অনুবদ্ধ আয়াস ১২

0
705

#অনুবদ্ধ_আয়াস ?
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ১২

“এইটা সেই মেয়েটা না, যাকে গতকাল রৌধিক রিজেক্ট করেছিলো। তাহলে ওরা একসাথে কি করছে..
দেখেছিস, একদিনে কতোদূর চলে গেছে।”

আরেকজন কটু করে বলল,
“মাত্র দেখলি না, পাবলিক প্লেসে কী করল। আই থিংক, নিজের শরীর দেখিয়ে ইমপ্রেস করেছে।”

বলেই হেঁসে উঠলো সকলে। এমন কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলাম আমি। পা জোড়া থেমে গেল। শরীরটা নিস্তেজ হয়ে আসছে। চোখের পানি টলটল করছে, এই বুঝি ঝরে পড়লো। রৌধিক আমার চিবুক টেনে ধরে উঁচু করে নিল। বৃদ্ধা আঙুলের সাহায্যে আমার চোখের পানিটুকু মুছে দিল। গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
“জবার টা দিবে, চলো।”

আমি পাথরের ন্যায় স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। রৌধিক টেনে টেনে আমাকে ওদের সামনে দাঁড় করিয়ে দিলেন। কোমড় জড়িয়ে ধরে বললেন,
“ও আমার কেউ নয়। আমি ওকে চিনতাম না, ইভেন্ট প্রেমিকাও নয়।”

আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হলাম। কি বলছে রৌধিক। তিনি কী আমাকে সবার সামনে ছোট করতে নিয়ে এসেছে। আমি হাত ছাড়িয়ে চলে আসার উদ্যেগ নিতেই রৌধিক টেনে ধরলেন। ঘাড়ের পেছনে হাত রাখলেন। অধরে অধরে ছুঁই ছুঁই। সূক্ষ্ম কন্ঠে বললেন,
“ও আমার পৃথিবী। আমার সবকিছু। আমার ওয়াইফ।”

আমাকে ছেড়ে দিয়ে ওদের উদ্দেশ্য করে বলল,
“তোমরাও তো মেয়ে, অন্য একজন মেয়ের সম্পর্কে এমন কথা বলতে তোমাদের বিবেকে বাঁধে না? আমি ভাবতেই পারছি না।
নেক্সট টাইম, এমন চিন্তা ভাবনা করো না।”

আমি রৌধিকের দিকে ফেলফেল দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম। হাত জড়িয়ে বুকে মাথা গুঁজে বললাম,
“যাকে ভালোবাসি, তাকে শরীর দেখিয়ে ইমপ্রেস করার প্রশ্নই আসে না। এমনিতেই সে আমার। তাছাড়া রৌধিক আমার হাসবেন্ড। দিন শেষে সে নিজেই আমার কাছে আসবে।”

আমি মুখ ফিরিয়ে নিলাম। রৌধিক আমাকে পূর্বের ন্যায় ধরেই সামনের দিকে অগ্ৰসর হলেন। প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে নিয়ে গেলেন। দরজা নক করতেই রৌধিককে দেখে ভেতরে প্রবেশ করতে বললেন। আমরা ভেতরে প্রবেশ করলাম। রৌধিক বসলেন। আমি তার পাশে দাঁড়িয়ে রইলাম। শত হোক, তিনি আমার শিক্ষক। তার সামনে কিছুতেই বসা সম্ভব নয়। প্রিন্সিপাল স্যার আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“এই তবে আপনার ওয়াইফ জোনাকি। আই ক্যান নট, বিলিভ ইট। বসো!
তুমি কী জানো, তোমার জন্য রৌধিক কতোটা হাইপার হয়েছে।”

“না স্যার। আমি ঠিক আছি।”
মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরতে লাগল, আমার জন্য রৌধিক হাইপার হয়ে গেছে। আমার জন্য রৌধিক এখানে এসেছিল, আর আমি তাকেই কতো কথা শুনিয়ে দিলাম। কিন্তু ঐ ছেলে গুলোকে কেন মারলেন।

