#আমার রাজ্যের রানী
#Part : 20
#Writer : Sriti Nur Avni
?
আজ অভনী নীলের কাছে পড়ার প্রথম দিন। খুব আনইজি ফিল হচ্ছে তার,,বই খাতা গুলো হাতে নিয়ে একবার নীলের রুমে ডুকছে তো আরেক বার বের হচ্ছে।ওকে দেখে মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে তাকে রুম থেকে বের হবার আর ডুকার জন্য বড় কোনো অপরাধের শাস্তি দেয়া হয়েছে,,,যেই শাস্তি টা অনবরত সারারাত তাকে করেই যেতে হবে।মুখের মধ্যে তার একঝাঁক ভয়।রুমের ভিতরে লেপটপ নিয়ে বসে থাকা সূদর্শন ছেলেটা অভনীর এমন কান্ডে মিটমিট করে হাসছে,,তবুও কিছু বলছে না।এমন ভাবে আর না পেরে বড় করে নিশ্বাস নিলো অভনী,,বুকের মধ্যে ফুঁ দিয়ে টুপ করে ডুকে পরলো রুমের ভিতর।রুমের ভিতর ডুকেই বলে উঠলো,,,
—স্যার পড়তে এসেছি।
—এই মেয়ে স্যার কে এসে সালাম দিতে হয় জানেন না? (ঝাঁঝালো কণ্ঠে)
—সরি!!আসসালামু-আলাইকুম।
বলেই টুপ করে বসে পরলো অভনী। নীল আবারো ধমক দিয়ে বললো,,,
—আমি আপনাকে বসতে বলেছি মিস. অভনী?
বেঁচারা অভনীর এমনিতেই ভয়ে একাকার হয়ে রাগে ছিলো জলন্ত চুলো,,তারই মধ্যে নীলের এমন ঝাঁঝালো কণ্ঠের কথা শুনে সেই চুলোয় পরলো এক ড্রাম ঘি।রাগে আর ভয়ে জ্বলতে জ্বলতে নাক-মুখ ফুলিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে পরলো সে।নীলের ব বলার সাথেই সাথেি আবারো টুপ করে বসে পরলো সে,,,এতোক্ষন যাবৎ বাহিরে দাঁড়িয়ে মিশন complete করতে করতেই বেচারির পায় দিয়ে মহাযুদ্ধ চলে গেছে।নীল আর কিছু না বলে মুখ চেপে হাসতে লাগলো। এই মুহূর্তে অভনীর কাছে ওর সামনে বসে থাকা সূদর্শন ছেলেটার কিউট মার্কা হাসি টাও বিদঘুটে মনে হচ্ছে,,, যা ওকে আরো বেশি তেলে বেগুলে জ্বলে উঠতে সাহায্য করছে,,,এই মুহূর্তে নীল কে ব্লেন্ডার মেশিনে দিয়ে কুচি কুচি করে হাঁত পা ছড়িয়ে ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে তার।নীল নিজের হাসি টা চেপে রেখে মুখে কঠোর আভা এনে বললো,,,
—বই বের করুন মিস. অভনী।এখানে আপনি আমাকে কুঁচিকুঁচি করার বা আমাকে দেখার জন্য আসেন নি।
নীলের কথায় অভনীর চোখ গুলো বড় বড় হয়ে গেলো,,,”আমি তো মনে মনে বলছিলাম তাহলে ওনি জানলো কি করে?তাহলে ওনি আমার মনের সব কথা শুনে নেয়?ডাক্তারি পরা পড়ে কি ওনি এমন একটা ঔষুধ বানিয়েছেন যা আমার মতো এই বাচ্চা মেয়েটাকে খাইয়ে দিলেন?আচ্ছা এই জন্যই কি আমার ওনার সামনে আসলে হৃৎপিন্ড বের হয়ে আসতে চায়”?
—মিস. অভনী?আমি আপনাকে বলছি (ধমক দিয়ে)
অভনী চোঁখ নামিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে বই খুলে বসে আছে।এই মুহূর্তে ওর কাছে সব থেকে বোরিং বিষয় বইয়ের উপরের বড় বড় করে লেখা পদার্থ বইটাই হাতে দরিয়ে দিলো তার।নীল বললো,,,
—এখন আর কোনো মুখস্থ নয়,,, রিভাইস নেয়া হবে।আমি ফটাফট প্রশ্ন করবো আর আপনি ফটাফট উত্তর দিবেন,,প্রশ্ন করার পর ১ মিনিট সময় থাকবে যদি এর থেকে লেট হয় তাহলে ৫ মিনিট করে কানে হাঁত দিয়ে এক পায়ে দাঁড় করিয়ে রাখবো গট ইট!
