My First Crush পর্ব ১১

0
360

#My_First_Crush
#পর্ব-১১
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি

মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো আমার। পেটের মধ্যে খিদে রাজপথে মিছিলের মতো স্লোগান দিয়ে যাচ্ছে। পেট কি আর আমাদের মনকে অনুসরণ করে চলে। ঝড় হোক, সুনামি হোক বা আকাশ ভেঙেই পড়ুক পেট তো তার খিদে নিয়ে যথাসময়ে হাজির হবেই। কিছুক্ষণ পেটে হাত রেখে বসে বসে আর থাকতে না পেরে আমি মুখ ফুলিয়ে রুম থেকে বের হয়ে এলাম। ডাইনিং এরিয়ার লাইট জ্বালানোই ছিলো। টেবিলের উপর দেখতে পেলাম একটা খাবারের প্যাকেট। চেয়ার টেনে বসে পড়ে সেই প্যাকেট থেকেই গ্রোগাসে খেতে শুরু করলাম আমি। গতকাল দুপুরেও পার্টির এক্সাইটমেন্টে ভালো ভাবে খাইনি। খিদে তো লাগবেই। আমি মুখ ফুলিয়ে নাক টেনে যখন খাওয়ায় ব্যস্ত তখন রাইয়ান আস্তে আস্তে এসে দাঁড়ালো আমার পেছনে। আমি টের পেলাম না। পেছন থেকে টেবিলে এক হাত ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আরেক হাত আমার মাথায় রেখে মৃদু ঝাঁকি দিয়ে রাইয়ান বলল,
‘এজন্যই বলে খাবারের উপর রাগ দেখিয়ো না।’

আমি ফোলানো মুখ নিয়ে ঝট করে রাইয়ানের দিকে তাকালাম। মিটিমিটি হেসে আবারো প্যান্টে দু হাত গুঁজে রুমে চলে গেলো রাইয়ান। আমার মুখ ভোঁতা হয়ে গেলো। খানিক বিরক্তিও লাগলো নিজের উপর। রাগ করে এতো সাধার পরও না খেয়ে এখন আবার নিজের থেকেই কিনা খেতে এসেছি। কি একটা লজ্জা! তারপরই আমার চোখ পড়লো সামনে বরাবর গ্লাসের উপর। সেখানে দেখলাম আমার মুখের বেহাল দশা। চোখের পানিতে মেকআপ নষ্ট হয়ে গেছে। কাজল লেপ্টে রয়েছে, লিপস্টিক উঠে উঠে গেছে। মানে ছোটখাটো একটা পেত্নী বললে কম হবে না। আমার মুখ আবারো কাঁদো কাঁদো হয়ে গেলো। এই অবস্থায় আমি এতক্ষণ রাইয়ানের সামনে ছিলাম! আমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললাম। এই জেরিন না আসলেই কিপ্টা। একটু ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ কিনতে পারলো না!
___________________________________________________

