Ragging To Loving 2❤পর্ব-১১

0
1155

#Ragging_To_Loving__2
#পর্বঃ- ১১
#রিধিরা_নূর

ক্লাসে বাইরে নূর স্বস্তির নিশ্বাস নিল। কিন্তু খারাপও লাগছে বটেই। যাই হোক ভুল তো তার ছিল। কিন্তু সে যে বিপদে পড়েছিল। তাই নূর মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল আফরানের কাছে সে ক্ষমা চাইবে। ততক্ষণে আলিফা, আমরিন চলে এসেছে।

বিপরীত দিকে মিউজিক রুমে চোখ বন্ধ করে বসে আছে। হাতে গিটার সুর বিহীন উচ্চস্বরে গিটার বাজাচ্ছে। বাকিরা কান চেপে ধরে বসে আছে। কারো কিছু বলার মতো শব্দ নেই। কারণ তারা জানে আফরান ভীষণ ক্রুদ্ধ। চোয়াল শক্ত করে অনবরত গিটার বাজাতেই আছে। আচমকা শাহাদাত আঙুল গিটারের তারে লেগে কেটে যায়। নীরবে কিছু মূহুর্ত অতিক্রম করল। হুট করে উঠে চলে গেল। বাকিরা নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আফরান ভীষণ বদমেজাজি। অল্পতে রেগে যায় আবার অল্পতেই মনটা নরম হয়ে যায়। কিন্তু এখন তার ভীষণ রাগ হচ্ছে। তার রাগ আরও বেড়ে গেল যখন সামনের দালানের বারান্দায় নূরকে দেখতে পেল। বান্ধবীদের সাথে হাসাহাসি করছে। আফরান ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে।
.
.
আলিফা বেখেয়ালি হয়ে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। মেঘের আঁকিবুঁকির মাঝে যেন আরিফের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছে। অদ্ভুত এক অনুভূতি গ্রাস করে আছে। আনমনে মুচকি হাসছে। মেহের বিষয়টি খেয়াল করল। কুনুই দিয়ে সিমাকে খোঁচা দিয়ে দেখাল। সিমাও একই ভঙ্গিতে পুষ্পকে দেখাল। সবাই সরু দৃষ্টিতে আলিফার দিকে তাকিয়ে আছে। পিছন ফিরতেই আলিফা এক বড় ধরনের টাস্কি খেল। সবাইকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভেটকানি মার্কা হাসি দিল। মেহের আলিফার পেটে খোঁচা দিয়ে জিজ্ঞেস করল কি নিয়ে এমন মিটমিট করে হাসছে। আলিফা আমতা আমতা করতে লাগলো। নূর তার মুটি ধরে জিজ্ঞেস করল ব্যাপারটা কি। আলিফা মেহের ও নূরের কাঁধের উপর ভর করে ঝুলে আছে।

আলিফা — সখী গো আমি ক্রাশ খাইছি।

মেহের, নূর কাঁধ ঝাড়া দিতেই আলিফা ধপাস করে মেঝেতে পড়ে যায়। আলিফা কোমর ঘেঁষতে ঘেঁষতে উঠে দাঁড়ালো। ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকাল।

নূর — এখানে নতুন কি? রোজ-ই তো আট-দশটা ক্রাশ খাস। লুচ্চা মাইয়া। তোর সাথে আলু নামটা একেবারেই যৌক্তিক। আলু একটা লুচ্চা সবজি। মাছ, মাংস, ডাল এবং সব ধরনের সবজির সাথে তার সম্পর্ক আছে। তেমনই যে কাউকেই দেখলেই তুই ক্রাশ খাস। কিছু আগে রিপন ভিডু দেখে তার ছন্দের উপর ক্রাশ খাইছস। দর্শন রাভালের গান শুনে তার উপর ক্রাশ খাইছস।

আলিফা — আরে ধুর। ওসব সিংগার, এক্টর, ডান্সারের উপর ক্রাশ তো এমনি এমনি খায়। কিন্তু এবার পারমানেন্টলি ক্রাশ খাইছি। তার জন্য আমি আমার বাকি ক্রাশদের বিসর্জন দিতে রাজি। সেই আমার ফুল এন্ড ফাইনাল ক্রাশ। (চোখ পিটপিট করে ভাবনায় ডুবে গেল।)

আমরিন — ও মা। কে সে?

আলিফা — আরিফ।

পুষ্প — এই আরিফ আবার কে? কোথায় দেখলি? ক্রাশ খাইলি কেমনে?