স্যার হয়তো উপলব্ধি করতে পারলেন আমার অবস্থা। মৃদু হাসলেন এক ঝলক। একটা পেপার বের করে এগিয়ে দিলেন রৌধিকের দিকে। রৌধিক পেপার গুলো পড়লেন। চোখ তুলে বললেন,
“এখানে তো চারজনের নাম রয়েছে। কিন্তু ওরা তো পাঁচজন ছিলো।”

“তা ছিল, কিন্তু হসপিটাল থেকে একজন পালিয়েছে। কে পালিয়েছে, ইনসিউর করে বলা যাচ্ছে না। পরে তার নামটাও এড করা হবে।”

“ওকে!”
________
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে। সূর্য কিছুটা পশ্চিমে হেলে পড়েছে। ছায়া পড়েছে বিশাল বিশাল। রৌধিক আর আমি পাশাপাশি বসে আছি। রৌধিক ড্রাইভ করছে।‌ আমি নিজের ভেতরে কিয়ৎক্ষণ ভেবে ফট করে বললাম,
“আপনি আমার জন্য মারামারি করেছেন? কিন্তু কেন করেছেন?”

রৌধিক মিররের দিকে অবলোকন করলেন। যেখানে আমাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। দৃষ্টি নামিয়ে পুনরায় গাড়ির ড্রাইভ করতে মন দিলেন। আমি চিবিয়ে চিবিয়ে বললাম,
“আমি কিছু জানতে চাইছি আপনার থেকে, শুনতে পাচ্ছেন!”

পানির বোতল বের করে এক ঢোক খেলেন তিনি। পূর্বের জায়গায় রেখে দিলেন।
রৌধিকের এমন বিহেবিয়ারে মাথা বিগড়ে যাচ্ছে আমার। আমি নামক একটা তরুণী যে, তার গাড়িতে আছি। সেটা বুঝাই যাচ্ছে না। বিরাগী হলাম আমি। ব্যাগটা কাঁধে তুলে চেঁচিয়ে বললাম,
“স্টপ দা কার। আই সেইড স্টস দা কার।”

বন্ধ গাড়ির অন্তর্ভাগে শব্দ টা একটু বেশিই জোরে শোনালো। কয়েকবার প্রতিধ্বনি শোনা গেল। অতঃপর মিলিয়ে গেল। রৌধিকের কোনো ভাবাবেগ নেই। আমি নাক ফুলিয়ে দরজা খুলে নিলাম। বেল্ট খুলতে লাগলাম। রৌধিক ফট করে গাড়ি থামিয়ে দিল। আমার দিকে ঝুঁকে দরজা ভেতর থেকে টেনে লক করে দিলেন। এক পা সিটের উপর তুলে বললেন,
“সমস্যা কী তোমার? চলন্ত গাড়ি থেকে জাম্প দিবে নাকি?”
চিবিয়ে চিবিয়ে বললাম, “আমার উত্তর না পেলে, প্রয়োজন হলে তাই করব।”

রৌধিক কাঁধে ইয়ার ফোন গুঁজল। এসি অন করে দিল। চোখে নীল রঙের সানগ্লাস টা ব্যবহার করলেন। দুহাত বুকে গুঁজে বললেন,
“নাও স্টার্ট।”

“মানে কী?”
“মানে, এতোক্ষণ যেমন মাছির মতো ভনভন করছিলে, এখন আবার শুরু কর।”

এতোবড় অপ’মান। আমাকে মাছি বলা। হুট করেই রৌধিকের কোলে চেপে বসলাম। কান থেকে ইয়ার ফোন খুলে স্টেয়ারিং এর উপর রাখলাম।‌ চোখের সানগ্লাস টা নিজের চোখ পড়ে রুব্ধ স্বরে বললাম,

“আপনি বলবেন কি-না বলেন না?”
“সহ্য করতে পারবে না। না শোনাই শ্রেয়।”
“তবুও আমি শুনতে চাই, প্লীজ বলুন। প্লীজ।”

রৌধিক গাড়ির কাঁচ নামিয়ে দিল। জানালার বাইরে তাকিয়ে বলল,
“যে ছেলেটা হাত ভেঙেছি, সে পেছন থেকে তোমার ওড়না টেনে ধরেছিলো। যে ছেলেটার মাথায় আঘাত করেছি, সে ছেলেটা ভিডিও করছিলো। (একটু থেমে আবার) বাকি ছেলেরা সেই ভিডিও একে অপরের কাছে শেয়ার করছিল।”

