তোর পরশে প্রেম পর্ব ১৫

0
157

#তোর_পরশে_প্রেম
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৫

নিলুফা বেগম আর পুতুল মুখোমুখি বসে আছে, রুমের মধ্যে পিনপতন নীরবতা।
নীরবতা ভেঙে নীলুফা বেগম বললেন,আমি তোমার মুখ থেকে সত্যিটা শুনতে চাই।
‘বড় আম্মু আমি সেদিন পালিয়ে নীরবের সাথে চট্টগ্রাম চলে যাই এটা সত্যি। কিন্তু ওইদিনের আগে আমি নীরবকে চিনতাম না। শাওন বলেছে ওর ভাই আমাকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত নিয়ে যাবে।এটাও সত্যি এতোদিন আমি ওদের বাসায় ছিলাম। কিন্তু এটা সত্যি নয় যে আমার সাথে ওর কোন রকম সম্পর্ক আছে। আমি চলে যাওয়ার পরেরদিনই ফিরে আসতাম। কিন্তু শাওন বললো, তোমরা আমরার মুখ ও দর্শন করতে চাওনা। আরো অনেক কিছু বলেছে এরজন্য শত কষ্ট হলেও নিজেকে বুঝিয়েছি কষ্ট সহ্য করে ওখানেই থেকে গেছি।
‘তাহলে ছেলেটা বলছে কেন তোর সাথে ওর বৈবাহিক সম্পর্ক ছিলো?
‘ও মিথ্যে বলছে। নীরব ভাইয়া আমাকে প্রপোজ করে আমি তাকে রিজেক্ট করে দেই বারংবার। সে হয়তো ভেবেছে আমি না করে আর কত দূর যাবো এক সময় না একসময় তাকে মেনে নেবোই।তুমি মাহমুদ আঙ্কেলকে কল করে জিজ্ঞেস করো উনি নিজে আমাকে এগিয়ে দিয়ে গেছে।
‘আচ্ছা তুই চিন্তা করিস না আমি দেখছি।
নিলুফা বেগম বাহিরে এসে বলেন,তোমার কি মনে হয় আমরা তোমার কথা বিশ্বাস করবো?
‘জুলিয়া বলে,না করার কোন কারণ তো দেখছিনা আম্মু!
‘এব বাড়ির নিয়ম কি ভুলে গেছো জুলিয়া?এই বাড়িতে কেউ বড়দের কথার মাঝে কথা বলে না৷
‘আমাদের মেয়ে তোমার বাসায় আদর যত্নে ছিলো তাই আমরা তোমার সাথে খারাপ আচরণ করতে চাইছি না।
পুতুল চলে আসার কিছু সময় পরে নীরবও চলে আসে। আর এসেই বলে, পুতুল ওর স্ত্রী।

নীরব বলে,আমি আপনাদের বাড়ির জামাই সে হিসেবে আদর যত্ন আপনারও যেমন করবেন ঠিক সেভাবেই পুতুল আমাদের বাড়ির বউ তাই ওর আদর যত্নে কোন কমতি রাখিনি আমরা।
‘আমি শেষ বারের মত বলছি সত্যিটা স্বীকার করো। আমি তোমার বাবার সাথে কথা বলেছি আর তিনি আমাকে সত্যিটা বলেছেন।
‘হ্যা সত্যি এটাই আমি ওকে নিজের করে পেতে চাই। আপনারা আমার সাথে ওর বিয়েটা দিয়ে দিন।
‘আমাদেরে মেয়ে বড় হয়েছে সে নিজে ঠিক করবে সে কার সাথে থাকবে। তাই এসব পাগলামি করে নিজের পার্সোনালিটি নষ্ট না করে ম্যাচিউরিটি দেখাও। জোড় করে সম্পর্ক তৈরি করা যায়, তবে তাতে ভালোবাসা বা শান্তি কোনটাই থাকে না৷ এডুকেডেট পার্সন তোমার নিজেকে ছোট করা মানায় না৷ গেস্ট রুমে যাও রেস্ট করো।

