অন্তঃপুরে দহন পর্ব ১৩

0
377

#অন্তপুরে_দহন (পর্ব-১৩)

#আরশিয়া_জান্নাত

ওমর কিছু বলার আগেই অনীল বের হয়ে গেল। ওমর তার বোনের পাশে বসলো। পরম স্নেহে মাথায় হাত রেখে বলল, কেমন লাগছে এখন?

অন্তরা চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলল,ভাইয়া আমাকে ওরা শেষ করে দিয়েছে। আমি কতবার বলেছি আমার এতো বড় সর্বনাশ না করতে ওরা একটুও শোনেনি বরং একসঙ্গে সবাই,,,,,,,,, আমি কেন বেঁচে গেলাম? এই কলঙ্কিত শরীরটা নিয়ে আমি কিভাবে বাঁচবো ভাইয়া?তুমি জানো আমি তখনো ভাবছিলাম আমার এই অবস্থা যখন বাবা জানবে কি হবে। অথচ দেখ আমার এই অবস্থা হয়েছে আমার বাবার জন্য!

কেন তুই এমন বলছিস। কি হয়েছে খুলে বল ভাইয়াকে।

ভাইয়া ওরা যখন আমাকে ফেলে চলে যাচ্ছিল তখন আমি প্রায় অজ্ঞান হবার অবস্থায়। তখন ওখানে নতুন একজন এসে বলছিল, তোদেরকে বলেছিলাম রেইপ করতে মেরে ফেলতে বলিনাই। ওর বাপে যেমন অন্য মেয়েদের চু* ওর মেয়েরেও সেরকম চু***তে চাইছিলাম। বাই*ঞ্চো*দ এইবার বুঝবো কেমন লাগে নিজের আপন কেউ ধ*র্ষি*তা হলে। এখন দম আছে নাকি মরছে?

দম আছে ওস্তাদ কিন্তু বাঁচবো কিনা কইতে পারি না।

অ*জা*তের বাচ্চা। দূর হ চোখের সামনের তে। বাইছা বাইছা সব কু*ত্তারে সঙ্গে আনছিলি? জা*নোয়ারের দল (কয়েকটা থাপ্পড়ের শব্দ)

ওস্তাদ চেতেন ক্যা ইতি মরলেও কি? আপনার দুঃখ পাওনের দরকার নাই বাপের শাস্তি বেটি পাইছে। আফসোস করেন ক্যান? মরলে আরো ভালা জীবিত থাকলেই অশান্তি।

তোর ছোট মাথায় ঐটা ঢুকবেনা। ও বেঁচে থাকলেই অনীলের কলিজা পুড়বে, সমাজ যখন ছিঃ ছিঃ করবে,সমাজে মুখ দেখাইতে পারবেনা তখন আমার শান্তি লাগবে। শালার বহুত ক্ষমতার দেমাগ দেখি এইবার কি বা*টা ছিড়তে পারে।
অন্তরা হিচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতে বলল,আমরা ছোটবেলায় যা ভাবতাম তাই সত্যি ছিল রে ভাইয়া মা আমাদের নয়ছয় বুঝাতো আমরাও তা সত্যি ভেবেছি। আজ ওদের পাপের শাস্তি আমি পেয়েছি ভাইয়া। আমায় কেন হসপিটালে ভর্তি করেছিস। মরে যেতে দিতি। এই জীবন রেখে আমি কি করবো?

অনীল কপালে হাত দিয়ে দ্রুত কিছু চিন্তা করছে। কি এমন ঘটেছে যে তার মেয়ে তাকে এভাবে বলল। সেদিন ওমরও বেয়াদবী করেছে, আজ আবার অন্তরা না না এভাবে নিজের মানসম্মান খুইয়ে যেতে দেওয়া যাবেনা। দ্রুত একটা ব্যবস্থা নিতে হবে। অনীল চায়না কেঁচো খুড়তে গিয়ে সাপ বেড়িয়ে আসুক। তাই সে দ্রুত তার বন্ধু পুলিশ কমিশনারকে কল করে বলে অন্তরার কেইসটা উইথড্র করতে। কিন্তু কমিশনার তাকে এমন একটা নিউজ দিল যা সে কল্পনাও করে নি,,,,



দেখো নাহিদ তোমার মহানুভবতাকে আমি সম্মান করি। তুমি যে এমন কঠিন পরিস্থিতেও আমার বোনের সঙ্গ ছাড়নি এ আমাদের জন্য সৌভাগ্যের বটে। কিন্তু ভাই আমার বোনটা যে আগের মতো নেই।উন্নত চিকিৎসা করিয়ে ওর শারীরিক ক্ষত দূর করা গেলেও ও মেন্টালি যে ট্রমাটাইজ হয়েছে আমি জানি না ও বিয়ে নামক কঠিন দায়িত্ব পালন করার মতো অবস্থায় আছে কি না।তাছাড়া আমি পার্সোনালী ওকে সমাজের মানুষ কিংবা আত্মীয়স্বজনদের ফেইস করাতেও চাইছি না। আমি তো ঠিক করেছি ওকে অন্য কোথাও নিয়ে যাবো,,

