#In_The_Depths_Of_Love
#Mizuki_Aura
#Part_13
বর্তমানে ________
সকালে ঘুম থেকে উঠে আবির দেখলো রাই ঘরে নেই। হয়তো বাহিরে গেছে। আবির ঘুমু ঘুমই চোখে উঠে বসলো। আর বিছানার দিকে তাকালো। আর ওর ঠোঁটে মুচকি হাসি ফুটে উঠল। সারাদিন এ যতই রাগ অভিমান থাকুক, দিন শেষে যে রাই কে আবির নিজের পাশে এইখানেই পায় এতেই ও খুশি। বিয়েটা যে এভাবে হয়েছিলো সেটা ভাবতেই অবাক লাগে। বিয়ের দিনেও রাই কতই না কান্নাকাটি করেছিল যে ও বিয়ে করতে চায়না। কিন্তু অবশেষে বিয়েটা হলোই। ঢাকায় আসার সময়ও রাই একই কাহিনী করেছিল। যাইহোক , এখন আর ওসব ভাবার দিন নেই।
রাই বাহিরে রান্নাঘরে , নিজের শাশুড়ি কে সাহায্য করছে। আর পাশে দাড়িয়ে ওর চাচী শ্বাশুড়ি শুধু মেয়ের খুদ বের করতেই ব্যস্ত। যদিও ফুপি বিভিন্ন ভাবে রাই এর প্রশংসা করছে কিন্তু এতে ওনাদের কোনো কিছুই যায় আসে না। তবে রাই ও শিখে গেছে মানিয়ে নেওয়া। চোখ কান বুজে কাজ করছে।
তখনি বাইরে থেকে ডাক এলো নিশান এর ” মা , খাবার দাও, বাইরে যাবো”
” এইতো…..” উনি রাই কে খাবারের প্লেট ধরিয়ে দিলেন ” যাও নিশান কে দিয়ে আসো”
রাই যদিও যেতে চাচ্ছে না, তবুও না করার উপায় নেই। চুপ করে প্লেট নাইট গিয়ে টেবিলে নিশানের সামনে দিলো। নিশান রাই এর দিকে তাকালো। রাই চোখ সরিয়ে নিলো। তখনি রেজোয়ান সাহেব এলেন ” গুড মর্নিং মামনি…..”
রাই মুচকি হাসলো ” গুড মর্নিং…..”
” তো আজ কি নাস্তা করা হচ্ছে?”
পেছন থেকে ফুপি বলে উঠলেন ” এইতো , আলুর দম আর পরোটা…..” বলে একে একে খাবার এনে টেবিলে রাখলেন।
রাই শাশুড়ি ও বেরিয়ে এলেন এসে বললেন ” নাও, খাবার বেড়ে দাও আর গিয়ে আম্মা ( আবিরের দাদী) কে ডেকে নিয়ে আসো…..”
রাই মাথা নাড়লো। আর চলে গেলো দাদীর ঘরে । এদিকে আবির তৈরি হচ্ছে। রাই দাদীকে খেতে আসতে বলেনিজের ঘরে গেলো ওর চুলগুলো খুলে গেছে , তাই ঠিক করতে। ও ঘরে ঢুকতেই দেখে আবির মাত্র শার্ট পরছে….. রাই চোখ নামিয়ে নিলো। লজ্জায়? আবির তা দেখে একটু বাঁকা হাসলো …… রাই চুল ঠিক করে যেই বেরোতে যাবে তখনি আবির পেছন থেকে ওর হাত টেনে ধরলো
” দাড়াও ……”
রাই থেমে গেলো। আস্তে আস্তে পেছনে ঘুরে তাকালো । আবির একটা ভাব নিয়ে বললো ” এখানে আসো….”
” কেনো?”
” সবসময় প্রশ্ন ” বলে আবিরই এগিয়ে গেলো ওর কাছে। আবিরকে আসতে দেখে রাই দুপা পেছবে কি আবির তা হতে দিলনা ” খেয়ে ফেলবো না…… ” বলে আবির ভ্রু কুঁচকে তাকালো । রাই একটা ঢোক গিলে নিলো ” তো……..”
