অনুরাগে অনুরক্তি শেষ পর্ব

0
2159

#অনুরাগে_অনুরক্তি
||শেষপর্ব||
– ঈপ্সিতা শিকদার
“তুমি এখানে কী করছো? আমার সংসারটা শেষ করে শান্তি হয়নি তোমাদের?” ব্যথিত কণ্ঠ সায়ানের।

অনুরক্তি তখনও নিস্তব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিন্তু আমের বেশ বুঝতে পেরেছে কী হচ্ছে এখানে।

“Look Mr. whatever you are, stop your nonsense. Your marriage is destroyed because of your deeds, don’t blame us. (দেখুন মিস্টার আপনি যাই হোন না কেন, আপনার বাজে কথা বন্ধ করুন। আপনার কৃতকর্মের কারণে আপনার বিবাহ নষ্ট হয়ে গেছে, আমাদের দোষারোপ করবেন না।”

সায়ান ও আমেরের কথাবার্তা শুনে অবাক হয়ে যায়। কৌতূহলী গলায় প্রশ্ন করে,
“Do you guys know each other? And Shayan, why are you blaming her for our divorce? Do you know her? (তোমরা কি একে অপরকে চেনো? আর সায়ান, আমাদের ডিভোর্সের জন্য ওকে দোষ দিচ্ছ কেন? তুমি কি তাকে চেনো?”

অনুরক্তির ধারণা অনুযায়ী ততোটা বিচকিত হয় না সায়ান এমার প্রশ্ন। হয়তো যার ভয় ছিল, তা পূর্বেই সম্পূর্ণ হওয়ায়।

“Yeah, she is my…” (হ্যাঁ, সে হলো আমার…)

তাকে বাক্য সম্পূর্ণ করতে না দিয়েই প্রকৃতির প্রতিশোধের স্বাদ সদ্য পাওয়া তরুণী ছটফট বলে উঠে,
“I am his nobody. I am nothing to him. Just his ex wife’s lawyer was my boss. We were actually handling his ex wife’s citizenship process and their divorce case.(আমি তার কেউ নই। আমি তার কাছে কিছুই না। শুধু তার প্রাক্তন স্ত্রীর উকিল ছিলেন আমার বস। আমরা আসলে তার প্রাক্তন স্ত্রীর নাগরিকত্ব প্রক্রিয়া এবং তাদের বিবাহবিচ্ছেদের মামলা পরিচালনা করছিলাম।)”

“Oh. Whatever! Cut the crap! Let’s do what we came here for.(ওহ! যাই হোক! ফালতু কথা কাটো! আমরা যে জন্য এখানে এসেছি সেটাই করা যাক।”)”

“There’s nothing much to discuss. As far as I know it is a mutual divorce and you have also mutually settled everything. Just wanted us to do everything formally. So kindly tell what you decided about the property distribution, alimony and child support or custody? (খুব বেশি আলোচনা করার কিছু নেই। আমি যতদূর জানি এটি একটি পারস্পরিক বিবাহবিচ্ছেদ এবং আপনিও পারস্পরিকভাবে সবকিছু মিটিয়ে ফেলেছেন। শুধু চেয়েছিলেন আমরা সবকিছু আনুষ্ঠানিকভাবে করি। তাই শুধু করে বলুন আপনি সম্পত্তি বণ্টন, ভরণপোষণ এবং শিশু সহায়তা বা হেফাজতের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?)”

