বামনের ঘরে চাঁদ পর্ব ১২

0
609

বামনের ঘরে চাঁদ

সাজিয়ানা মুনির

১২.

( কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ)

কালো আঁধারে ঢাকা আকাশটায় ধীরেধীরে প্রদীপ জ্বলতে শুরু করেছে। চারিদিকে উজ্জ্বল আলো ছড়াচ্ছে। সোনালী ভোর এসে চৌকাঠে পড়ছে। চাঁদের জ্বর ছেড়েছে মাত্র। গরমে শরীর ঘামছে। কাঁথা সরিয়ে হাতপা মেলে দিয়েছে। আচমকা ঘুমের ঘোরে শরীরে শীতল স্পর্শ অনুভব করল। নিদ্রাতুর টলমল চোখজোড়া মেলে তাকালো। সূর্যের সোনালী আলো আষাঢ়ের মুখ ছুঁইছে। ঘুমে ভারী হয়ে আসা চোখজোড়া বুজে বুজে আসছে, তবুও আষাঢ় শক্ত অকপট হয়ে বসে। চাঁদের কপালে অনবরত জলপট্টি দিচ্ছে।
ভোর সকালে আষাঢ়কে এখানে দেখে চাঁদের পিটপিট চোখজোড়া বি/স্ফোরিত হয়ে উঠলো। কপালে সুক্ষ্ম ভাঁজ পড়লো। তবে কি রাতে সেটা স্বপ্ন ছিল না! সত্যি ছিল? নাকি পুরো ঘটনাটা তার হ্যালোসিনেশন ছিল। তড়াক করে উঠে বসতে চাইলো চাঁদ। শরীর ব্যথায় গতরে টান পড়লো তার। ব্যথাতুর মুখ করে কপাল কুঁচকে নিলো। আষাঢ় বিরক্তিতে ফোঁস করে শ্বাস ফেলল। গম্ভীর সুরে বলল,
‘ উঠছ কেন? সবসময় এমন চাঞ্চল্যতার কি খুব প্রয়োজন? ‘
মুখ কালো করে নিলো চাঁদ। যেখানে তার রাগ দেখানোর কথা সেখানে আষাঢ় তাকে রেগে কথা শোনাচ্ছে। চোখেমুখে চাপা রাগ ফুটে উঠল। জ্বরে মাথাটা ভার হয়ে আছে এখনো। টিপটিপ করে ব্যথা করছে। চাঁদ কপালে আঙুল বুলাতে বুলাতে বলল,
‘ আপনি এখানে কেন? কখন এসেছেন?’
আষাঢ় চাঁদের কাছ ঘেঁষে বসলো। কপাল থেকে চাঁদের আঙুল সরিয়ে দিয়ে মাথা টিপে দিতে দিতে বলল,
‘ গতরাতে।’
চাঁদ ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো। প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে বলল,
‘ কই আমি টের পেলাম না তো!’
‘ জ্বরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকলে কি করে টের পাবেন! এত জ্বর কিভাবে বাঁধালেন?’
‘ আবার বাঁধিয়ে দেখাবো? তাছাড়া আমি জ্বর বাঁধিয়ে মরে গেলেই বা কার কি আসে যায়!’
চাঁদের চোখজোড়া আকাশ পানে সবে জ্বলতে শুরু করা উত্তপ্ত প্রদীপটায়। কণ্ঠে ঝাঁঝালো অভিমান। আষাঢ় চাঁদের দিকে সামান্য ঝুঁকে এলো। চাঁদের অগোছালো কেশ গুছিয়ে দিতে দিতে বলল,
‘ কেউ একজনের ভীষণ আসে যায়। বুক পুড়ে তার ছারখার হয়।’
‘ কে সে?’
দূর আকাশে চেয়ে আছে চাঁদ। কন্ঠে উদাসীন আওয়াজ। আষাঢ় খানিকক্ষণ নিগূঢ় দৃষ্টিতে তার মুখপানে চেয়ে রইল। ঠোঁট মেলে সামান্য হাসলো। নিমিষ সুরে বলল,
‘ আছে একজন দূরের মানুষ চিনবেনা তুমি।’
এবার প্রচন্ডরকম বিরক্ত হলো চাঁদ। ভেবেছিল আষাঢ় মনের কথা বলবে! অথচ কি দারুণ কৌশল খাটিয়ে কথা ঘুরিয়ে নিলো। উদাসীন ভাবটা কে/টে গেল। অভিমানটা শক্ত হয়ে রাগে জমাট বাঁধলো। নাক ফুলিয়ে এক পাশ চেপে শুয়ে আষাঢ়কে জায়গা করে দিলো। চোখ বুজে পাশ ফিরেই গম্ভীর কন্ঠে বলল,
‘ সারারাত জেগে ছিলেন। এখন একটু ঘুমিয়ে নিন, নাহয় অসুস্থ হয়ে পড়বেন।’
চাঁদের ছেলেমানুষীতে হেসে ফেলল আষাঢ়। রাগ দেখাচ্ছে অথচ কথার ভাঁজে তার প্রতি অজস্র চিন্তা জড়িয়ে। মানুষ যতই ম্যাচিউর দেখাতে চেষ্টা করুক। বয়সের ছাপ স্বভাবে কিছুটা রয়েই যায়। চাঁদের ক্ষেত্রেও যেন তাই। গায়ে কাঁথা টেনে পাশে শুয়ে পড়লো আষাঢ়।

