি জাগ্রত হয়ে যাবে। নাউ লিভ! ‘

শেষোক্ত কথাটি অনেকটা জোরে বলল অহর্নিশ। আয়ন্তিকা থেমে থেমে কেঁপে উঠলো! একেই অহর্নিশের করা প্রথম কর্মে সে আশঙ্কিত, দ্বিতীয় করা কর্মে সে নিস্তব্ধ! সবকিছু ঠিক তার মাথার ওপর দিয়ে শো শো করে চলে যাচ্ছে। হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাঁদতে পারলে আয়ন্তিকার শান্তি মিলতো হয়তোবা।

-‘ এই মেয়ে যাচ্ছোনা কেনো? বের হতে বলেছি না রুম থেকে! গেট আউট! ‘

ঝাঁঝালো পূর্ণ কন্ঠস্বর। রেগে ফোসফাস করে অহর্নিশে চেঁচিয়ে বলল ! তার চোখমুখ লাল।

আয়ন্তিকা অশ্রুপূর্ণ দৃষ্টিপাত একবার অহর্নিশের দিকে দিয়ে বেড়িয়ে আসে। অহর্নিশ কে তার কাছে একজন মানষিক রোগী লাগছে! এতো অল্প সময়ে কারো মুড এতো ফাষ্ট চেঞ্জ হতে পারে।
শেষোক্ত ব্যবহার গুলো আয়ন্তিকার পরিচিত। এ কারণেই সে কিছুটা অহর্নিশ কে ভয় পায়। তবে শুরুর দিকে যা হলো সেসব কি ছিলো?

.

গাড়িতে বিমূঢ় মুখশ্রী নিয়ে বসে আছে আয়ন্তিকা। চোখের কার্নিশে চকচক করছে পানি! বাবা – মা পরিবারের থেকে বিদায় নিয়ে মাত্রই সে এসে বসলো অহর্নিশের গাড়িতে। ‘পরিবার কে ছাড়া থাকতে হবে এখন থেকে ‘ এই বাক্যগুলো এতো ভারী লাগছে তার কাছে বলার নয়। প্রথমে সে যেতে চায়নি। খুব বেশি কান্নাকাটি করেছে! তবে পরিশেষে কোনো লাভ হয়নি। নানুমনির এক ধমকে একদম শান্ত হয়ে গেছে আয়ন্তিকা।

খট করে শব্দ হওয়াতে পাশে তাকায় আয়ন্তিকা। অহর্নিশ এসেছে! ড্রাইভিং সিটে বসে সে এক নজর তাকায় আয়ন্তিকার দিকে। পরবর্তীতে গাড়ি স্টার্ট দিতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।

অহর্নিশ কে দেখা মাত্র আয়ন্তিকা একটু চুপসে যায়। সিটের সাথে একদম মিশে বসে পড়ে! রিভলবার সম্পর্কিত কথাটি সে কাওকে বলতে পারেনি। সুযোগটাই হয়নি! মন গহীন থেকে পিষে গিয়েছে সে। বারংবার মনে হয়েছে অহর্নিশ খুব বড় ধরনের একজন গুন্ডা নয়তোবা মাফিয়া হবে নিশ্চিত! আয়ন্তির ভাবতেই কান্না পায় শেষে তার বিয়ে এমন লোকের সাথে হলো?

-‘ সিটবেল্ট লাগাও আয়ন্তিকা! ‘
…….. (নিশ্চুপ আয়ন্তিকা)

-‘ তুমি কি আমার কথা শুনতে পাওনি আমি কি বলেছি? সিটবেল্ট লাগাও! ‘
ধমকের সুরে অহর্নিশ বলল। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। আয়ন্তিকা ঠিক আগের মতোই বসে আছে! রাগ তরতর করে তরতাজা হয়ে যায় অহর্নিশের। তবে সে নিশ্চুপ থাকে। এখন কিছু বলা মানেই বিপদ। আয়ন্তিকার সামনে অহর্নিশ তার আসল তিক্ত রূপটা আনতে চায়না!

