আমার রাজ্যের রানী পর্ব-১৪

0
916

#আমার রাজ্যের রানী
#Part :14
#Writer : Sriti Nur Avni

?
হসপিটালের ২০৮ নাম্বার বেডে এখনো জ্ঞান হারিয়ে শুয়ে আছে অভনী। তার ঠিক সামনেই দাঁড়িয়ে আছে নীল,,,নিহাল আহম্মেদ আর শাহেরা বেগম।
হাতে সেলাইন লাগানো হয়েছে অভনীর,,,পায়ের ব্যান্ডেজ খুলে আবারো ব্যান্ডেজ করে দেয়া হয়েছে।পায়ের ক্ষতটা বেশ গভীর যা দেখে নীল আৎকে উঠলো,,,ক্ষতটা দেখেই বুঝা যাচ্ছে এটা ইচ্ছে করে কাটা তাই নীলের মধ্যে কতশত প্রশ্ন এসে ভীর করছে।শাহেরা বেগম মেয়ের এখনো জ্ঞান ফিরছে না দেখে একনাগাড়ে কান্না করেই যাচ্ছে।তবে ডক্টর বলেছে কিছুক্ষনের মধ্যেই জ্ঞান ফিরবে অভনীর,,,, তবুও কারো অস্তিরতাই কমছে না,,,একজনের থেকে আরেক জনের চিন্তার পরিমান যেনো সময়ের সাথে সাথে বাড়তেই আছে।

বেশ কিছুক্ষন পর অভনীর জ্ঞান ফিরেছে,,, চোখের পাতা হালকা নড়াচড়া করতে দেখেই নীল দৌঁড়ে ডক্টর কে ডেকে আনলো,,,ডক্টর অভনী কে চেকআপ করে বললো,,,

—পায়ের ব্যাথায় জ্বর এসেছে,,,তাই আপাতত কিছুদিন হাঁটাচলা কম করাবেন। সন্ধ্যাবেলা চাইলে বাসায় নিয়ে যেতে পারেন তবে ওনার শরীর খুব দূর্বল তাই আজকে রাত টা হসপিটাল থেকে গেলেই ভালো হয়।

অভনীর কথা ভেবেই অভনী কে আজ রাতে হসপিটালে রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন নিহাল আহম্মেদ।জ্ঞান ফেরার পর থেকেই বাসায় যাবার কথা বলছে অভনী তবে নিহাল আহম্মেদ ধমক দেবার পর থেকেই চুপ হয়ে গেলো সে।রাতে নীল আর শাহেরা বেগম থাকবেন বলেই ঠিক হলো অভনীর সাথে।নিহাল আহম্মেদ থাকতে চাইলেও নীল ওনাকে থাকতে না বলে নিজে থাকবে বলেছে।
জ্ঞান ফেরার পর থেকে একবারও নীলের দিকে তাকায়নি পর্যন্ত অভনী। নীল বেশ কয়েক বার কথা বলতে চাইলেও এড়িয়ে গেছে সে।এতে নীলের ভেতর টা ধুমরেমুচরে যাচ্ছে।নিজের প্রতি নিজের অপরাধ বোধ টাই প্রতিনিয়ত এখন কুড়েকুড়ে খাচ্ছে তাকে।তবুও একটা প্রশ্ন মাথায় ঘোরপাক খাচ্ছেই,,,পা কাটলো কিভাবে?কালকে দুপুরের পর পর্যন্ত তো ভালোই ছিলো তাহলে??প্রশ্নের বার বার উঁকিঝুঁকি দেবার ঝাল থেকে নিজেকে আটকাতে না পেরে গম্ভীর সুরে অভনী কে বললো সে,,,,

—পা কাঁটলো কিভাবে?কালকে দুপুরের পর পর্যন্ত তো ভালোই ছিলো?

নীলের কথায় অভনীর কোনো ভাবান্তর হলো বলে মনে হলো না,,সে একমনে নিজের শাড়ির আঁচল টা নিয়ে খেলা করতে লাগলো,,,তার সামনে কেউ দাঁড়িয়ে থেকে প্রশ্নের উত্তরের জন্য একনজরে তাকিয়ে আছে সেদিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।তবে নীলের কথায় অভনী কিছুটা ভয় পেলো বলেই মনে হলো নীলের,,,নীল বুঝতে পারলো অভনী এখন কিছুই বলবে না কিন্তু অভনীর এমন ব্যাবহারে কষ্টের সাথে সাথে বেশ রাগ লাগছে নীলের।কিন্তু অভনীর সামনে আর রাগ দেখাবে না বিধায় রুম থেকে বেড়িয়ে সে।গাড়ি নিয়ে সোজা বাসায় চলে আসলো।

