পরাণ দিয়ে ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ) পর্বঃ২১

0
271

#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ)
#পর্বঃ২১
#Jhorna_Islam

নূর শক্ত করে ঝাপটে ধরে সৌন্দর্যের বুক ভাসাচ্ছে চোখের পানি দিয়ে। সৌন্দর্য হ্যাং হয়ে আছে। কিছু বলার যেনো ভাষা হারিয়ে ফেলছে সে।তালহা ও কি বলবে খুঁজে পাচ্ছে না। নূরকে জিজ্ঞেস করে ও কোনো উত্তর পায় না, তাই সে ঐখানেই চলে যায় আসল ঘটনা জানার জন্য। এখন এই দিকে শুধু সৌন্দর্য আর নূর। সৌন্দর্য নিজেকে সামলে নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,,,পরাণ,, এভাবে কেন কান্না করছো? প্লিজ শান্ত হও একটু।অসুস্থ হয়ে যাবা তো এতো কান্না করলে।
দেখো বা-বাবা,,,, সৌন্দর্য আর কিছু বলতে পারে না কিই বা বলবে।কি বলে এই মেয়ে টা কে সে স্বান্তনা দিবে। সৌন্দর্য কে অবাক করে দিয়ে এতোসময় ধরে কান্নারত নূর খুশিতে আত্নহারা হয়ে গলা জড়িয়ে ধরে বলে উঠে,,, স-স্যার আমার না বিশ্বাস হচ্ছে না, কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না স্যার বাবা ঠিক হয়ে যাবে। সব ঠিক হয়ে যাবে।

–‘ মানে?.

-অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে স্যার। বলতে বলতেই নূরের চোখ মুখ খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠে।

সৌন্দর্য নূরের কথায় স্বস্তির নিশ্বাস নেয়। বুক থেকে যেনো পাথর নেমে গেছে।
সৌন্দর্যের খুব ইচ্ছে করছিল বলতে আরেকটু হলে তো আমার অবস্থা খারাপ করে দিচ্ছিলে তুমি মেয়ে। কিন্তু বলল না মেয়েটা নিজের খুশি কনট্রোল করতে না পেরে কেঁদে দিয়েছে। দুঃখ পেলে শুধু মানুষ কান্না করে না মাঝে মাঝে অতি সুখে অপ্রত্তাশিত কিছু পেয়ে গেলেও চোখ দিয়ে খুশির অশ্রু ঝরে।সৌন্দর্য কিছুক্ষন নূর কে সময় দিলো নিজেকে সামলে নিতে।তারপর দুইজনই ওদের কাছে যায়।সৌন্দর্য গিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলে। জ্ঞান ফিরতে সময় লাগবে।জ্ঞান ফিরলেই নূরের বাবা কে ক্যাবিনে দেওয়া হবে।

সৌন্দর্যের বড় আব্বু ভার্সিটিতে জরুরি কাজ থাকায় চলে যায় সৌন্দর্যের উপর সব দায়িত্ব দিয়ে। তালহা আর ইসরাত এখনও যায়নি।মাগরিবের নামাজের আজান দিয়ে দিয়েছে, তাই নূরের মা নামাজ পরতে যায়। সৌন্দর্য আর নূর তার বাবার বিষয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলছে। ইসরাতের একটা কল আসায় একটু নিরিবিলি জায়গায় যায় কথা বলার জন্য। তূর একটা বেঞ্চে বসে আছে। তূর কে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে তালহা এগিয়ে গিয়ে তূরের পাশে একটু ফাঁকা জায়গা রেখে বসে।
তালহা যে পাশে এসে বসেছে সেই দিকে মেয়েটার খেয়াল নেই, কি যেনো এক মনে ভেবে চলেছে।

— ছুটো মানুষের এতো কি ভাবনা শুনি? মাথা তো ব্লা/স্ট হয়ে যাবে। (তালহা)

— তূর এইদিক ওইদিকে তাকিয়ে বলে,,, কে ছোট মানুষ?

