হৃদয় জুড়ে শুধু আপনি শেষ পর্ব

0
249

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#অন্তিম_পর্ব
#জান্নাত_সুলতানা

প্রিয়তা এক দৃষ্টিতে চাঁদ হীন আকাশ পানে তাকিয়ে আছে।
এখন অবশ্য চাঁদ থাকলেও দেখা যেতো না এতো উঁচু উঁচু দালানের ফাকে বেলকনি হতে চাঁদ দেখা বিলাসিতা বই কিছুই না।যেমন টা এখন সাদনান নামক পুরুষ টার দেখাও খুব কমই পাওয়া যায়।
কিন্তু আকাশ টা একটু একটু দেখা যাচ্ছে।
ঠিক প্রিয়তাও সাদনানের এভাবে একটু একটু রোজ সকালে দেখা পায়।

কিছু তাঁরা মিটমিট করেছে।
ঠিক প্রিয়তার মনটাও মিটমিট করছে।কখন প্রিয় পুরুষটার দেখা পাবে।

রাত হয়তো বারো টার কোঠা পেড়িয়েছে।
আজও সাদনান দেড়ি কি করে করতে পারে প্রিয়তা সেটা ভেবেই মন টা খারাপ হচ্ছে বেশি। আজ বিয়ের দু বছরেও সাদনান আগের মতো এখনো লেট করে বাড়ি ফেরা।যদিও এখন আর হুটহাট কোথাও যায় না। আর গেলো জানিয়ে যায়। এখন অবশ্য সাদনান রা ঢাকা থাকে ওদের যে বাড়ি টা আছে সেখানে।
তবে সাদনান আর প্রিয়তা আগের নেয় সাদনানের সঙ্গে সাদনানের অফিসের সুবিধারতে আগের ফ্ল্যাট এ থাকে।
প্রিয়তার ছোট্ট মনটা অনেক অভিযোগ, অভিমান জমা হয়েছে এই দু বছরে।
তবে এই অভিযোগ সাদনানের শোনার সময় কোথা? অভিমান সেটাই বা দেখার সময় কোথায়? সে তো বিজনেস টপ করে এখন আরো বড় বড় কোম্পানির সাথে দেশের বাহিরেও ডিল,মিটিং, এসব নিয়ে ব্যস্ত থাকে।
তবে সাদনান নিজেও বেশ অনুতপ্ত। বউয়ের প্রতি এমন হেলাফেলা সে করতে চায় না। তবে সাদনান চেয়েও যেনো কিছু করতে ব্যর্থ।

প্রিয়তার এখন ঢাকা একটা ভার্সিটিতে পড়ে।সারাও কুমিল্লা একটা ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। রাহানের বাবা মা ওর বোনের কাছে দেশের বাহিরে আছে এখন।আর মাইশার একটা ছেলে আছে।নাম মিশান চৌধুরী। এক বছর চলে।
দেখতে অনেক মিষ্টি। আয়না আর রাহাত ইনিয়া কে নিয়ে আর দেশে আসে নি।ওখানেই নিজেদের পরিচয় করেছে।
আজমল চৌধুরী কেও লন্ডন নিয়েছে।
আজমল চৌধুরী অসুস্থ তাই ওখানে ওনার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে।
আয়ান আর মাইশা আজমল চৌধুরী সাথে দুবার লন্ডন গিয়ে দেখা করে এসছে।

সাদনানের বাবা মাও হজ করতে গিয়েছে। মূলত সেই জন্যই এখন সাদনান প্রিয়তা কে নিয়ে ওদের অফিসের কাছে ফ্ল্যাট এ রয়েছে।

প্রিয়তা এসব ভাবতে ভাবতেই বেলকনিতে সোফায় বসে।
তবে আজ যত রাতেই হোক প্রিয়তা সাদনানের সঙ্গে কথা বলবে।
আর একটা আবদারও করবে।
এসব ভাবতে ভাবতেই রুমে এসে ঘড়ির কাঁটার দিকে নজর দেয়।
একটা বাজতে আর বেশি সময় নেই।
বিয়ের দু টি বছর আজ শেষ হয়ে তিনে পা দিলো।
গত বছর সাদনান বেশ ঘটা করে বউ কে নিয়ে বিবাহ বার্ষিকী পালন করেছে।
কিন্তু এবার কোনো খবর পযন্ত নেই।

