#In_The_Depths_Of_Love
#Mizuki_Aura
#Part_12
প্রায় দুপুরের দিকেই বাড়িতে পৌঁছে গেলো সবাই। রাই এর মা খালা , খালু, বাবা সবাই মিহিরদের খুব সুন্দর করে আপ্যায়ন করেছে। নিশান এখনও শুধু রাই কে দেখেই যাচ্ছে। তবে কথা বলতে পারছেনা।
রাই বাড়িতে গিয়ে সোজা নিজের ঘরে চলে গেল।
এদিকে রেজোয়ান সাহেব মিহিরের বাবা বাড়ির বড়োদের সাথে কথা বলছে। যাক তখনকার মত তেমন কিছুই হলো না।
রাই এর মনটা বেশ খারাপ। কেনো তার নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। তবে একটা কথাই ওর মাথায় ঘুরছে, গতকাল সুরাইয়া যেগুলো বললো সেটা। আর এদিকে নিশান ও ওকে একা থাকতেই দিচ্ছে না। সুযোগ পেলেই কথা বলতে আসছে । এতে রাই খুবই বিরক্ত।
এদিকে আবির একদৃষ্টিতে জানালার
বাহিরে তাকিয়ে আছে। তখনি ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরলো। ওপাশ থেকে কেউ কিছু একটা বললো।
” আর যদি খবরটা ভুল হয়? ”
……………………
শুনে আবির ফোনটা রেখে দিল। ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটে উঠলো।
_____________
বিকেলে রাই ভাবলো একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসবে। ঘরে থাকতে ভালো লাগছেনা। যেই ভাবা সেই কাজ। বেরিয়ে পড়লো বাকি বোনদের নিয়ে।
বাহিরে অবশ্য উঠানে সবাই ছিলো। বিধায় মিহির এর বাবা ও দেখলো রাই কে বের হয়ে যেতে।
প্রায় ১ ঘণ্টা যাবৎ রাই আর মণি হাঁটাহাঁটি করেছে বাহিরে। আসরের আযান দেবে দেবে , এমন সময়েই ওরা বাড়ির প্রায় কাছাকাছি চলে এলো।
” এই রাই ওই গাড়িটা কার?” মণির কথায় রাই সামনে তাকালো। দেখে যে গাড়িতে ওরা সকালে এসেছে ঠিক তার পাশেই একটা কালো গাড়ি দাড়িয়ে। ” আমি কি জানি?”
” কেউ আসলো নাকি বাড়িতে? চল তো” বলে মণী রাই এর হাত ধরে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেলো।
বাড়িতে ঢুকতেই সবার আগে চোখে পড়লো বাড়ির সব মুরব্বিরা সহ ছোটো রাও উঠানে গম্ভীর মুখ নিয়ে দাড়িয়ে আছেন। যেনো খুব চিন্তিত , এতটাই চিন্তিত সকলে যে মাটির নিচে তাকিয়ে কিছু ভাবছেন। অপরদিকে এই চিন্তার সাগরের মাঝে দুটো মানুষের মুখভঙ্গি ভিন্ন।
এক রেজোয়ান সাহেব। যিনি খুব খুশি খুশি দেখাচ্ছেন। দ্বিতীয় মিহিরের বাবা , যার মুখে একটা রাগ রাগ ভাব বিরাজমান।
রাই আর মণি এগিয়ে গেলো । অন্য মানুষের উপস্থিতি টের পেয়ে সকলে সেদিকে তাকালো , অর্থাৎ রাই এর দিকে। সাথে সাথে যেনো সকলের চিন্তিত চেহারার অবসান ঘটিয়ে সেখানে একটা প্রশ্নমাখা প্রতিক্রিয়ার উদয় হলো। অন্তত রাই এর তো সেটাই মনে হচ্ছে।
মিহিরের বাবা বললেন ” নিন, এবার তো মেয়েও উপস্থিত, এবার বলেন”
রাই অবুঝের মতো তাকালো, কি হচ্ছে তা বোঝার জন্য।
রাই কে দেখে ওর মা এগিয়ে এলেন ।
চোখে মুখে অদ্ভুত এক বিস্ময় নিয়ে , কিন্তু এসে যা বললেন এর জন্য রাই মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।
” তোর বিয়ে হবে , আগামী পরশু। এখন থেকে তোর বাড়ি থেকে বেরোনো বন্ধ”
রাই কথাটাকে নিছকই মজা হিসেবেই দেখলো ” মা,,,, কি বলছো কি আমার……..”