“What’s to tell about it? Everything will happen according to the prenup agreement. He lied to me. He was already married. So 80% of his assets and money will be mine with our mutual funds. Obviously I will get the custody of my son. Not some kind of cheater would! Child support and alimony would be according to the basic rules. (এটা সম্পর্কে বলার কি আছে? প্রিন-আপ চুক্তি অনুযায়ী সবকিছু ঘটবে। সে আমাকে মিথ্যা বলেছে। সে আগেই বিবাহিত ছিল। সুতরাং তার সম্পদ এবং অর্থের 80% আমাদের মিউচুয়াল ফান্ডের সাথে আমার হবে। অবশ্যই আমি আমার ছেলের হেফাজত পাব। কোন ধরনের প্রতারক পাবে না! শিশু সহায়তা এবং ভরণপোষণ সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী হবে।)”

আর সহ্য করতে পারে না যুবক। চেয়ার ছেড়ে উঠে বাড়ায় সে। তীব্র হতাশা ও অসহায়ত্ব নিয়ে শুধায়,
“I think there isn’t much work for me. So I am going. Please send the papers to my address. (আমি মনে করি আমার জন্য খুব বেশি কাজ নেই। তাই আমি যাচ্ছি। দয়া করে আমার ঠিকানায় কাগজপত্র পাঠান।)”

কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে যায় সায়ান। অনুরক্তি এমা থেকে আরও নানা বিষয় নিয়ে কথা বলে। এমা মেয়েটা বেশ বন্ধুত্বসুলভ। তবে একটা ব্যাপারে বেশ অবাক হয় অনুরক্তি। একজন সদ্য প্রতারণার শিকার নারী বা সদ্য সংসার ভাঙতে চলা নারী এতোটা স্বাভাবিক, প্রফুল্লহৃদয়ে কী করে? না আছে রাগ, না কষ্ট, বরং মনের আনন্দ মুখে ফুটছে।

“I am really amazed after watching you. Most of the ladies come to us for divorce, they are either angry or emotional. But you are looking really happy.(আপনাকে দেখার পর আমি সত্যিই মুগ্ধ। বেশিরভাগ মহিলাই বিবাহবিচ্ছেদের জন্য আমাদের কাছে আসেন, তারা হয় রাগান্বিত বা আবেগপ্রবণ। কিন্তু আপনাকে সত্যিই সুখী দেখাচ্ছে.)”

শব্দ করে হেসে দেয় এমা। বিদেশিনী শেতাঙ্গ নারীর প্রাণখোলা হাসি বড্ড বেশিই কৌতূহলী করে তুলে অনুরক্তিকে। তার মনে হচ্ছে এই নারীটির কিছু তো ভিন্ন সত্য আছে।

“”Something you were waiting for very long and then get it without any hardship. Won’t you be happy? You are looking like a nice lady and you are my lawyer. So let me split it to you. Actually I am seeing someone else for 3 years now. Really wanted to get the divorce. But couldn’t take it because my husband was way more richer than my current boyfriend. I can’t think of leaving this lavish life and live in my old life where I had to work day and night just to make the ends meet.

But when his lie came out and he is ashamed and consider himself guilty. I didn’t have to do anything. Just a little acting of being hurt and asking for the divorce. Considering himself guilty, he just agreed to what I said. Now almost everything he own is mine. And our child is my ATM card, he is gonna give a lot of his money for the child support. I will live happily in luxury with my babe. Isn’t it good? (এমন কিছু যা আপনি খুব দীর্ঘ সময়ের জন্য অপেক্ষা করেছিলেন এবং তারপরে এটি কোনও কষ্ট ছাড়াই পেয়ে যান। আপনি কি খুশি হবেন না? আপনি একজন সুন্দর মহিলার মতো দেখতে এবং আপনি আমার আইনজীবী। তাই আমাকে এটি আপনার কাছে ভাগ করতে দিন। আসলে আমি অন্য কাউকে দেখছি। এখন 3 বছর ধরে। সত্যিই ডিভোর্স নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নিতে পারিনি কারণ আমার স্বামী আমার বর্তমান বয়ফ্রেন্ডের চেয়ে অনেক বেশি ধনী ছিল। আমি এই বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে আমার পুরানো জীবনে থাকার কথা ভাবতে পারি না যেখানে আমাকে থাকতে হয়েছিল দিনরাত পরিশ্রম করে শুধু শেষগুলো পূরণ করতে।

