অনুগল্প

1
1461

আমার ছোট দেবরের বিয়ের তিনদিন পর ছোট জা’ যখন জানতে পারে আমি এসএসসিতে ১ বিষয় ফেল করছি। তারপর আর পরীক্ষা দিইনি। সেদিন থেকে আমার প্রতি ওর একটা তাচ্ছিল্য ভাব প্রকাশ পায়। ও আমাকে যে কোন বিষয় নিয়ে খোঁচা মেরে কথা বলে। এ নিয়ে আমার আফসোস ছিলো না ছোট্ট তাই কিছু বলতাম না। কিন্তু ওর সাথে সায় দিয়ে আমার ননদ আর শ্বাশুড়ি মাও যখন খোঁচা মেরে কথা বলে তখন খুব খারাপ লাগে। নতুন শিক্ষিত একজনকে পেয়ে আমাকে অবহেলা করতে থাকে।

এ ননদেরকে নিজের হাতে মানুষ করছি, আমার যখন বিয়ে হয় তখন আমার ছোট ননদ ৩ বছরের। আমি ওকে সামলাতাম আমার শ্বাশুড়ি সব সময় অসুস্থ থাকতো।
আমার স্বামী ১৫ দিন পরপর বাড়িতে আসতো ওকেও তেমন সময় দিতে পারতাম না। বড়ো ননদরা পড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকতো ৮, ৯ জনের পরিবারের মানুষের একা দেখা শোনা করতাম। বড়ো ননদের বিয়ে নিজে দ্বায়িত্ব নিয়ে দিয়েছি। দেবরের বউকেও নিজে পছন্দ করছি। ও অনেক পড়াশোনা করছে শুনে আরও খুশি হয়েছি।

আজ সে মানুষগুলো আমাকে কথায় কথায় খোঁচা দিয়ে কথা বলে।
ওরা কোন বিষয়ে কথা বললে আমি জিজ্ঞেস করলে আমার জা’ সবাইর সামনে এবং আমার মেয়েদের সামনেও তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
– আপনি এসব বুঝবেন না, আপনি তো এসএসসিও পাস করেননি। তারচেয়েও আপনি রান্নাবান্না নিয়ে থাকুন। আপনাকে সেগুলো তেই মানায়।

প্রথম প্রথম গায়ে মাখতাম না, কিন্তু দিন দিন ওর ব্যবহার আরও খারাপ হতে শুরু করছে। সাথে আমার এতোদিনের সংসারের মানুষ গুলোকেও খারাপ করে ছাড়ছে। যারা আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝতো না। ওদের জন্য আমার বিয়ের প্রথম প্রথমও আমি বাবার বাড়িতে বেড়াতে যেতে পারতাম না। ওদের নাকি আমার জন্য পরাণ পুড়তো। আজ ওরাও,,,, জা’কে কিছু করতে বললে আমার শ্বাশুড়ি বলে ওঠে
– ওকে দিয়ে কিছু করিও না, ও এ কাজগুলো করার জন্য এতো পড়াশোনা করেনি।

আর সহ্য করতে না পেরে সব কিছু আমার স্বামীকে খুলে বলি, উনি শুনে প্রথমে অনেক রাগ করেন৷ আমি কেনো এতো মাস পরে এগুলো বলছি আগে কেনো বলিনি। আমি শুধু সংসারে অশান্তি হবে তাই কখনো কাউকে কথা গুলো বলতাম না।

তার পরের সপ্তাহে উনি বাড়িতে এসে আমার শ্বশুরের সাথে কথা বলে আমাকে আর আমার মেয়েদেরকে সহ আমার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
আমার শ্বশুরও কিছু বলেননি। উনি এতো কিছু জানতেন না। উনিও আমাকে বকা-ঝকা করছেন উনাকে কিছু বলিনি কেনো? যতদিন এদের সুবুদ্ধি হবে না ততদিন বাবার বাড়িতে গিয়ে থাকো।

তারপরের দিন গুলো আমার কষ্টে কেটেছে এক আমার মেয়েদের পড়াশোনা ক্ষতি হচ্ছে। এতদূর থেকে আসা-যাওয়া সহজ ছিলো না। দ্বিতীয়ত ওই সংসারটা আমার আমি কত কষ্টে সব কিছু গুছিয়েছি। নিজের শখের জিনিস না কিনে সংসারের জিনিস কিনছি। যাতে কোন কিছুর অভাব বোধ করতে না হয়।

প্রায় ২ মাস পর
আমার শ্বশুর আর শ্বাশুড়ি আসেন আমাদের বাড়িতে, আমরা তো অবাক। তারপর আর কী আমার শ্বশুর বলেন,
– তোমার বোকা শ্বাশুড়ি কাচঁকে হীরা ভেবে হীরাকে পায়ে ঠেলে কাচঁ নিয়ে লাফালাফি করছে তো তাই এখন পা কেটে বসে আছে। যাকে নিয়ে এতো লাফালাফি করছে সে এ দুই মাস তোমার শ্বাশুড়িকে খুব আারামে রাখছে। তাইতো কোমড়ের ব্যাথা আরও বেড়েছে। এ দুই মাস সব কিছু তোমার শ্বাশুড়ি আর ননদরা করছে। এটা তো হবার ছিলো কথায় কথায় বলতো না, যে তুমি কাজ করিও না তুমি শিক্ষিত,। তুমি চলে আসার পর ওরে কিছু করতে বললে ও তোমার শ্বাশুড়ি মা’র ডায়লগটা তোমার শ্বাশুড়িকে শুনিয়ে দিতো।

– বাবা আপনি আমাকে আরও আগে কেনো বলেননি এসব কথা?
– বলেনি এদের শিক্ষা হওয়ার জন্য, ভালো করে শিক্ষা পেয়েছে তাই এখন নিয়ে আসছি। আর তোমার ছোট জা’ বলে দিছে ও আলাদা হয়ে যাবে সংসার থেকে। তোমার দেবর অবশ্য বউয়ের সাথে চিল্লাচিল্লি করছে আমি মানা করছি রাগারাগি না করতে, থাক ও ওর মতো যারা সংসারের মর্ম বুঝে না তাদেরকে সেটা না বুঝানোই ভালো। ভবিষ্যতে এর উত্তম প্রতিদান পেয়ে যাবে। যে যতটুকু করবে উপরওয়ালা ততটুকু তাকেও ফিরিয়ে দিবে।
এখন এতো কথা থাক গোছগাছ করে নাও, আমার নাতনিদের অনেক পড়াশোনা নষ্ট হইছে।

আমার শ্বাশুড়ি মা এতক্ষণ একটা কথাও বলেনি নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলো। আমার উনার অবস্থা দেখে খারাপ লাগছে, তাই সহজ হওয়ার জন্য এটা সেটা বলে কাপড় গোছাতে থাকি।
কেউ যদি নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয় তাকে ক্ষমা না করে পারা যায়???

~সমাপ্ত ~

বিঃদ্রঃ কাউকে হেয় করে লিখিনি, তবে আমাদের আসপাশে এরকম কিছু শিক্ষিত মানুষ আছে যারা মানুষকে ছোট করে কথা বলতে পারলে নিজেকে অনেক বড়ো মনে করে।

,,অনুগল্প
,,লোকে যাকে বড়ো বলে বড়ো সে হয়।
,,জিনাত আফরোজ

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here