#অনুরাগে_অনুরক্তি
||৫ম পর্ব||
– ঈপ্সিতা শিকদার
নিজের ফেলে আসা অতীত তথা সায়ানের সাথে পুনরায় সাক্ষাৎ হবে, তাও এভাবে কল্পনাতেও আনেনি অনুরক্তি। স্তব্ধ চোখে তাকিয়ে আছে সে পুরুষটির দিকে। পুরুষটির চাহনি আজ কেমন যেন অসহায়, ম্লান।
কয়েক ঘণ্টা পূর্বে,
জোরালো শব্দে ঘুম ভাঙে অনুরক্তির। ধরফড় করে ঘুম থেকে উঠে সে। ততক্ষণে শব্দ থেমে গিয়েছে। অভ্যাস মতো ফোন হাতে নিতেই চক্ষু চড়কগাছে। প্রায় ছয়টা পঁয়তাল্লিশ বাজে, আটটা বাজেই তার জরুরি এক ক্লায়েন্টের সাথে মিটিং আছে ‘ওইবি ব্রেকফাস্ট কোং’ নামক রেস্টুরেন্টে। এরপর আরও একটি মিটিং আছে ঠিক দশটার দিকে। তাই লেট হওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়।
দ্রুতো একটি পায়ের গোড়ালির উপর অবধি লম্বা লেডিস গোলাপি শার্ট এবং সাদা লেগিন্স ও ওভারকোর্ট নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে সে। কোনোরকম ফ্রেশ হয়ে কাপড় বদলে দ্রুতো সাদা হিজাব ও গোলাপি লোফার পরে নেয়। হাতে সাদা পাথর জড়ানো সোনালি ঘড়ি। মুখে হালকা ফেসপাউডার, ঠোঁটে ডাস্টি পিংক লিপস্টিক দিয়ে অফিসের ব্যাগে ল্যাপটপ নিয়ে বেডরুম থেকে বের হয় সে।
নিচে ট্র্যাক স্যুট গায়ে আমের বাড়িতেই পুশ আপ করছে। অনুরক্তিতে দেখেই অবাক হয়ে যায় সে। এই প্রথম এই তরুণীকে এমন ফর্মাল পোশাকে দেখলো। এদিকে তাকে দেখে অনুরক্তির মনে পড়ে তার খাওয়ার মতো কিছুও তো নেই।
“ওহ! আপনি তো বাসায়! দাঁড়ান আমি ব্রেড টোস্ট আর অমলেট করে দিচ্ছি। কফিটা কাইন্ডলি আপনি নিজে করে নিয়েন।”
“Wait! Are you going somewhere?”
“হ্যাঁ, আমার মিটিং আছে ক্লায়েন্টের সাথে ওইবি ব্রেকফাস্ট রেস্টুরেন্টে আটটায়। অলরেডি দেরী হয়ে গেছে, রান্নাও বাকি।”
“Great! চলো আমি তোমাকে নিয়ে যাই। সেখানে দু’জনে ব্রেকফাস্টও করে নিব। অনেকদিন বাহিরে ব্রেকফাস্ট করি না।”
“Yeah! That’s a really nice idea! চলেন! চলেন! চাবি নিয়ে নিন।”
যাওয়ার তাড়া দেওয়া শুরু করে অনুরক্তি আমেরকে। যুবক তো অবাক।
“এভাবেই যাব? চেঞ্জ করবো না?”
“মিটিং তো আমার, আপনার না। আপনি তৈরি হয়ে কী করবেন?”
অনুরক্তির কথা শুনে এবং তাড়া দেখে আমের আর দ্বিমত করে না। ট্র্যাকস্যুট পরেই তাকে সহ বের হয়ে যায়।
–
আটটা বাজার দুই মিনিট আগে রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে তারে। তেমন একটা মানুষ নেই রেস্টুরেন্টে তখনও। বাহিরের দিকের জানালার সাথে লাগোয়া টেবিলটিতে বসে তারা। এখানে আগে কখনও আসেনি অনুরক্তি।
পরিবেশটা বেশ। খুব বেশি জাঁকজমকপূর্ণ নয়, সাদা রঙই প্রাধান্য পেয়েছে টেবিল থেকে দেওয়ালের রঙ অবধি। কন্ট্রাস্টের জন্য খুব সামান্য কমলা, হলুদ, ড্যুডলিং আর্ট রয়েছে। এছাড়া ওপেন কিচেনের জন্য, আরও বেশি ভালো লাগছে।
একটু বাদেই একজন সুদর্শন ভদ্রলোক দরজা খুলে অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। অনুরক্তি তাকে দেখে উঠে দাঁড়ায়।
“Good morning Mr. Sheikh! Please have a seat.”
আমেরের দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হেসে মিস্টার শেখ বসে। চাপা রাগ মিশ্রিত গলায় বলে উঠে,
“Yeah. I thought it’s a professonal meeting, it would be keep in between us. No outsider wouldn’t be here.”
