ঘর বাঁধিব তোমার শনে সিজন ২(পর্ব ৭ )

0
555

#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে_২
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-৭

মিহি টিভি অন করে সোফায় বসে মটরশুঁটির খোসা ছাড়াচ্ছিল।নিউজ চ্যানলে সংবাদ প্রচার হচ্ছে। আজকের ব্রেকিং নিউজ জ’ঙ্গি বাহিনীর প্রধান দুই আসামি সহ তিনশ জ’ঙ্গি কে গ্রেফতার করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সিআইডি বিভাগের সহকারী কর্মকর্তা শেহরোজ মাহমুদ। তিনি ও তার তিন টিম মিলে এই অভিযান পরিচালনা করেন।
মিহির হাত থেকে মটরশুঁটির বাটিটা নিচে পরে যায়। সে যেনো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা।

মিহির হাত পা কাঁপতে লাগলো,এইতো সেদিনের কথা মিহি শেহরোজকে বলেছিলো, তুই বড় হয়ে টিচার হবি। সবচেয়ে নিরাপদ আর সম্মানজনক কাজ এটা।আরো কত কি বোঝালো। আর সেই ছেলেই কিনা। এমন একটা কাজ করলো!
কজের মেয়েটা দৌঁড়ে এসে মিহিকে ধরলো, কি হয়েছে খালাম্মা। ধরে বসালো। এই টাইমে বাসায় কেউ নেই। মেয়েটা নিজের ফোন থেকে শাফিনকে কল করলো।

মিহি হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে পেশার হাই হয়ে গিয়েছিলো। মিহা আর ফারিন মিহির পাশেই বসে আছে। মিহিকে ঘুমের ইনজেকশন পুশ করা হয়েছে।

মিহির অসুস্থার খবর শুনে শেহনাজও চলে আসলো হসপিটালে।

মিহির ঘুম ভাঙতেই সবাই মিহিকে নিয়ে বাসায় চলে আসলো।

______________________________________________
শেহরোজ আর তাদের সাথে আরো তিন টিম মিলে সাকসেস পার্টি এরেন্জ করেছে। আবিদ বলল,শেহরোজ তোর বউকে কিন্তু নিয়ে আসতে হবে।

শেহরেজ অবাক হয়ে বলে, কিসের বউ!কোন বউ?

– দেখ ভাই এতো নাটক করে লাভ নাই ওই মেয়েটাকে নিয়ে আসবি।তা প্রেম চলছে কতদিন?

শেহরোজের মনেও ইদানীং শেহনাজের জন্য ফিলিংস হচ্ছে। তবে তা এখনও প্রকাশ করেনি। কিছু একটা ভেবে বলে,আচ্ছা নিয়ে আসবো। এখন বাসায় ফিরতে হবে।ফোনটাও ভেঙ্গে গেছে খোঁজ নিতে পারিনি বাসার!

মিহি কারো সাথে কোন কথা বলছে না। মিহা, শেহনাজ কত চেষ্টা করছে কথা বলার। কিন্তু মিহি চুপ।শেহরোজ বাসায় ফিরে সব শুনে মিহির রুমে আসলো। মিহির কাছে এসে বসে বলে,আম্মু কি হয়েছিল তোমার?

– কেন তুমি জানোনা আমার কি হয়েছে?

– আমি ব্যাস্তছিলাম আর আমার মোবাইল নষ্ট হয়ে গেছে তাই জানতে পারিনি।

– তা তুমি কি এমন কাছেকাজে দু’দিন ধরে ব্যস্ত ছিলে?

শেহরোজ মাথা নিচু করে নেয়, তবে কি সব জেনে গেলে তার পরিবার!

– একটা কথা আমার মা বলেছিলেন, ছেলে মেয়েকে বড় করা পর্যন্ত বাবা মায়ের দ্বায়িত্ব। তারপর তারা কি করবে না করবে তাদের মন মর্জি। আমরা তখন কেউ না। আমাদের তাদের নিয়ে কোন ইচ্ছে থাকতে পারবেনা। কোন স্বপ্ন থাকতে পারবেনা। নিজের সন্তানকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা মানে হচ্ছে সন্তানের উপর নিজের ইচ্ছে চাপিয়ে দেয়া তাইনা?

