#নিভৃতে_তেজস্বিনী
#পর্ব_১৯
#লেখায়_নামিরা_নূর_নিদ্রা
লাইভ শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রচুর মানুষ দেখতে শুরু করে। সিরাত লাইভের ক্যাপশন দিয়েছে,
“পর’কীয়ার সাইড এফেক্ট!”
একদিকে তো নিমু ব্যথায় ছটফট করছে, অন্যদিকে মাহতাব নিজের চুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ করে চেয়ারে বসে আছে। সিরাত রাফিকে নিজের পাশে দাঁড়াতে বলে কথা শুরু করে।
“আমাদের চারপাশে হাজারো মানুষ আজ পর’কীয়ায় জড়িয়ে আছে। পর’কীয়া শব্দটা যেন আমাদের ব্যক্তি জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রতিটা পরিবারে একটা করে এমন পর’কীয়ার ঘটনা লুকিয়ে থাকে। কেউ তা প্রকাশ করে, কেউ আবার সম্মানের ভয়ে প্রকাশ করে না। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? আমরা কেন চুপ করে বসে আছি? আমাদের চোখের সামনে এত বড়ো অন্যায় হচ্ছে, অথচ আমরা নিশ্চুপ? নাহ্, আমাদের আর চুপ করে থাকলে চলবে না। এবার আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।”
একজনের মন্তব্য দেখে সিরাত চুপ হয়ে যায়৷ কিছুক্ষণ মনোযোগ দিয়ে মন্তব্য পড়ে সিরাত মুচকি হেসে উত্তর দেয়,
“কেউ একজন লিখেছেন, আজকালকার মেয়েরা বড্ড বেহায়া হয়ে গিয়েছে। ছেলেদের চার বিয়ে সুন্নত। সেখানে অন্য বউকে এভাবে নি*র্যাতন করা অন্যায়। বাহ্! আমাদের মুসলিম ভাইয়েরা কত ভালো। তারা চার বিয়ে সুন্নত এটা জানে। কিন্তু কীভাবে সুন্নত? সেটা জানে না। আচ্ছা, আপনারা যে এত ফরজ, সুন্নত মানেন তো পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করেন কয়জন? ভাই, বিয়ের কথাটা ঠিকই মস্তিষ্কে গেঁথে থাকে আপনাদের। কিন্তু আসল ফরজ কাজগুলো আপনারা ভুল করেও মানেন না। যে ছেলেদের একজনে হয় না, তাদের মতো অত্যন্ত কুৎসিত মস্তিষ্কের মানুষের সাথে কথা বলতে আমার রুচিতে বাঁধে। তাই বলব, আমার এই লাইভ আপনাদের জন্য নয়। আর যে এই মন্তব্য করেছেন তাকে সামনে পেলে আমি বুঝিয়ে দিব, সুন্নত কত প্রকার আর কী কী!”
পাশ থেকে রাফি সিরাতকে শান্ত হতে বলে। এখন রেগে গিয়ে কিছু বললে ভালোর চেয়ে খারাপই বেশি হবে।
“সিরাত রাগ করে কিছু বলবেন না। এখন যদি আপনি রেগে যান তাহলে আপনার লাইভ করার আসল কারণটা অজানা থেকে যাবে।”
রাফির কথা শুনে সিরাত লম্বা শ্বাস ছেড়ে বলে ওঠে,
“আমি এমন একজন মেয়ে যে তার স্বামীর যোগ্য বউ হওয়ার জন্য সবকিছু করেছে। বিয়ের আগের জীবন বিসর্জন দিয়ে আমি আমার স্বামীর মনের মতো হয়ে ওঠার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। কিন্তু সে বিয়ের পাঁচ বছরের মাঝেই দ্বিতীয় বিয়ে করে নিয়ে আসে নিমু নামক এই মেয়েকে। অবশ্য আমার বাচ্চা হওয়ার আগে থেকেই তার অন্য মেয়েদের প্রতি আসক্তি আমি টের পেয়েছিলাম৷ কিন্তু কিচ্ছু বলিনি। বললে হয়তো আজকের এই দিনটা আসত না। সে তখন লুকিয়ে সম্পর্কে চালিয়ে যেত। কখনো আমার সামনে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে আসার সাহস হতো না তার।”
সিরাতের এহেন কথা শুনে মাহতাব অদ্ভুত চোখে তাকায় তার দিকে। কণ্ঠে জড়তা রেখে প্রশ্ন করে,
“তুমি আগে থেকেই সব জানতে?”