বাসায় এসে বড় করে শাওয়ার নিয়ে নিলো সে কিন্তু তবুও রাগ কমছে না তাই দেয়ালে নিজের হাত দিয়েই বারবার ঘুষি দিতে লাগলো,,,হাত দিয়ে ঝরঝর করে রক্ত পরতে লাগলো তবুও নীলের নিজের প্রতি রাগ কমছে না বার বার মনেহচ্ছে,,,কিভাবে এতোগুলো কথা বলতে পারলো সে অভনী কে?কিভাবে এতো কষ্ট দিতে পারলো?কেন করলো সে এমন?এর উওর জানা নেই নীলের!!!মানুষের জীবন টা আসলে “কেন” দ্বারা পরিপূর্ণ এক রঙমহল যেখানে “কেন”এর ঘটটা পূর্ণ হলেও উওরের ঘটটা একেবারেই শূন্য!! নীল নিজের মোবাইল টা বের করে অফিসে কল করে বললো,,,

—আজকে সারাদিনের সিসি ফুটেজ চাই আমার আর সেটা এখনি।

এটা বলেই নীল কল কেটে দিলো,,,একটু পর ওর লেপটপ এ সিসিফুটেজ পাঠানো হলো,,, নীল তখন কার ফুটেজ গুলো দেখে নিজের প্রতি আরো বেশি রাগ হতে লাগলো,,,যখন জিসান অভনীর হাত ধরে নিচে থেকে তুলে ঠিক তখনি অভনীর কেবিনের সামনে দিয়ে নিজের কেবিনে যাচ্ছিলো নীল,,,ওদের কথা শুনতে না পেলেও অভনীর জিসানের হাত ধরা টাও দেখেছে সে তাই রেগে সেখান থেকে নিজের কেবিনে চলে গিয়েছিলো নীল,,,নিজের প্রতি এতো রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে আবারো দেয়ালে ঘুষি দিতে যায় সে,, হঠাৎ দরজার বাহিরে থেকে মামনির ডাকে একটু দূরে সরে হাত পিছনে নিয়ে নিলো নীল।নীলিমা আহম্মেদ চৌধুরী বললেন,,,,

—কিরে অভনীর শরীর ভালো না তুই আমাকে জানাসনি কেনো?আমি নিজের হাতে রান্না করে নিয়েছি তুই তারাতাড়ি রেডি হয়ে নে আমিও যাবো তোর সাথে খাবার নিয়ে।

—ওকে মামুনি তুমি যাও আমি আসছি।

নিলিমা আহাম্মেদ চৌধুরী চলে গেলে নীল হাতে ব্যান্ডেজ করে নিয়ে তৈরি হয়ে নিলো।নীল জানে তার মামুনি পাপ্পা খুব ভালো কিন্তু অভনীর প্রতি এতো কেয়ার কেনো সেটা বুঝতে পারছেনা সে,,,।খাবার নিয়ে গাড়িতে বসলে নীল যখন গাড়ি ড্রাইভ করতে যাবে তখন নীলের হাতে ব্যান্ডেজ দেখে চমকে উঠলেন নীলিমা আহম্মেদ চৌধুরী।ওনি উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলেন,,,

—কিরে তোর হাতে কি হয়েছে ব্যান্ডেজ করা কেনো?

—না মামুনি তেমন কিছুনা।তখন অভনী কে তারাহুরো করে হসপিটালে যেতে গিয়ে একটু হাতে ব্যাথা পেয়েছি।

—ওহ ডাক্তার দেখিয়েছিস?

—হুম।

মামুনি কে সত্যিটা বলতে পারবে না সে তাই এই প্রথম মিথ্যা কথা বলতে হলো তাকে।নীল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলো,,,,।

ওরা হসপিটালে গিয়ে দেখলো অভনী কে ঘুমের ঔষুধ দিয়ে ঘুম পারিয়ে রাখা হয়েছে।শাহেরা বেগম পাশেই বসে মেয়ের মাথায় হাত ভুলিয়ে দিচ্ছেন।নীলিমা আহম্মেদ চৌধুরী শাহেরা বেগমের সাথে কৌশুল বিনিময় করে অভনীর কাছে বসলো।ঘুমন্ত অভনীর চেহারাটা খুব মায়াবী লাগছে নীল এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষন অভনীর দিকে তাকিয়ে থাকলো,,,নীলের মনে হচ্ছে এই মায়াবী ঘুমন্ত পরীর দিকে তাকিয়ে সে যুগের পর যুগ কাটিয়ে দিতে পারবে নির্দিধায়।