” মজা মনে হচ্ছে? ” মায়ের মুখের এমন কঠিন শব্দচ্চরণ যেনো রাই এর মনে সন্দেহের সৃষ্টি করে গেল ” কি বলছো এসব!”
” কেনো তুই তো এটাই চাইতি…. তো যখন তোর মনের আশা পূরণ হচ্ছেই তখন তোর সমস্যা কি?”
রাই এর মাথা থেকে বিন্দু বিন্দু ঘাম ঝরছে ” মা….. কি হয়েছে তোমার কিসব বলছো তুমি? আর আমি কেনো নিয়ে করতে যাবো?”
” চুপ কর ( চেঁচিয়ে উঠলেন।) তোর বিয়ে হচ্ছে , তাও পরশুর মধ্যেই। মাথায় থাকে যেনো । ”
রাই এবার আর নিতে পারলো না ” খালামণি মা কি বলছে এসব? আর তোমরা এমনভাবে কেনো দাড়িয়ে আছো? কি হয়েছে বলবে তো?”
” এনারা কি বলবে আর? বলার মুখ কি তুমি রেখেছো?” বলে উঠলেন মিহিরের বাবা।
” আহ্ বাবা” মিহিরকে থামিয়ে দিল তার বাবা ” তুই চুপ কর। সত্যিটা তো আজ হোক কাল হোক সবার জানতেই হবে। তাহলে চুপ করে কেনো থাকবো?”‘
রেজোয়ান সাহেব অনেক থামিয়ে দিলেন ” দেখ তুই একটু শান্ত হো……”
” চুপ কর। তোর নিজের পেটের সন্তান ও তো একই কাজ করেছে। ” বলে উনি উঠে দাড়ালেন।
রাই এর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সবকিছু। রাই পাশে তাকিয়ে দেখে ওর বাবা একদম নিশ্চুপ বসে আছে। ওর খালা এসে বললো ” এসব করার আগে একবার হলেও তো বলতেই পারতি, আমরা কি কখনো তোর খারাপ চেয়েছি? বলেই দেখতি, বিষয়টা আমরাই ঠিক করে নিতাম ”
রাই এর মাথা ছিড়ে যাচ্ছে ” কি বলছো তোমরা সবাই? অন্তত খুলে বলো কোন বিষয়ে তোমরা আমার উপরে এতো ক্ষিপ্ত?”
রেজোয়ান সাহেব এগিয়ে এলেন ” মামনি , আমি যদিও খুশি কিন্তু ব্যাপারটা এমনভাবে না হলেই পারতো….. তুমি আমার ছেলেকে পছন্দ করো ভালো কথা একবার গুরুজনদের বলতে। তারা তো তোমাকে নিশ্চই সঠিক পরামর্শটাই দিত। ”
রাই দুপা পিছিয়ে গেলো। ওর মাথায় সোজা আকাশ ভেঙে পড়লো। নিশান এর কথা এনারা কিভাবে জানলেন? নাহ নিশান বলেছে নাকি? নিশান কেনো বলতে যাবে!? কিন্তু তাহলে কিভাবে জানলো? অসম্ভব।
মিহিরের বাবা বলে উঠলেন ” দেখো দেখো সবাই। এই মেয়ের মুখ দেখো। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে ও আসাই করেনি যে আমরা জানবো”
রাই স্তব্ধ হয়ে গেল। কি থেকে কি বলবে ও জানেনা। মণি সাহস করে কিছু বলতেও পারছেনা। কিন্তু কিছুই ওর ও মাথায় আসছে না। খালু বললেন ” ছি, তোকে সুরাইয়াকে দেখে আসার জন্য পাঠিয়েছিলাম আমরা আর তুই…..”
