#আমার রাজ্যের রানী
#Part : 6
#Writer : Sriti Nur Avni
?
হিরো সাহেব মানুষ আপনাকে ধোকা দিবে কিন্তু এই পাখি,,গাছ আর ডায়েরির পাতা আপনাকে কখনো ধোকা দিবে না,,,আপনি ওদের যতোটা ভালোবাসবেন ওরাও আপনাকে ততটাই ভালোবাসবে কখনো মানুষদের মতো বিশ্বাস ঘাতকতা বা পরিস্থিতি বুঝে আচরণ করবে না।
এই টিয়া পাখি টা আমার মায়ের কাছে বায়না ধরে নিয়ে ছিলাম,,, আমার কাছে খুব প্রিয় ঠিক তেমনি ওর কাছেও আমি প্রিয়,,, শখ করে নাম রেখেছি পিকু,,,,কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর এতো কাজ করে পিকু কে সময় দেয়া হয়না,,, আপনার বার্দডে উপলক্ষে কি বুঝতে পারছিলাম না তখন মা এই টিয়া পাখি টা আমার সামনে এনে বলে ছিল,,,
—অভনী তুই পিকু কে গিফট দিয়ে দে,,গিফট টাও পছন্দ হবে আর বড়লোকদের কাছে ঠিক মতো খাবার পেয়ে পিকু ও ভালো থাকবে।
মায়ের কথা টা ফেলে দেয়ার মতো ছিলো না আমরা নিজেরাই ঠিকমতো খেতে পাই না সেখানে পিকু কে কিভাবে?পিকু কে আমি ভালোবাসলেও আমি ভেবে দেখেছি ও আপনার কাছেই ভালো থাকবে আর ও ভালো থাকুক এটাই চাই আমি হোক না আমার একটু কষ্ট ওকে ছারা তাতে কি?
পিকু কথা বলতে পারে,,যখন আপনার মন খারাপ থাকবে বা কারো সাথে কথা বলতে মন চাইবে তখন পিকুর সাথে কথা বলবেন দেখবেন মন ভালো হয়ে যাবে,,,
আর এই যে ডায়েরি টা এটাও আগের,,,আমার নানি আমাকে ৪ টা ডায়েরি কিনে দিয়েছিল,,আর বলেছিল,,,
—নানু ভাই এই ডায়েরি গুলো তে তোমার ভালো লাগা খারাপ লাগার সব মুহূর্তে গুলো বন্ধি করে রাখবে,,,যখন মন খারাপ থাকবে বা বুড়ো হয়ে যাবে তখন এই ডায়েরি টা খুলে পড়া শুরু করবে দেখবে আবার আগের জায়গায় নিজেকে অনুভব করবে।
আপনিও আপনার ভালো লাগা খারাপ লাগা গুলো বন্ধি করে রাখবেন,,যতটুকু ভালোবাসা নিয়ে লিখবেন পরবর্তীতে ঠিক ততোটুকু ভালোবাসাই ডায়েরির পাতা গুলো ফিরিয়ে দিবে আপনাকে,,,,।
আর এই গাছ টা আসার সময় একটা ভেনগাড়ি থেকে নিয়ে এসেছি,,,এই গোলাপ গাছ টাকে প্রতিদিন পানি দিবেন যত্ন করবেন ভালোবাসবেন দেখবেন গাছ টাও আপনাকে ভালোবেসে খুব শীঘ্রই ফুল দিবে,,,।
হ্যাপি বার্থডে টু ইউ হিরো সাহেব। (টিয়া পাখি আর ডায়েরি টা নীলের দিকে এগিয়ে দিয়ে)
আমার গিফট পছন্দ হয়েছে তো?(অভনী)
—-হুম খুব আমার লাইফের বেস্ট গিফট। কিন্তু তুমি আমাকে হিরো সাহেব হিরো সাহেব বলছো কেনো?আমাকে কোন এংগেল থেকে হিরো মনে হচ্ছে শুনি?(নীল টিয়া পাখি আর ডায়েরি টা হাতে নিয়ে)