নিলুফা বেগম বললেন তোর রুমে যা পুতুল ফ্রেশ হয়ে নে বাকী কথা পরে হবে।

পুতুলের রুমের পাশের রুমটাই পরশের।
পুতুল কল্পনাও করতে পারেনি তার অনুপস্থিততেও তার জন্য সবাই এতোটা ভাববে! পুতুল রুমে ঢুকবে তার আগেই কেউ পুতুলের হাত ধরে টান দিলো৷
পরশ পুতুলকে নিজের রুমে এনে দরজা বন্ধ করে দেয়। পুতুল চিংকার করবে তার আগেই পুতুলের মুখে হাত রাখে। এতো বছর পর পরশের সেই ছোঁয়া এতো কাছে আসা। পুতুলের হার্ট বিট ফাস্ট হচ্ছে।
‘তোকে খুঁজেছিলাম সবাইকে দেখাতে তুই ভালো আছিস, তোর জন্য ছোট আম্মু বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে, আমার বাবা মারা গেছে,আমার আম্মু আমার সাথে এতোদিন কথা বলেনি। তুই কি ভেবেছিস তোকে আমি শান্তিতে থাকতে দেবো?
‘পরশ পুতুলকে ছেড়ে দেয়। বিশ্বাস করো আমি যদি এসব জানতাম ফিরে আসতাম। কিন্তু আমাকে ভুল জানানো হয়েছে।
‘তোর নাটক অন্যদের দেখা তাদের সামনে ন্যাকা কান্না কর সবাই বিশ্বাস করবে। কিন্তু রেজওয়ান আহসান পরশ না।
‘বিশ্বাস করো বা না করো সত্যি এটাই। আর তোমার কাছে নিজেকে প্রমাণ করার ইচ্ছেও নেই। তোমার জন্য আমি এতোগুলা দিন পরিবার থেকে দূরে থেকেছি, তোমার জন্য শেষ বারের মত আমার বড় আব্বুকে দেখতে পারিনি, তোমার জন্য দিনের পর দিন বিষাদময় কাটিয়েছি। তাই তোমার কাছে নিজেকে প্রমাণ করবো না মিস্টার রেজওয়ান মাহমুদ পরশ।
পরশ পুতুলকে টান দিয়ে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসলো।
‘ছাড়ো আমাকে আমি এখন ছোট নই। ছাড়ো বলছি৷
‘তোকে আমার কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে। কারণ বাধ্য তুই।
‘আমি বাধ্য নই তোমাকে কৈফিয়ত দিতে।
‘তোকে বলতেই হবে কেন আমাকে ভরসা করতে পারলিনা। তোকে বলতেই হবে।
‘ছাড়ো নয়তো আমি চিৎকার করবো।
‘পরশ পুতুলের কোমড়ে হাত রেখে নিজের আরো কাছে নিয়ে আসলো।দু’জনের শ্বাস আছড়ে পরছে দু,জনের মুখে।
‘পুতুল ইষৎ কেঁপে উঠে বলে,প্লিজ ছাড়ো আমাকে। কি করছো এসব? এসব তো অসভ্য ছেলেরা করে।
‘পরশ পুতুলের ঠোঁটের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে পুতুলের মাথায় হাত রেখে পুতুলের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। কয়েক মূহুর্তের জন্য পুতুল জেনো ফ্রীজ হয়ে গেলো। মিনিট দুয়েক পরে পুতুলের ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে বলে,আমার সামনে থেকে সরে যা নয়তো খারাপ কিছু হয়ে যাবে।
‘পুতুল মুর্তির মত একই ভাবে দাঁড়িয়ে রইলো।
‘কি হলো যাচ্ছিস না কেন! তুই কি চাস আমাদের মধ্যে এই মূহুর্তে কিছু হোক।আমি এখন উত্তপ্ত লাভা সরে যা সামনে থেকে।
পুতুল দরজা খুলে দ্রুত বের হয়ে নিজের রুমে চলে আসলো৷ সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে শাওয়ারের নিচে বসে পরলো। মনে মনে বলে,তুমি কি আমাকে ভালোবাসো নাকি সুযোগ নাও আমার?যখন তোমার হয়ে থাকতে চাইলাম তখন দূরে ঠেলে দিলে৷ এতো বিষাদ এতো কিছু পার করে আসার পরেও কেন আবার আমাকে কষ্ট দিচ্ছোে? আমি তো সেই অনূভুতিহীন পুতুল নেই! আমি সেই কবেই বুঝেছিলাম আমার অজান্তে তোমার জন্য আমার ছোট হৃদয়ে ভালোবাসা জন্মেছে।আমি তোমার হবোনা কিছুতেই হবো না৷ হাঁটুতে মুখ গুজে কান্না করতে লাগলো।

