গোলকধাঁধা পর্ব ১৪

0
107

#গোলকধাঁধা
#লেখনীতে -ইসরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-১৪

সিরাত নাকমুখ মুছে বলল,
‘কথা বলো না তো। বাড়ি চলো।’
‘তোর মতিগতি ভালো না। কি হয়েছে তোর?
মায়ের কথা শুনে সিরাত তেলেবেগুনে জ্বলে
ওঠলো,
‘হা হা আমিই খারাপ। আর সবাই ভালো।’
মিনারা বিস্মিত হলেন। এই মেয়ের মাথায় কি গন্ডগোল আছে নাকি? আগে তো এমন ছিলো না। কথায় কথায় এখন চোখের জল ফেলে। তিনি চিন্তিত মুখে বসে রইলেন। ঘাটালেন না মেয়েকে। বেশি কান্নাকাটি করলেও বাচ্চার সমস্যা হবে। সিরাত কিছুক্ষণ পর চুপ হয়ে গেলো আপনাআপনি। ওড়নার কোণা দিয়ে চোখমুখ মুছে
রিকশার একপাশ চেপে ধরে বসলো। লোকটা কিভাবে ওকে এতগুলো কথা শোনাতে পারলো? সব দোষ কি সিরাতের? ও নিজে যে এত কান্ড করলো, ক্ষমতার অপব্যবহার করলো, ওকে তুলে এনে বিয়ে করলো, ষড়যন্ত্র করলো, কষ্ট দিলো সেসব কি ভালো কাজ? যে এসে ক্ষমা চাইলেই হয়ে গেলো? রিকশা থেমে যাওয়ায় সিরাত বাস্তবে ফিরে এলো।
বাড়ি এসে গেছে তারা। মিনারা মেয়েকে সাবধানে নামতে বলে রিকশা ভাড়া মিটিয়ে দিলেন। আমির চৌধুরী গাড়ি করে পৌঁছিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সিরাত রাজি হয়নি। এতবড় গাড়ি তাদের গলিতে ঢুকবে না। তাছাড়া সিরাতের কাছে কেমন যেন বেমানান লাগে!

এক সপ্তাহ হাসপাতালে কাটানোর পর প্রত্যয়
খানিকটা সুস্থ হলে ওকে বাড়ি নিয়ে আসা হলো। এর মধ্যে সিরাত আর ওকে দেখতে আসেনি। তবে প্রত্যাশার কাছে নিয়ম করে ফোন করে খবর
নিয়েছে, মাঝেমধ্যে প্রত্যয় ঘুমিয়ে থাকলে তখন চুপিচুপি ভিডিও কল করে দেখেছে।
সুস্থ হওয়ার পর এসব জেনে প্রত্যয় যারপরনাই রেগে গেলো। দরকার নেই ওর এমন বেয়াদ্দব বউয়ের, স্বামী মরতে বসেছিলো আর ওনি নাকি ভিডিও কলে দেখেছে! বোনের ওপর কিছুক্ষণ চেঁচালো প্রত্যয়। প্রত্যাশা রেগে নিজের ঘরে চলে গেলো। মুশফিকা চৌধুরী মাত্রই ছেলের দুপুরের খাবার নিয়ে এসেছেন। ঘরে ঢোকার মুখে দুই ভাইবোনের চেঁচামেচি
শুনে তিনি এসে বললেন,
‘তোমার আর সিরাত! দু’জনের মধ্যে সমস্যাটা কী? অনেকদিন ধরেই খেয়াল করছি, কিন্তু জানতে চাইনি। বলো তো ঘটনা কি?’
প্রত্যয় ফোন ঘাটার ভান করে ব্যস্ত স্বরে বলল,
‘কিসের সমস্যা? কোনো সমস্যা নেই।’
‘তাহলে প্রত্যাশাকে ওভাবে বললে কেন?’
প্রত্যয় ছোট করে বলল,
‘এমনি। সামান্য মনোমালিন্য চলছে। ঠিক হয়ে যাবে।’
মুশফিকা তীক্ষ্ণ স্বরে বলল,
‘বলো কি? এ সময় ঝগড়াবিবাদ করা ঠিক না। মায়ের কিছু হলে সেটা কিন্তু বাচ্চার ওপরও প্রভাব ফেলে।’
প্রত্যয় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
‘তেমন কিছু সিরিয়াস না৷’
‘আমি সিরাতের সাথে কথা বলবো। আজই ওকে বাড়ি নিয়ে আসবো। কম দিন তো হলো না।’
প্রত্যয় গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
‘না ও থাকুক। যখন আসতে ইচ্ছে করবে তখন
আসবে। অহেতুক জোরাজুরি করো না।’
‘তাও ঠিক।’
মুশফিকা দু’পাশে মাথা নাড়িয়ে সায় জানালেন।
এরপর ছেলের বারণ স্বত্তেও নিজ হাতে তুলে খাইয়ে দিলেন। খাওয়ানো শেষে এটা-সেটা বলে চলে গেলেন।

