আমার রাজ্যের রানী পর্ব-৪১

0
1087

#আমার রাজ্যের রানী
#Part: 41
#Writer : Sriti Nur Avni

?
দীর্ঘ নয় মাস পর,,,,
গ্রাম বাংলা দগ্ধ গ্রীষ্মের সূর্যের প্রখর কিরনে।।সমস্ত জীব-কূলে নেমে এসেছে আলস্য।ধু ধু জনহীন পথ যেন বিশ্রামের সন্ধানে অন্তর্হিত হয়ে আছে দূর ছায়া-ঘেরা গ্রামের অন্তরালে।।

নিঝুম পথ-প্রান্তরে বৃক্ষরা স্বরচিত ছায়ায় তন্দ্রামগ্ন।।সেই বৃক্ষের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছে কোথাও ক্লান্ত পশু-পাখি আবার কোথাও ক্লান্ত পথিক।।কখনো ক্ষুদ্র বাতাসে উওপ্ত হয়ে নাড়িয়ে দেয় গাছ-পালাকে।।বসন্ত শেষ,,,তবুও কিছু ফুলের তীব্র ঘ্রান ছড়িয়ে আছে চারদিক,,দু-একটি কোকিল ভুল করেই সুর তুলে উঠছে “কুহু কুহু”।চারদিকে বৃক্ষের শরীর জুড়ে যেন হতাশার ছবি।হা হা করছে ফসলহীন মাঠ।জলের জন্য অস্থির সমস্ত কৃষককূলের সাথে মাঠ-ঘাট।।দুপুরের সূর্যের অগ্নিময় কিরনে পুড়ছে আকাশ,, মাটির সাথে ঘাম ঝরানো মাঠের কৃষক।।গ্রীষ্মের প্রখর রোদে ক্লান্ত গ্রামের প্রতিচ্ছবি এমনি।।

সকাল ৯ টা,,,
নীহাল আহম্মেদ অফিসের কাজে দুইদিনের জন্য চিটাগাং যাওয়ায় নীরবের সাথে অফিসের পথে রওয়ানা হলো নীল অভনীও।।
মেডিকেলের পড়ার চাপে অফিসে খুব একটা আসা হয়না অভনীর।বিয়ের পরেও বাসায় বসেই অফিসের কাজ করে সে।।
অফিসে ডুকতেই অভনীর কেবিনে এগিয়ে আসলো রুমি।নীল রঙের শাড়ির সাথে বেশ সাজ সাজ ভাব ফুটে উঠেছে রুমির মুখে,,তার সাথে রয়েছে মুখে ঝুলে থাকা এক টুকরো লাজুকলতা ময় হাসি।।

অভনীর কেবিনে ডুকতেই রুমির দিকে তাকিয়ে হাসি হাসি মুখ করে বলে উঠলো অভনী,,,,

—আরে রুমি আপু যে।কেমন আছো?

অভনীর ডেস্কের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রুমি বললো,,,

—আমাদের খবর কি আর রাখেন আপনি ম্যাম।

অভনী ভ্রু কুঁচকে তাকালো। চেয়ার থেকে উঠে এসে রুমির গাঁ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো অভনী,,,

—আমি তোমার ম্যাম হলাম কবে থেকে রুমি আপু?

—স্যারের বউ তো ম্যাম ই হয়।।আর আপনি ও তো আমাদের স্যারের বউ।(মুচকি হেসে)

—কি শুরু করছো বলোতো আপু।ম্যাম,আপনি এইসব কি!শুনো আমি আগে তোমার ছোট বোনের মতো ছিলাম আর এখনো।সময়ের সাথে উপরে উঠে আগের সব ভুলে যাবার মতো বাজে অভ্যাস আল্লাহ আমায় দেয়নি।।ভাগ্যিস দেয়নি।
তাই তুমি আমাকে এইসব ম্যাম ট্যাম না বলে নাম ধরে তুমি করে বলবে ওকে??

—জ্বি আজ্ঞে মহারানী। (হেসে)

সোজা হয়ে রুমির সামনে দাঁড়িয়ে ভ্রু নাচিয়ে অভনী বললো,,,

—কি ব্যাপার আপু?আজ এতো সাজুগুজো?জিসান ভাইয়া কে ঘায়েল করে মেরে ফেলার প্লান জবছো না তো আবার তুমি??

