অনুরক্তি অন্তরিক্ষ পর্ব ১৯

0
822

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [১৯ পর্ব]
তাসনিম তামান্না

আজকের দিনটা অদ্ভুত কখনো আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে বৃষ্টি তো কখনো বা আকাশে মিষ্টি রোদ সাথে শীতল মন মাতাল ছুঁয়ে যাওয়া বাতাস তো আছে। সেই আকাশ পানে গভীর উদাসীন চোখে তাকিয়ে আছে জারা। মনটা তার বিক্ষিপ্ত, অগোছালো, বিরক্তিতে ভরপুর। সেদিনের পর কয়েকদিন কেটে গেছে জারা নিজেকে শান্ত করতে পারি নাই উতলা মনে নিজেকেই বার বার দোসারোপ করছে আগের চেয়ে এখন একেবারে শান্ত হয়ে গেছে শান ঝগড়া করতে আসলেও জারা চুপ থাকে কিছু বলে না প্রয়োজনীয় কথা একটা কথাও তার মুখ দিয়ে বের হয় না।

ইশার বিয়ের আর বেশিদিন বাকি নেই। বাড়ির সবাই হুলুস্থুল বাধিয়ে দিয়েছে। আজ সকলে মিলে ইশার বিয়ের শপিং করতে যাবে। তাতে জারা বাঁধ সাধলেও শান্তির ধমক খেয়ে আর কিছু বলে নি এখন সাদামাটা হয়ে রেডি হয়ে সবার আগে ড্রাইংরুমে এসে বসে আছে। এক এক করে সকলে আসলো। জারা চুপচাপ বসে আছে গাড়ির ফ্রন্ট সিটে শান ড্রাইভিং সিটে বসে জারার দিকে আড় চোখে তাকাছে বার বার পিছনে বসে কাজিনরা গল্পের আড্ডা জমিয়েছে হাসাহাসির রোল পড়ে গেছে। জারার খুব বিরক্ত লাগছে। কিছু বলতেও পারছে না। চোখ মুখ কুঁচকে বসে রইল। শপিং মলে এসে জারা এককোনায় চুপ করে ঘাপটি মেরে বসে রইল। শপিংয়ে শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে ওরা। জারা একটা কিছু ও কিনে নাই শুধু চুপচাপ বসপ সব দেখছে। শান এগুলো দেখতে দেখতে নিজেও বিরক্ত হয়ে গেছে জারার ওপর। শান বিরক্তি নিয়ে জারার কাছে গিয়ে জারাকে হ্যাচকা টানে উঠিয়ে দাঁড় করালো জারা বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো শান কি করতে চাইছে। কিন্তু শান কিছু না বলে জারার হাত ধরে টেনে সকলের চোখের আড়ালে নিয়ে গেলো জারা হাত ছাড়াতে চাইলেও পারল না পুরুষালীর শক্তির সাথে।

-‘ কি সমস্যা তোর?

জারা কিছু বলল না শান্ত চোখে তাকিয়ে রইলো শানের দিকে। শানের রাগের মাত্রা তিরতির করে বাড়তে লাগলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল

-‘ কি হলো কথা বলছিস না কেনো বোবা তুই? কথা বলতে পারিস না? ‘

জারা কিছু বলতে যাবে তখনি জিহানের বোন জিয়া এসে বলল

-‘ তোমরা এখানে কি করছ সকলে খুঁজছে জারাপু তোমাদের ‘

শান বলল

-‘ জিয়া আপনি গিয়ে বলুন জারার মাথা ব্যথা করছে সেজন্য আমি ওকে বাসায় নিয়ে যাচ্ছি ‘

-‘ কিন্তু…. ‘

-‘ আপনি প্লিজ কষ্ট করে বলে দিবেন ‘

জারা মুখ খুলে বলল

-‘ না না আমি কখন….’