প্রিয়তা আলমারি খোলে বিয়ের কিছু ফটো দেখে। তার পর সে গুলো রেখে দিয়ে আলমারি টা বন্ধ করতে গিয়ে একটা কিছু ভেবেই মিষ্টি কালারের একটা শাড়ী হাতে তোলে নেয়।
শাড়ী টা দেখতে বেশ সুন্দর। শাড়ী টা সোনালী বর্ণের সুতু দিয়ে মিষ্টি কালারের উপর কাজ করা কি সুন্দর ফুটে আছে।
এটা গত বছর সাদনান উপহার দিয়েছিল প্রিয়তা কে।
তবে এক বার পড়ে শুধু বাবা বাড়ি গিয়েছে প্রিয়তা।
আর কখনো ধরেও দেখা হয়নি।
মুলত এতো এতো শাড়ী ভিড়ে নিতান্তই তুচ্ছ বলা চলে শাড়ী টাকে ।
কারণ সাদনান প্রিয়তা কে সাপ্তাহ বা মার্কেট গেলেই শাড়ি কি দেয়।
প্রিয়তা বাসায়ও শাড়ী পড়ে থাকতে হয়।
আর এটা সাদনানের আদেশ।
এই শাড়ী পড়ে থাকার আইন টা সাদনান নিজে করলেও
তবে এখন সাদনানের সে সব দেখার সময় কোথায়?

—————–

-“সাদনান ভাই।আপনি বরং এখন রুমে চলে যান
বাকি টা আমরা সবাই মিলে সামলে নেবো।”

সাদনান লাইটিং এর কাজ দেখিয়ে দিচ্ছে একটা ছেলে কে।
ঠিক তখুনি মাইশা কথা টা বলে।
আয়ানও এগিয়ে আসে রাহান, সারাও আসে।

-“হ্যাঁ ভাইয়া তুমি গিয়ে প্রিয়তা কে দেখো।
মহারানী নিশ্চয়ই রেগে আছে। ”

-“আচ্ছা। ”

সারার কথায় সাদনান ছোট জবাব দেয়।
অতঃপর ছাঁদ হতে নিজের রুমের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।
প্রিয়তা শাড়ী টা বিছানায় রেখে এটার সব প্রয়োজনী জিনিস বের করেছিল।
আর ঠিক তখনি বলিষ্ঠ শরীরে ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেলো কোমরে।
প্রিয়তা চোখ জোরা বন্ধ করতেই টুপ করে এক ফোঁটা জল চোখ হতে গাল বেয়ে গড়িয়ে পরলো।
এই স্পর্শ যে ওর পরিচিত। অতি কাছের ভালোবাসার মানুষটার স্পর্শ।

সাদনান ততক্ষণে বউ কে নিজের দিকে ঘুরি নিয়েছে।

-“সরি সোনা৷”

বলতে বলতে সাদনান প্রিয়তা কে জড়িয়ে ধরে।

প্রিয়তা কিছু বলে না। নিজেও জড়িয়ে ধরে স্বামী কে।প্রিয়তা জানে সাদনান ইচ্ছে করে এমন করে না। কিন্তু তবুও মন টা কেন যেনো মানতে নারাজ।
সব সময় অভিমান, অভিযোগ করতে ব্যস্ত থাকে।

-“চলো রেডি হয়ে নেও।”

দুটি পেকেট বিছানায় রাখতে রাখতে বলে সাদনান।

প্রিয়তা জিজ্ঞেস দৃষ্টিতে তাকায় সাদনানের পানে।

সাদনান সে সব উপেক্ষা করেই আলমারি থেকে সব নামিয়ে রাখা শাড়ীর সাথে প্রয়োজন সব প্রিয়তার হাতে দিয়ে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দেয়।
তার পর নিজেও সার্ট পেন্ট পাল্টে পাজামা পাঞ্জাবি পরে রেডি হয়ে নেয়।
সাদনান রেডি হয়ে চুল আঁচড়ে পিছনে ফিরে দেখলো প্রিয়তা শরীর তোয়ালে জড়িয়ে দৃষ্টি নত রেখেই কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

