আমার রাজ্যের রানী পর্ব-৩০

0
760

#আমার রাজ্যের রানী
#Part : 30
#Writer : Sriti Nur Avni

?
হালকা গোলাপি কালারে সাদা সুতোয় কাজ করা সুতি শাড়ি আর চোখে গাড়ো কাজল,,ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দিয়ে তৈরি হয়ে নিলো অভনী।আজ Orientation Program।যেহেতু ক্যাম্পাসে প্রথম দিন তাই স্পেশাল একটু বেশিই।তার সাথে রয়েছে শরীরের প্রতিটি শিরা উপশিরায় টান টান উত্তেজনা।

শাড়ির কুঁচি ধরে সিড়ি দিয়ে নামতে নামতেই চোখ গেলো ড্রাইনিং টেবিলে জুসের গ্লাস হাতে নিয়ে বসে থাকা অসাধারণ সূদর্শন পুরুষটির দিকে।একহাতে মোবাইল টিপতে টিপতে আরেক হাতে জুস খাচ্ছে সে।আচ্ছা ছেলেটা এতো সুন্দর কেনো?একবস্তা মায়া এসে ভর করে থাকে কেনো সবসময় মানুষ টার মধ্যে?ক্যাম্পাসে কি মেয়েদের ক্রাস খাওয়ানোর জন্যই এভাবে যান নাকি? ওনি কি জানেন না ছেলেদের সুন্দর হতে নেই?সুন্দর তো হতে হয় মেয়েদের।নাহলে মেয়েদের কোনো দাম ই থাকে না।

আড়চোখে নীলের দিকে তাকিয়েই মায়ের রুমের দিকে হাঁটা দিলো অভনী।ড্রাইনিং টেবিল থেকে উঠতে উঠতে বলে উঠলো নীল,,,,

—আমি গাড়িতে গিয়ে বসছি ৫ মিনিটের মধ্যে চলে আসুন।

অভনী টুপ করে দাঁড়িয়ে গেলো।মানুষটা তো আমার দিকে তাকায়নি তাহলে বুঝলো কিভাবে আমি এখানে? আমার মতো আড় চোখেই দেখছিলো?

মা,,নানু আর ছোট মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হাঁটা দিলো গাড়ির উদ্দেশ্য।

হুয়াইট রঙের শার্ট এর সাথে কালো পেন্ট এর পকেটে এক হাত ডুকিয়ে মোবাইল টিপছে নীল।সারাক্ষণ ছেলেটা এতো মোবাইলে কি করে বুঝতে পারেনা অভনী।চোখ থেকে কালো সানগ্লাস টা খুলে ধীর পায়ে অভনীর কাছে এগিয়ে গিয়ে কানের পাশে ফিসফিস করে বলে উঠলো নীল,,,,,

—এভাবে তাকাবেন না!নজর লেগে যাবে।চাইলে সারাজীবনের জন্য only me করে রাখতে পারেন।

চোখ জোরা বন্ধ হয়ে গেলো অভনীর।আবারো সানগ্লাস টা চোখে লাগিয়ে হনহন করে হেঁটে চলে গেলো গাড়ির ভিতর নীল।অভনী মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।নীলের কোনো কথা কান অবধি পৌঁছালেও মাথা অবধি পৌঁছায়নি তার।নীল হুট করে এতোটা কাছে চলে আসবে বুঝতে পারেনি সে।শরীর কাঁপছে অনবরত।চোখের পাপড়ি দুটো এক হয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে দিয়েছে।

গাড়ির হনের শব্দে ঘোর কাটলো অভনীর।নিজের মাথায় নিজেই আস্তে করে চড় দিয়ে হাঁটা ধরলো গাড়ির উদ্দেশ্য।

সারা রাস্তায় একবারো অভনীর দিকে তাকায়নি নীল।অভনী আড়চোখে একবার নীলকে দেখছে তো একবার নিজের দিকে তাকাচ্ছে।গাল ফুলিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে ভাবছে,,আজকে কি এতোটাই খারাপ দেখাচ্ছে আমায় যে একটুও তাকাচ্ছে না?হুহ না তাকাক তাতে আমার কি?ওনি তো নিতু আপু কে ভালোবাসেন।

