আমার রাজ্যের রানী পর্ব-৪০

0
1017

#আমার রাজ্যের রানী
#Part : 40
#Writer : Sriti Nur Avni

?
পাতার ফাঁকে এক প্রতিমাকে দূর থেকে দেখা যায় পৃথিবীর আশ্চর্য মুগ্ধতা মাখা বিকেল শেষে!জলের কাঁচের শরীর বেয়ে এ যেন এক রক্তরক্তিমায় ফুটে থাকার উৎসবে ভরাট সন্ধ্যা নেমেছে।।
সমুদ্রের মাঝ বরাবর শরৎকালের মেঘ বিহীন ঝলমলে করা আলোর মতো ফুটে রয়েছে নীল অভনীর বিবাহের জন্য সাজানো বড় জাহাজ টি।।সন্ধ্যার আলো নিভিয়ে আস্তে আস্তে অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে চারদিক।।একটু পরেই সেই অন্ধকার দূরে সরিয়ে দিয়ে নিজের রুপ দিয়ে রাজত্ব করতে চলে আসবে বৃত্তাকার থালার ন্যায় চাঁদ টি।।

চাঁদের রাজত্বের সময় ঘনিয়ে আসার আগেই জাহাজের বড় এক কামড়ায় অভনী কে বউ সাঁজাতে ব্যাস্ত একদল তরুন তরুনী।।নববধূর লজ্জামাখা মুখের মতো অভনীর চোখে মুখে ফুটে উঠেছে লজ্জার ভার।।যার ভারে রক্তজবা রঙের মতো হয়ে আছে তার মুখটি।।

বিশাল বড় সমুদ্রে বিশাল আকাশের ছোট্ট এক তারার ন্যায় ঝলমলে ফুটে উঠা মস্ত বড় সাজানো জাহাজটির আরেকটি কামরায় তৈরি হচ্ছে নীল।।মনের কোনে তীব্র ভালোলাগার সাথে ভালোবাসার মানুষ টাকে নিজের করে পাবার আনন্দে দ্রুত গতিতে ছুটে চলছে তার হাত দুটো।।

দাদি বাড়ি মামা বাড়ির লোকজনের কাছে আজ যেনো অভনীর দামের কমতি নেই কোনো দিক থেকে।।পরিস্থিতির প্রতিকূলতায় অভনী আজ বড়লোক পরিবারের বউ হবে বিধায় হয়তো এমন পরিবর্তন সবার মাঝে।।কিন্তু এতে অভনীর কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।।সে যানে বিপদের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু।।আর বাকি সবাই!!আগাছা মাত্র।
একসময় যার মূল্য ১৬ আনা অপর সময় তার মূল্য ৫ আনা ও না।।আবার একসময় যার মূল্য ৫ আনা অপর সময় ১৬ আনা হতেও বেশি সময় লাগে না।।মানুষ মানুষ কে নয় টাকা কে দাম দিতে ব্যাস্ত।।

.

রাত ৮ টা,,,
জাহাজ ছুটে চলছে তার আপন গতিতে।।জোৎস্নার আলো আর শো সা বাতাসের সাথে পাল্লা দিয়ে কি দূরন্ত গতি তার।।
জাহাজের সাথে ছুটে চলছে একঝাঁক আনন্দ উল্লাসের মেতে উঠা প্রানী।।
জাহাজের মাঝখানে নানান রকম ফুল দিয়ে সাজানো স্টেজে কালো খয়েরী রঙের লেহেঙ্গা পরে বসে আছে অভনী।।তার পাশের সিটে কালো খয়েরী রঙের সেরোয়ানী পরে মুখে একটুকরো হাসি ঝুলিয়ে বসে আছে নীল।।

সবাই নিজেকে গুছিয়ে রেখে নিজেদের কাজে ব্যাস্ত।কেউবা আবার মোবাইল হাতে সুন্দর মূহুর্ত গুলো ক্যামেরায় বন্দি করতে ব্যাস্ত।।রাতুল,,সাব্বির চোখে চশমা লাগিয়ে নিজেদের প্রেয়সী কে খুঁজে বের করার বৃথা চেষ্টা করতে ব্যাস্ত।।”অভনীলের”ও আজ ব্যাস্ততার শেষ নেই।।ফটোগ্রাফারের কথা অনুযায়ী নানান ভঙিমায় দাঁড়াতে বেশ বিরক্ত লাগছে অভনীর।নিজের বিরক্তির উপরেও আজ বেশ বিরক্ত হচ্ছে অভনী।।বারবার মনে হচ্ছে কেনো লাগবে বিরক্ত! হুয়াই?একটা দিনই তো।।এই ফটো গুলোই হয়তো পরবর্তী পজন্মের মুখে মুগ্ধতায় মাখা খিলখিল করে হাসির কারন হবে।।

