কোন সুতোয় বাঁধবো ঘর পর্ব ২৩

0
118

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#-২৩

‘অফিসের প্রথমদিন কেমন আন কম্ফোর্ট ফিল করছে ইরহা৷ আরো দু’টো মেয়ে আছে অফিসে। টুকটাক কাজ করে নিজের জন্য কফি নিয়ে আসলো।
ডেক্সে বসতেই পাশের মেয়েটি বলল,স্যার অনেক রাগী। হয়তো খাবে নয়তো কাজ করবে৷ কিন্তু কাজ আর খাওয়া একসাথে করতে পারবে না৷
‘না, না এখন কিছু খাবো না।
‘তুমি তো কফি খাচ্ছো।
‘এটাতেও সমস্যা!আচ্ছা আর কোন সমস্যা ?
‘সেটা আস্তে আস্তে জেনে যাবে আজ স্যার নেই স্যারের মামা আছে৷
‘ধন্যবাদ
‘ওয়েলকাম। আমার নাম বীথী তোমার নাম কি?
‘ইরহা।
‘আচ্ছা এখন কাজ করি লাঞ্চের সময় কথা হবে।
আরো বেশ কিছুক্ষণ কাজ করে ইরহা ফোন বের করে বাসার নাম্বার ডায়াল করলো। ঠিক তখন বয়স্ক একজন ডেক্সের উপর বাড়ি দিয়ে বলে,’মিস ইরহা আপনি কি জানেননা অফিস টাইমে ফোন ব্যাবহার করা নিষেধ।
‘ইরহা মাথা তুলে তাকিয়ে বলে, আঙ্কেল আপনি?
‘তুমি! যাক ভালো হয়েছে তবে ধন্যবাদ দেবো না৷ ভুল করেছো নিজের ভুল শুধরে নিয়েছো।
‘জ্বি আঙ্কেল।
‘আঙ্কেল বলা যাবেনা। এটা অফিস আর আমি অফিসের সেকেন্ড বস। তাই স্যার বলবে।
‘জ্বি আঙ্কেল সরি স্যার৷
‘কিপ আপ দ্যা গুড ওয়ার্ক
‘ইয়েস আই উইল ট্রাই
মিস্টার সবুজ চলে গেলেন। এই বয়সেও খুব স্মার্ট চলাফেরা আর নিজের সব কাজ পার্ফেক্ট ভাবে করতে পছন্দ করেন সবুজ সাহেব। ওনার সব কিছু পার্ফেক্ট চাই।

রাতুল বসে আছে ড্রয়িং রুমে। নাদিম রাতুলের মুখোমুখি বসে আছে। দু’জনেই চুপ৷

নিরবতা ভেঙে নাদিম বলে, তোমাদের রিলেশন কতদিনের?
‘রাতুল বলে,ছয় মাস এগারোদিন পনেরো ঘন্টা।
‘তা এতো সিরিয়াস রিলেশনশিপ ব্রেকআপ হলো কেন?
‘ভাইয়া সপ্তাহ খানেক আগে, লাবুও মানে লাবিবাই আমার সাথে কোন কারণ ছাড়া ব্রেকআপ করে৷ আমি কারণ জিজ্ঞেস করলেও ওর দিক থেকে তেমন কোন রেসপন্স পাইনি। আমি ওকে স্টিল লাভ করি।
‘স্টিল আর পিতল নাকি তামা এসব আমি বুঝিনা৷ আমি শুধু চাই আমার বোন ভালো থাকুক৷ হোক সেটা তোমার সাথে নয়তো তোমার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে। আজ এখানে কেন এসেছো নিশ্চয়ই লাবুকে দেখতে? তার আগে বলো হুট করে গতকাল রাতে ও এমন একটা ডিসিশন কেন নিলো? তোমাদের সম্পর্ক কতটুকু গভীর চিলো সত্যিটা বলবে এক বিন্দু ও মিথ্যে বলবে না।
‘ভাইয়া আপনি যেরকম ভাবছেন সেরকম কিছুই আমাদের মধ্যে নেই। আগামীকাল আমি লাবুর উপে জেদ করে একজনের সাথে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দেই আর আমার মনে হচ্ছে এটাই কারণ।
‘তোমার সাথে ওর শেষ কথা কবে হয়েছে?
‘ব্রেকআপের পরেরদিন। তারপর আর কোন যোগাযোগ ও রাখেনি আমার সাথে।
‘এখন তুমি চা খেয়ে চলে যাও। লাবিবা সুস্থ হবে ওর সাথে কথা বলে আমি তোমাকে ডাকবো।এর আগে কোনরকম যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না।