কিন্তু যখন তার মিথ্যা কথা বেরিয়ে আসে এবং সে লজ্জিত হয় এবং নিজেকে অপরাধী মনে করে। আমার কিছু করার ছিল না। শুধু আঘাত পেয়ে ডিভোর্স চাওয়ার সামান্য অভিনয়। নিজেকে দোষী মনে করে সে শুধু আমি যা বলেছি তাতে রাজি হয়েছে। এখন তার প্রায় সবকিছুই আমার। এবং আমাদের শিশুটি আমার এটিএম কার্ড, সে তার অনেক টাকা চাইল্ড সাপোর্টের জন্য দেবে। আমি আমার বাবুর সাথে বিলাসিতা করে সুখে থাকব। ভালো না?”)”

অনুরক্তি চোখ বড় বড় করে নারীটিকে দেখছে। কী গর্বের সাথে সে কথাগুলো বলছে! নিজের ভাবনায় হয়তো তিনি প্রায় এভারেস্টই জয় করেছেন।

“Hey! Say something!”

“Yeah, yeah. You did the right thing.”

“Thank you, Girl! I am going now. Bye!”

এমা বের হয়ে গেলে অনুরক্তি পাশে ঘুরে দেখে আমের ঠোঁট চেপে হাসছে। সে তাকাতেই পেটে চেপে হা হা করে হেসে উঠে।

“যেমনের সাথে তেমনই পড়েছে। এমনই হওয়া উচিত সায়ানের সাথে। হোক ঐটার সাথে এগুলো কিছু বলার দরকার নেই।”

উত্তর দেয় না রমণী। নিজ ভাবনায় ব্যস্ত সে। হুট করেই অনুরক্তির চুল ধরে টান দেয় আমের। কপট ক্রোধ ও বিরক্তি নিয়ে তাকায় অনুরক্তি।

“I was just fixing your hizab. Nothing else Anu. Honestly Anu.” (আমি শুধু তোমার হিজাব ঠিক করছিলাম, অন্যকিছু না। সত্যিই অনু।) জোরপূর্বক হাসি দেয় আমের। অনুরক্তিও ফিক করে হেসে দেয়।


আমের ও অনুরক্তি দরজা খুলে প্রবেশ করতেই দেখতে পায় আমিরা শাহিন গম্ভীর মুখে সোফায় বসে আছেন। হয়তো তাদেরই অপেক্ষা করছিলেন তিনি।

“আসসালামু আলাইকুম আন্নে। কখন এসেছো?”

“ওয়ালাইকুম আসসালাম অনু। তুমি এপার্টমেন্ট বুক করেছে? চারদিন পরেই উঠবে?”

“হ্যাঁ, একচ্যুয়ালি সবদিক দিয়েই এপার্টমেন্টটা মিলেছে এবং খালিও আছে। তাই ভাবলাম উঠে যাই। আর কতোদিনই বা এখানে থাকবো? তুমি প্লিজ রাগ কোরো না আন্নে।”

“তুমি কোথাও যাচ্ছো না অনু। বসো আমার সামনে। তোমার তিক্ত কিছু সত্য জানার আছে। আমের! আমাদের ফ্যামিলি ফটোর এ্যালবামটা নিয়ে আসো তোমার মাম্মা এবং আঙ্কেলের ছবিগুলো বের করে ওকে দেও।”

সায় জানিয়ে ছবি এ্যালবাম নিয়ে এসে ছবি বের করে দেখায় অনুরক্তিকে।
“এটা তো বাবা। বাবার সাথে এই ভদ্রমহিলা কে?”