” বোতাম গুলো লাগিয়ে দাও …..”
জনাব এমনভাবে বললো যেন উনি কোনো রাজ্যের রাজা , আর রাই কে অ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে রেখেছে ।
” হাত নেই? নাকি বলবেন চোখ নেই?” রাই বললো।
জবাবে আবির কিছুই বললো না , শুধু রাই কে চিরচেনা উপায়ে ভয় দিলো। মানে ওই আরকি ? নিজের মুখ এগোতে গেলেই রাই ওকে থামিয়ে দেয় ” হ্যাঁ দিচ্ছি তো ।।। আগেই এতো লাফান কেনো….” রাই মুখ ফুলিয়ে নিলো।
আবির ঠোঁট চেপে হাসছে। বেচারি । সহজেই হার স্বীকার করে নেয়। বিষয়টা খুবই বিব্রতকর , এভাবে আবিরের সামনে দাড়ানো আর …. নাহয় না বলি।
রাই কোনোভাবে নিজের চোখ দুটো শুধুই শার্ট এর ওপরে রাখল আর বোতামগুলো একে একে লাগিয়ে দিতে লাগলো।
কিন্তু ছেলেদের চিরচেনা স্বভাব। এতকাছে প্রেয়সিকে পেলে আর নিজের ভাবনায় নিয়ন্ত্রণ থাকেনা।
সেটাই হলো। রাই বোতামগুলো লাগিয়ে সরে আসতে গেলো কিন্তু আবির দিলনা। আবির ওকে জড়িয়ে ধরবে তার আগেই রাই ওকে সজোরে ধাক্কা দিলো।
ঘটনাচক্রে আবির এতটাই অবাক ও রাই এর দিকে তাকালো। কিন্তু সবথেকে বড়ো সত্য এটাই যে রাই এর চোখে এখনও শুধু ঘৃণাটাই বিদ্যমান। ও আবিরের দিকে রেগে তাকিয়ে আছে
” সবসময় কেনো কাছে আসতে হবে? জানেন না আমি আপনাকে কতটা ঘৃণা করি? আপনার প্রত্যেকটা ছোয়া আমার জন্য জ্বলন্ত অঙ্গার। ” বলে রাই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
পেছনে আবির নিরাশ্বাশ হয়ে তাকিয়ে রইলো।
.
.
.
বাহিরে আসতেই ওর শাশুড়ি শুরু হয়ে গেলেন ” একজনকে ডাকতে পাঠিয়েছিলাম মানে কি নিজেই হারিয়ে যাবে নাকি?”
ফুপি থামিয়ে দিলেন ” আহ্ ভাবি। রাই আসো….. খাবার বেড়ে দাও….”
রাই এগিয়ে গেলো। খাবার বেড়ে প্রথমে দাদী কে তারপর বাবা আর আস্তে আস্তে সবাই কেই খাবার বেড়ে দিলো।
এদিকে তখনি আবির ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। ছেলের এমন বেগ দেখে মা ডাক দিল ” কীরে এতো তাড়াহুড়োয় কোথায় যাচ্ছিস?”
আবির দাড়িয়ে গেলো তারপর মায়ের থেকে চোখ সরিয়ে নিলো ” বাবা আমিও আজ থেকে আবারো অফিস জয়েন করছি।”
রেজোয়ান সাহেব খাবার টুকু ও খেতে পারলো না এর আগেই আবিরের কথায় উনি বিষম খেলো ” কিহ্হঃ!! আজ থেকে মানে কি? ”
আবির এর মুখে স্পষ্ট রাগের ছাপ “মানে কি আরও ভেঙে বলতে হবে?”