– আম্মু প্লিজ এভাবে বইলো না। আমি ভুল করেছি আমি মানছি। কিন্তু কি করবো ছোট বেলা দেখা কেন জানিনা আমার সিআইডি হওয়ার ইচ্ছে ছিলো। তাই অফার পেয়ে আর নিজেকে সামলে রাখতে পারিনি।

– তোমার কোন দোষ নেই বাবা সব দোষ তো আমার! আমার-ই ভুল হয়েছে তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা।

– তুমি এতো কষ্ট পাবে আমি বুঝতে পারিনি আম্মু। তবে তুমি না চাইলে আমি এই প্রফেশন থেকে দূরে সরে যাবো।

– তোমার যা ইচ্ছে তুমি করো,।তোমার লাইফ নিয়ে আমি বলার কে!এখন তুমি প্রাপ্ত বয়স্ক নিজের ডিসিশন নিজে নিতে শিখেছো। এখন আর বাবা মাকে তোমার দরকার নেই।

শেহরোজ নিজের মায়ের হাত ধরে বলে,”আম্মু তুমি যখন চাইছো না আমি আর এই প্রফেশনে থাকবো না।
আমি গ্রাজুয়েশন কম্পিলিট করে প্রফেসর হবো আম্মু।

মিহি কিছুই বললো,না।

______________________________________________
শাফিন ইশরাককে বলছে, তোমার বাবার ড্রা’গ’সের ব্যবসা করতেন। তার পার্টনার খুঁজে বের করতে হবে হতে পারে তাদের সাথে দ্বন্দ্ব হয়েছিলো তাই তোমার বাবকে কৌশলে তারা সরিয়ে দিয়েছে।

ইশরাক স্তব্ধ। তার বাবা এতো জঘন্য কাজের সাথে যুক্ত ছিলো!

শাফিন ইশরাকের কাঁধে হাত রেখে বলে,জীবন বিচিত্রময়। কখন কি হবে৷ বলা যায় না। যাকে যেরকম ভাবি সে সেরকম নাও হতে পারে।

– আঙ্কেল বাবার বন্ধু ইমন চৌধুরী তিনি এখন দেশের বাহিরে আছেন। বাবা সব সময় তার সাথেই কাজ করতেন।

– তুমি আমাকে ইমন চৌধুরীর ডিটেইলস দিতে পারবে?আমি যা ভাবছি সেই ইমন চৌধুরী হয় তাহলে আমার ধারণা একদম ঠিক।

ইশরাক নিজের রুম থেকে ইমন চৌধুরীর সব ডিটেইলস এনে শাফিনকে দিলো।

শাফিন সব দেখে বলে, এই ইমন চৌধুরী হলো আসল কালপ্রিট।

– আপনি এনাকে চেনেন!
– হুম চিনি খুব ভালো করে চিনি। আচ্ছা আজ উঠি।

ইশরাক কিছুই বুঝল না। ইমন চৌধুরীরকে কিভাবে চিনবে!

শাফিন গাড়ীতে এসে ভাবতে, লাগলো তার ভাই অথচ কত পার্থক্য তাদের মধ্যে।সেদিন যদি ইমনের শাস্তি আরো কঠিন হতো, তাহলে আজ এইদিন দেখতে হতো না।

নিজের মোবাইল বের করে তার টিমের আরো কয়েকজনকে কল করলো। সবাইকে সব বুঝিয়ে দিয়ে বাসায় ফিরলে।

শাফিন এসে ফ্রেশ হয়ে মিহির কাছেই শুয়ে পরলো। মিহি বলল,তুমি শুয়ে পরলে যে, খাবে না! শাফিন নিজের মাথাটা মিহির কোলে রাখলো। শাফিন বলার আগেই মিহি শাফিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। মিহি বললো,কি হয়েছে তোমার?

– মিহি আমার ভালো লাগছে না কিছু অস্থির লাগছে।

– এই উঠো-তো আসো খেতে দেই তোমাকে।

– তুমি আজ শেহরোজের কথাটা জানতে পেরে কষ্ট পেয়েছো তাইনা? আমি ওকে বুঝিয়েছপ কিন্তু কাজ হয়নি।

– একদম কথা ঘোরাবে না। তুমি কি নিয়ে পেরেশান সেটা বলো।

– মিহি ইমন চৌধুরী মানে, লিনা আর মোর্শেদ চৌধুরীর ছেলে আজ তার খোঁজ পেলাম। একদম নিজের বাবার মত হয়েছে। তবে তার মত অতো বিস্তার লাভ করতে পারেনি। তার আগেই উপড়ে ফেলতে হবে।