অভনীর মধ্যে কেমন একটা ঘোর লেগে যাচ্ছে,,,এটা কেমন স্যার রে বাবা?পৃথিবীর সব জায়গায় প্রথম দিন টিচার রা কি অদ্ভুত সুন্দর মিষ্টি ভাষায় কথা বলে আর এই লোকটা? স্কুলের সেই মোটা ফ্রেমের কালো চশমা পড়া অংক টিচার টাও তো প্রথম দিন ক্লাসে এসে মিষ্টি সুরে বলেছিলো,,,”মামুনি রা কেমন আছো সবাই?”আর ইনি প্রথম দিনই কিনা কান ধরে উঠবস করাবে তাও আবার এক পায়ে দাঁড় করিয়ে?অভনী ভাবনা জগতে থাকা কালীন ই নীল অভনীর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো।অভনী শুধু ডেব ডেব করে তাকিয়ে আছে নীলের দিকে।এই মুহূর্তে মুখ দিয়ে কথ বের করার জন্য রীতিমতো যোদ্ধ শুরু করেছে নিজের সাথে।কিন্তু অংকে ২-৩ পৃষ্টা অংক করার পর যখন অংক না মিলায় ফলাফল শূন্য হয় অভনীরও এখন সেই অবস্থা। মুখের সাথে তীব্র যোদ্ধ চালিয়েও মুখ দিয়ে কথা বের করতে না পেরে ফেলফেল করে তাকিয়ে আছে টেবিলের উপর কলম হাতে থাকা নীলের হাত টার দিকে।তখনি নীল ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠলো,,,
—মিস. অভনী আপনার সময় শেষ।এখন আপনি ৫ মিনিট এক পায়ে দাঁড়িয়ে কান ধরে থাকবেন।যদি একটুও কথার নড়চড় হশ তবে আবারে ৫ মিনিট দাঁড় করিয়ে রাখবো। (ডেবিল হেসে)
অভনী বেচারি অসহায় মুখ করে তাকিয়ে আছে নীলের দিকে।কিন্তু এতে নীলের কোনো ভাবান্তর নেই সে লেপটপে মুখ গুজে দিয়ে খাতায় কিছু একটা লিখা শুরু করেছে,,, অসহায় মুখটা নীল কে দেখানোর পুরোদমে চেষ্টা করার পরেও যখন নীল দেখলো না তখন এক ঢিবি বিরক্তি এসে ভর করলো অভনীর মধ্যে।
—আপনার সময় চলে যাচ্ছে,,,যতো লেট করবেন ততো সময় বারানো হবে। (নীল)
অভনী চেয়ার টায় শক্ত করে ধরে রেখেছে হাত দিয়ে যার মানে এই মুহূর্তে ভূমিকম্প উঠে গেলেও এক চুল পরিমান নরবে না সে এই চেয়ার থেকে। ইসসস এই লোকটার সামনে কান ধরে দাড়িয়ে থাকতে হবে ভাবতেই কেমন লজ্জায় গা শিউরে উঠছে।এই ধীর প্রতীজ্ঞায় যখন সে চেয়ার টা ধরে রাখতে ব্যাস্ত তখনি নীল ওর কাছে আসতে আসতে বললো,,,
—আপনি উঠবেন নাকি আমার টেকনিক দিয়ে আমি উঠাবো আপনাকে? (ডেবিল হেসে)
নীল যতো অভনীর কাছে আসতে লাগলো অভনীর হার্টবিট ততো জোরে দৌড়াতে লাগলো,,,এই মুহূর্তে স্ট্রোক করে মরার থেকে কান ধরে থাকা টাই বেটার মনে হচ্ছে অভনীর,, তাই চেয়ার থেকে হাত টা সরিয়ে ধুম করে দাঁড়িয়ে গেলো সে।অভনীর কান্ডে নীল মুচকি হেসে নিজের জায়গায় গিয়ে বসে পরলো,,,অভনী কাচুমাচু করে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে এক পায়ে কান ধরে দাড়ালো,,, আর মনে মনে বিরবির করতে লাগলো,,,
—শালা রাক্ষুসী হনুমান নাইজেরিয়ান এনাকন্ডা নাক কাটা হুলু বিড়াল হলুদ ইদুর পচা তেলাপোকা রে তোকে তো আমি করলার জুস,,তেলাপোকা ভুনা,,,ইঁদুরের চাটনী খাওয়াবো।এই বাচ্চা একটা অসহায় মেয়েকে একা পেয়ে এতো ভর দূর্নীতি করতে আটকালো না একটুও?হ্যাঁ আল্লাহ এই ফুটফুটে বাচ্ছা মেয়েটার সাথে এতো বড় অন্যায়ের জন্য এই লোকটার কপাল থেকে সারাজীবনের জন্য বউ শব্দ মুঁছে দিয়ো,,,আমিন (উপরের দিকে তাকিয়ে)।
এই মুহূর্তে টেবিলের উপরে উঠে লাফ দিতে বা খাটের পায়া টার সাথে ঝুলে থেকে আত্নহত্যা করতে ইচ্ছে করছে অভনীর।ছোট আব্বুর ছেলে কিনা এমন একটা জল্লাদ হতে পারে?