ভাইয়া আপনার মনের অবস্থা আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু বিশ্বাস করুন অন্তরা আমার কাছে প্রথমদিনের মতোই শুভ্র। যা ঘটেছে এটা জাস্ট একটা দূ্র্ঘটনা। আমি জানি এর প্রভাব সহজে দূর হবে না। তবে আমি ওর পাশে থাকতে চাই। এমনিতেও আমাদের প্ল্যান ছিল নিউইয়র্ক চলে যাওয়ার। আমি চাইছি অন্তরাকে নিয়ে যেতে। ওখানে তো আর কেউ থাকবেনা ওকে এসব নিয়ে ঘাটতে। প্লিজ ভাইয়া আপনি আর দ্বিমত করবেন না। আই প্রমিজ আমি ওর সম্পূর্ণ খেয়াল রাখবো।

তোমার ফ্যামিলি রাজী আছে?

মিথ্যা বলবোনা মা প্রথমে আপত্তি করলেও বাবা তাকে বুঝিয়েছেন। এখানে অন্তরার কোনো দোষ নেই ওকে শাস্তি দেওয়া অন্যায় হবে। তাই মা আর অমত করেননি।

ওমর তবুও দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে রইল। সে নাহিদকে ভরসা করবে নাকি করবে না?
___________
লুকোচুরি লুকোচুরি গল্প
তারপর হাতছানি অল্প
চায় চায় উড়তে উড়তে
মন চায় উড়তে উড়তে,,,,,

তাইয়্যেবা ছাদের রেলিং এ পা ঝুলিয়ে বসে গান গাইছে। আকাশে দলে দলে পাখিরা ফিরে যাচ্ছে আপন নীড়ে। তাইয়্যেবা গাইতে গাইতেই উদাস হয়ে ভাবে পাখির ও নিজের ঘর আছে। দিনশেষে সেখানে ফিরে যাওয়ার তাড়া আছে। আমার কেন নাই?
এত্ত বড় পৃথিবী অথচ একটা আপন মানুষ নাই,,
অবচেতন মন খারাপের সময় মানুষ তার সবচেয়ে পছন্দের মানুষকে নিয়ে ভাবতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তাইয়্যেবাও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু আজকাল সে তার নিজের প্রতি এতটাই ফেডাপ যে ওমরকে ভাবতেও সাহসে কূলোয় না। ওমরের বোনের ইনসিডেন্টটা তাইয়্যেবা বেশভালো করেই জানে। তবুও যোগাযোগ করেনা পাছে ওমর অস্বস্তিতে পড়ে যদি? কিংবা ভাবে অনুগ্রহ করতে গেছে? তাইয়্যেবার ইচ্ছে হয় এই কঠিন সময়ে ওমরের পাশে দাঁড়াতে কিন্তু কোথায় যেন অনেক বড় একটা প্রাচীর তাকে আটকে রাখছে। আচ্ছা ওমর কি পারবে না সেই প্রাচীর টপকে তাকে উদ্ধার করতে? নাকি কোনোদিন জানবে না সেই অদৃশ্য রহস্য?

শামীমা পড়েছে মহাবিপদে। একপাশে তার সন্তান আরেকপাশে তার স্বামী। প্রায় ত্রিশ বছরের সংসার জীবনে শামীমা কত ঝড় তুফান সামলে এসেছে, অথচ এই নিরব স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটেনি। অনীল বা ওমর কেউ তাকে কিছু না বললেও কেয়ার টেকার মনসুরা তাকে জানিয়েছে বাপবেটার মাঝে ঘটা তর্ক বিতর্কের কথা। ওমরটা যেন হুট করে বড় হয়ে গেল।দায়িত্ববান ভাইয়ের মতো বোনকে সামলানোর দৃঢ় পণ নিয়েছে। তাকে অবধি বেশিক্ষণ অন্তরার পাশ ঘেষতে দেয় না তার ধারণা শামীমা সমাজের কথা বলে বলে অন্তরার মনোবল নষ্ট করবে। তাছাড়া জ্ঞান ফিরতেই অন্তরা যা বলেছে তা নিয়ে শাসন করে যদি!
ওদিকে অনীলও নিরব হয়ে আছে। এতোকিছুর মাঝেও তার কোনো হম্বিতম্বি নেই। তার এই নিরবতা শামীমাকে আরো ভাবিয়ে তুলছে। কি ঘটছে তার সংসারে? একই পরিবারের সবার মাঝে এ কেমন দূরত্ব? শামীমা সময়ের ওপর সব ছেড়ে দিয়েও স্থির হতে পারে না।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here