ক্যাম্পাসের সামনে আসতেই গাড়ি থামিয়ে অভনীর সিট বেল্ট খুলে দিলো নীল।গাড়ি থেকে নামতেই অনেকে এসে কুশল বিনিময় করলো নীলের সাথে।অভনী আজ নতুন।কিছুই চেনে না সে ভালো করে।চারপাশে কতকত মানুষ ছুটোছুটি করছে।কেউ বা অসুস্থ আপন জনকে নিয়ে আসছে,, কেউ বা ফিরিয়ে বাসায় নিয়ে যাচ্ছে,,।নীলের সাথে সাথে হেঁটে Orientation রুমের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো অভনী।
একটু সামনেই খুব পরিচিত একটা মুখ দেখে থেমে গেলো সে।অভনী কে দাঁড়িয়ে পরতে দেখে ভ্রু জোরা কুঁচকে অভনীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো নীল,,,

—দাঁড়িয়ে গেলেন কেনো?

নীলের কথা উপেক্ষা করে দৌঁড়ে চলে গেলো সামনে অভনী।নীলের ভ্রু জোরা আরেকটু কুঁচকে গেলো। ফর্সা গুলোমুলো টাইপের একটা মেয়েকে জরিয়ে ধরে আছে অভনী।আর তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে শ্যামবর্নের একটি মেয়ে।,,কিন্তু কে ওরা?অভনী কেনো জরিয়ে ধরলো?

.

.

.

?
——————————
কেন্টিন থেকে কোকাকোলার বোতল টা হাতে নিয়ে মাএই বের হয়েছে নীর্ঝয়।তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে রাতুল আর সাব্বির।হুট করে কেউ একজন বোতল টা টেনে নেয়ায় বিরক্তিকর চোখে তাকালো নীর্ঝয়।পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নীরার হাতে বোতল দেখে কপাল কুঁচকে তাকালো নীর্ঝয়।বোতল খুলে এক ডুক খেয়ে বলে উঠলো নীরা,,,

—খুব তৃষ্ণা পেয়েছিলো তাছারা আপনার আর আমার তো একই তাইনা?যেহেতু কিছুদিন পর বিয়ে।

বিয়ে শব্দ টা শুনেই চোখ দুটো বড় বড় করে তাকালো নীর্ঝয়ের দিকে রাতুল আর সাব্বির।যার মানে তলে তলে এতোদূর!আর আমরা কিছুই জানিনা?
নীর্ঝয় রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে বলে উঠলো,,,,

—এই মেয়ে কে বলেছে তোমার সাথে আমার বিয়ে?সবসময় আমার পিছন পিছন ঘুরো কেন?

—বর্তমানে বাবার কাছ থেকে এই একটাই চাকরি নিয়েছি মি. নীর্ঝয়।যতোদিন না আপনার সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে ততোদিন এই একটাই কাজ। (চোখ টিপ দিয়ে)

—ভাবি চালিয়ে যান।আমরা আপনার সাথে আছি। (সাব্বির)

নীর্ঝয় সাব্বিরের দিকে রাগী চোখে তাকাতেই সাব্বির থতমত খেয়ে বলে উঠলো,,,,

—না মানে একদিন না একদিন তো ভাবি হবেই তাইনা?

নীর্ঝয় রাগে রিরি করতে করতে হাঁটা ধরলো সামনে।নীরা তার সমানে সমানে হাঁটছে যা নীর্ঝয়ের রাগ দ্বিগুন থেকে তিনগুন করতে যথেষ্ট। কোমরে হাত জোরা রেখে বলে উঠলো নীর্ঝয়,,,

—ওই নিজের কাজে যাও।আমার পিছনে এভাবে লেগে আছো কেন?আমার বউ আছে আর বাচ্চাও আছে ওকে?

নীর্ঝয়ের মতো কোমরে হাত রেখে চোখ দুটো ছোট ছোট করে বলে উঠলো নীরা,,,

—প্রথমত আমি আমার ডিউটি পালন করছি,,আর দ্বিতীয়ত আপনার বউ আমিই,, আর বাচ্চাগুলোও আমাদের টোনা টুনি ?