আজ অফিসে জরুরী মিটিং আছে।রাজিব সকাল সকাল অফিসের জন্য বেরিয়েছে। সবাই এক সাথে বসে নাস্তা করছে। চাঁদ হেলেদুলে রুটির টুকরো ছিঁড়ে ছিঁড়ে প্লেট সাজাচ্ছে। মুখশ্রীতে স্পষ্ট না খাওয়ার বাহানা ভেসে। লম্বা খোলা কেশ চোখেমুখে এসে লাগছে। আষাঢ় খাচ্ছে আর আড়চোখে চাঁদের দিকে তাকাচ্ছে। চাঁদের সাথে চোখাচোখি হতেই কপাল কুঁচকে নিলো চাঁদ। চোখ পাকিয়ে প্লেটে মনযোগ দিলো। জ্বর হলে মেয়েটা একদম বাচ্চাদের মত আচরণ করতে শুরু করে। উপরের কৃত্রিম শক্তপোক্ত আবরণ খসে পড়ে, ভেতরের বাচ্চা সুলভ নরম চাঁদ বেরিয়ে আসে। আষাঢ় ছোট্ট নিশ্বাস ফেলল। আরশির উদ্দেশ্যে বলল,
‘ আরেকটু পর আমরা বের হবো।’
নিস্তব্ধ ঘরটায় আচমকা শব্দ হতে চাঁদ আরশি দুজন চোখ তুলে তাকালো আষাঢ়ের দিকে। আরশি প্রশ্নবিদ্ধ সুরে জিজ্ঞেস করল,
‘ আমরা মানে?’
‘ চাঁদও সাথে যাচ্ছে।’
‘ চাঁদ যাচ্ছে মানে কি? সবেই তো এলো মেয়েটা!’
আরশির সুরে অবাক, হতভম্বতা স্পষ্ট। আষাঢ় কিছু বলতে যাবে তার আগেই চাঁদ কথা ছিনিয়ে বলল,
‘ আমার পরিক্ষা শেষ লম্বা ছুটি পেয়েছি। আর কিছুদিন এখানে থাকবো।’
ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকালো আষাঢ়। সোজাসাপটা কণ্ঠে বলল,
‘ তুমি আমার সাথে বাড়ি ফিরছ। কোনো কথা শুনতে চাইছিনা আর!’
আরশি কিছু বলতে চাইছিল। আষাঢ়ের রাগী চেহারা দেখে কিছু বলতে পারলো না আর। ভয়ে চুপসে গেল।

