Ragging To Loving 2❤পর্ব-৬

0
1202

#Ragging_To_Loving__2
#পর্বঃ- ৬
#রিধিরা_নূর

নূর জিজ্ঞেস করায় আলিফা জানালো সে মিউজিক হলের দিকে গিয়েছে। নূর আলিফার হাত ধরে সেদিকে গেল। গতকাল ভার্সিটি পর্যবেক্ষণ করার সুবাদে অবস্থান জানা আছে।

সিমা — নিশ্চয় নূর কোন ঝামেলা পাকাবে। আমি দেখছি।

আমরিন – ওহো। দেখ তো কে বলছে ঝামেলার কথা। নিজে বিনা কারণে ঝগড়া বাঁধিয়ে ঝামেলা করে। সে কি-না আবার নূরকে থামাবে। দেখা যাবে নূরের আগে নিজেই ঝামেলা করবে।

সিমা — কি বলতে চাস তুই। আমি ঝগড়াটে? আমি বিনা কারণে ঝগড়া করি? (কপাল কুচকে)

আমরিন — আরে না। কাল তো একটু বেশি না একটু কণ্ঠস্বর পরিষ্কার করেছ। তাই না।

পুষ্প — তোরা এখন শুরু হয়ে যাস না। থাম এবার।

সিমা — ধুরর আমি গেলাম। তোরা মেহেরের সাথে থাক। নূর থাম আমিও আসছি ঝামেলা করতে। (জিবে কামড় দিল) না মানে ঝামেলা মেটাতে। (দৌড়ে গেল তাদের পিছু। দৌড়ে যাওয়ায় ধপাস করে পড়ল নূর আলিফার উপর। নূর রাগী দৃষ্টিতে তাকাতেই সিমা জোর পূর্বক হাসি দিল)

পুষ্প — বিষয়টা আমার সুবিধার মনে হচ্ছে না। (চিন্তিত হয়ে বলল)
.
.
জানালায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইয়াশ। হাতে তার ভেঙে যাওয়া ক্যামেরা। বিষন্ন মনে কুটিয়ে দেখছে যদিও বা ঠিক করা যায়। ফটোগ্রাফি ইয়াশের প্যাশন। ছোট থেকেই ফটোগ্রাফির অসাধারণ প্রতিভা রয়েছে তার। তার স্বপ্ন বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে প্রাকৃতিক পরিবেশের অতুলনীয় দৃশ্য তার ক্যামেরায় বন্দী করবে। মাধ্যমিক পড়াকালীন এক প্রতিযোগিতায় পুরষ্কারে এই ক্যামেরা পেয়েছিল। সেই থেকে খুব যত্নে রেখেছে এই ক্যামেরা। আজ দূর্ঘটনায় তা ভেঙে গেল। খুব কষ্ট হচ্ছে ইয়াশের৷ কিন্তু প্রকাশ করতে পারছে না। কান্নাও পাচ্ছে খুব।

আলিফা — ওই যে জানালার দ্বারে ক্যামেরা হাতে দাঁড়িয়ে আছে তা… (নূর সেদিকে ফিরে তাকায়।)

নূর — এখন দেখ আমি কি করি। (তেড়ে গেল)

ইয়াশকে এমন বিষন্ন দেখে আফরান তার পাশে দাঁড়ালো। তার হাত থেকে ক্যামেরা নিয়ে দেখছে যদিওবা ঠিক হয়। হঠাৎ কাঁধে মৃদু স্পর্শ অনুভব করল। শুধু একবার ফিরে তাকাতে দেরি নূরের কথার ঝড় বইছে।

নূর — এই যে আপনার সাহস কি করে হয় মেহেরকে কাঁদানোর। ভার্সিটির সবার সামনে এভাবে অপমান করার। সাহস কি করে হলো আপনার। হ্যাঁ! বলুন। চুপ করে আছেন কেন? বলুন। তখন তো তাদের একা পেয়ে অনেক কথা শুনিয়েছেন। এখন কি হলো? সব হাওয়া পুসস। বলুন। আরে বলছেন না কেন? মুখে কি রসগোল্লা দিয়ে বসে আছেন? নাকি বোবা হয়ে গেলেন। এই যে কবে থেকে বলছি। কিছু বলছেন না কেন? বলুন। বলুন বলছি। চুপ করে আছেন কেন? ভয় পেলেন নাকি।