গ্রাম থেকে সিরাতের দাদী মুমিনা বেগম এসেছেন বাড়িতে। কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হলেও দাদী বেশ মজার মানুষ। নাতনি মা হতে যাচ্ছে শুনে তার খুশির অন্ত নেই। সিরাতের পছন্দের সব খাবার, আচার পোটলা করে নিয়ে এসেছেন সাথে করে। এমনকি কাঁথাও সেলাই করে এনেছে। সেগুলো দেখে ভালো লাগলো আবার অকারণেই লজ্জাও পেলো সিরাত। ওর খেতে ইচ্ছে করছিলো বলে মিনারা হাঁসের মাংস রান্না করেছে। সারাদিন অরুচি হওয়া মুখে হাঁসের মাংস দিয়ে ভাত খেতে ভালোই লাগছে ওর। ওকে আয়েশ করে এসব খেতে দেখে দাদী আঁৎকে ওঠে বললেন,
‘কি লো বুবু, ছাইপাশ কি গিলতাছোস?’
সিরাত হেসে বলল,
‘হাঁসের মাংস।’
দাদী চিৎকার করলেন,
‘অক্ষুনি ফেল এইসব বুবু, অক্ষুনি ফেল। কি অলক্ষুণে কারবার, বউয়ে কি বিবেকবুদ্ধি হারাইছে নি?’
সিরাত ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘কেন কি হয়েছে?’
‘হাঁসের মাংস খাইলে তোর পেটের বাইচ্চার গলাও ফ্যাসফ্যাসে অইবো লো বুবু। খাইস না ইতা।’
সিরাত হেসে ফেললো। মিনারাও শ্বাশুড়ির চেঁচামেচি শুনে ছুটে এলেন। ঘটনা শুনে দু’জনে মিলেই বোঝাতে লাগলেন এসব কথা ভিত্তিহীন বলে। তবে সেসব
কানেই নিলেন না মুমিনা বেগম,
‘অ আ ক খ পইড়াই বিজ্ঞ হইয়া গেছু তাইনা? অহন আর মুরুব্বিগো কথা হুনবা কেমনে? বাইচ্চা যহন হাঁসের লাগান কথা কইবো তহন এই মুমিনার কতাই মনে অইবো।’
অগত্যা সিরাত আর মুখে তুললো না সেসব খাবার।
এমনভাবে ভয় দেখালে তো মনের ভেতর সন্দেহ ঢুকে পড়ে। তাছাড়া দাদীর কথাও ফেলতে পারলো না। অন্য তরকারি দিয়ে ভাতগুলো শেষ করে ঘরে আসতেই দেখলো সোহা নীরুর চুল টেনে ধরেছে। ব্যথা পেয়ে নীরু চিৎকার করছে, তবুও ছাড়ছে না। ইদানীং সোহা
বেশ দুষ্ট হয়েছে। কামড় দেয়, খামচি দেয়, চুল-দাঁড়ি টেনে ধরে। মুমিনা বেগম বলেছেন এই মেয়ে বড় হলে তাকে এক হাটে বেচে অন্য হাট থেকে কিনে
আসার ক্ষমতা রাখবে এই মেয়ে। সিরাত দ্রুত গিয়ে নীরুকে ছাড়িয়ে নিয়ে ওকে ধমক দিতেই ঠোঁট
ফুলিয়ে কান্না করে বলল,
‘সব্বাই ফচা।’
সিরাত ওকে জোর করে টেনে নিজের কাছে এনে আদর দিয়ে বলল,
‘এইতো আদর দিলাম। আমিও পচা?’
‘সব্বাই।’
‘কি হয়েছে?’
‘বলব না।’
সিরাত মন খারাপ করার ভান করতেই সোহা
ওর গালে চুমু দিয়ে বলল,
‘না না তুমি সুদু বালো মা।’
সিরাত হেসে কাছে টেনে চুমু খেলো ওকে। সোহা ওর কোলে মাথা রেখে খেলতে লাগলো। ওর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে ভাবলো সোহা বড় হলে দারুণ সুন্দত দেখতে হবে। ঠিক মা সিমিনের মতো। আচমকা হুট করেই ওর মনে হলো ওর বাচ্চা দেখতে কার মতো হবে। বাবা নাকি মা? সিরাত মনে মনে চাইলো প্রত্যয়ের
মতো দেখতে হলেই ভালো, কারণ সিরাত নিজেকে আহামরি সুন্দরী মনে করে না।