— এইদিক ওইদিকে তাকানোর কি আছে? এই যে আমার পাশেইতো বসে আছে ছোট মানুষ টা।

— এএএ আমি মোটেও ছোট মানুষ না।অলরেডি এইটিন হয়ে গেছে আমার। (তূর)

— ওরে বাবা তাই নাকি?

— হুম তাই।

তা এতো ভাবনা কিসের? সবকিছু তো ঠিক হয়ে গেছে। তোমার বাবা ও ঠিক হয়ে যাবে কিছুদিনের মাঝে।

হুম কিন্তু তাও কেন জানি আমার খুব টেনশন হচ্ছে।

— কি নিয়ে বলোতো?

জানিনা শুধু জানি টেনশন হচ্ছে। মাথা দিয়ে মনে হচ্ছে ধোঁয়া বের হচ্ছে। দেখুন বলেই তালহার হাতটা নিয়ে নিজের মাথার তালুতে রাখে তূর। সত্যিই মাথার তালু খুব গরম হয়ে আছে। তালহা মাথায় হাত রেখেই বলে সত্যি গরম হয়ে আছে। মজা করে বলে,,,খুব চা খেতে ইচ্ছে করছিল এখানে ক্যাটলি রাখলে তো চা হয়ে যেতো। তালহার কথায় তূর খিলখিলিয়ে হেসে উঠে। যাও যাও তারাতাড়ি মাথায় পানি দাও নয়তো গরমে সব চুল পেকে যাবে।পরে এইটিন থেকে এইটি দেখা যাবে বলে তালহা নিজেও হেসে দেয়। কথার তালে তূরের মাথা থেকে হাত সরানোর কথা ভুলে যায়।ঠিক সেই মুহূর্তে ইসরাত ফোনে কথা বলা শেষ করে আসে। সামনের দিকে চোখ যেতেই থমকে যায়। তালহা কে তূরের মাথায় হাত দিতে দেখে আর ওদের এভাবে হাসাহাসি করতে দেখে না চাইতেও বুকের ভিতর সু’চালো কিছুর আ:ঘাত যেনো এসে লাগে। পরোক্ষনে নিজেকে সামলে নিজের এসব ভুল ধারণা মনে আসায় মন কে এক ধমক দিয়ে নিজেও ওদের সাথে কথা বলায় জয়েন হয়।

*******
নূরের বাবা আজ নিয়ে হাসপাতালে আছে চতুর্থ দিন।প্রথম দুই দিন সৌন্দর্য ছিলো সাথে। তার ভার্সিটিতে কিছু জরুরি কাজ থাকায় দিনের বেলা থাকতে পারে না তবে রাতে ঠিকই এসে হাজির হয়।তূর চলে গেছে ইসরাতের সাথে কারণ তার কয়েকদিন পর এক্সাম তবে বিকেলের দিকে এসে দেখা করে যায়। এখন আপাতত দিনের বেলা নূর আর নূরের মা ই থাকে। তবে সৌন্দর্য বলে গেছে জরুরি প্রয়োজন পরলে যেনো তাকে জানায়। আজ নূরের একটা ইম্পরটেন্ট ক্লাস থাকায় যেতেই হবে। চাইছিল ইসরাত কে দিয়ে কাজ সেরে ফেলতে কিন্তু হবে না তাকে যেতেই হবে। তাই নূরের মা আজ তার বাবার কাছে একাই থাকবে।নূরের বাবা এখন কিছু টা সুস্থ আছে তাই চিন্তা নেই। নূরের মা ই জোর করে মেয়ে কে পাঠিয়েছে নয়তো তার বাবা জানতে পারলে রাগ করবে।

