লাভ গেম পর্ব-৩৪

0
975

#লাভ_গেম
#ফাবিহা_নওশীন

৩৪.

আদ্রিশ আর সেজান অফিস থেকে ফিরেছে। ওরা মেইন ডোর দিয়ে কথা বলতে বলতে ঢুকছে। রুশা অনুভূতি শূন্য হয়ে উঠে দাঁড়াল। ওর মনে হচ্ছে ভেতরে, বাহিরে কিছু নেই। হাওয়ায় ভাসছে। কিছু ভাবতেও পারছে না। চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। দু পা এগিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল। আদ্রিশ আর সেজান এগিয়ে আসতে আসতে কথা রুশাকে ধরে বলল,
“আপু কী হয়েছে? কীভাবে পড়লে?”

রুশা কিছু বলল না। কথাকে সরিয়ে নিজেই উঠে দাঁড়াল। কথা, আদ্রিশ, সেজান ওকে অবাক চোখে দেখছে। রুশাকে স্বাভাবিক নয় বিধ্বস্ত লাগছে। ওর কিছু একটা হয়েছে। আদ্রিশ ওর দিকে এগিয়ে এল। রুশা ঘরের দিকে যাচ্ছে আর বিরবির করে একা একাই বলল,
“ভাই ভাইকে কী করে খুন করতে পারে? বাবার মতো ভাইকে খুন করতে হাত কাঁপেনি? ছোট থেকে যে মানুষ করল তাকে মারতে বিবেকে বাঁধেনি? আমি বিশ্বাস করি না। সব মিথ্যা। হ্যা, সব মিথ্যা।”

রুশা সিড়ি দিয়ে উঠে যাচ্ছে। আদ্রিশ এক পলকে ওর দিকে চেয়ে আছে। সেজান কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“ভাই, ভাবি কী বলছেন?”

“যা ভেবেছিলাম তাই। শান প্রকৃত খুনি। আর রুশা তার প্রমাণ পেয়ে গেছে। ও শকে আছে। ছিহ! ভাই হয়ে ভাইকে খুন করল? আর সে দায়ভার আমার উপর চাঁপিয়ে দিল। এক মাত্র বোনকে আমার পেছনে লেলিয়ে দিল। শান রুশাকেও ভালোবাসে না। যদি ভালো বাসত তবে রিক্স নিয়ে আমার কাছে পাঠাতো না। শান খুব ভালো করে চিনে আমাকে। এতগুলো দিন রুশার রাগকে পুঁজি করে আমার বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে। রুশাকে বলেছিলাম আফসোস করতে হবে এখন তাই করছে।”

রুশা দরজা বন্ধ করে দিল। হোঁচট খেয়ে আবারও মেঝেতে পড়ে গেল কিন্তু উঠল না। চিৎকার করে কাঁদছে। ও কিছুতেই মানতে পারছে না। সবকিছু বিষাদ লাগছে। রাগে, কষ্টে দু’হাতে নিজের চুল ধরে টানছে আর কাঁদছে৷ ও হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। দুই হাতের নখ দিয়ে নিজের দুই হাত, গাল আঁচড় কাটছে। ব্যথা, যন্ত্রণা যেন ফুরিয়ে গেছে। গাল, দুই হাত, শরীর খাঁমচে রক্তাক্ত করে ফেলেছে। মেঝেতে দুই হাত দিয়ে ঘুঁষি মারছে। হাত ফেটে রক্ত পড়ছে। ওর চিৎকার করে কান্নার শব্দ নিচে চলে গেছে। রুশা উঠে দাঁড়িয়ে ঘরের জিনিসটা ছুড়ে মারছে। ওর সবকিছু বিষাক্ত লাগছে। মুক্তি পেতে ইচ্ছে করছে সবকিছু থেকে। ও কিছুতেই মানতে পারছে যে ভাইকে এত ভালোবাসে, বিশ্বাস করে সে আরেক ভাইকে মেরে ফেলেছে। আর ওকে মিথ্যা বলে, নিজের স্বার্থের জন্য ব্যবহার করেছে৷ প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে এতদিন কি কি না করেছে। আদ্রিশ বারবার বলা স্বত্তেও বিশ্বাস করেনি ওকে। ওর সামনে কোন মুখে গিয়ে দাঁড়াবে। রুশা জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। ওর দম বন্ধ হয়ে আসছে। ঘেমে-নেয়ে একাকার হয়ে গেছে। হাত থেকে রক্ত ঝড়ছে। এই মুহুর্তে ওর কারো কথা মাথায় আসছে না, কারো কথা ভাবতে পারছে না। পাগলের মতো আচরণ করছে। ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় ডান হাত দিয়ে সজোরে আঘাত করল। ঝনঝন শব্দে কাচের টুকরো নিচে পড়ে গেল।

