আমার রাজ্যের রানী পর্ব-৩১

0
680

#আমার রাজ্যের রানী
#Part : 31
#Writer : Sriti Nur Avni

?
ক্যান্টিনের চেয়ারে গাঁ এলিয়ে দিয়ে বসে আছে অভনী।তার ঠিক সামনের চেয়ার দুটোতে টেবিলে মাথা নিচু করে বসে আছে জয়া আর জুথি।বড্ড ক্লান্ত ওরা।মেডিকেল নামক প্যারায় আটকে গেছে যে।
মেডিকেল!!
শব্দ টা যতটা সহজ তার থেকে হাজার গুন কঠিন রয়েছে প্যারা।ভেবেছিলো কোনো রকমে চান্স পেয়ে ভর্তি হতে পারলেই হবে,,,পরে আর কোনো প্যারা নাই।বিন্দাস লাইফ।
কিন্তু না!প্যারা নাই শব্দ টা যে নিতান্তই ভুল তা খুব ভালো ভাবে একদিনেই বুঝে গেছে ওরা।এই জন্যই বুঝি সবাই বলে ‘সাইন্স’ নাম টাই নিরামিষ। নাই কোনো আনন্দ নাই কোনো উল্লাস।সারাক্ষন শুধু পড়া আর পড়া!

এক বোতল পানি ছাড়া আর কিছুই অর্ডার দিলো না অভনী।জুথিও সেম।ওরা কিছু খাবেনা বিধায় জয়াও তিনটাও আইস-ক্রিম ছাড়া অন্যকিছু অর্ডার দিলো না।

অর্ডার দিয়ে আবারো চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো অভনী।হঠাৎ কেউ একজন এসে ডেকে উঠলো,,,

—ভাবি।

কিন্তু না!অভনী চোখ খুললো না।কারন ভাবি নামক শব্দ টা তার জন্য বেমানান।ও তো কারো বউ/প্রেমিকাই না তাহলে ভাবি হবে কিভাবে?নিশ্চয়ই অন্য কাউকে ডাকছে।কিন্তু জয়ার চিল্লানের শব্দে হুরমুড়িয়ে উঠে পরলো অভনী,,,চোখ দুটো বড় বড় করে বুকে ফু দিয়ে রাগী চোখে জয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,,,,

—এভাবে গরুর মতো বেমাস কেন?

—ডাকমু না তো কি করমু?তুই এটা করতে পারলি? (জুথি)

অবাক নয়নে তাকিয়ে বলে উঠলো অভনী,,

—কি করছি?

কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে উঠলো জয়া,,,

—তুই বিয়ে করছিস আর আমাদের একবারও বললি না?হুহ এই নাকি বেস্টু।সর সর জামাইর কাছে যা।আসবি না আমাদের কাছে।

রাগী চোখে তাকিয়ে বলে উঠলো অভনী,,,,

—একটা থাপ্পড় দিয়ে সব দাঁত ফেলে বুড়ি বানিয়ে দিবো তোকে।আমাকে দেখে কি বিবাহিত মনে হয়?আমার বিয়ে হইছে আমিই জানিনা আর তোরা কি বকবক করছিস।

মুখ ভেংচি কেটে বলে উঠলো জুথি,,,

—হু দুইদিন পর শুনমু আমরা খালা হয়ে গেছি আর তুই দুই বাচ্চার মা।বিয়ে নাহলে কি সেই কখন থেকে এই ছেলে তোকে ভাবি ভাবি বলে ডাকে?

ভ্রু জোরা কুঁচকে সামনে অসহায় মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার দিকে তাকালো অভনী।এতোক্ষন ওদের ঝগড়া দেখে ছেলেটা যে অসহায়ত্বে পরে গেছে তা ওর মুখে স্পষ্ট।রাগী চোখে তাকিয়ে ছেলেটির কাছে প্রশ্ন ছোড়ে দিলো অভনী,,,

—আপনি আগে কখনো আমায় দেখেছেন?

ছেলেটি তুমুল গতিতে মাথা নাড়িয়ে বুঝাতে চাইলো “না”।
ছেলেটার দিকে আরেকটু এগিয়ে বলে উঠলো অভনী,,,,

—তাহলে আমি আপনার কোন জন্মের ভাবি লাগি?