রাই এর চোখ ভিজে এলো। একেই কি বলে বাবা মায়ের অসম্মান করা? তাদের এক একটা কথা গায়ে লোহার গরম সিক ধরার থেকেও কষ্টের। এর চাইতে যন্ত্রণার কিছুই হতে পারেনা। রাই কষ্টে মাথা নিচু করে নিলো। ওর কিছুই বলার নেই। যদিও এখন ও নিশান কে এড়িয়ে চলে, কিন্তু একটা সময়ে তো দুজন সম্পর্কে ছিলই। হোক ক্ষণিকের জন্য।
” এখন মাথা ঝুঁকিতে কি হবে? যখন রাতে একা ঘরে একটা পরপুরুষের সাথে ছিলেন তখন মনে পড়ে নি এসব?” বলে হুংকার করে উঠলেন মিহিরের বাবা।
” বাবা….” মিহিরকে মোটামুটি দামই দিচ্ছেনা কেউ। ও কিছু বলতে গিয়েও বারবার থেমে যাচ্ছে বা যেতে হচ্ছে।
রেজোয়ান সাহেব গিয়ে বন্ধুকে ধরলেন ” চুপ কর। অনেক হয়েছে ”
রাই এর মা কষ্টে চোখ বন্ধ করে নিলেন। এবারে রাই যেনো ভেতর থেকে আরো ভেঙে গেলো।” ঠিকই তো , রাতে একটা পরপুরুষের সাথে ছিলাম আমি , ছি” কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো রাই। বলার কিছু নেই। যা সত্য তা সবার সামনেই এসেছে।
রেজোয়ান সাহেব বললেন ” মা , দেখো যতই তুমি একজনকে ভালোবাসো বা পছন্দই করো কিন্তু মানুষের মাঝে একটা মিনিমাম লিমিটেশন থাকা উচিত। যতই তুমি কাওকে চেনোনা কেনো। ”
রাই এর চোখ থেকে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল। কষ্টে বুকটা ফেটে আসছে। অথচ আজ কেউ নেই ওকে একটু সামলানোর। রেজোয়ান সাহেব আরো বলেন
” তুমি যখন আবিরকে পছন্দ করতেই তখন আমাকে বললেই পারতে , যদি বাবা মা না মানত আমি মানিয়ে নিতাম। কিন্তু তোমরা দুজন এটা কি করলে?”
রাই কি কানে ভুল শুনলো ? আবির! আবির কে কিভাবে? না ও তো নিশান কে …… রাই মুখ তুলে অস্ফুট স্বরে বলল ” আবির!”
খালামণি বললেন ” তুই আর আবির যখন একে অন্যকে পছন্দ করিস , বললেই পারতি অন্তত আজ এক বাহিরের মানুষের মুখে তোর নামের এসব কথা শুনতে হতো না। ”
রাই এর গলা আটকে এসেছে ও দ্রুত মাথা নাড়লো ” না…… না”
মিহিরের বাবা ক্রোধান্বিত নজরে তাকালেন ” দেখো দেখো এত সাহস এই মেয়ের বড়ো ছেলেকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে আবার ছোটো ছেলের সাথে ফষ্টিনষ্টি করে তাও কিনা না না করছে। ছি”
রাই এর মা কেঁদে উঠলেন। ওর বাবা উঠে ওখান থেকে চলে গেলো। ওনার এসব কথা সহ্যই হচ্ছেনা।
রাই একের পর এক এসব মিথ্যে অপবাদ সহ্য করতেই পারছেনা ” আমি আবিরকে ভালোবাসি না ।।। না” ওর কান্নার বেগ বেড়ে গেলো।
আবিরকে ত ও সত্যিই ভালোবাসে না। তাহলে সবাই আবিরের কথা কিভাবে পেলো?!