দীর্ঘ ১ ঘন্টা এমন ভাবেই অভনী কে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।কারন এই ১ ঘন্টায় সব প্রশ্নের উত্তর জানা থাকলেও নীলের কোনে প্রশ্নের উত্তর মুখ দিয়ে বের করতে পারেনি সে।বেচারির পায়ের অবস্থা নাজেহাল তবুও এই নীল নামক রাগী প্রানী টার চোখে বিন্দু মাএ মায়া দেখ যাচ্ছে না।হঠাৎ নীল বলে উঠলো,,,,
—আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।আমি শুয়ে পরলাম আর আপনি চুপচাপ বসে পরতে বসুন।এই যে এখানে ক্যামেরা রাখ আছে আমি যদি দেখি পরেননি তো খবর আছে।
অভনীর হাতে একবস্তা পড়া ধরিয়ে দিয়ে মোবাইলের ক্যামেরা টা সামনে রেখে হনহন করে চলে গেলো ওয়াশরুমে নীল।অভনীর এখন নিজের চুল গুলেই টেনে ছিড়তে ইচ্ছে করছে।নীল ওয়াশরুম থেকে এসে ধুম করে খাটে শুয়ে পরলো,,আর বেচারি অভনী মুখ গুজে দিলো বইয়ের দিকে,,,কিন্তু পড়ার দিকে কোনো মনোযোগ নেই তার,, হাত পা গুলো ব্যাথা করতেছে,,,এই মুহূর্তে হাত পা ছরিয়ে ছিটিয়ে ধুম করে শুয়ে পরতে পারলে আরাম লাগতো,, আহা কি আরাম!
অভনী মনে মনেই সেই আরাম কে উপলব্ধি করছে,, বেশ কিছুক্ষন বইয়ের দিকে মুখ গুজে রেখে নীলের দিকে ঘুরে তাকালো সে।ইতোমধ্যে নীল গভীর ঘুমে তলিয়ে গিয়েছে।নীল কে এভাবে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে অভনীর মনে দুষ্টুমির বুদ্ধি খেলা করতে লাগলো।কিন্তু সামনে থাকা ক্যামেরা টার কথা ভেবে দমে গেলো সে।কিন্তু পরক্ষনে আবার মনে হলো,,,
—ক্যামেরা তো ওনি সকালে দেখবেন,, এখন তো আর দেখতে যাবেন না।বাহ কি বুদ্ধি রে তোর অভনী?এই মুহুর্তে তোকে আমার নোবেল দেয়ার ইচ্ছে করতেছে,,কিন্তু দূরভাগভাগ্য বশত এখন আমার কাছে নোবেল নেই তবে চিন্তা করিস না খুব শিঘ্রই তোকে নোবেল কাক্কুর একটা গান শুনিয়ে দিবো পাক্কা প্রমিস।
নিজেকে নিজে এইসব বলতে বলতেই দৌঁড়ে নিজের রুমে গিয়ে কিছু একটা নিয়ে আবারো লাফিয়ে লাফিয়ে চলে আসলো নীলের রুমে।
?