আলিফা কবে থেকে নূরকে থামানোর চেষ্টা করছে। এটা বলার জন্য যে এই সেই না বরং তার পাশের জন। কিন্তু নূর যে একবার টেপ রেকর্ডার শুরু করেছে বলতেই আছে। এদিকে নূরের বকবক শুনে আফরানের কান ঝালাপালা হয়ে গেল। ক্যামেরা ইয়াশের হাতে দিয়ে নূরকে দেয়ালে চেপে ধরে অন্য হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরল।

আফরান — চু…প…..। (ধমক দিয়ে)

আফরান এক ধমকে পরিবেশ নিস্তব্ধ হয়ে গেল। প্রথমত নূরের ঝড়ের বেগে আসায় সবাই টাস্কিত। তুফানের গতিতে এক নাগাড়ে এত্তগুলা কথা বলায় শিহরিত। আফরানের এক ধমকে এখন সবাই কম্পিত।

আফরান — আসা মাত্রই খিটখিট খিটখিট করেই যাচ্ছ। আমাকে বলতে বলছ কিন্তু বলার সুযোগই দিচ্ছ না। আর কীসব আজেবাজে বকছ। আমি কবে কাকে কোথায় অপমান করেছি। (রেগে)

নূর হাত দিয়ে আফরানের বুকে ভর করে সরিয়ে দিল। আফরান এতো জোরে চেপে ধরল গাল ব্যাথা করছে। নূর আঙুল তুলে বলতে নিবে আলিফা এসে থামিয়ে দেয়। এরপর নূরকে জানালো যাকে এতো কথা শোনালো সে নয় বরং তার পাশের জন ছিল। অপর আরিফ আফরানকে একটু আগের ঘটনা বলল। এটাও বলল হয়তো নূর তারই ফ্রেন্ড। আফরান এক নজর ইয়াশের দিকে তাকাল। ইয়াশের বিষন্ন চেহারা দেখে নূরের উপর রাগ উঠলো। একে তো তারই ফ্রেন্ডের জন্য ইয়াশের ক্যামেরা ভেঙেছে। তার উপর সে-ই নিজে গায়ে পড়ে এসে ঝগড়া করছে। নূর আফরানের কাছ থেকে সরে ইয়াশের দিকে যেতেই আফরান নূরের হাত শক্ত করে আঁকড়ে ধরে। ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

আফরান — ডোন্ট ইউ ডেয়ার। তোমার ফ্রেন্ডের জন্য ইয়াশের ক্যামেরা ভেঙেছে। কোথায় এসে সরি বলবে তা না বরঞ্চ তাকে কথা শোনাতে এসেছ।

নূর — সামান্য একটি ক্যামেরার জন্য ভার্সিটির সবার সামনে তাদের র‍্যাগিং করবে? এমন ক্যামেরা বাজারে হাজারো পাওয়া যাবে। কিন্তু মেহের। তার জীবনে তুফা….

আফরান — জাস্ট শাট আপ। আর একটা শব্দও মুখ থেকে বের করবে। এটা তোমার কাছে শুধু একটা সামান্য ক্যামেরা হতে পারে। কিন্তু ইয়াশের কাছে অমূল্য। তার স্বপ….

ওয়াসিম — হেই মিস পিংকি। তুমি এখানে কি করছ?