হাবলাকান্ত একটা হাসি দিয়ে ছেলেটি বললো,,,,

—ভাবি আপনি আমার এই জন্মের ভাবি।

—ওই পোলা আমি আপনার কোন ভাইয়ের বউ যে কখন থাইকা ভাবি ভাবি করছেন?(চিল্লিয়ে)

—আমাদের বড় ভাইয়ের ভাবি।থুক্কু আমাদের বড় ভাইয়ের বউ আর আমাদের ভাবি।

—এইখান থেকে যাবেন নাকি একটা চড় মেরে সব দাঁত ফেলে দিবো?বড় ভাই বড় ভাই করতেছেন বড় ভাইয়ের কি নাম নাই? (রাগে রিরি করতে করতে)

টেবিলের উপর মোড়ানো একটা কাগজ রেখে ছেলেটা মূহুর্তের মধ্যে হাওয়া হয়ে গেলো।চারদিক দিয়ে চোখ ঘুরিয়ে দেখলো অভনী।নাহ নেই!ছেলেটা আসেপাশের কোনো ঠিকানায় নেই।ছেলেটার এমন ভোঁ দৌড় দেখে জয়া আর জুথি খিলখিল করে হাসতে লাগলো।৷বিরক্তিকর চোখে ওদের দিকে তাকিয়েই আবারো চেয়ারে টুপ করে বসে পরলো অভনী। এতোক্ষন হয়ে গেলো এখনো পানি দিয়ে যাচ্ছে না।ইছে করছে ইট দিয়ে সবগুলোর মাথা ফাটিয়ে ফেলতে।মন ভরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাম হাত টা আড়াআড়ি ভাবে কপালে দিয়ে টেবিলে কনুই রাখতেই চোখ গেলো চার ভাজ করে মোড়ানো কাগজটির দিকে।।

কপাল কুঁচকে আরো একবস্তা বিরক্তি নিয়ে কাগজ টা হাতে নিলো অভনী।এতোক্ষনে হাসি থামিয়ে তুমুল উৎসাহ নিয়ে তাকিয়ে আছে অভনীর দিকে জয়া আর জুথি।
গুটিগুটি হাতে মোড়ানো কাগজ টা খুলতেই গোলাপি রঙের কালিতে বড় বড় অক্ষরে ফুটে উঠেছে লেখাগুলো।যেথায় একরাশ আবেগ নিয়ে লেখা হয়েছে,,,,

“কালকের ওই গোলাপি রঙের শাড়িটা যে কি মারাত্মক ভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলো তোমায় তা কি জানো তুমি?খুব মানিয়েছিলো রংটা,,সাথে লজ্জা মাখা রক্তজবা রঙের ওই গাল দুটো।ইচ্ছে তো করছিলো,,,থাক না!না বলা কিছু কথা!লজ্জা পাবে তুমি।কোনো একদিন সাগর পাড়ে আমার সামনে বসিয়ে রেখে লজ্জামাখা কথাগুলো নাহয় শুনাবো তোমায়।আর তুমি!লজ্জায় রক্তজবা বর্ন ধারন করে গোলাপের পাপড়ি হয়ে নাহয় মুখ লুকাবে আমার বুকে।আর আমি প্রান ভরে দেখবো তোমায়।কালকে চোখ সড়াতে ইচ্ছে না করলেও পুরো ধমে নিজের সাথে যোদ্ধ করে চোখ নামিয়ে রেখেছি আমি!মনে হচ্ছিলো এই বুঝি তীব্র গতিতে বুকের ধুকপুকানি শব্দ টা তুমি শুনে নাও।শুধু একটা বার ভালোবাসা ময় চোখে তাকিও আমার দিকে! সেই চাহনিতেই যে আমি কুপোকাত! সেই চাহনিতে হাজার বার মরতে চাই আমি প্রিয়তমা।
ইতি,,
তোমার ফুসকি সোনার আব্বু ?”

বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে অভনী চিঠিটার দিকে।প্রেমপত্র সে প্রথম পায়নি!স্কুল লাইফে বেশ কয়েক বার প্রেমপত্র পেয়েছে সে।কিন্তু এটা!এটাকে ঠিক কি সম্বোধন করা যায় তা জানা নেই অভনীর।এটা কি আসলেই প্রেমপত্র??
কিন্তু হাতের লেখাগুলো বড্ড চেনা চেনা লাগছে তার।তাহলে কি কাছের কেউ?

