In The Depths of Love part-23 last part

0
1739

#In_The_Depths_Of_Love
#Mizuki_Aura
#Part_23

আবির বাহিরে যাচ্ছিলো এমন সময় রেজোয়ান সাহেবের ডাক “এই আবির…..”

আবির দাড়িয়ে গেলো “হ্যাঁ বাবা বলো”

“আম্মা, তো অনেকদিন হলো ওবাড়ি গিয়েছেন। আজ ফোন করেছিল তাকে নিয়ে আসতে বলেছে। তো তুই যাবি ।।। কেমন?”

আবির না করতে চাচ্ছিলো। কিন্তু ওর মা বললেন “হ্যাঁ যাও । আম্মা কে নিয়ে আসো। আর রাই কে ও নিয়ে যাও। ঘুরে আসো দুজনেই। ”

রেজোয়ান সাহেব সম্মতি দিলেন “হ্যাঁ যাও ।”

আবির আর না করতে পারলো না। একপ্রকার বাধ্য হয়েই যেতে হলো। সাথে রাই ও যাচ্ছে। রাই এর না করার উপায় আর রইলো কই?যেহেতু আবিরের মা বাবা দুজনেই আদেশ দিয়েই দিয়েছেন। তাই রাই ও সাথে যাচ্ছে।

এই কয়দিনে যদিও রাই আবিরের সাথে তেমন একটা কথা বলেনি। অভিমানটা বেশ ছিলো, কিন্তু আবির খুব সুন্দর করেই সবসময় ওকে সামলে নিয়েছে।কিন্তু হ্যাঁ যতদিন না রাই চাইবে আবির কোনো ভুল বোঝাবুঝি মিটাবে না।

গাড়িতে দুজনই চুপ করে বসে আছে। আজ রাই এর খুব ইচ্ছে করছে আবিরের সাথে কথা বলতে। একটু না খুব বেশিই। অনেক্ষন যাবতই রাই এর উসখুস করা দেখছে আবির। তবে কিছু বললো না।
আর থাকতে না পেরে রাই কিছু একটা জিজ্ঞেস করতে গেলো ঠিক তখনই চোখের পলকে আবির গাড়ি বামে মোড়ে ঘুরিয়ে দ্রুত চালাতে লাগলো। আচমকা এমনটা রাই আশা করেনি।

“কি করছেন আপনি?”

আবির নিজের মতো করেই গাড়ি চালাচ্ছে। রাই এদিকে ভয় পেয়ে গেলো “আরে , কি করছেন এটা? এভাবে কেনো গাড়ি চালাচ্ছেন?”

হটাৎ কিছু বিস্ফোরণের মতো শব্দ কানে এলো। রাই ভয়ে মৃদু চিৎকার করে উঠলো। আর গাড়িটা কেমন এদিকওদিক যেতে লাগলো।

“আবির…..”
আবির রাই এর একহাত শক্ত করে ধরে গাড়ির ব্রেক চাপলো। গাড়িটা সোজা গিয়ে একটা কনস্ট্রাকশন সাইট এর উচু করে রাখা বালুর স্তূপের সাথে ধাক্কা খেল।
“বের হও….”
আবির রাই কে নিয়ে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে গেলো।

“আরে,,,,,,” গাড়ির পেছনের চাকা পাংচার হয়ে আছে। এজন্যই গাড়ি অভাবে নিয়ন্ত্রণ হারায়।
পেছনে আওয়াজ এলো অন্য একটা বাইক এর আসার। আবির আর রাই দুজনেই সেদিকে তাকালো ….. আবির রাই কে পেছনে ঠেলে দিল

“আমি যতক্ষণ নিচে না আসবো ততক্ষণ লুকিয়ে থাকবে বুঝলে….. ”

রাই কিছু বলবে তার আগেই “কোনো কথা। না একদম চুপ। যাও” বলে আবির যে বিল্ডিং এর কনস্ট্রাকশন হচ্ছিল সেই বিল্ডিং এর দিকে দৌড় দিল।