“হ্যা জানতাম। আমি আগে থেকেই সবকিছু জানতাম। কিন্তু তোমাকে কিছু বলিনি। আমি তোমাকে এসব নিয়ে কথা শোনালে তুমি লুকিয়ে সম্পর্ক চালিয়ে যেতে। এখন আমি জনসম্মুখে সবকিছু বলতে পারছি। তখন সেটা পারতাম না। তোমার কী মনে হয়? তুমি আমার অগোচরে অন্য কারোর সাথে সম্পর্ক রাখবে আর সেটা আমি বুঝতে পারব না? তাহলে এটা তোমার বোঝার ভুল। আমি মুমতাহিনা ইসলাম সিরাত এত বোকা নই। তোমার এই সম্পর্কের কথা আমি যেমন আগে থেকেই জানতাম, তেমনই তোমাদের বিয়ের কথাও আমি আগে থেকেই জানতাম। চাইলেই আমি তোমাদের বিয়ে আটকাতে পারতাম৷ কিন্তু সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করেছি আমি। তুমি যেমন আমার সাথে অভিনয় করেছ আমিও তেমন অভিনয় করেছি।”
এসবের জন্য যেন মাহতাব মোটেই প্রস্তুত ছিল না। তার পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে এমন অনুভূতি হচ্ছে। সিরাত নির্দ্বিধায় সব কথা বলছে। তার মধ্যে কোনো কষ্ট দেখতে পাচ্ছে না মাহতাব। এসব দেখে তার মনে প্রশ্ন জাগে, মেয়েরা কী তবে এমনই হয়?
সিরাত হয়তো বুঝতে পারে মাহতাবের মনের কথা। খানিকটা হেসে তাই উত্তর দেয়,
“ব্যক্তিগত মানুষটা আর ব্যক্তিগত না থাকলে মেয়েরা বড্ড কঠিন হয়ে যায়। মেয়েদের নরম মনে তখন পাথরের পাহাড় তৈরি হয়। শত কষ্ট তাদের মনকে আর আঘাত করতে পারে না। পাষাণ চেনো পাষাণ? শখের পুরুষ ঘৃণার পুরুষে পরিণত হলে মেয়েরা পাষাণ হয়ে যায়।”
যথারীতি এমন চমকপ্রদ লাইভে লাখ লাখ মানুষ যুক্ত হয়। এক লাখ সাত হাজার মানুষ যুক্ত হয়ে যায় মাত্র একুশ মিনিটে। এতজনকে যুক্ত হতে দেখে সিরাত ধন্যবাদ জানিয়ে বলে,
“ধন্যবাদ আপনাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে আমার সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য। এখন তাহলে আসল কথায় আসি। আমার স্বামী যে পর’কীয়ায় জড়িত সেটা আমি অনেক আগে থেকেই জানতাম। তবুও চুপচাপ সব মেনে নিয়ে সংসার করেছি। আমাদের কিন্তু সাড়ে তিন বছর বয়সী একটা ছোট্ট পুতুল আছে। আমাদের মেয়েটা পুতুলের মতোই সুন্দর। কিন্তু ওর সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠা নিয়ে মা হিসেবে আমি ভীষণ সন্দিহান। আমার মেয়েটা আজও জানে না তার বাবা অন্য একজনকে ভালোবেসে তার মাকে অবহেলা করেছে। আমি সেই মেয়ে যার সামনে কেউ কখনো অন্যায় করে রেহাই পায়নি। আমি সেই মেয়ে যে নোংরা মানসিকতার মানুষদের জীবনের চেয়েও বেশি ঘৃণা করে। আজ সেই আমিই দীর্ঘদিন ধরে নিজের স্বামীর অন্যায় চুপচাপ সহ্য করেছি। না, ছেড়ে দেওয়ার জন্য নয়। আমি এতদিন নিজেকে তৈরি করেছি তাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য।”