হাতমুখ ধুয়ে ঘরে এসে দেখলো মনমরা হয়ে বসে আছে চাঁদ। আষাঢ় কণ্ঠে তাড়া জুড়ে বলল,
‘ তাড়াতাড়ি তৈরি হও। উবার বুক করেছি এক্ষুনি চলে আসবে।’
‘ উবার কেন? বাসেই তো যাওয়া যেত।’
‘ এই অসুস্থ শরীর নিয়ে বাস জার্নি করা উচিত হবেনা তোমার।’
‘ তাহলে না হয় দুইদিন পর বাড়ি ফিরতাম।’
‘ দুইদিন কাজ ফেলে আমার পক্ষে এখানে থাকা সম্ভব না।’
চাঁদের অকপট আওয়াজ,
‘ আপনি চলে যেতেন। আমি পরে আসতাম।’
‘ তোমাকে এখানে রেখে গেলে আমি অশান্তিতে ভুগতাম।’
চোখ তুলে তাকালো চাঁদ। নিস্তেজ গলায় বলল,
‘ কেন আপনার অশান্তি হতো?’
আষাঢ় অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। চোখ সরিয়ে বলল,
‘ তুমি আমার দায়িত্ব।’
চাঁদ আবারও আশাহত হলো। ব্যথাতুর সুরে জিজ্ঞেস করল,
‘ আমি শুধুই কি দায়িত্ব আপনার?’
আষাঢ় কথা ঘুরালো। কণ্ঠে তাড়া দিয়ে বলল,
‘ দুপুরের আগে ফিরতে হবে। একটা বড় অর্ডারের কথা পাকাপাকি হবে।’
তপ্ত নিশ্বাস লুকাল চাঁদ। প্রতিবারের মত আবারও আশাহত।

গাড়িতে আষাঢ় থেকে বেশ দুরত্ব রেখে বসেছে চাঁদ। কিছুটা পথ চলতেই ঘুমিয়ে পড়ল সে। মাথা জানালার কাচে লেগে। চলন্ত গাড়ির ঝাঁকিতে বারবার বারি লাগছে। কড়া রোদটাও চোখেমুখে পড়ছে। বিরক্তিতে বারবার কপাল কুঁচকে নিচ্ছে চাঁদ । আষাঢ় এগিয়ে গেল, বুকের মাঝে ঘুমন্ত চাঁদকে জড়িয়ে নিলো। জ্বর ঠাণ্ডার ঔষধ খেয়েছে চাঁদ। ঘুমটা বেশ গাঢ় করে লেগেছে। বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে বেকারি থেকে কেক, নোনতা ঝাল জাতীয় কিছু নিয়ে নিলো। জ্বরের মুখ, সকালে ঠিকঠাক ভাবে নাস্তা করেনি মেয়েটা। ঘুম ভাঙলে যদি কিছু মুখে তুলে। চাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মেয়েটি বিড়ালছানার মত বুকের গভীরে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে। তপ্ত রোদ হিম বাতাসে মিশে তাদের ছুঁয়ে দিচ্ছে।

