কোন সুতোয় বাঁধবো ঘর পর্ব ১৯

0
233

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৯
নিশাত তার ভাইয়ের পাশে বসে আছে, মঞ্জু বললো,কিরে বোন তোর মুখ এমন হয়ে আছে কেন? দেখে মনে হচ্ছে খুব কান্নাকাটি হয়েছে!
‘নাহহহ ভাইয়া কান্না করবো কেন!
তোহা একটু দূরেই দাঁড়িয়ে আছে, নিশাতের কথা শুনে মনে মনে বলে,কি হলো এখনো ন্যাকা কান্না জুড়ে দিয়ে বিচার দিচ্ছে না কেন?
‘এখন কি ভাইয়ার কাছ থেকে কথা লুকাবি?
‘আগামীকাল সকালে চলে যাবো তো তাই একটু মন খারাপ।
‘ওহহহ এই ব্যাপার, তাহলে নাদিমকে কল করে বলে দেই আর কয়েকদিন পর নিতে আসতে।
‘নাহহহ যেতে হবে ভাইয়া, অন্যের বাসায় কতদিন থাকবো?
‘অন্যের বাসা মানে? এই বাসা তোর ছিলো তোর আছে, তোরই থাকবে।
‘নাহহ ভাইয়া বিয়ের পর মেয়েদের বাপের বাড়ি হয়ে যায় পর৷ তখন সেখানে আমরা মেহমান।
‘নিহা নিশাতকে তোমরা কেউ কিছু বলেছো?
‘আসলে তোহা ভুল করে বলে ফেলছে। ও আর কখনো এমন ভুল করবে না।
‘তোহা এদিকে এসো।
‘জ্বি ভাইয়া।
‘তোমারও বিয়ে হয়েছে, তুমিও এ বাড়ির একজন। তাই বলে, তোমার বাবার বাড়ি তোমার জন্য পর হয়ে যাবে?
‘আসলে ভাইয়া আমি ওইভাবে বলতে চাইনি।
‘এ বাড়ির মানুষ স্বার্থে আঘাত লাগলে তোমাকে পর করে দিতে দু’বার ভাবে না। কিন্তু তোমার বাড়িতে কেউ তোমাকে ফেলে দিবেনা৷ যত যাইহোক তোমার বাবা, মা’য়ের কাছে সব সময় তোমার আশ্রয় অক্ষুণ্ণ। আমার বোন আমাদের দুই ভাইয়ের অনেক আদরের। তাই ওরসাথে কখনো বাজে ব্যাবহার করবে না। বছরে এক,দু’বার আসে এ বাড়িতে এই কয়েকদিন তোমরা সহ্য করে নেবে। আর যদি সহ্য না করতে পারো যতদিন নিশাত এ বাড়িতে থাকবে ততদিন তোমরা ওই বাড়িতে থাকবে। আমার বোন সারা বছর এখানে এসে বসে থাকবে না।
‘সরি ভাইয়া আর কখনো এমন হবে না।

সবার কথার মাঝেই কলিং বেল বেজে উঠলো, নিশাত বললো,তোমাদের জামাই এসেছে মনে হয়৷ ওর সামনে কেউ এসব কথা বলবে না। আগামীকাল সকালে চলে যাবো। দরকার পরলে কিছুদিন পর আবার আসবো।
‘নাদিম বেশ অনেক কিছু নিয়ে এসেছে, শ্বশুর বাড়ি বলে কথা দু’হাত ভরে নিয়ে এসেছে। তারাও তো কম আদর যত্ন করে না।একসাথে সবার সাথে খাবার খেয়ে রুমে আসলো, রুমে এসেই নিশাতকে জড়িয়ে ধরে বলে,আজ আমার বউটার কি হয়েছে বলো দেখি!
‘কি হবে?
‘তুমি তো এভাবে কখনো বলো না।
নিশাত নাদিমকে জড়িয়ে ধরে বলে,আজকে তোমার প্রতি ভালোবাসা উতলে উঠেছে বুঝলে।
‘নাদিম পর পর কয়েকটা চুমু খেলো নিশাতের গালে, কপালে, ঠোঁটে। নিশাত নাদিমকে আর একটু গভীর আলিঙ্গন করে বলে,আমাকে ক্ষমা করে দিও, এতোদিন তোমার মা,বোনদের সাথে কত বাজে ব্যাবহার করেছি।
‘নাদিম অবাক হয়ে বলে,বিবিজান আপনি সত্যি বলছেন!
‘এভাবে অবাক হবা নাতো,সত্যি বলছি আর কখনো এমন হবে না। কত ভাগ্য করে এমন একটা শ্বাশুড়ি আর ভালো মনের দুটো ননদী পেয়েছি, এবার থেকে তাদেরকে নিজের বোনের মত আগলে রাখবো।আমার নিজের তো আপন বোন নেই।
‘নাদিম নিশাতে কোলে তুলে নিয়ে বলে,বিবিজান এইদিনটার অপেক্ষায় ছিলাম। আজকে তোমাকে ভালোবাসার জোয়ারে ভাসিয়ে নিয়ে যাবো জান৷


