#Ragging_To_Loving__2
#পর্বঃ- ৩১ (২য় অংশ)
#রিধিরা_নূর
সিমা ওয়াসিম পাশাপাশি হাটছে। সিমা লাজুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ক্লাসে প্রবেশ করল। ওয়াসিম তাকে বিদায় জানিয়ে উল্টো ফিরে আসতেই দেখে আফরান সহ সবাই সারিবদ্ধ হয়ে তার দিকে কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। চোখ সরু করে হিংস্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ওয়াসিম ভয়ে কাঁপতে লাগলো।
আফরান — কি চলছে এসব? (গম্ভীর হয়ে)
আরিফ — পিংকিকে রেগে চলে যেতে দেখে ভেবেছিলাম কোন সমস্যা হয়েছে। কিন্তু এখানে তো অন্য দৃশ্য দেখতে পাচ্ছি।
আহিল — (দৌড়ে ওয়াসিমকে জড়িয়ে ধরল) দোস্ত আমরা একই ঘাটের মাঝি। আমরা একসাথে জুটিয়ে প্রেম করব। না মানে আমাদের গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে।
ইয়াশ — কি হারামি পাবলিক। দুইটা প্রেম করে আমাদের পার্টি দিল না। মার দুইটা রে।
আফরান,আরিফ,ইয়াশ তেড়ে আসতেই আহিল,ওয়াসিম হাত ধরে দৌড় দিল।
.
.
রিহান জীপে ℅করে নূরকে নিয়ে ভার্সিটিতে এলো। দুজনের চেহারা মলিন হয়ে আছে। নূর নিশ্চুপ হয়ে চলে যেতেই রিহান ডাকল। রিহান কিছু না বলে হাসি দিল। রিহানের হাসিতে আশ্বাস এবং বিশ্বাসের টের পেল। নূরও মৃদু হাসলো। মাথা দুলিয়ে রিহানকেও আশ্বাস দিল। নূর ক্লাসের দিকে অগ্রসর হলো। রিহান গাড়ি পার্ক করে এলো। নূর ক্লাসে গিয়ে দেখে ক্লাস চলমান। এই সময় ভেতরে গেলে স্যারের কথা শুনতে হবে। তার চেয়ে বরং এই ঘন্টা বাইরে বসেই কাটিয়ে দেয়। ঘুরে দাঁড়াতেই তার সামনে ধাক্কা খেল। লক্ষ্য করে দেখে আফরান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। নূর কিছু মূহুর্ত তার দিকে তাকিয়ে ভাবান্তর করল না। পাশ কাটিয়ে যেতেই আফরান আবারও সামনে এসে দাঁড়াল।
নূর — পনেরো মিনিট পর নিহাল স্যারের ক্লাস শুরু হবে। আমার এসাইনমেন্ট দেন।
আফরান — এসাইনমেন্ট? (চিন্তিত হয়ে) ওহ্ গড। কোথায় রেখেছি? আমার মনেই ছিল না। গতকাল মিউজিক হলে সামলে রেখেছিলাম এরপর আর নেওয়া হয়নি। এখন আছে কিনা তা তো জানা নেই। (কপালে হাত দিয়ে)
নূর — মানে কি?
আফরান — মানে হলো উপরে গিয়ে দেখতে হবে।
নূর আর অপেক্ষা না করে দৌড়ে গেল। আফরান বিজয়ী হাসি দিয়ে ভাবলেশহীন ধীর পায়ে হেটে গেল। নূর মিউজিক হলে এসে চারদিকে খোঁজাখুঁজি শুরু করল। আফরান দেয়ালে হেলান দিয়ে পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে। নূরের ব্যস্ততা দেখে পৈশাচিক হাসি দিচ্ছে।
নূর — কোথায় রেখেছেন?