লজ্জামাখা হাসি দিয়ে রুমি বললো,,,

—তুমি কি যে বলো না।।

—অফিসে আসা হয়না ঠিকই কিন্তু খবর ঠিকই রাখি আপু।।জিসান ভাইয়ার কি খবর??শুনলাম তোমাদের ঝগড়ার বাঁশ ভেঙে গিয়ে ভালোবাসার ঘর তৈরি হয়েছে?(হেঁসে)

ক্লান্ত মাখা ভাব নিয়ে চেয়ারে বসে পরলো রুমি।।কথা ঘোরানোর বৃথা চেষ্টা করে বলে উঠলো সে,,,

—উফফ,,, কি গরম পরেছে তাইনা অভনী।।

দ্রুত গতিতে এগিয়ে এসে রুমির সামনে চেয়ার টেনে বসে কোমড়ে দুহাত গুঁজে দিয়ে বলে উঠলো অভনী,,,,

—কথা ঘুরানোর চেষ্টা! তাও আবার আমার কাছে?এটা অন্যায়!ঘোর অন্যায় কিন্তু আপু।।

মুচকি হেসে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো রুমি।মাথা নিঁচু করে টুপ করে বলে উঠলো,,,,

—হ্যাঁ কিছুূদিন আগেই জিসান আমায় প্রপোজ করেছে আর আমিও ওকে আগে থেকেই ভালোবেসে ফেলে ছিলাম।।আজ অফিস শেষে ঘুরতে বের হবো আমরা,,তাই একটু সাজুগুজো ?

এটা বলে আর এক মূহুর্ত দেরি না করে দৌঁড়ে অভনীর কেবিন থেকে বেড়িয়ে গেলো রুমি।অভনী মুচকি হেসে মনে মনে বললো,,,

—পূর্নতা পাক সকল সত্যিকারের ভালোবাসার।।

চেয়ারে বসতে নিলেই আবার দাঁড়িয়ে গেলো অভনী।।জিসান,রুমি কে এখুনি ছুটি দিয়ে দেবার কথা ভেবেই নীলের কেবিনের দিকে এগিয়ে গেলো সে।।
নীলের কেবিনে ডুকে সামনের দিকে তাকাতেই থমকে গেলো অভনী।।নীল কথা বলছিলো একটি ছেলের সাথে।।সে আর কেউনা মাহিন!!অভনীর প্রথম জীবন সঙীনী ভেবে ভালোবাসার মাহিন!!কিন্তু সে কি আজো ভালোবাসায়?নাকি শুধু একরাশ ঘৃনায়।।অভনী কে কেবিনে ডুকতে দেখে মুচকি হেসে বলে উঠলো নীল,,,,

—কিছু বলবে পরী বউ??

মাহিন মাথা ঘুরিয়ে অভনী কে দেখে অবাক নয়নে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালো।।মাহিনের থেকে মুখ সরিয়ে মুচকি হেঁসে নীলের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো অভনী।।মাহিন ডেবডেব করে তাকিয়ে আছে অভনীর দিকে।অভনী আরেকটু এগুতেই অভনীর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো মাহিন,,,,

—অভনী!তুমি এখানে?

তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে উঠলো অভনী,,,,

—প্রশ্ন টা তো আমার হওয়া উচিৎ মি. মাহিন।।আপনার মতো বড়লোকের পায়ের ধুলো আজ আমার স্বামীর কেবিনে যে??