সকাল ৮ টা,,,
নীরব নীল কে আজ অফিসে যাওয়ার জন্য ডেকে তুলতে আসলো,,,কিন্তু নীল অন্যদিকে তাকিয়ে গভীর ঘুমে মগ্ন। তাই নীরব নীলের কাছে গিয়ে ওকে ডাকতে গিয়ে থমকে দাঁড়ালো। পরক্ষনেই হুহু করে হাসির শব্দে পুরো ঘরে যেনো বাজি ফুটাতে লাগলো।
নীরবের হাসির শব্দে নীল ধরফর করে উঠে পরে।নীরব কে এমন পাগলের মতো হাসতে দেখে নীল ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে নীরবের দিকে,,,নীরবের হাসি থামছে না।নীল ভ্রু জোরা কুঁচকেই বলে উঠলো,,,
—সকাল সকাল পাগল হয়ে গেছিস নাকি ভুতে ধরছে তোকে ভাইয়া?এমন পাগলের মতো হাসছিস কেন? (বিরক্তি নিয়ে)
—আমাকে ভুতে ধরেনি রে নিলাপু তোকে শাঁকচুন্নি ধরেছে।চলচল নিচে চল নিচে গেলেই বুঝতে পারবি?
নীল কিছু বলার আগেই নীল কে টেনে টেনে নিচে নিয়ে যেতে লাগলো নীরব।নীলের চোখে মুখে বিরক্তি! প্রচন্ড রকমের বিরক্তি,,,,সবাই ড্রইংরুমেই ছিলো,অভনী ওর মায়ের সাথে রান্নাঘরে। নীরব বলে উঠলো,,,,
—-মামুনি দেখো দেখো আমাদের নীলের জমজ বোন নীলা কে নিয়ে এসেছি।কিরে এতোদিন কই ছিলি বলতো ভাইয়া দের ছেড়ে?
মুহূর্তেই পুরো ড্রইংরুমে হাসির রুল পরে গেলো,,,ওদের কে দেখে মনে হচ্ছে কে কার থেকে বেশি হাসতে পারবে তার প্রতিযোগিতায় নেমেছে,,,যে জিততে পারবে তাকে মহামূল্যবান রত্ন দেয়া হবে তাই কারো থামার নাম নেই,,,পুরো ড্রইং রুমের হাসির খিলখিল শব্দে দেয়ালে বারি খাচ্ছে। নীল কপাল কুঁচকে চিন্তির ভাবে মুখে রাগী আভা ফুটিয়ে তুলে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।সবার হাসি থামলেও আরিহার হাসি থামছে ন।সে এখনো হেসেই যাচ্ছে,,,কিন্তু অভনীর হাসির শব্দ নেই ও মিটমিট করে হাসছে।
—-Stop this? কি হয়েছে বলবি কেউ?সকাল বেলা এমন ড্রামা ভালো লাগেনা (নীল রেগে)
—১ মিনিট দাঁড়ান ভাইয়া আমি আসতাছি। (আরিহা)
আরিহা প্লেনের গতিতে গিয়ে রকেটের গতিতে ফিরে এসেছে হাতে একটা আয়না নিয়ে,,,
—ভাইয়া নিন এটা ধরুন সামনে। (আরিহা)
নীল বিরক্তি মাখা মুখ নিয়ে আয়না টা হাতে নিয়ে যখনি মুখের সামনে ধরলো তখনি ড্রইং রুমের সবার কান ফেটে যাবার অবস্থা।
—-আহহহহহহহহহহহহহহহহহহ,,,,, কে এটা?আমার চেহারা কই?
নীলের মুখে একগাদা মেকআপ,,ঠোঁটে লিপস্টিক,,, চোখে সেট লাগিয়ে মোটা করে আইলেন,,ব্রু গুলো তেও মোটা করে আর্ট করা,,কপালের এক কোনায় বড় করে একটা নজর টিকা,,লম্বা সিল্কি চুল গুলো মাঝখানের কিছু চুলে ছোট করে একটা জুটি করা,, পুরাই সার্কাসের মতো লাগছে।
নীল রাগী চোখে অভনী দিকে তাকালো কিন্তু অভনী তাকাচ্ছেনা।ওকে দেখে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব কাজ এখন ওকেই সামলাতে হবে।কাজ গুলো না করে অন্য দিকে তাকালেই জেনো কুরুক্ষেএ বয়ে যাবে যা সে বেঁচে থাকতে কোনো ভাবেই দিতে চায়না।
অভনীর কোনো ভাবান্তর নেই দেখে নীল রেগে হনহন করে নিজের রুমে চলে গেলো।নীল যেতেই অভনী সব জড়তা কাটিয়ে মুহুর্তের মধ্যে খিল খিল করে হেসপ উঠলো,,,ওর হাসির শুরু দিয়ে পুরো ড্রইং রুমে আবারো একটা হাসির ঝড় বয়ে গেলো,,,যা উপরে থাকা নীলের রাগ আরো ৩ গুন বাড়িয়ে দিলো।
?