জিশান এসেছে শপিংমলে। নিজের জন্য বিশেষ কিছু কেনাকেটা করাই উদ্দেশ্য তার। একটা দোকানে ঢুকতে গিয়ে আবারো কিছু মনে পড়ে যাওয়ায় বের হতে গিয়েই সে একজনের সাথে ধাক্কা খেলো। তাল সামলাতে সামলাতে পড়ে যাওয়া থেকে বেঁচে গেলো জেরিন। শুধু মুখ থেকে স্কার্ফটা সরে গেলো। বড় বড় সানগ্লাস থাকা সত্ত্বেও জিশান চিনতে পেরে বলল,
‘তুমি?’
জেরিন বিগলিত হয়ে একগাল হাসলো। পরক্ষণেই মনে পড়লো সে বোকার মতো হাসছে কেন? তৎক্ষনাৎ মুখের হাসি সরিয়ে ফেললো সে। জিশান কিছু ভাবতে ভাবতে বলল,
‘আবারো তুমি কিভাবে? আমি অনেকদিন ধরে খেয়াল করছি আমি যেখানেই যাই সেখানেই তুমি চলে আসো। এতো কো-ইনসিডেন্স তো হতে পারো না। এই তুমি কি আমাকে স্টক করছো?’
জেরিন গলায় জোর দিয়ে বলল,
‘মাথা খারাপ তোমার? আমি তোমাকে স্টক করতে যাবো কেন? এমন কি তুমি? আর আমি কি শপিংমলে আসতে পারি না!’
‘আসতে পারো কিন্তু আমি যেই স্টোরে যাবো সেখানেই কেন?’
‘কেন আমি এই স্টোরে আসতে পারবো না কেন? আমারও কেনাকাটার আছে। নাকি এই স্টোর তোমার নিজের?’
জিশান স্টোরের ভেতরে হাত দিয়ে ইশারা করে বলল,
‘জেন্টস আন্ডারওয়ার স্টোরে তোমার কেনাকাটার আছে?’
স্টোরের দিকে ভালো করে তাকিয়ে জেরিন থতমত খেয়ো গেলো। তৎক্ষনাৎ কিছু সাজিয়ে বলতে পারলো না। জিশান জেরিনকে টেনে এক সাইডে নিয়ে এলো।
বিরক্তির সাথে জিশানের হাত ঝটকা দিলো জেরিন। জিশান বলল,
‘এই খুলে বল। তোমার মতলবটা কি? তুমি আমাকে স্টক করছো কেন?’
‘তোমাকে আমি স্টক করেছি এর প্রমাণ কি?’
‘তাহলে তোমার হাতে বাইনোকুলার কেন?’
জেরিনের এতক্ষণে খেয়াল হলো হাতের বাইনোকুলার লুকাতে তো ভুলেই গেছে সে। তাড়াতাড়ি হাত পেছনে নিয়ে গেলো জেরিন। জিশান বলল,
‘কবে থেকে আমাকে স্টক করা শুরু করেছো? তুমি কি আমাকে লাইক করো?’
জেরিন হেসে ফেলার মতো মুখে একটা শব্দ করে বলল, ‘তোমাকে লাইক করবো আমি? নেহাৎ আমার ফ্রেন্ডের সংসার বাঁচানোর জন্য তোমার দিকে নজর রাখছি। নয়তো জেরিনের এতো ফাও সময় নেই। এখন কে জানতো আমার বান্ধবীর হাজবেন্ডের ছেলে বন্ধুই তার লাভ রাইভাল হবে।’
জিশানের চোখ মুখ হা হয়ে গেলো। কান দিয়ে ধোঁয়া বের হতে লাগলো যেন। সে চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করলো, ‘তোমার কি মনে হয় আমি…….’
জিশান আর কিছু মুখ দিয়ে বেরও করতে পারলো না। জেরিনের খেয়াল হলো সে পেটের সব কথা বলে ফেলেছে। আমতা আমতা করতে করতে সে বলল,
‘তু…তুমিই কি সেদিন রাস্তায় রাইয়ানের সাথে ব্রেকআপ করতে চাইলে না! আমার ফ্রেন্ডের সাথে ওর ভাব হচ্ছে বলে। আরে, সমস্যা থাকলে তুমি আর রাইয়ান আমার ফ্রেন্ডকে বিয়ের আগেই সবকিছু খুলে বলতে পারলে না?’
জিশান রেগে জেরিনের পেছনের পিলারে জোরে শব্দ করে হাত রাখলো। কেঁপে উঠলো জেরিন। জিশান দাঁত কিড়মিড় করে বলতে লাগলো ,
‘আমি স্ট্রেইট পারসন। আমার শুধু মেয়েদের প্রতিই ইন্টারেস্ট। বুঝেছো?’
জেরিন তটস্থ হয়ে চোখ বড় বড় করে যথাআজ্ঞার ন্যায় মাথা উপর নিচে ঝাঁকিয়ে বোঝালো সে বুঝেছে।
___________________________________________________

হৃদি কফি মেশিনের সামনে দাঁড়িয়ে নতুন এক ধরণের কফি তৈরির রেসিপি ট্রাই করছিলো। এমন সময় বাইরে থেকে জেরিন দৌড়ে এসে উৎফুল্ল হয়ে বলল,
‘ঐ হৃদি, বাইরে বাদামি চোখওয়ালা সেই একটা হ্যান্ডসাম ইংরেজ ছেলে এসেছে! তোর খোঁজ করছে।’
হৃদি কফিমেশিন বন্ধ করে বলল,
‘আমার?’
‘হ্যাঁ, তাড়াতাড়ি যা।’
‘কিন্তু এগুলো…’
জেরিন থামিয়ে দিয়ে বলল, ‘আমি দেখছি তুই আগে যা।’
হৃদি গা থেকে এপ্রোন খুলে বাইরে বেড়িয়ে এলো। কফিশপের এক কোনার একটি টেবিলে দেখলো হোয়াইট কালারের ডেনিম জ্যাকেট গায়ে লম্বা, সুন্দর দেখতে একটা ইংরেজ ছেলে বসে আছে। হৃদি চিনতে পারলো না।