‘ভাইয়া দূর থেকে একবার দেখবো শুধু।
‘আমি যা বলেছি সেটাই আমার শেষ কথা। আসতে পারো তুমি৷
‘রাতুলের মুখটা ছোট হয়ে গেলো। একবার না দেখে শান্তি পাচ্ছে না। উঠে দাঁড়িয়ে বলল আসি ভাইয়া।
‘এরমধ্যেই কলিং বেল বেজে উঠলো।

নাদিম যেয়ে দরজা খুলতেই জারিফকে দেখতে পায়। সালাম দিয়ে বলে,আপনি কে? আপনাকে তো চিনলাম না!
‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম আমি জারিফ আহসান। রাতুলের বড় ভাই।
‘তা এখানে কি?
‘আপনি একজন ম্যাচিউর পার্সন অবশ্যই ভদ্রতা রক্ষা করবেন।
‘আসুন বসুন।
‘আমি আপনার বোনের জন্য আমার ভাইয়ের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গতকাল এসেছিলাম। কিন্তু আপনার বোন যা করলো। থাক সেসব বাদ দিলাম। হঠাৎ করে সকালে এমন খবর শুনে আমি কনফিউজড! আসলে আপনার বোন কি চায় সেটাই সে বুঝতে পারছে না। আমার মনে হয় আপনাদের ওর সাথে ঠান্ডা মাথায় কথা বলা উচিৎ!
‘আচ্ছা ধন্যবাদ আমি কথা বলে আপনাকে জানাবো।
এরমধ্যেই নওশাবার কান্নার আওয়াজ আসলো। নাদিম বলে,নিশাত আমার আম্মাজান কান্না করছে কেন? ওকে আমার কাছে দিয়ে যাও।

‘নিশাত নওশাবাকে দিয়ে গেলো। মামুর কোলে উঠে নওশাবা একদম চুপ হয়ে গেলো৷

‘জারিফ বলে,আপনার বোনের অতিত বর্তমান সবকিছুর দ্বায়িত্ব নিতে রাজি আমরা।
‘অতীত মানেই শেষ তাই অতীতের দায়িত্ব নেই তবে বর্তমানে দায়িত্ব নিতে চাইলে আগে আমি আমার বোনের সাথে কথা বলবো তারপর।

‘তাহলে আজ আসি।
‘বসুন নাস্তা করে যান।
‘কপালে থাকলে কত নাস্তা করতে পারবো আজ ব্যাস্ত।

জারিফ বের হয়ে গাড়িতে এসে বলে,বুঝলাম না এই মেয়ের মধ্যে তুই কি দেখলি?
‘ভাইয়া ভালোবাসা কিছু দেখে হয় না! ইট’স ম্যাজিক একটা অদ্ভুত অনূভুতি যার কোন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ নেই।যাকে ভালোবাসি তার সব কিছুই ভালোবাসি হোক তার একটু আধটু পাগলামি কিংবা ভুলচুক অথবা রাগ, অভিমান। তাকে ভালোবাসি মানে তার পুরো সত্তাটাকেই ভালোবাসি।
‘চুপ কর পুরা মাথা গেছে।এবার দেখ তোর ভালোবাসা রাজি হয় কি না।

