পরাণ দিয়ে ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ) পর্বঃ১৯

0
249

#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ)
#পর্বঃ১৯
#Jhorna_Islam

সৌন্দর্যের জড়িয়ে ধরা বেশি সময় স্থায়ী হলো না। যেভাবে ঝড়ের বেগে জরিয়ে ধরেছে সেভাবে ঝড়ের বেগেই নূরের কাছ থেকে ছি’টকে সরে উঠে দাঁড়িয়েছে। নূর হ্যাং হয়ে ছিলো বুঝতে ও পারে নি যে তাকে সৌন্দর্য জরিয়ে ধরেছে। সৌন্দর্য উঠে দাঁড়ানোর পর তার হুঁশ আসে। উঠে বসে সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে দেখে সৌন্দর্য অন্য দিকে মুখ করে আছে। নূর সৌন্দর্যের কাহিনী কিছুই বুঝলো না। নিজের দিকে চোখ যেতেই লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করলো নূরের। তারাতাড়ি করে ওড়না গায়ে দিয়ে বড় বড় নিশ্বাস নিতে থাকে।

সৌন্দর্য পরিবেশ স্বাভাবিক করার জন্য বলে, দেখে চলাচল করতে পারো না নাকি নূর? নিজের স্বামী বলে এভাবে সুযোগ নিয়ে যখন তখন আমার ইজ্জতের উপর হা’মলা করবে? তোমার বাড়িতে আসছি বলে তুমি এভাবে সুযোগ নিবে?

ছিঃ কি বা’জে কথা এসব আপনি কি বলছেন স্যার? আপনার মাথা কি ঠিক আছে নাকি পুরোপুরি খারাপ হয়ে গেছে। কিসব কথা বলছেন? আর আমি কখন আপনার উপর সুযোগ নিলাম শুনি? পরেছেন তো আপনি। কোথা থেকে হুট করে উড়ে এসে একে বারে গায়ের উপর পরেছেন।নিজে দোষ করে মুখের জোরে একেবারে আমার উপর চাপিয়ে দিচ্ছেন। একনাগাড়ে কথা গুলো বলে নূর হাঁপাতে থাকে আর জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে।

–” এভাবে হাঁপানি রোগীর মতো নিশ্বাস নেওয়ার কি আছে আশ্চর্য।আমি এখনও তোমার সাথে কিছু করিনি।না করতেই তোমার এই অবস্থা? বাড়িতে দেখা যায় আগে থেকেই অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখতে হবে।

— কি করার কথা বলছেন আপনি? প্রশ্ন টা করে নূরের মাথায় আসে লোকটা কি বোঝানোর চেষ্টা করছে। বুঝতে পেরে লজ্জায় মিইয়ে যায়। মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে ছিঃ কি নোংরা আপনি স্যার।মনে মনে ঠিক করে নেয় আর একটা ও কথা বলবে না এই ঠোঁট কাটা লোকটার সাথে।

— কি কথা বলছি বুঝতে পারছো না? তুমি কি চাইছো সব খুলে বলি? তাহলে সেই আশা ছেড়ে দাও আমি বলায় না করায় বিশ্বাসী করে দেখাবো বলেই চোখ টিপ দেয় সৌন্দর্য।

নূর এসব শুনে চোখ মুখ কোচকে ফেলে। নূরের মুখের এমন ভঙ্গিমা দেখে সৌন্দর্য মুচকি হাসে। তোমার রুম তুমি যা ইচ্ছে তাই করো কিন্তু তার আগে লক করে নিও। পকেটে হাত গুঁজে শিস বাজাতে বাজাতে সৌন্দর্য রুম থেকে বের হয়ে যায়। নূর তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবে এমন অ/শ্লীল কথা কি করে বলতে পারে লোকটা? মুখে কি কিছু আটকায় না? দেখে মনে হয় কি রাগী, কি ভাব ধরে থাকে।
নূর এসব ভাবতে ভাবতে মাথায় হাত দিয়ে বসে পরে।