বিয়ের কাজ সম্পন্ন হতে হতে রাত ১০ টা বেজে গেলো।।জাহাজ ছুটে চলছে এবার তার গন্তব্যে।।পাড় ঘেঁষে থামতেই আস্তে আস্তে নেমে গেলো সবাই।নীল অভনী কে কোলে তুলে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিলো।।

একে একে সবাই বাড়ির উদ্দ্যেশে রওয়ানা হলো।।বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় ১১:৩০ ছুই ছুই।।
নীলিমা আহম্মেদ, মাইশা,আরো কয়েক জন মিলে অভনী কে নীলের রুমে নিয়ে গেলো।।এই বাড়িটায় ই থাকতো সে।অথচ আজ এই বাড়িটার প্রতিটি কর্নার কে বেশ নতুন রুপে আবিষ্কার করছে সে।।আজকে থেকে এই বাড়ির বউ সে!!বউ শব্দের সাথে যুক্ত হয়ে গেছে হাজারো হাজারো দায়িত্ব।।

.

.

.

?
————–
রাত ১ টা,,
পুরো বাড়িতে এখনো সবার আনাগোনায় গমগম করছে।।চারদিকে ফুলে ফুলে ভরপুর তীব্র সুগন্ধের রাজ্যের খাটের উপর গুটিসুটি মেরে বসে আছে অভনী।। বেশ অনেকক্ষন যাবৎ একা আছে সে।এই রুমটাও বেশ পরিচিত অভনীর।।তবুও আজ সবকিছু অন্যরকম মনে হচ্ছে।।

অন্যদিকে রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে নখ কামড়াচ্ছে নীল।এই রাতটা নিয়ে কতো কতো স্বপ্ন অথচ আজ হাত পা যেনো চলছেই না।।নিজের রুমে ডুকতেই হাজার টা বাঁধা এসে ভর করছে নীলের।।যে বাঁধা গুলোর নাম ও রীতিমতো অজানা তার।।

নীলের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে নীরব,নীর্ঝয় আর মাহিব সহ বেশ কয়েকজন ছেলে মুখ টিপে হাঁসছে নীল কে দেখে।।নীরব ফিক করে হেসে বলে উঠলো,,,,,

—কিরে ভাই তোর মাফিয়া গিরি কি প্রথম দিনেই ফুরুৎ?দেখ দেখ বউয়ের কি ক্ষমতা।আমার যেই ভাই পুরো শহরের কাউকে ভয় পায়না সে কিনা আজ নিজের রুমেই ডুকতে ভয় পাচ্ছে ?

আশেপাশের সব ছেলেগুলোর মাঝে হাসির রুল পরে গেলো।।নীল রাগে কটমট করে তাকিয়ে বলে উঠলো,,,,,

—হু তুৃমি কি উল্টাইছিলা তা বেশ দেখা আছে।।

নীর্ঝয় গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে এসে নীল কে পেছন থেকে ধাক্কা দিলো।ধাক্কার তালের বিরুদ্ধে নিজেকে আটকে রাখতে না পেরে ধুরুম করে দরজা খুলে ভিতরে পরে গেলো সে।।অভনী হুড়মুড়িয়ে উঠলো।এতোক্ষন যাবৎ ভাবনা জগতে ছিলো সে।নীল কে এমন উপুর হয়ে পরে থাকতে দেখে ডেবডেব করে তাকিয়ে আছে অভনী।।নীল অভনীর দিকে তাকিয়ে ইনোসেন্ট মার্কা হাসি দিয়ে রাগী দৃষ্টিতে পেছন ফিরে তাকালো।।কিন্তু ততক্ষণে দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা সবাই উধাও।

নীল উঠে দরজা লাগিয়ে পেছনে ঘুরতেই অভনী ওর পা ছুঁয়ে সালাম করলো।নীল অভনীর বাহুডোরে হাত রেখে উপরে তুলে বললো,,,,