অ্যালেন বসে আছে বেশ অনেকখানি সময় হয়েছে। বব কাট চুলের মেয়েটি সেই যে দৌড়ে ভেতরে গেলো আর কারো কোন খবর নেই। অ্যালেন আবারো পাশে চোখ তুলতেই দেখলো হলদে ফর্সা ছিপছিপে গড়নের সেই মিষ্টি চেহারার মেয়েটি এগিয়ে আসছে। যে মেয়েটি সেদিন নির্জন রাস্তায় তাকে উদ্ধার করেছিল। অ্যালেনের চোখে আবারো সেদিনের দৃশ্যটি ভেসে উঠলো। সেদিন যখন আঘাত আর রক্তে জর্জরিত অ্যালেন ওমন জনমানবহীন রাস্তার মধ্যে অসহায় অবস্থায় পরেছিল, এক মুহুর্তের জন্য মনে হয়েছিল সে আর বুঝি বাঁচবেই না। আর তার মৃত্যুর খবরটাও ঠিক কখন তার প্রিয়জনরা পাবে কে জানে! মাথা কেটে খুব রক্ত পড়ছিল। ডান হাতটাও ব্যাথায় একদমই নাড়াতে পারছিল না অ্যালেন। যন্ত্রণায় শরীর অবশের মতো হয়ে আসছিল তার। ঠিক এমন সময় অ্যালেনের জন্য একটা অ্যাঞ্জেলের মতো মেয়েটি যেন এলো। ভাঙা কাঁচের জানালায় হাত দিয়ে বারবার বারি দিয়ে মেয়েটি মনে হয় অ্যালেনকে কিছু বলতে লাগলো। অ্যালেন পরিষ্কার কিছুই শুনতে পেলো না। যন্ত্রণায় কাতর ঝাপসা চোখে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইলো। দরজা আটকে গিয়েছিল। খুলতে খুবই কষ্ট হচ্ছিল মেয়েটির। তবুও প্রাণপণ চেষ্টা করে মেয়েটি দরজা খুলতে সক্ষম হলো। নিজের দয়ালু হাতটি বাড়িয়ে দিয়ে অ্যালেনকে গাড়ি থেকে বের করে আনলো। তারপর তার কাঁধে ভর দিয়ে অ্যালেনকে আস্তে আস্তে হাঁটতে বলে এগিয়ে নিয়ে যেতে লাগলো সে। তারপর আর অ্যালেনের খুব কিছু মনে নেই। সে ফিরে এলো বাস্তবে। মেয়েটি সামনে এসে দাঁড়ালে অ্যালেন উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
‘হাই, আমি অ্যালেন।’
হৃদি চিনতে পারছে না দেখে অ্যালেন স্মিত হেসে বলল,
‘তুমি বোধহয় প্রায়শই মানুষকে এক্সিডেন্ট অবস্থায় পেয়ে সাহায্য করো। তাই তোমার বিশেষ করে আর কিছু মনে নেই।’
এক্সিডেন্টের কথা শুনে এবার মনে পড়লো হৃদির। অবাক মুখে হেসে বলল, ‘ও তুমি সেই ছেলেটাই!