ফুপি বললেন ” আরে তুই এভাবে কেনো বলছিস বাবা? আর এখন থেকে কেনো যাবি? ”
রেজোয়ান সাহেব ও বললেন ‘” ও বললেই হলো নাকি?বিয়ের এক মাসের আগে কাজে যেতে দিচ্ছি না”
রাই আবিরের দিকে তাকাতেই আবির চোখ সরিয়ে নিলো। এবার আবিরের মা বলে উঠলেন ” হুম , দেখো গিয়ে এই মেয়েই হয়তো আমার ছেলের মাথা খেয়েছে। আমার ছেলেটা দেখো কত রেগে আছে…….”
ওর চাচীও তাল মিলিয়ে উঠলেন ” হ্যাঁ দেখো তো ছেলের চেহারা…..”
রাই এর কষ্ট আরো বেড়ে যাচ্ছে। ও আবিরের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। এদিকে
আবিরের এই কথাগুলো সহ্য হচ্ছেনা। ও রেগে কিছু না বলেই বাসা থেকে হনহন করে বেরিয়ে গেলো ।
পেছনে সবাই ডেকে উঠলো ” আবির….. ”
রাই ওর যাওয়ার পানে চেয়ে রইলো। আর নিশান রাই এর দিকে।
__________________
আবির এতটাই রেগে যে কারো কোনো তোয়াক্কাই করছে না। অফিসে ঢুকেই বড়ো বড়ো কদম গেলে নিজের কেবিনের দিকে চলে গেলো। অফিসের স্টাফ এতটাই বিস্মিত যে বলার বাহিরে। কয়েকজন তো বলেই উঠলো ” স্যার তো ১ মাসের আগে আসবেন না বলে দিয়েছিলেন রেজোয়ান স্যার। তাহলে আজ হটাৎ?”
আরেকজন বলল ” তোরা স্যারের চেহারা দেখেছিস? এতো হাইপার ….”
” হুম….. না জানে কাকে ঝেড়ে ফেলে। এই কাজে যা সব”
সবাই যার যার কাজে গেলো।
কিছুক্ষন পরেই ভেতর থেকে আবিরের ডাক এলো স্টাফ দের জন্য। একেকজন ভয়ে ভয়ে নিজের ফাইল গুলো নিয়ে যেতে লাগলো।
আর আবির ইচ্ছেমত সবার ওপরে রাগ ঝেড়ে দিলো। যদিও ও এটা করতো না। কিন্তু একই সকালের রাগটা রয়ে গেছে আবার স্টাফরা একজন ও নিজেদের কাজগুলো ঠিকমতো করেনি। ফলে আবির এর রাগ তুঙ্গে উঠে গেলো।
ভেতর থেকে আবিরের ঝারাঝড়ি শুনে তো স্টাফরা ভিয়েই শেষ।
” আমি যাবনা বাবা, এই রিয়া আমার ফাইল দিয়ে আসিস” বলেই মেয়েটা দৌড় । রিয়া আবার আরেকজন কে ধরলো ” এই সৌরভ তুই ফাইলগুলো দিয়ে আসিস” বলে সে ও দৌড়।
” এই এই আমি ।।!” তার আগেই বাকিরাও নিজেদের ফাইল সৌরভের উপরে ছুটে ফেললো ” ভাই, দিয়ে আসিস একটু”
” তুই যা” বলে সব দৌড় এদিকে সৌরভ বেচারার কান্না চলে আসবে এমন ” আমাকে তোরা এভাবে ছেড়ে…..”
” সৌরভ…..” ভেতর থেকে আবিরের ডাক…… সৌরভ তো শেষ?
__________________
__________________
এদিকে রেজোয়ান সাহেব মাত্র বের হবেন অফিসের জন্য। কিন্তু তার আগে উনি বৌমার ঘরে গেলেন আর দরজায় টোকা দিলেন ” মে আই কাম ইন?”
রাই ঘুরে তাকায় ” আরে, বাবা আসেন না….. ”
” হাহা,,, না এখন তো আসার আগে একবার জিজ্ঞেস করতেই হয় কি বলো?”