সিমা — এই যে আমার নাম পিংকি না। সিমা। স ই-কার সি, ম আ-কার মা। সি..মা..। (টেনে বলল) আরেকবার যদি পিংকি বলেন তাহলে দেখবেন কি করি।

ওয়াসিম — কি করবে শুনি। মিস পিং..কি। সব সময় তো দেখি পিংক ড্রেস পর। আজও পিংক ড্রেস পরেছ। তাই পিংকি না বলে কি বলব।

সিমা — এটা পিংক না। ম্যাজেন্টা।

ওয়াসিম — ওই একই হলো। সবই তো এক গোত্রের রং।

সিমা — সিরিয়াসলি! এক গোত্রের রং? এক কাজ করুন। আপনি পিংক কালারের উপর গবেষণা করুন। এরপর পিংক কালারের বিষ আবিষ্কার করে খেয়ে একেবারে উপরে চলে যান।

ওয়াসিম — তৃতীয় তলায় যাওয়ার জন্য পিংক কালারের বিষ লাগবে কেন। পাশেই তো সিড়ি আছে। সিড়ি দিয়েই যাওয়া যায়। হাউ ইললিজিক্যাল। (যুক্তি দিয়ে)

সিমা — এ্যাহহ! (ভ্যাবাচেকা খেয়ে)

রিহান — কি হচ্ছে কি এসব। কি শুরু করেছ সবাই। (উচ্চস্বরে)

রিহানের চিৎকারে সবাই বোকা বনে গেল। কে কি জন্য, কি করতে এসেছে তা-ই ভুলে গিয়েছে। নূর চোখ পিটপিট করে তাকাল রিহানের দিকে। ভাবছে রিহান এখানে কি করছে। রিহান ভয়ে ভয়ে তাকাল নূরের দিকে।

নীরব দর্শক আহিল, আরিফ। আহিল চিল মুডে চুইংগাম চিবুচ্ছে আর কাহিনী দেখছে। আরিফ বিষয়টি গম্ভীর দেখে কিছু বলতেও পারছে না। একজন চুপ হলে আরেকজন শুরু। চুল মুটি ধরে গম্ভীরমুখে দাঁড়িয়ে আছে। এসবের মাঝে আলিফা হারিয়ে গেল আরিফের মাঝে। আরেক দফা ক্রাশে ক্রাশিত সে। মুগ্ধ নয়নে দেখছে আরিফকে। এসবের মাঝে বিরক্ত হয়ে ইয়াশ উঠে চলে গেল। তার পিছু পিছু রিহান গেল।

আফরান — ইয়াশ? (পিছন থেকে ডাকল। কিন্তু ইয়াশ না শুনেই চলে গেল।)

আফরান এখনো নূরের হাত আঁকড়ে ধরে আছে। নূর ঝাড়া দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিল। দুজনেই ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। নূর ভেঙচিয়ে চলে আসতেই পা লাগে আফরানের গিটারের সাথে। গিটার পড়ে যেতেই দুজনেই তড়িঘড়ি তা সামলে নেয়। আফরান রেগে গিটারের উপর থেকে নূরের হাত সরিয়ে দিল।

আফরান — ডোন্ট টাচ ইট।

নূর — (না রে টাচ না। আমি তো গিটার নিয়ে জড়িয়ে ধরে ঘুমাব। ঢং। অসভ্য অভদ্র নির্লজ্জ বেহায়া। গিটার তো নয় যেন মণি মুক্তা। হুহ্।)

নূর, সিমা বেরিয়ে আসতে দেখে আলিফা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নূর রেগে আলিফার চুল মুটি ধরে টেনে আনল। বেরিয়ে আসতেই নূর ভাবনায় পড়ল। আফরানকে সে আগেও দেখেছে। কিন্তু কোথায়? মনে পড়ছে না কিছুতেই। গতকালও একই ভাইব হচ্ছিল। সিমা, আলিফা দুজনে চোখাচোখি করে ভ্রু কুচকে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে।

আফরানও ভাবছে এই মেয়ে যখনই সামনে আসে তার সাথে ঝামেলা বাঁধে। কালকেও ভার্সিটির মাঠে পড়ে চিৎপটাং হয়ে ছিল। কিন্তু কেন জানি মনে হচ্ছে আগেও কোথায় দেখেছে। ভাবনায় মগ্ন। হঠাৎ চমকে উঠে উচ্চস্বরে বলল “পুচ্চু পুচ্চি!”।

নূরও আচমকা লাফিয়ে উঠে বলল “পুচ্চু পুচ্চি!”।

ওয়াসিম, আহিল, আরিফ একসাথে ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলল “পুচ্চু পুচ্চি?”।
সিমা, আলিফাও বলল ” পুচ্চু পুচ্চি?”