নীরার কথা শুনে হুহু করে হেসে উঠলো রাতুল আর সাব্বির। নীর্ঝয় আবারো রাগী দৃষ্টিতে তাকাতেই মুখ চেপে ধরলো ওরা।রাগী লুক নিয়ে হনহন করে হাঁটতেই আবারো পাশ থেকে বলে উঠলো নীরা,,,

—আচ্ছা আপনি সব সময় মেয়েদের মতো করেন কেন?একটু আগে কোমরে ধরে ঠিক মেয়েদের মতো ঝগড়া লাগতে নিয়েছিলেন।আচ্ছা আপনার সব সবাবই কি মেয়ে মেয়ে?

নীর্ঝয় চোখ বন্ধ করে জোরে চিল্লিয়ে উঠলো,,, চোখ খুলতেই সামনে আর কাউকে পেলো না কারন ততক্ষণে নীরা,রাতুল আর সাব্বির ভৌ দৌঁড়।

.

.

.

?
—————–
আচ্ছা এতোদিন পর তুই কোন গ্রহ থেকে উদাও হলিরে?

সবার সামনে পিঠে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলো অভনী জয়ার।জয়া কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকাতেই বলে উঠলো অভনী,,,,

—আগে আগে এইসব বলে নিজের দোষ চাপা দিতে চাস?আমি উদাও হইছি নাকি তুই?পরিক্ষার পর হুট করে কোথায় চলে গেলি ডাফার।একবারও খোঁজ নিসোস?তুই ছিলি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আর সেই তুই কিনা এমন উদাও হয়ে গেলি?ফোন দিয়ে কি ঝালমুড়ি কিনছিলি?

অভনী কে দুহাতে জরিয়ে ধরে বলে উঠলো জয়া,,,,

—আর বলিস নারে,,,সাহেদের কথা বাবা যেনে যাওয়ার পরেই মোবাইল টা ওদাও।কোনো ভাবেই কারে সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি।তার তিনদিন পরেই সব কিছু নিয়ে রওনা দিলেন বাবা মা ঢাকার উদ্দেশ্যে।একগাদা বিরক্তি নিয়ে আমাকেও আসতে হয় সাথে সাথে।মোবাইল যখন দেয়া হয় ততদিনে আমি সবার নাম্বার ঝালমুড়ি বানিয়ে খেয়ে ফেলেছি।তো কি করবো বল?(কাঁদো কাঁদো মুখ করে)

সামনের দিকে দৃষ্টি দিয়ে উদাসিন হয়ে বলে উঠলো অভনী,,,

—জানিস বাবা আর নেই?

—হুম শুনেছিলাম।শুনে বাবা কে অনেক জোর করে নিয়ে যাই তোদের বাসায়।কিন্তু গিয়ে আর তোদের কে পাইনা।শুনেছি নানির বাসায় চলে গিয়েছিলি।জানিস তোর ফোন নাম্বার টা কত করে তোদের বাড়ির সবার কাছে চাইলাম কিন্তু কেউ দিলো না।

তাচ্ছ্যিলের হাসি দিয়ে বলে উঠলো অভনী,,,

—আমরা তো কারো কিছু হইনা রে।কিভাবে দিবে।

পাশ থেকে শ্যামবর্নের মেয়েটি মোখ গোমড়া করে বলে উঠলো,,,,

—জয়ু তুই আমাকে ভুলে গেছিস?হুহ আমি তো কারো কেউ হইনা।তোরা সুন্দর আর আমি তো কালো।

মেয়েটির কথায় নিঃশব্দে হেসে উঠলো অভনী। মুচকি হেসে বলে উঠলো,,,,

—নাম কি তোমার?