অহর্নিশ গাড়ি স্টার্ট দেয়। আয়ন্তিকা ত্যাগ করে স্বস্তি মূলক শ্বাস! অহর্নিশের কথা সে মান্য করবে না বলে পণ করেছে। কেনো মানবে এই ভয়ংকর মানবের কথা? অযথা তাকে শুধু শুধু ধমক দেয়।

মাঝপথে এসে গাড়ি থেমে যাওয়াতে আয়ন্তিকা একটু বিচলিত হয়। ডানে তাকিয়ে দৃষ্টিপাত দেয় অহর্নিশের দিকে! অহর্নিশ বাঁকা হাসছে। সেই হাসি আরো বিচলিত করে তাকে। হচ্ছেটা কি?আয়ন্তিকা তটস্থ হয়ে বলল,

-‘ গাড়ি থামালেন যে?’

অহর্নিশ কিছু বলল না।
এগিয়ে আসলো আয়ন্তিকার সন্নিকটে। আয়ন্তির কোমড়ে হাত রেখে টান দেয় সে! হেঁচকা টান! আয়ন্তিকা কে টেনে এনে সে নিজের কোলে বসিয়ে দিয়ে সন্তপর্ণে তার বলিষ্ঠ একহাত স্থাপন করে আয়ন্তির কোমড়ের দিকটায়। নিজেসহ আয়ন্তিকা কে নিয়ে সিটবেল্ট লাগিয়ে বুড়ো আঙ্গুলটা বসিয়ে দেয় আয়ন্তিকার গালে!

আয়ন্তিকা ছটফট করে। বিপাকে পড়ে সে বাধ্য হয় কথা বলতে অহর্নিশ এর সাথে। অস্থিরতা মিশ্রিত কন্ঠে সে বলল,

-‘ আরেহ্ আজব! কি করছেন? আমাকে ছাড়ুন। ‘

মিনমিন কন্ঠস্বর। অতি নিম্ন ছিলো তার আওয়াজ।উঁচু গলায় অহর্নিশের সাথে কথা বলার সাহসটা তার জন্মেনি।
অহর্নিশ ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,

-‘ সিটবেল্ট লাগাতে বলেছিলাম না বারবার? ‘

আয়ন্তিকা কন্ঠে কাতরতা আভাসটা টানলো। করুণ কন্ঠে বলল,

-‘ সিটবেল্ট না লাগালে কি হয়েছে? ‘

-‘ এক্সিডেন্ট হলে আঘাত লাগতো বেশি।এমনকি মারাও যেতে পারতে। ‘

-‘ তো?’
নিম্নতর কন্ঠ আয়ন্তির।

অহর্নিশ আরো শক্ত করে চেপে ধরে আয়ন্তিকা কে। কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,

-‘ নতুন বিয়ে করলাম। বউকে আদর না করেই মরতে দেই কি করে? তাছাড়া… নিজের হার্টবিট কে কে আঘাত করে শুনেছো?’

অহর্নিশের শেষোক্ত কথাটা বোধগম্য হলো না আয়ন্তিকার। তবে সে অহর্নিশের প্রথম কথাটা সে রেগে গেলো প্রচন্ডরূপে! এই লোক এতো বাজে?লজ্জায় লাল হওয়া গালদুটো এখন রাগের বসে লাল হয়ে আছে। অহর্নিশের তাতে কোনো মাথা ব্যাথা নেই। তিনি ঠোঁট কামড়ে হেঁসে গাড়ি স্টার্ট দেন।

.

স্বচ্ছ, শুভ্র রঙের একটা এপার্টমেন্টের সামনে এসে থামে অহর্নিশের গাড়ি। এতোটা লম্বা পথ! অস্বস্তি, অশান্ততা, মন হতে অস্থিরতা সব কিছু নিয়ে আয়ন্তিকার নাজেহাল অবস্থা! অহর্নিশের কোলে বসে থাকতে তার যে চরম অস্বস্তি হচ্ছে তা তার মুখেই প্রকাশ পাচ্ছে। গাড়ি থেমে যাওয়াতে একটু স্বস্তির হদিস খুঁজে সে!

