অতিরিক্ত চাওয়া পর্ব ২ +৩।

0
1017

অতিরিক্ত চাওয়া ?
নাবিলা ইষ্ক
পর্ব : ২+৩
টেষ্ট দিলাম, কিন্তু বেশি ভালো হয় নি। কিভাবে ভালো হবে? কাল তো পড়তেই বসি নি! বসে বসে অনলাইন গেমস খেলেছিলাম আর বাবার সাথে রাত ২ টা অবদি নানান গল্প জুড়েছিলাম!
সবাই ক্লাস নাইনের ব্যাচ, মোট ১৯ জন ! শুধু আমি ৮ এর। আমার ব্যাচের স্টুডেন্টসরা ছেলে_মেয়ে একসাথে পড়ে। তাই স্যার এই ব্যাচের সাথে পড়ায়। কারন এই ব্যাচে শুধু মেয়েরা! অবশ্য আমার কোনো প্রব্লেম হতো না ওদের সাথে পড়তে। বাট স্যার ওদের সাথে পড়তে দেয় না।
এখানের সকল মেয়েদের বয়স ১৭_১৮ তো হবেই! একা আমি একটু বেশি কমবয়সী! তাই সবাই পিচ্চি বলে সম্বেদন করে! কিন্তু আমার পিচ্চি শব্দটা মোটেই পছন্দের না!
স্যার কাল খাতা দেখে জানাবে কার টেষ্ট কেমন হয়েছে! আমি আগে থেকেই জানি, আমার টেষ্ট সকলের থেকে বাজে হয়েছে!
স্যার সকলের খাতায় বাড়ির কাজ লিখে দিচ্ছে। আর মিষ্টি করে মুখের দিক তাকিয়ে বলছে…
” বাড়ির কাজ লিখে দিলাম! পড়ে আসবা ঠিকাছে!
সবার বাড়ির কাজ লিখে দিলো! আমার বাড়ির কাজ লিখার সময় স্যারের ফেসটা বুম হয়ে রইলো! করল্লা খেলে মুখের এক্সপ্রেশান্স যেমন হয় আর কি? আজিব? আমার দিকে তাকায় ও না! আমার চেহরায় কি কালি মাখা নাকি? আমিও তো সব স্টুডেন্টসদের মতো! আমি তো কোনো খারাপ বিহেভ করি নি স্যারের সাথে তাও আমায় দেখতে পারে না! এই কথাটা স্কুল, কোচিং এর সকল স্টুডেন্টস জানে! যে তৃষ্ণা স্যার বেলিকে একদমই দেখতে পারেন না। অবষ্যই বেলি কোনো খারাপ বিহেভ করেছে স্যার এর সাথে! এটাই সবার ভাবনা! কিন্তু আমি তো স্যারের চোখের দিক তাকিয়েও জীবনে কথা বলি নি। খারাপ বিহেভ তো দূরের কথা!
সামনে বসায় গেট দিয়ে সবার আগে আমি বেড়িয়ে এলাম! স্যার একটা ফ্ল্যাটে থাকেন ৪ তালায়! সেখানেই পড়ান আমাদের! এই ফ্ল্যাটটা স্যার কিনেছেন যাতে আমাদের পড়াতে প্রব্লেম না হয়। আর কোনো অভিযোগ যাতে না আসে!
দুপুর ২ টায় পড়তে এসেছিলাম এখন ৪ টা বাজে! হঠাৎ পিছনে ফিরে উপরে চোখ পড়তেই দেখলাম স্যার বারান্দার রেলিং ধরে এদিকেই তাকিয়ে আছেন! আমাকে ঘুড়তে দেখে স্যার ভিতরে চলে গেলেন! আহ?
মাঝে মাঝে আমার খুব কান্না পায় স্যারের বিহেবে! কি করেছি আমি উনার সাথে?