—আমি জুথি।জয়ুর সাথেই একসাথে কোচিং করেছি।তখন থেকেই পরিচয় আমাদের।তুমি নিশ্চয়ই অভনী। জানো তোমার কথা কতো বলতো জয়ু।তোমাকে দেখে আমারো খুব খুশি খুশি লাগছে।কিন্তু জয়ু হারামী টা ভুলে গেছে আমায়।

জুথির কথায় ফিক করে হেসে উঠলো অভনী।মেয়েটা যে একটু বেশিই কথা বলে তা বেশ বুঝতে পারছে সে।হাসি বন্ধ করে যখন কিছু বলতে যাবে তখনি পুরো orientation রুমে শব্দ করে কেউ একজন বলে উঠলো,,,,,,

—silent plz…এখন আপনাদের সামনে বক্তব্য রাখবেন এই মেডিকেল কলেজের একজন সুনামধন্য ডক্টর মো: হাফিজুর রহমান।

লম্বা আকারের ফর্সা ডক্টরটি গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে এলেন বক্তৃতা দেবার জন্য। অভনী ডক্টর টিকে দেখে কয়েক সেকেন্ড এর জন্য অবাক হলো কারন ওর মনে হচ্ছে এই লোকটা কে ও চেনে।
বেশ কিছুক্ষন চিন্তার জগতে থাকার পর সে উন্যেশন করলো নীলের এক্সিডেন্ট এর পর হসপিটালে এই লোকটাই ওকে সহানুভূতি দেখিয়েছিলো।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনোযোগ দিলো অভনী সামনে ফুলের বেড়ির আবরনে বক্তৃতা দেবার উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে থাকা ডক্টর টির দিকে।

স্পষ্টসূরে বলে উঠলেন ওনি,,

—আসসালামু-আলাইকুম everyone। How are you?

সবাই চিল্লিয়ে জানান দিলো ওরা ভালো আছে।অবশ্য ভালো থাকারি কথা।ঢাকা মেডিকেল তো অনেকেরই স্বপ্ন আর স্বপ্ন পূরন হলে কেই বা ভালো না থাকে?স্বপ্ন ছোয়া যায়না!তবুও মানুষ সেটা পূরন করার জন্য হাজারো খাটুনি খেটে যায়।

একে একে কয়েক জন ডক্টর বক্তব্য রাখার পর কয়েকজন স্টুডেন্টও বক্তব্য রাখলো।এতো এতো বক্তব্য শুনতে শুনতে বেশ হাঁপিয়ে গেছে অভনী।জয়ার ব্যাগে রাখা জুসের বোতল টা টুপ করে টেনে হাতে নিয়ে খাওয়া শুরু করলো,,,,তখনি ধীর পায়ে মাইকের দিকে এগিয়ে এসে ডক্টর হাফিজুর রহমান আবারো বলে উঠলেন,,,,,

—এখন তোমাদের মাঝে বক্তব্য রাখবে নেক্সট জেনারেশনের খুব বড় ডক্টর আমারি একটি ছেলে ফারহান আহম্মেদ নীল।

“নীল” নামটা শুনেই বিষম খেলো অভনী।মুখে থাকা জুস গুলো ছিটকে গিয়ে পড়লো জয়ার জামার উপরে।জয়া রাগী চোখে তাকাতেই মিষ্টি করে হেসে বলে উঠলো অভনী,,,

—আমিই তো দোস্ত।এতোদিন পর একটু জুস পরলে কি হয়।

“আসসালামু আলাইকুম গায়েস।কেমন আছো সবাই?”

নীলের কন্ঠ শুনে সামনের দিকে তাকিয়ে ঠিক হয়ে বসলো অভনী।যার অর্থ এতোক্ষন যা হয়েছে হয়েছে এখন খুব মনোযোগ দিয়ে শুনবে সে নীলের কথা গুলো।কিন্তু বেস্টু নামক জিনিসটা যখন পাশে থাকে তখন কি আর শান্তিতে থাকা যায়?উহু যায় না!শান্তি শব্দ টা তখন বাতাসের সাথে উড়োউড়ি করে। অভনীর পেটের মধ্যে হাতের আঙুল দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বলে উঠলো জয়া,,,

—দোস্ত দেখ কি কিউট ছেলেটা?।হায় ম্যা মার যাওয়া।ইসস কি লুক মাইরি,, মনে হচ্ছে একবস্তা কিটকাট।ক্রাশ খেয়ে গেলাম রে দোস্ত।

জয়ার কথায় অভনীর পুরো শরীর রাগে রিরি করছে।ইচ্ছে করছে জয়াকে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে কিমা বানিয়ে ফেলতে।একবস্ত্রা বিরক্তি নিয়ে জয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো অভনী,,,,

—কয়টা লাগে তোর?সাহেদ ভাইয়া কে বলে নেই দাঁড়া।যাকে তাকে দেখে ক্রাস খাস কেন?তুই জানিস ওনি বিবাহিত নাকি অবিবাহিত?