” চরিত্রহীনা । না জানে কার কার সাথে কি কি করেছে”
মিহিরের বাবার এই কথাটায় সবার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো । রাই এর মা সজোরে ওর গেল চড় বসিয়ে দিলেন ” এটাও আজ আমায় শুনতে হলো”
রাই তাল সামলাতে না পেরে পেছনে পড়ে যেতে গেলেই কেউ ওকে ধরে ফেললো। রাই এর চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে। ও অস্রুমাখা চোখ নিয়ে উপরে তাকালো। আবির দাড়িয়ে।
আবির ওকে ধরে ওর ভেজা চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। পেছন থেকে ওর মা বললো ” আগামী তিনদিন পরেই তোর আবিরের সাথে বিয়ে হয়ে যাবে। এটাই তো চাইছিলি নে, হয়ে যাবে”
রাই ঘুরে মায়ের কাছে গেলো ” মা, আমি সত্যিই আবিরকে ভালোবাসি না। মা বিশ্বাস করো অন্তত এটুকু বিশ্বাস করো”
ওর মা ওকে দূরে সরিয়ে দিল। রাই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো ” তোমরা সবাই একটা ( গলা জড়িয়ে ধরলো) কেনো কেনো………. বিশ্বাস করো আমি……. না” ও পুরো কথাটাও শেষ করতে পারছে না। ওর মাথাটা ঘুরছে।
পেছন থেকে আবির বলে উঠলো ” রাই কেনো শুধু শুধু লুকোনোর চেষ্টা করছো? এখন সবাই জানে, আর সবাই মেনে ও নিয়েছে। ”
রাই রেগে ওর দিকে তেড়ে গেলো ” আপনি আপনিই সবাই কে বলেছেন না। যে আমাদের ……” ওর শার্টের কলার চেপে ধরলো রাই।
আবির সবার চোখের আড়ালে রাই এর দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকালো ” হ্যাঁ আমিই বলেছি…..” কথাটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে আবির কত বড়ো গেম খেলেছে। রাই এর চোখ বিস্ফোরিত হলো। আবির নিজের চেহারার বাকা হাসি সরিয়ে সবার দিকে তাকালো ” হুম , রাই আমি বলে দিয়েছি যে সেদিন রাতে তোমার ঘরে আমিই ছিলাম। শুধুই তোমাকে একটু দেখতে গিয়েছিলাম। আর কিছুইনা। কিন্তু তুমি আমাকে চলে যেতে বলেছিলে। আমিই যাইনি। ” কথাগুলো মিহিরের বাবার দিকে তাকিয়ে বলল আবির।
মিহিরের বাবা চোখ সরিয়ে নিলেন । আবির ওর মা কে উদ্দেশ্য করে বললো ” এখানে তোমার কোনো দোষই ছিলনা। তবে ভুল সময়ে , ভুল মানুষটা আমাদের আআওয়াজ শুনে ফেলে বিধায় এমন ধারণার উৎপত্তি”
রাই এর মা বলে উঠলেন ” ওর দোষ নেই? ও যে তখন তোমাকে নিজের কাছে আসতে দিয়েছে এর থেকে বড়ো আর কি চাও?”
রাই এর হাত আলগা হয়ে এলো। অসহায় চোখে মায়ের দিকে তাকালো। সবাই কি সুন্দর কতগুলো ভুল ধারণা নিয়ে ব্যস্ত। অথচ কেউ ওকে একবারও জিজ্ঞেস করলো না যে ও কি করেছে ওর মুখ থেকে বলুক।
আবির এর বিপক্ষে কিছু বললো না। থাক । কিছু কথার উত্তর না দেওয়াই ভালো। রাই আবিরের কলার ছেড়ে দিল। পাশে তখনি নিশান এসে দাড়ালো। রাই নিশানের দিকে শূন্য চোখে তাকালো। নিশান কিছু বলতে গিয়েও যেনো থেমে গেলো। কেনো? সেটা রাই বুঝলো না। রাই এর চোখ চিৎকার করে বলছে নিশান তুমি বলে দাও এরা যা ভাবছে সেটা ভুল। আমি তো তোমাকে পছন্দ করেছিলাম। কিন্তু এরা কেনো বলছে আবিরের কথা? কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে হলেও নিশান চুপ।