পাশ থেকে চরম উওেজনার সহিত মুখে একরাশ প্রশ্ন বোধক চিহ্ন ঝুলিয়ে রেখে বলে উঠলো জয়া,,,

—কিরে?নিশ্চয়ই এটাতে লেখা আছে প্রিয়তমা তোমার দ্বিতীয় নাম্বার বাচ্চাটা তোমাকে ছাড়া ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছে তারাতাড়ি চলে আসো।এই জন্যই তুই আমাদের শুনালি না তাইতো?

জয়ার কথায় আবারো বিরক্তি গুলো প্রায় চাপাচাপি করে দৌঁড়ে এসে ভর করলো অভনীর মধ্যে। হাতে থাকা কাগজ টা ডিলা মেরে দিয়ে দিলো জয়ার কোলে।চরম আনন্দে আর পশ্নেরর উত্তরের ঝুলি হাতে পাওয়ায় মূহুর্তেই চোখ দুটো চিকচিক করে উঠলো ওদের।কপালে হাত রেখে যখনি টেবিলে কনুই ছোঁয়াতে যাবে তখনি ক্যান্টিনের কয়েকজন ওয়েটার মিলে পুরো টেবিল ভরে খাবার দিয়ে গেলো।।
কপাল থেকে হাত সরিয়ে অবাক নয়নে তাকালো খাবার গুলোর দিকে।পরমূহুর্তেি চট করে উপরে তাকাতেই কোনো ওয়েটার কে দেখতে পেলো না।
কপাল কুঁচকে জয়া আর জুথির দিকে তাকাতেই দেখলো খুব আনন্দের সহিত চিঠিখানা পড়ছে ওরা।
চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে চিল্লিয়ে ডাকতে লাগলো ওয়েটার দের।কিন্তু না!বেস্টু নামক দুটি প্রানী যে সামনে আছে এতো চিল্লানোর শব্দেও ওদের কোনো ভাবান্তর নেই।ওদের দেখে মনে হচ্ছে সামনে এখন কুরুক্ষেত্র ভয়ে গেলেও এই মূহুর্তে চিঠি শেষ করার আগে তাকানো নিষেধ। চরম আকারের নিশেষ!

অভনীর ডাকে দুজন ওয়েটার দৌঁড়ে এলো।ভয়মাখা চোখে অভনীর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো একজন,,,,

—এনি প্রবলেম ভাবি?

ভাবি!এই ভাবি শব্দ টা যে এই মূহুর্তে দ্বিগুন থেকে তিনগুন রাগ বাড়িয়ে দিচ্ছে তা অভনীর চেহারায় স্পষ্ট। রাগে রিরি করতে করতে বলে উঠলো সে,,,,

—ওই কোন কালের ভাইয়ের বউ আমি আপনাদের?দুইদিন হয়নি আসছি আর এখনি ভাবি হয়ে গেলাম?আপনাদেরকে সেই আধা ঘণ্টা যাবৎ পানি দিতে বললাম অথচ আপনারা আধা ঘণ্টা পরেও পানি না দিয়ে ভুল টেবিলে এতো গুলো খাবার দিয়ে চলে গেলেন?it’s kind of a job?

আমতা আমতা করতে করতে বলে উঠলো একজন,,,,

—ভা..বি ভুল টেবিলে না।এটা আপনাদেরই খাবার।বড় ভাই আপনার ছবি দেখিয়ে আমাদের বলে দিয়েছে আপনার কাছ থেকে যেনো টাকা না নেই আর ভালো ভালো খাবার দেই, কারন আপনি ওনার বউ।আর আমাদের ভাবি।

—হুয়াট দা হেল বড় ভাই বড় ভাই! কে এই বড় ভাই?যে আমার জামাই ক্যাম্পাসের সবাই জানে অথচ আমিই জানিনা।নাম কি ওনার?

ওয়েটার কিছু বলার আগেই পাশের চেয়ার থেকে জয়া আর জুথির খিলখিল হাসির শব্দে সবাই এক সাথে ভ্রু কুচঁকে তাকালো ওদের দিকে।হাসির রুল থামিয়ে বলে উঠলো জুথি,,,

—দোস্ত সেই লেভেলের প্রেমপত্র দিয়েছে রে তোর ফুসকি সোনার আব্বু?।

অভনীর পুরো শরীর রাগে রিরি করছে।অপরপাশ থেকে জয়া হাসি থামিয়ে খাবারের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো ,,,,,