“আবির…..”রাই চিৎকার করে উঠলো। পেছনে তখনি সেই বাইক এর উপরে দেখা গেলো একটা ছেলেকে। বয়স আবিরের মতই হবে। ছেলেটা বাইক সজোরে ব্রেক করে ফেলে আবিরের যাওয়ার দিকেই দৌড় দিল। রাই প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গেল। আশেপাশে ও কেউ নেই। কনস্ট্রাকশন বোধহয় আজ বন্ধ। রাই কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা।

আবির গাড়িতে থাকাকালীন ই দেখেছে লোকটাকে ওকে ফলো করতে। হটাৎ এমন উদয়! যাইহোক আবির এখন ছাদের দিকে যাচ্ছে। আজ ব্যাস সামনাসামনি কথা হবে।
ছাদে আসতেই পেছন থেকে ছেলেটা ধাক্কা দিয়ে আবিরকে ফেলে দিল। আবির গিয়ে মাটিতে পড়ল। পেছনে ফিরতেই দেখে ছেলেটা আবিরের উপর হামলা করবে তখনি আবির সরে গেলো। ছেলেটা মাটিতে পড়ে যায়।

রাই কাপা কাপা গলায় রেজোয়ান সাহেব কে সবটা বললো। ওদিকে রেজোয়ান সাহেব পুলিশকে খবর দিয়ে বেরিয়ে গেলেন। রাই নিচ থেকে উপরে তাকিয়ে আছে। আবিরকে কোনোভাবেই দেখা যাচ্ছেনা। ও কি যাবে কি না ও জানেনা। কি করবে ও!

মারামারির এক পর্যায়ে আবির ছেলেটাকে পেছন থেকে শক্ত করে ধরলো ।

“নিশান ছাড় আমাকে….. ছাড়” ছেলেটা চেঁচিয়ে উঠলো।
আবির অবাক হলো “নিশান!”
ছেলেটা ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ওর দিকে ঘুরে তাকালো “হয় আজকে তুই বাঁচবি নইলে আমি নিশান….” বলে দৌড়ে আবিরের দিকে ছুটলো। আবির সরে গিয়ে ওকে আগের তুলনায় আরো শক্ত করে ধরলো “কে নিশান? আমি নিশান না….”

“চুপ কর,,,,, ছাড় আমাকে”

“আমি নিশান না। আমি আবির”
ছেলেটা এক মুহূর্তের জন্য একটু স্থির হলো। পরক্ষণে আবারো ছোটাছুটি শুরু করলো “নিশান ছাড় বলছি। তুই”

আবির ওকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিল “বলছি তো আমি নিশান না। আমি আবির……”

ছেলেটা উঠে দাড়ালো “আমি মানি না…..” বলে আবারো তেড়ে আসতে গেলেই আবির আবারো ওকে আছড়ে ফেলে “আমি নিশান না আমি আবির…. ওর বড়ো ভাই। ওর সাথে তোমার কি?”

ছেলেটা হাফাতে হাঁফাতে দাড়িয়ে পড়লো ” নিশান …. না???”

“নাহ…. আমি আবির। ওর বড়ো ভাই…. তুমি কে?”

ছেলেটার মুখ রেজ ফেটে গেলো “শিট… নিশান কই?”

“আগে বলো তুমি কে?”

“সেটা আপনার জানা লাগবে না…..”

আবির দুপা এগোলো “এতদিন ধরে মারার জন্য পেছনে পড়ে আছো আর আমার জানতে হবেনা?”

“আমি……( রাগ দমিয়ে) নিশান কে খুঁজছিলাম। ‘

“কেনো”

“মারবো বলে”
আবির এগিয়ে গিয়ে ওর গলা চেপে ধরলো “কেনো মারবে ওকে? কে তুমি?”

“ছাড়ো ছাড়ো বলছি….” আবির ছেড়ে দিতেই ছেলেটা কেশে উঠলো।

“বলো…..” আবির রেগে আছে।

ছেলেটা লম্বা লম্বা শ্বাস টানতে লাগলো “ও আমার অনেক বড়ো ক্ষতি করেছে। অনেক…..”