এদিকে নিশানের মনে চলছে এক অন্যরকম ঝড়। না পারছে কিছু বলতে না পারছে রাই এর এমন অবস্থা দেখতে। ও যে বাধ্য ।
এদিকে রাই বুঝে গেছে নিশান এর মতলব। ও চুপ করে আছে। মানে ওর মনে কোনো ভালোবাসাই নেই। রাই
আরো একটা ধাক্কা খেল। কিন্তু এবারে আর কিছু বলার সাহস ওর মধ্যে অবশিষ্ট নেই। এদিকে সবাই একের পর এক কথা শুনিয়ে যাচ্ছে । উপদেশ দিচ্ছে। অথচ যে কাজটা ও করেই নি সেটার জন্য ওকে এত কথা শুনতে হচ্ছে। রেজোয়ান সাহেব বললেন ” আচ্ছা তোমরা সবাই এসব ভুলে যাও। দেখো ওরা ছোটো। এতকিছু বোঝে নি। হয়তো ভেবেছিল আমরা মানব না তাই বলেনি। এখন সব বাদ থাক। আমরা ওদের বিয়ে দিয়ে দিলেই তো সব ঠিক হয়ে যাচ্ছে”
মিহিরের বাবা খোটা মেরে বললেন ” হ্যা এখন তো এটাই করতে হবে। তাছাড়া উপায় নেই। না জানে পরে কি করে বসে। ” বলে উনি চলে গেলেন। নিশান মাথা ঝুঁকিয়ে নিল। যদিও বলতে চাচ্ছে অনেক কিছু। কিন্তু কিছু একটার জন্য ও থেমে যাচ্ছে বারবার।
রাই এর মা ওখান থেকে চলে গেলেন।
রাই এর পা কাঁপছে। দাড়িয়ে থাকা দায়। মাথাটা এমনভাবে ঘুরছে যে ও আর না পেরে মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো ” আমি এটা করিনি। তোমরা ভুল ভাবছো” বিড়বিড় করতে লাগলো।
উপস্থিত সকলেই আর কথা বাড়ালো না। ওখান থেকে চলে গেলো। শুধু দাড়িয়ে রইলো আবির , নিশান এর রাই। মণির এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। মণি এগিয়ে রাই কে ধরতে গেলেই রাই মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। ওর আর কিছুই মনে নেই।
__________________
টিপটিপ করে চোখ খুললো রাই। মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা করছে।
আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো ও নিজের ঘরেই শুয়ে আছে। পাশে তাকিয়ে দেখলো মণি ওর হাত ধরে বসে আছে। আর কেউই নেই। বিকেলের কথা মনে পরতেই রাই এর চোখে আবারো পানি চলে এলো। মণি ওর হাতটা চেপে ধরলো ” উঠেছিস”
রাই আস্তে আস্তে করে উঠে মণি কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আর হো হো করে কেঁদে উঠলো।
” কাঁদিস না। ” ওকে স্বান্তনা দেওয়ার যতই চেষ্টা করুক মণি কিন্তু পারলনা। ও কেঁদেই যাচ্ছে। ” দ্যাখ কাঁদিস না। দাড়া আমি কাকী কে ( রাই এর মা ) ডেকে আনি। ”
রাই ওর হাত ধরে থামিয়ে দিল। ” নাহ….. কোন মুখে কথা বলবো? ”
মণি অবাক হলো ” দাড়া মানে তোর রিলেশন ছিলো আবিরের সাথে?”
রাই কেঁদে উঠলো ” না। ( মাথা নারছে) না”
” তো?”
” আমি নিশানকে পছন্দ করে ফেলেছিলাম। কিন্তু ……”
” কিন্তু?”
” কিন্তু , পরে আমি বুঝতে পারি ও ভালো না। তাই ওকে ….” বলে ও কেঁদে উঠলো
মণি ওকে জড়িয়ে নিলো ” তারমানে কি ভাইয়ার বাবা ( মিহিরের বাবা) মিথ্যে বলেছেন?”
” আমি জানিনা। উনি হয়ত ভুল দেখেছেন”
মণি কিছুটা ভাবলো। তারপর বললো ” জানিস আবির ভাইয়ের সাথে তোর বিয়ে কেনো হচ্ছে?”