কাঁদো কাঁদো মুখ করে ঠোঁট উল্টে বলে উঠলো জয়া,,,

—এমন ভাবে বলিশ নারে!কলিজায় গিয়ে লাগলো।এমন কিউট একটা ছেলে এখনি বিবাহিত হতে পারে নাহহহহ।

আবারো ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলো জয়ার মাথায় অভনী।রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে বলে উঠলো অভনী,,,

—এমন ভাবে ক্রাস খাস না তুই জানিস ক্রাস=বাশ?তাও ছোট ছোট না বড় বড় বাশ।

—এ্যাহ দেখ দেখ সবাই কেমন করে তাকিয়ে আছে।দেখে মনে হচ্ছে মেয়েদের সাথে সাথে ছেলেরাও ক্রাস খেয়ে ফেলেছে আর তুই আমাকে দোষ দিচ্ছিস?কুত্তি তুই জীবনেও মানুষ হবি না? তোর চোখে অলওয়েস আইস্ক্রিম পরে থাকে বিধায় তুই আইস্ক্রিম ছাড়া অন্য কিছুর উপর ক্রাস খাস না।

অভনী চারদিকে একবার চোখ ভুলালো।সত্যিই সবাই কেমন ডেবডেব করে তাকিয়ে আছে।অভনীর এখন ইচ্ছে করছে দৌঁড়ে নীলের কাছে গিয়ে হাত ধরে টেনে টেনে নিচে নামিয়ে সোঁজা বাড়ি পাঠিয়ে দিতে।কি দরকার ছিলো এতো সেজেগুজে আসার?

এতোএতো মনোযোগ নিয়ে নীলের কথা শুনতে বসলেও এখন আর একমিনিট ও মনোযোগ দিয়ে শুনতে পারছে না সে।বারবার আসেপাশে চোখ ভুলিয়ে দেখছে কে কিভাবে নীলের দিকে তাকিয়ে আছে।

সানগ্লাস টা খুলে রেখে মিষ্টি সুরে বলতে লাগলো নীল,,,,,

—“আমি প্রথমেই তোমাদের বলবো তোমরা সবাই মিলেমিশে চলবে।আমি এমবিবিএস লাস্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট। ছেলে বন্ধু যেমন প্র‍য়োজন ঠিক তেমন কাজে অকাজে হলেও মেয়েদেরও প্র‍য়োজন।লাইফে ছেলে মেয়ে একএিত হয়ে অনেক সাফল্য অর্জন করা যায়।কিন্তু একা! সেটা কখনোই সম্ভব নয়।তবে আমি অনেক ছেলেকেই দেখি মেয়ে নামক পুরো জাত টাকেই ঘৃনা করে কারন তাকে কেউ একজন ঠকিয়েছে।আবার এমন অনেক মেয়েও আছে যারা ছেলেদের ঘৃনা করে।

আমি আজকে ছেলেমেয়ে উভয়কে নিয়েই কিছু কথা বলবো।যা হয়তো তোমাদের ধারনা টা কিছুটা হলেও বদলাবে।আবার হয়তো না!
তোমাদের স্টাডিতেও কথাগুলো হয়তো প্রভাব ফেলবে। আবার হয়তো না!

আমি ছেলে হয়েও প্রথমে মেয়েদের নিয়ে বলতে চাই,,বিশেষ করে ছেলেরা মনোযোগ দিয়ে শুনো।

