Ragging To Loving 2❤পর্ব-৪৯

0
2248

#Ragging_To_Loving__2
#পর্বঃ- ৪৯
#রিধিরা_নূর

সিমার মায়ের কণ্ঠস্বর শুনে ওয়াসিম থরথর কাঁপতে লাগলো। কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। তার আবারও অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম হলো। পাশ থেকে রিহান তার মাথায় সজোরে থাপ্পড় লাগায়। ওয়াসিম মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে করুণ দৃষ্টিতে তাকাল।

সিমা তড়িঘড়ি তার মায়ের হাত থেকে ফোন ছিনিয়ে নিল। কল কেটে কঠোর হয়ে তার মায়ের দিকে তাকাল।

খালেদা বেগম — মা৷ শোন আমার কথা। ওই ছেলে তোকে ফাঁসাচ্ছে।

সিমা — আম্মু!

খালেদা বেগম কাচুমাচু হয়ে বিছানায় বসলেন। সিমা আড়চোখে মাকে দেখছে নাটকের কোন প্রতিক্রিয়া হলো কি-না। কিন্তু তিনি নাছোড়বান্দা। এখন আবার গাল ফুলিয়ে বসে আছেন। এবার সিমা সত্যি সিদ্ধান্ত নিল ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে যাবে নিরুদ্দেশে। দোটানায় পড়ে এসব আর নিতে পারছে না। না তার মা রাজি হচ্ছে না ওয়াসিম তাকে রাজি করাতে পারছে। ধুম ধাড়াম শব্দ করে ব্যাগে জিনিস রাখছে।

খালেদা বেগম — তোর বড় দুই বোনের বিয়ে তোর বাবার পছন্দে হয়েছে। তাতে আমিও দ্বিমত করিনি। কিন্তু তুই আমার সবচেয়ে আদরের মেয়ে। চেয়েছিলাম তোর জন্য রাজপুত্রের মতো ছেলে দেখব।

সিমা — ওয়াসিম কোন দিক দিয়ে খারাপ নাকি?

খালেদা বেগম — না খারাপ না। কিন্তু কেমন যেন হাবাগোবা ধরনের। তুই কি দেখলি ওর মধ্যে?

সিমা — ওর হাবাগোবা স্বভাবেই ওকে ভালবাসি। আম্মু! ওয়াসিম অনেক ভালো। ভালো পদে চাকরি করে। ওর ফ্যামিলিও ভালো। আমাকে ভীষণ আদর করে।

খালেদা বেগম — বাহ্! মেয়ে দেখি অনেক দূর অবধি এগিয়ে গিয়েছে। ছেলের ফ্যামিলির সাথেও আলাপ করে এসেছে।

সিমা রাগী দৃষ্টিতে তাকাতেই তিনি শান্ত হলেন।
.
.
আফরান — এক ঘন্টা হয়ে গেল কিন্তু সিমা এখনো কিছু জানালো না।

আলিফা — আমার মনে হয় প্লান ফ্লপ হয়েছে।

আফরান — কার প্লান দেখতে হবে না। ফ্লপ তো হবেই।

নূর — আপনি চুপ করুন।

তাদের কথার মাঝে সিমা কলে যুক্ত হলো। চেহারায় এক রাশ হতাশা। সবার মন খারাপ হয়ে গেল। পরক্ষণে চিৎকারে সবাই কান চেপে ধরল। যাতে কানে ইয়ারফোন ছিল তাদের নাজেহাল অবস্থা।

সিমা — আম্মু মেনে নিয়েছে। কিন্তু কিছু আজগুবি শর্ত দিয়েছে ওয়াসিমকে। সেই যাই হোক মেনে তো নিয়েছে। যদি পরে আবারও কিছু করে তাহলে সত্যি পালিয়ে যাব।

নূর — আজ তোর কপাল ভালো যে আমার সামনে নেই। নাহলে তোর গলা টিপে দিতাম।

সিমা — লাভ ইউ জানু,সোনা,বেবি,টোনা, বাবু উম্মাহহহ। তোর খুরাফাতি আইডিয়া কাজে লাগছে। আমার বিয়েতে তোর জন্য শাড়ি গিফট থাকবে৷

অনেক্ষণ আলাপ হলো তাদের মাঝে।

.