” না, তবে আপনি চাইলে করতেই পারেন” মুচকি হাসে রাই।
রেজোয়ান সাহেব হেসে মেয়ের মাথায় হাত রাখেন ” একটা কথা সত্যি করে বলবে মা?”
‘ জ্বী বলেন….?”
” মা, আসলে দেখো কিছু মনে করো না। তবে …..”
রাই শোনার জন্য তাকিয়ে আছে।
” দেখো আমি জানি তোমার হয়তো অনেকটা অমতেই এই বিয়ে করতে হয়েছে। ”
রাই এর মুখ মলিন হয়ে এলো।
” তবে, হয়েছে তো। জানিনা আবির যেটা বলেছে সেটা সত্যি ছিলো কিনা। কিন্তু মা আমি তো তোকে এবাড়িতে আনতে চেয়েছিলাম যে কারণে আমি নিষেধ করি নি। কিন্তু এখন তো তোরা একটা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ই গেছিস। ”
” বাবা , আপনি কি অন্য কিছু বলতে চাচ্ছেন….?”
রেজোয়ান সাহেব মলিন হাসলেন “আবিরের সাথে কি তোর ঝগড়া হয়েছে? ”
রাই মাথা নাড়লো ” না”
” যাক না হলেই ভালো। কিন্তু আসলে আমার ছেলেটা একটু এমনই , জেদী। তবে কখনো জেদের বশে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেয় নি। হয়তো ও কখনো কখনো ছোটো বিষয়েও রেগে যেতে পারে, কিন্তু দেখবি তুই ওকে ভালো করে বুঝলে ও বুঝে যাবে”….
রাই মাথা নিচু করে রইলো। রেজোয়ান সাহেব আর কিছু বললেন না। ওকে বিদায় জানিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলেন। কিন্তু রাই নিজের ভাবনার জগতেই রয়ে গেলো।
.
.
.
” তুই এভাবে না খেয়েই চলে কেনো এলি?”
আবির বাবার কথায় ততটা কানে নিলো না, নিজের মতই কাজ করছে ল্যাপটপে। ওর বাবা গিয়ে ল্যাপটপটা বন্ধু করে দিলেন ” আমার দিকে তাকা”
আবির বিরক্তি নিয়ে তাকালো । উনি জিজ্ঞেস করলেন ” দেখ, তোর এই বাসার রাগের প্রভাব এখানে পড়ছে। স্টাফরা তো প্রায় ভোটই শেষ….”
আবির দাড়িয়ে টেবিলে হাত দিয়ে বাড়ি মারলো ” দোষ আমার না ওদের। এক সপ্তাহ অফিসে নেই বলে কাজের কি অবস্থা দেখো ….” বলে কতগুলো ফাইল বাবার সামনে দিলো আবির।
রেজোয়ান সাহেব ছেলের দিকে হতাশ চোখে তাকালেন ” মাই সন্ তোমার এখন একটু রেস্ট নেওয়া উচিত। এসব কাজ রাখো। এসেছি ভালো কথা বসে থাকো । লাগলে ইউটিউব খোলো আর ফানি ভিডিও দেখো। এসব আমার কাজ আমাকে দাও…. ( বলে ফাইলগুলো তুলে নিলেন ) চিল” বলে রেজোয়ান সাহেব কেবিন থেকে বেরিয়ে নিজের কেবিনে চলে গেলেন।
আবির চোখ দুটো বন্ধ করে চেয়ারে বসে পড়লো।
.
.
.
নীলা , ওর মা আর আবিরের মা তিনজন বৈঠকে বসেছে।
নীলার মা বললো ” দেখো আমি এখনও বলছি, ছেলেকে বুঝি সুঝিয়ে ডিভোর্স টা করিয়ে দাও। আমি তাও আমার মেয়েকে দিতে রাজি আছি। কিন্তু ওই মেয়ে রাই, ও কি কোনো বউ হলো নাকি। এই পরিবারের কেউই ওকে পছন্দ করেনা। আম্মা তো আরো না”
নীলা রেজ জ্বলছে ” কিন্তু যার করার কথা না সেই তো পছন্দ করে। আবির….. ও কিভাবে এরকম একটা মেয়ের প্রেমে পড়ল বলো। না আছে ক্লাস, না আমাদের লেভেলের। আর মা…..( মায়ের দিকে তাকিয়ে ন্যাকা সুরে) আমি কি ওর থেকে কম সুন্দরী? ইনফ্যাক্ট ও আমার সামনে কিছুই না তবুও কেনো আবির ওকেই বিয়ে করলো?”