মিহি বলে,তার শরীরে আর তোমার শরীরে একি রক্ত প্রবাহমান তবুও দু’জনের মধ্যে কত পার্থক্য।

– বিশ্বাস করো মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে নিজের সব রক্ত শরীর থেকে বের করে ফেলি।

– পাগলামি কথা রাখো আর চলো খেতে হবে তো।

______________________________________________
রাতের আধার কেটে গেছে কিন্তু আজকে ভোরের আলো ফুটে উঠেনি। মেঘে আচ্ছন্ন হয়ে আছে পুরো শহর। যে কোন সময় ধরনী ভিজিয়ে দেবে বৃষ্টি।থেমে ধমকা হাওয়া তার সাথে মেঘের গর্জন।

আজ সকাল থেকে শেহনাজ নিজেকে ঘুছিয়ে নিচ্ছে। আজ তার বাবা আসবে দেশে তার বাবাকে শেহরোজের কথাটা বলবে।তার আগে শেহরোজকে আরেকবার প্রপোজ করবে।হালকা মেরুন রঙের শাড়ী সাথে মেচিং অর্নামেন্টস। খোলা চুল,। সকাল থেকে একশবার ইউটিউব দেখে শাড়ী পড়া শিখেছে।কিন্তু কাজল তো শেহনাজ পড়তে পারেনা। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে খানিক ক্ষণ চেষ্টা করলো কোন কাজ হলো না। নিরাশ হয়ে আয়নায় তাকাতেই মনে পরলো সাদাত হোসাইনের লেখা কিছু লাইন……

“কাজল চোখের মেয়ে,
আমার দিবস কাটে বিবশ হয়ে

তোমার চোখে চেয়ে!

শেহনাজের মনটা আরো বিষন্ন হয়ে গেলো।এখন মনে হচ্ছে কাজল ছাড়া তাকে অসম্পূর্ণ লাগছে।

নিজের সেলফোন হাতে নিয়ে শেহরোজকে মেসেজ করলো। আমি কিন্তু বের হচ্ছে, আপনি কখন আসবেন?

শেহরোজ শুয়ে ছিলো তখন। মেসেজ টোন বেজে উঠতেই মেসেজ দেখে বলে, পাগলি মেয়ে এই আবহাওয়ায় বের হতে হয়!ছোট করে রিপ্লাই করলো আসছি।

শেহরোজের ছোট রিপ্লাই পেয়ে শেহনাজ খুশিতে ডগমগ হয়ে গেলো।

সকাল এগারোটা রেস্টুরেন্টে এক কোন চুপ করে বসে আছে শেহনাজ। শেহরোজ তখন আসেনি। আকাশে মেঘ ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। অসম্ভব সুন্দর একটা ওয়েদার।

শেহরোজ চুপ করে এসে শেহনাজের পাশে বসলো।শেহনাজ তখনো গভীর চিন্তায় মগ্ন।

মিনিট দু’য়েক পর শেহরোজ শেহনাজের মাথায় আলত করে টোকা দিয়ে বলে,আবার কি দুষ্ট বুদ্ধি আঁটছো।

শেহনাজ শেহরোজের দিকে তাকিয়ে বলে তুমি কখন আসলে। সরি, সরি আপনি কখন আসলেন?

– যখন তুমি বিবশ হয়ে কারো চিন্তায় মগ্ন ছিলে তখন।একটু দাঁড়াও তো তোমাকে দেখি।

– শেহরোজে এই কথাটুকু শুনে শেহনাজ লজ্জায় কুঁকড়ে গেলো ।

শেহরোজ হেসে বলে,বাহহহ তুমি তাহলে লজ্জা পেতেও জানো! শাড়ীতেই নারী কথাটা কিন্তু একদম পার্ফেক্ট। তোমার মত মেয়েকেও অপরুপা করে তুলেছে।

শেহনাজ জেনো মুখে কুলুপ এঁটেছে। শেহরোজ নিজের হাত বাড়িয়ে শেহনাজের থুতনিতে হাত রেখে মুখটা উঁচু করে বলে,তোমাকে দেখতে ঠিক আমার কল্পনার রানীর মত লাগছে।

শেহনাজ এক ঝটকায় বলে,কল্পনা আবার কে!

শেহরোজ হাসি চেপে রেখে বলে, কল্পনা আমার কল্পনা।

– শেহনাজ কাঁদো কাঁদো মুখ করে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,আর কোনদিন আমার চোখের সামনে আসবেননা।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here