You_are_mine
Poly_Anan
part_2
শহরের অলিগলি রাস্তা ধরে ছুটে চলছে ঈশা।নিজেকে বাচাঁতে ছুটে চলছে জোর কদমে।ছুটে চলার মাঝেই মনে পরে যায় সাত মাস আগের সেই অভিশপ্ত দিনের কথা। যেদিন ছিল একটি রৌদ্র উত্তপ্ত দিন।
কিছু বাচ্চা ছেলে মেয়ের সাথে খেলায় মেতে উঠছে ঈশা এবং তার বন্ধুরা নিশি তাহা এবং লিমন।মাঠের মধ্যে ব্যাট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে তাকে দেখে হাসতে হাসতে এগিয়ে আসে লিমন,
“কিরে ঈশা ব্যাটিং করতে পারবি তো তুই? নাকি শুধু শুধু একটা ভাব নিচ্ছিস (হাসতে হাসতে)
” আরে পারবো পারবো তুই দেখে নিস এমন ছক্কা মারবো না সবাই হা করে তাকিয়ে থাকবি (ভাব নিয়ে)
ওকে দেখা যাক তাহলে কেমন খেলতে পারেন আপনি।
মাঠের চারপাশে দাড়িয়ে আছে নিশি, তাহা এবং কিছু বাচ্চারা।
ঈশা সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বাচ্চাটার দিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“এই ছোট্টু বল মার!
ছেলেটি দৌড়ে এসে ঈশার উদ্দেশ্য বল ছুড়ে দেয় আর ঈশা নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে ব্যাটিং করে।তখনি বলটি একদম উপরে গিয়ে মাঠের বাইরে পরে, সবাই অবাক হয়ে বলের দিকে তাকিয়ে আছে তখনি নিশি চিৎকার করে বলে,
” ওই এটা তুই কি করলি!
..
একটি মাঠের শেষ প্রান্তে দাড়িয়ে আছে ঈশান।তার বাম হাতের বাহুতে ব্যান্ডেজে মোড়ানো।উপরে পড়নে সাদা শার্ট।ঈশানের পুরো নাম ঈশান শাহরিয়ার। তার বাবা আবিদ শাহরিয়ার এবং তার মা মাহমুদা।তার বাবা একজন সফল ব্যবসায়ী। কিন্তু তার বাবার কোন গুন পায় নি ঈশান।সারাদিন বন্ধু বান্ধব নিয়ে ব্যস্ত সে,কোন মেয়ের সাথে রিলেশন তো দূরের কথা তার পরিবারকেও ঠিক মতো সময় দেয় না সে।তার বন্ধু মহল নিয়ে তার একটি গ্যাং আছে আর সেই গ্যাংএর লিডার ঈশান নিজেই।গতকাল শত্রু পক্ষের সাথে ধস্তা দস্তির এক পার্যায়ে তার বাম বাহুতে কেউ ছুরি দিয়ে আঘাত করে তখনি তার বন্ধুরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
ঈশান পকেট থেকে ফোন বের করে, তার বিশ্বস্ত বন্ধুকে কল করে,
“কি রে কই তুই? আর কতক্ষন লাগবে পৌছতে আমি দাঁড়িয়ে আছি!
” আরেকটু বস। জ্যামে আটকে গেছি তুই অপেক্ষা কর।
ঈশানের বাম হাতের ক্ষত এখনো সেরে উঠনি হঠাৎ করে উপর থেকে একটি বল ছিটকে পড়ে ঈশানের বাম হাতে। হঠাৎ আক্রমনে সে ভড়কে যায়।কিন্তু হাতের ব্যাথাটা টনটন করে উঠে আর চুইয়ে চুইয়ে রক্তে পরতে শুরু করে। রক্তে ঈশানের শাট রক্তে লাল হয়ে গেছে।ডান হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে ঘাসের উপর নুইয়ে বসে পরে সে।
চোখ মুখ খিচে ব্যথায় আর্তনাদ করতে থাকে,
” ব্লাডি, কে করেছে এমন সামনে আয় হাত কেটে রেখে দেবো। এই ঈশান কি জিনিস বুঝিয়ে দেবো জন্মের মতো বল খেলা ছু…….
