হৃদয় জুড়ে শুধু আপনি পর্ব ১

0
271

-“কেন বার বার আমার বিয়ে ভেঙ্গে দেন, সাদনান ভাই ? ”

লম্বাটে শক্ত পোক্ত পুরুষটি সামনে থাকা শ্যাম রমনীটার দিকে শান্ত দৃষ্টি নিহ্মেপ করলো। এতেই যেনো মানবীটা এক অজানা ভয় তটস্থ হলো। কথা বলার বাকশক্তি হারি গেলো। ঠোঁট জোড়া নেড়ে কিছু বলার জন্য কুলিয়ে উঠতে ব্যার্থ হলো ।
কেন এই মানবটার সামনে এলে তার এমন হয়?
এই সাদনান নামক মানব টিকে তো আজ কিছু কটু বাক্য শুনাতে এসে ছিল সে । কেন প্রতি বার তার বিয়ে ভেঙ্গে দেয়। সে তো এই মানবটার প্রতি অনুভূতি গুলো মাটি চাপা দিয়ে দূরে চলে যেতে চাই। তাহেলে কেন এই মানবটা বার বার তার বিয়ে ভেঙ্গে দেয়? এই নিয়ে চারটি বিয়ে ভেঙ্গেছে । মধ্যেবিত পরিবারের জন্য কি এটি চাট্টি খানি কথা? উঁহু মোটেও না। আর কতোটা লজ্জা জনক। একবারও কি এই মানবটা ভেবে দেখেছে। তাহলে কেন , সে বার বার চেয়েও কিছু বলতে পাড়ছে না।
বাইকে ঠেস দিয়ে হেলে থাকা মানবটা সামনে থাকা রমনীটার পানে তাকিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়, ফের তার চার ধারে তাকায়
-“কেউ যেনো এদিক টা না আসে খেয়াল রাখবি।
যা। ”
সাইডে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলে পেলে গুলোর কথাটা কর্নপাত হতে সবাই পস্তান করলো। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রমনীটা একবার আঁখি জোড়া তোলে সামনে সাদনান নাম পুরুষটার পানে তাকিয়ে সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামিয়ে নিলো। কি আছে ওই নয়নে এ কেন সে ওই চক্ষু জোড়ার দিকে তাকি থাকতে পাড়ে না।

-“হে, এখন বলোন প্রিয়তা। কি যেনো বলছিলেন? ”
শান্ত দৃষ্টিতে প্রশ্ন করে সাদনান

এতে যেনো প্রিয়তা নামের রমনীটা ভয়ে আর এক দফা আড়ষ্ট হলো । তবুও চেহারা সেটা ফুটতে দিলো না ।

-” আর কেউ না জানুক আমি তো জানি, আপনিই প্রতি বার আমার বিয়ে ভেঙ্গে দেন। কিন্তু কেন বার বার আমার বিয়ে ভেঙ্গে দেন ? এনিয়ে চাট্টি বিয়ে ভেঙ্গেছেন। জানেন এতে আমার বাবার লোকের সামনে কতটা অপমানিত, অপদস্ত হতে হয়েছে।
এক টানা কথা গুলো বলেই দম নিলো রমনীটি।

প্রিয়তা নামের রমনীটা চক্ষু কার্নিশ হতে গরিয়ে পরলো কয়েক ফোঁটা জল। এটা যেনো সামনে থাকা সাদনান নামক মানবটার সহ্য হলো না । হাত বাড়িয়ে মুছে দিতে গিয়েও ফের হাত নামিয়ে নিলো।

-“সবে মাত্র , এস এস সি, পরীক্ষা দিয়ে ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছেন । এতো তারা কেন বিয়ে নিয়ে ? আমি চাচার সাথে কথা বলবো এবিষয়ে। আপনি বাড়ি চলে যান। ”
বলেই রাহান নামের একটা যুবক কে ডেকে ফের শুধালো
-“একটা রিকশা ডেকে ওনাকে বাড়ি পৌঁছে দে।
বলেই বাইক নামক জরব্যস্তুটাকে স্টাট দিল। ”

-“আমি একাই এসছি। ”
বলেই প্রিয়তা হনহনিয়ে হেঁটে যায়গা থেকে মূহুর্তের মধ্যে পস্তান নিল প্রিয়তা।

-“ভাই ভাবি কি কিছু নিয়ে রেগে আছে ?
রাহান সাদনানের বিশস্ত লোক ও সাদনানের ব্যাপারে সব জানে। এক কথায় সাদনানের বাম হাত।

-“এবারও বিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছি, রেগে থাকার কথা নয় কি রাহান? ”