আয়ন্তিকা কে নিজের কোল থেকে নামিয়ে অহর্নিশ নেমে পড়ে গাড়ি থেকে। সেই সাথে নেমে পড়ে আয়ন্তি! এপার্টমেন্ট এর গেট হতে একজন লোক তাদের গাড়ির দিকে ছুটে এসে ব্যাগপত্র নামাতে শুরু করে। আরেকজন ব্যাক্তিও সাথে এগিয়ে আসে। দেখে মনে হচ্ছে দারোয়ান হবে। তিনি দাঁত কেলিয়ে বলল,

-‘ স্যার আইছেন? শরীর ভালা আপনের?’

অহর্নিশ স্নান হেঁসে বলল,

-‘ ভালো আছি চাচা।আপনার কি অবস্থা? কেমন আছেন?’

-‘ আছি বাবা ভালা আল্লাহর রহমতে। ‘

দারোয়ান এবার আয়ন্তিকার দিকে দৃষ্টিপাত স্থাপন করে। তিনি স্বমঃস্বরে বললেন,

-‘ তা স্যার এডা কিডা?আপ্নের বুইন (বোন)?’

আয়ন্তিকা অহর্নিশের দিকে তাকায়। অহর্নিশের মুখপান স্বাভাবিক। সে আড়ষ্ঠ স্বরে বলল,

-‘ জি চাচা। আমার কাজিন ও! গ্রামে ছিলো। ঢাকায় থেকে পড়তে এসেছে! ‘

মন গহীনের কোথাও সুচালো আঘাত অনুভূত করলো আয়ন্তিকা। আহত দৃষ্টিপাত তার। তবে সে নিজেকে ধাতস্থ করে! এটাই স্বাভাবিক। অহর্নিশ ভাই কে তার হারে হারে চেনা আছে।

দারোয়ান আর অহর্নিশ এর কথার মাঝে কয়েক জন ছেলে এসে দাঁড়ায়। তাদের মুখে চকচকে ভাব।তাদের মধ্য হতে একজন বলল,

-‘ অহর্নিশ ভাই আপনি আসছেন?কতদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলাম। আজ পার্টি অফিসে আসবেন ভাই?’

অহর্নিশ গলা খাকাড়ি দেয়। চোখ তীক্ষ্ণ করে ছেলে গুলোকে ইশারা করে ‘আয়ন্তিকা ‘ কে দেখায়! সঙ্গে সঙ্গে তারা একদম চুপসে যায়। অহর্নিশের কাছে একজন ছেলে এগিয়ে গিয়ে ফুসুর ফুসুর করে কথা বলে সবাই মিলে যায়। সকল ঘটনায় আয়ন্তিকা প্রশ্নোওর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চেয়ে ছিলো। ‘পার্টি অফিস ‘ শব্দটা নতুন লাগলো তার কাছে! জিজ্ঞেস করার সুযোগ হলোনা কোনোকিছুই।

লিফট দিয়ে ১৩ তলায় এসে নামে তারা দুজন। একটা ফ্লাটের সামনে এসে তালা খুলে ঢুকে অহর্নিশ। সঙ্গে করে আয়ন্তিকা পিছে আসে! ফ্লাটটা অন্ধকার। গুমোট অবস্থায় এক বিশ্রি গন্ধ বেড়িয়েছে। এরকম গন্ধ সাধারণত অনেকদিন যাবৎ বাসা বদ্ধ থাকলে হয়।