আলিফা — এই ভার্সিটির। প্রথম দেখা হয়েছে ভার্সিটির প্রথম দিন। যখন ওই ছেলেটার ক্যামেরা ভেঙেছিল। তার সাথেই ছিল। তখন প্রথম দফা ক্রাশ খেলাম। এরপর নূর যখন ঝগড়া করতে গেল তখন দ্বিতীয় দফা ক্রাশ খেলাম। এখন আগে দেখে একেবারে ফ্ল্যাট হয়ে গেলাম। আই এম ক্রাশিত।

এসব শুনে তারা শিহরিত, কম্পিত, টাস্কিত। নূর রেগে বলল, “তুই আর মানুষ পেলি না ক্রাশ খেতে। ওই খাচ্চর বেটার বন্ধুর উপরই ক্রাশ খেতে হলো।” পুষ্প তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল নূরের দিকে। সে যতই হোক আফরান তার ভাই। একটু হলেও খারাপ তো লাগবেই। কিন্তু বেচারি কিছু বলতে পারছে না। চুপচাপ সব শুনছে।

আলিফা — ভালো লাগা, ভালবাসা এসব দেখে চিন্তা করে হয় না যে, সে কে? কি করে? আজ পর্যন্ত অনেক ক্রাশ খেয়েছি। কিন্তু আরিফ শুধু আমার ক্রাশ নয় আমার প্রথম ভালো লাগা। তাই আরিফ রে পটাবো। কিন্তু বজ্জাত পোলা আমাকে পাত্তাই দেয় না।

নূর ও বাকিরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে অট্টহাসিতে মেতে উঠল। আলিফা ভেঙচিয়ে চলে গেল। সাথে বাকিরাও ক্লাসের দিকে অগ্রসর হলো।

রাতে______________________________
ড্রয়িংরুমে বসে নূর, রিহান একে অপরের দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নূর রিহানকে মারার ইশারা করে। রিহানও পাল্টা ইশারা করে। নূর পাশে থাকা ফুলদানি নিয়ে ছুড়ে মারার ইশারা করে। রিহান আশেপাশে তাকিয়ে সোফা পিলো নিয়ে মারার ইশারা করে।
তাদের দুজনের মাঝে হাটু ভাজ করে বসে আছে তন্বী। চুপচাপ সাইলেন্ট কমেডি শো দেখছে।

তন্বী — আরে তোমরা কি শুধু এমনি এমনি ইশারা করবে? নাকি একে অপরকে মারবে? কবে থেকে পপকর্ন নিয়ে বসে আছি। (টুক্কুর করে একটা পপকর্ন মুখে দিল)

রিহান, নূর একে অপরের দিকে তাকিয়ে দুজনেই তন্বীর দিকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকাল। তন্বী পরিস্থিতি সুবিধার না দেখে দিল দৌড়।

রিহান — নূর? তুই কিন্তু কাজটা মোটেও ভালো করিস নি। আফরান কিন্তু ভীষণ রাগী। রাগের মাথায় কখন কি করে বসে। আর প্লিজ যাই কর কিন্তু ওর সাথে লাগতে যাবি না। আর আজ যখন সে বলেছিল ভার্সিটি থেকে তোকে এক্সপেল করে দিবে তখন ভয় পেয়েছিলাম। কারণ এমনটা করার ক্ষমতা তার আছে। তার উপর তুই বারণ করেছিস তুই যে আমার বোন তা যেন কেউ জানে। তাই আমি চেয়েও সাহায্য করতে পারব না। তাই বলছি।

নূর — ডোন্ট আন্ডারেস্টিমেট মি। ওকে? হ্যাঁ আমি জানি সেই দিন মিথ্যা বলে ভুল করেছিলাম। তার মানে এই নয় যে উনি ভার্সিটির সবার সামনে আমাকে অপমান করবে। আর ক্লাস শেষে সরি বলতে গিয়েছিলাম কিন্তু খুঁজে পায়নি। আর যাই হোক আমি অন্যায়ের কাছে মাথানত করব না। র‍্যাগিং করা অন্যায়। বুঝছ? তাই আমাকে জ্ঞান না দিয়ে তোর ওই খাচ্চর বন্ধুকে দে। ওকে বাই।

নূর ভেঙচি কেটে চলে গেল। রিহান তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল। দুইটাই জেদি আপসহীন।

পরের দিন ভার্সিটিতে
নূর ভেতরে প্রবেশ করতেই হঠাৎ এক উড়ন্ত ফুটবল এসে পড়ল নূরের মাথায়। চশমা খুলে পড়ে যায় সাথে মাথাটা ঝিম ধরে উঠল।

আফরান — চশমা কম পড়লে আরও দুই চারটা লাগিয়ে নাও। একটি চশমা দিয়ে তো দেখতে পাও না।

নূর মাথা চেপে ধরে আছে। ভীষণ রাগ হচ্ছে আফরানের উপর। আফরান বাঁকা হাসি দিয়ে বল নিতে গেলে নূর তার আগেই বল ছিনিয়ে নেই। ব্যাগ থেকে কলম বের করে ফুটাস করে বল ছিদ্র করে দেয়। আফরান হতচকিত হয়ে তাকিয়ে আছে। নূর বলটা টুপির মতো করে আফরানের মাথায় বসিয়ে দিল। নূর রেগে চলে যেতেই পরক্ষণে মনে পড়ল সেই দিনের জন্য আফরানকে সরি বলবে। তার পূর্বেই আফরান চলে গেল।

নূর ও বাকিরা আলিফার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে একটু পর-ই আলিফা এলো। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আলিফার দিকে। মাথা থেকে পা অবধি পর্যবেক্ষণ করল। নীল রঙের কুরতি পরিধান করা, সেজেগুজে হাজির।

সিমা — এতো সেজেগুজে আসার কারণ কি?