কফিশপে আরো কাস্টমার ছিল। তাই হৃদি আর অ্যালেন চলে এলো বাইরে। কফিশপের পাশে যে সরু লেনের রাস্তাটি সেখানেই হাঁটতে হাঁটতে হৃদি বলল,
‘তোমার শরীর এখন কেমন? আমি দুঃখিত, আমি আর তোমার কোন খোঁজ নিতে যেতে পারেনি।’
অ্যালেন স্মিত হেসে বলল, ‘ইট’স ওকে। তুমি এমনিতেও আরো বেশি কিছু করেছো।’
‘আরে না না এমন আর কি! তুমি তো এভাবে বলছো মনে হচ্ছে আমিই তোমাকে সারা রাস্তা ধরে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছি। একটু আগাবার পরই সেখানে একটা শপ দেখতে পেয়েছিলাম। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে ফোন করলে তারা এসে তোমাকে নিয়ে যায়। আমার ফোনে চার্জ ছিল না বলে আগে দিতে পারিনি।’
হঠাৎ অ্যালেন কিছু মনে পড়ার ভঙ্গিতে হাতের প্যাকেটটি হৃদির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
‘এটা তোমার ব্যাগ। সেদিন তুমি আমার গাড়ির ওখানে ফেলে রেখে এসেছিল। পরে আমার লোক গাড়ি উদ্ধার করতে গেলে নিয়ে আসে।’
হৃদি প্যাকেটটা থেকে একটা ছোট্ট বিড়ালের সফট টয় বের করলো। দেখতে খুবই কিউট। সেদিন কিনে এনেছিল হৃদি। পরে যে সেটা কোথায় পরে গিয়েছিল হৃদির আর খেয়ালই নেই। হৃদি হাতে নিয়ে টয়টি দেখতে লাগলো। মুখে হাসি ফুটে উঠলো তার। অ্যালেন বলল, ‘তোমার সফট টয়টা তো খুবই সুন্দর।’
হৃদি ওটা অ্যালেনের দিকে বাড়িয়ে বলল,
‘তোমার পছন্দ হয়েছে? তাহলে তুমি রেখে দাও।’
অ্যালেন প্রথমে ‘না’ বলল। হৃদি আরেকবার বলায় নিয়ে নিলো। সফট টয়টার দিকে তাকিয়ে বলল,
তুমি বিড়াল পছন্দ কর?’
হৃদি হেসে বলল, ‘হুম।’
‘আমারও খুব বিড়াল পছন্দ।’
হৃদির মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। বলল,
‘সত্যি? বিড়ালরা কতো কিউট হয় তাই না!’
পছন্দের টপিক এক হলে আলাপ জমে ভালো। আর ভাবও হয় তাড়াতাড়ি। হৃদি আর অ্যালেনের ক্ষেত্রেও তাই হলো। বিড়াল নিয়ে নানা ধরণের কথা বলতে লাগলো তারা। হৃদি বলতে লাগলো,
‘আমার বাসায়ও একটা বিড়াল আছে। মিঁয়ো। যেমন কিউট তেমন দুষ্ট। ওঁকে পালা আর একটা বাচ্চা পালা সমান।’
হৃদি হাসতে লাগলো। অ্যালেন তাকিয়ে রইলো ওর দিকে। হৃদি তা লক্ষ করে নিজের মুখে হাত দিয়ে চিন্তিত স্বরে বলল,
‘আমার মুখে কি কোন ময়লা লেগে আছে?’
অ্যালেন হেসে ‘না’ করে সহজ ভাবে বলল, ‘তোমার হাসিটা খুব সুন্দর।’
হৃদি ওর মুখের বাম সাইডের একটা হালকা বাঁকা দাঁত দেখিয়ে বলল, ‘এই বাঁকা দাঁতটার জন্য তাই না? আমারও তাই মনে হয়।’
হৃদি নিজের মনে হেসে উঠলো। পরক্ষণেই তার মনে পড়লো এই ছেলেটার সাথে একটু আগেই পরিচয় হয়েছে তার। আর এতটুকু সময়ের মধ্যেই এগুলো কি বকবক করছে সে! হাসি থামিয়ে পুনরায় স্বাভাবিক হয়ে গেলো হৃদি। কথা ঘোরাতে বলল, ‘রাইয়ান আমাকে তোমার কথা অনেক বলেছে। তোমরা ইউনিভার্সিটি থেকে ফ্রেন্ড তাই না?’
অ্যালেন অবাক হয়ে বলল,
‘তুমি রাইয়ানকে চিনো?’
হৃদি হেসে ফেলে বলল, ‘চিনবো না কেন? আমিই তো রাইয়ানের স্ত্রী।’
এরপর হৃদি শুধু রাইয়ান, রাইয়ান নিয়েই সব কথা বলতে লাগলো। অ্যালেন ঠিকমতো মনোযোগ দিতে পারলো না। হঠাৎ করেই একদম চুপ হয়ে গেলো সে।
___________________________________________________