রেস্টুরেন্ট এর এক কোনে বসে আছে অভনী।তার ঠিক সামনের চেয়ার টাতেই বসে আছে নীল।আর সাথো ২ জন ক্লাইন।অভনীর শরীর টা কেমন অসুস্থ অনুভব হচ্ছে।পেটে আর পায়ে হালকা ব্যাথা করছে,,,অজানা কোনো কারনে বার বার ভয়ে শিউরে উঠছে সে।আর এমন অস্বস্তি নিয়ে না পেরে বলে উঠলো,,,
—স্যার আমি একটু আসছি।
নীল ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে উঠলো,,
—ওকে।
ওয়াশরুম থেকে আরো বেশি পরিমানে অস্বস্তি আর ভয় নিয়ে ফিরে এলো অভনী যা নীলের দৃষ্টিগোচর হলো না,,,নীল ক্লাইন দের বললো,,,
—-বাকিটা আমরা ফোন এ বলে নিবো এখন তাহলে এখন আসি।
লোকগুলো চলে গেলো নীল উঠে দাঁড়িয়ে পরে অভনী কো উঠতে বললো,,কিন্তু অভনী উঠছে না,,তার চোখ দিয়ে পানি পরছে,,এমন অবস্থার জন্য সে কোনো ভাবেই প্রস্তুত ছিলো না।নীল অভনীর দিকো এগিয়ে আসলো,,,নিজের গায়ের ব্লেজার টা খুলে অভনীর সামনে ধরে বললো,,,
—নাও এটা কোমরে বেঁধে নাও।
নীলের কথায় অভনী অবাক হয়ে তাকালো নীলের দিকে।নীল চোখ দিয়ে আস্বস্ত করলো বেঁধে নেয়ার জন্য,,,লোকটার সামনে এমন অবস্থায় পরবে বুঝতে পারেনি সে,,,তবুও লজ্জা পেয়ে আস্তে আস্তে হাত টাকে এগিয়ে দিলো ব্লেজার টার দিকে।আশেপাশে একবার তাকিয়ে দাঁড়িয়ে ব্লেজার টা বেঁধে নিলো।নীল ততক্ষণে রেস্টুরেন্টের মেয়ে ওয়েটার কে ডেকে ওকে সাহায্য করতে বলেছে,,,মেয়েটি হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে অভনীর কাছে গিয়ে বললো,,,
—ম্যাম ওয়াশরুমে চলুন।
অভনী এবারও অবাকের চরম পর্যায় তবুও মেয়েটার সাথে ওয়াশরুমে গিয়ে আবারো ব্লেজার টা কে বেঁধে নিলো,,,মেয়েটি বলে উঠলো,,,,
—ম্যাম আপনি খুব ভাগ্যবতী যে এমন একজন কেয়ারিং হাসবেন্ড পেয়েছেন।চলুন আপনাকে নিয়ে যাই।
অভনী মেয়েটার কথার বধলে মিষ্টি করে একটা মুচকি হাসি উপহার দিলো।
অভনী যাওয়ার পরেই নীল গাড়ির উদ্দেশ্য আস্তে আস্তে হাঁটা দিলো অভনীও নীলের পিছন পিছন আস্তে আস্তে হাঁটতে লাগলো,,,গাড়ির সামনে যাওয়ার পর অভনী গাড়িতে উঠার জন্য গাড়ির দরজা খুলে দিলো নীল।অভনী মুচকি হেসে ভিতরে ডুকে গেলো,,,কিন্তু নীল ভাবলেশহীন। ভাবলেশহীন ভাবেই নিজের সিটে এসে বসে পরে ড্রাইভ করতে লাগলো সে।কিছুদূর যাওয়ার পরেই গাড়ি থামিয়ে দিলো নীল,,,অভনী অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো নীলের দিকে।নীল নিজের সিটবেল্ট টা খুলে অভনীর দিকে তাকিয়ে আরাম করে বসলো,,আহত চোখে বলতে লাগলো,,,,