“তোমার মা। আমি তোমার খালা হই। আমের অনুকে তার ছোটোবেলার ছবিগুলো দেখা।”

অনুরক্তি দেখতে পায় পরবর্তী পৃষ্ঠাগুলো জুড়ে একটি বাচ্চা মেয়ে এবং তার চেয়ে বছর তিনেক বড়ো বাচ্চা ছেলের ছবি। একটা ছবিতে তুর্কি রীতিতে বিয়ের পোশাক পরা ছেলে ও মেয়েটি।

আমিরা শাহিন তার ছবিগুলো পর্যবেক্ষণ করার মাঝেই বলতে শুরু করেন,
“তোমার মা আমার একমাত্র ছোটো বোন হয়, ফাতমা নাম ছিল তার। জানোই তো আমার মা বাঙালি। নানার বাসায় বেড়াতে যেয়েই তোমার বাবা আর ফাতমার পরিচয় ও প্রেমের পর বিয়ে হয়। সব ঠিকই চলছিল কিন্তু তোমায় জন্ম দিতে যেয়ে সে মারা যায়। আমার এখনও মনে আছে। মারা যাওয়ার আগে আমায় তোমাকে দিয়ে বলেছিল, ‘আমার মেয়েকে ততদিন তোমার মেয়ে করে আগলে রেখো যতোদিন না তোমার ছেলের বউ করো তাকে’।

মেয়েটা মারা যাওয়ার পরপর তোমার দাদী ও সবাই সিদ্ধান্ত নয় তোমার বাবাকে তাদের পছন্দনীয় মেয়ের সাথে এবার বিয়ে দিতে। তোমার বাবাকে রাজি করাতে অনশনে নামে তোমার দাদা-দাদী। শেষে সে রাজি হয়। যাকে তুমি মা বলো, সে তোমাকে মানতে চায়নি। তাই তোমাকে নিয়ে এসে পড়ি আমরা।

কিন্তু এরপর তোমার মায়ের কোনো বাচ্চা হয়নি, সে অক্ষম। তাই তাদের তোমার প্রতি আকর্ষণ বাড়ে। তোমাকে চায়। আমরা দিতে চাই না। অনেক ঝামেলা করে কিডন্যাপের কেস করার হুমকি দেয়। এমনটা হলে তারাই জিততো, অফিশিয়াল কোনো পেপার্স ছিল না আমাদের কাছে। না তোমার আঙ্কেল তখন এতো বড়ো উকিল হয়েছিল। অযত্নও হবে না। এই ভেবে ফিরিয়ে দেই আমরা। তবে তোমার বাবার কাছ থেকে ওয়াদা নেই তোমাকে যেন আমাকেই আমার ছেলের বউ রূপে ফিরিয়ে দেয়। সেও ওয়াদা নেয় তুমি যেন কখনও ফাতমার বিষয়ে না জানো।

এজন্যই তোমাকে ছোটোবেলা থেকে কানাডার স্বপ্ন দেখানো হতো, কারণ তোমার অপেক্ষায় ছিল কেউ এখানে। কিন্তু তুমি প্রেমে পড়লে সায়ানের, বিয়ে করলে। তোমার সুখ ভেবে দ্বিমত করেনি কেউ। তোমার বাবার সাথে আমাদের যোগাযোগ করার কারণটাও শেষ হলো এভাবে। কিন্তু হলো ভিন্ন বিষয়। তোমার আঙ্কেল সায়ানকে অন্য এক মেয়ের সাথে দেখলো। খোঁজ নিলাম জানতে পারলাম সব। হ্যাঁ, আমরাই খোঁজ দিয়েছিলাম তোমার বাবাকে সায়ানের। এদেশে আসার ব্যবস্থা করেছিলাম তোমার সায়ানের বাস্তবতা দেখাতে এবং নিজ গন্তব্যে আনতে।

তোমার এয়ারপোর্ট থেকে বের হওয়া, হোটেলে উঠা, সায়ানের বাড়ি যাওয়া সবকিছুতেই নজর ছিল আমেরের। তোমাকে মাঝপথে পাওয়াটা কোনো কাকতালীয় বিষয় ছিল না। তুমি আমার কাছে আমানত ফাতমার।