স্বামী শব্দটা শুনে চমকে উঠলো মাহিন।।এই অফিসের MD অভনীর স্বামী? ?কিন্তু কিভাবে সম্ভব এটা??
মনে মনে এমন হাজারো প্রশ্নের ঝুলি ভরপুর হচ্ছে মাহিনের।।
অভনী নীলের পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই অভনীর দিকে তাকিয়ে নীল বললো,,,,

—ওনি চাকরীর জন্য এসেছে পরী বউ।।

মাহিনের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলে উঠলো অভনী,,,,

—মি. মাহিন আপনি এসেছেন এখানে চাকরী খু্ঁজতে?কিন্তু এতোদিনে আপনাদের তো নিজেদেরই অফিস থাকার কথা।।

অভনীর কথায় একটু নড়ে উঠলো মাহিন।।তাড়াহুড়ো করে বলে উঠলো সে,,,,

—আমার এই চাকরী টা খুব দরকার অভনী।।আমার মায়ের ক্যান্সার।কোনো কাজ নেই আমার।তার উপর বউয়ের সারাদিন হাঁসের মতো পেক পেক শুনতে শুনতে বেশ অতিষ্ট আমি।।প্লিজ অভনী তুমি বলো আমায় চাকরী টা দিয়ে দিতে।।

মাহিনের কথা শেষ হতে না হতেই জোড়ে ধমকে উঠলো নীল।।রাগান্বিত সূরে বলে উঠলো,,,,

—আপনার কোনো অধিকার নেই আমার বউ কে অভনী অভনী বলার।।ম্যাম বলুন ম্যাম।।

মাহিন মাথা নিঁচু করে ফেললো।অভনী কিছু বলবার আগেই ১ কোটি টাকার চেক মাহিনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে উঠলো নীল,,,,

—প্রথমত আপনাকে ধন্যবাদ অভনী কে ছেড়ে যাবার জন্য।কারন আপনি না ছাড়লে আমি আমার পরী বউ কে হয়তো পেতাম না।।তবে আপনি ভুল করেছেন।।একটা কথা মনে রাখবেন আল্লাহ কাউকে ছারে না।প্রকৃতির নিয়ম কে উছিলা হিসেবে দিয়ে শাস্তি দিয়ে দেন ওনি।।আপনাকে আমি পরী বউয়ের কাজের লোক করে রেখে দিতে পারতাম।কিন্তু এতে যদি কখনো কোনো এক সময় পরী বউয়ের চোখের জল টইটুম্বুর করে আপনার জন্য।।তাই এই টাকা টা আপনার মায়ের চিকিৎসা আর বউয়ের জন্য।।বাকি টাকা দিয়ে কোনো ব্যবসা করে নিবেন।তবে ভুলেও আর কোনোদিন আমার পরী বউয়ের সামনে আসবেন না।গট ইট।

মাহিন চেক হাতে মাথা নিচু করে বের হয়ে গেলো কেবিন থেকে।।অভনী ভ্রু কুঁচকে নীলের দিকে তাকাতেই শক্ত করে অভনী কে নিজের বাহুডোরে আঁটকে নিলো নীল।।

.

?
দুপুর বারোটা কি একটা।শহরটাকে রোদের তেজে ঝলসে দিয়ে গর্ব প্রকাশ করতে ব্যস্ত প্রকাণ্ড সূর্য। এই মাথা ফাটা রোদে ড্রাইভিং সীটে বসে প্রমাদ গুনছে নীল।।পেছনের সীটে মাইশা কে আড়াআড়ি ভাবে শুইয়ে দিয়ে মাথায় হাত ভুলাতে ভুলাতে ব্যস্ত ভঙিমায় সামনের দিকে তাকাচ্ছে নীরব।।
প্রচণ্ড ব্যাথায় মাইশা কে গোঙরাতে দেখে অসহায় চোখে মাইশার দিকে তাকিয়ে একনাগাড়ে মাইশার পা ডলছে অভনী।। নীলের পাশের সীটে বসে বার বার পেছন ফিরে তাকাচ্ছেন নীলিমা আহম্মেদ।।সবার চোখে মুখে একরাশ তাড়াহুড়োর সাথে ব্যস্ততা।।কিন্তু সবার একবস্তা ব্যস্ততা কে দূরে রেখে পুরো রাস্তা জুড়ে রাজত্ব করছে বিশাল বড় জ্যাম।।রাস্তার এই বিশাল জ্যামে আটকে থেকে তাড়াহুড়ো টা যেন বিষাক্ত হয়ে আসছে ক্রমাগত।।”বিপদের রাস্তা তাড়াতাড়ি ফুরাতে চায় না” কথাটা প্রচণ্ড বেগে ফিল করছে ওরা প্রত্যেকে।