নূর চলে যাওয়ার পর নূরের মা একা একা বসে আছে তার বাবার কাছে। তিনি এখন ঔষধ খেয়ে ঘুমোচ্ছে। এক ঘন্টা পর একটা ঔষধ আছে নূর বলে গিয়েছিল। কিন্তু প্রেপসিকশন দেখিয়ে বলে গিয়েছিল ঐসময় ভালো করে এটা খেয়াল না করায় বিপাকে পরে যান তিনি। এখানকার লিখা কিছুই বুঝতে পারছেন না। বুঝতে পারছেন ভুল হয়ে গেছে। এসব ঔষধ খাওয়ানো নূর ই দেখাশোনা করতো তাই তিনি এইদিকে নজর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন নি। নূর বলার সময় ও ভেবেছে লিখা আছেই ঐখানে দেখেই খাওয়াতে পারবে।কিন্তু এখন ঝামেলা হয়ে গেলো কি করবে বুঝতে পারছে না। নূর কে যে একটা ফোন দিবে তার ও উপায় নেই মেয়েটার ফোন হাত থেকে পরে কাজ করছে না। ফোনটা ঠিক করাতে হবে। নূরের মা নূরের বাবার দিকে তাকিয়ে দেখে তিনি নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে তাই একটা নার্স বা ডাক্তার কে দেখিয়ে আনলে ভালো হয় বলে উঠে দাঁড়ায়। ক্যাবিন থেকে বের হতে গিয়ে উল্টো দিক থেকে হুট করে আসা কারো সাথে ধাক্কা খায়।ধাক্কা খেয়ে প্রেপসিকশন টা পরে যায়। নূরের মা নিজেকে সামলে ঐটা উঠাতে যাবে এমন সময় শুনতে পায়,,,,,,

” সরি আসলে আমি খেয়াল করিনি।এইদিক টা খালি ছিল তাই তারাতাড়ি যেতে চাচ্ছিলাম কিন্তু আপনি যে হুট করে বেরিয়ে আসবেন বুঝতে পারি নি। কথা শেষ করে আবার বলে উঠে,, আরে আন্টি আপনি এখানে?

নূরের মা চোখ তুলে তাকাতেই বলে,,, আমাকে চিনতে পাচ্ছেন না? আরে ঐদিন যে আংকেল কে নিয়ে আপনাদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে এসেছিলাম।

চিনতে পেরেছি বাবা। কেমন আছো তুমি?

–‘ আমিতো ভালো আছি কিন্তু আপনি এখানে যে? কারো কিছু হয়েছে?

–‘ হুম বাবা তোমার আংকেল এখানে ভর্তি।তারপর সব খুলে বলে,, এটাও বলে কোন ঔষধ টা খাওয়াতে হবে সেটা জানতে যাচ্ছে। ছেলেটা প্রেপসিকশন তুলে চোখ বুলিয়ে বলে আসুন আমি দেখিয়ে দিচ্ছি আর আংকেল কে ও একটু দেখে যাই।নূরের মা আর মানা করে না ভালোই হয়েছে নয়তো ঐদিকটায় যেতে যেতে উনি উঠে পরলে না দেখতে পেয়ে টেনশন করতো।

*************
মাস খানেক হয়ে গেছে নূরের বাবা এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। সকলের জীবন ই আগের মতো চলছে।নূর আর সৌন্দর্যের জীবনে অবশ্য সামান্য কিছু টা পরিবর্তন এসেছে। এখন প্রতি রাতে মিনিট দশেকের মতো কথা হয় একে অপরের সাথে। তবে বেশির ভাগ সময় পড়াশোনা নিয়েই আলাপ আলোচনা চলে বেশি। মাঝে মাঝে যখন সৌন্দর্য কল না দেয় তাহলে নূর ভিতরে ভিতরে ছটফট করতে থাকে। বার বার ফোন চেক করে নিজে দিতে পারে না জড়তার কারণে। তবে সৌন্দর্য যখন কল দেয় মনটা আনন্দে নেচে উঠে। এই সাধারণ কথা বার্তা গুলোও খুব ভালো লাগে।

এরমধ্যে হুট করেই সৌন্দর্য ফাতিহা কে নিয়ে এসে হাজির। নূর কে কিছু না বলে সোজা নূরের বাবা মায়ের কাছে যায়। সেখানে অবশ্য নূর কে ও ডাকা হয়। নূর দুরু দুরু বুকে গিয়ে হাজির হয়।মনে প্রশ্ন টা ঘুরপাক খায় কি বলতে এসেছে লোকটা। আর কাল তো কতো কথা হলো কই কিছু তো তাকে বলল না।

ফাতিহা দৌড়ে এসে নূরের কোলে উঠে বসে। সৌন্দর্য একবার নূরের দিকে তাকিয়ে নূরের বাবা মা কে বলে,,,,বাবা এন্ড মা আসলে আমি কিছু বলতে চাই। এটা আমার আবদার ও বলতে পারেন।

নূরের বাবা বলে,,,এতো ফরমালিটির কি আছে বাবা বলে ফেলো কি বলবে।বাবা মা কে বলতে এতো সংকোচ কিসের?