সাদনান মুচকি হাসে।এখন প্রিয়তা নিজে শাড়ী পড়তে পারে।
তবে আজ সাদনান আগের মতো করে নিজে পড়িয়ে দিবে।
কিন্তু আগে চোখ বন্ধ করে পড়াতো।
আজ চোখ খোলা রেখেই পড়াবে।
এসব ভাবতে ভাবতেই সাদনান বিছানায় রাখা শপিং ব্যাগ টা হাতে নেয় তার পর সে টার ভিতর থেকে একটা সাদা আর মিষ্টি কালার সংমিশ্রণ এর শাড়ী বের করে।

-“আপনি বাহিরে,,,

প্রিয়তা আর কিছু মুখ দিয়ে বের করতে পারে না। তার আগেই সাদনান প্রিয়তার কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের দিকে টেনে নিয়েছে।
প্রিয়তা দৃষ্টি আবারও নত করে।
সাদনান শাড়ী টা প্রিয়তার কোমরে গুঁজে দিতেই প্রিয়তা সাদনানের বাহু খামচে ধরে।
সাদনান অধর কামরে ধরে কিছু ভাবে। অতঃপর প্রিয়তা কে ছাড়িয়ে সুন্দর করে শাড়ি টা পড়িয়ে চুল গুলো খোলা রেখে হালকা করে সাজিয়ে দেয়।
প্রিয়তাও সাদনানের দিকে একবারও আর তাকায় নি। লজ্জা বেচারি রংধনুনেয় রং ধারণ করছে।
সাদনানও বুঝতে পারে বউ তার লজ্জা পাচ্ছে।
সাদনান চোখে হাসে। এই মেয়ে একটু আগে কি অভিমান টাই না করে ছিল। আর রাগও যে কি পরিমাণ জমা আছে আল্লাহ ভালো জানে।
কিন্তু এখন। সাদনান জানে বউ তার বড্ড সরল। কখনো মুখ দিয়ে ঝগড়া করে না। আর নাই সাদনানের সঙ্গে রাগ করে।বেশি কিছু আবদারও করে না।
শুধু কিছু কিছু ছোট ছোট চাওয়া আবদার আছে মেয়েটার। সময় দেওয়া। রোজ অফিস থেকে ফিরার সময় একটা বেলি ফুলের মালা।সাথে দুই একটা চকলেট বা আইসক্রিম।
সাদনান বউয়ের শখ আহ্লাদ পূরণ করে তবুও কাজের চাপের জন্য আজ বেশ অনেক দিন হয় বউয়ের সাথে সময় করে বেলকনিতে বসে এক কাপ চা বা কফি দুজনে একই কাপে ভাগ করে খাওয়া, না ফুল, নাই বা আইসক্রিম, কোনো টাই দিতে পারে না।
তবে এখন থেকে দিবে বলে ঠিক করেছে।
আর অফিস এখন ভালো পজিশনে আছে।আর তাদের অফিসের সঙ্গে সবাই ডিল করতে আসে এখন আর তাদের কোথাও যেতে হয় না।
সাদনান এই দু বছরে অনেক পরিশ্রম করে কোম্পানি কে এখানে এনেছে।
এই জন্যই বউয়ের সাথে দূরত্ব টা একটু বেশি হয়ে যাচ্ছিল।
তবে এখন সব ঠিক করে নিবে।
সাদনান হালকা করে প্রিয়তার ঠোঁটে লিপস্টিক লাগায় অতঃপর সেটা আগের স্থানে রেখে দিয়ে।
ঝুকে ঝট করে প্রিয়তা কোলে তোলে নেয়।
প্রিয়তা আকস্মিক চমকে উঠে। কিন্তু সাদনানের গলা জড়িয়ে ধরে ঠিক।

-“কোলে কেন নিচ্ছেন?আর এভাবে কোথায় যাব আমরা?”

-“যাওয়ার পর না হয় দেখে নিয়েন।আর কোনো প্রশ্ন
থাকলে যেখানে যাচ্ছি
সেখানে গেলে উত্তর পেয়ে যাবেন।”

সাদনান প্রিয়তা কে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উপর উঠছে।

-“আরে আপনি এখান দিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?
লিফটে দিয়ে যান।নয়তো আমাকে নামিয়ে দিন।”

ততক্ষণে সাদনান পাঁচ নাম্বার ফ্লোরে উঠে এসছে।

-“আর একটা শব্দ মুখ দিয়ে বের করলে ছয় তলা থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেবো।”

দাঁত কটমট করে বলে সাদনান।

-“আপনার কষ্ট হচ্ছে। ”

মলিন মুখ করে বলে প্রিয়তা।

-“আমি একবারও বলেছি?”