কথাটি শেষ করতে পারলোনা সে তার আগেই চোখে পরে একজোড়া পা!যে পায়ে আটকে আছে সুন্দর একটি পায়েল। ঈশান তার মাথাটা উপরে তুলি দেখে দেখতে নিষ্পাপ একটি মেয়ে যার চোখের গহীনে যেন ডুব দেওয়া সম্ভব।মিষ্টি ঠোঁট দুটো যেন উষ্ণতা চায়।ঈশানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ঈশা। ভয়ে আতংকে একের পর এক ঢোক গিলে যাচ্ছে সে।তার একটু অসর্তকতার কারনে আজ সামনে থাকা ব্যাক্তিটি গভীর ভাবে আহত হয়েছে।নিশ্চই তাকে এখন বাজে ভাষায় গালাগাল দেবে,হয়তো বা জরিমানা করবে, কঠিন সর্তেও ফেলতে পারে এইসব ভেবে আরো একটি ঢোক গিলে ঈশা।জিব দিয়ে বেশ যত্ন সহকারে ঠোঁট টা ভিজিয়ে সে মুখ খুলে,
” সরি আপনার অনেক টা লেগে গেছে..আমার হাত টা ধরুন আপনি নিচে বসেছেন কেন ময়লা লেগে যাবে(ঈশানের দিকে হাত বাড়িয়ে)
ঈশান একবার ঈশার হাতের দিকে আরেকবার ঈশার মুখের দিকে তাকায়। সে যেন এটাই চাইছে তার কাছে এখন বিষয়টা বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো।
ঈশান খপ করে তার হাতটি ধরে নেয়। এমন ভাবে শক্ত করে ধরে যেন ঈশা সুযোগ পেলেই ছুটে পালিয়ে যাবে কিন্তু সে কিছুতেই ঈশাকে ছাড়বেনা।দুজন দুজনের হাত ধরে তাকিয়ে আছে কিন্তু বিষয়টা পছন্দ হয়নি লিমনে সে আগে থেকেই ঈশাকে পছন্দ করে। বেশ কয়েকবার বুঝাতেও চেয়েছে কিন্তু ঈশা সব কিছু স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছে।লিমন আগুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেই দুটি হাতের দিকে।
ঈশা সেদিকে তোয়াক্কা না করে পাশে থাকা একটি বেঞ্চিতে ঈশানকে বসায়।
” আপনার অনেকটা রক্ত ঝরছে হাসপাতালে চলুন(অস্থির হয়ে)
“না থাক আমার বন্ধু আসবে তার সাথেই যাবো(ঈশার চোখের দিকে তাকিয়ে)
” কিন্তু..
ঈশাকে আর কোন কথা বলতে দেয় না ঈশান তার আগেই সে তার দিকে তাকিয়ে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে চুপ থাকতে।ঈশানের এমন কান্ডে ভড়কে যায় ঈশা।এবার ঈশা নিজের হাত ছাড়াতে চেষ্টা করে কিন্তু ঈশান কিছুতেই ঈশার হাত ছাড়ছেনা।পাশ থেকে নিশি আর তাহা একজন আরেক জনকে ঈশারা করছে তাদের কারো কাছেই বিষয়টি বোধগম্য হচ্ছে না।এবার থেমে থাকে না লিমন সে তেড়ে এসে ঈশানের উদেশ্য বলে
“এইযে মিস্টার ওর হাতটা ছেড়ে দিন!
লিমনের দিকে এক নজর তাকিয়ে ঈশান ঈশার হাত টেনে তার সাথে মিশিয়ে নেয়। তাদের মাঝে এখন আর এক আঙ্গুল সমান ও দূরত্ব নেই।সে ঈশার মুখের মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আবব্ধ চুলগুলোতে ফু দিয়ে কানের সামনে মুখনিয়ে বলে,
” #you_are_mine baby…love you…!
ঈশানের কোন কথাই মাথায় ডুকছেনা তার। সে ড্যাব ড্যাব চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে।
ঈশান আবারো মুচকি হেসে ঈশার মুখে ফু দেয়,
“love you jan…!
“What….? you are crazy?
” হুম এই মাত্র হলাম,(মিষ্টি করে হেসে)
ঈশা ভালো করেই বুঝতে পারছে সে বড় ধরনের পাগলের পাল্লায় পরেছে।নাহলে একটা মেয়েকে দেখেছে ঠিক করে আধা ঘন্টাও হলোনা অথচ তাকে লাভ ইউ বলে দিলো…!এতো সহজ..?