আবিরের মা বলে উঠলেন ” বিয়ে করেছে কি আর সাধে? ওই ওর বাবা আর মিহির এর বাবা এরা মিলেই আমার ছেলের মাথা খেয়েছে। ”
নীলা মাথা নেড়ে বললো ” না ছোটমা। তোমার ছেলেকে কেউই বোঝায় নি। উল্টো ওই নাকিসবাইকে বুঝিয়ে বিয়ে করেছে”
আবিরের মা মানতে নারাজ ” অসম্ভব। আমার ছেলে এতও বোকা না , যে নিজের পায়ে নিজেই কোড়াল
মারবে। আমি মানি না”
(বি: দ্র: এই হলো বাঙালি শ্বাশুড়ি। ওনার ছেলে ধোয়া নিমপাতা আর বৌমা ব্যাঙের ছাতা….?)
নীলার মা বললেন ” থাক , এখন কে কি করেছে বাদ দাও। ওই মেয়েকে বিদায় করো তো। ”
এদিকে দাদী সবেমাত্রইই ওদের ঘরে পা রাখলো আর এই কথা কানে আসতেই উনি বললেন ” কি বলছো এসব তোমরা?”
দুই বউ দাড়িয়ে পড়লেন ” আম্মা, আপনি”
দাদী ভেতরে এলো ” এসব কি শুনছি বড়ো বউ?”
চাচী বলে উঠলেন ” আ, হ্যাঁ আম্মা ওই আমরা রাই কে নিয়ে….”
আবিরের মা নির্ভয়েই বললেন। “আম্মা.. আমরা রাই কে নিয়েই কথা বলছিলাম” ।
দাদী বললেন ” কথা বলছিলে? নাকি তাড়ানোর ফন্দি আটছিলে?”
“দাদু ( নীলা উঠে এলো) তুমিও তো রাই কে পছন্দ করো না । তাহলে সমস্যা কোথায়?”
দাদী একটু কঠোর গলায় বললেন “আমি পছন্দ করিনা তার কারণ আলাদা। আবির নিজের পছন্দে বিয়ে করেছে। একটাবার আমাকে ও বলেনি। তো অমন নাত বউ আমি মানি কিভাবে? কিন্তু তাই বলে একজনের সংসারে আগুন লাগানোর কাজ আমার বা তোমার কারোরই না। আবির যদি নিজের বউকে নিজের টাকায় পালতে পারে তাহলে তোমার আমার কি?”
ওনারা তিনজনই মাথা ঝুঁকিয়ে নিলেন ।
” আশা করি এ নিয়ে আর কোনো আলোচনা হবেনা ” বলে দাদী সেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।
.
.
.
.
রাত প্রায় ১১ টা।
রেজোয়ান সাহেব বাসায় এসে গেছেন রাত ৯ টায়। কিন্তু এখনও আবির আসেনি। ফুপি জিজ্ঞেস করলো ” ভাই আবির কখন আসবে?”
” আসেনি এখনও?” রেজোয়ান সাহেব অবাক হয়ে ফোন হাতে নিলেন ” বলেছিলো তো ১০ টার মধ্যেই এসে যাবে” উনি ফোন করছেন কিন্তু আবির ফোন তুলছে না। এদিকে রাই ঘরে বসে আছে। নিজেও ফুপির কোথায় দু তিনবার ফোন করেছিলো। কিন্তু আবির ফোন ধরে নি।
তখনি দরজায় বেল বেজে উঠলো । রাই বাহিরে গিয়ে দেখে আবির এসেছে। আবিরের মা জিজ্ঞেস করল ” এতো দেরি করলি যে?”