বিকেলের দিকে খাওয়া দাওয়া করে সৌন্দর্য আর ফাতিহা চলে যায়। এরমধ্যে একবার ও নূর সৌন্দর্যের সামনে পরেনি। লুকিয়ে লুকিয়ে থেকেছে কে জানে আবার কখন কি বলে দেয়। লোকটা দিন দিন কেমন নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছে। ফাতিহার সাথে আবার সময় কাটিয়েছে। যাওয়ার সময় সৌন্দর্য অবশ্য চোখ ঘুরিয়ে নূর কে খোঁজেছে কিন্তু পায় নি।নূরের মা ও বলেছিলো আসার জন্য কিন্তু আসে নি।

*************
ইসরাত কানে হাত দিয়ে বসে বসে মোবাইল টিপছে। তার মা সেই যে বকাবকি শুরু করেছে থামার নাম গন্ধ নেই। মোবাইল গি’লে খা মোবাইলের ভিতর ঢুকে যা।পড়াশোনা আর করতে হবে না। খেতেও হবে না মোবাইল দেখলেই পেট ভরবে। বইটা নিয়ে একটু বসে না।সারাদিন রাত ২৪ ঘন্টা মোবাইল আর মোবাইল।

ইসরাতের মায়ের কথা ইসরাত কানেই তুলে না সে তার মতো মোবাইল দেখতে ব্যস্ত।
গ্রুপে ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিতে থাকে। সকলেই এখন ফ্রি। গ্রুপে তুমুল ভাবে চ্যাটিং চলছে।সকলেই হাসি মজা করছে কে কি করবে।কেউ কেউ বলছে জব করবে,কেউবা বিদেশে স্যাটেল হবে আরো নানান আলোচনা। সকলের ভবিষ্যত পরিকল্পনা আলাদা হলেও ইসরাতের একটাই পরিকল্পনা না।সে আর বেশি পড়াশোনা করবে না বিয়ে করে নিবে।এসব পড়াশোনা আর মাথায় ধরে না। বিয়ে করে নিলে আর পড়তে হবে না। আহা জামাই নিয়ে সারাদিন ঘুরে বেড়াবে।রেস্টুরেন্টে যাবে।কাপল পিক তুলে ফেসবুকে আপ দিয়ে দেখিয়ে দিবে।এতোদিন মানুষের কাপল পিকে রিয়েক্ট দিয়ে এসেছে, বান্ধবীদের বলে প্রস্তুতি নিতে তার আর তালহা স্যারের কাপল পিকে রিয়েক্ট দেওয়ার প্রস্ততি নিতে। কয়েকজন এই নিয়ে ইসরাতের সাথে মজা নিচ্ছে তো কয়েকজন উৎসাহ দিচ্ছে এগিয়ে যাওয়ার জন্য।

ইসরাত মজায় মেতেছে। মায়ের কথা কানেই তুলল না। এরমধ্যে ইসরাতের বাবা ও বাড়িতে এসেছে। উনার সাথে আরেক দফা শুরু করে দিয়েছে ইসরাতের মা। বকাবকি করে শান্ত হয়।পরিবেশ ঠান্ডা দেখে স্বস্তির নিশ্বাস নেয় ইসরাত। রাতে খাওয়ার সময় হয়ে যায়, ইসরাতের বাবা মেয়েকে ডাকতে থাকে খাওয়ার জন্য।

ধূর ভালো লাগে না কি সুন্দর আড্ডা দিচ্ছি। আমি পরে খেলে কি এমন হতো? বলেই ইসরাত খাওয়ার জন্য যায় সাথে ফোন ও নিয়ে যায়। খেতে খেতে চ্যাটিং না করতে পারুক এদের মেসেজ তো দেখতে পারবে।নয়তো ওকে ছাড়াই এরা এগিয়ে যাবে। মাঝে মাঝে বাম হাতে ও রিপ্লাই দিতে পারবে এই ভেবে ফোন সাথে নিয়ে যায়।