“যেমন?”

“আমি স্বর্ণার ভাই।”

আবির এর মুখে বিস্ময় খেলে গেলো …… কেননা স্বর্ণা সেই মেয়েটা যে ২ বছর আগে আবিরের নামে চরিত্রহীন এর গুজব ছড়িয়েছিল আরো কত কি নিশানের কথায়। আর আবির ওর বিরুদ্ধে লিগ্যাল অ্যাকশন নিয়েছিল।

“স্বর্ণার ভাই!”

“হুম….. ওই নিশানের জন্য আমার বোনটা এখন জেলে বসে আছে।”

আবির এগিয়ে গেলো “তুমি কি জানো তোমার বোন কি করেছিল?”

“জানিনা। আর না ও বলেছে। কিন্তু ও এটুকু বলেছে নিশানের জন্যই ওর এই অবস্থা। আমার বোনের কোনো দোষ নেই। বিনা দোষে…….”

আবির ওকে থামিয়ে দিল “যাকে নির্দোষ বলছো , সব থেকে বেশি সেই দোষী ছিলো…..”

ছেলেটা চমকে উঠলো “হোয়াট? কি বলতে চান?”

রাই এর বাবার আসার অপেক্ষা করতে পারলো না। ও ছুটে বিল্ডিং এর ভেতরে চলে গেল। ৭ তোলা বিল্ডিং। রাই প্রতি তলায় উঠে উঠে আবিরকে ডাকছে কিন্তু সাড়া নেই। হটাৎ আওয়াজ এলো ছাদের দিকে থেকে রাই সেদিকে উঠে গেলো।

ছেলেটা মাথায় হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে ……. ওর নিজেরই বিশ্বাসহচ্ছে না যে ওর বোন ই আসলে এই কাজ করেছিল।
আবির গম্ভীর স্বরে বলল “যখন ঘরের মানুষই ঠিক না থাকে , বাইরের মানুষকে ঠিক করে কি হবে?”

ছেলেটা ওর দিকে তাকালো । আবির গম্ভীর ভাব ধরে রেখেই বললো “তোমার বোন কে যদি বের করতে বলো , আমি ব্যবস্থা নিবো। কিন্তু আমার মনে হয় না সে সত্যি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। ”

ছেলেটা মাথা নাড়লো “নাহ….. ওকে ছাড়াতে হবেনা। নাহ।।।।। ওর শাস্তি ওকে পেতে হবে।”

“কিন্তু তুমিও তো একই বলতে গেলে আরো জঘন্য পথে যাচ্ছিলে”

ছেলেটার চোখ ছলছল করে উঠলো “ভাই, নিজের ভাই বোনের দুঃখ কি সত্যিই দেখা সম্ভব? যখন বিষয়টা এই পর্যায়ে যাবে?”

আবির ওর কাঁধে হাত রাখলো “কিন্তু যথাযথ কারণটা জেনে কাজ করা উচিত।”

“হুম, ভাই….” ছেলেটা আবিরের পা ধরতে গেলো….. আবির আটকে দিলো “আরে”

“ভাই আমাকে মাফ করেন. ।।। আমি আর কখনও….”

“আবির….” পেছনে রাই এসে দাড়িয়েছে মাত্রই। ছেলেটা ভয় পেয়ে আবিরের দিকে তাকালো। আবির রাই এর দিকে তাকিয়ে আছে।

“আবির…… প্লিজ আপনি ওকে কিছু করবেন না……” রাই এর হাত পা কাপছে। ছেলেটা আবিরের দিকে তাকালো। তখনি নিচে কেমন পুলিশের গাড়ির আওয়াজ এলো । আবির আর ছেলেটা দুজনেই চমকে উঠলো।

আবির ছেলেটার দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে কিছু একটা ইশারা করলো। কে কি করলো রাই জানেনা। ছেলেটা নিজের হুডি ক্যাপ টা টেনে মাথায় দিয়েই দৌড় দিল। রাই কে সরিয়ে ও সিড়ি দিয়ে নেমে গেলো।

“এই……” রাই চিৎকার করতে গেলেই আবির এসে রাই কে টেনে ধরলো “রাই….. ”

“আবির লোকটা পাকিয়ে গেল”

“রাই…..”