” কাজ ছিল” সংক্ষিপ্ত উত্তর। আবির এগোতে গেলেই ফুপি বললেন ” রাই খাবার বেড়ে গেলো আবিরের জন্য” রাই এগোবে তার আগেই আবির ভারী কণ্ঠে বললো ” আমি খেয়েই এসেছি। এখন আর খাবো না” বলে ও সোজা ঘরে চলে গেলো। সবাই রাই এর দিকে তাকালো।
রাই কি করবে বুঝতে পারলো না।
ঘরে গিয়ে দেখে আবির মুখ হাত ধুয়ে বের হলো মাত্র।
” আপনি কি সত্যিই খেয়ে এসেছেন?”
আবির রাই এর দিকে তাকালো না “হ্যাঁ। ভাবলাম তোমাকে আর এক্সট্রা কষ্ট না দেই। বাহির থেকেই খেয়ে আসি”
রাই খুব ভালই বুঝতে পারছে আবির কতটা অভিমান করেছে। কিন্তু কী বলবে সেটাই বুঝতে পারছে না “এখানে কষ্টের তো কিছুই নেই”
আবির হাতের টাওয়েল টা রেখে ঘুরে রাই এর দিকে এগোলো, রাই দুপা পিছিয়ে গেলো । আবির থেমে বললো ” ওই দুপা পিছিয়ে শুধু শুধু পা কে কেনো কষ্ট দেবে? তার থেকে ভালো আমিই পিছিয়ে যাই” ওর গম্ভীর গলা আর কথাগুলো এতই কঠিন যে রাই আর কিছু বলার ভাষাই হারিয়ে ফেললো।
বেরিয়ে এসে টেবিলের খাবারগুলো গুছিয়ে রেখে দিতে লাগলো রাই। ফুপি এসে বললেন ” কীরে ও খাবেনা?”
” না । খেয়ে এসেছেন”
” ওহ, তো তুই খেয়ে নে”
রাই এর হাত থেকে গেলো । মাথা নেড়ে বললো ” তুমি ঘুমাতে যাও। আমি খেয়ে নিব”
” সত্যিই তো?”
” হুম….”
ফুপি মিষ্টি করে একটা হাসি দিয়ে চলে গেলেন।
তবে রাই এর আর একা একা খেতে মন চাইলো না। আগে তো সবসময়ই বাবা মায়ের সাথে একসাথেই খেঁয়েছে। এখন কি আর একা গলার নিচে ভাত যাবে? খাবারগুলো ফ্রীজ এ তুলে , রাই চলে গেলো ঘরে।
আবির খাটে বসে ফোন চালাচ্ছে। রাই আজ কেনো যেনো শাড়ি পরে আর ঘুমাতে চাচ্ছেনা, গিয়ে আলমারি থেকে একটা থ্রিপিস বের করে নিল। আর চলে গেলো পাল্টাতে।
বাহিরে এসে দেখে আবির সেই আগের মতই ফোন চালাচ্ছে। তবে আজ আর রাই এর দিকে তাকালো না। রাই যদিও খুশি, যে ভালো হয়েছে ওর টর্চার সহ্য করা লাগবে না। কিন্তু কোথায় যেন একটা কিন্তু রয়ে যাচ্ছে। যাইহোক রাই গিয়ে চুল আঁচড়ে নিলো। কিন্তু এখনও আবির তাকায় নি। রাই গিয়ে লাইট অফ করে দিল। সাথে আবির ও ফোনটা রেখে হাই তুলে শুয়ে পড়লো।
” আশ্চর্য…. এতো রাগ!” রাই গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। কিন্তু আজ আর আবির ওকে কাছে টেনে নিল না। বরং মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিক ফিরে শুয়ে আছে।