—আউ কি কিউট কিউট খাবার।বড় ভাইয়ের পছন্দ আছে বলতে হবে।সেই লেভেলের খাওয়া হবে আজ। কি হলো ভাবি বস বস খেয়ে নে।ভাবির সোয়ামি আর আমাদের বড় ভাই আজ প্রথম ট্রিট দিছে বলে কথা।(চোখ টিপ দিয়ে)

অভনীর ইচ্ছে করছে সবগুলো খাবার ওদের গায়ে মেখে দিয়ে গোসল করিয়ে দিতে।।রাগে রিরি করতে করতে চেয়ারে রাখা ব্যাগ টা নিয়ে ধুপধাপ করে হেঁটে চলে যেতে লাগলো ক্যান্টিন থেকে।বেস্টু নামক জিনিস টাই হয়তো এমন!যখন পঁচানো হয় পুরো ধমে পঁচায় একসাথে মিলে।মনে মনে ওদের একগাদা বকা দিতে দিতে হাঁটছে অভনী,,,
“নাহ এই জলহস্তি দুটো আমার বেস্টু হতে পারে না!কোনোক্রমেই না!ইচ্ছে করছে ওই বড় ভাইয়ের সাথে এই দুইটা কেও ব্লেন্ডারে দিয়ে ফিনিশিং করে দেই।জামেলা শেষ”।

.

রাগে ফুসফুস করতে করতে ক্যাম্পাসের এক গলির মোড় পাড় হতে নিলেই একটা খাম্বার সাথে ধাক্কা খেয়ে ধপাস করে খাম্বা টা সাথে নিয়েই নিচে পড়ে গেলো অভনী।।কিন্তু কপালে কারো ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠলো সে।।কোনো খাম্বারও ঠোঁট থাকে?ভাবতেই চোখ জোরা দিয়ে উপরে তাকাতেই নীল কে দেখে চোখ দুটো রসগোল্লার মতো বড় বড় হয়ে গেলো তার।নীলের চোখ দুটোও রসগোল্লা হয়ে আছে।ব্যাপার টা যে আনফরচুনেটলি হয়ে গেছে তা বেশ বুঝতে পারছে ওরা।কিছুক্ষন ওভাবে থেকে ব্যাপার টা বুঝতে পেরেই তারাতাড়ি করে আসে পাশে চোখ ঘুরালো অভনী।
চারপাশে এতোক্ষনে বেশ কয়েক জন স্টুডেন্ট এসে জমে গেছে।এই মূহুর্ত্যে সব রাগ উদাও হয়ে গিয়ে একড্রাম লজ্জা এসে ভর করেছে অভনীর মধ্যে।ইচ্ছে করছে নীলের শার্টের ভিতর মুখ লুকিয়ে লজ্জা নিবারন করতে। কিন্তু না! এই মূহুর্তে এই কাজ টা যে অত্যান্ত বেশি পরিমানে লজ্জাজনক হবে তা বেশ বুঝতে পারছে সে।
অভনী যখন লজ্জায় লাল নীল বেগুনি হতে ব্যাস্ত তখনি ওর কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো নীল,,,,

—আপনার মাথার নিচে আমার হাত মিস. অভনী।মাথা টা একটু উঠান আমি হাত সরিয়ে উঠে দাঁড়াই।আর আপনার যদি ইচ্ছে থাকে আজ সারাদিন এভাবেই থাকবেন তাহলে বলুন আমি খাবারের অর্ডার দিচ্ছি,,,আমার কোনো প্রবলেম নাই।

এই মুহূর্তে অভনীর ইচ্ছে করছে আল্লাহ মাটি ফাক করো আমি নিচে চলে যাই।নইলে দড়ি ফালাও আমি উপরে চলে যাই?

একরাশ লজ্জা নিয়ে মাথা উঠাতেই আবারো কপালে ঠোঁটের স্পর্শে কেঁপে উঠলো অভনী।চোখ বড় বড় করে উপরে তাকাতেই দেখলো ততক্ষণে নীল দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ও উঠার জন্য।

লজ্জায় লাল হয়ে কোনোরকমে ব্যাগ টা নিয়ে নীলের হাত না ধরেই উঠে দাঁড়ালো অভনী।এই মূহুর্তে নীলের সামনে আর দাঁড়ানো যাবে না।ভাবতেই শাড়ির কুঁচি ধরে জোরে জোরে সামনের দিকে হাঁটা দিলো অভনী।কি ভয়ংকর অবস্থা! ভাবতেই গাঁ শিউরে উঠছে তার।ইচ্ছে করছে লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে।

.

.

.