—আপনাকে কোনো এংগেল থেকেই হিরো মনে হচ্ছে না কিন্তু আমার মন বার বার বলছে আপনাকে এই নামে ডাকতে,,,আর আমি শুনেছি মন ভালো কিছু বললে সেটা করতে হয় না হলে মন কষ্ট পায়।আচ্ছা আপনি রেডি হয়ে নিচে আসুন আমি যাই।(হেসে অভনী)
অভনী ড্রেস গুলো থেকে কালো রঙের একটা শাড়ি পরে নিলিমা আহাম্মেদ চৌধুরী কে রেডি হতে বলে গিফট গুলো নিয়ে নীলের কাছে এসেছিল।
কিছুক্ষন পর নীল হুয়াইট শার্ট কালো ব্লেজার,, হাতে দামি ওয়াচ চুল গুলো স্পাইক করে মুখে মুচকি হাসি নিয়ে সিড়ি দিয়ে নামছে,,,সবাই হাত তালি দিতে লাগলো,,,
—বাহ এই হিরো সাহেব এতো হ্যান্ডসাম এন্ড কিউট এতো দিন দেখেও বুঝতে পারলাম না আমি?কুল অভনী কুল ওনাকে দেখে তোর এতো হাইপার হওয়া উচিৎ না,,ওনার সাথে তোর যায়না তাই অন্যের বড়ের দিকে নজর না দেয়াই ভালো (অভনী মনে মনে)
পার্টি টা খুব ভালো ভাবেই কেটে গেলো,,, নির্ঝয় বেশ কয়েক বার অভনীর সাথে কথা বলার ট্রাই করেছে কিন্তু হয় অভনী ইগনোর করছে নয়তো নীল এসে নীর্ঝয় কে নিয়ে যাচ্ছে,,,।
পার্টি তে অভনী কে মেয়ে বলে এনাওসমেন্ট করতে চেয়েছিলেন নিহাল আহাম্মেদ।কিন্তু অভনী না করেছে ও বলেছে,,,
—ভালোবাসা সবাই কে বলে বেড়ালেই বা জানালেই প্রকাশ পায় না,,,ভালোবাসা আসে মন থেকে আর আমি আপনাদের সেই মনের ভালোবাসা টুকুই চাই ছোট আব্বু।আমি তোমাদের মনে মনেই মেয়ে হয়ে থাকতে চাই,,অফিসে আমি তোমাদের স্যার ম্যাম বলেই ডাকবো কিন্তু আমি তোমাদের মেয়ে হয়ে তোমাদের ছোট আব্বু ছোট আম্মু বলেই ডাকবো।
অভনীর কথায় আর কাউকে কিছু বলেনি ওরা,,,রাতে পার্টি হওয়ায় অভনী কে থেকে যেতে হয়। আর পরের দিনের জন্য সবার ই অফিস বন্ধ দেয়া হয়।
?
আমি এই বন্ধ গাড়ি দিয়ে যাবোনা,,, চলুন না রিকশা দিয়ে যাই,,,রিকশায় ঘুরে বেড়াতে খুব ভালো লাগে আমার।
অভনীর কথায় ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে নীল ওর দিকে।প্রায় অনেক দিন যাবৎ রিকশায় ঘুরা হয়না নীলের।
পাশে ভালোলাগার মানুষ টাকে নিয়ে রিকশা দিয়ে গেলে মন্দ হয়না বলেই মনে হলো নীলের।
—ওকে চলো (নীল)
নীল বাসার সামনে থেকে একটা রিকশা ডাক দিল,,,রিকশা চলছে তার আপন গতিতে,,।
গতকাল অভনী নীল দের বাসায় থাকলেও সকাল থেকেই শুরু করছে বাসায় যাবে বলে।নিলিমা আহম্মেদ চৌধুরী আর নিহাল আহম্মেদ বেশ করেক বার পরে যাওয়ার কথা বললেও অভনী তার নিজের কথা থেকে নড়চড় হয়নি,,,একদিনে তার কাছে মনে হচ্ছে কতদিন যাবৎ দেখে না তার মা বোন কে,,,অবশেষে নিহাল আহম্মেদ নীল কে বললো অভনী কে বাসায় পৌঁছে দেয়ার জন্য।