—তুমি আমার পায়ে কেনো হাত দিচ্ছো পরী বউ!আল্লাহ ব্যাতিত কারো কাছেই মাথা নত করা ঠিক না।তাছাড়া তোমার স্থান কখনোই আমার পায়ে নয়।আমার বুকের বাম পাশের চিনচিন করা ব্যাথার জায়গায় তুমি।যে ব্যাথার জন্য দায়ী তুমি আবার সারানোর জন্যেও দায়ী তুমি।।

মুফ ফুলিয়ে বলে উঠলো অভনী,,,,,

—কি করবো বলুন।মা আমাকে পাই পাই করে বলে দিছে আমি যেনো আপনার পা ছুঁয়েই সালাম করি।।

—আচ্ছা ঠিক আছে চলো নামাজ পরে নেই।।

অভনী বিয়ের কাপড়েই ফ্রেশ হয়ে নামাজ পরে নিলো।নীল ভ্রু কুঁচকে বললো,,,,

—ড্রেস চেঞ্জ করছো না কেনো??

—আপনার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে তাই।।আপনিও চেঞ্জ করবেন না নামাজ পরে নিন।।

নামাজ শেষে অভনীকে কোলে তুলে বারান্দায় নিয়ে গেলো নীল।।অভনীর দেয়া বারান্দায় রাখা গোলাপ ফুলের টপে লাল টকটকে অনেক গুলো ফুল ফুটেছে আজ।।নীল অভনী কে দাঁড় করিয়ে গাছটার কাছে গেলো।গাছ থেকে ফুল ছিঁড়তে নিলেই অভনী বলে উঠলো,,,,

—হিরো সাহেব ছিঁড়বেন না।ফুল ছিঁড়ে হাতে নিলে ফুলকে ভালোবাসা হয়না।ফুল গাছেই সুন্দর। আর ফুলের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করার জন্য গাছে রেখে সৌন্দর্য উপভোগ করাটাই শ্রেয়।

নীল মুচকি হেসে উঠে দাঁড়ালো।।পুরো রুম রইরই করা ফুলের সাথে বারান্দার গাছটিও হাজার গুন সৌন্দর্য নিয়ে ফুটে রয়েছে একাধিক ফুলে।

অভনী কে বারান্দায় রেখেই রুমের দিকে অগ্রসর হলো নীল।।আলমারি থেকে কাবিনের টাকা বের করে এনে অভনীর হাতে দিয়ে বললো,,,,

—এটা তোমার পাওনা পরী বউ।।

অভনী ডেবডেব করে তাকিয়ে আছে নীলের দিকে।প্রশ্নবোধক চিহ্ন মুখে ঝুলিয়ে বলে উঠলো সে,,,,

—কিন্তু আমি এতো টাকা দিয়ে কি করবো হিরো সাহেব?আপনার কাছেই থাক না।

—উহু এটা তোমার কাছেই রাখো।তোমার যা ইচ্ছে তাই করো এটা দিয়ে।এতে আমার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।।এবার আমাকে তোমার তুমি তে আবদ্ধ করে নাও না গো পরী বউ।।অধিকার দাও তোমায় স্পর্শ করার।।

নীলের নেশা লাগানো কথায় কেঁপে উঠলো অভনী।।লজ্জায় কুঁকরে গিয়ে লজ্জাবতী পাতার মতো নিজেকে লুকিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে তার।।কয়েক সেকেন্ডে নিজেকে ঠিক করে বলে উঠলো অভনী,,,,

—চলুন হিরো সাহেব।

নীল ভ্রু কুঁচকে তাকালো অভনীর দিকে।।অভনী এতে ভ্রুক্ষেপহীন।। নিজের মতো করে বলে উঠলো সে,,,,

—আজকে সারারাত আমরা বাইক দিয়ে ঘুরে বেড়াবো।

নীল রসগোল্লাময় চোখ জোরা নিয়ে বললো,,,,

—সবার সামনে দিয়ে এখন বাইক নিয়ে ঘুরতে গেলে কি মনে করবে সবাই।?

বারান্দায় রাখা পিকুর খাঁচা টা ঘুরাতে ঘুরাতে মুচকি হেসে বলে উঠলো অভনী,,,,,,

—আমরা তো সবার সামনে দিয়ে যাবো না হিরো সাহেব।

নীলের কঁপালে ভাজ পরে গেলো।অবুঝ দৃষ্টিতে অভনীর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো সে,,,

—তাহলে কিভাবে যাবে?

