কোন সুতোয় বাঁধবো ঘর পর্ব ২৬

0
305

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২৬

আপনার মন কখন কি বলে, আপনি জানেন-না?
‘আসলে ব্যাচালার মানুষ তো তাই মনের কথা শুনে চলি। বলিয়াছেন কবি, যেদিন বিয়ে হবে মনের কথা সব জলে যাবে, বউয়ের কথাই তোর বটে পরে রবে।
‘তা এই আজাইরা কথা কোন কবি বলেছে?
‘এই যে কবি জারিফ আহসান। ফান করলাম বিয়াইন সাহবে।আচ্ছা আপনার মন খারাপ কেন?
‘আমার মন খারাপ না হয়তো আমার সময়টা খারাপ যাচ্ছে নয়তো আমি সময়ের সাথে তাল মেলাতে পারছি না। যা হচ্ছে তা চাইছি না যা চাইছি তা হচ্ছে না।
‘এটাই তো জীবন৷ দেখুন এখন পর্যন্ত বিয়ে তো দূরে থাক প্রেমও করতে পারলাম না। অথচ বাড়িতে একজন সংসারী বউ দরকার ছিলো৷
‘কেন আপনার বাসায় কোন মেয়ে মানুষ নেই।
‘নাহহ।
‘ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে করে ফেলুন
‘এতোদিন পর একটা ভালো মেয়ে পেয়েছি কিন্তু সে বিবাহিতা বাচ্চাও আছে তার৷
‘ইরহা হেসে দিয়ে বলে,আপনি আর আপনার জোক্স। এতো মেয়ে থাকতে শেষে বাচ্চার মা’কে পছন্দ হলো!আমি এবার নিশ্চিত আপনার মাথায় সমস্যা আছে।পাবনা চলে যান।
‘আপনি সাথে থাকলে পাবনা কেন,উগান্ডা ও যেতে রাজি।
‘চলুন বাসায় চা খেয়ে খাবেন।
‘না থাক একবার যে চা খাইয়েছেন এরপর আর চা খাওয়ার শখ নেই৷
‘এবার স্পেশাল ক্যারামেল চা খাওয়াব এরপর যতবার আসবেন এই চা’খাওয়ার বায়না ধরবেন৷
‘আপনাকে কি দ্বিতীয় বার বিশ্বাস করা যায়?
‘দ্বিতীয় জিনিসটা কঠিন তবে বিশ্বাস করতে পারেন৷
‘কঠিন কেন?
‘প্রথমবার বিশ্বাস ভঙ্গ হলে সহ্য করে নেয়া যায়। কিন্তু দ্বিতীয়বার বিশ্বাস ভাঙ্গলে বিশ্বাস বলতে কিছু আর জীবনে থাকে না৷
‘সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে বলে,নওশাবার আম্মু আপনার বয়স কত?
‘ধরে নিন পঁচিশ।
‘আমার আটাশ শেষ হয়ে উনত্রিশ ছুঁইছুঁই।
‘আপনার বয়স আমি জিজ্ঞেস করেছি?
‘নাহহহ জিজ্ঞেস করেননি আমি নিজেই বললাম।
‘আপনি কি জানেন না মেয়েদের বয়স আর ছেলেদের স্যালারি জিজ্ঞেস করতে নেই! আপনার বয়স হয়েছে কিন্তু বুদ্ধি হয়নি। বিয়ে করুন হয়ে যাবে কারণ বউয়ের দেয়া মূল শিক্ষা এখনো বাকি আপনার৷
‘এহহহ এটা এবার কি কথা।
‘আপনার মত ফানি কথা। ইরহা ঘরে ঢুকেই দেখে নওশাবা হামাগুড়ি দিচ্ছে। ইরহা দরজায় দাঁড়িয়ে বলে,আমার আম্মুটা কইরে?