পরের দিন নূর শান্তি নিকেতনে গেল। শান্তি নিকেতনের অফিশিয়াল কাজ নূর সামলাই। এর পাশাপাশি একটি এনজিও-তে যুক্ত আছে। কাজের সুবাদে রোজ আসা যাওয়া হয়। সূর্য মাথার উপর প্রখর তাপ দিচ্ছে। কোন গাড়ি না পেয়ে হেটেই চলল। হঠাৎ কেন যেন মনে হলো কেউ তার পিছু নিচ্ছে। বারবার পিছনে ফিরে তাকাচ্ছে। হঠাৎ তার নজর পড়ল এক লোকের উপর। হুডি আর মাস্ক পরা। এই গরমে হুডি? ব্যাপারটা কেমন যেন বিদঘুটে লাগলো। কিন্তু তাও ভাবান্তর না করে হেটেই চলেছে। কিন্তু কৌতুহল তার উপর গ্রাস করেছে। পিছন ফিরে লোকটিকে দেখছে। আচমকা লোকটা অনেক কাছে চলে এলো। সম্ভবত পাঁচ ফুট দূরত্ব হবে। একটু আগেই সে কত দূরে ছিল আর এখন আচমকা এতো কাছে। নূর একবার আশেপাশে তাকাল। ভরদুপুরে রাস্তাঘাটে তেমন মানুষজন নেই। হাতে গোনা কয়েকজন। কেন যেন ভেতরে ভয় হতে লাগলো। পায়ের গতি বাড়িয়ে হাটতে লাগলো নূর। হাটছে বললে ভুল হবে। এক প্রকার দৌড়েই চলেছে। পিছন ফিরে দেখে লোকটা তাকে ইশারা করছে। লোকটা উল্টাপাল্টা কিছু করবে না তো। এবার দৌড়ই দিল। এদিকে নূরের ফোন বাজছে। কিন্তু এখন ফোন ধরার সময় নেই। পালাতে হবে। পিছন ফিরে দেখে লোকটাও তেড়ে আসছে। সুযোগ বুঝে নূর দেয়ালের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল।

তিন রাস্তার মোড় হওয়ায় লোকটা থেমে গেল। বুঝে পাচ্ছে না নূর গেল কোথায়। পকেট থেকে ফোন বের করে যে-ই না পিছন ফিরল কেউ একজন সজোরে তার মাথায় আঘাত করল। আঘাতে তাল সামলাতে না পেরে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। বরং নূর-ই ব্যাগ ঘুরিয়ে তার মাথায় আঘাত করে।

নূর — খাচ্চোর খাটাশ খবিশ লুইচ্চা বেটা। হ্যাঁ! কি পাইছস তুই। একা একটা মেয়ে দেখে তার পিছু নিবি। সুযোগ বুঝে একা পেয়ে তার ক্ষতি করবি? মনে রাখিস আমি নূর। নূর হায়দার নাম আমার। আমি একাই একশো। আমার পিছে লাগতে আসছ। তোরে আমি চাটনি বানামু।

লোকটাকে সুযোগ না দিয়ে ব্যাগ দিয়ে আঘাত করতে লাগলো। লোকটা নিজেকে সামলে তড়িঘড়ি উঠে দাঁড়ালো। নূরের আঘাত থেকে আত্মরক্ষার চেষ্টা করছে। নির্জন রাস্তা হওয়ায় আশেপাশে মানুষজন নেই। পরক্ষণে লোকটা টান দিয়ে নূরের ব্যাগ ছিনিয়ে নিল। টানে ব্যাগ ছিড়ে যায়। এবার নূর আঁতকে উঠল। মনে মনে দোয়া করছে কেউ যাতে আসে তার সাহায্যের জন্য। কি ভুল করে ফেলল। নির্জন রাস্তায় লোকটাকে আরও সুযোগ করে দিল। লোকটা ধীরে ধীরে নূরের দিকে এগিয়ে আসছে। নূর আশেপাশে তাকিয়ে আত্মরক্ষার জন্য হাতিয়ার খুঁজছে। কিন্তু এমন বিপদের সম্মুখে নির্বোধ হয়ে গিয়েছে। পালানো ছাড়া উপায় নেই। যেই ন দৌড় দিবে খপ করে লোকটা তার হাত ধরে ফেলল।চেষ্টা করছে লোকটার হাত থেকে ছাড়া পাবার জন্য। আচমকা বাঁধ ভেঙে নূরের চোখে জল চলে এলো। হাঁপাতে হাঁপাতে তার নিঃশ্বাস আটকে আসছে। কিন্তু হার মানছে না। চোখের জলে সব ঝাপসা দেখাচ্ছে। আচমকা লোকটা নূরকে ঝাঁকুনি দিতে লাগলো। লোকটা কিছু একটা বলছে কিন্তু তার কান অবধি পৌঁছাচ্ছে না। লোকটা হুডির টুপি ফেলে মুখ থেকে মাস্ক সরিয়ে নিল।