আমাকে পড়াতে না চাইলে বললেই তো হয়। আমি তো এতোটা অবুঝ না যে বুঝতে পাড়বো না। আমি নাহয় অন্যটিচার খুজে নেবো। ঢাকায় ও স্যার আমার সাথে এমন বিহেভ করতো৷
ওহ বলতেই ভুলে গেছি বর্তমানে আমরা চট্রগ্রামে আছি। কিন্তু আগে ঢাকায় ছিলাম আর স্যার ও সেখানে থাকতো।
যখন আমরা ঢাকায় ছিলাম তখন আব্বু আমায় তৃষ্ণা স্যারের কাছে দিয়েছিল পড়তে। স্যার টাকা ছাড়াই অনেক স্টুডেন্টস পড়াতো। স্যারের বাবা তো প্রায়_সময় চিল্লাতো যে ” আমার এতো বড় ব্যাবসা কে দেখবে। তুই শিক্ষকতা ছেড়ে আমার ব্যবসায় হাত লাগা ” কিন্তু স্যার পাত্তা দিতো না কারন তার শিক্ষক কেরিয়ার অনেক পছন্দের।
তখন আমি ৭ এ পড়ি৷ প্রথমত স্যার ভালো ভাবে কথা বলতেন মিষ্টি ভাবে কথা বলে বুঝাতেন। কোনো কিছু না বুঝলে হাসি_মাখা মুখ নিয়ে একশো বার বুঝাতেন! মাঝে মাঝে তো গল্প ও শুনাতেন। আর প্রায়_সময় আমায় গান শুনাতেন! আবষ্যই ভালোবাসার গান শুনাতেন! কিন্তু আমার কাছে সেই গান গুলো বোরিং লাগতো! কিন্তু তাও মুচকি হেসে শুনতাম! ধীরে ধীরে স্যারের ব্যাবহার চেঞ্জ হতে থাকে। গান তো দূরের কথা পড়ার ব্যাপার ছাড়া আর কোনো কথাই বলতেন না! আর হঠাৎই আমার উপড় চিল্লিয়ে উঠতেন!
স্যারের কাছে ৮ মাস পড়ার পর যখন ৮ এ উঠবো তখন বাবার কাজের জন্য ট্রান্সফার হতে হয় চট্রগ্রামে। আমি তো অনেক খুশি হয়েছিলাম যে তৃষ্ণা স্যারের কাছে আমায় আর পড়তে হবে না।
সকালে আমরা চলে যাবো ঠিক তার আগের সন্ধ্যায় আব্বু স্যারকে ফোন করে বলে দেয় যে আমি আর পড়বো না।
স্যার কি বলে তা জানি না? কিন্তু আব্বু বলেছে যে স্যারের বাসায় গিয়ে বই গুলো নিয়ে আসতে। আমিও ভাবলাম যে লাষ্ট বার স্যারকে সালাম দিয়ে আসবো।
বিকেল দিকে আমি স্যারের বাসায় যাই। বিল্ডিংয়ের ৮ নাম্বার ফ্ল্যাট ছিলো স্যারদের! স্যারদের ফ্ল্যাটটা সব ফ্ল্যাট থেকে আলাদা ছিলো! সুন্দর বললেও কম হবে। আমি গিয়েই দেখি স্যারের আম্মু মানে আন্টি ডাইনিং এ খাবার বাড়ছে,আর আংকেল নিউসপ্যাপার পড়ছে। পাশেই স্যারের বোন বসা আর কেউ ছিলো না। আন্টি আমায় দেখে বলল…….
” বেলি? তোমার স্যার স্টাডিরূমে!
আমি স্টাডিরুমের দিক এগিয়ে গেলাম দেখি স্যার চেয়ারে মাথা হ্যালান দিয়ে চোখ বুঝে আছেন। মে বি মাথা ব্যাথা ছিলো।
” স্যার আমি বেলি! আসবো?
স্যার চোখ বোঝা অবস্থায় বললেন….
” কাম!
ট্যাবিলের উপর সকল বই গুলো রাখা ছিলো। আমি বই গুলি গুছিয়ে নিলাম….
” স্যার?
এইবার স্যার আমার দিকে তাকালেন। চোখ গুলি ভয়ংকর লাল ছিলো। এমন লাল থাকার কারন সেদিনও বুঝি নি আর আজও বুঝি না! নিচু স্বরে বললাম….