—পিরিয়ড কোনো লজ্জা পাবার বিষয় নয় মিস. অভনী। আমি জানি আজ কিছু পুরুষ দের জন্যই মেয়েদের কাছে এটা লজ্জাকর বিষয়।আমিও তার ব্যাতিক্রম নয় যা আজ তোমার এমন চুপ করে কান্না করার শব্দ আমায় বুঝিয়ে দিয়েছে। ঋতুস্রাব এর মতো সাধারন একটা বিষয় কে অশুদ্ধ মনে করে বার বার পিশাচের মতো মেয়েদের মুখের দিকে তাকিয়ে মুখের উপর প্রশ্ন ছুরে দেই।একটা মেয়ের সন্তান জন্ম দেবার অংশবিশেষ ঋতুস্রাব এর ভিতর দিয়ে গেলে সেটা হয় লজ্জাজনক। যেন এটা মেয়েদের তৈরি কোনো গুরুতর পাপী কাজ।একটা নারীকে সাহায্য করা মানে একজন পুরুষ জন্ম নিতে সাহায্য করা এটাতে কি নারীদের সম্মান করার পাশাপাশি পুরুষ দের সম্মান করা হয় না?তবুও মেয়েদের চলতে হয় বাসে চেপে,,রিকশায় চড়ে,,কিন্তু আমাদের হাত যেনো তাদের ছোয়ার অপেক্ষায় থাকে।,,পৃথিবীর সব ছেলেরা একবার,,,মাএ একবার যদি পিরিয়ের তিনদিনের যন্ত্রণা ভোগ করতো তাহলে মেয়েরা নিত্যদিনের বেঁচে থাকা আর অপমানের হাত থেকে রেহাই পেতো।
অভনী অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার সামনে বসে থাকা ছেলেটার দিকে।নীল আবারে বড় করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে লাগলো,,,,
—সব ছেলেরা যদি বুঝতো,,তলপেট চেপে শরীর উল্টানো ব্যাথার কান্নাটা কতটা ভয়ংকর তাহলে মেয়েদের খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখে মুচকি হাসি দিতো না,,মেয়েটার হাত ধরে রাস্তা পার করে দিতো।
যদি টের পেতো,,,কি সাংঘাতিক কষ্ট নিয়ে একটা মেয়ে মাসচক্রের এই ৫-৭ দিন সময় পার করে,,,, খিটখিটে গা ঘিনঘিনে একটা অস্বস্তিকর অবস্থা নিয়ে ক্লাস,,অফিস আর সংসারের রুটিন মেনে যায়,,তাহলে এটা নিয়ে উপহাস করার ক্ষমতা ওদের হতো না,,,হেসে গড়াগড়ি খেয়ে একজন ছেলে আরেক জনের উপর পরে বলতে শুনেছি,,,
—মামা তোর কি মাসিক চলছে,,,আজ কয়দিন?পাউরুটির প্যাকেট কিনবি নাকি?কিন্তু একটা বারও ভেবে দেখেনা এই সময় টা আসে বলেই,,এই কষ্ট টা মেয়েরা সহ্য করে বলেই আজ ওদের জন্ম,,,আর এটাকেই হাসির খোরাক বানায়।পিরিয়ড নিয়ম মতো না হয়ে বাচ্চা হয়না বলে আবার ওই সব পুরুষ রাই ওদের ছুরে ফেলে দেয় ?,,,,একটা বার যদি বুঝতো ওই পাউরুটির মতো ন্যাপকিন বা প্যাড টা ব্যাবহার করতে মেয়েদের কতোটা বিরক্তবোধ হয় তাহলে মেয়েদের এটা নিয়ে এতো লজ্জা পেতে হতো না,,,লজ্জা পেতে হতো ছেলেদের।আমি ডাক্তারি পরছি,, মেয়েদের এমন অনেক কষ্টের সময় গুলো সম্পর্কে আমার জানা,,,তাই আমি পারিনা এই বিষয় নিয়ে লজ্জাপেয়ে চুপ করে থাকতে। তোমারো তেমন টা হওয়া উচিৎ নয়,,অচেনা অজানা একটা ছেলেকে ঠাস করে বলে দেয়ার অব্যাশ করো,, মামা নেপকিনের প্যাকেট দেন।
ছেলে হয়েও আমি একটা কথাই বলবো মিস. অভনী,,,