মায়ের খাবার দিতে দেরি হচ্ছে দেখে আবার ফোনে মেসেজ দিতে থাকে।ইসরাতের মা খাবার নিয়ে আসতে আসতে ইসরাত কে ফোন টিপতে দেখে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে। আবার শুরু করে দেয়।ইসরাতের বাবা কে বলে ঘটক লাগানোর জন্য পড়াশোনা আর করতে হবে না। বিয়ে দিয়ে দিবে শ্বশুর বাড়ি গিয়ে বাকি পড়াশোনা করবে।
বিয়ের কথা শুনে ইসরাত কেঁদে দেওয়ার মতো অবস্থা, সে কিছুতেই বিয়ে করবে না।পড়াশোনা শেষ করে বিয়ে করবে। ইসরাতের মা ও নাছোড়বান্দা তিনি বলে চলেছেন যে করেই হোক বিয়ে দিয়েই ছাড়বে।

মা মেয়ের কথা শুনে দুইজন কে এক ধমক দেয় ইসরাতের বাবা।

আহ্ থামবে তোমরা? কি শুরু করেছো বলোতো শান্তিতে কি খেতেও দিবে না নাকি?

ইসরাতের বাবার ধমকে ইসরাতের মা চুপ হয়ে যায়।
কিন্তু ইসরাত এখনও কান্নার ভান করে বলতে থাকে আমি এখন কিছুতেই বিয়ে করবো না।

চুপচাপ খা তোকে পড়াশোনা শেষ হওয়ার আগে আমি বিয়ে দিবো না। (ইসরাতের বাবা)

ইসরাত মনে মনে লুঙ্গি ডান্স দেয়।ইসরাতের মা তরকারি আনতে চলে যায়। এই সুযোগে ইসরাত ভাবে একটা ফানি পোস্ট করে আসা যায়,,,”

“ফেসবুকে এসে বিয়ে করার জন্য চিল্লাতে থাকা লোকজন বাড়িতে বিয়ের কথা বললে কান্না করে।”

কিন্তু একি ফোন হাতে নিয়ে টাস্কি খায় ইসরাত তারাহুরো করে ঐসময় ফোন রাখতে গিয়ে তালহার কাছে কল চলে গেছে মেসেঞ্জারে।কল রিসিভ হয়েছে আরো তিন মিনিট আগে। তারমানে লোকটা সব কথা শুনেছে।ইসরাত তারাতাড়ি কল কেটে দেয়।মান সম্মানের ফালুদা হয়ে গেছে। এই তালা বেটা কে দেখে নিবে সে, অন্য সময় কল দিলে রিসিভ করে না আর আজ ভুলে চলে গেছে এটা ঠিকই ধরেছে।

*************
নূরের বাবা কে আজ হাসপাতালে আনা হয়েছে। এখন শরীর টা কিছু ভালো। গত পরশু ঐ ডাক্তার দেশে এসেছে গতকাল ছুটিতে ছিলো তাই আজ নিয়ে আসা হয়েছে। আজ আবার নতুন করে সব পরীক্ষা করে তারপর অপারেশনের তারিখ দেওয়া হবে। আজও সাথে সৌন্দর্য আর মি. রূপম ওয়াহিদ এসেছে। সব কিছু উনারাই দেখাশোনা করছে।

নূর নিজেকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছে না। ভয়ে হাত পা জমে যাচ্ছে। কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়ছে। বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে ও পারছে না। ভিতরে ভিতরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। বেঞ্চের উপর হাত রেখে একবার খুলছে তো একবার বন্ধ করছে।
চোখ বন্ধ করে নিজের যন্ত্রনা কমানোর চেষ্টা করছে।

নিজের হাতের উপর কারো হাতের ছোঁয়া পেয়ে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে সৌন্দর্য।
সৌন্দর্য নূরের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে একটু চাপ দিয়ে বোঝায় শান্ত হওয়ার জন্য।

নূর ছলছল চোখে সৌন্দর্যের দিকে তাকায়।

রিলেক্স পরাণ কাম ডাউন। শান্ত হও জোরে জোরে কয়েকবার নিশ্বাস নিয়ে শান্ত করো নিজেকে।কিছু হবে না। বি স্ট্রং পরাণ।

নূর সৌন্দর্যের চোখের দিকে তাকিয়ে ভরসা পায়।নিজেও সৌন্দর্যের হাত ভালো করে আঁকড়ে ধরে।

#চলবে,,,?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here