পিছন ফিরে দেখে আফরান ভাবলেশহীন দাঁড়িয়ে আছে। নূর বুঝতে পারলো আফরান তাকে বিরক্ত করার জন্য এসব করছে। নূর নিঃশব্দে রাগে ফোপাঁতে লাগলো। আফরান ভাব নিয়ে শার্টের মধ্যে থেকে ফাইল বের করে বাতাস করতে লাগলো।
নূর — ফাইল যখন আপনার কাছে ছিল তাহলে মিথ্যা বললেন কেন? (আফরান বাঁকা হাসি দিল) ফাইল দেন। (হাত পেতে)
আফরান নূরকে উপেক্ষা করে কাগজ উল্টাতে লাগল। নূর কাছে আসতেই আফরান ফাইল উপুড় করে ধরল। নূর পায়ের আঙুলের উপর ভর করে নেওয়ার চেষ্টা করছে। নূরের অযথা প্রচেষ্টা দেখে আফরান হেসে দিল।
আফরান — ভুটকি। ভুটকি-ই রয়ে গেলে।
নূর স্তব্ধ হয়ে অবাক চোখে তাকাল। নূরকে স্তব্ধ হয়ে থাকতে দেখে আফরান নূরের কানে ফুহ্ দিল। আচমকা নূর শিউরে উঠল। হঠাৎ নূর খেয়াল করল সে আফরানের অনেকটা কাছে। তড়িঘড়ি পিছিয়ে গেল। আফরান ফাইল এগিয়ে দিল। নূর নিতে গেলে আবারও উপরে তুলে ধরে। নূর রাগী দৃষ্টিতে তাকাতেই আফরান হোহো করে হেসে উঠল। হুট করে হাত লেগে আফরানের হাত থেকে ফাইল ছিটকে পড়ে কাগজ সব বাইরে উড়ে যায়। আফরান জিবে কামড় দিয়ে নিষ্পাপ ভঙ্গিতে নূরের দিকে তাকাল। নূর যথাসাধ্য নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।
আফরান — নূর। তোমার এসাইনমেন্ট….
নূর — লাগবে না এসাইনমেন্ট। ওটা আপনার কাছেই রাখুন। (রেগে)
আফরান কিছু বলার পূর্বেই নূর হনহনিয়ে চলে গেল। ক্লাসে আর গেল না। একেবারে বাসায় চলে গেল। এতো রাগ হচ্ছিল যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
পুষ্প — নূর এখনো আসছে না কেন? নিহাল স্যার চলে এসেছে।
আলিফা — নূর বোধহয় আজ আসেনি। ক্লাসও শেষ পর্যায়ে। লাস্ট পিরিয়ড আছে।
সিমা — আর ক্লাস করার মতো শক্তি নেই। বাসায় যাব আমি।
.
রিহান ফোনে কথা বলছে। আর আফরান বাকিদের সঙ্গে কানাঘুষি করছে। রিহান তাকাতেই অপ্রস্তুত হয়ে সোজা হয়ে বসল। ইশারায় একে অপরকে আশ্বাস দিল।
আহিল — কাল রিহানের বার্থডে। বন্ধুমহলে কারো জন্মদিন হলে প্রত্যেকবার আমরা বাইরে যায় বেড়াতে। কিন্তু এবার কারো মনেই ছিল রিহানের বার্থডে। যার কারণে প্ল্যানিং করা হয়নি।
ইয়াশ — হবে কি করে। সবাই যে প্রেমে মশগুল ছিলে।
আরিফ — সবাই কে? (ভ্রু কুচকে) আহিল এবং ওয়াসিম মশগুল ছিল।
ইয়াশ — তোর পিছনে আলিফা মশগুল ছিল। (আরিফ গলা ঝাড়ল) আফরানের পিছনে নূর।
আফরান — ওহ্ হ্যালো। এখানে আবার নূর আমার প্রেমে মশগুল হলো কবে। সারাক্ষণ শুধু খিটখিট করেছে। একটু আগেও…. (বলে থেমে গেল) এখন কথা সেটা না। রিহানের বার্থডে আমাদের ফার্ম হাউসে সেলিব্রেট করি। বাট ইট উইল বি সারপ্রাইজ। রিহানকে কেউ কিছু জানাবি না।
ওয়াসিম — ও মামা জোস। সারপ্রাইজ পার্টি। আমার বার্থডেতেও আমাকে সারপ্রাইজ দিস।
আহিল — নিজেই বলে আবার নিজেই সারপ্রাইজ চায়।
সবাই হোহো করে হেসে উঠল। ওয়াসিম গাল ফুলিয়ে আছে।
রিহান ফোনে কথা বলে তাদের কাছে এলো।
রিহান — কি হচ্ছে এখানে? এতক্ষণ বকবক করছিলি। আমি আসতেই চুপ হয়ে গেলি। কি এমন কথা যা আমাকে বলা যাবে না।
ওয়াসিম — তোকে নিয়েই কথা বলছিলাম। (আফরান চিমটি দিল) আহহ। মানে তুই কোন মেয়ের সঙ্গে লাইন মারছিস তাই ভাবছিলাম।
রিহান শার্টের কলার ঠিক করে নড়েচড়ে বসল। আড়চোখে আফরানের দিকে তাকিয়ে কথা ঘুরিয়ে দিল। বাকিরাও স্বস্তির নিশ্বাস নিল।
.