“He is not an outsider. He is Mr. Mahmud Mustafa’s one and only child. So it would be a private and professional meeting.”
মিস্টার শেখ নিজের কেসটি স্পষ্ট ভাবে বলে অনুরক্তিকে। বেশ মনযোগ দিয়ে সব শুনে এবং কাগজপত্রগুলো ভালো ভাবে দেখে নেয়।
“Are sure about everything you said? Don’t hide a single a word from us Mr. Sheikh. It would be problematic for both of us.”
“Yeah, I am sure. Please save my money and property. My wife is lying. I didn’t cheat, she cheated on me.”
“Don’t worry. Everything will be on your side. I would personally take care of this case. I can’t believe a wife can torture her husband to this extend.”
“Thanks a lot for trusting. Nobody wanted to take my case. I want to give you guys a treat! Let me pay for the breakfast.”
“NO, NO, it’s not needed.”
অনুরক্তি ও আমের বারবার মানা করলেও মিস্টার শেখের জোরাজুরিতে তারা রাজি হয়। অনুরক্তি এক কাপ লাটে ও একটি বেলজিয়ান ওয়াফেল এবং আমের একটি ফ্রেঞ্চ টোস্ট ট্রিফেল ও এক কাপ এক্সপ্রেসো অর্ডার করে। মিস্টার শেইখও তাদের একটি ফ্রেঞ্চ টোস্ট ট্রিফেল অর্ডার করে।
খাওয়া-দাওয়া শেষে বিদায় নেওয়ার সময় মিস্টার শেখ এমন একটা কথা বলে যা শুনে চমকে যায় অনুরক্তি, আমের দু’জনেই।
“May Allah keep you and your husband Mr. Amer always happy! Such a sweet couple!” (আল্লাহ তোমাকে আর তোমার স্বামীকে সবসময় খুশি রাখুক! কি মিষ্টি দম্পতি!)
আমতা আমতা করে অনুরক্তি শুধায়,
“Actually Mr. Sheikh we are not in a relationship and not married too. I am just his father’s employee.” (আসলে মি.শেখ আমরা কোনো সম্পর্কে নেই এবং বিবাহিতও না। আমি শুধুই তাঁর বাবার কর্মচারী)
“Oh! I am really sorry! the other day Mr. Mustafa called you his daughter and you said he is the only child of him. So I thought you are his son’s wife.” (আমি খুব দুঃখিত! ঐদিন মি.মুস্তাফা তোমাকে মেয়ে ডেকেছিল এবং তুমি বললে সে একমাত্র সন্তান মি.মোস্তফার। তাই আমি ভেবেছিলাম তুমি তার ছেলের স্ত্রী)
“It’s okay. I would call you about the case after discussing with Mr. Mustafa!”
মিস্টার শেখ বিদায় নিয়ে চলে যান। অনুরক্তি তখন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে দশটা বাজতে দুই মিনিট বাকি। একটু বাদেই একজন নারী এসে তাদের টেবিলের সম্মুখে দাঁড়ায়।
“Are you Ms. Anu? I am Emma, your client.”
নারীটিকে দেখে চমকে যায় অনুরক্তি। এই রমণীই তো সে যার ভাগ্য হয়েছে অনুরক্তির ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার। কিন্তু যেই ক্লায়েন্ট এমার আসার কথা, সে তো ডিভোর্স, সম্পত্তির বাটোয়ারা ও সন্তানের কাস্টাডি নিয়ে কথা বলতে আসবে। তার মানে কি তার হৃদয়, সংসার ভেঙে সায়ানের সংসারও অক্ষুণ্ণ নেই?
একটু বাদেই সায়ান মাথা নত করে ফোনে কথা বলতে বলতে প্রবেশ করে রেস্টুরেন্টে। এমার পাশে এসে দাঁড়াতেই তাকে দেখে থমকে যায়। সে নিজেও থমকে যায় দীর্ঘ আট বছরের তিক্ত স্মৃতি জড়িত পুরুষটিকে দেখে।
নিজের ফেলে আসা অতীত তথা সায়ানের সাথে পুনরায় সাক্ষাৎ হবে, তাও এভাবে! এমনটা তো কল্পনাতেও আনেনি অনুরক্তি। স্তব্ধ চোখে তাকিয়ে আছে সে পুরুষটির দিকে। পুরুষটির চাহনি আজ কেমন যেন অসহায়, ম্লান। এমন কিছু তো অনুরক্তি চায়নি।
“মানুষের দীর্ঘশ্বাসেরও বদদোয়া লাগে, আর অশ্রুর বিপরীতে তো সোজা সাজা হয়।” – কথাটি প্রায়শয়ই দাদী বলতেন। তবে কি তেমন কিছু ঘটেছে?
চলবে…