অহর্নিশ লাইট অন করে ব্যাগগুলো সাইডে রাখে।ফ্লাটটা বেশ বড়! আট, দশটা রুম তো হবেই। সৌখিন রূপে সাজানো চারিদিক। ফাঁকা ফ্লাট দেখে একটু চমকায় আয়ন্তিকা। বড় মামা আর মামি তারা কই? আর্নিয়া আপু?সাহির ? এরা কোথায়? কৌতূহল, উত্তেজনা দমাতে না পারে আয়ন্তিকা হাত মোচড়াতে মোচড়াতে বলল,

-‘ বড় মামা, মামি কোথায় তারা? ‘

অহর্নিশ সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বলল,

-‘ তারা এখানে থাকেননা! মিরপুর থাকেন। আমি একা থাকি এই ফ্লাটে। মিরপুর থেকে অফিস দূরে হয় তাই এখানে আলাদা থাকি! ‘

আয়ন্তিকা বিষ্ফোরিত চাহনিতে তাকায় অহর্নিশের পানে! হৃদ গহীন থেকে বড্ড ভীতিগ্রস্ত হলো সে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম এসে জমেছে। তারমানে এই ভয়ংকর মানবের সাথে তার একা থাকতে হবে?

_______________________

সবেমাত্র পান হাতে নিয়েছিলো আয়ন্তিকার নানি নাহিয়া আহমেদ। তাৎক্ষণিক ভাবে ফোন আসায় তিনি বেশ বিরক্তবোধ করলেন! পান হাত থেকে স্টিলের থালায় রেখে দিয়ে ফোন রিসিভ করলেন তিনি। তৎক্ষনাৎ অপাশ থেকে কেও চাপা কন্ঠে বলল,

-‘ নানীমা আমি, শাফি! ‘
-‘ হ ক! কি কইবি?’
-‘ বিয়ে কি দিয়ে দিছেন? ‘
-‘ হ। অহর্নিশ আয়ন্তিকারে ঢাকায় লইয়া গেছে গা। ‘

শাফি দুঃখবোধ করলো। টান টান স্বরে বলল,

-‘ আমাদের কাজের মাঝে আয়ন্তিকার প্রাণ নিয়া টানাটানির কি দরকার আছিলো নানীমা?অহর্নিশের কাছে ওরে ক্যান বিয়া দিলেন? ওর জীবনটা ঝুঁকিতে ফালানোর দরকার আছিলো?’

শাফির কথায় ভ্রু কুঁচকায় নাহিয়া আহমেদ। পান মুখে নিয়ে তিনি বললেন,

-‘ দরকার আছিলো দেইখা বিয়া দিছি। তোর এতো দরদের ক্যারে আয়ন্তির লেইগা(জন্য)? ‘
-‘ দরদ কই নানীমা? আমি তো এমনেই কইতাছিলাম। ওর তো কোনো দোষ নাই। ‘

নাহিয়া বেগম পান চাবিয়ে বললেন,

-‘ তুই কি এসব কওয়ার লেইগা ফোন দিছস শাফি?’
-‘ নাহ! আমি তো ফোন দিছিলাম উজমার লাই(জন্য), উজমার কি করুম?’
-‘ ওরে মাইরা ফ্যাল্! ‘
ভাবান্তর ছাড়া বলল নাহিয়া আহমেদ। অতঃপর মশগুল হলেন তিনি পান চিবুতে।

শাফি চমকায়! আরো একটি নিষ্পাপের প্রাণ। কষ্টে জর্জরিত হয় তার বক্ষ পিঞ্জর। তবে সে নিরুপায়। কাতর কন্ঠে বলল,

-‘ আইচ্ছা নানীমা। মাইরা ফেলতাছি ওরে! ‘

.

গোসল শেষে বের হয় ওয়াশরুম থেকে আয়ন্তিকা। সামনে দৃষ্টিপাত দিতে হীম রূপ ধারণ করে তার শরীর! সজোরে চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো সে। সেন্সলেস হওয়ার আগে সে অস্ফুটস্বরে কেঁদে উঠলো যেন!

চলবে…

[]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here