রিকশা যখন শাহবাগ এসে পৌঁছালো তখন রিকশাওয়ালা বললো,,,
—আমনেরা একটু বহেন আমি এহনি আসতাছি।
অভনী তাকিয়ে আছে লোকটার দিকে,, লোকটা একটা ফুলের দোকানে গিয়ে ৩ টা গোলাপ ফুল নিয়ে আসলো,,,অভনীর রিকশা ওয়ালা কে জিজিজ্ঞাসা করলো,,,
—মামা কার জন্য? (অভনী)
—তোমগো মামির জইন্য।আজ আমগো বিয়ার ২ বছর হইছে।আইজকা আর এইদিকে আমু না তোমগো রে নামাইয়া দিয়া বাড়ি চইলা যামু তাই এহনি ফুল টা নিয়া নিলাম। (একটু লজ্জা পেয়ে রিকশা ওয়ালা)
—মামি কে খুব ভালোবাসেন তাই না মামা?(অভনী)
—হ তোমগো মামিও খুব ভালোবাসে। (রিকশাওয়ালা)
—তো পারিবারিক বিয়ে নাকি প্রেম করে? (অভনী)
নীল ওদের ২জনের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে শুধু।
—সে এক মেলা কাহিনি মা। পরিবার বিয়া ঠিক করলেও পরে মাইন্না নেয় নাই তাই প্রেমের বিয়াই ধরতে পারো। (রিকশাওয়ালা)
অভনীর কপালে ভাজ পরে গেলো লোকটার কথা শুনে।খুব জানার ইচ্ছা হচ্ছে তার এই কথার মানে কি?
—ঠিক বুঝলাম না মামা।ওরা ঠিক করলে আবার ওরাই মেনে নেয় নাই কেনো?(নীল)
—কইলাম না মেলা কাহিনি বাবা (রিকশাওয়ালা)
—আচ্ছা চলুন না আমরা কোনো এক জায়গায় বসে আজ ওনার প্রেম কাহিনী টা শুনে যাই।হ্যাপি এন্ডিং প্রেম কাহিনী শুনতে আমার খুব ভালো লাগে তাছাড়া আজ না যানতে পারলে আমার আর কোনো কাজেই মন বসবে না।
নীল ও আর কিছু বললো না সামনের একটা রেস্টুরেন্ট এ গাড়ি থামাতে বললো সে,,,।
?রেস্টুডেন্ট এর ভিতরে বসে আছে অভনী নীল আর রিকশাওয়ালা হাসান।খুব গরম পরেছে তাই ৩ কাপ কোল্ড কফি অর্ডার করেছে নীল।হাসান কে আরো কিছু খেতে বললে লোকটা বললো,,,
—আমার বেগম রে রাইখা আমি একলা একলা এতো খাওন খাইতো পারুম না বাবা
নীল বিভিন্ন ধরনের খাবার পেক করে দিতে বললো ওয়েটার কে।হাসান না করতে ছিল বার বার লাগবে না লাগবে না কিন্তু নীল বললো,,,
—এটা নাহয় আপনাদের বিবাহ বার্ষিকীর গিফট থাকলো আমাদের পক্ষ থেকে।
—আচ্ছা আপনারা পরে কথা বলোন মামা আপনি বলেন না আপনাদের কাহিনী টা।(অভনী)
অভনীর কথায় হাসান বলতে শুরু করলো,,,,
—আমার আর ফাতেমার (ওনার বউ) বিয়া ঠিক হয়ছিল কিন্তু আমার মামায় বিদেশ থাইকা আইতে সময় লাগবো দেইখা বিয়ার তারিখ দেড় মাস পরে দেয়া হইছিলো। বিয়ার তারিখ ঠিক করার পরেত্তে ফাতেমার সাথে আমি ফোনে কথা কই। কথা কইতে কইতে একসময় ভালোবাইসা ফালাই।ফাতেমা ও আমারে পছন্দ করে।
কিন্তু একদিন ফাতেমা যহন ওর বইনের লগে বাজারে গেলো তহন একটা পোলা ফাতেমার মুখে এসিড ছুইড়া মারে। পোলাডায় ফাতেমারে প্রেম করার লাইগা কইছিলো কিন্তু ফাতেমা রাজি হয়নাই দেইখা মুখে এসিড মাইরা দেয়।