-“ভাই ভাবির বাবার সাথে কথা বলে দেখেন না একবার। ”

সাদানান এবার বাইক থেকে নেমে রাহানের কাঁধে হাত রাখে
-“তোর কি মনে হয় চাচা আমায় এমনি এমনি সব বলে দিবে। যে কেন ওনি প্রিয়তা কে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পরে লেগেছেন? উঁহু, কখনো না এর পিছনে নিশ্চিত অন্য কেউ আছে। ”
-“আপনার কি মনে হয় ভাই কে আছে? আর কি কারণ থাকতে পাড়ে বলে মনে হয়? ”
রাহান ফের প্রশ্ন করে

-“এখন বাড়ি যা। কাল দেখা হবে, আর যে কাজটা দিয়েছি ঠিক মতো করবি ।
সাদনান কথাটা বলেই বাইক স্টাট দিয়ে ধুলো উড়িয়ে পস্তান ঘটালো। আর পিছনে একঝাক প্রশ্নর ভিড়ে রেখে গেলো এক মানবকে।

———————————–

-“ভাইয়া বাবা তোমারে ডাকে। ”
সারা সাদনানকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো।

-“তুই যা। আমি ফ্রেশ হয়ে যাচ্ছি। ”
শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল সাদনান

-“আচ্ছা। ”
শটকাট জবাব দিয়ে চলে গেলো সারা।

সাদনান ফ্রেশ হয়ে বাবার গড়ের দিকে হাঁটা ধরলো।
-“আসবো ? ”

-“এসো। ”
শান্ত স্পষ্ট স্বরে জাবাব এলো ভিতর থেকে।

সাদনান দরজা ঠেলে গড়ের ভিতর প্রবেশ করে।
-“ডেকেছিলে? ”

আজ্জম মির্জা ছেলের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। নিজে বসে থাকা স্থানে পাশে ছেলেকে বসতে ইশারা করে । সাদনান বিনাবাক্য বাবার পাশে বসে পড়ে।

-“আব্বা আপনি কি জানেন, শফিক সওদাগরের মেয়ের বিয়েটা এবারও কেউ ভেঙ্গে দিয়েছে । ”
আজ্জম মির্জা কোনো ভনিতা না করে বলল

-“হুম বাবা, আমি খুঁজ নিবো ”
বাবাকে আশাস্ত করলো।

-“হুম , আরেক টা বিষয় আব্বা, শফিক হটাৎ কেন প্রিয়তা মাকে এতো তাড়াহুড়া করে বিয়ে দিতে চাইছে একটু খুঁজ নিবে। ওতো বলে ছিল ওর মেয়েকে অনেক পড়া লেখা করাবে। তাহলে এখন কেন এসব। ”
আজ্জম মির্জা চিন্তিত কন্ঠে বলল

এর মাঝে সাদনানের মা সালেহা বেগম, সাদনানের জন্য কফি আর স্বামীর জন্য চা নিয়ে উপস্থিত হলেন

-“হে আব্বা জান আপনার বাবা ঠিক বলছে। এ বিশয়টা একটু খুঁজ নিয়েন তো।

-“হুম, মা আমি খুঁজ নিবো তোমরা এনিয়ে চিন্তা করো না। আচ্ছা আমি গেলাম, ঘুমাব। ”
মা -বাবা দু’জন কেই কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো
“-বুঝতে পাড়ছি না কি হলো শফিের হঠাৎ করে? ”

-” আমিও ঠিক বুঝতে পারছি না মেয়েটাকে এ বয়সে বিয়ে দিতে বা কেন পাগলো হলো শফিক ভাই। আচ্ছা যাই বলো বিয়ে গুলো যে ভেঙে দিচ্ছে সে ভালোই করছে। কি বলো? ”

আজ্জম সাহেব ওনার স্রীর কথায় শুধু মুচকি হেসে চায়ে চুমুক দিয়ে ভাবতে মগ্ন হলো “চৌদ্দ বছর ধরে তো আর এমনি এমনি চেয়ারম্যানের করে আসছি না। আমি খুব ভালো করেই জানি তোমার ছেলেই বিয়ে ভেঙ্গে দেয়। এটা ভালো, কিন্তু হঠাৎই কেন আজ্জম ওর মেয়েকে বিয়ে দিতে চাইছে? ”
ওতো আমায় বলেছিল ওর মেয়েকে অনেক পড়া লেখা করাবে।