তোমাকে সবসময় আগলে রাখবো, আগে পারিনি। এখন যখন আমার কাছে এসেছো আর দূরে যেতে পারবে না মা। তোমায় বড়ো বেশি ভালোবাসে তোমার আন্নে, নিজের সন্তানের চেয়েও বেশি। তাই তো আর কোনো সন্তান নেইনি, মেয়ের মতো তুমি তো আছোই আমাদের পরিবার পূরণে। তুমি কিছুতেই যেতে পারবে না তোমার আন্নেকে ছেড়ে।”

অনুরক্তি স্তব্ধ। কাঁপা কাঁপা দেহে সোফা থেকে উঠে নিজের রুমে যেয়ে দরজা আটকে দেয়। ফুঁপিয়ে কাঁদে সে। বাবাকে কল দিতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু দিবে না। যেই মানুষটা তার জন্মদাত্রীর পরিচয় আড়াল করতে চেয়েছে, তার প্রতি অভিমানটা তো অস্বাভাবিক নয়।

কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে যায় নিজেও বুঝতে পারে না। অতিরিক্ত কাঁদলে ক্লান্ত হয়ে গভীর ঘুমে ডুবার অদ্ভুত এক অভ্যাস তার।


আমিরা শাহিনের চিন্তা হচ্ছে। ঘড়ির কাটায় গণে গণে দুই ঘণ্টা হয়েছে অনুরক্তির দরজা আটকানোর। মেয়েটি আবার ভুলভাল কিছু করে বসে না কি কে জানে?

অনুরক্তির ঘরের দরজার সামনে অনবরত পায়চারি করছে সে। আফসোস হচ্ছে, আরেকটু নরম ভাবে এবং ধীরে ধীরে সব জানালেও পারতো।

স্ত্রীর কাজকারবার এবার হাস্যকর লাগছে মোস্তফা মাহমুদের নিকট।
“আরে এমন করো ক্যানো? Giver her some time or knock the door!”

“তুমি কি বুঝবা! রক্ত তো আমার!”

“মেয়ে আমারও! তোমার রক্ত হলে আমার ছেলের হবু বউ।”

“Nonsense!”

“You nonsense!”

দুই পক্ষের চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে যায় অনুরক্তির। কান্নার জন্য মাথা ভার লাগছে তার। মাথায় কাপড় দিয়ে ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলে সে।

প্রিয় মেয়েকে দেখে কলিজা ঠাণ্ডা হয় আমিরা শাহিনের। ঝগড়া ভুলে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

“এতোক্ষণ দরজা বন্ধ করেছিলে ক্যানো মা? আন্নের উপর এতো রাগ কোরো না।”

আমিরা শাহিনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অনুরক্তি। আজ বুঝতে পেরেছে কেন এতোদিন আমিরা শাহিন থেকে মা, মা অনুভূতি আসতো। সৎ মা হলেও মা তাকে কম ভালোবাসেনি। তবে তার থেকে কখনও মা, মা অনুভূতি বা মমতা পায়নি। তার মনে আছে তার নষ্ট পোশাক কিংবা বড়ো নখ কেটে দেওয়া অথবা তাকে আদর করে বুকে মাথা রেখে ঘুম পাড়ানো বা কাঁদলে কোলে কখনওই নেয়নি মা। ভাবতো হয়তো ব্যস্ততা বা কোনো শারীরিক সমস্যা। বাস্তবতা তো অজানাই ছিল।

“একদমই তোমার সাথে রাগ করিনি আন্নে। আমি তো কীভাবে যেন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম কাঁদতে কাঁদতে।” আদুরে ভঙ্গিমায় উত্তর দেয় অনুরক্তি।

“একদম ফাতমার মতো স্বভাব-আচারণ তোর। সেও কাঁদলেই এমন গভীর ঘুম দিত! জানিস তোর মা থাকলে তোকে বুকে আগলে রাখতো। তোর মতোই সবাইকে অনুরাগে আগলে রাখতো।”

“আন্নে, আমাকে মায়ের বিষয়ে আরও বলবে?”