রাই একটু কান্না থামলো। তবে এখনও গলা জড়িয়ে রয়েছে। মণি বললো ” যতটুকু শুনেছি আমরা বিকেলে বের হওয়ার পর নাকি মিহির ভাইয়ার বাবা সবাইকে তোর নামে এসব বলেছে। প্রথমে তো কেউই বিশ্বাস করেনি। কিন্তু পরে নাকি আবির ভাইয়া এসে সবাইকে বলেছে যে তোদের মধ্যে সম্পর্ক আছে। ছিল না , আছে। আর সবাইকে অনুরোধ করে যেনো ওর সাথেই তোর বিয়েটা হয়। ফলে সবাই বিশ্বাস করেছে”
রাই মাথা নেড়ে বললো ” না। ওর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই”
” কিন্তু কথা হলো ভাইয়া এটা কেনো বললো!?”
তখনি দরজা টা খুলে গেলো। দুজনে তাকিয়ে দেখে আবির ভেতরে আসছে। মণি দাড়িয়ে পড়লো। রাই চোখ মুছে নিল। আবির ভেতরে এসে বললো “ঠিক আধা ঘণ্টা পরে নিচের সবাইকে এঘরে পাঠিয়ে দিবে”
মণি মাথা নাড়লো। আর ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। রাই খাটে গুটি শুটি করে বসে গেলো। আবির একপা একপা এগোতে লাগলো।
” যান এখান থেকে। যান”
কিন্তু আবির থামছে না।
রাইয়ের সামনে এসে বসলো ও। রাই ঘৃণায় মুখ ঘুরিয়ে নিল। আবির ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। রাই ঘৃণার সহিত বললো ” কেনো করলেন এমন? কেনো বললেন সবাইকে এমন মিথ্যে? আমার সাথে এসব গেম কেনো খেলছেন? কেনো করলেন এমন?”
রাই প্রায় কান্নায় ভেঙে পড়েছে।
এমন সময় আবির প্রচণ্ড রেগে রাই এর মুখ হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরলো আর খাটের সাথে ওকে চেপে ধরলো
” কেনো করেছি? প্রশ্নটা তো আমার করা উচিত তোমাকে……”
রাই ব্যথায় মুখ ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু আবির ছাড়ছে না। আবির বলতে লাগলো
” অবাক হচ্ছো? আমিও অবাক হয়েছিলাম। জানো খুব অবাক হয়েছিলাম। যখন আঙ্কেল ( মিহিরের বাবা) এর মুখে শুনলাম যে রাতে তোমার ঘরে কোনো ছেলে ছিল। নিশ্চই সেটা নিশান ই ছিলো? কি ঠিক না? ”
রাই এর অনেক কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আবির ও এই মুহূর্তে প্রচুর রেগে আছে যা বলার মত নয়। আবির ওর মুখটা ছেড়ে হাত চেপে ধরলো
” বলো …… ওহ কি বলবে? বলার মুখ থাকলে তো……. ”
রাই কাঁদছে।
” একটা ছেলে তখনি একটা মেয়ের কাছে আসতে পারে যখন মেয়েটা চায়। এর আগে তাকে মেরে ফেললেও সেই মেয়ে কোনো ছেলেকে কাছে আসতে দেয়না।
যে নারী নিজেকে কুনজরের হাতে নিজেই সোপে দেয় তার কোনো আত্মসম্মান থাকেনা। সে শুধুই একটা নষ্টা হোয়েই রয়ে যায়। নারীর আত্মসম্মান তার গৌরব। বিক্রি করার জিনিস নয়। দেহ বিলিয়ে দেওয়া যদি ভালোবাসা হতো তাহলে এই বিশ্বের প্রত্যেক নষ্টা ভালোবাসার দৃষ্টান্ত কায়েম করতো।”
রাই ভেতর থেকে পুরো শেষ হয়ে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত এটাও তাকে শুনতে হলো। তবে কথাগুলো তো সত্যিই। আবির রাই কে ছেড়ে দিল। আর বড়ো বড়ো নিশ্বাস ছাড়তে লাগলো। সত্যিই এই প্রথম আবির এতটা রেগেছে। আর রাগবে নাই বা কেনো। যেটা ওর শুনতে হয়েছে সেটা তো এত ভালো কথা ছিল না।
রাই কাঁদতে কাঁদতে মাথা ঝুঁকিয়ে নিল। ওর চারপাশ অন্ধকার লাগছে। সত্যিই ও বিরাট একটা ভুল করে বসেছে। অনেক বড়ো। এভাবে ওর কাওকে কাছে আসতে দেওয়া উচিত হয় নি। কাঁদতে কাঁদতে কখন যে আবিরের বুকের ওপর মাথা এলিয়ে দিয়েছে ও জানেনা।
” আমি , বুঝতে পারিনি…..( কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছে) আমি…..”