সিরাতের সব বন্ধুরা এই লাইভ দেখছে। পাশাপাশি তাকে শক্ত থাকার পরামর্শ দিচ্ছে। মাওয়ার একটা মন্তব্য দেখে চোখ আটকে যায় সিরাতের। সে লিখেছে,
“যে মানুষ ভালোবাসাকে সম্মান করতে পারে না তার বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। হোক সে নারী কিংবা পুরুষ। অপরাধের শাস্তি সকলের জন্যই সমান হওয়া উচিত। তোর মতো লড়াকু মেয়েকে দেখে যেন এই সমাজে আরো হাজার খানেক সিরাত জন্ম নেয় আমি মন থেকে সেটাই চাই।”
সিরাত মাওয়ার মন্তব্য পড়ে উত্তর দেয়,
“সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে এমন বহু মাহতাবকে মেয়েরা ছেড়ে দেয়। তবে এতে কি কোনো লাভ হয়? যে পুরুষ নিজের স্ত্রী এবং সন্তানের কথা না ভেবে অন্য নারীতে আসক্ত হয় সেই পুরুষ তো আদর্শ বাবা হতে পারে না। তবে কেন আমরা সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে চুপ করে থাকব? এতে করে যে এমন মাহতাবেরা আরো বেশি অন্যায় করার সাহস পেয়ে যায়। সন্তানকে যখন আমাদের একাই মানুষ করতে হবে তাহলে এমন পুরুষদের তো ছেড়ে দেওয়া যাবে না।”
রুমি হাসান নামের একজন মন্তব্য করেছে,
“আমার স্বামী পর’কীয়ায় আসক্ত। শুধু তাই নয়, সে যখনতখন আমার গায়ে হাত তোলে। আমার চার বছর বয়সী মেয়ের মুখের দিকে চেয়ে চুপচাপ সহ্য করছি এসব। মাঝেমধ্যে মনে হয়, বেঁচে থেকে কোনো লাভ নেই। এই জীবনটা আমার কাছে এখন অভিশাপের মতো।”
“কেন আপু? আপনি কেন বাঁচতে চান না? আপনাকে বাঁচতে হবে৷ যে বা যারা আপনার সাথে অন্যায় করেছে ম*রলে তারা ম*রবে।”
আরেকজনের মন্তব্য দেখে সিরাত বেশ খুশি হয়। সে লিখেছে,
“আপনার মতো মেয়েদেরই প্রয়োজন এই সমাজে। তাহলে আর কেউ এমন নোংরা কাজ করার সাহস পাবে না।”
আরো বেশ কিছু মন্তব্য পড়ে নেয় সিরাত। কেউ তার এমন কাজের জন্য তাকে বাহবা দিচ্ছে। কেউ আবার গালি দিচ্ছে। সবকিছু উপেক্ষা করে সিরাত বলে,
“আমি যখন আমার স্বামীর বিরুদ্ধে সব প্রমাণ হাতে পেলাম সেদিনই ঠিক করে নিয়েছিলাম তাকে আমি শান্তিতে বাঁচতে দিব না। এজন্য তার প্রেমিকাকে প্রয়োজন ছিল আমার। যে মেয়েটা এখন মাটিতে শুয়ে ছটফট করছে সে আমার স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রী। এই মেয়ে আমার সংসার ভাঙার জন্য নিজের সন্তানকে পর্যন্ত পৃথিবীর আলো দেখতে দেয়নি। এমন মেয়েদের কি সত্যিই বেঁচে থাকার অধিকার আছে? যারা স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রীকে দেখে নিজের সংসার ছেড়ে চলে যান তারা চরম বোকা। ছেড়ে যদি যেতেই হয় সবকিছু শেষ করে তারপর যান। আমি পড়াশোনায় খুব বেশি ভালো ছিলাম না কখনোই। কিন্তু আমি কারোর বোঝা হয়ে থাকতে চাইনি। তাই নিজের স্বল্প মেধাকে কাজে লাগিয়ে কলেজ জীবনেই শুরু করেছিলাম ছোট্ট একটা ব্যবসা। মাত্র চার হাজার টাকা দিয়ে আমি পাঁচটা জামা বানিয়ে অনলাইনে ব্যবসা শুরু করি। প্রথম প্রথম তেমন ভালোভাবে সবকিছু করতে পারছিলাম না। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি। টানা এক বছর পরিশ্রম করে আমি নিজের ব্যবসা দাঁড় করিয়েছি। আমার এই কাজের কথা কেউ জানত না। কেবল আমার মা জানত। আজ সবার সামনে আমি নিজের জীবনের গল্প বলছি। মাত্র চার টাকা পুঁজি করে যে ব্যবসা আমি শুরু করেছিলাম আজ সেই ব্যবসা থেকে আমি মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করি। এটা কিন্তু একদিনে সম্ভব হয়নি। ছয়/সাত বছরের পরিশ্রমের ফল এটা। নিজে ডিজাইন তৈরি করে সেলাই মেশিনে সেলাই করে আমি আমার ছোট্ট ব্যবসা শুরু করেছিলাম। আজ সেখানে শত-শত মেয়ে আমার আন্ডারে কাজ করে। বাংলাদেশের নামকরা এক ফ্যাশন আইকনের নাম নীলাদ্রি। কে সেই নীলাদ্রি তা কি আপনারা জানেন? সকলের আড়ালে থাকা সেই মেয়েটা আমি নিজে। এই যে নিজের একটা পরিচয় তৈরি করেছি আমি, এর ফলে আমাকে কারোর উপর নির্ভর করে বাঁচতে হবে না। আমি প্রতিটা মেয়েকে বলব, আগে নিজের পায়ের তলার জমিন শক্ত করুন। তার নতুন জীবনে পা রাখুন। যেন বিশ্বস্ত মানুষটা হারিয়ে গেলেও আপনি বাঁচতে পারেন। বাঁচার মতো করে বাঁচতে পারেন।”
এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে থেমে যায় সিরাত। ‘নীলাদ্রি’ একটা ব্র্যান্ড এর নাম। যেখানে চোখ ধাঁধানো সব সুন্দর সুন্দর জামার রাজ্য রয়েছে। সবাই জানে এটার মালিক একজন মেয়ে। কিন্তু সেই মেয়ে কখনো কারোর সামনে আসেনি। সিরাত বরাবরই চেয়েছে সাধারণ একজন হয়ে বাঁচতে। এতদিন সকলের অগোচরে ব্যবসা সামলেছে সে। তবে আজ সবাইকে সবটা বলার দরকার ছিল। মেয়েরা যেন আবেগের বশবর্তী হয়ে বিয়ে নামক বন্ধনে আবদ্ধ না হয় তার জন্যই নিজের এই গল্পটা বলা।
“সিরাত থেকে নীলাদ্রি হওয়ার গল্পটা কিন্তু সহজ ছিল না আমার জন্য। কঠোর পরিশ্রম করে আমি সিরাত থেকে এই নীলাদ্রি হতে পেরেছি বলেই আমার সন্তানকে নিয়ে আমার চিন্তা নেই। তাকে একা হাতে বড়ো করে তোলার জন্য আমি প্রস্তুত। প্রত্যেক মাকে বলব এভাবে প্রস্তুত হওয়ার জন্য। আল্লাহ আমাদের সবাইকে পরিপূর্ণ জ্ঞান দিয়েছেন। সেই জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে হবে আমাদের। বাবা-মা, স্বামী, সন্তান কারোর উপর যেন আমাদের মেয়েদের নির্ভরশীল হতে না হয়। আমরা যেন নিজেদের পরগাছা মনে না করি। নতুবা বেঁচে থাকার আসল মানে আমরা কখনোই বুঝতে পারব না। আমরা এক বুক কষ্ট নিয়েই মৃ*ত্যুর কোলে ঢলে পড়ব। এভাবে তো মেয়েদের হেরে যাওয়া যাবে না।”