“হ্যাঁ, বলবো তো। কিন্তু এখন ফ্রেশ হয়ে আসো। লাঞ্চ করবে।”

“তার আগে আসো, তোমার প্রেশার চেক করি। আরেকবার অনুর জ্বরের কথা শুনে প্রেশার উঠিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলে। না জানি এখন কী অবস্থা! জানো অনু তোমার থেকে না প্রচুর হিংসা লাগতো আমার। মা ক্যানো এতো ভালোবাসতো তোমাকে আমি তার ছেলে হলে?”

“কারণ এটা আমার আদরের মেয়ে। আর আমার আদরের ছেলের বউও।”

লজ্জায় মাথা নামিয়ে ফেলে অনুরক্তি। আমেরও নীরব হয়ে যায়। আমিরা শাহিন মনে মনে বলে,
“তোমরা যতো যা-ই করো, আমি তোমাদের এক সুতাই বাঁধবোই। ”


“অনুরক্তি তুমি কি এখনও সায়ানকে ভালোবাসো?”

ব্যাকয়ার্ডে বসে চা পান করছিল অনুরক্তি। আমেরের হুটহাট এমন বেফাঁস প্রশ্নে হতবাক সে।

“What! What are you saying?”

“আমি মাত্র বাবার কাছে শুনলাম। তুমি না কি এমার রেকর্ডিংটা দিয়েছো সায়ানকে এবং তার পক্ষ থেকে উইটনেসও হয়েছো। এমা না কি জানতো না আমরা রেকর্ডিং করি ক্লাইন্টের প্রতিটি কথা, পর্যবেক্ষণের জন্য। সে আমাদের কাগজপত্র বা ওয়ার্ক প্রসেসই দেখেনি। তাহলে তো সায়ানেরও জানার কথা না। মানে নিজে যেয়ে দিয়েছো। কী জন্য? He really deserved that.”

” হ্যাঁ, তিনি ঐটাই ডিজার্ভ করেন। কিন্তু তিনি আমাকে দোষারোপ করছিলেন তাঁদের সম্পর্কের ভাঙনের জন্য। যেখানে তার মানুষটাই ভুল ছিল। তাঁরও স্বাদ নেওয়া উচিত আমার যন্ত্রণার। আমার জন্য তো এটাই শাস্তি যা তিনি এখন জানছেন।

আমাকে ভালোবাসার কথা দিয়ে তিনি যার জন্য আমাকে ত্যাগ করেছিলেন। সে অন্য কারো জন্য তাঁর সাথে অভিনয় করে তাঁকে ত্যাগ করেছে।

কিন্তু আপনি এমন হাইপার হচ্ছেন ক্যানো? অদ্ভুত মানুষ আপনি!”

“তুমি বুজো না? না কি না বুজার ভান করো? I really like you Anu. Actually I love you.”

ভেঙচি কাটে অনুরক্তি। ছেলেটা সব কিছুতেই দুষ্টুমি করবে।

“Oh! How can you fall in love with me? it’s impossible! Please don’t do this joke!”

“You want to know when I fall in love with you? Then hear it.

When I took food from your plate teasingly that dark night, then you looked at me with a irritated look on your little eyes. I felt like I need to watch those eyes every time I am having my dinner, lunch or brunch. I fall in love with you.

When I came house with a runny nose and I had a ice cold coffee on my hand. You were so angry and started rebuking me like a kid. I knew I need to hear those angry words every time after I do a mistake. I fall in love with you. I fall in love with you.

When I came home with wet clothes late at night without informing you and you also couldn’t sleep because mum and dad was not at home. I also left my keys at home. You were angry and worried but the moment you watched me the anger was gone. With concerned eyes you swiftly gave me the towel, clothes and asked if I was okay. Then made me a coffee instantly. I knew I need this girl on my door every time I come back home. I fall in love with you.