‘নাদিম ফরিদা বেগমকে ডেকে বলল, আমার তো ছেলেকে পছন্দ হয়েছে তাহলে সমস্যা কি?
‘কি বলছিস! ইরহা কখনো রাজি হবে না বিয়েতে।
‘কেন রাজি হবে না!
‘জানিনা ছেলের কথাবার্তা আর সব শুনে আমারও পছন্দ হয়েছিল কিন্তু ইরহা বলে এ জীবনে আর বিয়ে নয়৷
‘আশ্চর্য ওকে কে বিয়ে করতে বলছে?
‘কেন ওই ছেলেটাই তো ওর ভাইয়ের জন্য ইরহার প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল আবার বলেছে নওশাবাকেও মেনে নিবে।
‘আশ্চর্য ওর ভাইয়ের সাথে লাবিবার সম্পর্ক আর প্রস্তাব এটাই।
‘কিন্তু ছেলেট যে বলল ইরহার কথা।
‘হয়তো ছেলেটা জানেনা লাবিবাকে ইরহাকে তাই। আচ্ছা ছেলে যখন পছন্দ হয়েছে বিয়ে এখন ঠিক করে রাখবো ওর এইচএসসির পর হবে বাকি আনুষ্ঠানিকতা।
‘দেখ তুই যা ভালো মনে করিস। তবে ইরহার কথাটাও মাথায় রাখিস। আমার মেয়েটার সবে চব্বিশ বছর বয়স জীবনের আরো কতদিন পরে আছে। মেয়েদের চলতে গেলে স্বামী নামাক ছায়াটা লাগে। এক্ষুনি কিছু করতে হবেেনা। তবে খোঁজে রাখবি ভালো পেলে দিবো। জোড় তো নেই৷
‘মা এই কথাটা আর কখনো,মুখে আনবা না। ইরহা শুনলে কতটা কষ্ট পাবে। একবার ভেবে দেখেছো?

‘মা’তো ভুল কিছু বলেনি!আমদের কাছে আপু বোঝা না। তারমানে এটাও না তার জীবনটা এভাবেই কেটে যাবে।শুনো জড়িয়ে ধরে কাঁদার জন্য হোক বা মাঝে মাঝে ঝামেলা বা আবদার কারার জন্য হোক আমাদের একটা নিজস্ব মানুষ লাগে। এখন কিছু বলতে হবে বা এক্ষুণি করতে হবে এমন তো না, দেখতে থাকো ভালো পেলে তবেই কথা বাড়াবে। তারপর বাকি ডিসিশন আপুর।
ফরিদা বেগম বলেন,মা তুমি আমার মনের কথা বলেছো৷ হাজার বছর বেঁচে থাকো মা।

✨সেই কাক ডাকা ভোরে বাসে উঠেছে লামা,আর রবিন।যে চেহারা সব সময় প্রদর্শন করতো গর্বের সাথে আজ তা লুকিয়ে রেখেছে হিজাবের আড়ালে।
রবিন বলল,জান তুমি মুখ কেন লুকাবো! তুমিতো ভুল করোনি যারা ভুল করেছে তারা লুকাবে মুখ।
‘আসলে জান যারা ভিডিওটা দেখেছে তারা সবাই তো সত্যিটা জানেনা। তাই মুখ ঢেকে রেখেছি।
‘আমি সাথে থাকতে কিসের ভয়! ভয় নেই তোর সাথে জম।
‘লামা বলে,মানে?
‘আহা বেবি ভয় পাচ্ছো কেন?তোমার জন্য আমি সবার কাছে জম।যে তোমার দিকে আঙুল তুলবে তার জন্য জম।
‘হঠাৎ হঠাৎ তোমার কথা আমাকে ভয় পাইয়ে দেয়।
‘ভয় কে দূর করো,আর আমাদের হানিমুন কেমন কাটবে সেটা ভাবো বেব।
‘লামা বেশ কিছুক্ষণ রবিনের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,
তুমি সত্যি আমাকে মেনে নিয়ে সংসারটা ঠিক ভাবে করবে এটা আমি ভাবতেও পারিনি!
‘জীবনে এমন অনেক কিছুই হয় যা আমরা কখনো ভাবনা-তো দূর চিন্তাও করি না৷
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here