ঈশা নিজেকে ছাড়াতে এবার ব্যস্ত হয়ে উঠে কিন্তু ঈশানের বলিষ্ঠ দেহের সাথে কিছুতেই পেরে উঠেনা।তখনি লিমনে ঈশার হত ধরে ঈশান কে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দেয় আর ঈশা কে নিয়ে ছুটতে শুরু করে।পেছনে থাকা নিশি আর তাহার উদ্দেশ্য করে বলে,
“ওই তোরা তাড়াতাড়ি আয় তোরা গিয়ে গাড়িতে বস।
লিমন ঈশাকে নিয়ে গাড়িতে বসে পরে আর দ্রুত গাড়ি স্টাট দেয় ঈশা জানালা দিয়ে মাথা বের করে আরো একবার ঈশান কে দেখে নেয় ঠিক তখনি ঈশান ঈশার দিকে ফ্লাইং কিস ছুড়ে মারে। আর ঈশা দাতে দাত চেপে ঈশান কে মনে মনে বিশ্রি একটি গালি দেয়।
তারপর থেকেই শুরু হয় ঈশানের একের পর এক অত্যাচার।কখনো ভার্সিটি গেটের সামনে কখনো বা গভীর রাতে তার বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকে।বেশি রাত জেগে অনলাইনে থাকলে বিভিন্ন হুমকি ধামকি শুরু করে।
এইসব কিছুর বিরুদ্ধে গেলে মাঝ রাস্তায় সবার সামনে কিস করা সহ নানান ভয় তাকে দেখাতে থাকে।
সব কিছু ঈশা দাতে দাত চেপে সহ্য করে যায় কিন্তু লিমন বার বার ঈশাকে রাগ দেখায়। কিন্তু বেচারি ঈশা এপাশ ওপাশ দুই পাশেই ধপাস করে পরে আছে।কি করবে সে এই আপদ টাকে কিভাবে মাথা থেকে নামাবে কিছুতেই মাথায় ডুকছেনা তার।প্রথম দিনেই ঈশান বুঝে নিয়েছে লিমন ঈশাকে পছন্দ করে। তাই সে বার বার ঈশাকে লিমনের কাছ থেকে দূরে দূরে থাকতে বলে।কিন্তু ঈশা এইসব কানে নেয় না কারন লিমনের সাথে তার বহু বছরের সম্পর্ক। তার ভাষ্য মতে একটা পাগলের কারনে কিছুতেই সে তার বন্ধুত্ব নষ্ট করবেনা।
একদিন হুট করেই ঈশান ঈশাকে একটি পার্কে নিয়ে যায়। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল সে বেশ রেগে আছে
।ঈশা একের পর এক ঢোক গিলেই যাচ্ছে।আর ঈশান একটা একটা করে সব সিগারেট ফুকছে।ধৌয়া উড়িয়ে দিচ্ছে আকাশ পানে যেন ধৌয়ার সাথে তার জমানো রাগ ক্ষোভ দুটোই উড়ে যাচ্ছে।
“আমায় এখানে এনেছেন কেন?আপনি কি আমায় কিছু বলবেন?(ভয়ে ঢোক গিলে)
” হুম বলবো। এর আগেও আমি একই কথা বলেছি,
“মানে…?
” লিমনের সাথে সম্পর্ক শেষ করে দাও।ওর সাথে বন্ধু, হোক আর যাই হোক কোন সম্পর্ক তুমি রাখতে পারবে না।(সিগারেটের ধৌয়া উড়াতে উড়াতে)
“কি? অসম্ভব!
” সব সম্ভব!
“আমি আপনার কথা শুনবো না!
” সব শুনবে!
“আপনি একটা পাগল আর আপনার পাল্লায় পরে আমিও পাগল হয়েছি। আমায় ছেড়ে দিন মুক্তি দিন…!
ঈশা কথাটি শেষ করতেই ঈশান ঈশার পেছনের চুল গুলো জোরে টেনে ধরে আর কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে,
” তুই শুনবি শুধু আমার কথাই শুনবি আর খুব সহজেই ওই লিমনকে ভুলতে পারবি।আর আমি পাগল তাইনা হ্যা আমি পাগল, তোর জন্য পাগল। যদি তোকে আর লিমনের সাথে দেখি তবে আমার গ্যাং এ কিছু স্পেশাল টিম আছে তাদের কাজ মানুষের চামড়া থেকে মাংস আলাদা করা। বুঝতেই পারছিস তুই যদি আমার কথা না শুনিস তবে তাদের নেক্সট টার্গেট হবে ওই লিমন। মাইন্ড ইট…!