🌿 সুফিয়া বেগম পলাশ সাহেবের হাত ধরে বলেন, আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইবো না। আমি আমার দিক থেকে সঠিক ছিলাম। যার প্রথম সন্তান হারিয়ে ফেলেছে আর দ্বিতীয় সন্তান জন্মদিতে চেয়ে মাতৃত্বের ক্ষমতা হারিয়েছে তার কাছে একমাত্র সন্তান সবচেয়ে দামী। আমার পৃথিবীতে আমার মেয়ের প্রায়োরিটি সবার আগে তারপর বাকি সব৷ এরমানে এটা নয় তোমাকে আমি কম ভালোবাসি বা তোমার কোন প্রায়োরিটি নেই আমার কাছে। তোমাকে ভালোবাসি তবে আমার মেয়েটাকে ঘিরে আমার জীবন৷ তুমি সারাদিন অফিসে থাকতে মেয়েটাকে নিয়েই আমি মেতে থাকতাম।ও কত দুষ্ট ছোট থেকে আমার ওর দুষ্টমিগুলো ভালো লাগতো৷ ওর সব খামখেয়ালি পানায় মাতিয়ে রাখতাম নিজেকে। সুফিয়া বেগমের চোখ ভরে উঠলো।
‘পলাশ সাহেব সুফিয়া বেগমকে জড়িয়ে ধরে বলে,এবার আর কোন অভিমান অভিযোগের সুযোগ দেবো না৷ আমরা সবাই মিলে আবার সুখের নীড় তৈরি করবো।
‘জানিনা আমার মেয়েটা কি কি সহ্য করেছে এতোদিন।
‘আমি খোঁজ নিয়েছি ও ওইখানে তাদের মেয়ের আদরেই ছিলো। আর মাহমুদ সাহেবকে তার ওয়াইফ সমেত ইনভাইট করেছি৷ ওনারা বলেছেন আসবেন।

🌿নিলুফা বেগম ইজি চেয়ারে বসে আছেন৷ মনে মনে ভাবছেন হয়তো তার স্বামীর শেষ ইচ্ছেটুকু পূরণ হবে না৷ এখন কোন মুখে আবার বলবে, পরশের সাথে পুতুলের বিয়ের কথা!
পারাণ এসে নিজের মায়ের পায়ের কাছে বসলো।
‘কিরে তুই নিচে কেন বসলি চেয়ােরে বস।
‘আম্মু যা কিছু হয়েছে সব কিছুর জন্য আমি দায়ী। আমাকে ক্ষমা করে দিও।
‘ সব দায় পরিস্থিতি আর ভাগ্যের। তবে আমরা ভুগী আমাদের কর্ম ফল। যা হয়েছে সে-সব ভুলে যা জুলিয়ার সাথে জীবনটা সুন্দর করে গুছিয়ে নে৷ কথার মাঝেই হঠাৎ জোড়ে শব্দ হলো। নিলুফা বেগম অবাক হয়ে বলে, কি হলো?

#চলবে
আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছো সবাই?
ইদানীং লেখার সময় পাচ্ছি না৷ একটু ব্যস্ত আছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here