আফরান — নূর! নূর! আমি। আমি। এটা… আফরান।

চোখের পানি গড়িয়ে পড়তেই নূর আফরানকে স্পষ্ট দেখতে পেল। অনেকটা ভয় পেয়েছে মেয়েটা। আফরানের বুকের মাঝে মুখ গুজে হুড়মুড়িয়ে কান্না করে দিল। নূরের ভয় বুঝতে পেরে শক্ত করে আঁকড়ে ধরল।

আফরান — কিচ্ছু হয়নি। আমি আছি তো। নূর? এই দেখ আমি আছি।

নূর ধীরে ধীরে চোখ খুলল। ব্যাপারটা বুঝতে তার কিছুক্ষণ সময় লাগলো। সজোরে ধাক্কা দিয়ে আফরানকে সরিয়ে দিল। রাগে তার সারা শরীর কাঁপছে। নূর এতটা রেগে যেতে দেখে আফরানও বেশ অবাক হলো। আফরান এগিয়ে আসতে নিলে নূর দু পা পিছিয়ে ধমক দেয়।

নূর — খবরদার। একদম কাছে আসবেন না। সবকিছু নিয়ে মজা করা ঠিক না। আপনি জানেন এক মূহুর্তের জন্য মনে হয়েছিল আমার জান বেরিয়ে গেল। আর আপনি এমন জঘন্য ফাজলামি করছিলেন। আপনার কাছ থেকে আমি এটা আশা করিনি।

আফরান — কি বলছ এসব? কি করেছি আমি?

নূর — কি করেছেন? আমাকে ভয় দেখানোর জন্য মজা করার জন্য এভাবে ছদ্মবেশে এসে আমাকে…. (রাগে আর কিছু বলতে পারছে না।)

আফরান হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে।

আফরান — নূর আমার তেমন কোন উদ্দেশ্য ছিল না। তোমার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম তাই আশ্রমে আসছিলাম। মাঝপথে গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। হেটেই আসতে হয়েছিল। রাস্তায় কিছু কয়েকজন চিনতে পেরে হৈচৈ করল। তাদের কাছ থেকে ছুটে ছদ্মবেশে এলাম। তোমাকে দেখতে পেয়ে অনেক্ষণ ডেকেছিলাম কিন্তু তুমি শুনতে পাও। বরং আমাকে দেখে পালিয়ে এসেছ। তোমাকে ফোনও করেছি কিন্তু তুমি রিসিভ কর নি। এরপর হঠাৎ করে তুমি আমার উপর আক্রমণ করলে। তোমাকে কতবার বলেছি এটা আমি। আফরান। কিন্তু তুমি রণক্ষেত্রে নেমে পড়েছ। আমার কথা না শুনেই হামলা চালিয়েছ।

নূরের চোখ দুটো টলমল করছে। কাঁপা স্বরে বলল,

নূর — আ..আমি ভ..ভয় পেয়ে…

আফরান — নূর।

আফরান কাছে আসতেই নূর তার আশ্রয়ের স্থল খুঁজে নিল। আবারও কেঁদে আফরানের জামা ভিজিয়ে দিল। মাঝ রাস্তায় আফরানের বেশ অস্বস্তি লাগছে। কিন্তু নির্জন হওয়ায় এক প্রকার স্বতিও পেল। তাই নূরকে সামলে সেখান থেকে প্রস্থান করল।
সমুদ্রের তীরে বালির ওপর বসে আছে নূর। আফরান দু হাতে দুটো ডাব নিয়ে এলো। নূর চুপচাপ বসে আছে। চোখ দুটো ফোলা ফোলা। আসলেই অনেক ভয় পেয়েছিল।

আফরান — কি গো মিস খিটখিট। তোমাকে এমন চুপচাপ ভালো লাগে না। শোন ওই পরিস্থিতিতে তোমার কিছু ভুল ছিল।

নূর হালকা সচেতন হয়ে আফরানের দিকে তাকাল।

নূর — কি?