“একজন মা দীর্ঘ ১০ মাস ১০ দিন কষ্ট করে পেটে ধারন করে জন্ম দেন একটি ছেলে,,,অথচ বড় হয়ে সেই ছেলেই কোনো এক মেয়ের কাছে ছেকা খেয়ে বলে উঠে,,নারী জাত টাই খারাপ।কেউ সত্যিই কারের ভালোবাসে না। মেয়ে মানে একজন বাবার রাজকন্যা,, কোনো ভাইয়ের কলিজার টুকরা,,,ঘরের লক্ষী,,একজন মমতাময়ী মা,,একজন পুরুষের জীবন সঙ্গী,, যার মনটা শুধু মায়া,মমতা আর ভালোবাসা দিয়ে পরিপূর্ন!মায়ের এক ফোঁটা হাসি পুরো এক পৃথিবীর ভালোবাসার সমান।মেয়েদের লেখাপড়া করার থেকে রান্নাবান্না শেখাতেই সবাই ব্যাস্ত।একটি মেয়ে আবার একটি পরিবারের মজবুত পিলারও হয়,,।সব মেয়েদের চাহিদা কিন্তু বেশি থাকে না,,ছোট ছোট জিনিস গুলোতেই বেশি খুশি হয়।তবুও প্রতিনিয়ত শুনতে হয় সব মেয়েরাই লোভি!
ছোট ছোট পূর্নতায় মেয়েরা সুখ খুঁজে পায়,,হোক সেটা টিনের ঘরের চালের নিচে কিংবা ইট পাথরের বানানো ইমারতে।আমি বাস্তবে এমন টা দেখেছি হাফিজ আংকেলের মেয়ে আমারি বড় বোন হাফসা আপুকে দেখে।ওনারা এতো বড়লোক হওয়া সর্থেও জাহিদ ভাইয়া কে ভালোবেসেছেন ওনি। জাহিদ ভাইয়াকে যখন বিয়ে করেন তখন ছোট একটা ঘর ছিলো ওদের,আর তখনো আপু খুব হ্যাপি ছিলো ভাইয়া কে নিয়ে।অবশ্য এখন ভাইয়া বড় একজন এডভোকেট।তাই সব পাল্টে গেছে,,আপু এখন ইটপাথরের ইমারতেও সুখে আছে ভাইয়াকে নিয়ে।।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারো বলতে লাগলো নীল,,,,

—মেয়েদের শরীরটাই আজ ভয়ের কারন!ধর্ষন হলে আজও মেয়েদের পোষাক কে দায়ী করা হয়।
ধর্ষিতা কখনো নিজের ইচ্ছায় ধর্ষিত হয়না।তবুও সবাই তাকে দূরে সরিয়ে দেয়।বিয়ে করতে চায় না।অথচ বিবাহিত মহিলা কে নিয়ে পালিয়ে যেতে দ্বিধা বোধ করে না।অবশেষে নারীদের নিয়ে বলতেই হয়,,,,

“ধর্ষিতা আজ নারী নয়,
ধর্ষিতা আজ দেশ।
খোলা বাতাসে ঘটছে ধর্ষন,,
ধরে সন্ন্যাসীর বেশ
আট মাসের সেই শিশু থেকে,
মাঝ বয়সী নারী।
নরপশুর দলরে ওরা,
কাউকে দেয়না ছাড়ি।
রাত যখন আধার তখন,
ভাবে ভয়ে বুকে নারী।
এই বুঝি কেউ পরলো ঝাঁপিয়ে,
ইজ্জত নিলো কারী।
পোষাক যতোই বদলায়,
বদলায় না মানুষিকতা।
মানুষিকতা যার বৃকৃিত,
সুযোগ পেলেই চেপে ধরে তাকে হিংসতা।
যে গুরু করে শিক্ষাদান,
সেও যদি হয় দানব।
এমন শিক্ষা চাইনা তবে,
মূর্খ্যই থাক মানব।
এটাই কি তাহলে স্বাধীন দেশ?
যেথায় নেই নিরাপত্তা।
চাঁদের চেয়ে আলোকিত নারী,
নিজেকে করে হত্যা।
এটাই যদি স্বাধীনতা হয়,
কারে বলে পরাধীনতা?
অমানবিক এই হিঃশ্র দেশে,
মোরা চাইনা স্বাধীনতা!!

.