রাই মনে মনে ভাবছে ” এর আগেও তো এভাবে বলেছি। কই তখন তো দূরে যায়নি। আজব মানুষ”
কিন্তু আবির সত্যিই আজ আর রাই এর দিকে ঘুরল না। যাইহোক রাই ঘুমিয়ে গেলো। রাতে রাই এর ঘুম হালকা ভেঙেছিল। ওর মনে হচ্ছিল ওর হাতপা নাড়তে পারছেনা। তবে ঘুমের মধ্যে আর কি বুঝবে? সপ্ন ভেবে ও ঘুমিয়ে গেলো।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে আবির বারান্দায় ফোন কথা বলছে। রাই উঠে গিয়ে যতটুকু শুনলো তাতে মনেহলো অফিসের কাজের কথা বলছে। যাক রাই ফ্রেশ হয়ে চলে গেলো বাইরে।
নাস্তার টেবিলে সবাই খাবার খাচ্ছে। আজও আবির বেরিয়ে যেতে গিয়েছিল। কিন্তু রেজোয়ান সাহেব দিলেন না। ফলে সবাই একসাথেই আছে।
রেজোয়ান সাহেব একটু অ্যাটেনশন নিয়ে বলে উঠলেন ” আচ্ছা , এখন যেহেতু আবির আবারো কাজে লেগে গেছে তো আর কি? আমাদের একটা ডিল এর ডেট দেওয়া হয়েছে আগামী সপ্তাহের সোমবার। আজ এমনিতেই বুধবার। যেতেও হবে কক্সবাজারে । তো চলো বেটা আজই নাহয় বেরিয়ে পড়ি…..”
কথা শুনেই আবির কেশে উঠলো । রেজোয়ান সাহেব ছেলেকে একগ্লাস পানি এগিয়ে দিল। রাই তো ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে। এদিকে সুমি আর ফুপি মুখ টিপে হাসছে। আবির বিস্ময় নিয়ে বললো ” আজই?”
” হ্যাঁ কেনো কোনো সমস্যা আছে নাকি? এমনিতেই তো তুমি এত স্পিডের সাথে কাজে নেমেই গেছো তো?”
ফুপি বললেন ” হ্যাঁ ভাই একদম ঠিক। বউ রেখে কাজ। যাও এবার , ”
সুমি বললো ” ঠিক। যা গিয়ে নোনাজলে ডুব দিয়ে আয়। তাতে যদি বুদ্ধি খোলে”
নিশান নিজের মতই খাচ্ছে।
রাই তো অবাক। “উনি চলে যাবে! এটা কেমন কথা? মানে ঠিকাছে যাবে, কিন্তু এখনি! কিন্তু ওকে রাই যাচ্ছে যাক না” মনে মনে বিড়বিড় করছে।
” তো আজই যাই। কাল আবার জ্যাম হবে অনেক রাস্তায়। এয়ারপোর্ট পৌঁছতেই জান বের হয়ে যাবে। যাও খেয়েই রেডি হয়ে নাও”
আবির আর রাই একে অন্যের দিকে তাকালো। আবির রাই এর চেহারা দেখে কি বুঝলো জানিনা, তবে ও নিজেও রাজি হয়ে গেলো ” ঠিকাছে। ফ্লাইট কখন?”
” এইতো ১ টায়”
আবির মাথা নাড়লো। এদিকে রাই তো এখনও ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। এটা কেমন কথা ভাই? হোয়াট???