কিছু ভাঙার শব্দে আদ্রিশ উপরের দিকে তাকাল। অজানা আতঙ্কে বুক কেঁপে উঠে। দৌড়ে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেল। দরজা বন্ধ। ভেতরে থেকে গোঙানির শব্দ আসছে। আদ্রিশ দরজা খোলার অপেক্ষা না করে দরজায় কয়েকটা লাথি মারল। তিন চারবার লাথি মারার পর দরজা খুলে গেল। রুশা চোখে ঝাপসা দেখছে৷ পুরো পৃথিবী দুলছে। হাত, পা, গাল, কপাল, মাথা, গলা বিভিন্ন জায়গা দিয়ে রক্ত ঝড়ছে। আদ্রিশ ওকে দেখে আতংকিত হয়ে তাকাল। রুশা যে নিজের সাথে এমন কিছু করবে ঘূর্ণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি। আদ্রিশ দৌড়ে এসে ওকে ধরতে ধরতে রুশা মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে৷ আদ্রিশ রুশার মাথা তুলে নিয়ে বারবার ওর নাম ধরে ডাকছে। রুশা বন্ধ চোখে বিরবির করে বলছে,
“আমি বাঁচতে চাই না।”

সেজান আর কথাও চলে এসেছে। রুশার অবস্থা দেখে সবাই ভয় পেয়ে গেল। কেউ ভাবতে পারেনি রুশা এমন কিছু করবে। আদ্রিশ রুশাকে বারবার ধাক্কা দিচ্ছে। কিন্তু রুশা চোখ মেলছে।
সেজানের দিকে অসহায় মুখ করে চেয়ে বলল,
“ও চোখ খুলছে না। চোখ কেন খুলছে না? ওর কিছু হলে আমি বাঁচব না।”

তারপর রুশাকে আকুতি মিনতি নিয়ে বলল,
“রুশা, প্লিজ চোখ খোল। তুমি এসব কেন করলে? আমার কথা নাহয় না ভাবলে কিন্তু আর্দ্রের কথা ভাবলে না? তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি কি করব? চোখ খোল প্লিজ।”

“ভাই, ভাবি সেন্স হারিয়ে ফেলেছে। উনাকে হাসপাতালে নিয়ে চলুন।”
সেজান গাড়ি বের করতে চলে গেল। কথাকে আর্দ্রের দায়িত্ব দিয়ে গেল।

আদ্রিশ রুশাকে আঁকড়ে ধরে বসে আছে। ওর অস্থির লাগছে। রুশা নিজের কি অবস্থা করেছে। রুশা নিজের চেহারা বিভৎস করে ফেলেছে আঁচড় দিয়ে। রুশা এমন বিহেভ করবে বুঝতে পারলে ওকে একা ছাড়ত না।গাড়ি চলছে হাসপাতালের দিকে।

.