কথায় আছে, ‘টাকায় টাকা বাড়ে’। প্রতিবারের মত আজও টাকার সংকটে বড় অর্ডার হাত ছাড়া হলো আষাঢ়ের। নিদিষ্ট সময় অর্ডার পূরণ করার মত যথেষ্ট শ্রমিক মালপত্র কোনটাই তাদের নেই। হতাশ নিশ্বাস ফেলে মিয়িয়ে পড়া র/ক্তিম আকাশ পানে চেয়ে। চারিদিকের এত হতাশা বারবার তাকে আত্মবিশ্বাস হারাতে বাধ্য করে। নিরাশ, অবসন্ন করে। এদিকে ব্যাংকের লোন চলছে। এখনো কয়েক মাস বাকি আছে। চারিদিকের এত চাপ, হতাশা এত দায়িত্বের মাঝে অনুভূতি নামক জিনিসটাই যেন তার মধ্যে থেকে হারিয়ে গেছে। অনুভূতিহীন কঠোর যন্ত্রে রূপান্তরিত হয়েছে। সবকিছুর মাঝেও চাঁদ নামক মিষ্টি য/ন্ত্রণায় মাঝেমধ্যে পাথর হৃদয়টা কেঁপে উঠে। হাজারো ব্যস্ততা, হতাশার মাঝে ওই মুখখানায় যেন এক চিলতে শান্তির আশ্বাস মিলে।

চলবে……..

অতি ব্যস্ত পায়ে দোতলার সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠল। আরাধ্যের ঘরে যেয়ে শব্দ করে দরজা ভিড়িয়ে দিলো। সবে ঘুম ভেঙেছে আরাধ্যর। বিছানা ছাড়েনি এখনো। সাধনা রাগে ফুসফুস করছে। অধৈর্য, উৎকণ্ঠা স্বরে বলল,

‘ এই বিয়েটা কেন করছেন আরাধ্য ভাই। আপনি এক্ষুনি নিচে চলুন। সবাইকে বলুন আপনি এই বিয়ে করতে পারবেন না।’

‘ আমি বলবো কেন?’

‘ আমি বাবাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। মানেনি, আপনি বলুন।’

আরাধ্য চুপ। গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে। সাধনা উত্তরের অপেক্ষা করল। আরাধ্যের কোনরকম হেলদোল না দেখে। উৎকন্ঠা সুরে আবারো বলতে লাগল,

‘ আপনি যদি ভাবেন, এই বিয়ে না হলে আমার জীবন ধ্বং/স হয়ে যাবে, দুনিয়াদারি এখানেই শেষ হয়ে যাবে। বাড়ির মানসম্মান মাটিতে মিলিয়ে গড়াগড়ি খাবে। তাহলে আপনি ভুল! এমন কিছুই হবে না। দুইচার দিন পর সবাই সব ভুলে যাবে।’

সাধনার চাপা রাগের অগোছালো কথাগুলো আরাধ্য বেশ মনযোগ দিয়ে শুনলো। গায়ে শার্ট জড়িয়ে বিছানা ছেড়ে উঠল। শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে সাধনার মুখোমুখি এসে দাঁড়াল। ঝুঁকে এসে গভীর গম্ভীর কন্ঠে বলল,

‘ কেউ আমাকে বাধ্য করবে আর আমি তা করব! তোর এমন মনে হয়? উহু, বিয়েটা আমি নিজের ইচ্ছায় করছি।’

সাধনা আরো রেগে গেল। অকপটে আওয়াজে বলল,
‘ কিন্তু আরাধ্য ভাই আপনি তো অন্যকাউকে..

কথা কা/টলো আরাধ্য। সাধনার ঠোঁটে আঙুল ছুঁয়ে বলল,
‘ হুশ! কোন কথা না।……..

পড়ুন ইবুক ‘সেনিওরিতা’

প্রমোকোড ব্যবহার করে ৫০ টাকার বই মাত্র ৩৮ টাকায় পেয়ে যাচ্ছেন। ঝটপট অর্ডার করে ফেলুন। অর্ডার করেছেন তো?

প্রোমোকোড – EBOOKMELA2023

[ইবুক সংক্রান্ত সব তথ্য বিস্তারিত কমেন্টে]

( সরি ছোট পর্বের জন্য, ব্যস্ত ছিলাম। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। অনেক দিন পর গল্প দিচ্ছি পেজের রিচ কম। গল্প পৌঁছালে রেসপন্স করবেন)

টাইপোগ্রাফি করেছে Maksuda Ratna আপু❤️🌺

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here