সকাল থেকেই বেশ খারাপ লাগছিলো মাইশার।।ব্যাথার হার কম থাকায় তেমন কিছু হয়নি ভেবে খুব সূক্ষ্ণ ভাবেই এড়িয়ে গেছে সে।।সকাল হতেই এই বাড়ির পুরুষজন মিলিয়ে যায় ব্যস্ত শহড়ে ব্যস্ত মানুষের তালিকায়।।আস্তে আস্তে ব্যাথার হার বাড়তে থাকায় ধীর পায়ে নীলিমা আহম্মেদের কাছে এগিয়ে গেলো মাইশা।নীলিমা আহম্মেদ কে বলতেই ওনি সবাই কে ফোন দিয়ে বাসায় চলে আসতে বললেন।।ব্যস্ততা থেকে একনিমিশে ফাঁকা হয়ে দ্রুত গতিতে চলে আসলো নীল,নীরব আর অভনী।।কিন্তু তারা আসতে আসতে ব্যাথার হার তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে গেছে।।

গাড়ির গ্লাস নামিয়ে মাথা বের করে সামনে,পিছনে আর ডান পাশে তাকালো নীল।।কিন্তু যেখানেই চোখ যাচ্ছে সেখানেই শুধু গাড়ির পসরা।একরাশ হতাশ নিয়ে মাথা ভেতরে নিয়ে একবার পেছনে তাকালো নীল।।মাইশা তার চোখ মুখ কু্ঁচকে বন্ধ করে রেখেছে।সামনের দিকে চোখ ফিরিয়ে বাম হাতে গাড়িতে জোড়ে ধাক্কা দিয়ে বলে উঠলো নীল,,,,

—Damn it!!

মোবাইল নিয়ে কেউ একজন কে ফোন দিয়ে ধমকের সূরে বলে উঠলো নীল,,,,,

—১০ মিনিট,,জাস্ট ১০ মিনিটের মধ্যে যদি আমার সামনের গাড়ি গুলো না সরে যায় তাহলে সব গুলো গাড়ি ভেঙে আমি কুরুক্ষেত্র বানিয়ে দিবো।।

৭-৮ মিনিট পর সামনের গাড়ি গুলো হালকা নড়ে চড়ে উঠলো।আস্তে আস্তে সবগুলো গাড়ি একে একে ছুটে চলতে লাগলো তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।।ডানে-বামে না তাকিয়ে দ্রুত গতিতে নিজেদের গাড়ি হসপিটালের উদ্দেশ্যে এগিয়ে নিয়ে চললো নীল।।

হসপিটালে পৌঁছাতেই একদল নার্স এসে মাইশা কে নিয়ে গেলো ওদের সাথে।।তীব্র ব্যাথার সাথে একরাশ ভয় এসে জোড়া লেগে কুঁকড়ে উঠছে মাইশা।

.

.

.

?
নীলের ফোন পেয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা হতেই বাসা থেকে কল আসলো নীর্ঝয়ের ফোনে। নীরা অসুস্থ! শব্দটা অপরপাশ থেকে আসতেই কেমন নিজেকে পাগল পাগল লাগছে নীর্ঝয়ের।।হয়তো পবিএ বন্ধনের জোড়ের সাথে সত্যি ভালোবাসার জোড়া লেগে ভালোবাসার গভীরতা তীব্র বেগে বাড়িয়ে দিয়েছে নীর্ঝয়ের।।ভালোবেসে ফেলেছে তার নীর পাখি কে!!ভালোবেসে ফেলেছে তার সহধর্মিণী কে।।
ফোন রেখে গাড়ি ঘুরিয়ে জোড়ে জোড়ে ড্রাইভ করতে লাগলো নীর্ঝয়।তবুও যেনো আজ পথ ফুরাতে চাচ্ছে না।

গাড়ি চালাতে চালাতে বার বার বাসায় ফোন দিচ্ছে নীর্ঝয়।।কিন্তু নাহ!!এই মূহুর্তে চিন্তার ভার হাজার গুন বাড়িয়ে দিয়ে কেউই ফোন তুলছে না।।নিজের মোবাইলের প্রতি বেশ রাগ লাগছে নীর্ঝয়ের,মনে হচ্ছে সব দোষ এই মোবাইলের।।মনে মনে এমন হাজারো পাগলামির ভাবনা তে নিজে নিজেই বেশ অবাক হচ্ছে নীর্ঝয়।।এতোটা পাগল লাগছে কেনো!!
এতোটা ভালোবাসি আমি নীর পাখি কে?