হাত তালির শব্দে বিমোহিত হয়ে গেছে চারদিকে।অভনীর ঘোর কাটলো মাএ।মানুষ টার কথা শুনতে শুনতে কখন যে কল্পনার জগতে চলে গেলো বুঝতেই পারেনি সে।

একটু নড়েচড়ে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে আবারো বলে উঠলো নীল,,,,

—শুধু মেয়েদের নিয়ে বলাতে ছেলেরা কি ক্ষেপে আছে?এখন আমি ছেলেদের নিয়ে বলবো কারন সব নারী যেমন এক হয়না ঠিক তেমনি সব পুরুষ ও এক হয়না।তাই মেয়েদেরও উচিত নয় সব পুরুষ কে একরকম তুলনা করা।
এখন মেয়েরা মনোযোগ দিয়ে শুনো,,,,

“কোনো একটা ছেলে তোমাকে ধোকা দিলো,,আর তুমি সাথে সাথে বলে উঠলে ছেলে জাত টাই খারাপ!অথচ তোমার নিজেরই বাবা,ভাইয়া আছে।
ছেলেদের জীবন মানে একটা সংগ্রাম আর অনেক ত্যাগ।জন্মের পর থেকেই ছেলেদের মাথায় প্রতিষ্টিত হবার বিষ ডুকিয়ে দেয়া হয়।কারন প্রতিষ্ঠিত হতে না পারলে সমাজে কোনো মর্যাদা থাকবে না।কোনো বাবাও তার মেয়েকে অপ্রতিষ্ঠিত ছেলের কাছে বিয়ে দিবেনা।মধ্যবিত্ত পরিবারে একটু বড় হলেই ধরতে হয় আনাড়ি হাতে সংসারের হাল।ছেলেদের সৌন্দর্য হলো টাকা।যার টাকা আছে তার পিছনে হাজারো মেয়ে লাইন দিয়ে আছে।ছেলেদের সম্মান টাই মাপা হয় টাকার মাপকাঠি দিয়ে।আচ্ছা ছেলেরা তোমাদের ইভটিজিং করে বলে ছেলেরা খারাপ!অবশ্য এটা ঠিকও না।কিন্তু একটা ছেলে যখন মাথায় তেলে চুপচুপ করে ভার্সিটিতে আসে তখন কিন্তু তোমরাই হাসাহাসি করে আদুভাই বলে ডাকো।
ছেলেরা সহজে কাঁদেনা তাই বলে যে ওদের কষ্ট হয়না এমন টা ভাবা ভুল।এক্সিডেন্ট করে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পরে থাকলেও ছেলেরা কাঁদেনা।অথচ নিজের ভালোবাসার মানুষ টার একটু কষ্টেই ডুকরে কেঁদে উঠে।

” পৃথিবীতে দুধরনের মানুষ খুব অসহায়,,রুপ ছাড়া নারী!!টাকা ছাড়া পুরুষ!!”

” তাই আমি সবশেষে একটা কথাই বলবো সব ছেলে বা সব মেয়ে এক হয়না।একজনের সাথে জেদ ধরে তোমরা আরেক জনের কোনো ক্ষতি করো না।একজন ডক্টর হিসেবে দেশ কে বাঁচিয়ে রাখা তোমাদের দায়িত্ব।উভয়কে সম্মানের চোখে দেখো। ছেলেমেয়ে উভয়ে দ্বন্দ্ব না করে ভালোভাবে লেখাপড়া করো তোমার লাইফ উজ্জ্বল। আগে নিজের ক্যারিয়ার গড়ো পরে বাকি সব।Anyway অনেক কথা বলে ফেললাম।ধন্যবাদ সবাই।”

কয়েকজন ডক্টর নীলের কাঁদে হাত রেখে বলে উঠলো,,,,
—আমরা গর্বিত তোমার মতো একজন স্টুডেন্ট কে পেয়ে।best of luck.

নীল ওনাদের সালাম জানিয়ে ধীর পায়ে নেমে যেতে লাগলো স্টেজ থেকে।
চারপাশে আবারো হাত তালির রুল পরে গেলো। ধীর পায়ে এগিয়ে অভনীর কাছে গিয়ে দাঁড়ালো নীল। নীলের দিকে তাকিয়ে ভাবছে অভনী,,,,

“আচ্ছা সব ছেলেরাই কি এমন পার্ফেক্ট হয়?নাকি আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গম্ভীর স্বভাবের অসাধারণ এই মানুষ টাই এমন পার্ফেক্ট?”

#চলবে,,,,,,
(কেউ আবার বলো না নীল বেশি বুঝে।নীলের কোনো দোষ নেই!সব দোষ আমার ?,,,আজকে কি থেকে কি লিখছি নিজেই জানিনা।ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here