আফরান — প্রথমত যখন তুমি দেখছ একজন অচেনা লোক তোমার পিছু নিচ্ছে তখন তার কাছ থেকে না পালিয়ে যেখানে লোক সমাগম আছে সেখানে যাবে। যাতে সে একা পেয়ে তোমার ক্ষতি করতে না পারে। যত দ্রুত পরিচিত কাউকে ফোন করে তোমার কাছে আসতে বলবে। কিন্তু তুমি কি করলে নির্জন রাস্তায় গিয়ে তাকে আরও সুযোগ করে দিলে। লুকিয়ে ছিলে বেশ ভালো কথা। কিন্তু আবার সামনে এসে নিজেকে বাহাদুর প্রমাণ করার কি প্রয়োজন ছিল। আক্রমণ করেছ তাও কি দিয়ে? সামান্য ব্যাগ! ফলাফল দেখলে, ছিড়ে গিয়েছে। কখনো নিজেকে একাই একশো ভেবে বাহাদুরি দেখাতে যাবে না। আজ আমি ছিলাম। যদি সত্যি কেউ তোমার ক্ষতি করার উদ্দেশ্য থাকত?

নূর ভয় পেয়ে আফরানের হাত আঁকড়ে ধরল। আফরান পলক ফেলে তাকে আশ্বাস দিল।

আফরান — সেল্ফ ডিফেন্সের কিছু টেকনিক শিখে নিও।

নূর — আমি পারি।

আফরান — ঘোড়ার ডিম পাড়। শুধু পার আমার সঙ্গে খিটখিট করতে।

নূর — কে বলেছিল আপনাকে এমন ডাকাতের মতো নাক মুখ বেঁধে আসতে। আমাকে আগে থেকেই ফোন করে জানিয়ে দিলেই হতো।

আফরান — এখন সব দোষ আমার? আমি সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম।

নূর — হ্যাঁ! আপনার দোষ। (রেগে উঠে দাঁড়ালো)

আফরান — আমার না। তোমার দোষ। তুমিই এক চামচ বেশি বুঝ তাই এতো ঝামেলা হয়েছে।

নূর রেগে হনহনিয়ে চলে গেল। আফরান হতভম্ব তাকিয়ে আছে তার যাওয়ার পানে। কিছু দূর গিয়ে নূর ফিরে এলো। কিছু না বলে আফরানের হুডির পকেট থেকে নিজের ফোন নিয়ে ভেঙচিয়ে চলে গেল। কিছু দূর গিয়ে আবারও ফিরে এলো। অন্য পকেট থেকে তার ব্যাগে রাখা টাকা গুলো নিল।

নূর — তিনশো পঁয়ষট্টি টাকা ছিল আমার ব্যাগে। নিয়ে নিলাম। আপনি আমার ব্যাগ ছিড়েছেন। তেমন সেইম টু সেইম ব্যাগ নিয়ে দিবেন। হুহ্!

আবারও হনহনিয়ে চলে গেল। আফরান শুধু হা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।

আফরান — এই মেয়ে কি আজীবন আমার সঙ্গে খিটখিট করবে? এই কার পাল্লায় পড়লাম। অবশেষে এই তার ছিড়াকে বিয়ে করতে হচ্ছে আমাকে। কি আর করার। ভালবাসি এই তার ছিড়াকে। বিয়ের আর মাত্র তেরো দিন বাকি। চেয়েছিলাম একসাথে কিছু সময় কাটাবো। তা আর হলো কয়। খিটখিট করতে করতে চলে গেল। এক মিনিট নূর আবারও একা গিয়েছে। এই মেয়েকে নিয়ে আর পারা যায় না।

দৌড়ে নূরের পিছনে গেল। কিছু দূর গিয়ে দেখে নূর অনায়াসে ডাবের পানি পান করছে। আফরানকে দেখে ইশারায় কাছে আসতে বলল।

নূর — এখানে তিনশো পাঁচ টাকা আছে। বাকি ষাট টাকা নেই। এবার আমার ষাট টাকা দেন নয়তো আমাকে বাসায় পৌঁছে দেন। (ভাব নিয়ে)

আফরান — (একা যেতে ভয় পাচ্ছে। কিন্তু না। ম্যাডামের ভাব দেখ। মুখে বলবে না। এসব ঢং করবে।) চলে পৌঁছে দেয়।