ক্লাস থেকে বেরিয়ে আচমকা পুষ্প চিল্লিয়ে উঠল। হঠাৎ চিৎকারে সবাই ভয়ে লাফিয়ে উঠল। একে একে সবাই জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে।
পুষ্প — আজকে কত তারিখ?
আমরিন — ২৬।
পুষ্প — ২৬! তার মানে কাল ২৭।
সিমা — অও সত্যি! আমরা জানতাম না। (অবাক হওয়ার ভান করে)
পুষ্প — চুপ কর। কাল নূরির বার্থডে।
সবাই জিবে কামড় দিল। আসলেই তারা ভুলে গিয়েছিল।
মেহের — হোস্টেলে সবাই মিলে কত মজা করতাম। একসাথে ছিলাম। সবার বার্থডে ভীষণ মজা করে সেলিব্রেট করতাম।
পুষ্প — এখনো করতে পারি। সবাই বাসায় বলে দে আজ রাত বাসায় ফিরবি না। নূরকে সারপ্রাইজ দিব।
সিমা — এদিকে আমরা নূরকে সারপ্রাইজ দিব অন্যদিকে আম্মু আমাকে সারপ্রাইজ দিবে। ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিবে।
আমরিন — আমিও পারব না। তখন আমরা হোস্টেলে ছিলাম। একা ছিলাম। যেমন খুশি তেমন করতে পারতাম। কিন্তু এখন বাড়িতে বাবা মাকে কৈফিয়ত দিতে হবে। কেন যাচ্ছি? কার সাথে যাচ্ছি? অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।
আলিফা — আমার কোন টেনশন নেই। কিছু একটা বলে ম্যানেজ করে নিব। মেহেরকেও নিয়ে নিব।
মেহের — না। বাবার শরীর খারাপ। এমন অবস্থায়…
পুষ্প — তোরা এমন ভাব নিচ্ছিস যেন বনবাসে যাবি। মাত্র একদিন ম্যানেজ কর।
সিমা — তোর প্ল্যান কি সেটা বল।
পুষ্প — আমাদের ফার্ম হাউস আছে। বাসা থেকে ২০-৩০ মিনিট দূরত্বে। রহিম চাচা দেখা শোনা করেন। বাসার কোন প্রোগ্রাম হলে সেখানে আয়োজন করে। তাই কেউ তেমন যায় না সেখানে। আমরা সেখানে নূরের বার্থডে সেলিব্রিট করব।
আমরিন — তোর মাথা খারাপ? আমরা একা মেয়ে। সেখানে কেউ যায় না বলছিস। যদি কিছু একটা হয়!
পুষ্প — আমাকে কি এতো বোকা পেয়েছিস। চারদিকে সুরক্ষার ব্যবস্থা আছে। তাছাড়া রহিম চাচা আছেন। উনি সব সামলে নিবেন।
মেহের — কেন জানি আমার মন সায় দিচ্ছে না।
পুষ্প — ওকে ফাইন। লাগবে না কোন পার্টি করা। ভার্সিটি জীবনের শেষ সময়টুকু সবাই একসাথে আছে। এরপর কেউ ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবে, কেউবা সংসার নিয়ে। তখন কেউ কারো দেখা পাবি না। শুধু থাকবে স্মৃতিটুকু। তোদের কোটরে সেই টুকু স্মৃতিও থাকবে না। এই সময় আর ফিরে পাবি না। (রেগে)
আলিফা — ইমোশনাল হয়ে গেলাম। চল আমি আর তুই মিলে করি। এদের বাদ দে।
সিমা — আজ পর্যন্ত কি আমি তোদের পিছু ছেড়েছি? যে আজ ছাড়ব। আমিও আছি।
মেহের — তোরা আমার জন্য ঢাকায় হোস্টেলেও চলে গিয়েছিস আর আমি মাত্র একদিন ম্যানেজ করতে পারব না?