” স্যার আমি চলে যাবো কাল। ভালো থাকবেন। আসসালামুয়ালাইকুম।
কিন্তু স্যার কিছু বললেন না। যেমন ভাবে ছিলেন ঠিক তেমন ভাবেই তাকিয়ে আছেন। আমি চলে যাচ্ছিলাম তখনি স্যার ডাকলেন…
” বেলি..?
আমি পিছনে তাকাতেই দেখি স্যার আমার সামনে। কিছু বলার আগেই স্যার আমার মাথাটা তার বুকের সাথে মিশিয়ে ধরে। আমার মাথায় ধীরে ধীরা হাত বুলাতে লাগলেন………
” পড়ালেখা মন দিয়ে করিয়ো! নিজের যত্ন নিয়ো। দুষ্টুমি একদম করবে না। সারাদিন খেলাধুলা করার প্রয়োজন নেই! আম্মু আব্বুর কথা শুনবে। আইসক্রিম একদম ই খাবা না।
আর রাস্তা_ঘাটে চলাফেরা কম করবে! ওখানে সাবধানে থাকবে। আর তাড়াতাড়ি বড় হওয়ার চেষ্টা করবে! হয়তো কেউ তোমার বড় হওয়ার অপেক্ষা করছে! অনেক অপেক্ষা!
স্যারের ভয়েসটা না কেমন জানি লাগছিলো। কেমন অদ্ভুত ছিলো ভয়েস যেখানে হয়তো কোনো কষ্টের, অভিমানের আর্তনাদ ছিলো।
আমি স্যারের বুকেই মাথা নাড়ালাম। স্যার আমার মাথাটা তার বুক থেকে সড়িয়ে আমার গালে হাত রাখলো। স্যারের হাত গুলি অসম্ভব ভাবে কাপছিলো! আর তাও অনেক। আমার গাল দু’টি শক্ত করে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বললেন…
” ভালো থেকো বেলি…!
কথাটা বলেই স্যার স্টাডিরুম থেকে চলে গেলেন। আমি কিছুক্ষণ সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলাম! কেনো জানো সেদিন প্রচন্ড খারাপ লেগেছিলো ! কেনো খারাপ লেগেছিলো তা আজও বুঝি নি! সব বই গুলি গুছিয়ে নিয়ে বেড়িয়ে এলাম!
সকালে ট্রাকে করে আমাদের সকল ছামান গুছানো হলো! চলে যাবো তখনি দেখি স্যার আমার দিকে তাকিয়ে আছেন! আমি ” স্যার ” বলে ডাকলাম! সে একই ভঙ্গিতে তাকিয়ে ছিলেন! আমি হাতে ইশারা জানালাম ” বায় “।
স্যার কোনো কথা না বলে ভিতরে চলে গেলেন।
আমরাও এসে পড়লাম চট্রগ্রাম। ধীরে ধীরে দিন যেতে লাগলো আমিও ৮ উঠলাম। আমিতো প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম যে তৃষ্ণা নামের একজন শিক্ষক ছিলো! যিনি আমায় পড়াতেন! ৭_৮ মাস পর স্যারকে আমাদের স্কুলে দেখলাম তাও আমার ক্লাসে। তখন লাষ্ট ক্লাস ছিল আমাদের! প্রিন্সিপাল স্যার তাকে সকল স্টুডেন্টসদের সাথে পরিচয় করাচ্ছিলো! আমি তো অবাকের সাথে সাথে প্রচন্ড খুশি! বসা থেকে দাঁড়িয়ে গিয়ে স্যারকে সালাম দিলাম বাট স্যার কিছুই বললেন না।
তারপর বাবা কি মনে করে আবার তৃষ্ণা স্যারের কাছে পড়তে দিয়ে দিলেন।
আমি তো এটাই ভেবে পাই না? স্যারদের নিজেদের বাড়ি ঢাকায়। তো এখানে থাকার মানেটা কি?
চলবে….?
[ সিরিয়াসলি গাইস? লাইক তৃষ্ণা লেডিস নেম? ইট’স আ বয়েস নেম! আর কেউ বলছো গল্পের টাইটেল চেঞ্জ করতে, কেউ বলছো নায়িকার নেম চেঞ্জ করতে, কেউ বলছো নায়কের নেম চেঞ্জ করতে! আহ আম ফেড আপ! লিসেন ফার্সট টাইম সব কিছুই আননোন লাগবে! স্লোলি ভালো লাগবে! বুঝেছো!