এটা ভাবতেই শিউরে উঠলো নীর্ঝয়।।হয়তো দূরে না থাকলে কোনো কিছুই উপলব্ধি করা যায় না,,ভালোবাসা ও না।।তাই দূরত্ব প্রয়োজন,,প্রিয় মানুষ কে নিজের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য হলেও দূরত্ব প্রয়োজন।তবে সেই দূরত্ব যদি হয় গুরুত্বহীনতার বা ভাঙনের কারন তবে সেথায় ছিলো না ভালোবাসা।।

বাসায় যেতেই গাড়ি থেকে নেমে দৌঁড়ে নিজেদের রুমে চলে গেলো নীর্ঝয়।।চোখ পিটপিট করে আশেপাশে তাকালেও নীরা কে দেখতে পেলো না সে।।বাইরে যখন প্রচণ্ড রোদের ঝলমলে কামড়ে ধরে তখন পুরোদমে অন্ধকার হয়ে আছে ওদের রুম।।নীর্ঝয় ধীর পায়ে সুইচের দিকে এগিয়ে যেতেই ঘরের আলো জ্বালিয়ে দিলো নীরা।সুস্থ-সবল অবস্থায় নীরা কে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দৌঁড়ে নীরা কে জরিয়ে ধরলো নীর্ঝয়।।অন্যদিকে নজর না দিয়ে একনাগাড়ে নীরা কে বকাঝকা করছে সে।

—ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া করো না শরীর খারাপ তো হবেই।এখন ঠিক আছো তো?কি হইছিলো?আব্বু কই?আব্বু দেখছে তোমারে?কি সমস্যা?ফোন ধরতে ছিলে না কেন?কতোবার করে ফোন দিছি দেখছো একবার?তোমার তো কিছুই না অন্যদিকে আমি প্রায় পাগল পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম।তু,,,

নীর্ঝয় কে আর কিছু বলতে না দিয়ে চোখ বন্ধ করে লজ্জামাখা হাসি দিয়ে বলে উঠলো নীরা,,,,

—খুব শীঘ্রই তুমি বাবা হবে বুদ্দু?❤।

নীরার কথায় হালকা কেঁপে উঠে থমকে গেলো নীর্ঝয়।কি বলবে বুঝতে পারছে না সে।।নীর্ঝয়ের কোনো রিয়েকশন না পেয়ে ভ্রু কুঁচকালো নীরা।কোনো রিয়েকশন নেই কেন?এই লোকটার রিয়েকশন বাটন নষ্ট হয়ে গেলো নাতো?

ঠোঁট উল্টে এইসব ভাবতেই হাওয়ায় ভাঁসতে লাগলো সে।নীর্ঝয়ের চোখে মুখে উচ্ছ্বাস। খুশিতে চিকচিক করা চোখ দুটো নোনা জলে ভরপুর।।রুমের বাইরে থেকে ভেতরে ডুকতে ডুকতে হাফসা আপু বললেন,,,,

—কিরে বাবা হওয়ার খুশিতে কি ভুলে গেছিস নাকি দরজা যে খোলা।(হেঁসে)

নীরা কে কোল থেকে নামিয়ে হাফসা আপুর কাছে গিয়ে বলতে লাগলো নীর্ঝয়,,,,

—আপু তুই কখন আসলি?আপু আজ আমি অনেক খুশি।।জানিস আপু আমি বাবা হবো।।বাবা হবো আমি!আমাদের ঘরেও একটি প্রিন্সেস আসবে,,ছোট ছোট হাত পা গুলো নাড়িয়ে খেলা করবে আমার সাথে।আম্মু মারা যাওয়ার পর তোর কাছেই মানুষ হয়েছি আমি আপু।কখনো কোনো অভাব বুঝতে দিসনি।আর কিছুদিন পর আমার আরেকটা আম্মু/আব্বু আসবে আপু ইনশাআল্লাহ।