রাই কে থামিয়ে দিল আবির। ওর মাথায় হাত রেখে বলল
” হোক সে আমার ভাই। কিন্তু তোমার তো কিছু হয়না…… কখনো কখনো মানুষ কখনো নিজের গ্যারান্টি দিতে পারেনা, সেখানে অন্য একজন তো দূরের কথা। হোক সে নিজেরই রক্ত। আর কারো না। কিন্তু মেয়েদের এটা বোঝা উচিত। কেনো এই ছোট্ট একটা কথা তোমার মাথায় ছিলনা? ”
রাই অঝোরে কেঁদেই যাচ্ছে। বলা হয় কাঁদলে মন হালকা হয় কিন্তু এখন তো ক্রমশই মন মস্তিষ্ক ভারী হয়ে যাচ্ছে। কোনোভাবেই নিজেকে হাল্কা করতে পারছেই না।
আবির তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো “অবশ্য তোমার বয়স এমন, এই বয়সে যুক্তির থেকে আবেগটাই বেশি কাজ করে। কিন্তু সত্যিই কি আবেগের জোর এতই বেশি?”
রাই অশ্রু সিক্ত চোখে তাকালো। আবির নিজের থেকে রাই কে সরিয়ে নিলো । রাই ভেজা ভেজা কণ্ঠে বললো ” কেনো আপনি বিয়ে করতে চাচ্ছেন? কেনো?”
আবির হালকা হাসলো “আমি খুবই খারাপ । আমার সাথে যার ভাগ্যের রেখা মিলেছে সে অনেক কষ্ট থাকবে। ” বলে আবির রাই এর মুখের ঠিক সামনে এগিয়ে গেলো আর কঠোর গলায় বলল ” ওয়েলকাম , টু মাই হেল….. মিসেস চৌধুরী”
রাই এর বুকটা ধক করে উঠলো। মুহূর্তেই যেনো চোখের সামনে অধার ছেয়ে গেলো। নিজের বলা কথাটা যে এভাবে ঘুরে ওর কাছেই আসবে হয়তো সেটা ও ভাবে নি।
আবির নিজের আগের কঠিন চোখ নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। পেছনে একটা শূন্য অনুভূিত সম্পন্ন মানুষ তার শুকিয়ে যাওয়া চোখে তাকিয়ে রইলো।
___________________বর্তমানে
সেদিনের আবিরের সেই কথাটা মাথায় আসতেই রাই চমকে চোখ দুটো খুলে ফেললো। সেদিনের মত ভয়াবহ আবিরকে রাই আর কখনোই দেখে নি। পাশে ঘুরে দেখে আবির রাই কে জড়িয়ে ধরেই ঘুমিয়ে আছে।
সত্যিই খুব অবাক লাগে, একটা মানুষ কিভাবে এত রহস্যময়ী হতে পারে? কিভাবে?
” আজও বুঝলাম না , আপনি আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন , নাকি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য…… আজও বুঝিনি” বিড়বিড় করে বললো রাই।
সামনে আবিরের ঘুমে বিভোর মুখটা …………
চলবে????
প্রশ্ন থাকলে প্রাণ ঝাল চানাচুর খান। আপাতত এটুকুই। বাকিটা ইনশাআল্লাহ বাইচা থাকলে কালকে দিমু। বড়ো কইরাই লিখসি। তবুও কেউ কেউ বলবা মন ভরে নাই। ? তাদের জন্য প্রাণ পটেটো চিপস ?আর বাদাম ??