“একটা নারী পিরিয়ড নিয়ে যে পরিমান কষ্ট বা যন্ত্রণা ভোগ করে থাকে তার অর্ধেকও যদি ছেলেদের করতে হতো তাহলে বেঁচে থাকার নাম রা আস্তে আস্তে মুছে দিতে চাইতো,,,তাই এটাকে হাসি ঠাট্টার খোরাক না বানিয়ে মেয়েদের কে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া উচিৎ তাহলে আপনার মতো মেয়েরা এমন অবস্থায় পরে ভয় পেয়ে কাঁদতেন না।
নীল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়।অভনী এখনো অশ্রুশিক্ত চোখে তাকিয়ে আছে অদ্ভুত মানবতা সম্পন্ন মানুষ টির দিকে।তার এখন একবার নয় হাযার বার স্যালুট জানাতে ইচ্ছে করছে নীল কে,,,কিন্তু কোনো একটা দ্বিধায় পরে সেটা আর বলা হয়ে উঠলো না তার আজ,,,তবে সে মনে মনে প্রতীজ্ঞা করেছে কোনো একদিন এই স্যালুট টা ওকে করে দিবে।গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে। অভনী ভাবছে,,
” সত্যিই মেয়েদের জীবন টা কি অদ্ভুত!বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠান হলে মেয়েরা প্রথমেই আগ্রহ নিয়ে তারিখ জানতে চায়,,,যদি সেই তারিখ টা তার পিরিয়ডের সময় পরে যায় তাহলে মনের কষ্ট টা মুখে ভেসে উঠে। পেটের ব্যাথা আর অসহ্য ব্যাথা নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে স্যার দের পড়া দিতে হয়।রমজান মাসে যখন বলা হয় আমি রোজা না তখন শুরু হয় একটা ছেলের হাজারো হাদিস,,,অথচ ধর্ষন করে মদের মতো হারাম জিনিস পান করাটা কতটা পাপ সেটা কি অজানা?রিকশা টা যখন ভাঙা রাস্তা দিয়ে যায় মেয়েদের তখন সিটের নিচে চেপে ধরে রাখতে হয়।ব্যাথাটা যেনো তখন সহ্য হয়না।,,,এতো কিছুর পরেও অমানুষ না হলে মেয়েদের অসম্মান করাটা কঠিন ব্যাপার।মানসিক দিক দিয়ে কেউই নারী হয়ে জন্ম নেয়না–অজস্র লজ্জা,,অজস্র বিব্রতবোধ আর সংকীর্নতা দিয়ে ছেলেরাই একজন মানুষ কে নারী বানিয়ে দেয়।তবে লজ্জা নারীর ভূষন,,লজ্জা পাওয়া উচিৎ তবে পিরিয়ডের মতো বিষয়ে নয়,,,,সব ছেলেরা আবার এক হয়না,,,এশহরে অগোচরে নীলের মতো এমন হাজারো ছেলেও বসবাস করে তবে সেটা হাজারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ কোটি কোটি ছেলের থেকে।”
নীল ওদের বাসার সামনে নিয়ে গাড়ি থামিয়ে দিয়ে বললো,,,
—আপনি বাসায় চলে যান আমার অফিসে একটু কাজ আছে (মুচকি হেসে)
অভনীও পূনরায় একটা মুচকি হাসি উপহার দিয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটা ধরলো বাসার উদ্দেশ্য।
চলবে,,,,,
(পিরিয়ড কোনো লজ্জার বিষয় নয়,,,কোনো অশ্লিল শব্দ নয়,,,এটাই বাস্তবতা,,, তাই কেউ গল্পটা অশ্লিল মনে করে বাজে মন্তব্য করে নিচু মানুষিকতার পরিচয় দিবেন না আশাকরি,,,আমি কিন্তু বলেছি সব ছেলে এক হয়না ?আশা করি গঠনমূলক কমেন্ট করে জানাবেন কেমন হলো)