রবিন আর লামার মধ্যে সম্পর্ক চলছে নামের চলা। এরমধ্যেই বেশ ঋণের মধ্যে পরেছে রবিন৷ তবে সেদিকে কোন ভ্রূক্ষেপ নেই রবিনের। তার মাথায় চলছে অন্য কিছু।
অন্যদিকে টাকার নেশায় একের পর এক পরকীয়া জড়িয়ে পরেছে লামা৷ যেনো ঠিক ভুল সেই বিষয়টি আর তার মধ্যে নেই৷সকাল আটটা বাজে ঘুম থেকে উঠে খাবার টেবিলে যেয়ে বসলো।
শেফালী বেগম লামার জন্য কফি,পরোটা আর অমলেট এনে প্লেটে সাজিয়ে দিলেন।
‘রবিন গেস্ট রুম থেকে বের হয়ে বলে,বেবি আর একটু ঘুমিয়ে নিতে এতো তাড়াতাড়ি উঠে গেলে? রাতের দু’টো পর্যন্ত পার্টি করে এসে দিনের একটা পর্যন্ত অনন্ত ঘুমাবে তো! নয়তো শরীর খারাপ করবে৷
‘আমি ভাবছিলাম কি চলো আমরা সিলেট থেকে একটু ঘুরে আসি। কি বলো?
‘আমি ভেবে রেখেছি আমরা কক্সবাজার যাবো।
আর হ্যা মা’তুমি রেডি হও তো তোমাকে এক্ষুনি রুবির বাসায় দিয়ে আসবো।একাএকা বাসায় থাকতে হবে না তোমার।
‘শেফালী বেগম কোন কথা না বলে চুপচাপ রেডি হতে চলে গেলেন। এ বাড়িতে তারও আর ভাল্লাগে না। শখের সংসার থেকে তার মন উঠে গেছে। দিনের পর দিন ইরহা তাকে কত সেবা যত্ন করেছে, আর বিনিময়ে তাকে কষ্ট দেয়া ছাড়া আর কিছুই দেয়নি৷ আজ বুঝতে পারছে,মুরুব্বিরা যে বলতো, একটা মেয়ে চাইলে যেমন সংসারকে সুখে ভরিয়ে দিতে পারে ঠিক একটা মেয়েই যথেষ্ট একটা সংসারকে অশান্তিতে তলিয়ে দেয়ার জন্য। নিজের কর্মে নিজেই অনুতপ্ত। মনে মনে ভাবলেন যাওয়ার আগে একবার নাতনীটাকে দেখে যাবে আর ইরহার কাছে ক্ষমা চাইবে।