আমরিন — বাহ্! কি সুন্দর। সবাই মিলে এখন আমাকে ভিলেন বানাচ্ছে।
রাগের মাঝেও পুষ্প ফিক করে হেসে দিল।
আলিফা — কিন্তু নূরকে ফার্ম হাউসে আনবি কি করে? আমরা কেউ তো চিনি না। নূরও চিনে না। আর সে যদি আমাদের সঙ্গে যায় তাহলে তো সব জেনেই যাবে। আর সারপ্রাইজ দেওয়া হবে না।
পুষ্প — হুম তাই তো।
.
.
নূর প্রচুর রেগে আছে। এরই মাঝে পুষ্প অনেকবার ফোন দিয়ছিল কিন্তু রিসিভ করেনি। ঘরে প্রবেশ করতেই তন্বী দৌড়ে এসে ফোন এগিয়ে দিল। ইশারায় নিতে বলল। নূর স্ক্রিনে দেখে পুষ্প। ফোন রিসিভ না করায় নূরের মায়ের ফোনে কল দেয়।
নূর — কিচ্ছে?
পুষ্প — আজ ভার্সিটিতে আসলি না কেন?
নূর — এসেছিলাম। তোর ওই খাচ্চোর খাটাশ খবিশ ভাই, ধলা চিকা, দেশি মুলা আফরান। আমার এসাইনমেন্ট এলোমেলো করে উড়িয়ে দিল। (দাঁতে দাঁত চেপে বলল) তাহলে আর ক্লাসে গিয়ে কি স্যারের কথা শুনব? এখন মেজাজ প্রচুর খারাপ।
পুষ্প জানে যত কিছুই হোক নূর রাগে না। যদি সে রাগে তাহলে বিষয় অত্যাধিক গম্ভীর।
পুষ্প — তোর এসাইনমেন্ট স্যারকে জমা দিয়েছি।ভাইয়া তোর এসাইনমেন্ট আমাকে সেদিন রাতেই দিয়ে দিয়েছিল।
নূর — তাহলে বললি না কেন? তোর ভাই এতো দিন আমার উপর যে অত্যাচার করেছে তোর কি একটুও দয়া হলো না আমার উপর। এই তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। (করুণ স্বরে)
পুষ্প — ভাইয়া আমাকে বারণ করেছিল। কড়া গলায় বলেছিল যাতে তোকে না বলি। ভাইয়াকে তুই চিনিস না। একবার রাগলে সব মাথায় তুলে নেয়। তাই…
নূর — হয়েছে আর ঢং করতে হবে না। তুই থাক তোর ভাইকে নিয়ে। আমার সাথে কথা বলবি না।
পুষ্প — বাহ্! নূর। বাহ্! এই আমি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড। কীভাবে পারলি এভাবে বলতে। (নাক টেনে)
একেই বলে চোরের উপর বাটপারি। নূর পুষ্পকে ব্লাকমেইল করল। এখন পুষ্প উল্টো নূরকে ব্লাকমেইল করছে। দুজনেই বেশ কিছুক্ষণ নিরব থেকে দুজনেই হেসে উঠল।
পুষ্প — নূর শোন। আজ আমাদের বাসায় মেরামতের কাজ চলছে। চারপাশে ধুলো। তুই তো জানিস আমার শ্বাসকষ্ট আছে। ধুলোয় আমার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। তাই আজ আমি আমাদের ফার্ম হাউসে থাকব। একা থাকতে আমার ভয় করছে। তুই প্লিজ আজ রাত আমার সাথে থাকবি? প্লিজ।
নূর — ওয়াও। কেমন যেন এডভেঞ্চার ভাব আসছে। বাকি ফকিন্নিদেরও বল আসতে। অনেক দিন পর সবাই একসাথে মজা করব।
পুষ্প — না….। (ওদের আয়োজনে কাজ করতে হবে।) মানে। ওদের বলেছিলাম। সবাই নানান কাজে ব্যস্ত। আসবে না।
নূর — একেকটা ফকিন্নি। শাকচুন্নি, ডায়নি, পেত্নী, ভূতনি, চুড়েল।
পুষ্প ফোন চেপে ধরে হাসছে। তার পাশেই দাঁড়ানো বাকিরা রাগে ফুঁসছে।
সিমা — এই চুন্নিটার জন্য আমরা সারপ্রাইজ প্ল্যান করছি। আর ও আমাদের এসব বলছে? (রেগে)
পুষ্প সিমার কাঁধে হাত বুলিয়ে সান্তনা দিল।
পুষ্প — নূর। আমি সন্ধ্যায় আসব তোকে নিতে।
নূর — ওকে। আম্মুকে জানিয়ে দিই।
.