রাতে ফোন এলো রাহীর। ফোর্থ ইয়ারের ফাইনাল এক্সাম এ মাসেই। বেশিদিন বাকি নেই। শুনে সিরাতের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। পড়া তেমন কিছুই হয়নি, ক্লাসও ঠিকঠাক অ্যাটেন্ড করতে পারেনি। কিভাবে সব গুছিয়ে ওঠবে তা নিয়ে পড়লো চিন্তায়।
তবে শিমুল সাহেব এসে বললেন এত চাপ না নেওয়ার জন্য। যতটুকু পারবে ততটুকুই যাতে কমপ্লিট করে।সিরাত বইটই খুঁজে এনে প্রিপারেশন শুরু করলো পরদিন থেকেই। মুশফিকা চৌধুরী শুনে বললেন রেজাল্ট খারাপ হলে সমস্যা নেই, ও যাতে নিজের যত্ন নিতে না ভুলে। সিরাত তাকে আশ্বস্ত করলো সে নিজের এবং বাচ্চার খেয়াল ভালোভাবেই রাখবে। ইদানীং বাচ্চার অস্তিত্ব, নড়চড় টের পায় সেটা শ্বাশুড়িকে জানাতেও ভুললো না সে।

এভাবেই দিন কয়েক কেটে গেলো। প্রত্যয় ফোন এবার সিরাত আর কেটে দেয় না। শুধু ’ভালো আছি’ জবাব দিয়ে ত্রিশ সেকেন্ডের ভেতর কেটে দেয়। তবে প্রত্যয়ও এরবেশি কোনো কথা বলে না। রাগ, অভিমান ভালোই জেঁকে ধরেছে ওর। দিনটা মেঘলা। তবে বৃষ্টি নেই। একঝাঁক পাখি ওড়ছে আকাশে। মৃদুমন্দ হাওয়ায় দুলছে পথের ধারে লাগানো বাগানবিলাস গুলো। প্রতিমন্ত্রীর অফিস থেকে মিটিং সেরে মাত্র বেরিয়েছে সে। সঙ্গে আছে মাহিন। সে অনবরত বকবক করে এতদিনের জমানো কাজের ফিরিস্তি দিচ্ছে। প্রত্যয় আনমনা হয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘তোর ভাবীর খবর কি?’
‘ভাবীর তো ফোর্থ ইয়ারের এক্সাম চলে। পরশু
থেইকা শুরু হইছে।’
প্রত্যয় চট করে তাকালো মাহিনের দিকে,
‘আমাকে জানাসনি তো তুই।’
মাহিন মাথা চুলকে বলল,
‘এত কাজের চাপে মনে ছিলো না ভাই।’
‘কার সাথে আসে ও?’
মাহিন অকপটে জানালো,
‘তালুই মশাই নিয়া আসে। যাইবার সময় বান্ধবীর সাথে যায়। ওই রাহী আছে না? ওর সাথে।’
প্রত্যয় আরকিছু বললো না। এই অবস্থায় কি করে চলাফেরা করে মেয়েটা? কতবার মা’কে দিয়ে বলে পাঠিয়েছে গাড়ি করে যেতে, নিজেও বলেছে। কিন্তু এই মেয়ের নাকি গাড়ি করে যেতে ইচ্ছে করে না। প্রত্যয় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাতঘড়ি চেক করলো। পাঁচটা বেজে পঁয়ত্রিশ মিনিট। তার মানে ইতোমধ্যে পরীক্ষা শেষ। ড্রাইভারকে বললো গাড়িটা ভার্সিটির দিকে নিয়ে যেতে। সিরাতকে পাবে কি-না সন্দেহ, তবুও একবার দেখে আসতে চায়। কিন্তু গিয়ে লাভ হলো না। কোথাও খুঁজে পেলো না। একজনকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো পরীক্ষা শেষে রাহীর সাথে রিকশা করে চলে গেছে সিরাত। মেজাজ চরম খারাপ হবার মতো খবর শুনে বিরক্তিবোধ জেঁকে ধরলো প্রত্যয়ের। ছ’মাসে পড়েছে এবার, ও যে অন্তঃস্বত্তা সেটা কি ভুলে গেছে?
এত ছোট রিকশা করে যাওয়া কি ঠিক? ওদের বাড়ির ওদিকের রাস্তাগুলোও তেমন ভালো না। ইচ্ছে করছে থাপড়ে ওর গাল লাল করে দিতে।