আমি একবার যেটা শুরু করি সেটার কিছুই চেঞ্জ করতে পারবো না! কজ ইট’স আ থিম ইয়ার! হুটহাট চেঞ্জ করা যায় না! ভালো না লাগলে বলো একেবারে স্টোপ করে দেবো! ??]

অতিরিক্ত চাওয়া ?
নাবিলা ইষ্ক
পর্ব : ৩
হাটতে হাটতে কিছুটা গিয়েই দাঁড়িয়ে পরলাম। সামনে আমার আব্বু! দৌড়িয়ে গিয়ে আব্বুকে জড়িয়ে ধরলাম… ” আব্বু
” হুম প্রিন্সেস? [ কথাটা বলেই আব্বু আমায় দু’হাতে জড়িয়ে নিয়ে কপালে চুমু দিলো ]
” কোথায় যাচ্ছিলে?
” এইতো বাজারে ”
” আমিও যাবো?
” ঠিকাছে কিন্তু আমার হাত ধরে থাকবে। বুঝেছো?
” জি
” চলো!
কাধে ব্যাগ নিয়েই আব্বুর সাথে বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। রাস্তার মোড় থেকে আব্বু আইসস্ক্রিম কিনে দিলো। আমি খাচ্ছি আর আব্বু নানান জিনিস কিনতে ব্যস্ত। সুপারহিরো আমার আব্বু। আমরা এতোটা বড়লোক নই। মিডেল ক্লাস ফ্যামিলিতে বিলং করি। আব্বু একজন সাধারন ব্যাংকর। আম্মু হাউস ওয়াইফ। তারপরও আমাদের এইটা হ্যাপি ফ্যামিলি। আমি, আম্মু, আর আব্বু। আম্মুর ৪৯ বয়স আর আব্বুর ৫৫ চলছে।
বাজার করে বাপ_মেয়ে বাসায় চলে আসলাম। নানান কথা আর দুষ্টমি করে সন্ধ্যা পার হতেই পড়তে বসতে হলো। এই বছর সেষের দিকে…
আর কয়েকমাস পরেই আমার J.S.C এর এক্সাম। টেনশান তো প্রচুর হয় কিন্তু তৃষ্ণা স্যার যেভাবে বুঝিয়ে বলেন তাতে সব টেনশান নিমিষেই গায়েব হয়ে যায়।
স্যার! অনেক পড়াদেন আমায়! যেটা আমি কখনো পড়ে যেতে পারি না প্রাইভেটে। কিন্তু স্কুলে স্যারের ক্লাসের পড়া পরে যাই! কারন স্যার মারেন পড়া না দিলে। আমি এখনো মাইর খায় নি কারন ওলয়েজ পড়া পড়ে যাই।
কিন্তু এই চ্যাপ্টার আমার মাথার উপড় দিয়ে যাচ্ছে। প্রাইভেট পড়তে গেলাম তখন শিখবো, ভেবেছিলাম কিন্তু ভুলে গেছি। এভাবেই ইংলিশ আর গনিতে আমি অনেক কাচা।
হঠাৎ মনের টনক নড়তেই মায়ের ফোনটা লুকিয়ে টিপতে লাগলাম। আমার একটা গপন একাউন্ট আছে ফেসবুকে যেটা আমি ছাড়া আর কেউ জানে না। যেই ভাবা সেই কাজ লগইন করলাম। সাথে সাথেই ক্রাশের পিকচার সামনে.. ফ্যানপেজ থেকে আপডেট হলো মাত্র….
এই ছেলেটাকে আমার এতো কেন ভালো লাগে…
সারাদিন বসে বসে পিক দেখলেও দেখা আর ফুরাবেনা। উফ যদি রিয়েলে দেখতে পারতাম… ?
[বারুন কাম না ইয়ার আই ওয়ানা হাগ ইউ… ???]