সন্ধ্যায় ফার্ম হাউসে___________________
তিন তলা দালান। পুষ্প সবাইকে নিয়ে ছাদে গেল। বিশাল জায়গা জুড়ে বিস্তৃত ছাদ। সন্ধ্যার আকাশ বিলাসে মন ভরে উঠল। রাতে খোলা আকাশের নিচে আরও ভালো লাগবে। পুষ্প সব আয়োজনে তাদের সাহায্য করল। ছাদে কোণায় একটি কক্ষ রয়েছে। রাতে নূর আসা অবধি তারা সেখানেই থাকবে। খাবারের সব আয়োজন সেখানেই করা হয়েছে।
অন্যদিক নিচ তলায় সুইমিংপুলে রিহানের বার্থডের আয়োজন করা হচ্ছে৷ পুল পার্টি করবে। সব কিছুর আয়োজন করা আছে। তবে রিহানকে কিছু জানায়নি। রাত ১১ টার দিকে ফোন দিবে।
দুই দিকেই তোরজোর করে আয়োজন চলছে। কিন্তু উভয়ই একে অপরের সম্বন্ধে অজানা।
আলিফা বড় বাক্স নিয়ে হাটতেই পা পিছলে পড়ে যায়। ছাদ থেকে ধড়াম করে আওয়াজ হওয়ায় ওয়াসিম কেঁপে উঠল। গুটিসুটি পায়ে আরিফের কাছে গেল।
ওয়াসিম — তোরা কি কোন আওয়াজ শুনেছিস? মনে হলো ধুম করে বিকট কিছু একটা পড়েছে।
আরিফ — কয় না তো। তোর মনের ভুল।
ওয়াসিম — আমি স্পষ্ট শুনেছি। ছাদ থেকে এসেছে শব্দ। (আরিফের শার্ট আঁকড়ে ধরল) ভাই। ছাদে কোন ভূত-টূত নেই তো?
আরিফ — শাট আপ ইয়ার। এতো বছর ধরে এখানে এসেছিস কখনও দেখেছিস ভূত?
ওয়াসিম এবার শান্ত হলো। মনের ভুল ভেবে এড়িয়ে গেল।
.
আমরিন — আলিফা তুই ঠিক আছিস তো?