নীল কিছুক্ষন পর শাহেরা বেগম কে জিজ্ঞাসা করলেন অভনীর পায়ের কাঁটার ব্যাপারে,,,শাহেরা বেগম কিছুক্ষন অভনীর দিকে তাকিয়ে থেকে নীল কে সব কথা খুলে বললেন তবে সেদিন শাফিনের বিষয়ে ওনি নিজেও কিছু জানেন না তাই বলতে পারলেন না।অভনীর কাছ থেকে জানা গাড়ির নাম্বার টা বললেন ওনি।
মুহূর্তেই নীল যেনো অগ্নিমূর্তি ধারণ করেছে।তার চোখমুখ লাল টকটক হয়ে আছে যেনো চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে।আর কোনো কথা না বলেই বেরিয়ে গেলো কেবিন থেকে।কেবিন থেকে বেরিয়ে কাউকে ফোন করলো,,,

—-কালকে সকালের মধ্যে যদি কোনো খবর না পাই তাহলে একটা কেও আমি জীবিত রাখবো না মাইন্ড ইট!

ফোন কেটে আবারো কেবিনে চলে আসলো সে।

?
রাত ৯ঃ৩০
অভনীর জ্বর এখন আর নেই।শাহেরা বেগম সাবিনা খান কে ফোন দিয়ে বলে দিলো আজকে রাত টুকু আরিহা দের খেয়াল রাখতে।এখন কার দিনে মেয়ে মানুষ ছোট হলেও একা ঘরে রাখাও যে খুব বেশি টেনশনের।তবে সাবিনা খান কে খুব ভালো বলেই মনে হলো শাহেরা বেগমের।তাই একটু নিশ্চিন্তে আছেন ওনি।,,অভনী কে খাইয়ে দিয়ে শাহেরা বেগম খেয়ে নিলেন,,,কিন্তু নীল খেলো না,,,কতবার করে বলার পরও সে কিছুই খেলো না,,,মানুষটার ভিতর দিয়ে কি চলছে তা শুধু আল্লাহ আর সেই জানে।নীলের হাতে ব্যান্ডেজ দেখে অভনীর বুকে চিনচিন ব্যাথা হচ্ছে।মনে মনে ভাবতে লাগলো,,,, কি হয়েছে মানুষ টার হাতে?বেশি ব্যাথা পায়নি তো আবার?জিজ্ঞাসা করবো? কিন্তু এখন সবার সামনে কিভাবেই বা জিজ্ঞাসা করবো?মানুষটার উপর যতোই রাগ থাকুক না কেনো তবুও এতো খারাপ লাগছে কেনো মানুষ টার জন্য?এইরকম নানারকম প্রশ্নের বেরাজালে আটকা পরে আছে অভনী।,,,নীলিমা আহম্মেদ চৌধুরী কে নিহাল আহম্মেদ নিতে আসবে আর অভনী কে দেখে যাবে একটু পর,,,,নীলিমা আহম্মেদ চৌধুরী বললেন,,,,

—আপা আপনারা তো ওই বাসায় ভাড়া ই থাকেন।মেয়েদের কে নিয়ে একা একা।তাছাড়া অভনী তো আমারো মেয়ে আপনার একার নয় তাই আপনাদের জন্য আমারো খুব টেনশন হয়।আমি চাইনা আপনারা আর ওই বাসায় থাকেন।আপনারা আমাদের সাথেই থাকবেন আর সেটা ২ দিনের মধ্যে থেকেই।আমরাও আমাদের একটা মেয়েকে সবসময়ের জন্য কাছে পাবো।

নীলিমা আহম্মেদ চৌধুরীর কথা শুনে অভনী আর ওর মা যেনো আকাশ থেকে পরলো,,,শাহেরা বেগম বললেন,,,,

—এটা কি বলছেন আপনি আপা?এটা কিভাবে হয়?কোথায় আপনারা আর কোথায় আমরা? তাছারা আপনারা অভনী কে মেয়ে মনে করলেও সবসময়ের জন্য তো আর আপনাদের বাসায় পরে থাকা যায় না।আপনারা খুব ভালো কিন্তু সরি আপা এটা হয়না।

—কেনো হয়না?অবশ্যই হয়।আপনারা চাইলেই হয়,,,আচ্ছা অভনী তুমিই বলো তুমি কি আমাদের বাবা মা মনে করো?যদি করো তাহলে আশা করি আমার কথা তুমি ফেলতে পারবে না। (নীলিমা)