শান ধমক দিয়ে বলল

-‘ শাট আপ এতোক্ষণ যখন কথা বলিস নি তখন এখনো কথা বলবি না ‘

কথাটা বলে জারাকে টানতে টানতে নিয়ে গেলো জিয়া হা করে তাকিয়ে দেখলো। জারা মনে মনে ভয়ে শেষ এখন না জানি শান আবার কি করে বসে। একপ্রকার জোরজবরদস্তি করে জারাকে বাসায় আনল শান। বাসা এখন ফুল ফাঁকা সুমি ও নাই। জারাকে সোফায় বসিয়ে শান গ্লাসে পানি এনে জারাকে দিলে জারা একচুমুকে শেষ করে বলল

-‘ বাসায় আনলেন কেনো? মনি জানলে কষ্ট পাবে ‘

-‘ ওহ রেলি। মনি কষ্ট পাবে? মনি যে তোর এই চুপচাপ বসে থাকা দেখে যে কষ্ট পাচ্ছে সেটা তোর চোখে পড়ে না? ‘

জারা চুপ করে থাকলো। শান আবারও বলল

-‘ তুই কিছু বুঝিস বা এতো অবুঝ কেনো তুই? তোর চুপ করে থাকায় একজনের বুকটা জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যায়। হৃদয় দহনটা তুই একমাত্র নেভাতে পারবি বুঝিস না তুই কিছু বুঝিস না অবুঝ রয়ে যাবি সারাজীবন। একজন যে তোকে দিনের পর দিন ভালোবাসে সেটা তুই বুঝিস না তার খারাপ গুলোই শুধু দেখে গেলি ভালো গুলো তোর চোখে পড়ে না তার কষ্ট তোর চোখে পড়ে না তার কষ্টে তোর কষ্ট হয় না? ‘

শানের এমন প্যাচানো কথায় জারা স্তব্ধ হয়ে গেলো বুঝতে অসুবিধা হলো না শান কি বলছে। অজান্তেই মনটা পুলকিত হয়ে গেলো চোখে পানি ভির জমলো। কিছু বলার আগেই বাসার সবাই চলে আসলো। অতি সাবধানে লুকিয়ে চোখের অশ্রু কণাগুলো মুছে নিলো।

জারা শান চলে আসায় কেউ কোনো কথা জিজ্ঞেসা করলো না একটু এসপ্সেচ দেওয়া উচিত তাদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক হওয়া দরকার আর কতদিন তারা এমন দূরে দূরে থাকবে? আব্দেও কি তাদের ভালোবাসা, প্রেম নামক শব্দ গুলো দুজন দুজনকে বলতে পারবে?

সকলে ক্লান্ত হয়ে যার যার রুমে চলে গেলো জারা নিজেও চলে গেলো। শানের সামনে কেনো জানি হঠাৎ লজ্জা লাগতে শুরু করছে।

সন্ধ্যার দিকে সকলে মিলে ইশার বিয়ের শপিং গুলো দেখতে লাগলো। জারা নিজেও সেখানে ছিল। যতসম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে। সকলের সাথে থেকে ডিপ্রেশন থেকে বের হবার চেষ্টা করছে। ইশা বলল

-‘ জারা আপু তুমি তো কিছুই নেও নি তাহলে? ‘

-‘ আমার যা আছে তাতে হয়ে যাবে কেনা লাগবে না কিছু ‘

শান্তি বেগম বাঁধ সাধলেন বলল

-‘ না কাল তুই আর শান গিয়ে নিজের পছন্দ মতো কিনে আনিস শানও কিছু কিনে নি ‘

-‘ লাগবে না মনি ‘

-‘ আমি বলছি মানে লাগবে ‘

জারা চুপ হয়ে গেলো। মনি কষ্ট পাই এমন কিছু করতে চাইছে না তাছাড়া শানের সাথে কিছু কথাও আছে। শান কি সত্যি তাকে ভালোবাসে নাকি সেটা তার মনের ভুল? না-কি সে শুনতে ভুল করলো।

রাতে খাবার টেবিলে সকলে থাকলেও শান ছিল না। জারার অদ্ভুত লাগলো গেলো কোথায় মানুষ টা?
কথায় কথায় জানতে পারলো শান আজ ফেন্ডদের সাথে রাতে বাইরে বারবিকিউ পার্টি করবে। জারা আকাশ থেকে পড়ল এই বৃষ্টির সময় রাতে পার্টি তাও আবার বারবিকিউ। জারা নিজে নিজে ভাবলো জারা নিজে পাগল নাকি শান আর শানের ফেন্ডরা পাগল।

এটা নিয়ে সকলে হাসাহাসি করলো অনেক।

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here