একফালি হাসি নিয়ে অভনী বললো,,,,,

—পালিয়ে ?

—এ্যাহহহ?

—এ্যাহ না হ্যাঁ।চলুন চলুন।

—কিন্তু কিভাবে?কোন দিক দিয়ে পালাবে তুমি ??

—এই যে ব্যালকোনী দিয়ে।

তিনটে শাড়ি জোড়া লাগিয়ে সাবধানে ব্যালকোনী থেকে নেমে গেলো ওরা।।চারদিকে একবার চোখ ভুলিয়ে নিলো।বিয়ে বাড়ির এতো এতো মানুষের মাঝে কখন কার চোখে পরে যায় কে জানে।।আর যদি কেউ দেখে দুজন পালিয়ে কোথাও চলে যাবে তাহলে কি সাংঘাতিক কারন হবে। হয়তো কালকে খবরের কাগজে বড় বড় হেডলাইন হয়ে উঠে যাবে “এই শহরের বড় মাফিয়া ফারহান আহম্মেদ নীল বিয়ের রাতে বউ কে নিয়ে পালিয়ে গেছে “?

পা টিপে টিপে বাগানের দিক দিয়ে বের হতেই বলে উঠলো অভনী,,,,,,

—বাইক কোথায় হিরো সাহেব?

অভনীর বাম হাত শক্ত করে ধরে মুচকি হেসে নীল বললো,,,

—বিয়ের রাতে বউ সেজে পালাবা একটু না দৌঁড়ালে কি হয় নাকি গো পরী বউ?পালিয়ে নিঁচে নেমে এসেছো এবার দৌঁড়ে সামনের গেটে বসে থাকা দাঁড়োয়ানের চোখ ফাঁকি দেও।।

—হুহ আপনার কি মনে হয় আমি দৌঁড় পারি না?চলুন দৌঁড় শুরু করা যাক।।

দুজন এক দৌঁড়ে বড় গেট পার হয়ে গেলো।।দাঁড়োয়ান চাচা এতোক্ষনে গভীর ঘুমে বিভোর থাকায় তার সামনে দিয়েই রাস্তা দিয়ে যে এক জোড়া নবদম্পতি পালিয়ে গেলো তা দৃষ্টিগোচর হলো না ওনার।।

দৌঁড়ে সামনে গিয়েই বুকে হাত দিয়ে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিতে লাগলো অভনী।নীল ফিক করে হেসে বললো,,,,

—এতোটুকু দৌঁড়েই এমন অবস্থা? এমন এনার্জি নিয়ে পালাতে আসছো তুমি?

—হুহ যেই দশমোন ভারী ড্রেস আর গহনা আমার সাথে তা নিয়ে তো আপনি নড়তেই পারতেন না। (মুখ ভেংচি কেঁটে)

—হু হইছে।

অভনী কে কোলে তোলে নিয়ে হাঁটা ধরলো নীল।অভনীর চোখের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠলো সে,,,,,

—কি ব্যাপার মহারানী!দশমোন ভারী ড্রেস গহনার সাথে যে আরেকটা আটার বস্তা নিলাম তাতেও তো আমার হাঁপাহাঁপি লাগছে না।?

অভনী রাগান্বিত চোখে নীলের দিকে তাকিয়ে বললো,,,

—কিহহহ! আমি আটার বস্তা?আমি থাকবে না আর আপনার কোলে।।নামান বলছি।

বলেই নীলের বুকে কিল ঘুষি মারতে লাগলো।।কিন্তু নীলের বডিতে এই কিল ঘুষি কোনে রকম হেলদোল করতে পারলো না।।আরেকটু সামনে গিয়ে অভনীকে কোল থেকে নামাতেই মুখ ফুলিয়ে সামনের দিকে তাকালো সে।কিন্তু তার সামনেই ফুলে ফুলে সাজানো একটা নতুন বাইক দেখে খুশিতে লাফিয়ে উঠলো সে।।

নীল এগিয়ে এসে অভনী কে বললো,,,,

—আমার বউ বলে কথা আজকের রাতে পুরাতন গাড়িতে চড়াই কিভাবে!তাই সামনের দোকানেই অর্ডার দিয়েছি ব্লু কালারের বাইকে সাজিয়ে দেবার জন্য।।। তবে আজকে তুমি চালাবে আর আমি পেছনে বসে থাকবো।