স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন করে সাদনান কিন্তু প্রিয়তা ফটাফট উত্তর দেয়

-“না কিন্তু,,,

আর কিছু বলতে পারে না প্রিয়তা কারণ ওরা ছাঁদে চলে এসছে।
আর সামনে আয়ান, মাইশা,সারা,রাহান মিশান কে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
প্রিয়তা বুঝতে পারছে না অবাক হবে না খুশি না-কি সাদনান এখনো ওকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে জন্য লজ্জা পাবে।

তবে সব সাইডে রেখে রাগ টাই হলো। ওরা কেউ আজ একটা ফোনও দেয় নি এমনকি এ বাসায় আসবে এটাও কেউ বলে নি। আর বেচারি প্রিয়তা রুমে বসে বসে কি কষ্ট টাই না পাচ্ছিল।
এখন কারোর সঙ্গে কথা বলবে না।কিন্তু প্রিয়তার সব ভুলে গেলো মিশানের আদোও আদোও বলা কন্ঠে কথার জালে।

-“তুমি কি আমার মতো ছোটো খালামনি?”

মিশানের কথায় সবাই ফিক করে হেসে দিল। প্রিয়তা রাগ ভুল অস্থিরতা আর লজ্জায় পড়ে গেলো।
সাদনানের দিকে তাকায়।
সাদনান বুঝলো বউ তার লজ্জা পাচ্ছে। তাই কোল হতে নামিয়ে দেয়।
প্রিয়তা এগিয়ে গিয়ে মিশাননকে কোলে নেয়।

-“না বাবা। তুমি কখনো এসছো মনি কে বলো নি কেন? সকালে তো কথা বলে ছিলে।”

-“মা না করছে।”

প্রিয়তা মাইশা আর সারা দিকে রাগি চোখে তাকাল।

-“আচ্ছা রাত তো অনেক হলো।চলো কেক টা কেটে নেও।”

-“হ্যাঁ,তার পর না হয় তারা তাদের মতো করে সময় কাটাবে।”

আয়ানের সাথে তাল মিলিয়ে বলে সারা তবে পরের কথা টা আস্তে করে বলে।প্রিয়তা আর মাইশা কাছে থাকায় শুধু দুজনেই শুনতে পেয়েছে।
প্রিয়তা সারার দিকে কটমট করে তাকালো তবে সারা সে সব উপেক্ষা করে এগিয়ে এসে মিশান কে কোলে নিয়ে কেকে এর কাছে চলে গেলো।
মাইশাও কেক টা সাজিয়ে নিলো।
তার পর কেক কাটে সবাই প্রিয়তা আর সাদনানকে শুভেচ্ছা জানিয়ে খাওয়া দাওয়া করে ওরা সবাই নিচে চলে যায়।রাহান সারা আজ আয়ানদের সাথে ওদের বাসায় চলে যাবে। বেশি দূরে না হওয়াতে সবাই ওখানেই থাকবে আজ রাতে।

সাদনান ছাঁদ টাকে অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে।লাইট, ফুল, বেলুন।
প্রিয়তা সব ঘুরে ঘুরে দেখছে।প্রিয়তা ভাবছিল সাদনান আজ-ও অফিসে কাজ করছে।কিন্তু সাদনান ওকে সারপ্রাইজ দিতে এতো সব করছিল।আর ও কিনা সাদনানের উপর রাগ অভিমান সব করে বসে ছিল।
ভেবে বেচারি প্রিয়তার মন টা একটু একটু খারাপ হলো।
কাঁধ শীতল ছোঁয়া পেতেই প্রিয়তা হালকা নড়েচড়ে উঠলো। সাদনান নিজের অধর ছুঁয়ে জিজ্ঞেস করে

-“এখানে কি আরো কিছুখন থাকবেন? ”

-“হুম আরোও একটু থাকি।”

সাদনান কিছু বলে না নিজেও বউ কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে।
বেশ কিছু সময় নিরবতা কাটে।

-“রাত দুটো বাজতে বেশি সময় নেই। রুমে যাই? ”

-“আচ্ছা। ”