ঈশান ঈশার ঠোঁটে শব্দ করে চুমু খেয়ে স্থানটি ত্যাগ করে।
ঠিক তারপর একমাস ঈশা যথা সম্ভব লিমনকে ইগ্নোর করেছে। লিমন ও বুঝতে পেরেছে এর পেছনের আসল কালপিট ঈশান।প্রায় পাচঁদিন আগে ঈশার সাথে ঈশানের শেষ দেখা হয় তখন তাকে যানিয়ে দেওয়া হয় ঈশান দশদিনের জন্য বন্ধুদের সাথে কক্সবাজার যাবে।ঈশান যাওয়ার পর থেকেই লিমনের সাথে আগের মতো আড্ডা শুরু করে ঈশা।। দিনকাল ভালোই যাচ্ছিল তাদের।কিন্তু বেচারি ঈশা যানতো না ঈশান তার পেছনে স্পাই লাগিয়ে রেখেছে।তার প্রতিদনের করা কর্মকান্ড সব আপডেট ঈশানের কাছে পৌছে যায়।।
আজ সকালে ঈশা যখন ভার্সিটি যাওয়ার উদ্দেশ্য বাসা থেকে বের হয় তখন একটি কালো গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ঈশান কে দেখতে পায় সে। দশদিনের আগেই ঈশান কক্সবাজার থেকে চলে এসেছে এর কারন ভাবতে গিয়ে ভয়ে আত্না কেঁপে উঠে তার।
ঈশা ছুটে পালিয়ে যেতে চাইলে তখনি ঈশান তার মুখ চেপে গাড়িতে তুলে নেয়। আর হাত, মুখ বেধে বাংলোতে নিয়ে আসে।
………. বর্তমান
ঈশা দৌড়াতে দৌড়াতে ভাবতে থাকে এই মূহুর্তে সে কোথায় যাবে। তার বাবাও এখন বাড়িতে নেই। বাড়ি এখন তার জন্য নিরাপদ নয়।
মুজাহিদ আহমেদের একমাত্র মেয়ে নওশীন ঈশা। তার জন্মের প্রায় দুই বছর পর তার মা মারা যায়।তখন থেকেই বাবার কাছে মানুষ সে। কিন্তু গত কয়েক বছর তার বাবা বেশির ভাগ সময় দেশের বাইরে থাকে কেননা দেশে বিদেশের ব্যবসা দুই ভাগে সামলাতে গিয়ে তিনি হিমশীম খান।এই নিয়ে ঈশার কোন অভিযোগ নেই।কেননা মুজাহিদ তাকে তার সাধ্যের মধ্যে যথেষ্ট সময় দেয়।শহর থেকে কিছু দূরে ঈশার একমাত্র ফুফু থাকেন।তার বাবা যখন দেশের বাইরে থাকে তখন বেশির ভাগ সময় ঈশা তার ফুফুর কাছেই থাকে।
এই মূহুর্তে ঈশা সিধান্ত নেয় সে তার ফুফুর কাছেই থাকবে।কিন্তু হঠাৎ মনে পড়ে…
“উফফফ শীট আমার মোবাইল।আমার মোবাইল ওই বাংলোতে ফেলে এসেছি। এবার কি হবে। আমি কি করবো।?
সব ভাবনাকে উপেক্ষা করে ঈশা ওরনাটা ভালো করে মাথায় প্যাচিয়ে একটি রিক্সায় উঠে পরে।তার গন্তব্য তার ফুফুর বাড়ি।যেখানে ঈশান নামক কেউ তাকে খুজে পাবেনা….!
এদিকে মারাত্মক চোট পাওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি ঈশান। আর শহরের অলিতে গলিতে ঈশানের দলের লোকেরা খুজে চলছে ঈশাকে।
চলবে………….
?তোমাদের কি মনে হয় ঈশান কি ঈশাকে এতো সহযে খুজে পাবে। নাকি…….
ঈশা লিমনকে বিয়ে করে ঈশানের সামনে হাজির হবে।?