হাফসা আপু নীর্ঝয় কে জরিয়ে ধরলেন।।বাচ্চাদের মতো ঘুপটি মেরে নীর্ঝয়ও জরিয়ে ধরলো হাফসা আপু কে।।নীর্ঝয়ের মাথায় হাত ভুলাতে ভুলাতে হাফসা আপু বললেন,,,,,

—ভাই আমার এখনো ছোটই আছিস।।দুইদিন পর বাবা হবি আর এখনো কি পাগলামি করলে হয়।।

ওদের সামনেই এক দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নীরা।।মুখে এক টুকরো তৃপ্তির হাসি।মানুষটার খুশিতে আজ নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে ওর।।আর কি চাই জীবনে!!জীবন নামক মঞ্চে আজ পূর্ন্যবতী সে।

ফোনের টুংটাং শব্দে কিছু সময়ের নীরবতা ভাঙে রুমের।।পকেট থেকে মোবাইল বের করে নীল কে ফোন করতে দেখে কিছুটা নড়েচড়ে দাঁড়িয়ে নীর্ঝয় বললো,,,,

—ওহ শিট!!মাইশা ভাবি যে হসপিটালে আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।

ফোন ধরতেই অপরপাশ থেকে উল্লাসিত কন্ঠে বলে উঠলো নীল,,,,

—আমি চাচ্চু হয়ে গেছি রে দোস্ত।ফুটফুটে রাজপুত্রের ছোট আব্বু হয়ে গেছি আমি।।তুই মিষ্টি নিয়ে আয় পুরো হসপিটালে মিষ্টি দিবো আজ।।

—দোস্ত আরেকটা সুখবর আছে সামনা সামনি এসে দিবো তোকে। আমি আসছি এখুনি।।

ফোন কাঁটতেই হুরমুরিয়ে পরলো যেন নীর্ঝয়ের উপর নীরা আর হাফসা আপু।।উত্তেজিত কন্ঠে হাফসা আপু বললেন,,,,,

—কিরে কি বললো নীল?মাইশা ভাবি কেমন আছে?

—আপুই সবাই ভালো আছে।।আর একটা রাজপুত্র হয়েছে নীরব ভাইয়ার।আমি আসি রে এখন আপু।।আমার বউটার দিকে নজর রাখিস।

নীর্ঝয় কয়েক পা সামনে এগুতেই পেছন থেকে নীরা বলে উঠলো,,,

—আমি যাবো তোমার সাথে।।বাবু দেখবো আমি।।

নীরার কথায় দাঁড়িয়ে গেলো নীর্ঝয়।।পেছন ফিরে সামনে এগিয়ে গিয়ে আলতো করে নীরার গালে হাত দিয়ে মুচকি হেসে বলে উঠলো সে,,,

—তুমি রেস্ট নাও।হসপিটালে যেতে হবে না।দুইদিন পর বাসায় নিয়ে যাবো আমি তোমায়।

নীরা আর কিছু না বলে মুচকি হাসলো।। হাফসা আপুর আড়ালে নীরা কে ফ্লাই কিস ছুঁড়ে দিয়ে বাঁকা হেসে ধীর পায়ে এগিয়ে যেতে লাগলো নীর্ঝয়।।নীর্ঝয়ের দিকে ডেবডেব করে তাকিয়ে থেকে আড়চোখে হাফসা আপুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে উঠলো নীরা।

.

.

.