On the mornings you help my mum with cooking with sweaty nose and on the evenings when you hear my father’s boring stories with a broad smile. I feel like to watch those moment every day for the rest of my life. I fall in love with you.

I fall in love with you so many times that it’s gonna take more than 2 days to tell you about every situation.
(তুমি জানতে চাও আমি কখন তোমার প্রেমে পড়ি? তাহলে শুনো।

সেই অন্ধকার রাতে আমি যখন তোমার প্লেট থেকে খাবার নিয়েছিলাম, তখন তুমি আমার দিকে বিরক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলে তোমার ছোট্ট চোখে। আমি অনুভব করেছি যে প্রতিবার যখন আমি আমার রাতের খাবার, লাঞ্চে বা ব্রাঞ্চ করছি তখন আমার সেই চোখগুলি দেখতে হবে। আমি তোমার প্রেমে পরেছি।

যখন আমি সর্দির নাক নিয়ে ঘরে এলাম এবং আমার হাতে বরফের কোল্ড কফি ছিল। তুমি খুব রেগে গিয়ে বাচ্চাদের মত আমাকে ধমক দিতে শুরু কর। আমি জানতাম যে আমি একটি ভুল করার পরে প্রতিবার আমাকে সেই রাগান্বিত শব্দগুলি শুনতে হবে। আমি তোমার প্রেমে পরেছি। আমি তোমার প্রেমে পরেছি।

আমি যখন তোমাকে না জানিয়ে গভীর রাতে ভেজা কাপড় নিয়ে বাড়ি ফিরে আসি এবং তুমিও ঘুমাতে পারোনি কারণ মা বাবা বাড়িতে ছিল না। আমি আমার চাবিও বাসায় রেখে এসেছিলাম। তুমি রাগান্বিত এবং চিন্তিত ছিলে কিন্তু যে মুহূর্তে তুমি আমাকে দেখো রাগ চলে গেছে। উদ্বিগ্ন চোখে তুমি দ্রুত আমাকে তোয়ালে, জামাকাপড় দিলে এবং জিজ্ঞাসা করলে আমি ঠিক আছি কিনা। তারপর সাথে সাথে আমাকে একটা কফি বানিয়ে দিল। আমি জানতাম যে আমি যখনই বাড়ি ফিরে আসি তখনই আমার দরজায় এই মেয়েটিকে প্রয়োজন। আমি তোমার প্রেমে পরেছি।

সকালে আপনি আমার মাকে ঘর্মাক্ত নাক নিয়ে রান্না করতে সাহায্য করো এবং সন্ধ্যায় যখন বিস্তৃত হাসি দিয়ে আমার বাবার একঘেয়ে গল্প শোনো। আমি সারা জীবন প্রতিদিন সেই মুহূর্তগুলি দেখতে চাই। আমি তোমার প্রেমে পরেছি।

আমি এতবার তোমার প্রেমে পড়েছি যে প্রতিটি পরিস্থিতি সম্পর্কে তোমাকে বলতে ২ দিনের বেশি সময় লাগবে।””

আমেরের মতো পুরুষ তাকে নিয়ে এতো গভীর ভাবে ভালোবেসেছে বিশ্বাসই হচ্ছে না। আশ্চর্য হয়ে যায় অনুরক্তি। এতোটা আশ্চর্য হয় যে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যেতে নেয় সে।

সঙ্গে সঙ্গে ভিনদেশি পুরুষটি কোমড় জড়িয়ে আঁকড়ে ধরে তাকে।
“এভাবেই আগলে সবসময় তোমায় রাখবো সদা অনুরাগে অনুরক্তি।”

উত্তর দেয় না অনুরক্তি। বাক্যহারা সে। মোহিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে শুধু।

_সমাপ্ত_

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here