——————————

-“ভাইজান আপনি কি জানেন প্রিয়তা আজ আবার ওই চেয়ারম্যান এর ছেলের সাথে দেখা করেছে ? ”
ক্রোধ মিশ্রত কন্ঠে কথা গুলো বলেই উঠলো প্রিয়তার ফুপ্পি সুফিয়া বেগম। শফিক সওদাগর মাত্র হোটেল থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেতে বসেছেন। মেয়ের নামে নালিশ শুনে বোনের পানে তাকালেন

-“আমি ওকে বলে দিবো যেনো ও আর বাহিরে না যায়। ”
কথা শেষ করে শফিক মিয়া খাবারে খাওয়াতে মনোযোগ দিলেন। নিজের একটা ছোটো খাটো হোটেল আছে। আগে নিজেই আর একজন মিলে সামলাতো। এখন অবশ্য চার জন কর্মচারি। হটাৎ করে স্রী চলে গেলো। মেয়ের বয়স তখন চার। মেয়ের দিকে তাকিয়ে আর বিয়ে করলেন না। এদিকে আবার হোটেলের জন্য মেয়েকে সময় দিতে পারতো না তাই বোনকে নিয়ে এলেন নিজের বাড়ি মেয়ের দেখা শোনা করার জন্য। বোনেরও এক মেয়ে আছে। বোনকে নিয়ে আসার আরো একটা কারন বোনের স্বামী দেশের বাহিরে থাকেন। বোনের শশুর -শাশুড়ী নেই তিনি একা মেয়ে কে নিয়ে থাকে। তাই বোনকে নিয়ে এসেছে। আর বোনের জামাইও দেশে আসলে এখানেই থাকে। বউ, আর মেয়ে এখানে থাকে তাই ভদ্রলোকও ছুটিতে এখানেই থাকে।

———————————

-“প্রিয়তা মা তুমি কি কোনো কারণে চিন্তিত ? ”
প্রিয়তা পড়ার টেবিলে আনমনে বসে ছিল বাবার
কন্ঠ শুনে মাথা ঘুরিয়ে পিছনে দেখলো দরজায় তার বাবা দাঁড়িয়ে রয়

-“না বাবা । তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে কেন ভিতরে এসো।
প্রিয়তা কেদারা ছেড়ে দরজার কাছ হতে বাবার হাত ধরে আনলো তার পর খাটে বসিয়ে নিজে বাবার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো শফিক নিজেও মুচকি হেসে মেয়ের মাথায় বিলি কাটতে লাগলেন

-“বাবা কিছু বলবে ?”
প্রিয়তা বাবার চোখ দেখেই বোঝলো বাবা কিছু বলতে চায় তাই বিলম্ব না করেই বাবাকে চট করে প্রশ্ন করলো

-“হুম, মা বাবার ক্ষমা করে দিয়েন বাবা আপনাকে এ কয়দলিনে অনেকটাই আঘাত দিয়েছি। ”
ধরে আসায় গলায় উত্তর করলেন শফিক

-“না বাবা এতে তো তোমার কোনো দোষ নেই । সব আল্লাহর ইচ্ছে তিনি হয়তো চান না আমি আমার বাবাকে এতো তারা তাড়ি ছেড়ে চলে যাই। আমি অনেক খুশি বাবা। আর একটা অনুরোধ করবো প্লিজ বাবা আমি আরো পড়া লেখা করতে চাই। ”
সতেরো বছরের মেয়ের করুন কন্ঠে বলা কথা শফিকের কানে যেনে এখনো জন জন করে বাজচ্ছে

-“হে, মা আমার তুমি অনেক পড়বে বাবা আর কখনো ঔবিষয়ে তোমায় বাধ্য করবো না ।
বাবার কথায় প্রিয়তা অনেক খুশি হলো মনে মনে ছক কষলো কালই গিয়ে সারাকে সব বলবে। তার বাবা আর তাকে এখন বিয়ে দিবে না। সেও অনেক পড়বে, অনেক বড় অফিসার হবে। ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়লো প্রিয়তা। শফিক মেয়ের পানে তাকি ভাবে। আমি আমার ভুল বোঝতে পেরেছি মা। কাউকেতো আমি কথা দিয়েছিলাম আমি আমার মেয়েকে তার হাতে তুলে দিবো। তাহলে অন্য কারোর জন্য কেন আমি সেই কথার খেলাফ করতে পারি? উঁহু কখনো না । আমার মেয়ের সুখেই আমার ভালো থাকার কারন।

– “মা তুমি নিশ্চিতে ঘুমাও। বাবা আর কারোর কথায় শুনবো না। আমি তোমার অমতে আর কিছু করবো না। ”
বালিশে শুইয়ে মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে গড় থেকে পস্তান করলেন।

#চলবে……..

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#সূচনা_পর্ব
#জান্নাত_সুলতানা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here