সৌন্দর্য হাসার চেষ্টা করে বলে আসলে দুইদিন বাদে ফাতিহার স্কুল থেকে পিকনিকের আয়োজন করেছে একটা। তো সেখানে গার্ডিয়ানদের ও সাথে যেতে হবে। এখন ফাতিহা বায়না ধরেছে সেখানে নূর কে ও সাথে নিয়ে যাওয়ার। একদিন হলে সমস্যা ছিলো না কিন্তু সেখানে দুই দিন থাকা লাগবে তাই আর কি।

সৌন্দর্যের কথা শুনে নূরের বাবার মুখটা কিরকম গম্ভীর হয়ে যায়। সৌন্দর্য ভেবেই নেয় হয়তো অনুমতি দিবে না কিন্তু সৌন্দর্য কে অবাক করে দিয়ে তিনি বলেন,,নিয়ে যাও ফাতিহার সাথে তার মাম্মা যাবে না এইটা হয় নাকি?
এই কথা শুনে সবচেয়ে বেশি খুশি হয় ফাতিহা। নূরের কোল থেকে নেমে দৌড়ে নূরের বাবার গলা জরিয়ে ধরে বলে,,,ইয়েএএএ থ্যাংক ইউ নানা ভাই।

সৌন্দর্য চোখ ঘুরিয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে দেখে নূর আগে থেকেই তার দিকে তাকিয়ে আছে। দুইজনের ই চোখে চোখ পরে কিছু সময় তাকিয়ে রয়।নূর বেশি সময় তাকিয়ে থাকতে পারে না ঐ চোখের দিকে তারাতাড়ি ঐখান থেকে কেটে পরে।

*********
সেই রাত ৭ টায় সৌন্দর্য নূরদের বাড়িতে হানা দিয়ে নূর কে নিয়ে এসেছে। রাতে বের হয়েছে রাত ৮ টায় সকলে ফাতিহাদের স্কুলের সামনে থেকে রওনা দিবে।সৌন্দর্য যথা সময়ে সেখানে উপস্থিত হয়। গাড়ির ব্যবস্থা আছে তবুও যার যার নিজস্ব গাড়ি আছে তারা তাদের গাড়ি নিয়ে ও যেতে পারবে। সবকিছু রেডি এখন শুধু রওনা দেওয়ার পালা।এরমধ্যে চারজন দাঁড়িয়ে আছে সাথে ফাতিহার ফ্রেন্ড ও।সৌন্দর্য জিজ্ঞেস করলে বলে ওদের গাড়ি আসতেছে তেল ভরতে গেছে, ওরা একসাথেই যাবে। ফাতিহা শুনে বলে,,,মি. ওয়াহিদ ওদের কে সাথে নিয়ে নাও আমাদের।

ওদের জায়গা হবে না মাম আমাদের সাথে। (সৌন্দর্য)

ফাতিহা গাড়ির পিছনে তাকিয়ে বলে,,আমি তোমার কোলে বসলেও হবে না?

উহুু!(সৌন্দর্য)

মাম্মা তোমার কোলে বসলেও কি হবে না? (ফাতিহা)

সৌন্দর্য নূরের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে,, হলেও হতে পারে। জিজ্ঞেস করো তোমার মাম্মা কে বসবে কি না আমার কোলে।

নূর লজ্জা পেয়ে যায়। তারাতাড়ি বাইরের দিকে মুখ দিয়ে তাকিয়ে থাকে। ফাতিহা ডাকলেও সারা দেয় না। কিছু সময় পর নিজেই মুচকি হাসে। গাড়ির ভিতর আবছা আলোয় সেটা সৌন্দর্যের চোখ এড়ায় না।

#চলবে?,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here