—নাহহহ আমি বাইক চালাতে পারিনা হিরো সাহেব।।বিয়ের রাতেই হাত পা ভেঙে আতুরা হয়ে বসে থাকার মতো কোনো স্বপ্ন আমি দেখিনি হিরো সাহেব। (অসহায় মুখ করে)

—তাহলে তো আরো ভালো স্মৃতি টা নাহয় একটু বেশিই ভালো করে থাকুক।

—হুহ চাইনা আমার এমন স্মৃতি। বাসায় চলে যাবো আমি। (মুখ ফুলিয়ে)

নীল অভনীকে বাইকের আরেকটু সামনে নিয়ে এসে বললো,,,,

—আমি থাকতে এমন কিছুই হতে দিবোনা পরী বউ।

অভনী আমতা আমতা করে সামনে উঠে বসতেই পেছনে নীল উঠে বসলো।অভনীর দুহাতের উপর নিজের হাত রেখে অভনীর ঘাড়ের উপর মুখ রেখে বলে উঠলো নীল,,,,

—আমি তোমার চেহারা নয় মনটাকে ভালোবেসে ফেলেছি।পদ্মফুল যেমন যেখানে সেখানে পাওয়া যায় না, তোমার মতো জীবন সঙ্গিনীও হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় না।তুমিই আমার সেই পদ্মফুল, যে ফুটে থাকবে আমার মনে আজীবন।।তুমিই #আমার রাজ্যের রানী পরী বউ।

অভনী চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো।নীলের প্রতিটি ভারী নিঃশ্বাস পরছে তার ঘাড়ে।গাড়ি চলতে শুরু করায় চোখ মেলে তাকালো অভনী।অভনীর ঘাড়ে মাথা রেখেই হাতের উপর হাত দিয়ে বাইক চালাচ্ছে নীল।।গাড়ি চলতে শুরু করলো তার নিজস্ব গতিতে গন্তব্যের উদ্দেশে।। গড়ির কাঁটা দুইটার ঘরে গিয়ে টিকটিক করে বেজে উঠলো।কিন্তু এখন আর “অভনীলের” ব্যাস্ততা নেই।।থালার মতো চাঁদের জোৎস্নার আলোর সাথে সাথে ছুঁটে চলছে তারাও।।এমন সময় মনে হলো এতো কেনো নিরবতা?চুপকথা তো আকাশের গায়েই লেখা যায়।।ক্ষনে ক্ষনে ল্যাম্পপোষ্টের আলো এসে পরছে নববধূর লজ্জা মাখা চোখে মুখে।ছাড়া গলায় গান ধরলো নীল,,,,,

“এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো তুমি বলো তো”

গান শেষ হবার একটু পরেই তীব্র গতিতে তিনটি বাইক ওদের কে অতিক্রম করে সামনে চলে গেলো।।শহরের রাস্তা থেকে বেশ কিছুটা দূরে চলে এসেছে তারা।রাস্তায় ছিলো শুনশান নীরবতা। এমন সময় হুট করে তিনটে বাইক চলে আসায় বেশ ভয় পেয়ে গেছে অভনী।।কিন্তু নীল ভ্রক্ষেপহীন।।অভনী বাইকে গুটিশুটি মেরে সামনে চলতে থাকা বাইক গুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো।।কিছুটা দূরে ল্যাম্পপোষ্টের আলোর কাছে গিয়ে সামনের দিকে ফিরে সিরিয়াল ভাবে দাঁড়িয়ে রইলো বাইক গুলো।।অভনীদের বাইক যতটা এগোচ্ছে ওর ভয় ততোই বাড়ছে।। লোক গুলো খারাপ নয়তো??এখন আমার হিরো সাহেবের কোনো ক্ষতি করবে নাতো? এমন হাজারো ভাবনার ভয়ে নীলের হাত টা খামছে ধরে রইলো অভনী।।ওদের বাইক আরেকটু সামনে যেতেই ল্যাম্পপোষ্টের আলো তে সামনে তাকিয়ে বাইকে বসে থাকা ছেলেগুলোর সাদা রঙের টি-শার্টের পেছনে লাল রঙের কালি তে লেখা “I love you” শব্দটা তীক্ষ্ণ ভাবে গেঁথে গেলো অভনীর চোখে।।ঘার ঘুড়িয়ে নীলের দিকে তাকানোর আগেই বাইকের স্প্রিড কমিয়ে আরেক হাতে পকেট থেকে একটি রিং বের করে অভনীর বাম হাতের মধ্যমা আঙুলে পরিয়ে দিয়ে বলে উঠলো নীল,,,,,,

—বিয়ে তো হয়েই গেলো পরী বউ।।এবার বলো তুমি কি আমার কিউট কিউট ফুসকি সোনার আম্মু হবে?