নওশাবা নিজের মায়ের গলার আওয়াজ পেয়ে সেদিকে ছুটতে লাগলো। ইরহা নওশাবাকে কোলে নিয়ে আদর করতে লাগলো।

‘ফরিদা বেগম জারিফকে দেখে বলে,বাবা তুমি?
‘জ্বি আন্টি ওইদিনের জাপানি চা খুব টেস্টি ছিলো তাই আবার টেস্ট করতে চলে আসলাম।
‘বসো বাবা৷ দুপুরের খাবার খেয়েছো?
‘নাহহ আন্টি আজ সময় পাইনি৷
যাও টেবিলে বসো তোমাদের দু’জনকে একসাথে খেতে দিচ্ছি।
ফরিদা বেগম ডাকলেন,নিশাত এদিকে এসো তো।
‘জ্বি আম্মা কিছু লাগবে?
‘খাবার গরম করো দেখো কে এসেছে আমি নওশাবাকে রাখছি ইরহাও তো ফ্রেশ হয়ে খেতে বসবে।
‘আচ্ছা আম্মা আপনার চিন্তা করতে হবে না আমি খাবার রেডি করছি৷
নিশাত কিচেনে যাওয়ার সময়, জারিফকে দেখে বলে,আসসালামু আলাইকুম।
‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম। কিন্তু আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না!
‘আত্মীয় যখন হচ্ছি আস্তে আস্তে চেনা জানা সব হবে। আমি লাবিবার ভাবি৷
‘কেমন আছেন ভাবি?
‘আলহামদুলিল্লাহ, আপনি?
‘আমি আলহামদুলিল্লাহ অলওয়েজ ভালো থাকি।
‘আচ্ছা আপনার ফ্রেশ হওয়ার দরকার পরলে হাতের ডানপাশে গেস্ট রুমে চলে যাবেন।
‘জ্বি ভাবি দরকার হলে অবশ্য যাবো।


রবিন ফিরে আসলো রাত বারোটার পরে, লামা রবিনকে কিছু জিজ্ঞেস করছে না। অজানা ভয় ভেতর থেকে চেপে ধরেছে।
রবিন এসে লামার দিকে একটা প্যাকেট বাড়িয়ে দিয়ে বলে,রেডি হয়ে আসো আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।
‘লামা বলে,কি আছে এতে?
‘খুলে দেখো।

লামা প্যাকেটটা খুলে দেখে, একটা হালকা বেবি পিংক কালারের শাড়ী সাথে মেচিং অর্নামেন্টস। লামা বলে,আজকে কি কোন বিশেষ দিন?
‘রেডি হও এখন বিচে যাবো। একদম পরির মত সাজবে।
‘লামা শাড়ী পরে সুন্দর করে সাজলো। বের হওয়ায় আগে একটা মাক্স দিয়ে মুখ ঢাকতে চাইলে, রবিন বলে,এতো সুন্দর রূপবতী বউকে কি ঢেকে রাখবো নাকি! সবাই দেখবে আর জ্বলবে। ইশশশ আমার বউ আগুন সুন্দরী। যে কোন পুরুষের মাথা নষ্ট করে দিতে সক্ষম।
‘মানুষ তো নিজের বউকে লুকিয়ে রাখতে চায়৷
‘রবিন হেসে বলে,তোমার আর লুকোনোর কি আছে বেবি। ওইদিন রুবেল বলল,ভাবিকে এক রাতের জন্য দে যত টাকা লাগে দিবো।
‘রবিন তুমি এসব কি বলছো?
‘যাস্ট ফান বেবি চলো তো। সৌন্দর্য তো প্রদর্শন করার জন্যই। মনে নেই তুমিই তো বলেছিলে আমি তোমাকে শর্ট স্কার্ট পরতে মানা করেছিলাম বলে।
‘আচ্ছা এখন কি কথাই বলবে নাকি বাহির হবে।কিন্তু এতো রাতে আমরা বিচে কেন যাচ্ছি?
‘চাঁদনি রাত মেরি বাহো ম্যা তুম অর ইয়ে ওয়াক্ত।
‘সেটা তো রুমেও হবে।
‘উত্তাল সমুদ্র সাথে মাথা নষ্ট করা রূপবতী বউ এই কম্বিনেশন মিস করতে চাইছি না। চলো তো বাবু।
‘লামার হাত ধরে বাহিরে নিয়ে আসলো, বাইকে করে এখন সমুদ্রের তীরে যাবে এতে আনন্দিত হওয়ার কথা হলেও লামার মনে আনন্দ নেই কেমন আজানা ভয় কাজ করছে।মিনিট পনেরো লাগলো সমুদ্রের তীরে আসতে। মেইন পয়েন্ট থেকে বেশ খানিকটা দূরে ঝাউবনের শো শো বাতাস আর সমুদ্রের কলতান ছাড়া কোন আওয়াজ কানে আসছে না। লামার চুল খোলা বাতাসে উড়ছে,পূর্ন চাঁদের আলো অসম্ভব সুন্দর প্রকৃতি হলেও সব মিলিয়ে কেমন ভূতুরে পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে।
লামা রবিনের হাত শক্ত করে ধরে আছে। রবিন লামার শাড়ী ভেতর দিয়ে হাত গলিয়ে লামার উন্মুক্ত কোমড়ে হাত রাখলো। রবিনের হাতের শীতল স্পর্শে ঈষৎ কেঁপে উঠলো লামা। লামার মনে ভয় ক্রমশ বেড়েই চলেছে। মনে মনে বলছে, এখানে কোন অশুভ ছায়া নেই তো! অথবা যে নিয়ে এসেছে সে নিজেই এই মূহুর্তে আমার জন্য অশুভ! হুট করে লামা বলল,তোমার মোবাইল কোথায রবিন?
‘জান ডিস্টার্ব করো না-তো উপভোগ করো,আমাদের মিড নাইট রোমান্স। শুনশান নীরবতা সাথে সমুদ্র কলতান, ঝাউ বনের শো শো বাতাস আর আমার মাতাল করা স্পর্শ।
‘আমার কেমন ভয় করছে, এমন মধ্যে রাতে এতো দূরে কেন আসলাম। মেইন পয়েন্টে থাকতে পারতাম।
‘রবিন লামার চুল সরিয়ে লামার ঘাড়ে গভির চুমু দিয়ে বলে,সেখানে সারারাত-ই মানুষ থাকে। এই সাইডে রাতে কেউ আসে না। শুধু তুমি আর আমি আর এই নীরব রাত। লামা আর কিছু বলবে, তার আগেই রবিন লামাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়।