“আবির , লোকটা…..”

আবির শান্ত কণ্ঠে বললো “হলদেটিয়া …..” রাই এর মুখ নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে।
রাই একটু শান্ত হলো ….. কতদিন পর আবিরের মুখে ….. রাই কান্না করে আবিরকে জড়িয়ে ধরলো

“আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।খুব……”

আবির ওকে জড়িয়ে শান্ত করার চেষ্টা করলো।

“আমাকে মাফ করে দাও। সরি। আমি সত্যি তোমাকে হারাতে চাই না আবির। সত্যিই । আমি ভেবেছিলাম লোকটা তোমাকে (ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো রাই) ”

“কিচ্ছু হয়নি ”

“আবির বিশ্বাস করো আমি অনেক চাই তোমাকে…. হ্যাঁ।।।। আমি খুব খারাপ ব্যবহার করেছি। কিন্তু। ….. আমার কি দোষ বলো? আমিও তো….”

আবির রাই কে নিজের সামনে নিতে কপালে কপাল ঠেকালো “রাই…. তুমি যেটা করেছো সেটা স্বাভাবিক ছিলো। হ্যাঁ, তবে একটু কষ্ট দিয়েছ.. বটে”

রাই কাঁদতে কাঁদতেই আবিরের ডানহাতটা নিজের দুহাতে পুরে নিলো । আলতো করে হাতটাতে চুমু দিয়ে নিজের ডান চোখে একবার বাম চোখে একবার ছুঁইয়ে নিলো। অশ্রুসিক্ত চোখে আবিরের দিকে তাকালো রাই

“আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি, আবির……. অনেক…….. হারাতে চাইনা……. যেটা হয়েছে সেটা ভুল ছিল। কিন্তু আমার বর্তমান আর ভবিষ্যত্ দুটোই তুমি…… প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও……..”

বহু প্রতীক্ষিত এই কথাটুকু আজ আবিরের বিশ্বাসের বাইরে। ও কিছুক্ষন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো।

“সরি….. আমি এই ভুল বোঝাবুঝি তে থাকতে চাইনা প্লিজ …. যেটা হয়ে গেছে সেটা বদলানো যাবে না…. আমি জানিনা কে ভুল কে ঠিক। কিন্তু তুমি তো এখন আমার অস্তিত্বে মিশে আছো….. কিভাবে ভুলে যাবো বলো?”

আবির মুচকি হেসে রাই কে জড়িয়ে ধরলো । রাই হেসে উঠলো “সরি মুখ পোড়া………..”
“মাফ করলাম , হলদে টিয়া…..”

দুজনেই হেসে উঠলো। আবিরের মুখে এক অদ্ভুত তৃপ্ততার হাসি আজ। এর থেকে ভালো কিছুই হতে পারেনা। আকাশের পানে তাকিয়ে হটাৎ আবিরের চোখের সামনে একটা দৃশ্য ভেসে উঠলো

{
“আমি অনেক দূরে চলে যাওয়ার পরে নাহয় রাই কে আমার সত্যিটা বলে দিস… তোকে যেনো ও ভুল না বোঝে। কিন্তু (নিশানের কথা আটকে এলো) আমাকে ও …. যেনো….. ঘৃণা…. না করে”

“মাঝ খানটায় তুই এসেছিলি আমি না……….”

}

আবিরের মুখ খানা মলিন হয়ে এলো। থাক না কি দরকার নিশানের অতীত টেনে এনে রাই কে জানানো? কিছু কথা নাহয় আড়ালেই রয়ে যাক। হোক না সে খারাপ। কিন্তু কি দরকার তাকে তারই ভালোবাসার সামনে টেনে নিকৃষ্ট এর কাতারে ফেলার? ও তো অতীতটা ফেলে চলে গেছে বহুদূরে। থাক না বাকিটা ইতিহাসে গচ্ছিত, কোনো গহীন কোণে। কিন্তু কোনো এক জায়গায় একটা আফসোস রয়েই যাবে

“সত্যিই কি আমি তৃতীয় ব্যক্তিটি ছিলাম? ভুলটা কি আমারই তৈরি ছিলো!? ”
কে জানে?