আলিফা — আরিফ রে পটামু। ছেলেরা নাকি গোছালো মেয়েদের পছন্দ করে। তাই সেজেগুজে এলাম। আজ তো আমি পটিয়েই ছাড়ব।

নূর — ছ্যাঁছড়া মাইয়া।

আলিফা — তুই চুপ থাক। তোর জন্য কি আমি সিঙ্গেল মরব? খাটাস মাইয়া। আমি যায় আরিফ রে পটাইতে। আর হ্যাঁ যদি আরিফকে পটাইতে পারি তাহলে তোদের ট্রিট দিব। ফকির মিসকিনদের কিছু দান করলে নাকি ভালো হয়।

নূর — ওহ আচ্ছা। এই কি বললি? আমরা ফকির মিসকিন? খাড়া তুই ফকিন্নি।

আলিফা — আব্বে থাম। ওই দেখ আরিফ। একা একা হাটছে। আহারে বেচারার একটা কিউট জিএফ দরকার। আমি যায় পটাইতে। (দৌড়ে গেল। বাকিরাও তার পিছন পিছন গেল। দেয়ালের আড়ালে লুকিয়ে আলিফার কান্ড দেখছে।)

আলিফা — বাংলা সিনেমায় দেখেছি নায়ক নায়িকা প্রথমে একে অপরের সাথে ধাক্কা খায়। নায়ক নায়িকাকে ধরে ফেলে। এরপর লালালালা মিউজিক শুরু হয়। তারপর শুরু হয় প্রেম। উফফ ভাবতেই মনটা ফুরফুরে হয়ে গেল।

সামনে থেকে আরিফ আসছে। আলিফা চুল ঠিক করে আড়চোখে তাকিয়ে হাটছে যেন সে আরিফকে দেখেনি। আরিফ কাছাকাছি আসতেই ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কা লাগে। দু হাত শূন্যে ভাসিয়ে পড়ে যাওয়ার ভান করে। চোখ পিটপিট করে আরিফের দিকে তাকিয়ে আছে কবে তাকে ধরবে সে অপেক্ষায়। আরিফ কোন ভাবান্তর না করে চুপচাপ সোজা দাঁড়িয়ে আছে। নীরবে আলিফার কান্ড দেখছে। এদিকে তাল সামলাতে না পেরে আলিফা ধপাস করে মেঝেতে পড়ে যায়। আরিফ দুইবার পলক ফেলে তাকিয়ে আছে আলিফার দিকে। আলিফা হাত বাড়িয়ে দিল আরিফের দিকে এই ভেবে যে আরিফ তাকে তুলে নিবে। কিন্তু না। আরিফ একই ভঙ্গিতে মূর্তি স্বরূপ দাঁড়িয়ে আছে। শুধু চোখের পলক ফেলছে আর স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আলিফার প্রচুর রাগ উঠল। নিজেই উঠে দাঁড়াল। যেদিক থেকে এসেছিল সেদিকেই চলে গেল। আরিফ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অনুভূতিহীন ভাবে। যাওয়ার পথে পা বাড়াতেই আবার আলিফা দৌড়ে তার সামনে এসে দাঁড়াল। নিঃশব্দে বিড়বিড় করে হনহনিয়ে চলে গেল।

দেয়ালের আড়ালে সিমাসহ বাকিরা হাসতে হাসতে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল। এতো জোরে হাসছে যে হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে গেল। কিন্তু হাসি থামছেই না। আলিফা এসে দেখে তারা হাসছে। আলিফাকে দেখে যেন তাদের হাসি দ্বিগুণ বেড়ে গেল। পেট চেপে ধরে হাসছে। আলিফা তাদের ভেঙচিয়ে চলে গেল।

আরিফ অনুভূতিহীন হাটতে লাগলো। যেন একটু আগে যা কিছু হয়েছে তাতে তার কিচ্ছু যায় আসে না।

আলিফা — বলে কি আমাকে পাত্তা দিবে না? থাক লাগবে না ক্রাশ খাওয়া। ঢং। ক্রাশ বলে কি মাথার উপর উঠে বসবে? হাহ্ রোজ এমন অনেক ক্রাশ খাওয়া যায়। এখন থেকে আমিও তাকে পাত্তা দিব না। হুহ্! (আচ্ছা তার কোন গিএফ নেই তো? ভ্যায়ায়া না এটা হতে পারে না। থাকলেও ব্রেকআপ করিয়ে দিব।)

.
.
.

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here