পরদিন সিরাত পরীক্ষা শেষে বের হয়ে দেখলো মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছে। বাড়ি ফেরা নিয়ে ওর চিন্তা হলো। রাহীর সাথে মলিন মুখ করে বৃষ্টি থামার
অপেক্ষা করতে লাগলো ও। খানিকক্ষণ পর ঝাপসা চোখে সিরাত দেখলো কালো রঙের পাজেরো
গাড়িটা গেইটের সামনে দাঁড়িয়েছে। আর ভেতর থেকে একটা কালো ছাতা নিয়ে বেরিয়ে এসেছে প্রত্যয়। সাবধানে পা ফেলে দ্রুত হেঁটে এসে দাঁড়ালো
সিরাতদের সামনে। ছাতা নামিয়ে চুল হালকা ঝেড়ে ব্যস্ত কন্ঠে বলল,
‘দ্রুত চলো।’
সিরাত শক্ত গলায় বলল,
‘বৃষ্টি এক্ষুনি থামবে। আমরা যেতে পারবো। আপনি যান।’
রাহী বিস্ময় ভাব নিয়ে ওকে দেখলো। প্রত্যয়ের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। রাহী পরিস্থিতি বুঝতে পেরে বলল,
‘পাগল নাকি তুই? বৃষ্টি মনে হয় না আজ থামবে। এই অবস্থায়ও তোর জেদ গেলো না! যা তো ভাইয়ার
সাথে। আমি যাই।’
প্রত্যয় রাহীকে বলল,
‘তুমিও চলো। বৃষ্টিতে কীভাবে যাবে?’
‘রিকশা করে। সমস্যা হবে না। এতক্ষণ তো সিরাতের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম। এখন আপনি এসে গেছেন
আমি তাহলে যাই।’
প্রত্যয় বলল,
‘একদম না। আমি নামিয়ে দেবো। চলো আর তোমার গাধী বান্ধবীকেও নিয়ে আসো। নয়তো জোর করে
তুলে নিয়ে যাবো।’
রাহী হাত ধরে টানতে লাগলে অগত্যা বাধ্য হয়েই পেছনের সিটে গিয়ে বসে পড়লো। প্রত্যয় এসে
ড্রাইভিং সিটে বসলো। বৃষ্টিভেজা রাস্তায় গাড়ি চলতে শুরু করলো। রাহীকে ওর মেসের সামনে নামিয়ে
দিয়ে আবারও চলতে শুরু করলো। এরমধ্যে বৃষ্টির তেজ কমে এলো। লুকিং গ্লাস দিয়ে সিরাতকে দেখে প্রত্যয় গলা খাকারি দিয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘কেমন আছো?’
‘ভালো।’
সাথে সাথেই জবাব দিলো সিরাত। এরপর চুপ করে গেল। প্রত্যয় একটু পর গাড়িটা রাস্তার একধারে থামালো। সিরাত একটু ঘাবড়ালো। প্রত্যয়
স্টিয়ারিং ধরে ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে বলল,
‘বাচ্চার বাবা ভালো নেই।’
সিরাত চুপ করে থাকায় মেজাজ বিগড়ে গেল