খোলা জানালার পাশে বসে শূন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু খুঁজছে সুমি। কি সেটা তার অগোচর। তবে আজ বুকটা সত্যিই খুব ভারী হয়ে আছে, খুব মন চাচ্ছে মানুষটাকে চিৎকার করে কিছু অগোছালো মনের কথা বলে দিতে। আর কতদিন এই কথাগুলো জমিয়ে রাখবে সে মন কারাগারে? ছাড়া কি পাবেনা এরা? হাতে থাকা কালো ডাইরির পাতা উল্টে তাকালো সুমি। প্রত্যেকটা পাতায় তার প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে লেখা ছোট্ট ছোট্ট দুটো লাইন।

এক পাতায় লেখা “১২ আগস্ট…. তুমি আজ হলদে রঙের একটা পাঞ্জাবি পড়েছিলে……. হিমু বলবো না ….. উহু তুমি ছন্নছাড়া পথিক নও…… তবে রাজপুত্র বলবো…. যার রাজকুমারী এইখানেই বসে এই মুহূর্তে এই কথাগুলো লিখছে। ”

সুমির মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল। অপর পাতা উল্টে নিলো সে

“১৪ ই ফেব্রুয়ারি…… বুঝলে ? এই হলো তোমার স্বভাব , ছোট্ট থেকে দেখেছি মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করো। আজও আমাদের কাজিনদের সাথে গোলাপ নিয়ে কতই হাসি মজা করলে….. কই আমার সাথে করলে কি হতো? একটা গোলাপ ই তো….. নাহয় দিলে আমায়…… মন চায়না বুঝি?”

সুমির মুখ খানা মলিন হয়ে এলো।
পরের পাতা একটা উল্টোলো

“১৬ মার্চ, লাল রংটায় নিজেকে লেপ্টে এই যে আমাদের বাড়িতে এলে , প্রথমে তো ভেবেছিলাম রেগে আছো নাকি? আরে ঐযে , লাল যে রাগের প্রতীক। কিন্তু কই তুমি তো উল্টো হাসিমজায় ব্যস্ত হয়ে পড়লে। ”

“২ জুন, মাংসটা কিন্তু আমিই রান্না করেছিলাম। তুমি হয়ত ভেবেছ মায়ের রান্না। কিন্তু কই বুঝতেই পারলে না যে অজান্তেই আমার এতো প্রশংসা করে গেলে……..”

সুমি একসাথে অনেকগুলো পাতা উল্টোলো । সাদা পাতা, হাতের কাছের লাল কলমটা আঁকড়ে ধরলো ওর ডান হাতটা। অনেকদিন পর মন চাচ্ছে আজ ও কিছু লিখব। লিখতে চায়। কতদিন আর পুরনো লেখাগুলো পড়বে?

“৬ জুলাই……..
আজ আমার জন্মদিন…….
ভাগ্যিস তুমি নেই এখানে ….. নইলে পচা ডিম মারতে। (চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি কাগজে পড়লো)

তুমি নেই আজ এক সপ্তাহ। সেই যে গেলে না ফোন…. না বার্তা। কি হ্যাঁ ? আন্টির কথা মনে পড়েনা? আঙ্কেল ? আবির ভাই? আম্মু? আচ্ছা ঠিকাছে আমার কথা? (সুমির চোখ ভিজে এলো । চোখে ঝাপসা হয়ে গেলো সব)
কিভাবে মনে পড়বে? ওখানে ইংরেজি ম্যাডামদের পটিয়েছ হয়তো? হুম আমিও কি বোকা…. তোমাকে তো কখনো বলাই হয়ে উঠলো না…… কিভাবে জানবে বলো……”