?
—————
আজ কয়েকদিন যাবৎ মেডিকেল ক্যাম্পাসে যাচ্ছে না অভনী।।নীরব মাইশার রাজপুত্র মিহির কে নিয়ে পুরোদমে উত্তেজনা আহম্মেদ আর চৌধুরী পরিবারে।।সেই উওেজনায় শামিল হয়েই নিজেকে মাতিয়ে রেখেছে অভনী মিহিরের সাথে।।ছোট ছোট হাত পা গুলো নেড়ে নেড়ে মাঝে মাঝেই ঠোঁট উল্টাচ্ছে মিহির।।সাঁত দিন বয়সের মিহির কে নিয়ে রুমের একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে হেঁটে হেঁটে বাচ্চাদের মতো মুখ করে কথা বলছে অভনী।
দরজায় ঠেশ দিয়ে দাঁড়িয়ে একমনে অভনী মিহির কে দেখতে দেখতে হঠাৎ ই এই রুমে আসার কারন মনে হলো নীলের।ধীর পায়ে অভনীর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো সে।।আচমকা নীল কে এমন সামনে দাঁড়াতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো অভনী।।
হাঁটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঠোঁট উল্টিয়ে কেঁদে উঠলো মিহির।।দুজনের দৃষ্টি এখন মিহিরের দিকে।।হাঁত ধুলাতে ধুলাতে আবারো হেঁটে খোশ গল্পে মেতে উঠলো অভনী মিহিরের সাথে।।নীল ভ্রু কুচকে তাকালো,, যে কারনে এখানে আসা তার কিছুই হচ্ছে না।উল্টো নিজের ই মিহির কে কোলে নিয়ে বসে থাকতে ইচ্ছে করছে তার।।ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে নীল কে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মাইশা বললো,,,,

—কি ব্যাপার দেবরজি?তোমার পরী বউ কে মিস করছিলে নাকি??

মাইশার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে নীল বললো,,,

—তা আর বলতে ভাবিপু।।মিহির তো পরী বউয়ের পড়াশোনার পাশাপাশি আমার রোমান্সের ও বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে।।?

নীলের কথায় অভনী তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো নীলের দিকে।চোখ জোরা পিটপিট করে তাকিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে আস্তে করে বলে উঠলো,,,,,

—অসভ্য।। লজ্জা মুড়িয়ে সব সরবত বানিয়ে খেয়ে ফেলেছে।।

খাটের পাশে ঝুলানো কাঁথা গুলো ভাঁজ করতে করতে হেসে মাইশা বললো,,,,

—এখনি এইসব বলছো।।আগে নিজেদের একটা হোক তখন বুঝবা রোমান্সের বারোটা কাকে বলে।

—সে দেখা যাবে।।কিন্তু পরী বউ এখন তৈরি হবে চলো।।

অভনী কপাল কুঁচকালো।এই মূহুর্ত্যে তৈরি হয়ে কোথায় যাবে তা যেন ভেবে পাচ্ছে না ও।।নীল অভনীর হাত থেকে মিহির কে নিতে নিতে বললো,,,,

—মেডিকেলের পড়া এতো ফাঁকি দিলে ডাব্বা মেরে বসে থাকবে।তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও আজকে ক্যাম্পাসে যাবে।।

মিহিরের ছোট হাত টা ধরে ঠোঁট উল্টালো অভনী।।
এই কয়েক দিনে মিহিরের প্রতি বেশ মায়া জন্মে গেছে অভনীর।।

মিহিরের কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুইয়ে দিয়ে ধীর পায়ে দরজা দিয়ে বের হতে হতে বলে উঠলো নীল,,,,

—মিহিরকে মামুনির কাছে দিতে গেলাম আমি।।২০ মিনিট!!২০ মিনিটের মধ্যে তৈরি হয়ে থাকবে তুমি।।

গাল ফুলিয়ে ঠোঁট উল্টে নীল আর মিহিরের দিকে তাকিয়ে রইলো অভনী।।এই মূহুর্তে নীল তুলার মতো গুটিয়ে বালিশ বানিয়ে সেই বালিশে মিহির কে নিয়ে শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে তার।।?

.

.

.

?

ভরা ক্লাসের সামনে এসে অভনীর নাম ধরে ডাকছে নীল।লম্বা আকারের বিশাল রুম টা ছাএ-ছাএী তে ভরপুর।Anatomy ক্লাসের নুরুল ইসলাম স্যার ভ্রু কু্ঁচকে তাকিয়ে আছে নীলের দিকে।পেন্টের পকেটে হাত গুঁজে দিয়ে ক্লাসের ভিতরে ডুকে গেলো নীল।
নুরুল ইসলাম স্যার ধীর পায়ে এগিয়ে গেলেন নীলের কাছে।।হালকা হাসির রেখা টেনে বলে উঠলেন ওনি,,,,

—কাউকে খুঁজছো ফারহান?