আলিফা — পুচ্চু পুচ্চি কি?

নূর পিছন ফিরে দেখল আফরান আসছে কি না। দেখা মাত্রই এমন ভৌ-দৌড় দিল সিমা, আলিফা দুজনেই অবাক। সিড়ি দিয়ে নামতে দেরি হচ্ছে বলে সিড়ির রেলিং-এর উপর বসে স্লাইড করে সুরসুর করে নেমে গেল। সিমা আলিফার চোখ দুটো বেরিয়ে আসার উপক্রম। হা হয়ে তাকিয়ে আছে সিড়ির দিকে। ততক্ষণে নূর পগারপার।
আফরান দৌড়ে বাইরে এসে দেখে সিমা আলিফা স্থির দাঁড়িয়ে আছে। আফরান তাদের কাছে এসে আশেপাশে খুঁজতে লাগলো। তার চোখ জোড়া নূরকে খুঁজছে। কিন্তু কোথাও নূরের অস্তিত্বের চিহ্ন নেই।

আফরান — ওই মেয়েটা কোথায়? তোমাদের সাথে ছিল। চশমা পরা মেয়েটি কোথায়?

সিমা — উড়ান ছুহহ।

আলিফা — সুরসুর করে চলে গেল।

আফরান কিছুই বুঝল না। সিড়ি দিয়ে নামতে লাগলো। সিমা আলিফা এখনো স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বেচারিরা শকডের উপর ঝাটকা খেল। পলক ফেলতেই যেন নূর নিমিষেই গায়েব।

নূর এমন দৌড়ানি দৌড়াচ্ছে যেন পিছনে পাগলা কুত্তা তাড়া করছে। কেউ যেন তাকে বলছে, “পালা নূর পালা। নিজের জান বাঁচা।” দৌড়াতে দৌড়াতে এক পা থেকে জুতা খুলে উড়ন্ত ফ্লাইং জুতার ন্যায় আকাশে উড়ে গেল। ফুড়ুৎ করে গিয়ে পড়ল কারো ব্যাগে। নূর এক পায়ে জুতা পরেই দৌড়াচ্ছে।

আমরিন — না জানি ওরা কি করছে। অনেক্ষণ হয়ে গেল। কারো আসার নাম গন্ধ নেই। নিশ্চয় বড় ধরনের ঝামেলা পাকিয়েছে। পুষ্প, মেহের চল।আমরা দেখে আসি।

পুষ্প — চল।

সামনে তাকাতেই তাদের চোখ চড়কগাছ। নূর হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে দৌড়াচ্ছে। হাতের ইশারায় তাদের সরতে বলছে। কিন্তু কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই নূর তাদের মাঝখান হয়ে ধাক্কা দিয়ে গেইটের বাইরে চলে গেল। ধাক্কায় তাল সামলাতে না পেরে এক পাশে পড়ল পুষ্প। অপর পাশে পড়ল আমরিন, মেহের।
.
.
আফরান দ্রুত সিড়ি দিয়ে নামতে দেখে পান্না।

পান্না — হাই। এভাবে দৌড়ে কোথায় যাচ্ছ?

আফরান — ওই একটু কাজ আছে। আমি আসছি।

পান্না — কাজ পরে। আগে দাঁড়াও। কাল আমাদের এনিভার্সারি ছিল। কিন্তু কোন গিফট দিতে পারিনি। আজ তোমার জন্য স্পেশালি নিজে চুজ করে এই গিফট এনেছি। (ব্যাগে হাত দিয়ে গিফট বের করে আফরানকে দিল।)

আফরান — এটা কি? (অবাক হয়ে)

পান্নার হাতে নূরের ফ্লাইং জুতা। নূর দৌড়াতে গিয়ে জুতা উড়ে পড়ল পান্নার ব্যাগে।

পান্না — হোয়াট দ্যা হেল। এই জুতো আমার ব্যাগে এলো কি করে?

.
.
.

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here