প্রত্যয়ের। চট করে দরজা খুলে পেছনে এসে বসতেই সিরাত আৎকে ওঠলো। ব্যাপারটা বুঝতে না দিয়ে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলো। প্রত্যয় ওর পাশে বসে পূর্ণ দৃষ্টিতে বউকে দেখতে লাগলো, কতদিন দেখে না! অমন চাহনি দেখে খানিকটা শিউরে ওঠলো সিরাত। প্রত্যয় বিষন্ন গলায় বলল,
‘তোমাকে ছাড়া আমার আর ভালো লাগে না। বাড়ি ফিরে তোমার মুখ না দেখে কতদিন কাটিয়ে দিলাম বলো তো!’
সিরাত নির্লিপ্ত স্বরে বলল,
‘দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমাকে ফিরতে হবে। চিন্তা করবে সবাই।’
প্রত্যয় বলল,
‘না করবে না।’
সিরাত বুঝলো বাড়িতে জানে। তবুও বিরক্তি নিয়ে বলল,
‘আমি ক্লান্ত, দেখতে পাচ্ছেন না? এক্ষুনি যেতে চাই।’
প্রত্যয় ওকে জড়িয়ে ধরলো। হুট করে এমন করায় চেঁচিয়ে ওঠলো সিরাত। প্রত্যয় না ছেড়ে আরো শক্ত করে ধরে ডানহাতটা আস্তে করে নিয়ে কামিজের নিচ দিয়ে সিরাতের হালকা উঁচু হওয়া উদরে রেখে বলল,
‘আমি ওকে অনুভব করতে চাই সিরাত। তুমি কেন বুঝো না? আমাকে মাফ করো আর না করো এখন আর কিছু যায় আসে না, তবে তোমাকে আমি কখনো ক্ষমা করবো না, আমাকে এত কষ্ট দেওয়ার জন্য!’
সিরাত কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেলো। প্রত্যয় ওকে ছেড়ে সোজা হয়ে বসলো। ওর দিকে দৃষ্টি রেখেই বলল,
‘আমার কতগুলো স্বপ্ন, ইচ্ছে তুমি মাটি করে দিচ্ছো জানো তুমি? আমি কি বারবার বাবা হবো যে সব অনুভূতি একাই নিয়ে নিচ্ছো আমাকে ভুল বুঝে?’

সিরাত হাসি চাপতে পারলো না। প্রত্যয় অবাক হয়ে গেলো। হাসির প্রতিটা শব্দ ওর বুকে তীর গেঁথে
দিচ্ছে। যেন ওর ছটফটানি মৃ’ত্যুতে উল্লাস করছে এই মেয়ে। এক ঝটকায় কাছে টেনে চুমু খেলো ঠোঁটে। হতভম্ব হয়ে চুপ করে যাওয়া সিরাতকে এরপর রাগ
রাগ কন্ঠে বলল,
‘জানি, আমাকে এখন আর ভালোবাসো না তুমি। আচ্ছা বাসতে হবে না। তুমি আমার পথের সঙ্গী না হতে চাইলেও সত্যি বলছি, আমি তোমার পথের ধুলো হতে চাই। আমাকে মাঝ রাস্তায় ফেলে চলে যেও না প্লিজ!’

কি যে হলো! সিরাতের মনটা যেন বরফের ন্যায়
গলে একদম পানি হয়ে গেলো। কথাগুলো নাটকীয় মনে হলেও প্রত্যয়ের চোখের দৃষ্টিতে সে মিথ্যে কিছু
দেখলো না। বরংচ খুঁজে পেলো আকুলতা!

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here