লজ্জামাখা হাসি দিয়ে মাথা এলিয়ে নীলের দিকে তাকিয়ে অভনী বললো,,,
—হাম হাম।।আমি তো তোমার তুমি তে অনেক আগেই বেঁধে গিয়েছিলাম হিরো সাহেব।।তোমার নেশা ভরা চোখের চাহনী তে বারবার খুন হয়ে যাই আমি।।’ভালোবাসি’ শব্দ টাতে নতুন করে প্রেমে পরে যাই আমি।।আমি তো সেই কবেই হয়ে গেছি তোমার রাজ্যের রানী। “ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি”।

অভনীর মুখে এই প্রথম তুমি ডাক শুনেছে নীল।তাই মনের গহীনে শতশত ভালোলাগার মাঝে আরেকটু ভালোলাগা এসে জমাট বেঁধেছে তার।।কথা বলতে বলতেই সামনে দাঁড়ানোর বাইক গুলোর কাছে এসে বাইক থামিয়ে দিলো নীল।।সামনে থেকে পেছনে মুখ ঘুরিয়ে তাকালো নীরব,,নীর্ঝয়, আর মাহিব।।ওদের দেখে আরেক দফা অবাক হলো অভনী।।একফালি হাসি মুখে ঝুলিয়ে রেখে বলে উঠলো নীরব,,,,

—বাহ কি কপাল আমার।।ছোট ভাই তার বউরে প্রপোজ করবে সেই কারনে রাত ২ টা বাজে ঘুরে বেড়াতে হয় আমার। বলি ভাই তোরা ঘর ছাইরা এমন দেশান্তর হয়ে ঘুরছিস কেন?

নীরবের কথায় অভনী আবারো লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো।নীল অভনীর দিকে একনজর তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললো,,,,

—আমার বউ টাকে আর লজ্জা দিস না রে দাদা ভাই।।যেই ভাবে বারবার টমেটোর মতো লাল নীল হয়ে যাচ্ছে কে জানে কখন কি করে বসি।।

এটা বলেই নীল আবারো গাড়ি চালাতে লাগলো।। নীরব,,নীর্ঝয় আর মাহিব চলে গেলো নিজেদের গন্তব্যে।।অভনী কনুই দিয়ে নীলের পেটে ধাক্কা দিয়ে বললো,,,,

—তুমার কি লজ্জা বলতে সব কিছু মুঁছে গেছে নাকি বলো তো??

নীল মুচকি হেসে গাড়ির স্প্রিড আরো বাড়িয়ে দিয়ে বললো,,,,

—আমার ভালোলাগায়,, ভালোবাসায়,,অশ্লীলতায় সব কিছুতেই তে শুধু তুমি পরী বউ ❤

.

.

.

?
———–
প্রথম দিনের সেই নদীর তীরের কাছে এসেছে ওরা দুজন।নদীর তীর ঘেঁষে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে সাজানো এক ছোট্ট ডিঙি নৌকা।।
আজ নৌকায় কোনো মাঝি নেই।আগের বারের সেই মাঝি বিনুদ মামা কে আসার আগেই ফোন দিয়ে বলে দিয়েছে সব নীল।।

নীল নৌকার উঠে অভনীর হাত ধরে নৌকায় উঠালো,,,,গোলাপের পাপড়ি আর বেলুন দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে নৌকা টা।

অপর পাশের পাটাতনে গিয়ে বসে পরলো অভনী।।নৌকা বাঁশ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে একটা বৈঠা নিলো নীল হাতে।।নৌকা ভেয়ে অভনীকে নিয়ে দূর অজানায় পাড়ি জমাবে আজ সে।