কারো এখানে আসার আওয়াজ পেতেই ফোন রেখে ঘুমিয়ে পড়ার এক্টিং করলাম। মা এসে চিল্লাতে শুরু করলো….
” বেলি খাবি আয়। আর একবার ডাকতে আসতে হলে দুধ খেতে দিবো না।
আমি লাফ দিয়ে উঠে মায়ের পিছে পিছে যেতে লাগলাম। কজ আমি দুধের ভক্ত।
খাওয়া_দাওয়া করে আমি ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
ঘুম ভাংলো সকালে মায়ের ডাকে। মা চেচাচ্ছে….
” বেলি ৬ টায় ক্লাস আরম্ভ হয়। এখন ৫:২৭ বাজতে চলল। কখন রেডি হবি আর কখন যাবি? প্রতিদিন দেড়ি করে স্কুলে যেতে কি তোর ভালো লাগে? শরম ও তো করে। মহিমা আন্টির মেয়ের থেকে কিছু শিখ।
আমি তাড়াহুড়ো করে রেডি হতে ব্যস্ত। মা ও আমায় রেডি করাতে ব্যস্ত। ব্যাগে মা টিফিন ভোরে দিলো। আর হাতে ২০ টাকা দিয়ে বলল…
” পুরো টিফিন বক্স যেনো খালি পাই।
আমি মাথা নাড়িয়ে দিলাম দৌড়। মাত্র ১৫ মিনিট বাকি। আমার দৌড় কে আর দেখে। দৌড়াতে দৌড়াতে চুল ও আওলিয়ে যাচ্ছে তাতে কি? আমি দৌড়াতে ব্যস্ত। তারপর অনেক অবষানের পর পৌছালাম….
কিন্তু আম লেট..!
গেটে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে কারন ওল্রেডি শপথ পাঠ চলছে। কিছুক্ষণ পড় আমার সাথে আরো কিছু ছেলে মেয়ে ছিলো সবাইকে ভিতরে প্রবেশ করিয়ে গেট সহ সাইডে দাড় করিয়ে রাখলো! যা আমার সাথে প্রতিদিন হয়। পাশের ছেলে_মেয়ে গুলি মুখ ঢাকতে ব্যস্ত ব্যাগ দিয়ে। শুধু আমি একমাত্র ব্যাক্তি যে নরমালী সামনে তাকিয়ে সবার হাসাহাসি দেখছি।
শপথ পাঠ সেষ হতেই প্রার্থনা শুরু হলো। শিক্ষার্থীরা সাড়ি বেদে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে! ঠিক তাদের সামনে সকল স্যার_ম্যাডামরা দাঁড়িয়ে! তাদের মধ্যে তৃষ্ণা স্যার ও আছেন। ম্যাডামদের পাশেই। আমাদের স্কুলে তৃষ্ণা স্যার একটু বেশি ইয়াং অন্যান্য টিচারসদের ক্ষেত্রে। যার কারনে ক্লাস টেন এর আপুরা স্যারকে প্রচুর জ্বালায়। নাইন এর ও অনেক আপুরা এমন। অনেকবার স্যার বিচার দিয়েছে এই মেয়েদের নিয়ে।
জাতীয় সংগীত গাওয়া হতেই সবাই লাইন হয়ে নিজেদের ক্লাসে যেতে লাগলো। ওদের যাওয়া হতেই আমাদের শারীরিক শিক্ষা স্যার এসে বলতে লাগলেন…
” এই যে তোমরা আজও লেট। কাল থেকে লেট করলে আর স্কুলে ঢুকতে দেওয়া হবে না। গেট থেকেই বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
যথারীতি মাথা নাড়ালাম। কারন প্রতিদিন শুনতে হয়…
” যাও ক্লাসে…
দৌড় দিতে শুরু করলাম কাধে ব্যাগ নিয়ে। যেতে যেতে তৃষ্ণা স্যারের সাথে দেখা হলো। মে বি রেগে আছে। আমার দিক রাগি চোখে তাকিয়ে। আমি মুচকি হেসে সালাম দিলাম…
ক্লাসে স্যার ওল্রেডি ঢুকেছে। দরজায় আমাকে ৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। ক্লাসের অনেকেই মিটিমিটি হাসছে। অবষেশে ক্লাসে ঢুকতে পারলাম পিছনের ব্যাচে হাসানের সাথে বসলাম। ও অনেক ফ্রেন্ডলি একটা ছেলে। আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড ও বলতে পারো। আর কারো সাথে আমার এতো ভাব নেই শুধু ও ছাড়া।
অতপর ৪ টা ক্লাস সেষ করলাম। কিছু ক্লাসে দাড়াতে হয়েছে আবার কিছু ক্লাসের পড়া পেরেছি।
টিফিন টাইম দিতেই আমি টিফিন রূমে যেতে শুরু করলাম। সাথে হাসান তো আছেই। ওর ও আমি ছাড়া তেমন ফ্রেন্ড নেই! তাই আমিও হাসানের বেষ্টি। দু’জন মিলে টিফিন রূমের পিছনের টেবিলে বসলাম….