রুশাকে আরো উদ্ভট লাগছে। ওর গালে, হাতে, গলায়, কপালে, পায়ে ব্যান্ডেজ করা। চোখ মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। কথা আর্দ্রকে নিয়ে হাসপাতালে চলে এসেছে। ও কেঁদেই যাচ্ছে। কথা আর সেজান ওকে সামলাতে পারছে না। আদ্রিশ ডাক্তারের সাথে কথা বলছে।

“উনার মানসিক অবস্থা ভালো না। কোন কারণে মানসিক ভাবে আঘাত পেয়েছে। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি। কাছের মানুষের সাপোর্ট প্রয়োজন। জ্ঞান ফেরার পর উনার সাথে স্বাভাবিক ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ করে আপনার সাপোর্ট প্রয়োজন। আমি কিছু ওষুধ লিখে দিচ্ছি।”

“জি, ধন্যবাদ। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। আপনি আপনার মতো চেষ্টা করুন। ওকে সুস্থ করে তুলুন প্লিজ।”

আদ্রিশ ভেবেছিল যখন রুশা সত্যিটা জানতে পারবে ওর কাছে ক্ষমা চাইবে তখন ওকে খুব সহজে মাফ করবে না। রুশাকেও কষ্ট দিবে, যেমন কষ্ট ও দিয়েছে। কিন্তু এখন সেটা পারছে না। রুশার জন্য এই বিষয়টা মেনে নেওয়া এত সহজ না। ও অনেক বড় আঘাত পেয়েছে। কারণ ভিক্টিম আর খুনি দুজনই ওর ভাই। এক ভাই খুন হয়েছে আরেক ভাই খুন করেছে। কি করে মেনে নিবে? এছাড়া এতদিন রুশাকে ব্যবহার করেছে, ভুল পথে চালিত করেছে, ধোঁকা দিয়েছে সেটাও কম গুরুতর ব্যাপার নয়।

আদ্রিশ রুশার রুমের সামনে গিয়ে দেখে ও পাগলামি করছে। নার্স ওকে সামলাতে পারছে না। ও সবকিছু ভেঙে ফেলছে। আদ্রিশ দৌড়ে ভেতরে ঢুকল। রুশা চিৎকার করছে। আদ্রিশ ওকে ঝাপটে ধরল। রুশা কিছুক্ষণ ছটফট করে থেমে গেল। আদ্রিশের বলিষ্ঠ শরীরের সাথে পেরে উঠেনি।
“রুশা, শান্ত হও। এমন করছো কেন? কেন এমন করছো?”

রুশা হেঁচকি তুলতে তুলতে বলল,
“আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি মুক্তি চাই। বাঁচতে চাই না।”

“আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাও? আর আর্দ্র ওর কথা ভাবলে না? বাচ্চা একটা ছেলে মা ছাড়া কি করে বড় হবে?”

রুশা মাথায় হাত দিয়ে বলল,
“আমি কারো কথা ভাবতে পারছি না। পারছি না আমি। আমার বুকের ভেতরে খুব যন্ত্রণা হচ্ছে।”

“আমি আছি তো। আমি আছি তোমার সাথে। সব এক সাথে মোকাবিলা করব।”

“আমি কোন মুখে তোমার কাছে ক্ষমা চাইব? অনেক অন্যায় করেছি তোমার সাথে। অনেক ক্ষতি করেছি তোমার, ভুল বুঝে এসেছি এতগুলো দিন। কী করেছি আমি এতগুলো দিন? নিজের উপর ঘৃণা হচ্ছে। আমার এক ভাই আরেক ভাইকে মেরেছে।”
রুশা আবারও কাঁদছে। কথা আর্দ্রকে নিয়ে ভেতরে এলো। আর্দ্র কাঁদছে। কথা ওকে সামলাতে পারছে না। আদ্রিশ রুশাকে নিজের বুক থেকে তুলে বলল,
“আর্দ্র অনেকক্ষণ ধরে কাঁদছে। তুমি একজন মা। তোমাকে আরো শক্ত হতে হবে। ওকে একটু নেও। কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে গেছে।”
রুশা কাঁদতে কাঁদতে আর্দ্রকে কোলে নিল। কোলে নিয়েও কাঁদছে।

চলবে……

(আজকে গল্প লেট করে লিখতে বসছি। এর বেশি লেখা সম্ভব হয়নি।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here