আর রেজোয়ান সাহেব মনে মনে পৈশাচিক হাসি দিলেন ” চলো বাবা চলো। তোমার রাগ ছোটাচ্ছি। একেবারে সুদে আসলে তোমাকেও বুঝিয়ে দিব বউ কি জিনিস , আর আমার মেয়েকে ও ( রাই) বুঝিয়ে দিব স্বামী কি জিনিস । ঘোড়ার ডিম দুটোই জেদী। এখনও দেখো তাকিয়েই আছে। অথচ বলছে না বাবা যাবনা। ধুর”
আবির ঘরে সুটকেস এ কাপড় নিচ্ছে, আর রাই সোফায় বসে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। রাই হেল্প করতে গিয়েছিল কিন্তু আবির তো আবির ই । দিলো না। এখন তো রাই শুধু তাকিয়েই আছে
” এবাড়িতে এক আপনিই তো আছেন যে সবসময়ই আমার সাপোর্টে থাকেন। এখন আবার আপনি চলে গেলে আমি কি করবো? মানে ঠিকাছে পছন্দ করিনা। কিন্তু ওই নীলার চাইতে তো ভালই আছেন। ধুর ,,,, যান তো যান। এক সপ্তাহের জন্য আপনার ক্যাচক্যাচ থেকে মুক্তি। আহ….'” একদিকে যেমন মন খারাপ এর কথা তেমনি আবার নিজেকে সান্তনা দেওয়ার কথাও বলছে রাই। তবে নিজের মনে।
কিন্তু এমন না আবির কিছু বুঝতে পারছেনা। আবির আড়চোখে তাকিয়ে দেখছে যে রাই উসখুস করছে কিছু বলার জন্য কিন্তু বলতে পারছেনা। তাই আবির ও চুপ করে আছে।
রাই ও উঠে দাড়ালো। কিন্তু বলতে আর পারলো না।
আবির ব্যাগ রেখে একটা শার্ট বের করে নিলো , এদিকে রাই একটু একটু করে পায়চারি করছে। বলবে কি বলবে না? বলবে কি না?
আ” আবির তাকালো না। রাই চুপ করে গেলো।
কিন্তু কতক্ষন ?আবারো রাই আমতা আমতা করলো ” কতদিনের জন্য যাবেন এক্সাকটলি?”
আবির শার্ট পরতে পরতে বললো “বাবা জানে”
রাই আবারো দমে গেলো।
আবির আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল ঠিক করছে । রাই আবারো বললো
” তো…. আপনি যাচ্ছেন?”
আবির কপাল কুঁচকে আয়নার মাধ্যমেই রাই এর দিকে তাকালো।
রাই থতমত খেয়ে গেল ” এমনি… বললাম” রাই ঘুরে বেড়িয়ে গেলো ঘর থেকে।
________
দুপুর ১ টা।
সবাই ড্রইং রুমে জড়ো হয়েছে। রেজোয়ান সাহেব দাড়িয়ে। আবির আসছে না। রাই ও দাড়িয়ে। শেষে আবির ব্যাগ নিয়ে এলো। সবাইকেই বিদায় জানাচ্ছে কথা বলছে, কিন্তু রাই এর দিকে একবারও তাকালো না আবির। রাই পাশেই ছিল। আবির বললো ” আচ্ছা চল দেরি হয়ে যাবে”
রেজোয়ান সাহেব ও জানেন ছেলের কাজ। ” হ্যাঁ চল”
বেচারি মেয়েটার দিকে একবার তাকালোনা পর্যন্ত। রাই এর মুখ ছোট্ট হয়ে গেলো। যতই হোক, লোক দেখানোর নামে হলেও তো একটা বাই বলা উচিত ছিল রাই কে। কিন্তু ও!!!
” এতো রাগ!? লাগবে না আপনার বাই ….” রাই মুখ ফুলিয়ে ঘরে চলে গেল।
ওদিকে গাড়িতে বসে আবির অনেক্ষন ধরে লুকিং মিরোর দিয়ে নিজের ঘরের বারান্দার দিকে তাকিয়ে রইলো।
কিন্তু রাই আর বারান্দায় এলোনা।
গাড়িটাও চলতে শুরু করল।
এদিকে রাই গাড়ির স্টার্ট দেওয়ার আওয়াজ শুনলেও দাঁতে দাঁত চেপে ঘরেই বসে রইলো। ” হুহহ”
চলবে.✨✨✨✨✨
রাই এর সাথে এতো বড়ো অন্যায়! আবির কে বোম দিয়ে উড়ায় দিতে মন চাচ্ছে। কি বলেন সবাই???