রাইয়ান লিভিং এরিয়ার সোফায় বসে ফাইল দেখছিল।সামনে টিভি অন করে রাখা। সেখানে একটা কমেডি শো চলছে। রাইয়ানকে দেখে মনে হচ্ছে না তার সেদিকে কোন খেয়াল আছে। তার সমস্ত মনোযোগ এখন ফাইলের দিকে। টিভির ভলিউম মোটামুটি পর্যায়ে রাখা। তবুও ডাইনিং টেবিলে বসা হৃদির কানে তা পরিষ্কারই শোনাতে লাগলো। সেখানে বসে বসে ছুরি দিয়ে আপেলের খোসা ছাড়াচ্ছিল সে। এমন সময় টিভিতে চলা একটা কথা হৃদির মনোযোগ আকর্ষণ করলো। কমেডি শো তে একজন কমেডিয়ান পৃথিবীকে কমলালেবুর সাথে তুলনো করে জোক বলে যাচ্ছে। হৃদি আস্তে আস্তে পেছনে টিভির দিকে তাকালো। দেখলো রাইয়ান এখনো ফাইলেই মনোনিবেশ করে আছে। আস্তের উপর একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো সে। এমনিতেও তার সেই মাতাল হবার রাত নিয়ে হৃদি অনেক এমবারেসড হয়ে আছে। এখন এই জোকস শুনে যদি রাইয়ানের আবারো সেই গানের কথা মনে পড়ে যায়! হৃদি আরও এমবারেসড হয়ে যাবে। নিজেকে এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচানোর জন্য হৃদি কিছু ঠিক করলো। সোফার সাইড টেবিলেই টিভি রিমোট রাখা। হৃদি আস্তে আস্তে চেয়ার থেকে নামলো। নিচু হয়ে মেঝেতে বসে আস্তে আস্তে এগিয়ে সোফার পেছনে গেলো। নিচ থেকে একবার রাইয়ানের মাথার দিকে তাকিয়ে সাইড টেবিল থেকে রিমোটটা হাতে নিলো সে। সোফার পেছন থেকে হাত উঁচু করে টিভির ভলিউম আস্তে আস্তে একদম কমিয়ে দিলো। এরপর আবারো জায়গা মতো রিমোটটা রেখে দিয়ে আগের মতোই পা টিপে টিপে চেয়ারে গিয়ে বসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো হৃদি। হাসিমুখে আবারো আপেল ছিলতে বসলে হঠাৎ তার কানে এলো,
‘Fish want to fly
Bird’s want to swim,
Like a orange,
The world is round;
Which I want to
Eat, eat, eat……’

হৃদি ঝট করে পেছনে তাকালো। এটা তো তারই গলা। ভেসে আসছে রাইয়ানের ফোন থেকে। রাইয়ান হাত উঁচু করে ফোনটা নাড়িয়ে দেখালো। এরপর উঠে দাঁড়িয়ে হৃদির দিকে ঘুরে মিটিমিটি হাসতে লাগলো সে। হৃদির মুখ হা হয়ে গেলো। চোখ বড় বড় করে বলল,
‘তুমি আমার ভয়েস রেকর্ড করেছো?’
রাইয়ান মনে করলো কিভাবে সেদিন এক ফাঁকে ফোন বের করে হৃদির গান রেকর্ড করেছিল সে। পাছে হৃদি না আবার পরবর্তীতে অবিশ্বাস করে সেজন্য।

হৃদি তাড়াতাড়ি এগিয়ে গেলো রাইয়ানের দিকে। রাইয়ানের ফোন ধরার চেষ্টা করে বলল,
‘রাইয়ান, এটা বন্ধ কর।’
রাইয়ান বন্ধ করলো না। রেকর্ড চলতেই লাগলো। রাইয়ানের হাত থেকে আবারো ফোন নেওয়ার চেষ্টা করলো হৃদি। রাইয়ান ফোন সহ হাত উঁচু করে ফেললো। হৃদি কয়েকবার লাফিয়ে লাফিয়ে ফোন ধরার চেষ্টা করলো। কিন্তু রাইয়ানের লম্বা হাতের সাথে পেরে উঠলো না। এক হাত থেকে অন্য হাতে ফোন নিয়ে যেতে লাগলো রাইয়ান। একসময় হৃদি ক্লান্ত হয়ে মুখ ফুলিয়ে পেছনে ঘুরলো। বুকে দু হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে রইলো। রাইয়ান ফোন দেখিয়ে বলল,
‘এই ওয়ান অ্যান্ড অনলি মাস্টারপিস গানটা তো আমি জীবনেও ডিলিট করবো না। ভাগ্যিস রেকর্ড টা করেছিলাম।’
রাইয়ান হাসতে লাগলো। হৃদি চোখ সরু করে তাকালো রাইয়ানের দিকে। তারপর হঠাৎ পুরোপুরি ঘুরে রাইয়ানের পেছনে ইশারা করে বলল, ‘রাইয়ান, তেলাপোকা!’
রাইয়ান বাচ্চাদের মতো ভয়ে লাফিয়ে উঠে পেছনে তাকালো। এবার অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো হৃদি। রাইয়ান মাথা নেড়ে বলল,
‘আচ্ছা!’
রাইয়ানের ভাবভঙ্গি বুঝতে পেরে হৃদি তাড়াতাড়ি দৌড় দিলো। পেছন পেছন সোফার চতুর্দিকে তার অনুসরণে ছুটতে লাগলো রাইয়ানও। দুজনের হাসি কথায় মুহুর্তেই রাইয়ানের এতদিনকার নির্জন বাসাটি মুখরিত হয়ে উঠলো। বস্তুতে সঞ্চারিত হতে লাগলো প্রাণ।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here