লিখাটা রেখে সুমি কান্না করে দিল। চোখের পানিতে পুরো কাগজটা ভিজে গেছে। লাল কলমটা ও যেনো আজ নিজের কলি বিসর্জন দিয়ে সন্তুষ্ট নয়। কেননা আজ যে কারো মিষ্টি মনের কথা নয় , অথচ একরাশ দুঃখের বোঝা তাকে টানতে হচ্ছে।

চোখটা আলতো মুছে কাগজটার দিকে তাকালো সুমি।
একটানে ছিড়ে ফেললো এই কাগজটা….. দুমরে মুচড়ে কাগজটা জানালার বাইরে ফেলে দিল।

বেঞ্চে বসে শূন্যে তাকিয়ে ছিল নিশান। হটাৎ মাথায় কিছু একটা টোকা লাগলো।
ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে কতগুলো বাচ্চারা কাগজের বল নিয়ে খেলছে। তার একটা নিশানের পায়ের কাছে পড়ে।
রৌদ্রোজ্জ্বল বিকেল। পার্কে বসে নিশান একমনে কিছু ভাবছিল। তখনি কাগজটা ওর মাথায় লাগলো।

নিশান সামনের দিকে তাকালো । আজ এতদিন পর হটাৎ বাড়ির কথা মনে পড়ছে। কিন্তু নিশান যে সব ছেড়ে চলে এসেছে , চিরতরের জন্য। ওর চোখে ভেসে উঠলো রাই এর হাসিমাখা চেহারাটা। মুখে এক কিঞ্চিৎ হাসি এলো।
কিন্তু হায়, সেই শেষ স্মৃতিটা ও (ফোনটা) যে নিশান মিটিয়ে এসেছে। এখন যা আছে সব শুধুই ওর স্মৃতিতেই আবদ্ধ। এর বাইরে আর কিছুই যে ওর শেষ নেই……..

একে একে নিজের পুরনো সুখের স্মৃতিগুলো মনে করলো নিশান। আর মুখে এক তৃপ্তির হাসি নিয়ে বেঞ্চ ছেড়ে উঠে দাড়ালো। পকেটে দুহাত দিয়ে মাথাটা ঝুঁকিয়ে হাটতে শুরু করলো। কোথায়? যেদিকে দুচোখ যায়। এখন তো এই তার জীবন। আর এতেই নিশান খুশি।

“যেদিন ফিরবে সেদিন নাহয় মনের সুপ্ত অনুভূতিগুলো বিছিয়ে দিবো তোমার পথে। জানবে , কতটা ভালোবাসি…………..”

তোমারই অপেক্ষায়
নিশান?

লাল কলমটা শব্দ করে টেবিলে পড়ে গেলো। পেছনে উঠে নির্জীব পায়ে হেঁটে চলে গেলো সে।

জানালার বাতাসের দমকা হাওয়ায় ডাইরির পাতাগুলো উল্টে গেল। পেছনে একটা সুর বইতে থাকলো

“খোলা জানালায় দক্ষিণের বাতাসে,,,,,,
ঢেকে যায় পর্দার আড়ালে
কখন তুমি এসে হেসে বলে দাও
আছি তোমার ও পাশে

বহুদূর পথ, ভীষণ আঁকাবাঁকা
চলতে ভীষণ ভয়
তুমি এসে বলে দাও আছি পাশে
করোনা কিছুতেই ভয়।
কখনো ভাবিনি চলে যাবে তুমি আমাকে এভাবে কাঁদিয়ে
কখনো ভাবিনি ফিরে আসবেনা
আমার পৃথিবী রাঙিয়ে

অনেক পথের পথিক আমি
ক্লান্তি সর্বশেষ
তোমার পথের ঠিকানা খুঁজে
আমি আজ অবশেষে
তুমি আমার প্রথম ও শেষ
জীবনের ভালোবাসা
তোমার মাঝে তাইতো আমার জীবনের শত আশা
কখনো ভাবিনি চলে যাবে তুমি
আমাকে এভাবে কাঁদিয়ে
কখনো ভাবিনি ফিরে আসবেনা
আমার পৃথিবী রাঙিয়ে………?”

সমাপ্ত
???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here