—জি আপনার বউ মা কে।

আবারো অভনী কে “পরী বউ” বলে ডাকতে লাগলো নীল।।মাথা নিঁচু করে প্রায় অর্ধেক শরীর বেঞ্চের নিচে দিয়ে বসে আছে অভনী।।
কিন্তু তা নীলের দৃষ্টি এড়ায় না।।মুচকি হেসে অভনীর বেঞ্চের পাশে এসে এগিয়ে আসলো নীল।পুরো ক্লাসের সবার দৃষ্টি এখন ওদের দিকে।।বেঞ্চের কাছে এসে ডাকতেই বড় বড় চোখ করে তাকালো অভনী।নীলের হুট করে এমন কাজের কিছুই মাথায় ডুকছে না অভনীর।।তার উপর ফুলে ফেঁপে ফুটকা মাছ হয়ে আছে আজ সে।।ক্যাবলাকান্ত মাখা হাসি দিয়ে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো অভনী।।আসে-পাশের পরিস্থিতি বুঝে উঠার আগেই টুপ করে অভনী কে কোলে তুলে নিলো নীল।।নীলের কান্ডে জয়া,জুথি মুখ টিপে হাঁসছে।।বেশ কয়েক জন মেয়ের চোখে মুখে অসহায়ত্ব।ক্রাশ বয় অন্য মেয়েকে কোলে নেয়ার একরাশ অসহায় এসে ভীর জমিয়েছে ওদের মুখে।।

লজ্জায় কুঁকরে গিয়ে নীলের বাহুডোরে মুখ লুকালো অভনী।।বাঁকা হেসে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে লাগলো নীল।।নুরুল ইসলাম স্যারের সামনে এসে বলে উঠলো সে,,,,

—সরি স্যার আপনার ক্লাসে ডিস্টার্ব করার জন্য।।

—ইট’স ওকে মাই সন।।বেস্ট অফ লাক। (মুচকি হেসে)

গাড়িতে বসাতেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো অভনী।।ড্রাইভিং সীটে বসে বেল্ট লাগাতে লাগাতে বলে উঠলো সে,,,,

—এভাবে রেগো না গো পরী বউ।টমেটো ভেবে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করবে।।

আরেকটু রেগে গিয়ে কোমরে হাত দিয়ে বলে উঠলো অভনী,,,,

—ওই আপনি আমাকে এভাবে নিয়ে আসলেন কেন?ইশশশ স্যার কি ভাববে?

অভনীর সীট বেল্ট লাগিয়ে দিয়ে মুচকি হেসে নীল বললো,,,,,

—স্যার কিছুই ভাববে না।।আমার বউ আমি এনেছি তাতে কার বাপের কি?আমার পরী বউ আজকে আমার সাথে হুপ করে ক্যাম্পাসে এসেছে।।জানতাম পুরো ক্লাস জুড়ে মন খারাপ করেই থাকবে।কিন্তু আমি থাকতে আমার পরী বউ মন খারাপ করে থাকবে এমন টা কি হতে পারে নাকি?তাই তোমার মন খারাপের ঔষুধ মিহিরের কাছেই নিয়ে যাবো এখন।।

মিহিরের নাম শুনতেই সমস্ত রাগ ভুলে গিয়ে একরাশ আনন্দ এসে ভীর জমালো অভনীর মধ্যে।।সাদা ধবধবে গুলুমুলু মিহির কে বেশ লাগে অভনীর।।সমস্ত মন খারাপের কূল-কিনারা যেন হারিয়ে যায় মিহিরের আদো আদো চোখে তাকানো তে।।

“আচ্ছা এই মানুষ টা কি সারাজীবন থাকবে আমার মন ভালো করার আলাদিনের প্রদিপ হয়ে??”

#চলবে,,,,,

(এই পার্ট টা ৩ বার লিখলাম।?ডিলিট শব্দ টা বিষাক্ত ভাবে আকরে ধরেছিলো আমাকে।।লেট করার জন্য দুঃখিত।আর দু-এক পার্টে শেষ করে দিবো?❤)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here