ইরাহা কিচেনে নাস্তা বানাতে ব্যাস্ত বাকিরা সবাই ঘুমে। সবে সকাল আটটা বাজে। নাস্তা বানানো শেষ করে শাওয়ার নিলো, আজ অনেক দিন পর ফরিদা বেগমের একটা কাঁচা হলুদ আর কালো রঙের মিশ্রণে জামদানী শাড়ী পরলো। ফর্সা শরীরে ইরহাকে বেশ মানিয়েছে শাড়ীটায়। ইরহাকে দেখলে বোঝার উপায় নেই এক বাচ্চার মা। এখনো এতো রূপবতী। যদিও ইদানীং টেনশনের ফলে চোখের নিচে কালচে দাগ পরতে শুরু করেছে। শাড়ীর কুচি ঠিক করতে করতে বসার রুমে আসতেই কলিং বেল বেজে উঠলো, ইরহা দরজা খুলে দিতেই রবিন আর শেফালী বেগমকে দেখে, মূহুর্তে চেহারার রঙ পাল্টে যায়।
‘আপনার লজ্জা নেই আবার বাসায় চলে এসেছেন!
‘শেফালী বেগম বললো,মা আমি এসেছে, তোমাকে বিরক্ত করবো না৷ আমার নাতনীর মুখটা একটু দেকেই চলে যাবে। আর কোনদিন তোমাকে বিরক্ত করবো না।
‘রবিন ইরহার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কোমড় সমান চুলগুলো ছড়িয়ে আছে, দেখেই বোঝা যাচ্ছে সদ্য শাওয়ার নিয়েছে৷ পরনে শাড়ী অপরুপা লাগছে ইরহাকে।
‘ইরহা বললো,আন্টি আপনি চাইলে ভিতরে আসতে পারেন তবে আপনার ছেলেকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হবে না।
রবিনের ইচ্ছে করছে একছুটে ইরহাকে নিজের বাহুতে আবদ্ধ করে নিতে।”কয়লার পিছু ঘুরতে, ঘুরতে হিরে যে হারিয়ে ফেলছে,সেদিকে নজর ছিলো না!!
শেফালী বেগম বাসায় প্রবেশ করতেই ইরহা দরজা বন্ধ করে দিলো।
নওশাবা তখনও ঘুমে, ইরহা নওশাবাকে কোলে তুলে নিয়ে এসে শেফালী বেগমের কোলে দিলো,নওশাবার চেহারার সাথে রুবির চেহার অনেক মিল। শেফালী বেগমের চোখ দুটোতে অশ্রু টলমল করছে। নিজের নাতনীকে চুমু খেলেন, গালের সাথে গাল মিলিয়ে রাখলেন,ততক্ষণে চোখের কার্নিশ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পরতে লাগলো। শেফালী বেগম ইরহার কোলে নওশাবাকে দিয়ে বলে,পারলে এই বুড়ো মা’টাকে ক্ষমা করে দিও। তোমার সাথে যা অন্যায় করেছি, তার শাস্তি এখন কড়ায়গণ্ডায় ফেরত পাচ্ছি৷ নিজের ব্যাগ থেকে ,স্বর্নের চেইন, আংটি, ব্রেসলেট, চুড়ি বেড় করে ইরহার হাতে দিয়ে বলে,আমার নাতনীর জন্য এসব,তুমি কিন্তু মানা করতে পারবে না।
‘ইরহা বলে,আন্টি এসবের দরকার নেই আমার মেয়েটার জন্য দোয়া করে দিন তাতেই হবে৷
‘দোয়াতো সব সময় করি, এগুলো আমার স্বামী আমাকে বানিয়ে দিয়েছিল, আমি আমার নাতনীকে দিলাম৷ ভালো থেকো মা।
‘আপনিও ভালো থাকবেন,নিজের খেয়াল রাখবেন,সময় মত মেডিসিন নিবেন।
‘শেফালী বেগম কিছু বললো না, চলে আসলো। কি বলবে,কি-ই বা বলার আছে।
‘শোফালী বেগমকে দেখেই রবিন বলে,কি হলো,মা রাজি করাতে পারলে ইরহাকে?ওকি আসতে রাজি হয়েছে। এই প্রথম শেফালী বেগম নিজের ছেলেকে চড় মারলেন। রাগান্বিত স্বরে বললেন,বিয়েটাকি তোর কাছে ছেলে খেলা মনে হয়! তালাক হয়ে গেছে তোদের ইরহাকে আর এজন্সে পাবিনা। ধর্ম বলতেও তো কিছু আছে! নাকি সে-সব বিবেকও তোর মধ্যে আর নেই!
গাড়ীতে এসে বসে রবিন বলে,মা’ এই থাপ্পড়টা আগে কেন দিলে না! কেন বললে না এসব ভুল করছিস এতো ভালো মেয়েকে রেখে অন্য দিকে নজর দিস না। লাগলে কয়েকটা থাপ্পড় দিয়ে বলতে, সময় থাকতে নিজেকে শুধরে নে।
‘তখন তো নিজেই ছিলাম ভুলের মধ্যে। আজ নিজের ভুলে তোর জীবন আমার জীবন থেকে সব আনন্দ শেষ। এখন বাকি জীবনে শুধু আফসোস নিয়ে বাঁচতে হবে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here