কথা টা বলেই প্রিয়তা পিছনে ফিরতে সাদনান আবারও বউ কে কোলে নিয়ে সোজা রুমে এসে পা দিয়ে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢোকে।
তার পর মেইন দরজা আটকে এসে রুমের দরজা চাপিয়ে দিয়ে বউয়ের পাশে শুয়ে জড়িয়ে ধরে প্রিয়তার গলায় মুখ ডুবিয়ে সেখানে ছোট ছোট চুমু আঁকে।

-“আমি একটা জিনিস চাই।”

সাদনান প্রিয়তার কথায় গলা হতে মুখ তোলে।
জিজ্ঞেস দৃষ্টিতে তাকায় বউয়ের দিকে।

-“আপনি যখন বাসায় থাকেন না। আমার বড্ড একা একা লাগে। আমি আপনার মতো একটা,,,

-“আল্লাহ চাইলে অবশ্য আসবে সোনা।”

কথা শেষ করে সাদনান বউয়ের অধরে শব্দ করে চুমু খেলো।
প্রিয়তাও আঁকড়ে ধরে সামনের পুরুষ টাকে।
দুটি মানুষের মন দেহ ভালোবাসা আদান-প্রদান ব্যস্ত হলো।

——————-

-“মিশান ভাই তুমি কেন বার বার আমার সব বন্ধুদের ভয় দেখাও? ”

-“তুই খুব ভালো করেই জানিস। আমি কাউ কে জবাবদিহি করতে পছন্দ করি না। ”

সায়রার করা প্রশ্নে মিশান বুকে হাত গুঁজে ভাব নিয়ে জবাব দেয়

-“আচ্ছা তোমাকে বলতে হবে না।
আমি মনির কাছে সব বলে দেবো।”

মিশান ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে

-“কি বলবি?”

-“বলবো তুমি আমার সাথে কাউ কে খেলতে দেও না।”

সায়রা কথা শেষ করে চলে যাবার জন্য পা বাড়াতেই মিশান সায়রার হাত টেনে ধরে।

-“তুই আজ থেকে আমার সাথে খেলবি।আর তোকে আমি রোজ একটা করে চকলেট দেবো।
তাও মাকে বলবি?”

চার বছরের বাচ্চা সায়রা সাত বছরের মিশান এর এমন প্রস্তাবে খুশি মনে রাজি হয়ে গেলো।

-“কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে?”

মিশানের কথা সায়রা ছোট হাসি খুশি মুখ টা নিমেষেই চুপসে গেলো।
বয়স চার হলেও তার মিশান ভাই যে ভালো কিছু বলবে না সে ব্যাপারে ছোট সায়রা অবগত।

মুখ মলিন হয়।

-“বলো।”

-“তুই আমি আর প্রহর ছাড়া কোনো ছেলের ধারে কাছে যাবি না।
রাজি?”

সায়রা মনে মনে ভাবে এ আর এমন কি।
দু এক দিন গেলেই মিশান ভুলে যাবে।

-“আচ্ছা। ”

মিশান ওর ডান হাত সামনে আনে। সায়রার দিকে তাকিয়ে বলে

-“তবে আমাকে ছুঁয়ে কথা দে।”

সায়রা ছোট হাত টা মিশান এর হাতের উপর রাখে।
মিশান খুশি হয়।
অতঃপর মিশান নিজে পরিহিত থ্রি কোয়ার্টার পেন্ট এর পকেট হতে একটা চকলেট বের করে সায়রার হাতে দেয়।
সায়রাও খুশি হয়ে দোলনার উপর উঠে মিশানের ডান গালে একটা চুমু দিয়ে দৌড়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো। মিশান সায়রার কান্ডে থ হয়ে গেলো।
তার পর সায়রা চুমু খাওয়া স্থানে হাত দিয়ে কিছু ভেবে মুচকি হাসে।
আর ঠিক তখনি মাইশা আর প্রিয়তা দু বোন বাগানে এসছিল।
এটা দেখে দু বোন অনেক খুশি হয়।
কারণ মিশান সব সময় গম্ভীর কথা কম বলা চুপ থাকে। কিন্তু সায়রার সাথে হাসি খুশি দেখে খুশি হওয়া টাই স্বাভাবিক।