ফাতেমার মুখের সাথে সাথে ওর শরীরে ও পরে,,ওইদিন ফাতেমার কি যে কষ্ট হইছিলো বলে বোঝাইতে পারমু না মা।ওর কষ্টে আমারো কান্না করতে মন চাইছিল চিৎকার কইরা।
তার মধ্যে কয়দিন পর হুনি ফাতেমার মুখে এসিড দেইখা আমগো বাড়ি থাইকা বিয়া ভাইঙা দিছে।কিন্তু ফাতেমারে আমি ভালোবাসি ফাতেমারে এই অবস্থায় আমি কেমনে ফালাইয়া যামু কউ?যারে ভালার সময় ভালোবাসছি খারাপের সময় ভালোবাসতে পারমু না কেন।
তাই ফাতেমারে লইয়া ঢাকা শহরে চইলা আসছি,,ওগো বাড়িত রাজি কিন্তু আমগো বাড়িত এহনো রাজি হয় নাই তাই ফাতেমা কইছে যতদিন না আমি আমার বাপের বাড়িত যাইতে পারমু ততদিন ফাতেমা ও যাইবো না।ওগো বাড়ি রাজি হইলেও ফাতেমা একদিন বিয়ার পরে যায় নাই ওগো বাড়িত। (হাসান নিজের চোখ মুছে)
অভনী আর নীল খুব মনোযোগ সহকারে শুনছিল ওনার কথা,, অভনীর চোখে জল টলমল করছে,,,
—ওই ছেলেটার আর বিচার হয় নাই?(নীল)
—জেলে পাঠাইছিলো কিন্তু টেকা দিয়া পরের দিন ই ছুইটা আইছে।
—ওই ছেলেটার ভালোবাসা ছিলো না প্রথম ছিল ভালো লাগা আর পরে ছিল হিংসা আর রাগ,,,এই দুইটার একটাও ভালোবাসা তে পরে না।ভালোবাসা হলো অন্যরকম অদ্ভুত এক অনুভূতি যাকে সব অবস্থা তেই ভালোবাসা যায়।ভালোবাসা মানেই তাকে জোর করে পেতে হবে এমন না,,,হোক না সে সুখি অন্য কারো সাথে তাতে কি ভালো তো থাকবে।ভালোবাসা টা ছিল আপনার যেটা শরীর দেখে নয় মনকে ভালোবেসেছেন।যেই ভালোবাসা তে বলা যায় যত খারাপ পরিস্থিতি ই থাকুক না কেন কখনো হাত ছেরে দিয়ে দূরে চলে যাবো না।সারাজীবন এই হাত দুটো কে শক্ত করে ধরে রাখবো যেন ওই ছেলে গুলোর মতো পশু হাজার চেষ্টা করেও আলাদা করতে না পারে।স্যালুট আপনার ভালোবাসা কে স্যালুট আপনাদের মতো মানুষদের কে যাদের জন্য এখনো ভালোবাসা টিকে আছে।মামি খুব ভাগ্যবতী তাই আপনাকে পেয়েছে। (অভনী)
অভনী কথা গুলো বলছে আর নীল এক নজরে তাকিয়ে আছে তার দিকে,,,,,
চলবে,,,,
(হ্যা ভালোবাসা তো এমন ই হয়,,হাজার ঝরের মাঝেও যার হাতটি ধরে রাখা যায়,,,btw কালকে পেজে একজন বলে ছিল তার ছোট বোন ও এইভাবে মারা গেছে,,পেজে কমেন্টের রিপ্লাই দেয়ার নিয়ম নেই কিন্তু আমার খুব খারাপ লাগছিলো হয়তো আমার গল্প টা পরেই ওনার বোন হাড়ানোর কথা বেশি করে মনে হয়ে গেলো,,,কিন্তু আমি কাউকে হার্ট করতে চাইনি শুধু বাস্তবতা টাকে তুলে ধরতে চেয়েছিলাম,,,,sorry for everything…. ওই আপু টাকে বলছি আমিই তোমার ছোট বোন আপুই ☺☺)