অবেলায় নদীর তীরের সবুজ ঘাস আর জলের মোহ গন্ধে সবার চোখ বুঁজে আসতে চায়,,তখন অভনীর দেহ মনের ভাঁজে প্রেমের গাঢ় স্পন্দন। চোখ মেলে দিয়ে ছিদ্রবিহীন জালে নিজেকে জরিয়ে ফেলে এই কন্যা।

সমস্ত দুঃখ ভুলে জলের গ্রান বুকে পুষে চোরা স্বপ্নে ডুবে খিলখিলিয়ে হেসে উঠে অভনী।।আঙুলের ডগায় রঙিন প্রজাপতির স্পর্শ চুপটি করে আগলে নেয় এইসব ক্ষনকাল।

বৈঠা হাতে নৌকা চালাতে চালাতে এক দৃষ্টিতে অভনীর দিকে তাকিয়ে আছে নীল।।অভনী উঠে এসে নীলের সামনে বসলো।।নীল হাত ছরিয়ে অভনীকে বাহুডোরে আবদ্ধ করে ধীর গতিতে নৌকা চালাতে লাগলো।।রাত ৩ টা ছুঁই ছুঁই।হারিয়ে যাবার যাত্রায় এমন ঘোর লাগা সবুজ বনে টলমল করা পানির গন্ধে পুলকিত সুনয়নার চোখের সামনে লুকোচুরি খেলে যাচ্ছে মিঠে বাতাস আর মেঘলা আকাশের রঙ পরিবর্তনের পর্ব।

রঙ বদলানোই যে নিয়তির খেলা!আর অবাক হতে হতে জীবনের রঙের মরচে গুলো মনে পরতে গিয়েও মনের হাল ধরে মনকে প্রকৃতির গহনে ডুবিয়ে সরিয়ে নিচ্ছে অভনী।।দুজন মানুষের ভালোবাসা আর মুগ্ধতা নিয়ে নৌকা এগিয়ে চলছে উদ্দেশ্যহীন ভাবে।চলার পথ নিঝুম হলেও স্বপ্ন বহুদূর পর্যন্ত ব্যপ্ত।।যে নদী যতো গভীর তার বয়ে যাওয়ার শব্দ যে ততো কম।দুজন নবদম্পতি তাকিয়েই রয় বহুদূর।।

কিছু কথা আপ্লুত করার জন্য নয়,, নিজের সাথে নিজের মনের সমঝোতার জন্যই নিরবে প্রকৃতির বুকে তলিয়ে গিয়ে নিজেকেই আয়ত্ব করছে দুজনের।।অতঃপর চোখেমুখে রাজ্যের উচ্ছ্বলতায় প্রগাঢ় প্রেম টলমল করে সরোবরের গভীর জল ছুঁয়ে।চুলের খোলা স্পর্শে যেন আরো প্রানবন্ত সরোবরের জল।

জলের শরীরে আচঁল ডুবিয়ে কি যেনো কথা কয়ে যায় অভনীর মন,,,সমস্ত পৃথিবীর অনমনীয়তাকে ছুটি দিয়ে ভাবছে অভনী,,,,

—এমন একটা দিন কি মৃত্যুর আগে পর্যন্ত স্মরণে রনে থাকার বাইরে হতে পারে??নাকি প্রতিনিয়ত মনে করিয়ে দিবে দাম্পত্য জীবনের প্রথম দিনটি?মনে করিয়ে দিবে মানুষটার অজস্র ভালোবাসার কাহিনী ❤।

নিজেদের মেলে দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্য প্রকৃতির নিরাভরণ বুকেই যে চিরতরে জাগ্রত হয় ওদের মন।অজস্র সময়ের ভীড়ে এমন প্রিয় সময় গুলো পেলো আজ ওরা।
মনের জানালা খুলে দিয়েছে আজ অভনী!! স্বাধীনতা যে বড্ড প্রিয়! হাসতে ইচ্ছে করে,, গাইতে ইচ্ছে করে আবার জলের তলায় লুকোতেও ইচ্ছে করছে খুব তার।
কেন ফিরতে হবে লোকালয়ে!!! হুয়াই?
পারে না কি সময় টা থমকে যেতে?পারে না দুজন মানুষ জলের দ্বারায় আজ হারিয়ে যেতে??
এমন একটা দিন কেই বা না চায় ভালোবাসার স্বপ্নে ❤।

#চলবে,,,,,,

(আবারো হয়তো কয়েক দিন গল্প দিতে পারবো না।তাই অপেক্ষা করবেন না কেউ ?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here