?
——————————
সকালে ঘুম ভাঙতেই পাশের চেয়ারে টি শার্ট আর প্লাজু পড়ে থাকা নীরাকে দেখে চমকে উঠলো নীর্ঝয়।হাত দিয়ে চোখ দুটো ডলে দেখতে চাইলো ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখছে নাতো?কিন্তু না!
বার বার করে চোখ ডলেও সামনে ঘুমন্ত এক পরীকে দেখতে পাচ্ছে সে।মেয়েটাকে প্রথম প্রথম একগাদা মেকাপের আড়ালে মায়াবী না লাগলেও এখন খুব বেশিই মায়াবী লাগে নীর্ঝয়ের কাছে।ঘুমন্ত অবস্থায় সেই মায়াটা যেনো দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে,,,নীর্ঝয়ের এখন খুব করে মনে হচ্ছে “কি দরকার নিজের মায়াবী চেহারা টাকে মেকাপের আড়ালে ডেকে রাখার?”

নীরার দিক থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকালো নীর্ঝয়।পরক্ষনেই মনে হলো এটা তো ওদের বাসার ওদের ব্যালকোনী।এখানে নীরা কিভাবে?

ভাবতেই চিল্লিয়ে উঠলো নীর্ঝয়।নীর্ঝয়ের চিল্লানোর শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো নীরার।আড়মোড়া ভেঙে উঠে দাঁড়িয়ে ঘুমু ঘুমু চোখে বলে উঠলো,,,,

—কি হয়েছে কি?এভাবে চেচাচ্ছেন কেনো?

—কি হয়েছে?আপনি আমাদের বাসায় কি করছেন? (রেগে)

নীর্ঝয়ের কথায় সাথে সাথেই ঘুমের রেশ কেটে গেলো নীরার।চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলো সকাল হয়ে গেছে।এবার কি হবে!বাসায় যাবে কিভাবে!ওর তো রাতেই চলে যাবার কথায়।ঘুম বাবাজির সাথে যুদ্ধ করতে ইচ্ছে করছে নীরার।

নীর্ঝিয়ের দরজায় টোকা পড়ায় ভাবনার জাল ফুটো হয়ে গেলো নীরার।
দরজার অপর পাশ থেকে বাবার কন্ঠ শুনে থতমত খেয়ে গেলো নীর্ঝয়।বাবা যদি দেখে আমার রুমের বারান্দায় একটি মেয়ে তাহলে কি হবে?ছিছি কি ভাববে বাবা আমাকে নিয়ে?
কিন্তু না!অনবরত ডাকে আর বেশি ভাবতে পারলো না নীর্ঝয়।বলে উঠলো নীরাকে,,,

—এইখানে সোজা হয়ে শুয়ে থাকুন যেনো বাবা রুমে আসলেও দেখতে না পায় আপনাকে।একদম বের হবেন না এখান থেকে।

নীরাকে বলেই তীব্র গতিতে শব্দ করতে থাকা দরজার দিকে এগিয়ে গেলো নীর্ঝয়।বার বার পিছন ঘুরে ব্যালকুনির দিকে তাকাচ্ছে নীর্ঝয়।কি এক মারাত্মক পরিস্থিতি তে পরেছে সে!পাপ না করেও কোন পাপের ভাগিদার হতে হয় আল্লাহ জানে।ভাবতে ভাবতেই দরজা খুলে দিয়ে মুখে ইননোসেন্ড মার্কা হাসি ঝুলিয়ে বলে উঠলো নীর্ঝয়,,,,

—বাবা তু..মি?

—হ্যাঁ আমি!তোর চিল্লানোর শব্দেই তো আসলাম।কি হয়েছে এভাবে গরুর মতো চিল্লিয়েছিস কেন?

—ওহ ওই তো নীর….

এতোটুকু বলেই থেমে গেলো নীর্ঝয়।নিজের চুল গুলো টেনে টেনে ছিড়তে ইচ্ছে করছে এখন।কি থেকে কি বলে ফেলছিলো এখন।ক্যাবলাকান্ত মার্কা মুখ করে বলে উঠলো আবারো,,,,

—বাবা তে..লাপোকা।

ছেলের কথা শুনে ডক্টর হাফিজুর রহমান হুহু করে হেসে বললো,,,,

—লাইক সিরিয়াসলি মাই সান?তুই মেয়েদের মতো তেলাপোকা ভয় পাস?তাও আবার এমন ভাবে চিল্লানি?
তো এতোক্ষন লাগলো কেনো দরজা খুলতে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলি নাকি?