—ছোট মা আমি তোমাদের বাবা মা ই ভাবি কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব বলো?আমরা তোমাদের ঘারের বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। (অভনী)

—আমি কোনো কথা শুনতে চাই না।আমাদের সাথে থাকবে মানে আমাদের সাথেই থাকবে।আর কিসের বোঝা বোঝা করছো বলো তো একদম এসব বলবে না মেয়ে কখনো বোঝা হয়না বাবা মার কাছে (মুখ ফুলিয়ে)

—-আচ্ছা ঠিক আছে তবে আমার কিছু শর্ত আছে,,,,আমরা বাসা ভাড়া হিসেবে থাকবো,,,আমাদের সব কিছুই আলাদা থাকবে শুধু একসাথে থাকা টা বাদে।তবে মাঝে মাঝে সব একসাথেও হবে তাহলে।(নীলের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে) (অভনী)

—ওকে তাই হবে।আমাদের কাছে থাকলেই হবে (নীলিমা মুচকি হেসে)

নীল এতোক্ষন যাবৎ শুধু তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওদের কথাই শুনেছে তবে ওদের লাস্ট কথা টা শুনে খুশিতে এখন মামুনি কে ধরে লুঙ্গি ডান্স দিতে ইচ্ছে করছে তার।এতোক্ষন যাবৎ রাগ মন খারাপে জরো হয়ে থাকলেও এখম থেকে দিনের বেশিরভাগ সময় অভনী কে দেখতে পারবে বলে নাচতে ইচ্ছে করছে তার।কিন্তু এখন এই মুহূর্তে এই খুশি টা প্রকাশ করা যাবেনা তাহলে বিনা টিকেটে নিজের ইজ্জতের ফালুদা বানাতে হবে।নিজের খুশি টাকে আটকে রেখে খুব কষ্টে চেহারায় গম্ভীর ভাব টা ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টায় ব্যাস্ত নীল।

বেশ কিছুক্ষন পর নিহাল আহম্মেদ এসে অভনীর সাথে একটু কথা বলে নীলেমা আহম্মেদ চৌধুরী কে নিয়ে গেলো।
অভনী কে ঔষুধ খাইয়ে অভনীর পাশের সিটপ শুয়ে পরলেন শাহেরা বেগম।আর নীল পাশের আরেকটা কেবিন ভাড়া নিয়ে ওইটাতে চলে গেলো।

?
আমি কীভাবে পারলাম এমন টা করতে?আজ শুধুমাএ আমার জন্য ও হসপিটালে।কিন্তু ও তো ভুল করেছিলো তাই আমি শাস্তি দিয়েছি।ভালো করেছি শাস্তি দিয়েছি আমার কথা শুনেনি কেনো?আমি যা চাই তাই পাই আর না পেলে সেটা ছিনিয়ে নিয়ে নেই।তোমাকে তো আমার হতেই হবে।ফাস্ট লাভ তুমি আমার তুমি তো আমার হবেই হবে।আর যদি না হতে চাও তাহলে কীভাবে হওয়াতে হয় তাও আমার খুব ভালো ভাবেই জানা আছে।আমি তোমার ভিলেন লাভার বুঝেছো তুমি?আজ আবারো আরেকটা ভুল করেছো তুমি।ওই ছেলেটা তোমাকে কোলে নেয়ার সাহস পায় কিভাবে?এর জন্য তো শাস্তি পেতেই হবে,,,অবশ্যই পেতে হবে,,,,(চিল্লিয়ে)

?
পরদিন সকালে,,,
নীল অভনীর রিলিজ করিয়ে বাসায় পৌঁছে দিলো তাকে।বিকালে সব কিছু রেডি রাখতে বললো,,,কারন আজকে বিকালেই নীলদের বাসায় চলে যাবে ওরা,,,।

নীল বাসায় যেতে যেতে একটা ফোন আসলো ওর মোবাইলে নীল ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বললো,,,

—-স্যার আপনি যেই গাড়ির নাম্বার টা বললেন তার ঠিকানা পাওয়া গেছে।আর আপনার কথা মতো ওকে আমরা আমাদের পুরান বাড়ি টাতেই নিয়ে এসেছি।আপনি কি এখন আসতে পারবেন স্যার?

—গুড।ইয়াহ আমি এখুনি আসছি।কেউ একটা টোকাও দিবে না আমি আসা পর্যন্ত। ওর ব্যাবস্থা আমি নিজের হাতে করতে চাই।

চলবে,,,

(আমার আম্মু খুব অসুস্থ তাই একটু লেট এন্ড ছোট হয়।? দুঃখিত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here