_______________________________

চন্দ্রপ্রভা চারদিকের অন্ধকার কাটিয়ে আলো ছড়াচ্ছে। ফুরফুরে হিমেল হাওয়ার দোলায় বাগিচার ফুল দুলছে। ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করছে নূরের বারান্দা। ওয়াইন্ড চিমনের টিং টিং শব্দ। নূর দেয়ালে হেলান দিয়ে মেঝেতে বসে আছে। কানে ফোন অপরপ্রান্তে আফরান জানালার দ্বারে হেলান দিয়ে বসে চন্দ্র বিলাস করছে। দুই দিকে নীরবতা। ঠোঁটের কোণে মুগ্ধকর হাসি। নীরবতা ভেঙে আফরান বলল,

আফরান — আর মাত্র দুই দিনের অপেক্ষা। এরপর তোমাকে নিয়ে একসাথে খোলা আকাশের নিচে চন্দ্র বিলাস করব।

লাজুক মিষ্টি হাসি দিয়ে নূর মাথা নিচু করে ফেলল। ইদানিং আফরানের প্রতিটি কথায় নূর বেশ লজ্জা পায়। লজ্জার কারণ না হলেও লজ্জা লাগে। এমনকি আফরান মৃদুস্বরে নূরের নাম নিলেও হুদাই তার লজ্জা করে। আবার কারণে অকারণে আফরানকে ক্ষেপাতে তার ভীষণ ভালো লাগে। আবার নিজেও মিথ্যা অভিমান করে যাতে আফরান তার অভিমান ভাঙাই। নিজের এমন পাগলামিতে নূরের ভীষণ হাসি পায়।

আফরান — কি গো আনন্দিতা। কিছু বলছ না যে? আছ? নাকি ঘুমিয়ে পড়েছ?

নূর — আছি আমি। (কড়া গলায়) শুনছিলাম আপনার কথা। আর ভাবছিলাম।

আফরান — কি ভাবছিলে?

নূর — আর দুই দিন পর এসব আর আমার থাকবে না। এই বারান্দা, এই ফুলের সুবাস, এই ঘর। রোজ এই বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখা হবে না।

কাঁপা স্বর বলে দিচ্ছে নূর যেকোনো মূহুর্তে কেঁদে দিবে।

আফরান — তাতে কি হয়েছে। এক নতুন ঘর পাবে, নতুন বারান্দা, নতুন ফুলের সুবাস, নতুন ঘর। এক নতুন আকাশ। যেই আকাশ তুমি আমি একসাথে দেখব। এক নতুন জাহান হবে আমাদের। খুনসুটি, অভিমান, ভালবাসায় পরিপূর্ণ হবে।

আবারও নীরবতা বিরাজ করল তাদের মাঝে।

আফরান — নূর?

নূর — হুম!

আফরান —
“জানা ছিল না আমার এই খবর
… ভালবাসব তোমায় আট প্রহর
জানি না কেন তোমায় চাই এই মন
… বাঁধা তোমাতে হৃদয়ের বন্ধন
আছ তুমি হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দনে
… আছ তুমি নিঃশ্বাসের প্রতিটি ক্ষণে
মাতাল করে আমায় তোমার ঐ হাসি
… মাতোয়ারা হয়ে বলতে চাই তোমায় ভালবাসি”

লজ্জার লালিমায় মিশে যাচ্ছে নূর৷ উষ্ণতার অদ্ভুত অনুভূতি বুকের মাঝে উথাল পাথাল। আচমকা কোথা থেকে একটি জোনাকি পোকা উড়ে এলো। নূর শাহাদাত আঙুল পেতে দিল। জোনাকি পোকাটি নূরের আঙুলে বসল। হঠাৎই জোনাকির আলোর উজ্জ্বলতা বেড়ে গেল। যেন আফরানের ভালবাসার সাক্ষী দিতে এসেছে। ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল।
আফরান নীরবে অপেক্ষা করছে কবে তার প্রেয়সীর কাছ থেকে শুনতে পাবে প্রেমময় সেই বাক্য। কিন্তু প্রতিবারই নূর কিছু না কিছু বলে এড়িয়ে যায়। কিন্তু এটাও জানে যতবার আফরান তার ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ করে ততবার লজ্জা নূরের গাল দুটো লালিমা ছড়ায়। এই লজ্জা আড়াল করতে দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে নেয়।
কিছুদিন পূর্বে আফরান নূরকে না জানিয়ে তার বারান্দার নিচে দাঁড়িয়ে ছিল। আড়ালে নূরকে দেখছিল। যখন ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ করেছিল ঠিক একই ভাবে নূর লজ্জায় মুখ ঢেকে নিয়েছিল। তাই ইচ্ছে করে আফরান বারবার এমন করে।

.
.
.

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here