হাত জোরা এক করে নাড়াতে নাড়াতে বলে উঠলো নীর্ঝয়,,,

—ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম।

—-কিহ!মাত্রই তো চিল্লানি দিলি তেলাপোকা দেখে।আর এখনি ঘুমিয়ে গিয়েছিলি? (অবাক চোখে)

—না না আমি ওয়াস….ওয়াসরুমে ছিলাম বাবা।(আমতা আমতা করে)

—ওকে ফ্রেশ হয়ে আসো নাস্তা করবো।

—-ওকে বাবা তুমি যাও আমি আসছি।

বাবা চলে যেতেই দরজা লাগিয়ে বুকে হাত রেখে বড় করে নিশ্বাস নিলো নীর্ঝয়।একটু আগের মূহুর্তে নিজের মতো অসহায় আর কেউ ছিলো বলে মনে হচ্ছে না তার।রাগী লুক নিয়ে এগিয়ে গেলো ব্যালকুনির দিকে।নীরা একমনে রকিং চেয়ার টায় বসে দুল খাচ্ছে।ধমক দিয়ে বলে উঠলো নীর্ঝয়,,,,,

—এই মেয়ে তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি।তুমি এখানে আসলে কিভাবে?

আগের মতোই দুল খেতে খেতে বলে উঠলো নীরা,,,,

—আমার আব্বুর সাহায্য।

—মানে? (ভ্রু কুঁচকে)

—মানে খুব সোজা মি. নীর্ঝয়।রাতে আমার আপনাকে দেখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো।ঘুম আসছিলো না।তাই দৌঁড়ে আব্বুর কাছে গেলাম।উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখলাম বাবা রুমে একাই আছে।কারন আম্মুর সামনে বললে আম্মু কখনোই আসতে দিতো না।চুপিচুপি আব্বুর কাছে গিয়ে বললাম আপনাকে দেখতে ইচ্ছে করছে নাহলে সারারাত ঘুমুতে পারবো না।তারপর আব্বু কে সাথে করে নিয়েই চলে আসলাম শশুড় বাড়ি।কিন্তু দূর্ভাগ্য আমার আব্বু কে তার মেয়ের শশুড় বাড়িতে ডুকাতে পারলাম না।আব্বুকে বললাম গাড়িতে বসে থাকতে। আর ততক্ষনে আপনাদের বাসার দাড়োয়ান ঘুমিয়ে বিভোর।দেয়াল টপকে আমার শশুড় বাবার আপনার জন্য করা বড় ব্যালকুনি তে উঠে গেলাম।আহা!কি ভাগ্য দেখুন।এসে দেখি ব্যালকুনি তেই আপনি ঘুমে বিভোর।আপনাকে দেখতে দেখতে বাসায় যাওয়ার কথাই ভুলে গেছি।আর একসময় টুপ করে ঘুমের রাজ্যে।যার ফলস্বরূপ আমি এখনো এখানে।

—হায় আল্লাহ বলে কি এই মেয়ে।তাহলে কি তোমার বাবা এখনো অপেক্ষা করছে তোমার জন্য?

—জি নাহ!আমার আব্বু আপনার মতো না হাবলা না যে আমার মতো ফুটফুটে একটা মেয়েকে তেলাপোকা বানিয়ে দিবে।হুহ!
আব্বু করে আমি মেসেজ দিয়ে জিজ্ঞাসা করেছি।আব্বু বলছে ভোর রাতের দিকে বাসায় গিয়ে আম্মুর হাতে একবস্তা ঝাড়ি খেয়েছে।তবে আজকে সারাদিন কিন্তু আমি এই বাসায়ই থাকবো।কারন রাতের আগে তো আর দাঁড়োয়ানের চোখ ফাঁকি দেয়া যাবেনা।তাই আব্বু বলছে রাতে এসে নিয়ে যাবে।তাই মাই ডিয়ার জামাই আমার জন্য খাবারের ব্যাবস্থা করুন।(চোখ টিপ দিয়ে)

নীরার কতাগুলো শুনবার জন্য নীর্ঝয় যে একদম প্রস্তুত ছিলো না তা ওর রিয়েকশন বাটন প্রেস করা দেখেই বুঝা যাচ্ছে। মুখে বড় একটা হা করে টুপ করে চেয়ারে বসে পড়েছে সে।

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here