অধর চেপে থেমে গেল রৌধিক। ধাক্কা খেয়াল আমি। বাঁধ ভেঙে গেল। ফুঁপিয়ে উঠলাম আমি। বাম পাশে ফিরে গেলাম। ব্যাগ থেকে টিস্যু পেপার বের করে মুখ চেপে ধরলাম। রৌধিক হাত ধরে টেনে নিজের দিকে ফিরিয়ে গম্ভীর গলায় বললেন,
“এরজন্যই বলেছিলাম, না জানাই শ্রেয়। কিন্তু শুনলে না।”
আমি রৌধিকের কলার টেনে অশ্রুমিশ্রিত কন্ঠে বললাম, ” ওরা এই ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় আপ দেয় নি তো? আমি কিভাবে সবাইকে মুখ দেখাবো।‌ কী করব আমি এখন..

“কাঁদে না দীপ্তিময়ী। ওরা এখনো কিছু করতে পারেনি। শুধু ওদের ফোনেই ছিলো। আমি ফোন ভেঙ্গে ফেলেছি। আর কোনো ভয় নেই।”

“যদি থেকে থাকে তখন?”

এবার কিছুটা ঝাঁঝালো কন্ঠে বললেন, “বলছি তো আর কোনো ভিডিও নেই।”

“আপনি জানলেন কী করে?”

রৌধিক হাসলো মৃদু। বোতল বের করে এগিয়ে দিলেন। ইশারায় খেতে বললেন। আমি এক ঢোক খেয়ে চাতক পাখির নিমিত্তে তাকালাম। রৌধিক হাতের বন্ধন দৃঢ় করে বললেন,

“তুমি পায়ে কীভাবে ব্যাথা পেয়েছো, সেটাও আমি জানি। তুমি আমার অফিস থেকে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে এসেছিলে। আমি তখনই তোমার পিছু লোক লাগিয়েছি। তোমার এক্সিডেন্টের পরপরই খবর পাই আমি। কিন্তু আমি আসতে আসতে তোমাকে বাড়িতে পৌঁছে দেয় কেউ। তারপরে আমি সেখানকার ফুটেজ চেক করি। এখন ঐ বাইক এবং চালক আমার হাতে বন্দী।
তারপর থেকে আমি তোমার জন্য গার্ডের ব্যবস্থা করি। গার্ডরাই আমাকে খবর দিয়েছে।”

একদমে কথাগুলো বলে গাড়িতে হেলান দেয়। তৃপ্তিকর শ্বাস নিলাম আমি।

“এখনো কী গার্ডরা আমাদের আশেপাশে আছে?”

“ওরা আমার অবর্তমানে থাকবে। আমি যতক্ষন তোমার সাথে থাকবো, ততক্ষণ তুমি নিরাপদ। বুঝতে পেরেছো তুমি।”

রৌধিকের বুকের উপর মাথা রাখলাম। পাশ দিয়ে গ্যাস বেলুন বিক্রেতা যাচ্ছে। আমি আদুরে গলায় বললাম,
“আমার বেলুন চাই।”

রৌধিক আমার দিকে চেয়ে রইলেন। বেরিয়ে এলেন গাড়ি থেকে। সবগুলো বেলুন কিনলেন। অতঃপর দুটো আইসক্রিমের আবদার করলাম।‌ রৌধিক কিছু না বলে একটা চকবার আরেকটা ভেনিলা ফ্লেবার আইসক্রিম কিনে দিলেন।‌ গাড়ির সামনে হুডের উপর বসে দুহাতে আইসক্রিম দু’টো নিয়ে খেতে লাগলাম। রৌধিক এক ধ্যানে চেয়ে রইল। হাতে তার বেলুন গুলো। আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,

“খাবেন?”
“তুমি খাও” বলে আমার পাশে বসে পা দুলাচ্ছেন।
আর আমি আমার কাজ করে চলেছি।

[চলবে.. ইনশাআল্লাহ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here