আলিফা — হ্যাঁ! এসবে পা লেগে পড়ে গিয়েছি।
পুষ্প — গাইজ। সব কিছু হয়ে গিয়েছে। এবার শুধু নূর আসার পালা। তোরা রেডি থাকিস। আমি সাড়ে ১১ টায় ছাদে আসব। প্ল্যান অনুযায়ী নূর ছাদে নিয়ে আসব।
সবাই — ওকে।
পুষ্প — আমি যায় নূরকে নিয়ে আসি।
রাত সাড়ে ১১ টা। রিহান বেশ অবাক হলো। আজ কেউ অনলাইনে নেই। না তার বন্ধুরা, না পুষ্প। তখনই আরিফের ফোন এলো।
রিহান — কিরে আজ…
আরিফ — রিহান? রিহান? তাড়াতাড়ি আফরানের ফার্ম হাউসে চলে আয়। (আতঙ্কিত হয়ে)
রিহান — হ্যালো? আরিফ কি হয়েছে? (ভয়ার্ত সুরে)
আরিফ — অনেক বড় প্রবলেম হয়ে গিয়েছে। শীঘ্রই চলে আয়। (বলে ফোন রেখে দিল)
রিহান তড়িঘড়ি বেরিয়ে পড়ল। আরিফ আড়চোখে সবার দিকে তাকাল।
আরিফ — মিথ্যা বলার জন্য আমাকেই পেয়েছিস।
আহিল — তোর কথা রিহান সহজে বিশ্বাস করবে। আমরা বললে সে প্রশ্ন করতো।
.
নূর ঘুমে বিভোর। পুষ্প আস্তে আস্তে উঠে আমরিনকে মেসেজ দিল সব রেডি করতে। আমরিন মেসেজ পেয়ে সবাইকে জানালো। এরই মাঝে সিমাও ঘুমে তলিয়ে গেল। আলিফা এক ধাক্কা দিয়ে সিমাকে তুললো।
আলিফা — এখানে কি ঘুমাতে এসেছিস? রেডি হয়ে নে তাড়াতাড়ি। পুষ্প আসছে।
খটখট শব্দে নূরের ঘুম ভেঙে গেল। নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। আবারও খটখট শব্দ হলো।
নূর — পুষ্প দেখ তো কে….
পাশে হাত দিয়ে দেখে ফাঁকা। তড়িঘড়ি লাফিয়ে উঠে দেখে পুষ্প নেই। আচমকা ভয় হতে লাগলো। ওয়াশরুমে গিয়ে দেখে সেখানেও নেই। খটখট শব্দে আবারও কেঁপে উঠল। চারপাশে নিস্তব্ধ, ঘুটঘুটে অন্ধকার। ভীষণ ভয় লাগছে। কারো পায়ের আহট শুনতে পেল। এক লাফে কম্বলের নিচে লুকিয়ে পড়ল। পরক্ষণে পুষ্পর কথা মনে পড়ল। পুষ্পর কোন বিপদ হয়নি তো। এই ভেবে ভয়ে ভয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। খটখট শব্দ অনুসরণ করে এক পা দু পা এগুতে লাগলো। সিড়ির পাশ থেকে আওয়াজ আসছে। পাশ থেকে ফুলদানি হাতে নিয়ে ধীরে ধীরে এগুচ্ছে। সিড়ির কাছে আসতেই যেন নিচ থেকে তীব্র আহট পেল। ভয়ে ভয়ে নিচে নামছে।
রিহান দ্রুত ড্রাইভ করে ফার্ম হাউসে এলো। রাতের বেলায় রাস্তা ফাঁকা হওয়ায় আসতে অসুবিধা হলো না। গাড়ি পার্ক করে নামতেই নজর পড়ল উপরে। কিছু একটা ঝলকানি দেখতে পেল। আরিফের কথা গুলো মাথায় ঘুরপাক করছে। তাই এক মূহুর্তও না ভেবে উপরের দিকে গেল।
চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার। কাউকে চেনা মুশকিল। ঘড়ির কাটা টিক টিক করছে। সবাই মৃদু স্বরে কাউন্টডাউন করছে।
১০,৯,৮,৭,৬,৫,৪,৩,২……..১
নূর কারো উপস্থিতি টের পেয়ে যে-ই না ফুলদানি মারতে যাবে আচমকা কেউ একজন তাকে ধাক্কা দিল।
রিহান দৌড়ে ছাদে এসে দেখে দরজা লাগানো। দরজা খুলতেই আচমকা ঠাস করে নরম কিছু তার মুখে পড়ল।
“Happy Birthday” বলে চিৎকার করে আলো জ্বালালো। চারপাশে আলো হতেই সবাই থমকে গেল।
ওয়াসিমের মুখে বেপু বাঁশি ছিল। নূরকে দেখে অনরবত প্যাপ প্যাপ করতে লাগলো।
.
.
.
চলবে