সিরাত মাহতাবের সামনে চলে যায়। আপাদমস্তক তাকে দেখে নিয়ে বলে,
“এই মানুষটা দীর্ঘ পাঁচ বছর আমার সাথে ভালো থাকার অভিনয় করেছে। নিঃসন্দেহে তাকে পাক্কা অভিনেতা বলা যায়। আচ্ছা সে যে আমাকে আর আমার সন্তানকে এত কষ্ট দিল তাকে কি এমনি এমনি ছেড়ে দেওয়া যায়? উহু, যায় না তো। আমিও তাকে এমনি এমনি ছেড়ে দিইনি। প্রথমে তার ব্যবসা কেঁড়ে নিয়েছি। এরপর তাকে পথে বসিয়েছি। তার সম্মান নিয়ে আমি খেলেছি বটে। এখন তার কাছে কিছুই নেই। পথের ভিখারি বললেও ভুল হবে না। আমার শ্বশুর মশাই আমাকে খুব ভালোবাসে। তাকে বলে আমি এমন একটা উইল করিয়েছি যেখানে লেখা আছে, মাহতাব কখনো আমাকে ডিভোর্স দিলে সে তার বাবার সমস্ত সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে। আর আমি ঠিক সেটাই করব। এক সময় সে রাজা ছিল। আজ সে ফকির। এর পেছনে সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আমার। কেবল তো তাকে পথে বসিয়েছি। এরপর জেলের ভেতরেও ঢোকাব। বিশ্বাস ভঙ্গকারীদের জন্য এটুকু শাস্তি তো প্রাপ্য তাই না?”
কথাগুলো বলে সিরাত গা কাঁপিয়ে হাসে। মাহতাব অপলক তাকে দেখে যাচ্ছে। নিজের জীবনের শেষ সময়টা কতটা করুণ হবে তা যেন এখন থেকেই সে উপলব্ধি করতে পারছে।
এক পা, দুই পা করে নিমুর দিকে এগিয়ে যায় সিরাত। তার পাশে বসে চোখের কোণে কিঞ্চিৎ পানি এনে বলে,
“সমাজের আরেক কীট এই নিমুর মতো মেয়েরা। হাসিখুশি একটা পরিবারকে নিমিষেই ধ্বংস করে দিতে পারে এরা। এদের শাস্তি আরো গভীর হওয়া উচিত। আমি আমার সতিনের জন্য কি কি করেছি এখন সেটা বলি। প্রথমে তার মা হওয়ার রাস্তা বন্ধ করেছি। যে মেয়ে অন্য পুরুষের সাথে রাত কাটানোর জন্য নিজের সন্তানকে নষ্ট করতে দু’বার ভাবে না তার তো মা হওয়ার অধিকার নেই। তাই আমি পরম যত্নে তার মাতৃত্ব নষ্ট করেছি। আর এই মেয়ে শুধু নিজের সন্তানকে নষ্ট করেনি। আমার সন্তানকে মা*রার চেষ্টাও করেছে। সেইসব প্রমাণ আমার কাছে আছে। সুতরাং নিমুর জেলে যাওয়া কেউ আটকাতে পারবে না। এখানেই শেষ নয়। তার পরবর্তী জীবনে যেন এক ফোঁটা সুখ না থাকে সেটাও নিশ্চিত করেছি আমি।”
কথাটা বলে রাফির হাতে মোবাইল দিয়ে এবার ক্যামেরার সামনে আসে সিরাত। দুই হাতে চুনকালি মাখিয়ে নিমুর সমস্ত মুখে লেপ্টে দেয় সে। ধীরে ধীরে নিমুর চুলগুলো কাঁচির সাহায্যে কাটতে কাটতে ঘাড়ে এনে ফেলে। তারপর এক হাতে নিমুর গাল ধরে বলে,
“বাহ্যিক সৌন্দর্যের মাধ্যমে ছেলেদের আকৃষ্ট করে তাদের সংসার ভেঙে দেওয়া মেয়েদের মূলে যে সৌন্দর্য আছে সেটা শেষ করে দেওয়া উচিত। নতুবা এমন মেয়েরা কখনো ভালো হবে না।”
চলবে??