———
কেটে গেছে ছয় বছর। এরমধ্যে অনেক কিছু বদলেছে।
মাইশা আয়ান এখন প্রিয়তাদের সাথে এক বাড়িতে থাকে। সাদনানের বাবা মা তারা তাদের মতো নাতি নাতনী নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আজ্জম মির্জা আর এখন রাজনৈতি করে না।
মূলত সাদনানের কড়াকড়িতেই ওনি এসব ছেড়ে দিয়েছে।
তবে মাঝে মাঝে অফিস যায়।
আজমল চৌধুরী মা’রা গিয়েছে গত বছর। শফিক সওদাগর মারা গিয়েছে সায়রা হওয়ার এক বছর পর। সায়রা আর প্রহর প্রিয়তা আর সাদনানের ভালোবাসার অংশ।
প্রহর এর এক বছর চলে আর সায়রার চার বছর।
সুফিয়া বেগমও এখন প্রিয়তাদের সাথে থাকে।
রাহান সারা শশুর শাশুড়ী নিয়ে কুমিল্লা থাকে। সারা আর রাহানের একটা ছেলে হয়েছে। নাম সোহান আহামেদ ।তিন বছর চলে।
মাইশার চার মাস চলে আবারও দ্বিতীয় বারের মতো আয়ানের ভালোবাসার ফল আসতে চলেছে।

———-

রাত এগারোটা ছুঁই ছুঁই করছে।
প্রিয়তা কফি নিয়ে এসে দেখলো সাদনান বেলকনিতে দোলনায় বসে আছে।
একটু একটু দেখা যাওয়া চাঁদ হীন আকাশের পানে চেয়ে।

প্রিয়তা কফির মগ টায় একবার চুমুক দিয়ে সাদনানের হাতে দিলো।
সাদনানও বউয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে বিনিময়ে প্রিয়তাও হাসে।

সাদনান বউ কে টেনে আরো কিছু টা নিজের সন্নিকটে আনে।
এক হাত ধারা শক্ত করে গভীর ভাবে আলিঙ্গন করে বউকে।
নিজের রক্ষ ওষ্ঠ ছুঁয়ে বউয়ের কাপলে।

-“ধন্যবাদ জনাব।”

-“কেন?”

ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে সাদনান।

-“এতো এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য।”

-“আপাকেও ধন্যবাদ। এই দুট টা ভালোবাসা আমার জীবনে এনে দেওয়ার জন্য। ”

রুমে থাকা সায়রা আর প্রহর কে ইশারা করে দেখিয়ে বলে সাদনান।

সাদনানের কথা প্রিয়তা নাক মুখ কুঁচকে নেয়।

-“আপনার জীবন আপনার ভালোবাসা কি?
বলবেন আমাদের ভালোবাসা আমাদের জীবন,হুু।”

প্রিয়তার এমন কথায় সাদনান হেসে দিল।
অতঃপর বউকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
নিজেও বলে

-“আমাদের ভালোবাসার অংশ। ”

এভাবে ঝগড়া ভালোবাসা মিলিয়ে চলছে।সাদনান প্রিয়তার জীবন। আর এভাবেই চলতে থাকুক তাদের সংসার সন্তান নিয়ে তাদের জীবন।

“ভালোবাসা সত্যি সুন্দর যদি ভালোবাসার মানুষ টা সঠিক হয়। ”
ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল ভালোবাসার মানুষ গুলো।

~সমাপ্ত~

[অনেকের মতামত ছিল গল্প টা যেনো এতো তাড়াতাড়ি সমাপ্ত না করি।কিন্তু একটা কথা আছে না “লেবু বেশি চাপলে তেঁতো লাগে”।গল্প টাও তা হলে তেমন টাইপ হয়ে যেতো। এখন সবার ভালো লাগছে কয় দিন যাবার পর নাও লাগতে পারে। আর গল্প ভালো রিচ পাচ্ছে তাই বলে তো আমি এটা ইন্ডিয়ান সিরিয়াল বানাতে পারি না। তাই না? #হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি season 2 আসতে পারে যদি আপনার চান তবে। আর আমি লেখা লেখিতে নতুন অনুভূতি প্রকাশ করে ফুটিয়ে লিখতে গিয়ে হয়তো নার্ভাস হয়ে অনেক ভুল করেছি আমি জানি।এটা নিয়ে অনেকে অনেক কটু কথা বলেছে। আবার অনেকে ভুল ধরিয়ে দিয়ে উৎসাহ দিয়েছে। সবাই কে জানাই অন্তর থেকে ভালোবাসা।ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ। গল্প টাকে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। আবারও সবাই কে এতো এতো ভালোবাসা 🖤।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here