রুবি শেফালী বেগমকে বলল,মা আমার মন বলছে তোমার ছেলে বড় রকমের কোন ক্রাইম করবে! মা ও আবার ইরহা ভাবিকে খু’ন করবে না-তো?
‘কি বলছিস অলুক্ষণে কথা! ও কখনো ইরার ক্ষতি করবে না। আমার মন বলছে,ছেলেটা নিজের সাথে কিছু করে বসবে। তুই আবার কল দে আমার মন কু ডাকছে।
‘তোমার ছেলে তোমার নাম্বার আমার নাম্বার ব্লক লিস্টে ফেলে রেখেছে। আর তোমার জামাইয়ের ফোন থেকে কল করাও যাবে না,জানোই তো সে পছন্দ করে না ভাইকে। যদিও পছন্দ না করার অনেক কারণ আছে।
‘শেফালী বেগম নিজের রুমে চলে আসলেন।

✨খেতে বসে জারিফ দেখলো প্রায় খাবারই তার অপছন্দের। যেমন করলা দিয়ে ইলিশ মাছের ঝোল। যদিও তার মায়ের পছন্দের খাবার ছিলো গরমে এটা তাদের বাসায় ও রান্না হতো। চিংড়ি মাছ দিয়ে কচুর লতি চচ্চড়ি। বেগুন ভাজা, ইলিশ ভাজা। লাউ শাক ভাজি,শুটকি ভর্তা। জারিফ তো শুটকির ঘ্রাণ ও সহ্য করতে পারে না। অবশ্য তার খাওয়ার মত,দেশি মুরগীর রেজালা আর ডাল আছে।

‘ইরহা বলল,আপনি এসব খান তো?আসলে আজ সব আমার পছন্দের আইটেম রান্না হয়েছে।
‘এগুলো আপনার পছন্দ?
‘হ্যা ভিষন এই যে শুটকি ভর্তা টা দিয়ে গরম, গরম ভাত মুখে দিন মনে হবে অমৃত।

‘না থাক আমি মুরগী মাংস দিয়ে ট্রাই করি।
‘ইরহা হেসে বলে, সবাই তো আর টেস্ট বুঝে না ব্যাপার না৷
‘জারিফ নিজেই শুটকি ভর্তা নিয়ে বলে,টেস্ট না করলে তো টেস্ট বুঝবো না তাই আজ টেস্ট করবো।ভাবি, সব রকমের আইটেম থেকে একটু, একটু করে দাও তো?
‘নিশাত বেশ অবাক হলো। প্রথমবার কেউ এমন করে!একটু বেশিই মিশুক হয়তো।
‘এদিকে যে আরেকজনকে পিরিতের পেত্নী-তে ধরেছে যার ফলে হুশ ভুলে বেহুশের মত বিহেভিয়ার করছে। তার খবর তো আর নিশাতের কাছে নেই।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here