বক্স খুলেই, আমার কান্না পাচ্ছে। মা সবজি দিয়েছে রূটির সাথে। তাও তেল ছাড়া রূটি। আমি জানি মা ইচ্ছা করে দিয়েছে যাতে খুদায় জড় করে এগুলো খাই। ঘড়ে ডিম থাকতেও কেন সবজি দিলো। না খাবো না? রেগে বক্স নিয়ে টিফিন রূম থেকে বেড়িয়ে আসলাম। পিছনে হাসান ও।
” কিরে বেলি কি হয়েছে?
খাবি না টিফিন?
” নাহ। দেখনা মা কিসব সবজি দিয়েছে।
” আচ্ছা আমার থেকে খাবি আয়।
” নাহ তুই খা। আমি খাবো না?
ক্ষুদাও অনেক লেগেছে। পাশে দাঁড়িয়ে আছে হাসান। দুজনে নিচে তাকিয়ে আছি। অনেকে মাঠে খাচ্ছে ক্যান্টিন থেকে কিনে। আমারও তো ২০ টাকা ছিলো। যেই ভাবা সেই কাজ ২০ টাকা নিয়ে ক্যান্টিনের উদ্দেশ্যে দৌড় দিলাম। পিছনে হাসান ও দৌড়াচ্ছে। দৌড়াচ্ছি আর হাসছি দুজনি। সিড়ি বেয়ে নামছিলাম দৌড়িয়ে তখনি মাহবুব স্যার ধমক দিলেন উঠতে উঠতে….
” এইভাবে দৌড়াচ্ছো কেনো..?
তৃষ্ণা স্যার ও ছিলেন মাহবুব স্যার এর সাথে। আমি আর হাসান অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে…
” স্যার ক্যান্টিন যাচ্ছিলাম।
” তো শান্ত ভাবে যাও। এই শীতকালে ফ্লোরে পরে গেলে প্রচন্ড ব্যাথা পাবা। বুঝেছো?
” জি স্যার।
মাহবুব স্যার চলে যাচ্ছেন বাট তৃষ্ণা স্যার সামনে দাঁড়িয়ে তাই যেতেও পারছি না। হটাৎ স্যারের আওয়াজে তার দিক তাকালাম…
” হাসান?
” জি স্যার..?
” যাও টিফিন করো..!
” ওকে স্যার।
হাসান চলে যাচ্ছে দৌড়ে। আমি তো দাড়িয়েই আছি মাথা নিচু করে। এভাবেই আমি তৃষ্ণা স্যারকে বড্ড ভয় পাই।…
” কোথায় যাওয়া হচ্ছিলো…?
” স…স্যার ক্যান্টিন।
” টিফিন দেয় নি আন্টি..?
” জি দিয়েছে।
” তোহ?
” সবজি খেতে ইচ্ছে হয় না।
স্যার কিছুক্ষণ আমার দিক তাকিয়ে থেকে বলল..
” জ্যাকেট কি কমড়ে বাধার জন্য?
আমি তাড়াতাড়ি জ্যাকেট কমড় থেকে ছুটিয়ে গায়ে পড়ে নিলাম।
স্যার ভাড়ি আওয়াজে বলে উঠলেন…..
” কাম উইথ মি..?
চলবে….?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here